#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৫ম_পর্ব( দ্বিতীয় সিজন)
– তুমি তোমার বড় মা’র সাথে কিভাবে দেখা করলে! উনাকে খুঁজে পেলে কিভাবে!
– আব্বুর থেকে ঠিকানা নিয়েছিলাম।
– আমার সাথে দেখা করলে না যে!
– তুমি কি যেন কাজে শহরের বাইরে ছিলে তাই তোমার সাথে দেখা হয়নি।
– আচ্ছা । তুমি তোমার আম্মুর সাথে দেখা করো না কেন! উনি প্রতিবার এসে আবার ফিরে যায়। এতে উনি অনেক বেশি কষ্ট পায়।
– আমিও তো এখানে কষ্ট পাচ্ছি ভাইয়া। উনারা তো কেউ আমায় ছাড়াতে আসলো না। আমি বার বার করে বলেছিলাম আমি ঐ মেয়েকে চিনিই না, কখনো দেখিইনি। যখন কখনো দেখিইনি তাহলে খুন করবো কিভাবে ভাইয়া! আমি মানলাম আমি নেশায় ছিলাম কিন্তু তুমি ভাবো আমি যেখানে বসে নেশা করেছি সেখানে থেকেই পুলিশ আমায় গ্রেফতার করেছে। আশেপাশে অনেক দূর পর্যন্ত কোনো বাসা ছিলো না। তাহলে ঐ মেয়েকে আমি কোথায় থেকে কিভাবে নিয়ে আসবো সেখানে! তাছাড়া পরে জানতে পারি ঐ মেয়ে পাশের এলাকার। আমি যখন ঐ জায়গা থেকে উঠিইনি তাহলে কিভাবে পাশের এলাকায় গিয়ে মেয়েকে তুলে এনে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করলাম! এই সামান্য কথাটুকু কারো মাথয় ঢুকলো না। বাসায় কেউ আমায় কখনো বোঝে নি বা বোঝার চেষ্টাও করে নি । এই জন্য আমি কারো সাথে দেখা করি না। জীবনের শেষ পর্যন্ত তো এই চার দেয়ালের মাঝেই পঁচে মরতে হবে তাই এখনেই নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছি।
আরশের চোখে যে কেউ তাকালেই বুঝতে পারবে ছেলেটা একটুও মিথ্যা বলছে না। মানুষের শব্দ মিথ্যা বললেও দৃষ্টি মিথ্যা বলে না। তার চাহনি এখনো নিষ্পাপ।
– আমি তোমার মামলা পুনরায় খুলবো। তবে আমি যেমনটা বলবো তুমি ঠিক তেমনটাই করবে। তুমি কি আমার সাথে একমত আছো!
আরশ কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর বললো- আমি এখানে থেকে ছাড় পাবো তো ভইয়া!
– আমার কথা শুনলে অবশ্যই পাবে।
– আচ্ছা।
– তোমার ছোট বোন অবন্তীর কথা মনে আছে!
বোনের কথা বলতেই আরশের চোখে পানি চলে আসলো। প্রতিটা ভাই তাদের বোনের জন্য একটু বেশিই ভালোবাসা পুষে রাখে অন্তরে।
– সেই কবে পিচ্চি একটু দেখেছিলাম।
– আগামী কাল ও তোমার সাথে দেখা করতে আসবে। ভুলেও যদি মিস দাও তাহলে ও যে পরিমান অভিমানী তুমি এখানে থেকে বের হলেও হয়তো তোমার সাথে কখনো কথা বলবে না।
– তুমি চিন্তা কইরো না ভাইয়া আমি দেখা করবো।
সেদিনের মতো আরশের সাথে কথা শেষ করে ওর মামলা পুনরায় তদন্ত করার জন্য যা যা ফর্মালিটিস প্রয়োজন সব কিছু করলাম। রাফির বন্ধু এতে অনেক সাহায্য করলো।
রাতে বাসায় আসলাম। বাসায় ফিরতে বেশ কিছু সময় দেরিই হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সোফায় ছোট মা কে বসে থাকতে দেখে একটু অদ্ভুত লাগলো।
– আপনি এখনো ঘুমান নি!
– তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।
– আমার জন্য কেন! চন্দ্রিমা কই! ও কি ঘুমিয়ে গেছে?
– চন্দ্রিমা এখানে বসে ছিলাে। আমি জোর করে ওকে রুমে পাঠিয়ে দিলাম। হয়তো শুয়ে পড়ছে।
– ওহ আচ্ছা।
– তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার দিচ্ছি।
– আমি রুম থেকে আসছি।
রুমে আসলাম। চন্দ্রিমা রুমে নেই। আমি ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে আসলাম।
আমার সামনে খাবার দিয়ে ছোট মা সামনে বসলো।
– আরশের সাথে দেখা হলো!
– হ্যাঁ। কথাও হয়েছে বেশ কিছু সময়।
– কি বললো!
– সে অনেক কথা। তবে আমার মনে হয় সেই সময় যদি আপনারা একজন ভালো উকিল দিয়ে মামলাটা লড়াতেন তাহলে হয়তো আরশের জেলে আটকে থাকতে হতো না।
– তুমি ওর সাথে কি কথা বললে!
– এই যে আগামী কাল ও আপনাদের সাথে দেখা করবে।
– সত্যি দেখা করবে!
ছোট মা যেন আনন্দতে কেঁদে ফেললেন। আচল দিয়ে চোখ মুছে বললেন – ওখানে কি ওকে খুব বেশি টর্চার করে!
– সেটা আপনি কাল ওকে জিজ্ঞেস করে শুনে নিবেন।
ছোট মা’র সাথে কথা বলতে বলতেই আমার খাওয়া শেষ হয়ে গেলো।
– আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন আমি ও চলে যাই। আরশের মামলা পুনরায় তদন্ত করার আবেদন করা হয়েছে। এবার ও বের হবে চিন্তা করবেন না।
ছোট মা কে এইটুকু বলে আমি চলে আসতে শুরু করলাম। কিন্তু ছোট মা’র কথা শুনে আমার পা থমকে গেলো। ছোট মা বললেন- আরশকে বের করার দরকার নেই। ও ওখানেই থাক। ওখানেই ভালো আছে।
– আপনি কি বলছেন এসব!
– আমি চাই না ও বাইরে আসুক। বের হয়ে আবার তো সেই নেশা করবে এর থেকে ভালো সেখানেই থাকুক।
ছোট মা দ্রুত সেখানে থেকে চলে গেলেন। আমায় দ্বিতীয়বার কথা বলার কোনো সুযোগ দিলেন না। পিছনে থেকে ডাকলাম কিন্তু তবুও শুনলো না।
ছোট মা তো গত কালও আরশের ছাড়া পাওয়া নিয়ে অনেক আগ্রহ দেখালো তবে এই এক রাতে কি এমন হলো!
সারাদিন অনেক ক্লান্ত ছিলাম তাই বেশি কিছু না ভেবে রুমে চলে আসলাম। এতোদিন ছেলে দেখা করেনি তো তাই বুঝি অভিমানে এসব বললো।
রুমে আসলাম, কিন্তু চন্দ্রিমা এখনো রুমে আসেনি। এতো রাতেও অবন্তীর রুমে কি করছে! অবন্তীর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করলাম। কয়েকবার নক করার পরও যখন দরজা খুললো না তখন ভাবলাম হয়তো ঘুমিয়ে গেছে তাই ফিরে রুমে আসছি। চন্দ্রিমা দরজা খুলে বের হয়ে আসলো। সদ্য কাঁচা ঘুম ভেঙে উঠে আসছে।
– তোমরা ঘুমিয়ে পড়ছো?
– কিছু বলবা!
– রুমে গিয়ে দেখলাম তুমি নাই তাই দেখতে আসলাম তুমি এখানে কি না!
– তোমার রুমে আমি কেন থাকবো! আমি আমার রুমে ঘুমিয়ে পড়ছি।
– আচ্ছা ঠিক আছে। গিয়ে শুয়ে পড়। মায়া ঘুমিয়েছে!
– সবাই ঘুমিয়ে গেছে।
ঘুমের ঘোরে মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে মনে হয়। রুমে এসে দরজা লক করে মাত্র শুইছি তখন দরজায় ঠকঠক শব্দ শুনে উঠে দরজা খুলে দিলাম। চন্দ্রিমা দাঁড়িয়ে আছে।
– তুমি এখানে!
– তুমি আমায় নিয়ে আসলে না কেন?
– তুমি তো বললে তুমি তোমার রুমে ঘুমিয়ে পড়ছো। তাই নিয়ে আসিনি।
– আমি তো তখন ঘুমে ছিলাম। আচ্ছা বাজে কিছু বলেছি কি!
– না।
– ওয়াশ রুমে গিয়ে বুঝতে পারলাম তুমি আমায় ডাকতে আসছো। আজ কই কই ছিলে!
– আরশের সাথে দেখা করতে যাবে!
– ভাইয়া দেখা করবে!
– হ্যাঁ।
– তাহলে তো অবশ্যই দেখা করবো। তোমায় একটা জিনিস দেখাই। হয়তো তোমার থেকে পড়ে গিয়েছে।
– কি জিনিস!
গতকাল রাতে যে চেইনটা পেয়েছিলাম সেই চেইনটা চন্দ্রিমা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। – এইটা তোমার!
– তুমি এটা কোথায় পেলো!
– মেঝেতে পড়ে ছিলো। প্রথমে মনে করছিলাম এটা মনে হয় অবন্তীর পড়ে মনে পড়লো আসার সময় মায়া আপুর গলায় এমন চেইন দেখেছি। তাই এটা উনাকে দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে দেখলাম উনারটা তো উনার গলায় আছে। পরে বুঝতে পারলাম এটা তোমার।
– মায়ার গলায় এমন চেইন আছে! তুমি ঠিক দেখেছ তো?
– হ্যাঁ। গতকাল দেখেছি তারপর আজ আবার দেখলাম। একদম একই রকম। বদলে নেওয়া যাবে কেউ বুঝতেই পারবে না কোনটা কার।
এই জন্য চেইনটা এতটা চেনা চেনা লেগেছিল। কিন্তু চেইনটা বিশেষ কারো জন্য বানিয়ে নেওয়া মনে হচ্ছিল তবে মায়ার চেইনের সাথে কিভাবে ম্যাচ করে!
আমার গভীর ভাবনায় ছেদ পড়লো চান্দ্রিমার কথায় – কি এতো ভাবছো!
– তেমন কিছু না।
– এখন গুরুত্বপূর্ণ কথা শোনো, অধরা এসেছে তোমাকে যেন ওর ধারের কাছেও না দেখি। দেখলে কিন্তু খুন করে ফেলবো।
চন্দ্রিমার দিকে অবাক চোখে তাকালাম। যখন বললো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে ভেবেছিলাম কি না কি! মেয়েদের গুরুত্বপূর্ণ কথাও তাদের মনের মতোই। বোঝা বড়ই দুষ্কর।
To be continue…..