প্রিয়তার প্রহর পর্ব-০৭

0
414

#প্রিয়তার_প্রহর
পর্ব সংখ্যা (৭ )

দুপুরের কড়া রোদ চারপাশে। ঘর জুড়ে ফুলের সুবাস। আনন্দে গমগম করা পরিবেশে নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরেছে। প্রিয়তা আর আরহাম বসে আছে সোফায়। একটু পর পর নাক টানছে প্রিয়তা। ওড়না দিছে সর্দি মুছে যাচ্ছে। এসির নিচে বসেও ঘামছে মেয়েটা। নিদারুণ এক যন্ত্রণায় বুকটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে তার। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে আসছে। কারো কাছে পানি চাইবে এমন পরিস্থিতি নেই। বরং ভয়ে ভয়ে তাকাতে হচ্ছে সকলের দিকে। এই বুঝি কটুবাক্য ছুঁড়ে দিল কেউ।

প্রিয়তা ঢোক গিলল। গাল মুছে নিল অগোচরে। মিসেস নাবিলার দিকে তাকিয়ে রইল কয়েক পল। মিসেস নাবিলার চোখে মুখে দুঃখের আভাস। স্বামীর বোনের বিরুদ্ধে যে কথা বলবে ,এত সাহস হয়ে উঠছে না উনার। অপেক্ষা করছেন প্রহররে জন্য। প্রহর যথেষ্ট বুঝদার আর বুদ্ধিমান ছেলে। এই ধরনের ঝামেলা মেটানোর জন্য ওর চেয়ে ভালো কাউকে পাওয়া যাবে না।

প্রিয়তা আরহামের দিকে চাইল। ছেলেটা মন খারাপ করে বসে আছে। একটু পর পর সকলের দিকে তাকাচ্ছে। প্রিয়তা বুঝল ছেলেটার ভাবাবেগ। বললো,

” আমাদের ঘরে যেতে দিন আন্টি। কেন এভাবে আটকে রেখেছেন? আমি তো বলছি আংটিটা আমার ভাই বা আমি কেউই নেইনি।

সাবিনা বেগম এতক্ষণ চুপ ছিলেন। প্রিয়তার কথায় ঝাঁঝ মিশিয়ে বললেন,
” আংটি না দেওয়া পর্যন্ত কোথ্থাও যাইতো দিমু না।

প্রিয়তা চুপ করে গেল। নিজেকে আর প্রমাণ করতে ইচ্ছে করছে না তার। দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করছে। সমাজের মানুষ গুলো আসলেই অদ্ভুত। এরা হুট করেই একজনকে ভালোবেসে মনে জায়গা দিতে পারে। আবার হুট করেই জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারে। প্রিয়তা আর তার ভাই খেলনা? বাবা-মা নেই বলে কি তারা অসহায়? বসে বসে অপমান শুনবে তারা? প্রিয়তা এত বোকা কেন? যেখানে বাবা-মা ই তাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে, সেখানে বাইরের মানুষদের ভালোবাসা খাঁটি বলে মনে করলো? এত বোকা প্রিয়তা? এত নির্লজ্জ?

তিয়াশ আর প্রহর ফিরল কিছুক্ষণ পর। যেই বাড়িতে এটু পর পর জোরে গান বাজছিল সেই বাড়িতে নিরবতা দেখে কৌতুহল হলো তাদের। প্রহরের প্রথমেই চোখ পরল প্রিয়তার দিকে। সবাই মেয়েটাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়তা মাথা নিচু করে কাঁদছে। প্রহর অবাক হলো। কি হয়েছে এখানে?

মিসেস নাবিলা তিয়াশ আর প্রহর কে দেখে এগিয়ে এলেন। কণ্ঠে তার ভয়। চোখেমুখে কষ্টের ছাপ। প্রহরের কাঁধে হাত রেখে তিনি বললেন,

” আঁখির জন্য কেনা আংটি টা পাওয়া যাচ্ছে না প্রহর। তোর ফুপু বলছে আংটি টা প্রিয়তা বা আরহাম নিয়েছে। মেয়েটাকে কত গালমন্দ করছে। তুই কিছু একটা কর না।

প্রহর বিস্মিত হলো ভিষণ। এটুকু সময়ের মধ্যে এতকিছু হয়ে গেছে? আরহাম কেঁদে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। প্রিয়তার চোখে পানি। সকলেই ঘিরে রেখেছে দুজনকে। সাবিনা বেগমের রাগী চেহারা। সবটা দেখে প্রহর অসস্তিতে পরলো। পাশে থাকা তিয়াশের দিকে চেয়ে ইনোসেন্ট লুক দিল। তিয়াশ তা দেখে বোকা হাসল। করুণ চোখে তাকিয়ে রইল প্রহরের দিকে। প্রহর সময়টা দেখে নিল। সাবিনা বেগমের উদ্দেশে বললো,

” ফুপি, উনাকে এইভাবে ঘিরে রেখেছো কেন?

সাবিনা বেগম খুব ভালোবাসেন প্রহরকে। প্রহরকে ছোটবেলায় কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন তিনি। প্রহরের প্রতি আলাদা একটা টান অনুভব করেন সাবিনা বেগম। প্রহরকে দেখেই মেকি সুরে কাঁদতে লাগলেন তিনি। শাড়ির আঁচল দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে বললেন,

” তিয়াশের বউয়ের জন্যে এত দামী একটা আংটি কিনলাম। আংটিটা চুরি হইয়া গেছে বাপজান। দ্যাখ মাইয়াডার মুখ কত ছোড হইয়া গেছে।

আঁখির দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেন সাবিনা। পাশেই আঁখির বাবা-মা বসে আছে। বিভ্রান্ত হচ্ছে তারা। প্রহর মুখ গোল করে শ্বাস ছাড়ল। দু আঙ্গুল দিয়ে কপালে স্লাইড করল। বললো,

” তুমি প্রমাণ ছাড়া ওদের ব্লেইম করছো কেন? হোয়াই? আংটিটা আমার কাছে আছে। কেউ চুরি করেনি ওটা।

সাবিনা বেগম চুপসে গেলেন ততক্ষণাৎ। প্রিয়তার মাথা নিচু ছিল। চেনা কণ্ঠ শুনে মুখ উপরে তুললো। আংটির কথাটা বারবার বাজতে লাগল কানে। কথাটার প্রকৃত অর্থ বোধগম্য হতেই উঠে দাঁড়াল সোফা থেকে। কষ্টে জর্জরিত হওয়া তরুণীর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল। উজ্জল হলো মলিন মুখ। দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো প্রহরের দিকে। তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না প্রিয়তার। শব্দ বের করলেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলবে মনে হচ্ছে, কণ্ঠ আটকে আসবে মনে হচ্ছে। কিন্তু জিজ্ঞেস করা প্রয়োজন। আংটিটা কি পুলিশম্যানের কাছে আছে?

প্রিয়তা স্থির রইল। সবাই-ই স্থির রইল। প্রিয়তা উচ্চস্বরে বললো,
” আপনার কাছে আছে আংটি টা? দিয়ে দিন না উনাকে। আমার আরহাম চুরি করেনি। আমিও করি নি। দিয়ে দিন না আংটি টা। আমরা চলে যাবো এখান থেকে।

কথাটুকু বলেই মুখে হাত চেপে ঝরঝর করে কেঁদে উঠল প্রিয়তা। প্রহরের খারাপ লাগল বিষয়টা। প্রিয়তার চোখেমুখে আকুতি। করুণ শোনাচ্ছে কণ্ঠস্বর। বুকের ভেতর পাথর চেপে রাখা মেয়েটার মুখটা কেমন শুষ্ক দেখাচ্ছে। পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ ভর করেছে মনে হচ্ছে। প্রহর পর্যবেক্ষণ করলো পরিস্থিতি। একটা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। তিয়াশ লুকিয়ে আছে আড়ালে। এসবের ভিতরে সে থাকবে না বোঝা যাচ্ছে। প্রহর পকেট থেকে আংটির বক্স বের করলো। বক্স থেকে বের করলো চকচকে গোলাপী রঙের হীরের আংটি। সাবিনা বেগমের কপালে ভাঁজ পরল। বললো,

” বাপজান, এইডা তো ওই আংটি না। ওই আংটি সবুজ রঙের ছিল।

প্রহর সোফায় গিয়ে বসল আরহামের পাশে। আদরের সাথে গাল চেপে ধরল ছেলেটার। বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। বললো,

” ওই আংটি পরিবর্তন করে এই আংটিটা এনেছি আমরা। সবুজ আংটিটা আঁখি ভাবির পছন্দ হয়নি।

সকলেই আঁখির দিকে তাকাল। আঁখির বাবা-মা চোখ গরম করে তাকাল আঁখির দিকে। আঁখি মাথা নিচু করে ফেলল। প্রহরের ইশারায় নিধি আঁখি আর আঁখির বাবা-মাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে শরবত আর ফলমূল খেতে দিল। এদিকে প্রহর বললো,

” তোমরা যেই আংটিটা কিনেছো সেই আংটি ভাবির পছন্দ হয়েছে কিনা জানবে না? গতকাল তিয়াশ ভাইয়ার রুমে গিয়ে দেখি ভাইয়ার মন খারাপ। জিজ্ঞেস করায় বললো আংটিটার ছবি পাঠিয়েছে ভাবিকে। কিন্তু ভাবির এই সবুজ রঙ পছন্দ নয়। পাল্টে আনতে বলেছে। কিন্তু তিয়াশ ভাই আংটিটা পাল্টাতে পারবে না বলায় দুজনের মাঝে একটা মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে। ভাবির তো নিজের একটা পছন্দ আছে নাকি।

মিসেস নাবিলা কিছুটা বিরক্ত হলেন প্রহরের উপর। এতকিছু হবার পর এখন ছেলেটা এসব বলতে এসেছে? বললেন,
” আংটিটা নিয়ে গেছিস আমাদের বলিস নি কেন? বলে গেলে আমরা চিন্তা করতাম না। প্রিয়তাকেও এত বড় অপবাদ বহন করতে হতো না। মেয়েটা ভেঙে পরেছে একদম। কত কথা শুনতে হলো মেয়েটাকে।

প্রহর তাকাল প্রিয়তার দিকে। মাথা নিচু করে প্রিয়তা কেঁদেই যাচ্ছে। হেচকি তুলছে অনবরত। আগে যেই কষ্টের ছাপ ছিল এখন সেটা পুরোপুরি নেই। প্রহর বললো,
” ফুপিকে তুমি জানো মা। আগেকার যুগের মানুষদের মতোন আচার-আচরণ ফুপির। তিয়াশ ভাইয়ার সাথে ভাবির সম্পর্ক আছে শোনার পর প্রচুর সিনক্রিয়েট করেছিল। অনেক বোঝানোর পর ফুপি রাজি হয়েছে বিয়েতে। এখন যদি শোনে তিয়াশ ভাইয়ার বউ তার পছন্দ মানে না, তার পছন্দকে প্রায়োরিটি দেয় না, তাহলে কি পরিমান বাজে পরিস্থিতি তৈরী করবে ভেবেছো? বলবে মেয়ের ভদ্রতা নেই, মেয়ে এখনই তার মতের বিরুদ্ধে যাচ্ছে ব্লা ব্লা ব্লা। এজন্য আমি আর ভাইয়া লুকিয়ে আংটিটা চেঞ্জ করে এনেছি। অমি তো বলেওছিলাম আমরা না আসা পর্যন্ত প্রোগ্রাম শুরু না করতে।

” তুই আমাকে বলতে পারতি। মিসেস নাবিলা করুণ কণ্ঠে বলে উঠলেন।

” তোমাকে বললে তুমি ফুপিকে বলে দিতে। কোনো না কোনো ভাবে ফুপি জেনেই যেত। আঁখি ভাবিকে নিয়ে আলোচনা করতো। আমার আসতে তো আধঘন্টাও লাগেনি। তোমরাই আমাকে ফোন করতে পারতে কাউকে ব্লেইম করার আগে। আমি নিজেই তো পুলিশ নাকি? ঘরে পুলিশ থাকতে তোমরা নিজেরা তদন্ত করে চোর বের করে ফেলছো? বাহ্!

প্রিয়তা মুচকি হাসল। আরহামের কাছে গিয়ে ছেলেটাকে কোলে নিল আদুরে ভঙ্গিতে। আরহামের মাথা নিচু হলো প্রিয়তার ঘাড়ে। মুখ গুঁজে পরে রইল ছেলেটি। প্রিয়তা বললো,

” চোর তাহলে ধরা পরল। এবার আমরা যাই?

মিসেস নাবিলা এগিয়ে এলেন। আরহামের গায়ে হাত বুলিয়ে বললেন,
” যা হয়েছে ভুলে যাও প্রিয়তা। এত বড় একটা ঘটনা ঘটবে অমরা বুঝিই নাই। এখনই চলে যেও না। খাওয়াদাওয়া করে..

” আপনি যে আমাদের জন্য ভেবেছেন এটাই অনেক আন্টি। যেটুকু পেয়েছি সেটুকুই হজম করতে পারছি না।

বেরিয়ে আসার আগে প্রিয়তা সাবিনা বেগমের দিকে তাকাল। মুচকি হেসে এগিয়ে এলো সাবিনার সামনে। হাসি বিস্তৃত করে বললো,

” অনুতপ্ততা গ্রাস করেছে আন্টি? আমি কিন্তু আপনাকে ক্ষমা করবো না। আমার ভাইকে যে কষ্ট দিয়ে কাঁদায় তাকে আমি ক্ষমা করতে পারি না। বাইরের মানুষ বাইরের মানুষ বলে হেদিয়ে ফেলছিলেন। জেনে রাখুন কিছু কিছু সময় বাইরের মানুষরাই আপন হয়। আজ এই মুহূর্তে আমি বলছি, আমার ভাইকে যে অপবাদ দিয়েছে তার প্রতি বিন্দু মাত্র ভালোবাসা জন্মাবে না আমার। বিন্দুমাত্র ও না।

প্রিয়তা বেরিয়ে এলো। সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামতে কষ্ট হলো তার। বুকে এক শীতল প্রবাহ বয়ে গেল। কথাগুলো বলে শান্তি লাগল প্রিয়তার। আর কত চুপ থাকবে? আর কত মেনে নিবে? তারা কি এতটাই অসহায় যে যার ইচ্ছে হবে কাছে টেনে নিবে? আবার যখন ইচ্ছে হবে ছুড়ে ফেলে দেবে?

ঘরে ফিরে প্রিয়তা দরজা বন্ধ করে দিল ভিতর থেকে। আরহামকে নামিয়ে দিল কোল থেকে। দু ভাইবোন হাত মুখ ধুয়ে নিল একসাথে। প্রিয়তা গরম করে রাখা ডাল দিয়ে ভাত মাখাল। ছোট ছোট লোকমা তুলে খাইয়ে দিল আরহামকে। শান্ত শীতল কণ্ঠে বললো,

” আর কখনো ও বাড়ি যাবে না তুমি। মনে থাকবে?

আরহাম পিটপিট করে চোখের পাতা এক করলো। বললো,
” বিয়েটা হয়ে গেলে আর যাবো না।

প্রিয়তা রেগে গেল। ধমকে উঠল। ভাতের বাটি শব্দ করে নিচে রাখল। বললো,
” আজ এই মুহূর্ত থেকে ওই ঘরে যাওয়ার কথা ভুলে যাবে একেবারে। যদি ও বাড়ি যাও আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না বলে রাখলাম।

” কিন্তু রাতে যে আনন্দ হবে ছাদে। আমি ঘরে বসে থাকতে পারবো না আপু। মাথা নিচু করে কথাটা বলে উঠল আরহাম।

” শোনো, আজ থেকে আমি ছাড়া তোমার আপন বলতে কেউ নেই। আজ এই মুহুর্ত থেকে আমার আপন বলতে শুধু তুমিই আছো। আমরা বাঁচবো আমাদের নিজের জন্য। তুমি শুধু কাঁদবে আমার জন্য, আমি কান্না করবো তোমার জন্য। অন্য কোনো বাইরের মানুষের জন্য আমরা আমাদের মূল্যবান অশ্রু ফেলবো না। তোমার আমি ছাড়া আর কেউ নেই বুঝেছো? কেউ নেই। জীবনের প্রত্যেকটা পদক্ষেপে আমি তোমার পাশে থাকবো। আর তুমি মিশে থাকবে আমাতে। আমরা একে পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবো, দরকার হলে কঠিন ও হবো। কোন তৃতীয় ব্যক্তি আমাদেরকে কষ্ট দিতে পারবে না। আমরা কষ্ট দিতে দিবোই না।

সবটা শুনল আরহাম। কিছু কথা হয়তো বোঝেনি ছেলেটা। প্রিয়তা হাতে ভাত তুলে আরো কয়েক লোকমা আরহামের মুখে তুলে দিল। পুনরায় বললো,

” কাল আমরা শপিং করতে যাবো। তোমার জন্য শার্ট কিনবো। ও বাড়িতে যা রান্না হবে তার অল্পবিস্তর হলেও আমি রান্না করে খাওয়াবো তোমাকে। সারাদিন আমরা ঘুরবো, খাবো, আনন্দ করবো। অন্য কারো সাথে আনন্দ করার প্রয়োজন নেই তোমার। ওরা কেউ না তোমার। ক্ষণিকের জন্য এসেছিল, চলে গেছে।

আরহাম একটু খুশি হলো। তারা সারাদিন এই এলাকা ঘুরবে, নতুন জামা কিনবে, ভালো ভালো রান্না হবে। এতকিছু হলে আর কি চাই? ওই বাড়ির মানুষের দেওয়া অপবাদ খুব ভালো করেই বুঝেছে আরহাম। বোনের দুঃখের কারণ কিছুটা হলেও অনুমান করেছে। ওরা পচা লোক। আরহাম মিশবে না ওদের সাথে।

_________________

বিকেলে আরহাম আর প্রিয়তা গভীর ঘুম দিল। ঘুম থেকে উঠে জানালা খুলতেই অন্ধকার দেখল চারপাশ। বুঝতে পারল সন্ধ্যে হয়ে গেছে। প্রিয়তা চটপট উঠে ভাত চরিয়ে দিল চুলায়। ঘরে শুধু আলু আছে। অন্য কোন সবজি না থাকায় প্রিয়তা ভাতের মধ্যে আলু দিল ভর্তা করবে বলে। আরহামকে ডেকে তুলল। ট্রলি ব্যাগে থাকা বর্ণমালার বই রাখল আরহামের সামনে। প্রিয়তার মনে পরল হলুদ রঙের শার্টটার কথা। ছাদে ছড়িয়ে দিয়ে এসেছিল। সন্ধ্যে হয়েছে শার্টটা আনতে হবে। বুকে গামছা জড়িয়ে দরজা খুলতেই প্রহরকে দেখতে পেল প্রিয়তা। অবাক হলো খুব। ইসস্ত ভঙ্গিতে ছাদে উঠতে গেলে পিছন থেকে প্রহর ডেকে উঠল। দাঁড়াবে কি দাঁড়াবে না বুঝতে পারল না প্রিয়তা। তবুও ভদ্রতাসূচক থামল সে। বললো,

” আপনি?

” মা আপনাকে আর আরহামকে যেতে বলেছে। তিয়াশ ভাইয়াকে হলুদ দেওয়া হবে।

প্রিয়তা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। এত কিছুর পর ও এইভাবে তাদের নিমন্ত্রণ করার বিষয়টা বড্ড বেমানান লাগল প্রিয়তার কাছে। নরম হৃদয় কঠিন হলো প্রিয়তার। রূঢ় কণ্ঠে বললো,

” আন্টিকে বলবেন আমরা যেতে ইচ্ছুক নই।

প্রহর আশপাশে তাকাল। এইভাবে কথা এখানে বলার কোনো মানে আছে? কেউ দেখলে কি ভাববে? শান্ত কণ্ঠে প্রহর বলে উঠল,

‘ যা হয়েছে তাতে মায়ের কোন দোষ নেই। ফুপি দু দিন পর চলে যাবে। মা আপনাকে ভালোবাসে। আপনি না গেলে দুঃখ পাবে। সম্পর্কটা নষ্ট হবে।

” আমিও খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, যখন আমাকে চোর বলে সম্বোধন করা হয়েছিল। কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলে উঠল প্রিয়তা। চোখ সরাল প্রহরের থেকে।

” আরহামকে যেতে দিন।

” আরহাম যদি যেতে চায় তো নিয়ে যান।

প্রহর ডাকল আরহামকে। আরহাম বইটা বন্ধ করে বাইরে এলো। বললো,

” ডেকেছো আমায়?

প্রহর বসে পরল আরহামের সামনে। প্রিয়তার প্রতি সন্দেহ আছে তার। তেমনভাবে ভাবেও না প্রিয়তাকে নিয়ে। কিন্তু আরহাম ছেলেটাকে ভালো লাগে প্রহরের। নিষ্পাপ ছেলেটার প্রতি আলাদা মায়া রয়েছে প্রহরের। আরহামের গালে হাত বুলিয়ে সে বললো,

” তিয়াশ ভাইয়াকে ছাদে হলুদ মাখানো হচ্ছে। যাবে না? আমি নিতে এসেছি তোমায়।

প্রিয়তা বুকে দু হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রথম সিঁড়িতে। প্রহরের কথা শুনে কোন দিকেই তাকাল না আরহাম। মুখ গম্ভীর করে বললো,

” আমি যাবো না।

” প্রিয়তা না করেছে?

” না। ওরা আপুকে বকেছে। আপুকে যারা বকে তাদের সাথে আমার কথা নেই। একদম আড়িইই। তোমার সাথেও কথা নেই যাও।

প্রিয়তা গর্বের হাসি হাসল। সে জানতো আরহাম যেতে চাইবে না। প্রিয়তাকে আরহাম ও খুব ভালোবাসে। প্রিয়তার বিশ্বাস ছিল ভাই তার বিরুদ্ধে যাবে না, সব কথা শুনবে। আরহামের কথা শুনে প্রশান্তি অনুভব করল প্রিয়তা। অনুভব করল আজ থেকে আবার একা হয়ে গেছে তারা। সম্পূর্ণ একা

__________________
কাজের চাপে আবিরের সাথে কথা হচ্ছে না তানিয়ার। যদিও কথা বলার ইচ্ছে নেই, তবে বারবার ফোন করলে ধরা উচিত বলে মনে করে তানিয়া। যার সাথে সারাজীবন থাকতে হবে তার সাথে সুন্দর সম্পর্ক তৈরী করা প্রয়োজন। তানিয়া শুভ্র রঙের কামিজ পড়েছে। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নিয়েছে। চুলগুলোকে ঝুঁটি করে নিয়েছে। অফিস থেকে বের হবে বিধায় পরিপাটি হয়েছে ভালোমতো। নতুন চশমাটাতে গুলুমুলু লাগছে তানিয়াকে। মেয়েদের সৌন্দর্য আসলেই খুব জটিল।

তানিয়া আর ইহান অফিস থেকে বেরিয়ে এলো বাইরে। এখন বাজে সন্ধ্যে সাতটা বেজে নয় মিনিট। ট্যাক্সি ডেকে ইহান আর তানিয়া বসল একসাথে। পুলিশদের জন্য বরাদ্দকৃত জিপেই আসতে পারতো তারা। কিন্তু ইতিশা ম্যামের ব্যাপারটা গোপন রাখতে চাইছে ইহান। পুলিশের সাথে ম্যামের দেখা হচ্ছে এটা গোপন রাখাই ভালো। তানিয়া বসেই ম্যাসেঞ্জারে ঢুকল ততক্ষণাৎ। আবিরের আইডিটা প্রথমেই দেখতে পেল। বেশ কয়েকবার মেসেজ দিয়েছে ছেলেটা। তানিয়া লিখল,

” অফিসের বাইরে আছি। বাড়ি ফিরে আপনাকে ফোন দিচ্ছি।

আবির টেক্সট-টা দেখল। দ্রুত লিখে পাঠাল,
” বাড়ি ফিরে ফোন দাও না তুমি। এক্ষুণি ফোন ধরো।

তানিয়া পুনরায় লিখল,
” আমি একটু ব্যস্ত। আমি দিব ফোন।

এটুকু লিখেই ফোন রেখে দিল তানিয়া। ইহান পাশেই বসে আছে। সাই সাই করে চলছে ট্যাক্সি। তারা এখন যাচ্ছে ইতিশা ম্যামের বাড়িতে। ইতিশা ম্যামের সাথে আজ সামনাসামনি কথা বলবে ইহান। তথ্যগুলোকে জনগনের সামনে আনতে ইতিশা ম্যামের সাথে পুলিশ ফোর্স থাকবে এ বিষয়ে অবগত করতে হবে ম্যামকে, বোঝাতে হবে। তানিয়ার টাইপিং দেখে ইহান স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,

” তোমার বিয়ে কবে তানিয়া?

তানিয়া ভড়কাল। ইহান কখনোই তাকে ব্যক্তিগত কোন প্রশ্ন করে না। কাজের কথা ছাড়া অন্য কোনো কথাই বলে না তানিয়ার সাথে। তানিয়ার মনে হয় তানিয়ার পরিবারে কে কে আছে তাও জানে না ইহান। আজ হুট করে বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করায় ভিষণ অবাক হলো তানিয়া। ওড়না ঠিক করে বললো,

” সামনের মাসের শেষের দিকে।

ইহান হাসল খানিক। দুরত্ব বজায় রাখল দুজনের মাঝে। বললো,
” বিয়ের পর ও চাকরি করবে?

” এই পেশা আমার ভিষণ শখের। আমি সবসময় চাইতাম পুলিশ হতে। অনেক কষ্ট করে আমি এ জায়গায় এসেছি। আমি এ পেশাটাকে প্রচণ্ড সম্মান করি। এ পেশাটা ছাড়তে পারবো না। ছাড়তে চাই ও না।

ইহান আর কিছু বললো না। আশপাশে নজর বুলাল। নির্দিষ্ট স্থানে এসে চোখের ইশারায় তানিয়াকে নামতে বললো। ভাড়া মিটিয়ে দারোয়ানকে পরিচয় দিয়ে ভিতরে ঢুকল। দু তলায় ওঠে পড়ল দুজন। ইতিশা ম্যামের ঘর চিনে ইহান। বেলকনির পাইপ বেয়ে উঠেছিল একবার। দরজায় কয়েকবার টোকা দিতেই ইতিশা নায়েমা দরজা খুললেন। চিনতে পারলেন না তানিয়া আর ইহানকে। জিজ্ঞেস করলেন,

” আপনারা?

ইহান আশেপাশে তাকাল । নিম্ন স্বরে বললো,
” ম্যাম আমরা পুলিশ ফোর্সে আছি। অফিসার ইহান তালুকদার বলছি। আপনার সাথে আমাদের কিছু কথা আছে।

ইতিশা নায়েমা ঘরে ঢুকতে দিলেন ওদেরকে। বসতে দিলেন চেয়ারে। আকাশি রঙের শাড়ি পরিহিতা ইতিশা নায়েমার ছবি ইহান বইয়ের শেষ পাতার প্রচ্ছদে দেখেছে। আজ এত কাছ থেকে লেখিকাকে দেখে ভিষণ ভালো লাগল ইহানের। বললো,

” ম্যাম আমরা আপনার সম্পর্কে জানি। জাফর আলীর সম্পর্কেও জানি। আমরা এটাও জানি আপনি উনার বিরুদ্ধে লিখতে চান, উনার ষড়যন্ত্র ফাঁস করতে চান। আমরাও এই কেসে ইনভল্ভ্ড্। আমাদের আপনার সাহায্য প্রয়োজন।

ইতিশা নায়েমা অবাক হলেন। এ কথা তিনি গোপন রেখেছেন এতদিন। এর কারণ পুরোপুরি লেখা সম্পন্ন হয়নি উনার। এখনও কয়েক পৃষ্ঠা লেখা বাকি আছে। ছেলে হারানোর শোকে আজকাল লিখতেই ইচ্ছা করে না ইতিশার। সাদা খাতায় ভেসে উঠে ইব্রাহিমের মুখ। অগোছালো লাগে নিজেকে। হাহাকার নেমে আসে হৃদয়ে। বই পুরোটা লেখা শেষ হয়নি বিধায় এখনো কাউকে এ বিষয়ে জানান নি তিনি। এরা কিভাবে জানল এটাই প্রশ্ন। জিজ্ঞেস করলেন,

” তোমরা কিভাবে?

তানিয়া চশমা ঠেলে দিল পেছনে। বললো,

” আমরা সবই জানি ম্যাম। কেন আপনার ছেলেকে কিডন্যাপড করা হয়েছে তা আমরা জানি। জাফর আলীর সম্পর্কে আমরাও জনগনকে জানাতে চাই।

ইতিশা নায়েমা চোখ মুছলেন। বললেন,

” জাফর আলী এক নিম্ন মানসিকতার লোক। ও নিজের স্বার্থে, নিজের ব্যবসায় বড় করার জন্য ভেজাল পণ্য বিক্রয় করে সাধারণ মানুষকে অসুস্থ করে ফেলছে। আমি এ সম্পর্কে সবটা জেনে গিয়েছি, প্রমাণ যোগার করেছি। কিন্তু পুরো বই লেখার আগেই আমার ছেলেকে কিডন্যাপ করা হলো। আমাকে ব্ল্যাকমেইল করা হলো। আমি আর লেখার মনোবল পাচ্ছি না।

তানিয়া বললো,
” কিন্তু ওরা আপনার ক্ষতি না করে ইব্রাহিমকে টার্গেট করলো কেন? আপনার কাছে ওর বিরুদ্ধে সব প্রমাণ আছে। ওরা আপনাকেই তো মেরে ফেলতে পারতো।

ইতিশা নায়েমা হাসলেন। বললেন,
” তুমি কি ভেবেছো ওরা এটা করার চেষ্টা করেনি? আমাকে ফোন দিয়েছিল জাফর আলী। ওর বিরুদ্ধে লেখা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। হুমকিও দিয়েছে। ওরা আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিল একবার। আল্লাহ্-এর রহমতে বেঁচে গিয়েছি সেদিন। বুদ্ধি করে ওকে বলেছি “তোমার সব কুকীর্তির প্রমাণ শুধু আমার কাছেই সীমাবদ্ধ নয়। আরো অনেকের কাছেই আমি তোমার মুখোশ তুলে ধরেছি। আমাকে মেরে ফেললে ওরা বুঝে যাবে আমার খুনের জন্য তুমিই দায়ী। এরপর তোমার সব তথ্য ফাঁস করে দিবে ওরা। তাই আমাকে মারলে তোমারই ক্ষতি”। কথাটা বলার পর আর আক্রমণ করা হয়নি আমাকে।

” আসলেই কি আপনি তথ্য অন্যত্র রেখেছেন? বললো ইহান।

” রাখি নি। নিজেকে বাঁচাতে মিথ্যে বলেছি। ওরা ভেবেছে নিজের মৃত্যু নিয়ে যেহেতু ভয় নেই সেহেতু ইব্রাহিমকে ধরে হুমকি দিলে আমি মাথা নত করবো। ছেলে হারানোর শোকে ওদেয সব কথা মানবো। কিন্তু ওদের ভাবনা আমি ভুল প্রমাণিত করেছি। হয়তো আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলবে ওরা। কিন্তু তাতেও আমি পিছ পা হবো না। অবশ্য ইব্রাহিমকে মারলে আরেক ক্ষতি হবে ওদের। মিডিয়ার ধাক্কা সামলাতে হবে।

” আপনি আমাদের প্রমাণ গুলো দিতে পারবেন? অবশ্যই আপনার বই প্রকাশ হবার পরে।

” তোমাদের আমি বিশ্বাস করবো কেন? তোমরা যে অনেস্ট, আমি বুঝবো কিভাবে?

” আপনি বোধহয় আমাদের চিনতে পারেননি। আমরা প্রহরের টিমে আছি। আজওয়াদ ইশতিয়াক প্রহর, ইহান তালুকদার অ্যান্ড তানিয়া শেখ একই টিমের মেম্বার। আপনি আমাদের সম্পর্কে রিসার্চ করতে পারেন। বলে উঠল ইহান।

” ইতিশা নায়েমা উঠে দাঁড়ালেন। বললেন,
” আমি এর আগে অনেক পুলিশের কাছে গিয়েছি। তারা সবাই জাফরের পা চাটা গোলাম ছিল। এজন্য পুলিশের নিকট আর যাইনি আমি। আজওয়াদ আর তোমাদের নাম আমি শুনেছি বহুবার। কাল আমি থাকবো কি না জানি না। এসেছো যখন প্রমাণগুলো পেয়ে যাবে।

তানিয়া খুশি হলো। উঠে ইতিশা নায়েমার হাত মুঠোয় পুরে নিল। বললো,
” আপনাকে দেখে অনেকেই সততা সম্পর্কে জানবে ম্যাম। ছেলের জীবনের কথা না ভেবে আপনি যেইভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন, সত্যিই হ্যাটস অফ ইউ।

_____________________

তানিয়ার হোয়াটসঅ্যাপে কিছু ছবি আর তথ্য এলো। তা দেখে মুচকি হাসল তানিয়া। ইতিশা ম্যাম বই বের করলেই এই তথ্য জনগনের সামনে আনা হবে। অনেকেই বই পড়ে না। সেক্ষেত্রে যারা বই পড়ে না তারা টিভিতেই জাফরের কুকর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে। ইতিশা ম্যাম যেহেতু সবটা সংগ্রহ করেছেন সেহেতু তার লেখাই আগে প্রকাশ পাবে।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রশান্তির শ্বাস ফেলল ইহান। এত সহজে ইতিশা ম্যাম তাদের বিশ্বাস করবে ভাবেনি ইহান। যদিও তাদের পরিচিতিই তাদের কাজটা এত সহজ করে দিয়েছে।

ইহান রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফোনে চেক করলো সবটা রিকশা খুঁজতে লাগল। কোন বাহন না দেখে হাঁটতে উদ্যত হলো। ভাবতে লাগল পরবর্তী কার্যক্রম। কেসটা ডিশমিশ করতে পারলে উপরমহল খুব খুশি হবে। ভেবে ভেবে ইহান হাঁটতে লাগল সামনে। তানিয়া চেক করতে করতে পিছু পিছু হাঁটল। হুট করেই তানিয়ার মনে হলো পিছনে কেউ আসছে। পিছু ফিরে জায়গাটা দেখে নিল তানিয়া। কাউকে না দেখে মনের ভুল ভেবে আবার সামনে তাকাল। হুট করেই দুজন ছেলে ইহানের অনেকটা সামনে গিয়ে নিজেদের বাইক পার্ক করলো। একটা রিকশা দেখতে পেল ইহান। রিকশাওয়ালার সাথে কথা বলতে লাগল ভাড়া নিয়ে। কি মনে করে তানিয়া আশপাশে তাকিয়ে ওই দুটো লোকের দিকে তাকাল। লোক দুটোর হাতে পিস্তল দেখে চমকে উঠল তানিয়া। শিরা উপশিরায় ভয় ঝেঁকে বসল। বরফের ন্যায় জমে যাওয়ার উপক্রম। লোকগুলো বন্দুক তাক করলো ইহানের দিকে। তানিয়া অপ্রস্তুত হলো। মাথা কাজ করা বন্ধ হলো তানিয়ার। কি করবে ভেবে পেল না সেই মুহুর্তে। মুখ দি শব্দ বের হলো না তার। বন্দুক থেকে একটা বিকট আওয়াজ বের হলো। গুলির শব্দ শুনে ইহান ওপাশে তাকাতেই তানিয়া ধাক্কা মেরে ইহানকে ফুটপাতে ফেলে দিল। নিজেও সরে যেতে চাইল। কিন্তু গুলিটা লাগল তানিয়ার বাহুতে, সরে আসতে পারল না। কোনরকমে গুলিটা বাহু ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে। রক্ত ঝরছে অনবরত। তানিয়া বসে পরল রাস্তায়। ব্যথায় কুকিয়ে উঠল। চিকচিক করে উঠল তানিয়ার চোখের কার্ণিশ। ইহান দ্রুত উঠে তানিয়াকে ধরল। বাইকে থাকা লোকগুলোর দিকে তাকাল ইহান। এ মুহূর্তে তানিয়াকে দেখা বেশি প্রয়োজন বলে মনে হলো ইহানের। তানিয়াকে গিয়ে ধরে বসল সেখানেই। তানিয়ার হাত ধরে বললো,

” এটা কি করলে? আমাকে সরিয়ে নিজে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পরলে? এত মহৎ হতে কে বলেছে তোমায়? কতটা ব্লিডিং হচ্ছে।

তানিয়া চোখ মেলে তাকাতে পারল না। যন্ত্রণায় হাঁসফাঁস করতে লাগল। ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল দু মিনিট পরেই। ইহান বিরক্ত হলো খানিক। বললো,

” তোমাকে পুলিশে জয়েন হতে কে বলেছে স্টুপিড? আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই পটল তুলছো দেখছি। মাথামোটা কোথাকার। এতটুকুতেই অজ্ঞান হতে হয়? চোখ খুলো তানিয়া। স্পিক আপ।

চলবে?
লেখনীতেঃ #বৃষ্টি_শেখ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে