প্রিয় চন্দ্রিমা ২ পর্ব-০৭

0
465

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৭ম_পর্ব( দ্বিতীয় সিজন)
ছোট মা চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলো। আমিও ছোট মা’র পিছনে পিছনে রুমে আসলাম।
একটার পর একটা পাতা উল্টে ছবিগুলো দেখছি। এই ছবি থেকে বুঝতে পারছি আম্মু এবং ছোট মা খুব ভালো বান্ধবী ছিলো। মাঝে মাঝে কিছু কিছু জায়গা ফাঁকা। সেখানে থাকা ছবিগুলো হয়তো বের করে নিয়েছে।
আমি তখনও আধশোয়া হয়ে ছবিই দেখছি। অবন্তী আর চন্দ্রিমা রুমে আসলো। চন্দ্রিমা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার পাশে আধশোয়া হয়ে বসে পড়লো। অবন্তী আমাদের সামনে বসে কিছু সময় চন্দ্রিমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো- একটু তো লজ্জা পাওয়া উচিত। সামনে আমি বসে আছি আর তুমি আমার ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে আছো।
– তুমি আমার সামনে তোমার বর কে জড়িয়ে থেকো আমি কিছু বলতে আসবো না। তুমি আমার বরের সাথে কি করবো সেটাতে কেন বলতে আসবে!

দু’জনেই নিজেদের মাঝে কথা বলছে। দুজনের কেউ আমার হাতের এলবামটায় খেয়াল করে নি। দুজনের ঝগড়া শেষে অবন্তী খেয়াল করলো – তোমার হাতে ঐটা কি ভাইয়া! ঐটা তো আম্মুর এলবামের মতো দেখাচ্ছে।
– হ্যাঁ। এটা তোমার আম্মুর এলবাম।
– ওটা তো আম্মু কাউকে দিতো না। সব সময় আলমারিতে রাখতো। তুমি কোথায় পেলে!
– তোমার আম্মুই দিলো। এখানে আম্মু আর ছোট মা’র তোলা ছবিগুলো আছে। তারা একসাথে পড়ালেখা করার জন্য শহরে গিয়েছিলেন। আম্মু ছোট মা এবং আব্বু। তাদের গল্পটা সেখানেই শুরু হয়।
– আচ্ছা ভাইয়া তোমার নানু বাসা কোথায়!
অবন্তীর প্রশ্নে কিছুটা ভাবনায় পড়লাম। এতোদিনে কখনো নানুর বাসা নিয়ে কোনো ভাবনা মাথায় আসে নি। আম্মু নিজেও কখনো সে বিষয়ে আমায় কিছু বলেনি।
– আমি তো জনাি না। কখনো আম্মু কে জিজ্ঞেস করা হয় নি।
– যেহেতু আম্মু বড় মা এবং আব্বু একসাথে শহরে পড়তে গিয়েছে তাহলে বড় মা’র বাসা এখানেই আশেপাশে কোথাও হবে হয়তো।
– এটা ঠিক। হয়তো আব্বু বলতে পারবে। কিন্তু নানু বাড়ি খোঁজাটা এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ না।
অবন্তী আমার থেকে এলবাম নিয়ে নিজে ছবিগুলো দেখছে। আমি চন্দ্রিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। হঠাৎই অবন্তী বললো- ভাইয়া এই কয়েকটা ছবিতে তুমি কি কিছু খেয়ল করছো!
অবন্তীর হাত থেকে এলবাম নিলাম – কই দেখি! কি খেয়াল করবো?
– মনে হচ্ছে না ছবিগুলো একপাশে থেকে কম আছে। একজন বা দুজন চরিত্র কে কেটে ফেলা হয়েছে!
– তেমনি তো লাগছে। হয় না এমন যে বন্ধুদের মাঝে কারো সাথে ঝগড়া হলে আমরা নিজেদের কাছে থাকা গ্রুপ ফটোতে তাদের মুখে কালি লাগিয়ে দেই। তেমনি ছোট মা ও মনে হয় কেটে ফেলেছে।
– হবে হয়তো।
– মায়া কি করছে!
– আপুর মাথা ব্যাথা হচ্ছে জন্য শুয়ে পড়ছে।
– তুমিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। আর হ্যাঁ, গতবারে এসেও তো তোমাদের এলাকা ঘোরা হলো না। কাল তো শুক্রবার বিকেলে একটু ঘুরতে নিও আমাদের।
– আমায় বলছো কেন! তোমার বউকে বলো যে তোমার সাথে এমন আঠার মতো লেগে আছে। লজ্জা সব পানিতে গুলিয়ে খেয়েছে।
অবন্তী চন্দ্রিমাকে ভেংচি কেটে চলে গেলো।
– তোমার বোন একটা হিংসুটে।
– কেন! ও তো ঠিকই বলেছে। ওর সামনে এমন আঠার মতো লেগে থাকার কি দরকার ছিলো!
– খুব নিজের বোনের পক্ষ নিয়ে কথা বলা হচ্ছে তাই না! আচ্ছা ঠিক আছে আমি সরে যাচ্ছি।
চন্দ্রিমা আমার থেকে দূরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে- কি হলো!
– কি হবে!
– আমি তোমার থেকে সরে যাচ্ছি তুমি আমায় আটকাচ্ছ না কেন!
– তুমি সরে গেলে আমারই তো ভালো হবে। কেমন জানি চাপা চাপা লাগছে তখন মুক্ত লাগবে ।
– তাই না! যাবোই না। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকবে।
চন্দ্রিমা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।

পরদিন সকাল থেকে সব কিছু ঠিকই চললো। বিকেলে হাঁটতে বের হবো জন্য তৈরি হচ্ছি।
– এতো সাজুগুজু করছো কেন! মনে হচ্ছে মেয়ে দেখতে যাচ্ছো!
– রাস্তায় তো কম বেশি মেয়ে দেখাই হবে। তাছাড়া একটু স্মার্ট না দেখালে কেমন হবে না বলো! হাজার হলেও তো তোমার বর। লোকে কি বলবে! চন্দ্রিমার বর টা কেমন যেন আনস্মার্ট। তখন ভালো লাগবে শুনতে!
– ওহ আচ্ছা। এতো কিছু ভেবে আপনি সাজুগুজু করছেন সেটা তো বুঝতে পারি নি।
চন্দ্রিমা এসে আমার মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো – একদম এমন এলোমেলো থাকবে, যাকে কেউ না তাকায়। আমার বর কেমন সেটা আমি জানলেই হবে অন্য কারো সামনে স্মার্ট হতে হবে না।
– টি-শার্ট এ থাকবে নাকি পাঞ্জাবি পড়বো!
– এটাতেই সুন্দর দেখাচ্ছে টি-শার্টই থাক।
দরজায় নক করে অধরা ভিতরে আসলো। অধরা কে দেখে চন্দ্রিমার শরীরে যেন আগুন জ্বলে গেলো – তুমি এখানে কেন!
– সবাই অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য।
– আচ্ছা তুমি যাও আমরা আসছি।
অধরা যেতে গিয়েও ফিরে এসে বললো- এমন উষ্কখুষ্ক এলোমেলো চুলে তোমায় কিন্তু বেশ লাগছে। টি-শার্ট টা ও দারুন মানিয়েছে।
-ধন্যবাদ। এটা তো চন্দ্রিমার পছন্দ।
-আগে বলতে আমিও ম্যাচিং করে জামা পড়তাম। আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসো।

চন্দ্রিমা অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছু কিছু মানুষ প্রচন্ড রেগে গেলে নিজের অজান্তেই কেঁদে দেয়। চন্দ্রিমাও তাদের মাঝে একজন। দুচোখে পানি ছলছল করছে। এই বুঝি চোখের পলক ফেললেই দুফোঁটা মুক্ত কণা গড়িয়ে পড়বে।
বলতে না বলতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে।
– এই পাগলী কান্না করছো কেন!
– তুমি আমায় ধরবে না। তুমি ওকে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বলছো কেন?
– আমি তো বলিনি হয়তো অবন্তী বলছে। আচ্ছা আমি এখনই টি-শার্ট খুলে ফেলছি। তুমি শাড়ি পড়ছো আমিও পাঞ্জাবি পড়ছি কেমন!
বউয়ের মন রাখতে একজন পুরুষ কে যে কতশত ত্যাগ শিকার করতে হয় সেটা শুধু একজন পুরুষই জানে।
অতঃপর বের হলাম।
রুম থেকে বের হওয়ার আগে চন্দ্রিমার সোজাসাপটা ঘোষণা যদি অধরাকে আমার কাছে দেখে তাহলে আমার সাথে আর কখনো কথা বলবে না। এইজন্য অধরাকে কিছুটা এড়িয়ে চলছি।
– অনেক দিন পর আবার সবাই একসাথে এভাবে হাঁটতে বের হলাম তাই না অবন্তী!
রাদিয়ার প্রশ্নে মুচকি হেঁসে হ্যাঁ বললো অবন্তী।
– শুধু সুমন ভাইয়া আসলেই আমাদের এমন হাঁটা হয়। গতবার ও আপুর বিয়েতে হেঁটেছিলাম মনে আছে! ভাইয়া এখানে থেকে গেলেই পারে।
অধরার কথায় চন্দ্রিমা ফিসফিস করে বলছে – হ্যাঁ, এখানে থেকে যাই আর তুমি দিন রাত পিছু লেগে থাকো বেদ্দপ মহিলা।

কিছুটা হাঁটার পর রাস্তার পাশের টং দোকানে বসলাম সবাই। আমরা সবাই চা নিলাম কিন্তু মায়া উঠে গিয়ে একজন মহিলার সাথে দিব্যি হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।
মায়া এখানে কাউকে কিভাবে চিনবে! আমি চায়ের কাপ হাতে মায়ার কাছে গেলাম।
– তুমি এখানে কি করছো! উনি কে?
– আন্টি ভাইয়ার সাথে তো আপনার কখনো দেখা হয়নি। এই যে সুমন ভাইয়া।
– ওকে আমি দেখেছি কিন্তু ও কখনো আমায় দেখেনি।
মহিলার গলায় সেই চেইন। কিন্তু এই চেইন এই মহিলার গলায় কেন!
– ভাইয়া উনি আম্মুর খুব কাছের বান্ধবী।
– ওহ আচ্ছা। আন্টি আপনার গলার চেইনটা আমার খুব পরিচিত মনে হচ্ছে।
– এই চেইন তো তোমার আম্মু আমায় উপহার দিয়েছিলো। ওরা এই একই রকম পাঁচটা চেইন বানিয়ে নিয়েছিলো।
– এই ডিজাইনের চেইন কি সচরাচর বাজারে কিনতে পাওয়া যায়!
– আমার চোখে তো আজ পর্যন্ত কখনো পড়ে নি। এটা ইউনিক ডিজাইন কারন তোমার মায়ের পছন্দ সব সময় ইউনিক ছিলো।
এসব কথা বলতে বলতেই অবন্তী এসে হাজির।
– তাহলে আজ আমি আসি। অবন্তী তুমি তো আমার বাসা চেনো। তাহলে সময় করে ওদের নিয়ে এসো। আসি রে মা ( মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে উনি চলে গেলো)

একই রকমের চেইন পাঁচটা। আম্মুর একটা, ছোট মা’র একটা, এই আন্টির একটা। তবে আর দুইটা কার জন্য! আমার কাছে যেটা আছে সেটা কার! ছোট মা’র নাকি অন্য দুজনের মাঝে একজনের! যদি ছোট মা’র না হয় তবে সেই অন্য জন রাতের আধারে কেন বাসায় এসেছিলো! নিশ্চয়ই চুরি করতে নয়। উনি অন্য কোনো কাজে এসেছিলো।
– এখানে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি এমন গভীর ভাবনায় ডুবে গেলে! চলো ওরা সবাই বসে আছে।
অবন্তীর কথায় আবার এসে তাদের সাথে জয়েন করলাম।

To be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে