প্রেমময় আসক্তি ২ পর্ব-০৩

0
1270

#প্রেমময়_আসক্তি_২❣️
#পর্ব_৩
#নন্দিনী_চৌধুরী

৩.

আরিয়ান বিকালে গানের কনসার্টে গিয়ে সেখানে সো করে সন্ধ্যায় বাসায় আসলো। বাসায় এসে নীলাদ্রের সাথে কিছু সময় আড্ডা দিলো। আরিয়ান আর নীলাদ্ররা প্ল্যান করেছে তারা বান্দরবন যাবে ঘুরতে। আরিয়ানের অনেক নাকি পাহাড় দেখার ইচ্ছা। তাই সবাই মিলে দিন ঠিক করছে কবে যাওয়া যায়। আরিয়ান নিচ থেকে আড্ডা দিয়ে রুমে এসে ফোন বের করে একজনকে কল দিলো,,,,

আরিয়ান:হ্যা সব ঠিক আছে।

……………

আরিয়ান:ঠিক আছে খেয়াল রেখো।

আরিয়ান ফোন কেঁটে বারান্দায় চলে গেলো।

এদিকে,,,,

রাত রোদেলার জন্য আচাড় বানিয়েছে। রোদেলা আচাড় খাচ্ছে আর রাত ওর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে। মুন রোদেলার জন্য ফল আর দুধ নিয়ে রুমে আসলো। রাতকে রোদেলার এতো সেবা করতে দেখে মুনের অনেক ভালো লাগছে। মুন রোদেলার পাশে বসে রোদেলাকে বললো,

মুন:রোদেলা নে এই ফল আর দুধটা খেয়ে নে।
রোদেলা:উহুম দুধ গন্ধ লাগে।
মুন:গন্ধ লাগলেও তোকে খেতে হবে।
মুন জোর করে রোদেলাকে দুধ আর ফল খাইয়ে দিলো। তারপর চলে গেলো রান্না ঘরে। রাত রোদেলাকে গল্প শুনাচ্ছে আর চুলে বেনি করে দিচ্ছে।

রাতে সবাই একসাথে খাবার খাওয়ার পর। যে যার যার রুমে চলে গেলো। মুন রুমে এসে দেখে রাফসান কি জানি চিন্তা করছে। মুন রাফসানের পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,

মুন:কি ভাবছো?
রাফসান:না তেমন কিছুনা। আসলে অফিসের একটা কাজের জন্য আমাকে ১মাসের জন্য বান্দরবন যেতে হবে। এখন আমি চলে গেলে তোমাদের সাথে থাকবে কে। তাই ভাবছিলাম তোমাদের সাথে নিয়েই যাবো।
মুন:হ্যা সেটা খারাপ হয়না। তোমার ইচ্ছা এটা।
রাফসান:হুম।
মুন:আচ্ছা চলো আজকে গল্প করি।
রাফসান:আচ্ছা🥰।

তারপর মুন রাফসানের কাঁধে মাথা রেখে গল্প করতে লাগলো।

__________________________

রোদেলার ঘুমের মাঝে মনে হচ্ছে কেউ ওর হালকা ফুলে উঠা পেটের উপর চুমু খাচ্ছে। রোদেলার ঘুমের মাঝে এটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে। রোদেলা চোখ খুলে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। আদ্রিয়ান তার পেটের উপর চুমু খাচ্ছে। রোদেলা অবাক হয়ে বলে,

রোদেলা:আদ্রিয়ান আপনি?
আদ্রিয়ান রোদেলার দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে,
আদ্রিয়ান:হ্যা আমি। কেন আমাকে দেখে তুমি খুশি হলে না নেশামই।
রোদেলা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। পাশে থাকা রাতকে ধাক্কা দিচ্ছে কিন্তু রাত উঠছেনা। রোদেলা আসতে করে নিজের হাতে চিমটি কাটলো না সেতো স্বপ্ন দেখছেনা। আদ্রিয়ান আসলেই তার সামনে। রোদেলা আবার বলে,
রোদেলা:আপনি এখানে কিভাবে আসলেন।
আদ্রিয়ান:আসলাম কোনো ভাবে। কিন্তু তোমার এই অবস্থা কেন হুম। আমার বেবি গুলার এতো অযত্ন করছো কেন হুম। ঠিক মতো খাও না ঘুমাও না দেখছো চোখের নিচে কালো দাগ পরেগেছে শরীল কই এখন গুলুমুলু হবে তা না পাটকাঁঠি হয়ে যাচ্ছো আরো। এভাবে চললে আমার বেবি গুলাতো কষ্ট পাবে।

রোদেলা শোয়া থেকে উঠে বসলো। আদ্রিয়ান আবার ওর পেটের কাছে মুখ নিয়ে সেখানে আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে। রোদেলার দুই চোখ বেয়ে পানি পরছে। সে চাইলেও কিছু বলতে পারছেনা। আদ্রিয়ান রোদেলার পেটে মুখ গুঁজে রেখেই বলে,,,

আদ্রিয়ান:আমাকে তুমি নিজের হাতে মেরে ফেললেতো ঠিকি, কিন্তু দেখো আজ সেই আমার অংশকেই নিজের মাঝে জায়গা দিয়েছো। তাকে নিজের ভেতরে একটু একটু করে বড় করছো। আমার অস্তিতদের মাঝেই আমাকে অনুভব করো তাইনা রোদেলা।
রোদেলা:……….
আদ্রিয়ান:আচ্ছা রোদেলা একবার কি আমার কথা শোনা যেতোনা। একবার আমার কথা শুনতে আমাকে একবার বলার সুযোগ দিতে। তারপর নাহয় আমাকে শাস্তি দিতে। কিন্তু না তুমি আমাকে অবিশ্বাস করলে। আজ তোমার জন্য আমি আমার বেবিদের থেকে দূরে। আমি তোমাকে কোনোদিন মাফ করবোনা কোনোদিন না।

রোদেলা আদ্রিয়ানকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই চারপাশটা ধোঁয়া হয়ে গেলো। রোদেলা কিছু দেখতে পাচ্ছেনা ধোঁয়ায়। আদ্রিয়ান ধোঁয়ায় মিলিয়ে গেলো আর রোদেলা ধোঁয়ায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।

~সকালে~

রাতের ডাকে ঘুম ভাঙলো রোদেলার। রোদেলা আশে পাশে ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখে কাল রাতের কথা মনে পরে যায়। সাথে সাথে সে রাতকে বলে,

রোদেলা:রাত জানিস কাল আদ্রিয়ান আসছিলো আমাদের রুমে।
রাত:এহ! কি বলো আপু। আদ্রিয়ান আসবে কোথা থেকে।
রোদেলা:আমি সত্যি বলছি আদ্রিয়ান এসেছিলো এই রুমে।
রাত:আরে কি বলো। তুমি ভাইয়াকে নিয়ে বেশি ভাবো তাই স্বপ্ন দেখছো। মৃত মানুষ কোনোদিন আসে শুনছো।
রোদেলা:না আমি স্বপ্ন না সত্যি দেখেছি। আমি তোকে ডাক দিছি তুই উঠিস নাই।
রাত:তুমি আমাকে কই ডাক দিলা। আমি ডাক দিলে উঠিনা এমন হইছে কোনোদিন। আমি বলছিতো তুমি স্বপ্ন দেখছো। নেও উঠো মুখ হাত ধুঁয়ে নেও এরপর নাস্তা করবা।

রোদেলা আর কথা বাড়ায় না। সে বুঝতে পারছে রাত তার কথা বিশ্বাস করবেনা। রোদেলা উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর নাস্তা করতে নিচে যায়।

_______________________________

আশরাফ আর লিজা বসে আছে পাশাপাশি। হাতে তাদের মদের গ্লাস। লিজা গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর আশরাফকে বলছে,,

লিজা:এটাকি সত্যি যে আদ্রিয়ান বেঁচে আছে?
আশরাফ:আমি কিভাবে জানবো। আমাকে তো আমার ছেলেদের মধ্য একজন জানালো। কোন এক কনসার্টে ওরা আদ্রিয়ানকে দেখছে।
লিজা:ওরা মিথ্যা তো আর বলেনাই সিওর। আমার মনে হয় আমাদের খোঁজ নেওয়া দরকার।
আশরাফ:হ্যা আমি খোঁজ নেওয়ার জন্য লোক লাগিয়ে দিয়েছি।
লিজা:হ্যা কোনো রিস্ক নেওয়া যাবেনা।
আশরাফ’চিন্তা করোনা।

আশরাফ আর লিজা বিয়ে করে নিয়েছে। হ্যা সেইদিন লিজাকে যখন ওর ভাই পালাতে সাহায্য করেছিলো তখন আশরাফ লিজাকে পেয়েছিলো। তারপর আশরাফ লিজাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। তারপর দুজনে মিলে পরিকল্পনা করে কিভাবে আদ্রিয়ানকে সরানো যায়। এরপর আশরাফ আর লিজা মিলে আদ্রিয়ান আর রোদেলা বিরুদ্ধে এক কঠিন সরযন্ত্র করে। যা ফল রোদেলা আদ্রিয়ানকে বিশ্বাস না করে আদ্রিয়ানকে মেরে ফেলে। এরপর আশরাফ আর লিজা বিয়ে করে নেয়। লিজাও বুঝে যায় আশরাফের মতো সেফ জায়গা আর কোথাও নেই। তার উপর আশরাফ এতো ধনী।

-অন্যদিকে-

রুবা আজকে কলেজে আসছে। কলেজ শেষ করে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হতেই দেখে আরাভ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুবা দেখেও না দেখার মতো করে চলে যেতে নিলে আরাভ এসে ওকে টেনে গাড়িতে নিয়ে বসায়।

আরাভ:চুপ!একদম লাফালাফি করবান। এই মেয়ে এই আমি যে তোরে এই তিনদিন এতোগুলা ফোন ম্যাসেজ দিছি তার কোনো রিপ্লাই দেস নাই কেন তুই। ওই তোর কি আমাকে মানুষ মনে হয়না। আমাকে পাগল মনে হয় তোর। সমস্যা কি তোর বল?

রুবা:আপনি আমাকে ভুলে যান আরাভ। আমাদের এই সম্পর্ক আর না আগানোই ভালো।

আরাভ:মানে?
রুবা:আমি আর আপনার সাথে এই সম্পর্ক রাখতে চাইনা।
আরাভ:কেনো?
রুবা:এমনি আমার আপনাকে ভালো লাগেনা।
আরাভ:মজা মনে হয় তোর কাছে সম্পর্কটা যে তুই বললি আর আমি তোকে ছাড়লাম। তোর কি মনে হয় এই আরাভের জন্য অনেক মেয়ে পাগল কিন্তু এই আরাভ তাদের না তোকে ভালোবাসছে। আর তুই এখন বলছিস তোর আমাকে ভালোলাগেনা। এই সম্পর্ক আর না আগাই।
রুবা:হ্যা আমার আপনাকে ভালো লাগেনা। আমি আপনার সাথে রিলেশন রাখতে চাইনা।
আরাভ:ঠিক আছে যা তুই মুক্ত। আজ থেকে আমি আর তোকে আমার মুখ দেখাবোনা। বের হো গাড়ি থেকে।

রুবা আসতে করে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। আরাভ রুবার দিকে না তাকিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। রুবা আরাভের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

রুবা:আমাকে ক্ষমা করবেন আরাভ। সত্যিটা আমি আপনাকে বলতে পারলাম না। আমি চাই আপনি আমাকে ঘৃণা করুন। আমাকে মাফ করবেন পারলে।

রুবা কান্না করতে করতে বাসায় চলে আসে।

______________________

মিস্টার হাসান:আমি একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
মিস্টার খান:হ্যা ভাইয়া বলো।
মিস্টার হাসান:আমি আরিয়ানের বিয়ে দিতে চাই।
মিস্টার খান:এটাতো ভালো কথা। তা মেয়ে দেখেছো?
মিস্টার হাসান:হ্যা মেয়ে আমার পছন্দ আছে। আর আমার মনে হয় আরিয়ানের ও তাকে পছন্দ।
মিস্টার খান:কে সে?
মিস্টার হাসান:আরিয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড রুহি।
মিস্টার খান:বাহ্। তা মেয়েটা কোথায় থাকে?
মিস্টার হাসান:আমি আজকে ওকে আসতে বলেছি। এই শহরেই থাকে মেয়েটা।
মিস্টার খান:কখন আসবে?
মিস্টার হাসান:এই এলো বলে।

তাদের কথার মাঝে একটা মেয়ে আসলো বাসায়। মিস্টার হাসান মেয়েটাকে দেখে হাস্যউজ্জ্বল মুখে বললো,

“আরে রুহি মামনি এসো এসো। ”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে