প্রিয় মেহরাব – ইনায়াত হাসান ইনায়া

0
369

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং: চার

প্রিয় মেহরাব,

আমি যদিও আপনাকে প্রিয় বলে সম্বোধন করেছি। কিন্তু সেই অধিকার যে আমার নেই তা আমি খুব ভালো করেই জানি। আপনাকে প্রিয় বলে সম্বোধন করার অধিকার আপনি আমাকে দেননি আর কখনোই হয়তো দেবেনও না। কারণ এই অধিকারটা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন অনূভুতির, কিন্তু আপনার তো কোনো অনুভূতিই নেই। আপনার শুধু আছে জুয়ার নেশা! জুয়া খেলতে খেলতে সেটা আপনার নেশায় পরিণত হয়েছে। আর এই জুয়ার নেশাই আপনাকে একজন অনুভূতিশূন্য মানুষে পরিণত করেছে।
আচ্ছা, কেমন করে জড়িয়ে গেলেন এই নেশায়?
মামণি মাঝেমাঝেই আমাকে আপনার ছোটবেলার গল্প শোনায়। কতো সুন্দর আর মধুর সেই গল্পগুলো…
কিন্তু হুট করে কিভাবে চেইঞ্জ হয়ে গেলেন আপনি?
আচ্ছা মামণি আর বাবার চিন্তাও কি একবারের জন্য আপনার মনে আসেনা!

যানেন মেহরাব, আপনার জন্য কেন জানি আমি শতচেষ্টার পরেও মনের মধ্যে কোন ঘৃণা সৃষ্টি করতে পারিনা। তবে আপনি চাইলেই বা একটু চেষ্টা করলেই আপনার ভুলগুলোকে শুধরে নিতে আমি আপনার সাহায্য করতে পারতাম। কিন্তু আপনি তো আমায় সেই অনুমতি কখনোই দেননি আর দেবেনও না। আপনি তো আমায় প্রথম দিনই বলে দিয়েছিলেন,
“বিয়ে করেছি ভালো কথা কিন্তু তুমি তোমার মতো থাকো আর আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। আমার কোনো ব্যাপারেই তোমার হস্তক্ষেপ আমি সহ্য করবেনা।”
জানেন মেহরাব,
মামণি যখন আপনাকে মেহু মেহু বলে ডাকে আমার খুব ভালো লাগে শুনতে। আমারও খুব ইচ্ছে হয় আপনাকে মেহু বলে ডাকতে। কিন্তু সে অধিকার যে আমার নেই! আমি অবশ্য সেই অধিকার চাইও না। যদি আপনার সাথে আমার সংসারটা টিকে যায় তাহলে বাবা জিতে যাবে। নিজের ভুলটা কখনোই বুঝতে পারবেনা। এখন থাক সে কথা।

“আপনার সম্পর্কে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে কোন ব্যাপারটা জানেন?
“সেটা হলো আপনার কোনো ব্যাড ইনটেনশন নেই, আপনার নজর ভালো এবং এই ব্যাপারে আপনি খুবই অনেস্ট। নারীর নেশা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং মারাত্মক নেশা। কিন্তু আপনার সেই নেশা নেই। কারণ এক ঘরে এক ছাদের নিচে থেকেও আপনি কখনোই আপনার সীমা অতিক্রম করেননি।”

আরেকটা ব্যাপার হলো আপনার মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই নানারকম পজিটিভ পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। যেমন: অফডেতে বাসায় থাকা, সবার সঙ্গে একসাথে বসে খাবার খাওয়া, রাতে ড্রাঙ্ক না হয়ে বাসায় ফিরা…”

আবার আমার সাথে মাঝে মাঝেই কি সুন্দর হেসে হেসে গল্পও করেন।তবে দেরী করে বাসায় ফিরার অভ্যাসটা এখনো আছে। এটাই একটু সমস্যা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে একটুখানি কম্প্রোমাইজ করলেই আপনর সাথে মানিয়ে নেয়া যেতো..

যানেন, আপনার সাথে গল্প করতে বেশ ভালো লাগে আমার। তাছাড়া কি সুন্দর করে গুছিয়ে পড়াতে পারেন আপনি! গল্পে গল্পেই সব শিখিয়ে ফেলেন। তাই এখন খুব ভালো লাগে আপনার সঙ্গ আর আপনাকে।

সরাসরি আপনাকেই বলতে চাচ্ছিলাম কথাগুলো। কিন্তু সেই সাহস আর ইচ্ছে কোনটাই আমার নেই। তাই আপনার নামে এই চিঠি লিখা। যদিও এই চিঠি আপনার হাতে কখনোই পৌঁছবোনা আমি। শুধুমাত্র নিজের মনের কথাগুলো শেয়ার করার জন্যই এই চিঠির আশ্রয় নেওয়া…

ইতি আপনার স্ত্রী
আমিরাহ্ বিনতে হাসান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে