বিবাহ বিভ্রাট পর্ব-১১+১২

0
1785

#বিবাহ_বিভ্রাট (১১)
**********************
এমন কোনও দৃশ্যের অবতারণা হতে পারে, এটা আমি কল্পনাও করিনি। আরোহী যখন মা’র জন্য কেনা শাড়িটা মা’কে দিল, মা ভ্রুজোড়া কিঞ্চিত কুঁচকে বললেন, “তুমি কেন আমার জন্য শাড়ি কিনতে যাবে?”

আরোহী হঠাৎ করেই মা’কে জড়িয়ে ধরে বলল, “কারণ, বিরক্ত হয়ে হলেও আপনি আমাকে খেতে দিয়েছেন। বাড়ি থেকে রাগ করে আসলেও, আমি কোনোদিন অভুক্ত থাকিনি। ঈদেরদিনের প্রথম খাবারটা আমি এই বাসায়ই খেয়েছি।” কথা বলতে, বলতে আরোহীর গলা ভারি হয়ে এল। সেই উত্তাপ বোধহয় মাকেও সংক্রমিত করল। মা আরোহীকে জড়িয়ে ধরে আমাকে বললেন, “তোদের বান্ধবীদের আসতে বল। মেয়েটার বিয়ে হচ্ছে অথচ গায়ে হলুদ হচ্ছে না, এটা ভালো দেখায় না। আমি রান্নার জোগাড় করব। তুই কাল অফিস থেকে ফেরার সময় হলুদের জিনিসপত্র কিনে আনিস। কাল রাতে আমার এখানে আরোহীর গায়ে হলুদ হবে।”

আমি সত্যি আপ্লুত হয়ে গেলাম মা’র এই পরিবর্তনে। মা’র হাত ধরে বললাম, “থ্যাংকস মা।”

মা আমাদের সামনে নিজের আবেগ দেখাতে চাইছিলেন না। তাই তাড়াতাড়ি করে নিজের রুমে চলে গেলেন। আরোহী আমার কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল, “এটা কী হল জবা? আন্টি হঠাৎ পালটে গেল কেন? আন্টির আবার অন্য কোনও প্ল্যান নাই তো?”

“অন্য প্ল্যান আবার কী?”

“আমার তো এত ভালোবাসা হজম হয় না দোস্ত। আন্টি যেভাবে আবেগ নিয়ে কথা বলল, গায়ে হলুদের কথা বলল, আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না।”

“আমার মা এত খারাপও না, বুঝেছিস?”

আরোহী আমার বিছানায় শুয়ে বলল, এখন মনে হচ্ছে সত্যিই আমার বিয়ে হচ্ছে রে। আন্টি গায়ে হলুদের কথা বলার পর থেকেই মনের ভেতর দিল্লির লাড্ডু ফুটতে শুরু করেছে। আমার মনে একটা গোপন বাসনা ছিল, জানিস। পার্লারে মেয়েরা এসে যেমন সুন্দর করে গায়ে হলুদের সাজ সাজে, আমার খুব ইচ্ছা হতো, নিজের গায়েহলুদে আমি ওভাবে সাজব; কিন্তু সত্যি যখন বিয়ে ঠিক হল, তখন কেন জানি গায়ে হলুদের ইচ্ছেটা চলে গেল। নিজের বিয়েতে নিজেই যেচে সব কাজ করব, নিজেই গায়ে হলুদে সাজগোজ করব, এটা কেন জানি করতে ইচ্ছা করছিল না। আমার ইচ্ছাটা আন্টি যে এভাবে পূরণ করে দেবেন, এটা আমি ভাবতেই পারিনি। দাঁড়া, সিয়ামকে আগে জানাই কথাটা। ও খুব খুশি হবে।”

আমি মুগ্ধ হয়ে আরোহীকে দেখছিলাম। ওর চোখমুখ দিয়ে আনন্দ ঠিকরে বেরোচ্ছে। এত অল্পতেই সে কী খুশিটাই না হয়েছে! আরোহীকে এই আনন্দ উদযাপনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য মা’কে আবারও ধন্যবাদ দিতে হবে।

——————————-

কেয়া, দীপা, সালমা, হেনাসহ অন্য বন্ধুদের রাতেই ফোন করে আজকে সন্ধ্যায় আসতে বলে দিয়েছিলাম। আমি কাজ থেকে একঘন্টা আগে ছুটি নিয়ে বেরিয়ে, সোজা মার্কেটে চলে এসেছি। মা সকালে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন হলুদের কেনাকাটা করার জন্য। আরোহীর জন্য শাড়ির সঙ্গে অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনলাম। ফুলের দোকানে গিয়ে কাঠবেলি ফুলের সঙ্গে কালচে লাল গোলাপের মিশেলে গয়না বানিয়ে নিলাম। কিছুক্ষণ আগে মা ফোন করে জানিয়েছেন, তেহারি রান্না হচ্ছে, হলুদ আর মেহেদীও বাটিয়ে রেখেছেন। আমি যেন মিষ্টি নিয়ে যাই। হলুদের কেনাকাটা শেষে করে মিষ্টি কিনলাম। আমার দুই হাতভরা জিনিসপত্র। এতক্ষণে এসে আমারও মনে হচ্ছে আরোহীর বিয়েটা তাহলে হচ্ছেই।

বাসায় ঢুকে দেখি বন্ধুরা চলে এসেছে। ওরা ড্রইংরুমে কাজ করছে। এক কোনায় ছোটোখাটো একটা স্টেজ বানিয়ে ফেলেছে। কেয়া আর সালমা, মা’র সঙ্গে কাজ করছে। কেয়ার ভাই নাহিদ, পলাশের বন্ধু। সে আরও দুই বন্ধুসহ এসে পলাশের রুমে স্পীকারে গান চালিয়ে দিয়েছে। পুরো বাড়িটায় বিয়ের আবহ তৈরি হয়েছে।

আমি রুমে ঢুকে দেখি আরোহী চুপচাপ শুয়ে আছে। কাছে এসে জিজ্ঞেস করলাম, “কী রে, তোর বিয়ে নিয়ে সবাই হৈচৈ করছে আর তুই এখানে শুয়ে আছিস! ওঠ।”

আরোহী উঠে বসে আমাকে আড়াল করে চোখ মুছল; কিন্তু আমি ঠিকই দেখলাম। “কী হল আরোহী, কিছু হয়েছে?”

“না। কী হবে?”

“কিছু না হলে কাঁদছিস কেন?”

“কাঁদলাম কোথায়?”

“আমি তোকে চোখ মুছতে দেখেছি। কী হয়েছে বল? মা কিছু বলেছে?”

আরোহী আমার হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বলল, “আন্টিকে দেখে আজকে আমার নিজের মা’র কথা খুব মনে পড়ছে। জবা, আন্টি নিজে থেকে এত খুশি হয়ে সব আয়োজন করছেন, তোকে কী বলব! আমি তো দুপুর থেকেই এখানে আছি। আন্টির আনন্দ দেখে মনে হচ্ছে, আমার নিজের মা থাকলে বোধহয় এভাবেই খুশি হয়ে সব কাজ করত। আজকে মা’র কথা খুব বেশি মনে পড়ছে রে।” কথাটা বলেই আরোহী হুহু করে কেঁদে উঠল।

আহারে বেচারি! আমার মা আছে, তাই মা’য়ের অপূর্ণতা বুঝতে পারি না। ওর কষ্টটা তাই আমি কিছুতেই ওর মতো করে অনুভব করতে পারব না। সে-ই কোন ছোটোবেলায় ওর মা মারা গেছে। ওর হয়ত ভালোভাবে ওর মা’র কথা মনেও নেই, অথচ আজকে ওর জীবনের এই বিশেষ দিনে ঐ মানুষটাকেই সে সবচেয়ে বেশি মিস করছে। আমি আরোহীকে কাঁদতে দিলাম। চুপচাপ ওর হাত ধরে পাশে বসে থাকলাম। যতক্ষণ মন চায় আরোহী কাঁদুক। কেঁদে মনটা হালকা করুক। কান্নার অনেক শক্তি আছে। কান্না অনেক বড়ো বড়ো কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।

———————–

আমি যতটা ভেবেছিলাম, তারচেয়ে অনেক বেশি আনন্দ হয়েছে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে। আমার মামারা যেহেতু এখানেই থাকেন, তাই ওনারা সবাই ফ্যামিলি নিয়ে এসেছিলেন। আরোহীর দুই ভাইবোনও চলে এসেছিল। মা ফোন করে আরোহীর আব্বাকে আসতে বলেছিলেন, তবে খালু আসেননি। খালু যে আসলেন না, তাতে আরোহীকে এতটুকুও মন খারাপ করতে দেখলাম না।

আরোহীকে গায়ে হলুদের সাজে খুব সুন্দর লাগছিল। ফুলের গয়না পরে ও যখন স্টেজে গিয়ে বসল, ওকে দেখতে ফুলপরী মনে হচ্ছিল। সিয়াম ভিডিয়ো কলে আরোহীকে দেখে, বারবার চলে আসতে চাচ্ছিল। আরোহী রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তার আর আসা হয়নি।

গায়ে হলুদ দেওয়া আর খাওয়াদাওয়া পর্ব শেষ করে সবাই যেতে, যেতে রাত এগারোটা বেজে গেল। আরোহী আজকে আমাদের বাসায়ই রয়ে গেছে। মা থাকতে বললেন আর সে-ও সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গেল। আরোহী শাওয়ার নিতে গেলে, আমি আর পলাশ মিলে দ্রুত বাসাটা গুছিয়ে ফেললাম। সব কাজ গুছিয়ে নিজেও ফ্রেশ হয়ে যখন রুমে ঢুকলাম, ঘড়ির কাঁটা সাড়ে বারোটা ছুঁয়েছে। আরোহী, সিয়ামের সঙ্গে কথা বলছিল। আমাকে দেখে ফোন রেখে দিল। আমি ওর পাশে শোয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে উপুড় হয়ে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল, “জবা, আমার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে। আমি কোনোদিন ভাবিনি এত আনন্দ করে আমার বিয়ে হবে।”

আরোহী কত অল্পতেই খুশি হয়ে গেল! কোনোরকম আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন নেই, নেই আত্মীয় স্বজনের আনাগোনা। নিতান্তই সাদামাটাভাবে ওর বিয়েটা হচ্ছে। আরোহীর কথা শুনে আমার একটা কথা মনে হল, মানুষের চাহিদা যখন কম থাকে, তখন অল্প আনন্দেই অনেক খুশি খুঁজে পায়। সেই খুশিতেই আরোহী এখন ডুবে আছে।

“কী রে তোর মন খারাপ?”

আরোহীর কথায় ওর দিকে তাকালাম, “আমার মন খারাপ হবে কেন? আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে, তোকে বলে বোঝানো যাবে না।”

“একটা কথা বল তো?”

“কী কথা?”

“তমাল ভাইকে তোর কেমন লাগে?”

“এ আবার কেমন প্রশ্ন?”

“আহা, বল না?”

“কেমন লাগবে আবার? ভালো লাগে। এটা কেন জিজ্ঞেস করলি?”

“আমি আর সিয়াম এখন তোকে আর তমাল ভাইকে নিয়ে কথা বলছিলাম।”

“আমাদের নিয়ে কী কথা?”

“তমাল ভাই নাকি তোকে বিয়ে করতে চেয়েছিল?”

“কী! কী বলিস সব উলটোপালটা কথা!”

“সিয়াম আমাকে বলেছে। বিয়ের কথা শুনে তুই নাকি অনেক কেঁদেছিলি?”

“ওহ, সে তো আগের জমানার কথা। উনি এই গল্পও করে বসে আছে সিয়াম ভাইয়ার সঙ্গে?”

“হুম। বল না, কী হয়েছিল?”

“কিছুই হয়নি। আমরা তখন অনেক ছোটো। আমি তখন ক্লাস থ্রি বা ফোর এ পড়ি। ও তখন আমার দুই ক্লাস ওপরে পড়ে। বড়ো খালার বাসায় আমরা সবাই খেলা করছিলাম। আমি, তমা, সোহেল ভাইয়া, তমাল ভাইয়া, সবাই ছিলাম। খেলার মাঝখানে তমাল ভাইয়া হুট করে বলে ফেলল, “আমি জবাকে বিয়ে করব।”

“সরাসরি?”

“হুম।”

“কেন বলেছিল?”

“কেন যে বলেছিল, সেটা ঠিক মনে নেই। আমরা বোধহয় ক্যারমবোর্ড খেলছিলাম। এই কথা শোনার পর আর কিসের খেলা, কিসের কী? আমি এক ছুটে খালার রুমে এসে মা’কে জড়িয়ে ধরে সে কী কান্না। মা আর বড়ো খালা যত জিজ্ঞেস করে, আমি তত বেশি কাঁদি। কান্নার দমক কমলে মা’কে বললাম, “ঐ মোটকু আমাকে বিয়ে করবে বলেছে। আমি ওকে বিয়ে করব না।” সবাই যে কত হাসাহাসি করেছিল ঐ কথা নিয়ে। এরপর তমাল ভাইয়া অনেকদিন আমার সামনে আসেইনি।”

“তমাল ভাই আগে মোটা ছিল?”

“ছোটোবেলায় ছিল। এখন তো দেখতে অনেক সুন্দর হয়ে গেছে।”

“এখন পছন্দ হয় ওকে?”

“যাহ, কী বলিস এসব? আমি এসব ভাবিনি কখনও।”

“কখনও ভাবিসনি তো কী হয়েছে? এখন ভাব।”

“আরোহী! ফাজলামো করিস না। আমি তমার কাছে শুনেছিলাম, তমাল ভাইয়ার অ্যাফেয়ার আছে। ধ্যাত, কথা হচ্ছিল তোর বিয়ে নিয়ে। এরমধ্যে তমাল ভাইয়া ঢুকল কী করে?”

“জবা, যে জীবনটা তোর হতে পারত, সেই জীবনটা এখন আমার হতে যাচ্ছে। এমন তো কথা ছিল না।”

“এমনই কথা ছিল। তুইই হচ্ছিস আজমাইন সিয়ামের রাইট নাম্বার। ভুল করে রং নাম্বারে আমি ঢুকে পড়েছিলাম। এখন যা হচ্ছে, একদম ঠিকঠাক হচ্ছে।”

“তুই যে তমাল ভাইয়ার অ্যাফেয়ারের কথা বললি, সেটা এখন আর নেই। মেয়েটা বিয়ে করে সুইডেন চলে গেছে।”

“তুই এত কথা জানলি কী করে?”

“কী করে আবার, সিয়াম বলেছে। মেয়েটা যখন এভাবে বিয়ে করে চলে গেল, তমাল ভাইয়ের অবস্থা ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সিয়াম তখন দেশে এসেছিল বন্ধুর জন্য।”

“মেয়েটা এমন করল কেন?”

“তার ফ্যামিলি মনেহয় প্রেম করাকে ভীষণ অন্যায় মনে করত। জোর করে ধরে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। সিয়াম তো এটাই বলল। এরপর তমাল ভাই ঠিক করেছে, ও কখনও বিয়ে করবে না।”

“এতকিছু জানতাম না। আমার তো অনেক বছর পর সেদিন ওনার সঙ্গে দেখা হল।”

“জবা, তুই তমাল ভাইকে বিয়ে করে ফেল।”

“এই তোর সমস্যা কী, বল তো? আমার বিয়ে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। তুই নিজের চিন্তা কর। কালকে কীভাবে সাজবি?”

“কালকের কথা কাল ভাবব। তুই শুধু বল, আমি কী তমাল ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলব?”

“খবরদার, না, না। কক্ষণো না। আমার বিয়ের শখ মিটে গেছে। আমি যা আছি, এ-ই বেশ আছি।”

“ঠিক আছে। আমি আর সিয়াম এটা নিয়ে পরে কথা বলব তমাল ভাইয়ের সঙ্গে।”

“আরোহী প্লিজ, এইসব ঝামেলা পাকাস না।”

“আচ্ছা দেখা যাবে। এখন ঘুমাতে দে। কাল দুপুরে আমার বিয়ে আর তুই এখন আমাকে রাত জাগিয়ে রাখছিস। বিয়ের আসরে বসে নির্ঘাত আমি ঘুমিয়ে যাব।”

“ওহ, নিজে এতক্ষণ বকবক করে, এখন সব দোষ আমার ঘাড়ে দেওয়া হচ্ছে!”

“গুড নাইট।”

———————-

আরোহী আজকে একদম হালকা সাজে সেজেছে। অবশ্য এই সাজেই ওকে চমৎকার মানিয়েছে। আমাদের অন্য বন্ধুরাও আরোহীর পার্লারে চলে এসেছে। একজন, আরেজনের থেকে বেশি সাজছে। আমাদের একটার মধ্যে সিয়ামের বাসায় চলে যাওয়ার কথা। এখন বারোটা বাজে। সবাই তৈরি হয়ে গেছি। মা’র যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তিনি যেতে রাজি হলেন না। আমি বুঝতে পারছি, ঐ ঘটনার জন্যই মা যেতে লজ্জা পাচ্ছেন। ওখানে গেলে তো সিয়ামের বোনরা মা’কে চিনে ফেলবে। আমি মা’কে আর জোরাজুরি করলাম না। অস্বস্তি নিয়ে কোথাও না যাওয়াই ভালো। পলাশকে সাথে নিয়ে যাব। আরোহীর আব্বাকে ফোন করলে খালু বললেন, তাঁর শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছে। তিনি বাসায় রেস্ট নিচ্ছেন। অথচ আমি একটু আগেও তাঁকে ডিসপেনসারিতে বসে গল্প করতে দেখেছি। বুঝলাম তিনি যাবেন না দেখেই অসুস্থতার বাহানা করলেন।।

আমাদের সঙ্গে বড়ো কেউই যাচ্ছে না দেখে মা, সালমার বাবা-মাকে অনুরোধ করেছিলেন সাথে যাওয়ার জন্যে। ওনারাও সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গেলেন। আমরা অবশ্য সালমাদের গাড়িতেই যাব। ওদের চৌদ্দ সিটের মাইক্রোবাসটা আমাদের বাসার গেটে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা বন্ধুরা মিলে আরোহীর বউযাত্রী নিয়ে রওনা দিলাম। সঙ্গে মুরুব্বি বলতে সালমার বাবা আর মা যাচ্ছেন।……………………..

#বিবাহ_বিভ্রাট (১২)
*********************
আমরা বরের বাসার গেটে চলে এসেছি। আমাদেরকে বরন করে নেওয়ার জন্য বেশ কিছু তরুণী অপেক্ষায় ছিল। আজকের এই মুহূর্তের অনুভূতিটা অন্যরকম। বউয়ের সহযাত্রী হয়ে বরের বাসায় আসার অভিজ্ঞতা তো আগে কখনও হয়নি। আরোহীকে নিজের অনুভুতির কথা বললে, সে-ও বলল, এখন তার নাকি একটু নার্ভাস লাগছে। আরোহী আমাকে বলল, “তুই কিন্তু সারাক্ষণই আমার পাশে থাকবি।”

“তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেন? মনে হচ্ছে কঠিন কোনও পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিস?”

“কঠিন পরীক্ষাই তো। তবে ভয় পাচ্ছি না, নার্ভাস লাগছে।”

আমাদের কথা শেষ হওয়ার আগেই গাড়ির দরজা খুলে গেল। তরুণীরা এগিয়ে এসে আরোহীর হাত ধরে নামিয়ে নিল। আমরা সবাই ওদের সঙ্গে বাসার ভেতরে ঢুকলাম। আরোহীর কাছে শুনেছি, ধানমন্ডির এই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের তিনটা ফ্ল্যাটে সিয়ামের মা আর ওর দুই বোন তাঁদের পরিবার নিয়ে থাকে। সিয়াম দেশে এসে মা’র সঙ্গেই থাকে।

সিয়াম বলেছিল, একদম ঘরোয়াভাবে বিয়েটা হবে; কিন্তু আটতলার ফ্ল্যাটটায় যখন আমরা ঢুকলাম, তখন সেখানে অনেক লোকজনকে দেখতে পেলাম। হৈচৈ না হলেও, বিয়ের একটা আমেজ ছড়িয়ে আছে সবার মধ্যে। বাসায় বিভিন্ন কোনায় বোধহয় স্পীকার লাগানো আছে। লো ভলিউমে সানাই বাজছে। ফয়ারেও সানাইয়ের সুর শুনেছি আর এখন লিভিংরুমে এসেও একই সুর শুনলাম। আমাদের সবাইকে লিভিং রুমে বসতে দেওয়া হল। কিছুক্ষণ পর সামিরা আপু এলেন আরোহীকে ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ওনার সঙ্গে আমার চোখাচোখি হতেই, আমি সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আপু ভালো আছেন?”

উনি সালামের উত্তর দিয়ে আর কোনও কথা বললেন না আমার সঙ্গে। বুঝলাম, আমাদের বাসায় আমার মামাদের করা অপমান ওনারা মনে রেখেছেন। ভাগ্যিস মা আজ আসেননি। আসলে, তাঁকেও অপমান হতে হতো।

আরোহী উঠে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে ফিরে তাকালে সামিরা আপু বলল, “তোমার বন্ধুরাও আসতে পারে তোমার সঙ্গে।”

সামিরা আপু আমাকে উপেক্ষা করার পর আমার আর ভেতরে যেতে ইচ্ছা করছে না। আরোহীকে বললাম, “সালমা আর হেনা যাক তোর সঙ্গে। আমি অন্যদের সঙ্গে এখানে বসি।”

আরোহী বিরক্ত হয়ে বলল, “তুই যাবি না কেন?”

“এতজন যাওয়ার তো দরকার নেই।”

“তোকে ছাড়া আমি ভেতরে যাব না।”

সামিরা আপু বলল, “কী হল আরোহী, চলো।”

আরোহী আমার হাত ধরে বলল, “চল আমার সঙ্গে।”

আমি, সালমা, সুপ্তি আর হেনা আরোহীর সঙ্গে ভেতরে এলাম। জায়গাটা বোধহয় ফ্যামিলি লিভিং। এখানে কয়েকজন বসে কথা বলছিলেন। আমাদের দিকে একবার তাকিয়ে, আরোহীকে স্বাগত জানিয়ে তাঁরা নিজেদের কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমাদের বসিয়ে সামিরা আপু ভেতরে চলে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গেই যিনি সামনে এসে দাঁড়ালেন, উনি সম্ভবত সিয়ামের মা। আরোহী ওনাকে সালাম করার জন্য ঝুঁকতেই, তিনি আরোহীকে ধরে ফেললেন। নীচু স্বরে আরোহীর সঙ্গে কথা বলে, তিনি আমাদের বসতে বলে অন্যদিকে চলে গেলেন।

আমি বসে বসে চারদিকে লক্ষ্য করছি। বাসার সাজসজ্জা আর লোকজন দেখে বুঝলাম, আমি যতটা ধারণা করেছিলাম, এনারা তারচেয়ে বেশি ধনী। সালমা তো বলেই ফেলল, “আরোহী, তুই ভাই রাজ কপাল করে এসেছিস!”

আরোহী খোঁচা দিয়ে বলল, “কেন, তোর কী হিংসা হচ্ছে?”

সালমা বলল, “হিংসা হবে কেন! ভালো লাগছে, অনেক ভালো লাগছে। তোর গল্পটা সিনড্রেলার গল্পের মতো হয়ে গেল, তাই না জবা?”

আমি চুপচাপ বসে ছিলাম। আরোহী বলল, “কী রে তুই এমন চুপ হয়ে গেলি কেন?”

“কোথায় চুপ হলাম? কথা বলছি তো।”

“সামিরা আপু আসার পর থেকে তুই চুপ হয়ে গেছিস। মন খারাপ হয়েছে, তাই না?”

“মন খারাপ হবে কেন?”

“সামিরা আপু তোকে ইগনোর করেছে দেখে?”

আরোহী এতকিছুর মধ্যেও বিষয়টা লক্ষ্য করেছে! আমি অস্বীকার করলে সে বলল, “তোকে আমি খুব ভালো করে চিনি, জবা। শোন, ওনার জায়গায় তুই হলে, তুইও এমন ব্যবহারই করতিস। কাজেই তার ব্যবহারটা একদম নরমাল আছে। ঐসব এখন একদম ভুলে যা তো। এই মুহূর্তটাকে উদযাপন কর, জবা। আজকে আমার সবচেয়ে আনন্দের দিন। আজকে তুই মন খারাপ করে থাকিস না।”

সত্যিই তো, আরোহীর এমন আনন্দের দিনে আমি কী সব ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে পড়ে আছি! বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আমরা বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে গল্প করতে শুরু করলাম।

একটা বিষয় আমি আগেও লক্ষ্য করেছি আর আজকে এখানে আসার পরও দেখলাম, যাঁরা বনেদি ধনী পরিবার, তাঁদের আচরণ একটু অন্যরকম হয়। আমরা যেমন সারাক্ষণ হৈ-হল্লা করে নিজের আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাই, তাঁরা ঠিক তেমনটা করেন না। তাঁরা কথা বলেন; কিন্তু কখনোই খুব উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন না। কথা বলার মাঝে খুব নমনীয় একটা ভাব থাকে। অন্যদের সামনে তাঁদের আবেগ কখনও উথলে ওঠে না; কিন্তু চেহারায় ঠিকই একটা কমনীয়তা থাকে। এবাড়িতে আসার পর থেকে আমি বনেদি বাড়ির একটা আমেজ পাচ্ছি। সবাই হাঁটাচলা, কথাবার্তা বলছে; কিন্তু স্টাইলটা অন্যরকম। ভাগ্যিস আরোহী কিছুদিন পর সিয়ামের কাছে চলে যাবে। নইলে ওর জন্য এমন জায়গায় মানিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে যেত। আমরা হচ্ছি সারাক্ষণ হাসি-আনন্দ আর হৈচৈ করে মেতে থাকা মানুষ। এমন বনেদি বাড়িতে আমাদের হাসফাঁস তো লাগবেই। এমন নিয়মকানুনের ভেতর চলা, এমন পরিমিতিবোধ নিয়ে তো আমরা বড়ো হইনি।

হঠাৎ আমার অবচেতন মন প্রশ্ন করল, “জবা, তুমি কী কিছু মিস করলে? যা তোমার পাওয়ার কথা ছিল, সেটা কী আরোহী পেয়ে গেল?”

ছিঃ, ছিঃ, এটা কেমন কথা? মনের মধ্যে এমন প্রশ্ন কেন তৈরি হল? আমি তো একবারের জন্যেও এমনটা ভাবিনি বা এ নিয়ে কোনও আফসোসও করিনি। তাহলে কী এখানে আসার পরই মনের ভেতর কোনও লোভ জেগে উঠেছে? নিজেকেই ধিক্কার দিলাম, এমন ছোটোলোকি ভাবনার জন্য।

————————–

শুক্রবার দুপুর হওয়ায় ছেলেরা কেউ বাসায় ছিল না। জুম্মার নামাজ শেষ করে একে, একে সবাই আসতে লাগল। সিয়াম আর তমাল ভাইয়াকে একসঙ্গে বাসায় আসতে দেখলাম। সঙ্গে অবশ্য ওদের আরও বন্ধুরা আছে। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন মুরুব্বি এলেন আমাদের এখানে। সিয়ামের মা আরোহীর সামনে এসে ওনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কেউ সিয়ামের চাচা, কেউ মামা, খালু, ফুপা, এমন করে দশ-বারোজনের সঙ্গে পরিচয় পর্ব শেষ হল। যিনি সিয়ামের মেঝচাচা, তাঁকে মনে হল, পুরো পরিবারেরই হর্তাকর্তা। তাঁকে সবাই সমীহ করে কথা বলছে। বিয়ে পড়াতে কাজী কেন এখনও আসেননি, এই নিয়ে তিনি রাগারাগি করতে, করতে সামনের দিকে চলে গেলেন।

কিছুক্ষণ পর কাজী আসার সংবাদ পেলাম। আরোহীকে বললাম, “কাজী চলে এসেছেন। আর একটু পরই তোর নতুন জীবনের সূচনা হবে। কেমন লাগছে?”

আরোহী বলল, “আমার নিজেকে কেমন অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে। ভালো না মন্দ কী হতে যাচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি না।”

“মন্দ কেন হবে? সবই তো ঠিকঠাক মতো হল। এখন শুধু কবুল বলার অপেক্ষা।”

মেঝচাচা, যিনি একটু আগে রাগারাগি করে চলে গিয়েছিলেন, তিনি আবার হৈচৈ করতে, করতে ফিরে এলেন। সিয়াম কই, মাহবুব কই, এই শামীম, এমন কতগুলো নাম ডাকতে, ডাকতে তিনি আমাদের সামনে দিয়ে গিয়ে বেডরুমে ঢুকলেন। তাঁর পেছনে অন্যান্য কয়েকজনও ঐ রুমে ঢুকলেন। সিয়ামকেও দেখলাম তড়িঘড়ি করে ঐ রুমে ঢুকতে। প্রথমে হৈচৈ এর কারণ না বুঝলেও, একটু পরই বিষয়টা পরিস্কার হল। মেয়ে কেন কোনও ফ্যামিলি মেম্বার ছাড়া বিয়েতে এসেছে? কেমন ফ্যামিলির মেয়ে যে বাবা বেঁচে থাকতেও, মেয়ের বিয়েতে আসেনি! হঠাৎ কেউ একজন রুমের দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় কথাগুলো দরজার ওপাশেই রয়ে গেল। এদিকে আরোহী উসখুস করতে শুরু করেছে। সে অস্থির হয়ে বলল, “আব্বাকে কী দরকার, আমার বিয়েতে আব্বাকে থাকতেই হবে কেন?”

আবারও দরজাটা খুলে গেলে শুনতে পেলাম, “সিয়াম তুমি কোথায় গেছ? তুমি কী আর কোনও মেয়ে পাওনি এই শহরে? নাম পরিচয়হীন, যার ফ্যামিলির কোনও ঠিক নেই, তেমন একটা মেয়ে….”

চাপা গলায় কেউ একজন কথার উত্তর দিল। মনে হল সিয়ামই কথা বলল; কিন্তু এতজনের কথার কারণে বুঝতে পারলাম না কী বলল। আবারও মেঝচাচার গলা শুনলাম, “মেয়ে নাকি পার্লার চালায়। কোন মেয়েরা পার্লার চালায়, তুমি জানো? আমার ভাই মারা গেছেন দেখে তুমি মনে করো না, এই বংশের মান-মর্যাদা নিয়ে তুমি খেলা করবে? ফ্যামিলির স্ট্যাটাস কোথায় নামাচ্ছ তুমি?”

আমি ভয় পাচ্ছি আরোহীকে নিয়ে। কথাগুলো শোনার পর ও না আবার উলটোপালটা কিছু বলে বসে! ভাবতে, ভাবতেই আরোহী উঠে দাঁড়িয়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি ওর হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বললাম, “তুই উঠে দাঁড়িয়েছিস কেন?”

“জবা, তুই শুনতে পাচ্ছিস না, লোকটা কেমন খারাপ কথা বলে যাচ্ছে?”

“বলুক। তুই বসে থাক।”

“এইসব খারাপ কথা শোনার পরও আমি বসে থাকব?”

“হ্যাঁ, বসে থাকবি। এটা তোর সমস্যা না। যার সমস্যা, তাকে বুঝতে দে। উত্তর দেওয়ার জন্য সিয়াম ভাইয়া আছে।”

ঐ রুমে হঠাৎ সবাই চুপ হয়ে গেল। সিয়াম প্রথমে শান্ত গলায় তার চাচাকে বোঝাতে চেষ্টা করল। চাচা আরও অশান্ত হয়ে চিৎকার করলেন, “মেয়ের গার্ডিয়ান আসলেই এই বিয়ে হবে। নাহলে হবে না।”

এবার সিয়ামের গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম, “আমি সব জেনে-বুঝেই আরোহীকে বিয়ে করছি। আমার যেহেতু কোনও সমস্যা নেই, অন্য কেউ কী ভাবল, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। স্যরি, মেঝচাচা।”

মেঝচাচাও চিৎকার করলেন, “আমি এক্ষুণি চলে যাব। ভাবী, তোমার ছেলের বিয়ে তুমি একাই দাও। এইসব নোংরামি দেখার জন্য আমাকে ডেকেছ তুমি?”

সিয়াম বলল, “অনেক দেরি হয়ে গেছে। কাজী সাহেবের অন্য জায়গায় কাজ আছে। বিয়ে পড়িয়ে উনি চলে যাবেন। আম্মা তুমি কী আসবে আমার সঙ্গে?”

উনি বোধহয় ভাতিজার অপমানটা হজম করতে পারলেন না। “এই দিহান, তোমার আম্মু কোথায়, ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলো” এসব বলে রুম থেকে বের হয়ে আসতে চাইলেন। আবারও মৃদু গুঞ্জন উঠল। মেঝচাচাকে আটকানোর জন্য সবাই বোধহয় মরিয়া হয়ে গেল।

একটু আগে যাঁদের আচরণে বনেদি ভাব ফুটে উঠেছিল, তার সঙ্গে মেঝচাচার আচরণটা কিছুতেই যাচ্ছে না। এরকম একজন করে ভেজাল লাগানোর মতো লোক বোধহয় সব পরিবারেই থাকে। হোক সেটা বনেদি, উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত। যেখানে সিয়াম বা তার মা-বোনদের কোনও আপত্তি নেই, সেখানে শেষ মুহূর্তে এসে তিনি একটা জট পাকাতে চেষ্টা করছেন কেন, সেটাই বুঝতে পারছি না।

সিয়াম বাইরে এসে তমাল ভাইয়াকে ডেকে বলল, কাজী সাহেবের লেখা শেষ হলে যেন ফ্যামিলি লিভিংয়ে চলে আসে। এখানেই বিয়ে পড়ানো হবে। ফ্যামিলি লিভিং দ্রুত খালি হয়ে গেল। সালমার বাবা-মা এসে আমাদের পাশে বসলেন। তার পরপরই কাজী সাহেব চলে এলেন। বেডরুম থেকে তখনও উত্তপ্ত কথাবার্তা ভেসে আসছে। সিয়াম, সামিরা আপুকে কিছু বলে কাজীর পাশে বসল। তার পেছনে নামিরা আপু আর তার বন্ধুরা এসে দাঁড়িয়েছে। সামিরা আপু আর আন্টিও চলে এলেন মুহূর্তের মধ্যেই। ওনাকে দেখে বুঝলাম, দেবরের চেয়ে ছেলের সিদ্ধান্তের গুরুত্ব তাঁর কাছে বেশি। উনি বসতেই সামিরা আপু একটা বাচ্চাকে ওনার কোলে বসিয়ে দিল। বাচ্চাটা সিয়ামের দিকে হাত বাড়াতেই বুঝলাম, ও-ই ইয়ানা। দাদী ওর হাতটা নামিয়ে দিতেই, ইয়ানা দাদীর কোলে মাথা রেখে চুপ হয়ে গেল।

দেনমোহর আর বিয়ের উকিল কে হবেন, এগুলো নিয়ে আগে আলোচনা করা হয়নি। আরোহীকে জিজ্ঞেস করা হলে সে জানাল দেনমোহর নিয়ে তার কিছু বলার নেই। সিয়াম যা বলবে, তা-ই হবে। সিয়াম বাড়ির বড়দের সঙ্গে কথা বলল। সালমার আব্বা খালুকেও তাঁরা দেনমোহরের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। খালু ছয় লাখ টাকা প্রস্তাব করলে, কেউ এটা নিয়ে দ্বিমত করল না। যেহেতু আরোহীর দিক থেকে কেউ আসেনি, তাই, সিয়ামের বড়োমামা বিয়ের উকিল হবেন।…………………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে