#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#১০ম_পর্ব( দ্বিতীয় সিজন)
রাতে আর ঘুমানো হলো না। সারা রাত যত সব চিন্তাতেই কেটে গেলো।
এখন শেষ রাত, চারদিকে একটু একটু করে আলো ফুটতে শুরু করছে। ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে গেলাম। এই সময় অবন্তী অনলাইন!
– তুমি ঘুমাও নি!
প্রায় দুই মিনিট পরে রিপ্লাই আসলো – ঘুমিয়েছিলাম ভাইয়া। কিছুক্ষণ হলো ঘুম ভাংলো। তুমি ঘুমাও নি!
– ঘুম আসলো না, তাই জেগেই আছি।
– ওহ আচ্ছা। হাঁটতে যাবে বাইরে!
– এই সকাল সকাল!
– হ্যা। ভোরের আবহাওয়াটা অনেক সুন্দর লাগে। ফ্রেশ তাজা বাতাস।
– আচ্ছা ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে বের হচ্ছি।
– ভাবী কি ঘুমাচ্ছে!
– হ্যাঁ।
– মায়া আপু!
– দু’জনেই ঘুমাচ্ছে।
– আচ্ছা আসো আমি ড্রয়িং রুমে আছি। তাড়াতাড়ি আসবা আমার কিন্তু ভয় করবে।
ফ্রেশ হয়ে বের হলাম।
ভেবেছিলাম এতো ভোরে মানুষ এখনো ঘুম থেকে উঠেই নি। কিন্তু রাস্তায় অনেক লোকের সমাগম দেখে আমার ধারণা বদলে গেলো।
– এতো মানুষ হাঁটতে আসে সকালে!
– হ্যাঁ। এনাদের মাঝে বেশিরভাগ মানুষই ডায়াবেটিস রোগের শিকার।
– ওহ আচ্ছা।
– অবন্তী কাল যে লোকটা তোমাদের বাসায় এসেছিলো তাকে কি তুমি চিনতে পেরেছিলে!
অবন্তী থেমে গেলো। এরপর কিছুক্ষণ ভাবলো – না ভাইয়া। আমি চিনি নি। তবে লোকটা আমায় চিনতো আমার নাম জানতো।
– কারণ লোকটা তোমার আশেপাশের কেউ ।
– আমার আশেপাশের!
– হ্যাঁ। তুমি তোমার একজন মামার কথা বলেছিলে আমায় মনে আছে! যে তোমার আম্মুকে খুব ভালো বাসতো!
– হ্যাঁ।
– চন্দ্রিমা কি উনার মেয়ে!
– সেটা তো ঠিক জানি না ভাইয়া। আমি ছোট থেকে জেনে এসেছি ও আমার মামাতো বোন। কিন্তু কোন মামার মেয়ে সেটা জানি না। কখনো জিজ্ঞেস ও করা হয় নি।
– ওহ আচ্ছা। তোমার ঐ মামাও নাকি মারা গিয়েছে।
– সেটা আমি জানি। কিন্তু তোমায় কে বললো!
– গতকাল রাতে আব্বু বললো।
– ওহ আচ্ছা। ভাইয়া ঐদিকে চলো সকালে এখানে অনেক সুন্দর চা পাওয়া যায়। আগে চন্দ্রিমা আমি লুকিয়ে লুকিয়ে হাঁটতে বের হতাম সকাল করে।
– লুকিয়ে কেন!
– দাদু বের হতেই দিতো না। চলো চা খাবো।
সূর্যের আলোর পরিমাণ একটু বাড়তেই আমরা বাসায় ফিরে আসি। ততক্ষণে বাসার প্রায় সবাই জেগে গিয়েছে। অধরা সোফায় বসে আছে । আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম – কি অবস্থা এখন তোমার!
অধরা আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো- আমার প্রচন্ড ভয় করছে এখনো। ভুত কি আবার আসবে!
– আসলেও ও তোমার কোনো ক্ষতি করবে না।
– কেন!
– কারণ তুমি নিজেই তো পেত্নীর মতো দেখতে ভুত নিজেই না ভয় পেয়ে যাবে।
অধরার কান্নার শব্দ বেরে গেলো।
– পাগলী মেয়ে মজা করলাম তো।
চন্দ্রিমা আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলবে জন্য হয়তো মনস্থির করছে কিন্তু আমি ইশারায় কিছু বলতে নিষেধ করলাম।
– আচ্ছা তুমি এখন নাস্তা করো কেমন আমি একটু শুয়ে পড়বো।
– এখন শুইবে কেন!
– রাতে ভুত তাড়াইছি না! তাই দিনে ঘুমাবো।
অধরাকে রেখে রুমে চলে আসলাম। মায়া ফোনে মনে হয় রাজের সাথে কথা বলছে। মায়াকে ইঙ্গিতে নিষেধ করলাম গতকাল রাতের ঘটনা রাজ কে যেন না বলে। শুধু শুধু ছেলেটা চিন্তা করবে।
চন্দ্রিমা আমার পিছনে পিছনে রুমে আসলো। মায়ার কথা শেষ হতেই মায়াকে নাস্তা করার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিলো।
– কোথায় গিয়েছিলে তুমি!
– বাইরে হাঁটতে।
– কে ছিলো সাথে! অধরা?
– অধরা কেন থাকবে! অবন্তী ছিলো।
– অধরার সাথে এতো ক্লোজড হয়ে বসে কেন সান্ত্বনা দিতে হবে শুনি!
– ও তো আমার বোন তাই না!
– সেটা তো ওর মনে থাকে না। তোমায় নিষেধ করছি না ওর কাছে না যেতে!
– গতরাতে ওর সাথে এমন বাজে একটা ঘটনা ঘটে গেলো আমি ওকে সান্ত্বনা দিবো না! ওর শরীরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবো না!
চন্দ্রিমা এতক্ষণ আমার সামনে দাঁড়িয়ে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছিলো আর কথা বলছিলো কিন্তু এবার আমার কাছে এসে গলা চেপে ধরলো – ওর শরীর স্বাস্থ্য জিজ্ঞেস করার জন্য বাসায় অনেক মানুষ আছে। তোমার ওকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করতে হবে না। বুঝতে পারছো!
– মেরে ফেলবে নাকি!
আমার গলা থেকে হাত সরালো- দরকার পড়লে তাই করবো তবুও কারো পাশে যেন না দেখি।
– থাক বাবা আমি এতো তাড়াতাড়ি পৃথিবী থেকে যেতে চাচ্ছি না। আমি এখন একটু ঘুমাবো আর কিছু বলবা!
– না। শুধু যা বলেছি সেটা মনে রাখলেই হবে।
সকালে রোদ থাকলেও সারাদিন আকাশ কিছুটা মেঘলা ছিলো।
এখন বিকেল, মেঘলা দিনের বিকেল গুলো অসম্ভব সুন্দর হয়। মনোরম একটা পরিবেশ পাওয়া যায়। চন্দ্রিমাকে চা বানিয়ে ছাঁদে নিয়ে আসতে বলে আমি ছাঁদে চলে আসলাম। কিছুটা সময় পর ছোট মা চা’র কাপ হাতে ছাঁদে আসলো।
– এই নাও তোমার চা।
– আপনি চা নিয়ে আসলেন কেন! চন্দ্রিমা কোথায়!
– ও আসছিলো আমি ওর থেকে নিয়ে আসলাম। তোমার সাথে একটু কথাও ছিলো।
– কি কথা!
– তোমরা ফিরে যাবে কবে!
– কোথায়!
– ঢাকায়।
– আরশের মামলা পুনরায় তদন্ত শেষ করে ওকে বাসায় নিয়ে এসে।
– সেটার প্রয়োজন নেই। আরশ যেখানে আছে সেখানেই থাক। সেখানেই ও ভালো আছে।
– ওহ আচ্ছা। ঠিক আছে তবে ।
– তোমরা আগামী কালই রওনা দিবে।
– দিতে পারি তবে সত্যি করে একটা কথা বলতে হবে।
– কি কথা!
– চন্দ্রিমার বাবা মা বেঁচে আছে!
কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলো- বাবার কথা জানি না তবে মা বেঁচে আছে।
– আমি উনার সাথে দেখা করতে চাই।
– কেন!
– আমার শ্বাশুড়ি আমি দেখা করতেই পারি। তাছাড়া চন্দ্রিমার ও তো ইচ্ছে থাকতে পারে ওর আম্মুর সাথে দেখা করার।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ঠিকানা দিবো গিয়ে দেখা করে এসো।
ছোট মা চলে যাচ্ছে। আমি চা’য়ে একটা চুমুক দিয়ে বললাম – কয়েকদিন পর পর রাতের আঁধারে আপনার সাথে যে দেখা করতে আসে সে কে! আপনার অতি আপন কেউ!
আমায় কথায় ছোট মা থ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো – কি, কি বলছো তুমি! আমার সাথে কে দেখা করতে আসবে!
– আপনি দেখি ঘাবড়ে গেলেন। আমি তো মজা করলাম।
– এমন মজা আমার একদম পছন্দ নয়।
পরের দিন ছোট মা’র দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে চন্দ্রিমার মা’র সাথে দেখা করি। আমি ভেবেছিলাম হয়তো সেখানে কিছু না কিছু তথ্য পাবো। কারণ আমার মনে হচ্ছিল এই সব কিছুর সাথে চন্দ্রিমার পরিবারের একটা গভীর সম্পর্ক আছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে চন্দ্রিমার মা’র সাথে কথা বলে আমার সম্পূর্ণ ধারণা বদলে গেলো।
সেখানে থেকে সোজা আরশের সাথে দেখা করতে চলে গেলাম। আরশের থেকে সেদিনের যেটুকু ঘটনা ওর মনে আছে সেটুকু শুনলাম।
এখন বিকেল এবং সন্ধ্যার মাঝে একটা সময়। রাজের বন্ধুকে নিয়ে সেই ছোট কুঠুরি ঘরে আছি যেখানে থেকে আরশকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো।
– স্যার কি গন্ধ ঘরটায়।
– এটা এখনো নেশা করার কাজেই ব্যবহার করা হয়। আচ্ছা আমাদের মামলার যে উকিল উনি কি ভালো, আমি বোঝাতে চাইছি ওনার প্রেজেন্টেশন কি গোছানো!
– আপনার কথা মতোই নতুন একজন উকিল ঠিক করেছি। উনার অতীত রেকর্ড চেক করা নেই তো।
– উনাকে যা শিখিয়ে দেওয়া হবে উনি শুধু সেগুলো গুছিয়ে প্রেজেন্ট করতে পারলেই হয়তো আমরা জিতে যাবো।
– এইটুকু তো পারবেই নয়তো উকিল কিসের।
– আগামী সপ্তাহে মামলার শুনানি তাইনা!
– হ্যাঁ স্যার।
– হয়তো এর মাঝে তোমায় আর একটু জ্বলাবো।
– সমস্যা নেই স্যার। আমি সব সময় প্রস্তুত থাকবো।
রাতে শুয়ে শুয়ে শুনানির দিনের চিন্তা করছি।
– টিকেট কেটেছো!
ছোট মা’র কন্ঠ শুনে মাথা তুলে তাকালাম। ছোট মা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
To be continue….