প্রনয়ের দহন পর্ব-২৮+২৯+৩০

0
435

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৮

ইশান চোখ দুটো ছোট ছোট করে গাড়ির কাঁচ ভেদ করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে সারা রাজ্যের বিস্ময়ের চাঁপ। ভ্রুদ্বয়ের মধ্য স্থানে ভাঁজ পড়ে আছে। ঠোঁট দুটো ফাঁক হয়ে আছে। নিজের চোখকে এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে স্বয়ং তীর তার দু চোখের সামনে একটা ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

ইশান সবে ফরাজী ভিলার সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে সিকিউরিটি গার্ডকে গেইট খোলার জন্য বলে। আর ঠিক সেই সময়ে একটা বাইক ইশানের গাড়ি পাশ কাটিয়ে গিয়ে আহমেদ ভিলার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ইশান তখন ভ্রু কুচকে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু যখনেই তীরকে দেখলো বাইকে দেখে নামছে তখনেই‌ যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ইশান চাইলেই এক্ষুনি গিয়ে ছেলেটার কলার চেঁপে ধরতে পারতো কিন্তু না ইশান এই ড্রামার শেষটা দেখতে চায়।

অন্য দিকে তীর রাহুলের মাথায় হেলমেট পরিহিত ভয় ভয় চেহারাটা দেখে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলে।

–কি হলো? আমার হাতে গোলাপের গাজরাটা পরিয়ে দেয় তাড়াতাড়ি।

রাহুল শুকনো ডোক গিলে বলে।

–দোস্ত ভয় করছে খুব! হাত কাঁপছে দেখ।

তীর রাহুলের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই হাতটা মৃদু কাঁপছে। তীর দাঁত কেলিয়ে বলে।

–বেশি ভাব না ধরে তাড়াতাড়ি পড়া।

–পিছনে ইশান ভাইয়া নিশ্চয়ই আমাদের দিকে ভয়ংকর এক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে। আমি বরং চলে যাই।

তীর দাতে দাত চেঁপে বলে।

–একদম না যে কাজটা করতে এসেছিস সেই কাজটা কমপ্লিট করে তারপর যাবি। ভয়ে পিছুপা হলে‌ এখন চলবেে না। তাই চুপচাপ আমার হাতে গাজরাটা পরিয়ে কেঁটে পড় এখানে থেকে।

–ঠিক আছে চেষ্টা করছি।

রাহুল একবার বাইকের লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে ইশানের গাড়িটা দেখে চোখ বন্ধ করে আল্লাহ আল্লাহ করে বুকের বা পকেট থেকে গোলাপ ফুলের গাজরা বের করে তীরের বা হাতে পরিয়ে দেয়। তীরও হাসি হাসি মুখ করে লজ্জা পাওয়ার ভান করে।

কিন্তু অন্য দিকে এটা দেখে ইশানের মাথায় আগুন জ্বলে উঠেছে। চোখ দুটো লাল বর্ণের আকার ধারন করছে। ইচ্ছে করছে সব কিছু ধ্বং*স করে দিকে। বিশেষ করে তীরের এমন রুপ দেখে। তীরের জীবনে যে কেউ আছে সেটা ইশান টেরেই পায় নি।‌

এ দিকে ইশানের পাশে বসা ইশা চোরা চোখে একবার ভাইয়ের দিকে তো একবার সামনে থাকা তীর আর রাহুলের দিকে তাকাচ্ছে। ইশার আর বুঝতে বাকি নেই যে তার ভাইয়ের মনে আগুন জ্বলতে শুরু করেছে। সেই আগুনের উত্তাপ যে আগ্নেয়গিরি লাভার থেকেও বেশি তাপ তা আর বুঝতে বাকি নেই। এখন শুধু অপেক্ষা করার পালা এর পর কি কি কান্ড ইশান ঘটাতে চলেছে তা দেখার।

তীর বা হাতে পরিহিত গাজরাটা ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করতে করতে ডান দিকে গাড়টা কাত করে ইশানকে দেখে ভয় পাওয়ার ভান করে। এমন একটা ভান ধরছে যে ওরা দু জনে বুঝতেই পারে নি ইশানের গাড়ি যে এতক্ষন এখানে দাঁড়িয়ে ছিলো। তীর একটা মেকি হাসি দিয়ে রাহুল দিকে তাকিয়ে জোরে বলে।

–আমি এখন আসি। তুমি চলে যাও এখান থেকে তাড়াতাড়ি।

বলেই দৌঁড়ে বাড়ির ভেতরে ডুকে পরে। রাহুল হতভম্ব হয়ে যায় তীরের এমন আচরণ দেখে। কিন্তু এখন আর তীরের আচরণ নিয়ে ভাবলে চলবে না তাকে এই মুহূর্তে এখান থেকে চলে যেতে হবে না হলে একটা দু*র্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। “একটা দু*র্ঘটনা সারা জীবনের কান্না”। সে সারা জীবন কান্না করতে পারবে না। তাই তাড়াতাড়ি করে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।

অন্য দিকে ইশান বাজখাই কন্ঠ ইশাকে বলে।

–গাড়ি থেকে নাম কুইক।

ইশাও তাড়াতাড়ি করে নেমে যায়। আগে থেকে ইশা নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছিলো কখন ইশান এই কথাটা বলবে আর কখন ও নামবে। ইশা নামতেই ইশান হাই স্প্রিডে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

ইশানের গাড়ি চলে যেতে তীর বের হয়। এতক্ষন তীর গেইটের ফাঁক দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলো কি হয়? ইশা তীরের কাছে গিয়ে বলে।

–দোস্ত ভাইয়ার মনে আগুন লেগে গেছে।

তীর ভ্যাবলার মতো বলে।

–কতটুকু আগুন লেগেছে?

–যত টুকু লাগা দরকার ছিলো তত টুকুই লেগেছে। তুই যখন রাহুলে হাত ধরে ছিলি যখন যদি তুই ভাইয়া চেহারাটা দেখতি তাহলে বুঝতে পারতি ভাইয়া কি পরিমাণ রেগে ছিল।

–এবার কি হবে? ওনি তো রাহুলের পিছু নিয়েছে।

–কিচ্ছু হবে না রাহুলের। তুই দ্বিতীয় প্ল্যানটা বাস্তবায়ন করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখ।

–আগে প্রথম প্ল্যানটা সাকসেসফুল হোক তারপর দ্বিতীয় প্ল্যানটা নিয়ে ভাববো।

–দাঁড়া রাহুলকে একটা কল করি দেখি কি কন্ডিশনে আছে ও।

এ দিকে রাহুল নিজের আপন মনে বাইক চালিয়ে যাচ্ছে। অনেকটা দুরে চলে এসেছে তাই এখন ও নিশ্চিন্ত হয়ে আছে। কিন্তু যখন ফোনটা ভাইব্রেট করে ওঠে তখনেই ভয় পেয়ে যায়। রাহুল বাইকটা থামিয়ে এক সাইডে রেখে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ইশার ফোন। ফোনটা পিক করে বলে।

–হে বল।

ইশার চিন্তিত কন্ঠ ফোনের ওপর পাশ থেকে ভেসে আসে।

–কোথায় তুই এখন?

–রাস্তার আছি কেন? কি হয়েছে?

–আরে গা’ধা ভাইয়া তোর পিছু নিয়েছে।

রাহুলের চোখ দুটো ভয়ে যেন খোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।

–কি বলছিস’টাকি তুই?

–হে সত্যি বলছি ভাইয়া তোর পিছু নিয়েছে।

–এরে ইশা রে এবার আমার কি হবে রে?

–আরে কিছু হবে না ভয় পাস না।

রাহুল পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ইশানের গাড়ি তার দিকে পাকিস্তানের সিটা গু*লির মত তেরে আসছে। রাহুল কল কাটার আগে বলে।

–ভাই আমি তর সাথে পরে কথা বলি আগে নিজের প্রান বাচাই। “নিজে বাচঁলে বাপের নাম”।

রাহুল হাই স্পিডে বাইক স্টার্ট দেয়। রাহুল নিজের প্রানটা হাতের মুঠোয় রেখে বাইক চালাচ্ছে। কিন্তু রাহুলের মনে হচ্ছে এত জোরে বাইক চালালে নির্ঘাত ও মা’রা যাবে। তাই ইশার বলা বুদ্ধিটাই কাজে লাগাতে হবে। কোনো চি’পা রাস্তাই ডুকতে হবে ইশানের হাত থেকে বাঁচতে চাইলে। যেই ভাবা সেই কাজ একটা চি’পা রাস্তায় ডুকে পড়ে রাহুল।

অন্য দিকে ইশানও হাই স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছে। কিন্তু দু চাকার সাথে কি আর চার চাকা পেরে উঠে। যখনেই বাইকটা রাস্তার পাশের চিপা গলিতে ডু’কে যায় তখনেই ইশান হারিয়ে ফেলে বাইকটা। ইশান গাড়ি থামিয়ে স্টিয়ারিং জোরে একটা আ*ঘাত করে অকথ্য ভাষায় একটা গা*লি দেয়। রাগে মাথাটা ফেঁটে যাচ্ছে মন চাইছে সব কিছু নিঃশেষ করে দিতে। বার বার চোখের সামনে ছেলেটা তীরের হাতে গাজরাটা পরিয়ে দেওয়ার মুহূর্তটা ভেসে উঠছে। গাড়ির হর্নের আওয়াজে ইশান নিজের সম্মতি ফিরে পায়। তার গাড়ি এভাবে মাঝ রাস্তায় দাঁড় করাতে অনেকটা রাস্তা জুড়ে জ্যাম লেগে গেছে। ইশান তাড়াতাড়ি করে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

________

তীর বাড়িতে ডুকে সোজা গোসল করতে ডুকে যায়। তার মেজাজ খুব ফুরফুরে রাহুল ধরা পড়ে নি ইশানের হাতে ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে। ইশানকে এভাবে জ্বলতে দেখে তীরের মনে যেন একটা পৌ’শাচিক আনন্দ কাজ করছে। গোসল করে মনের আনন্দ ভিজা চুল গুলা হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। যখনেই সিঁড়ির প্রথম ধাপে আসে তখনেই চোখ যায় সোফায় বসে থাকা ইশানের দিকে। ইশানকে দেখে তীরের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে, চোখ দুটো রসগোল্লার মতো ইয়া বড় বড় হয়ে যায়। ইশানকে এই মুহূর্তে এই‌ জায়গাতে একদমেই আশা করে নি। তবে কি ইশান মাকে আজকের সব ঘটনা বলে দিতে এসেছে। এটা ভাবতে তীরের গলা শুকিয়ে আসে। ইশান যদি সবটা বলে দেয় তাহলে আজকে তার জীবনে কি’য়ামত নেমে আসবে কি’য়ামত।

আয়েশা সুলতানা রান্না ঘর থেকে ইশানের জন্য এক কাপ চা নিয়ে আসার সময় চোখ যায় তীরের দিকে। তীরকে এমন মূ’র্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে।

–কি রে! এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

আয়েশা সুলতানার কথা শুনে ইশান চোখ তুলে তাকায় সামনের দিকে। এতক্ষন ইশান নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা নিয়ে ভাবছিলো তাই তীরকে খেয়াল করে নি। যখনেই তীরের দিকে নজর যায় তখনেই ইশানের বুকটা ধ্বক করে উঠে। সদ্য স্নান করা তীরের সিগ্ধ, মায়াবী মুখটা দেখে যেন ইশানের হার্টবিট দ্বিগুন বেড়ে গেছে। ভেজা লম্বা রেশমি চুলগুলা থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। এ যেন এক মায়াবীনি দাঁড়িয়ে আছে ইশানের চোখের সামনে। ইশান ডোক গুলে সাথে সাথে নিজের নজর অন্য দিকে ফিরিয়ে নিয়ে জোরে নিঃশ্বাস ছাঁড়ে। এই মেয়ে একদিন ইশানকে #প্রনয়ের_দহন এ পু’ড়িয়ে তার সবকিছু ছাঁরখার করে দিবে। আয়েশা সুলতানার কথা কর্ণগোছর হতেই ইশানের ঘোর কাটে।

–তা ইশান কি বলতে চেয়েছিলে তুমি এখন বলো?

মায়ের কথা শুনে তীর চমকে উঠে। তার মানে ইশান আজকের ঘটনাটা বলতে এসেছে। না না তা কিছুতেই হতে পারে। এটা জাস্ট একটা অভিনয় এর বেশি কিছু নয়। কিন্তু এটা তো এখন বলাও যাবে না। তাই কিছু একটা করে আটকাতে হবে। তীর কয়েক কদম এগিয়ে জোরে বলে।

–মা আমাকে কিছু খেতে দাও ভিষন খুদা পেয়েছে।

ইশান চকিতে তীরের দিকে তাকায়। তীরের এই অস্থিরতা কিসের জন্য ইশান বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে। চোখে মুখে ভয়ের চাপ স্পষ্ট ফুটে উঠছে। দু হাত বারবার কচলাছে। ইশান তীরের ভয়ের মাএাটা আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাঁকা হেসে বলে।

–আন্টি আগে আমার কথাটা শুনন তারপর ওর কথাটা শুনবেন।

তীর আবারও চিৎকার করে বলে।

–না মা ওনার কথা তোমার একদমেই শুনতে হবে না। তুমি বরং আমাকে কিছু খেতে দাও আমার খুব খিদে পেয়েছে।

আয়েশা সুলতানা মেয়ের দিক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে।

–তুই এমন করছিস কেন? সবসময় তো খিদে পেলে নিজে কিছু বানিয়ে খাস তাহলে আজকে আমাকে বলছিস কেন?

তীর বিরবির করে বলে।

–বলছি কি আর সাধে।

আয়েশা সুলতানা বলেন।

–ইশান তুমি কি বলবে বলো।

–আসলে আন্টি হয়েছে কি…

ইশানের কথার মাঝেই তীর বলে।

–মা আমার কথাটা আগে শুনো।

আয়েশা সুলতানা এবার রেগে বলেন।

–একটা দিবো খিদে পেয়েছে নিজে বানিয়ে গিয়ে খা। আর একবার যদি তোর বা হাত ডুকিয়েছিস কথার মাঝে তাহলে খবর আছে তোর।

তারপর ইশানের দিকে তাকিয়ে বলেন।

–হে ইশান তুমি বলো কি বলবে?

ইশান তীরের দিকে তাকায় তীর মাথায় নাঁড়িয়ে না করে যাতে ইশান কিচ্ছু না বলে মাকে কিন্তু ইশান তো ইশানেই।

#চলবে________

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৯

তীরের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ক্রমশ। শুষ্ক ঠোঁট জোড়া বার বার জিভ দ্বারা ভিজাচ্ছে আর কামড়াচ্ছে। ইশান যদি এক বার মুখ খুলে আজকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলে দেয় মাকে তাহলে তীরকে আর আস্ত রাখবে না সোজা বিয়ের সানাই বেজে যাবে তার। বাবার থেকে মাকে ভীষন পায় মেয়েটা। কি করবে এখন কি করে এই হিটলার ইশানকে আটকাবে? মাথায় কোনো প্রকার কু বুদ্ধিও আসছে না পুরা মাথা যেন হ্যাং হয়ে আছে। কথায় আছে না “চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে” তীরের সিচুয়েশন এখন এমন হয়ে গেছে। অন্য দিকে ইশান বলা শুরু করে।

–আসলে আন্টি আজকে হয়েছে কি….

তীর আবারও ইশানের কথার মাঝে বা হাত ডুকিয়ে বলে উঠে।

–মা তুমি আমার কথাটা শুনো আজকে কি হয়েছে?

আয়েশা সুলতানা মেয়ের মুখপানে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে? যখনেই ইশান কিছু বলতে চায় তখনেই মেয়ে যেন লাফিয়ে উঠে। আয়েশা সুলতানা বিরক্ত নিয়ে বলেন।

–আর একবার যদি তোর মুখ থেকে টু শব্দটাও বের হয় তাহলে একটা মারও মাটিতে পারবে না তীর। সব গুলা মার তোর পিটে পরবে সোজা এই‌ আমি বলে রাখলাম।

মায়ের এমন দ্বারা কথা শুনে চুপসে যায় তীর। মার তো এমনিতেই খাবে যদি ইশান সব বলে দেয়। বরং মারের থেকে বেশি কিছুই খেতে পারে। অন্য দিকে ইশান তীরের এই বেহাল অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসে। ভালোই মজা পাচ্ছে তীরের এমন করুন অবস্থা দেখে। আয়েশা সুলতানা বলেন।

–ইশান তুমি বলো।

–আসলে আজকে আমি….

কথার মাঝেই ইশান তীরের দিকে তাকায় বেচারি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে আছে ভয়ে। ইশান মুচকি হেসে আবার বলা শুরু করে।

–ভাবচ্ছিলাম যে আমাদের দু বাড়ির মাঝে যে দেয়ালটা আছে সেটার কিছুটা জায়গা ভেঙ্গে সেখানে একটা গেইট স্থাপন করার। তাহলে আমাদের দু পরিবারেরই যাওয়া আসার সুবিধা হতো এই আর কি!

তীর বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো। ঠোঁট দুটো আপনাআপনি ফাঁক হয়ে যায়। ইশান কি বললো এটা গেইট দিবে দেয়াল ভেঙ্গে আর সে কিনা এতক্ষন আকাশ কুসুম ভেবে নাজেহাল অবস্থা করেছে নিজের ছোট ব্রেইনটার। তীর নাক ফুলিয়ে বিরবিরিয়ে উঠে।

–ব্যাটা হিটলার ইচ্ছে করে এটা করেছে। যাতে আমাকে শায়েস্তা করতে পারে। প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে‌ না।

ইশান তীরের দিকে আঁড় চোখে তাকায় তার প্রেয়সীর রিয়েকশন দেখার জন্য। এতক্ষন যে ভাবে ছটপট করছিলো মনে হচ্ছিলো এক্ষুনি ব্রেইন স্ট্রোক করবে মেয়েটা। ইশান সত্যিটাই বলতে এসেছিলো কিন্তু তীরের এমন করুন অবস্থা দেখে বলার সাহসটা পেলো না। সাথে এটাও ভেবে দেখলো এই কথাটা বললে হয়তো তীর বিপদে পড়তে পারে। তাই আয়েশা সুলতানাকে কি বলবে কি বলবে ভেবে না পেয়ে গেইট দেওয়ার কথাটা বলে দিলো। ইশান দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ছাড়ে। আয়েশা সুলতানা ইশানের কথা শুনে বলে।

–বাহ এটা তো ভালো কথা কিন্তু তীরের বাবা আসুক ওনার সাথে বরং তুমি কথা বলো।

–জী আন্টি আমি আঙ্গেলের সাথে কথা বলবো এই বিষয়ে। তবে আরেকটা বিষয়েও কথা বলা দরকার আমার।

আয়েশা সুলতানা চিন্তিত হয়ে বলেন।

–কি বিষয়ে কথা বলা দরকার?

–এটা না হয় আমি আঙ্গেলকেই সরাসরি বলবো। আমি বরং এখন আসি আন্টি।

ইশান তীরের দিকে কয়েক পল তাকিয়ে চলে যায়। চোখ মুখে যে ইশানের রাগ মিশে আছে সেটা তীর স্পষ্ট বুঝতে পারছে। কিন্তু তীরের মাথায় এখনো ইশানের শেষ বলা বাক্যটা ঘুরপাক খাচ্ছে। কি বলবে বাবাকে? তীরের মনে আবার ভয় ডুকিয়ে চলে গেলো ইশান। সে জব্দ করতে চাইছে ইশানকে কিন্তু ইশান উল্টো তাকেই জব্দ করে রেখে চলে গেছে। তীর মাথায় হাত রেখে উফ করে উঠে।

________

রাত সাড়ে দশটা বাজে প্রায় ইশান নিজের ঘরে বসেই কাজ করছে। হাতের সেলাই ইহান খুলে দিয়ে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি। কাল থেকে অফিসে যাওয়া শুরু করবে তাই কাজের চাপটা একটু বেশি। যত গুলা কাজ পেন্ডিং হয়ে পড়ে আছে সেগুলো কমপ্লিট করতে হবে কালকের মধ্যে। কিন্তু কাজের মাঝেই তীরের ওই অচেনা ছেলেটার হাত ধরে রাখার দৃশ্যটা বার বার ভেসে উঠছে চোখের সামনে। ইশান যত চেষ্টা করছে এই সাইডটা ইগনোর করতে ততই যেন মস্তিষ্ক স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এই‌ ব্যাপারটা। ল্যাপটপে কাজরত হাত জোড়া আচমকা থামিয়ে চোখ বন্ধ করে ঠোঁট দুটি গোল করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করে আবার কাজে মনযোগ দেয়। কিন্তু মনযোগ আর দিতে পারলো কই ইশানের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে ইশা এসে হাজির তার ঘরে ভাইয়া ভাইয়া চিৎকার করতে করতে। ইশান ভ্রু-দ্বয় কিঞ্চিৎ কুচ করে বলে।

–কি হলো? এভাবে ষাঁড়ের মতো করে চেঁচাচ্ছিস কেন?

ইশা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে।

–আমাকে তুমি ষাঁড় বলতে পারলে ভাইয়া।

–এত্ত ড্রামা না করে বল কি হয়েছে?

ইশা শুকনো একটা ঢোক গিলে বলে।

–আসলে ভাইয়া ছাদে আমার কেমিস্ট্রি বইটা আছে।

ইশান কাজ করতে করতে বলে।

–হে তো।

–বইটা একটু এনে দিবে।

ইশান বোনের দিকে তাকিয়ে বলে।

–মানে।

–আসলে কি বলো তো রাত তো অনেক হয়ে গেছে এখন যদি আমি ছাদে যাই বইটা আনার জন্য তাহলে আমাকে নির্ঘাত পেত্নী ধরবে। তুমি কি চাও তোমার সুন্দরী বোনটাকে পেত্নী ধরুক।

ইশান ছোট ছোট চোখ করে বলে।

–তোকে পেত্নী ধরবে!

–হে ধরবে তো।

–ধরবে না। তুই গিয়ে নিয়ে আয় আমার কাজ আছে আর এক পেত্নীকে আরেক পেত্নী ধরতে আসবে না।

ইশা ভাইয়ের কথার সারমর্ম বুঝতে না পেরে বলে।

–ও আচ্ছা কিন্তু তারপরও।

কিন্তু পরক্ষনে ইশানের কথার সারমর্ম বুঝতে পেরে ইশা চিৎকার করে বলে।

–কি বললে তুমি? আমি পেত্নী।

–সন্দেহ আছে কোনো?

–ভাইয়া এটা কিন্তু একদম ঠিক হচ্ছে না বলে দিলাম।

–ইশু তুই যা তো কাজের ডিস্টার্ব করিস না আমার।

–বইটা এনে দিলেই তো হয় তাহলেই তো আমি আর ডিস্টার্ব করি না তোমাকে।

ইশান বোনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ইশা ছোট্ট বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে বলে।

–প্লিজ ভাইয়া এনে দাও না বইটা আমার পড়া আছে। আমি তোমার এক মাএ আদরের বোন না। বোন যদি পরীক্ষায় ফেইল করে তাহলে তুমি কি খুশি হবে বলো। তাই ছোট্ট বোনটার বইটা এনে দাও‌ না।

ইশান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।

–ঠিক আছে যাচ্ছি আমি। ছাদে রেখেছিস কোথায় বইটা?

–দোলনার উপরে আছে।

ইশান ওকে বলে ঘর থেকে বের হতেই ইশা ঝড়ের বেগে দৌঁড়ে নিজের ঘরে এসে তীরকে ফোন দিয়ে বলে।

–দোস্ত ভাইয়া কিন্তু ছাদে আসছে তাড়াতাড়ি শুরু কর।

বলেই ফোন কেটে দিয়ে বলে।

–এবার শুরু হবে আসল খেলা।

____

ইশান ছাদে এসে ইশার কেমিস্ট্রি বইটা নিয়ে যখনেই ছাদ প্রস্থান করতে নিবে তখনেই অতি পরিচিত একটা কন্ঠ ভেসে আসে কানে। ভ্রু-দ্বয়ের মধ্য স্থানে ভাঁজ পড়ে ইশানের। এতো রাতে ছাদে এসে এভাবে লুকিয়ে কথা বলার মানে কি? ইশান পুরনায় ফিরে এসে ছাদের মাঝ বরাবর দাঁড়ায় আর তখনেই নজর যায় তীরদের বাড়ির ছাদের কোণে উল্টো দিকে ফিরে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে তীর। ভ্র-দ্বয়ের মধ্য স্থানের ভাঁজ আরও গাঢ় হয় ইশানের। তীরের কথাগুলো স্পষ্ট শুনার জন্য ইশান আরও এগিয়ে গিয়ে রেলিং এর পাশে দাঁড়াতেই তীরের বলা কথা গুলা শুনা মাএই ইশানের মেজাজ গরম হয়ে যায়। আর এদিকে তীর হেসেহেসে কথা বলেই যাচ্ছে।

–হে তো আমি এখনও তোমার দেওয়া গোলাপ ফুলের গাজরাটা পড়ে আছি আমার হাতে। আমার খুব পছন্দ হয়েছে থ্যাংক ইউ সো মাচ।

ফোনের ওপাশে কি বলছে ইশানের জানা নেই। কিন্তু তীরের এমন প্রেমময় কথাবার্তা শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারছে না। পায়ের র*ক্ত মাথায় উঠে গেছে যেন। রা’গে কপালের মধ্য স্থানের রগ ফুলে উঠেছে, চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। ইশান নিজেকে আর ঠিক রাখতে না পেরে হাতে রাখা বইটা মাটিতে সর্বশক্তি দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে তীরদের ছাদে চলে যায় রেলিং পার হয়ে। এই প্রথম ইশান তীরদের বাড়ির ছাদে এসেছে তাও আবার এভাবে। তীর তো আগে থেকেই জানে ইশান যে তার পিছনে আছে। তাই ফোন কানে রেখেই নিজে নিজেই কথা বলে যাচ্ছে যে কথা গুলা ইশা নোট করে দিয়েছিলো। যাতে ইশান বুঝতে পারে কারো সাথে ও কথা বলছেে।

কিন্তু বই ছুঁড়ে ফেলায় এমন একটা বিকট শব্দ হয়েছে যে তীর ভয়ে কেঁপে উঠে। তীর পিছনে ফিরার সাথে সাথে ইশান তীরের হাত থেকে ফোনটা কেঁড়ে নিয়ে সজোরে একটা আছাঁড় মারে। সাথে সাথে ফোনটা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। তীর সাথে সাথে নিজের দু কান চেঁপে ধরে ভয়ে। ভ্যাগিস ছাদের দরজাটা লাগিয়ে দিয়েছে তীর না হলে ফোন ভাঙ্গার শব্দ বাড়ির ভেতরে পৌঁছে যেত। কিন্তু ইশানের সেই দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। রাগে বশবর্তী হয়ে ইশান তীরের দু বাহু জোরে চেঁপে ধরে বলে।

–কার সাথে কথা বলছিলি তুই কার সাথে? কে এই ছেলে? কি সম্পর্ক ওই ছেলের সাথে তোর? কি এতো কথা বলছিলি তুই ওই ছেলের সাথে?

তীর হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ইশানের দিকে। ইশান যে এতটা রেগে যাবে কল্পনাও করতে পারে নি। চোখ দুটো কেমন ভয়ংকর দেখাচ্ছে। এক ধ্যান ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে তীর। তীরের এমন চাওনি থেকে ইশানের রাগের মাএ যেন আরও বেড়ে যায়। তীরের বা হাতে পরিহিত গোলাপের গাজরাটার দিকে নজর যায় ইশানের। ইশান সাথে সাথে গাজরাটা টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে তাতে তীর ব্যাথা পেয়ে আহ করে‌ উঠে।‌ কিন্তু তাতেও যেন ইশানের রাগ কমলো না। তীরের এই চুপ থাকাটা ইশান আর সহ্য করতে না পেরে তীরের বাহু আরও চেঁপে ধরে চিঁবিয়ে চিঁবিয়ে বলে।

–কি হলো মুখে কথা ফুটছে না কেন? এতক্ষণ তো ফোনে ঠিকেই হেসেকুদে কথা বলছিলি তাহলে এখন মুখটা বন্ধ হয়ে গেলো কেন? কে এই ছেলে কি সম্পর্ক ওই ছেলের সাথে তোর?

#চলবে________

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৩০ (ভালোবাসার স্বীকারোক্তি)

–ছাড়ুন আমায়! আমার হাতে লাগছে।

এই কথাটা শুনে ইশান তীরের বাহু আরো জোরে চেপে ধরে বলে।

–আগে বল ছেলেটা কে? তারপর ছাড়াছাড়ি।

তীর রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে, নাকের পাটা ফুলিয়ে নিজের শরীরের সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে ইশানের হাতটা নিজের বাহু থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে।

–ও যেই হোক তাতে আপনার কি হুম? আপনার এত কিসের ইন্টারেস্ট ও কে জানার জন্য?

ইশান আবারও তীরের বাহু ধরে নিজের কাছে এনে রাগী কন্ঠে বলে।

–আমারেই সব কারন আমি তোকে ভা…

ভালোবাসি কথাটা বলতে গিয়েও থেমে যায় ইশান। ভালোবাসি কথাটা বলতে গেলেই কেন যেন বলতে পেরে না। মনের ভেতরে যেন কিসের একটা জড়তা কাজ করে বারবার। সেই জড়তাটা কি আহমেদ পরিবার আর ফরাজী পরিবারের সুন্দর একটা সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার কারন নাকি দুজনের বয়সের এত ডিফারেন্স। কোনটা? অন্য দিকে তীর উৎসুক নয়নে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে।

–কি হলো বলুন থেমে গেলেন কেন? আমাকে আপনি কি বলুন?

ইশান তীরের বাহু ছেড়ে অন্য দিকে ফিরে বলে।

–কিছু না আর এতটাও অবুঝ নোস তুই। বুঝার যথেষ্ট বয়স হয়েছে তোর?

তীর অনেকটা রেগে গিয়ে ইশানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে।

–নাহ আমার বুঝার বয়স হয় নি। আমি অনেক অবুঝ। আমাকে বুঝিয়ে বলুন তাহলে আমি বুঝবো। আপনি বলুন না কি বলতে চেয়ে ছিলেন শেষে।

শেষের কথাটা অনেকটা কোমল স্বরে বলে তীর।

–সব কিছু মুখে বলতে হয় না কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। শুনেছি মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নাকি অনেক প্রখর হয় তাহলে তোর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় এতটা দুর্বল কেন?

তীর ইশানের কথা শুনে শব্দ করে হেসে বলে।

–ঠিকেই বলেছেন মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুবই প্রখর। তাই তো বুঝতে পারছি আপনি হিংসায় জ্বলে যাচ্ছেন। আপনার চোখে মুখে হিংসার চাপ স্পষ্ট ফুটে উঠছে।‌ আচ্ছা সকালের ছেলেটা আমার হাত ধরার জন্য কি আপনার হিংসা হচ্ছে। কিন্তু আমি তো শুনেছে ছেলেরা কোনো মেয়েকে ভালোবাসলে সেই মেয়ের ক্ষেএে ছেলেটা হিংসা পরায়ণ হয়। কিন্তু আপনি তো আর আমায় ভালো টালো বাসেন না। তাই ছেলেটা আমার হাত ধরুক বা জড়িয়ে ধরুক তাতে আপনার কি? আপনার তো কোনো যা….

এতক্ষন চোখ বুজে তীরের প্রত্যেকটা কথা শুনছিলো ইশান। কিন্তু এক পর্যায়ে ইশান তীরের বলা কথা গুলা সহ্য করতে না পেরে তীরের কথার মাঝেই ওর বাহু ধরে নিজের কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–আমার যায় আসে কারন “আমি তোকে ভালোবাসি”। আর রইলো হিংসে হওয়ার কথা হে আমার হিংসে হয় তোর আশেপাশে কোনো ছেলেকে দেখলে আমার হিংসে হয় ভীষন হিংসে হয়। তাই ওই ছেলের থেকে দুরে দুরে থাকবি। শুধু ওই ছেলের থেকে কেন পৃথিবীর সমস্ত ছেলের থেকে দুরে দুরে থাকবি বুঝেছিস আমার কথা।

তীরের অধরের কোণে মুদৃ হাসি ফুটে উঠে। অ্যাট লাস্ট ইশানের মুখ থেকে ম্যাজিকেল তিনটা ওয়ার্ড শুনতে পেলো। এই ম্যাজিকেল তিনটা ওয়ার্ড ইশানের মুখ থেকে শুনতে পেয়ে যেন নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। তীর বলে।

–কত দিন লাগলো এই তিনটে শব্দ বলার জন্য? না কত দিন না কত বছর লাগলো এই তিনটে শব্দ মুখ ফুটে বলার জন্য?

ইশান যেন এতক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলো তীরের কন্ঠস্বর শুনে নিজের সম্মতি ফিরে পেতেই ওর কাছ থেকে ছিটকে দুরে সরে দাঁড়ায়। রাগের বশে মুখ ফসকে ভালোবাসি কথাটা বলে দিলো তীরকে। এবার কি হবে? অন্য দিকে তীর আবার বলে উঠে।

–কি হলো চুপ করে আছেন কেন? উত্তর দিন আমাকে।

–আমি তোর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।

–অব্যশই আপনি বাধ্য। যাকে ভালোবাসেন তাকে তার সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য আপনি।

ইশান তীরের দিকে ফিরে তাকায়। কথা কাটানোর জন্য উল্টে তীরকে প্রশ্ন করে।

–আগে বল ছেলেটা কে? তারপর তোর সকল প্রশ্নের উত্তর দিবো আমি।

ইশানের কথা শুনে আচমকা হেসে দেয় তীর। তীরকে এভাবে হাসতে দেখে ইশান ভ্রু-কুচকে বলে।

–এভাবে হাসচ্ছিল কেন? ভুতে টুতে ধরলো নাকি আবার।

–ভুতে ধরে নি আমাকে আসলে আপনার বোকামির জন্য আমার হাসি পাচ্ছে। আপনি আসলে একটা বোকা।

ইশান হতভম্ব হয়ে বলে।

–কি আমি বোকা?

–তা নয়তো কি! চালাক যদি হতেন তাহলে তো আমাদের অভিনয় ধরে ফেলতেন।

ইশান কিছুটা তোতলিয়ে বলে।

–অ… অভিনয়! কিসের অভিনয়?

–এই যে সকাল থেকে এখন পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সবটাই অভিনয় আপনার মুখ থেকে ভালোবাসার কথাটা বের করার জন্য।

–মানে!

–মানেটা হলো সকালের ছেলেটা হলো রাহুল। যাকে দেখে আপনি হিংসায় জ্বলেপোড়ে যাচ্ছেন। আর ছাদে এসে যা যা আ‌মাকে বলতে শুনেছে ওই গুলা একাই বলেছি যেগুলা ইশা নোট করে দিয়েছিলো। কিন্তু এত কিছু করার মাঝে আমার নিরীহ অবলা ফোনটাকে আপনি হত্যা করে দিলেন। যেখানে বেচারার কোনো দোষেই নেই। আপনি জানেন এই ফোনটা কিনার জন্য আমাকে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে বাবা মাকে রাজি করানোর জন্য।

তীরের কথা শুনে ইশান যেন আকাশ থেকে পড়লো। অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে আছে তীরের দিকে হা হয়ে। নিজেকে আসলেই খুব বোকা বোকা লাগছে। এই তিনটে পুচঁকে মিলে তাকে এত্ত বড় গোল খাওয়ালো মানে ভাবা যায়। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে ইশান তারপরও বলে।

–তোদের পেটে পেট এতো।

–আমাদের পেটে আরো অনেক কিছু আছে বুঝলেন।

ইশান চোখ বড় বড় করে বলো।

–আরো আছে! তা আর কি কি আছে তোদের পেটে।

–সেটা আপনার জেনে এখন আর লাভ নেই।

বলেই নিচে পড়ে থাকা ভাঙ্গা ফোনটা তুলে নিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করে। ইশান তা দেখে তীরের কাছ থেকে ফোনট কেঁড়ে নিয়ে বলে।

–আমি দেখছি।

–দেখে আর কোনো লাভ নেই ফোনের ডিসপ্লে হয়তো চলে গেছে।

ইশান ফোনটা চেক করে দেখে আসলেই দেখে ফোনের ডিসপ্লে চলে গেছে। ইশান অনুতপ্ত বোধ করে। এতোটা রেগে যাওয়া উচিত হয় নি। ক্ষমাসরুপ চোখে তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।

–সরি আমি আসলে এমনটা করতে চাই নি। রাগে বশে কিভাবে যে এমনটা হয়ে গেল।

–সমস্যা নেই! কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয় এটাই নিয়ম।

–তাই! কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয়।

–হুম।

ইশানের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠে। তীরের ভাঙ্গা ফোনটা নিজের প্যান্টের পকেটে ডুকিয়ে দু’হাত বুকে গুজে বলে।

–তা কি পেয়েছিস?

তীরও সাত পাঁচ না ভেবে মুখের উপর ঠাস করে বলে দিলো।

–এই তো আপনাকে পেয়েছি আর আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে পেয়েছি।

কথাটা বলেই তীর নিজের মুখ দু’হাত দ্বারা চেঁপে ধরে। চোখ দুটো বড় বড় করে ইশানের দিকে তাকায়। আঁখি পল্লব’দ্বয় বার কয়েকবার ঝাপ্টায়। কি বলতে কি বলে দিলো? এবার ইশান কি ভাববে? ইস! কি লজ্জার বিষয়। পালাতে হবে এখান থেকে এক্ষুনি ইশান কিছু বলার আগেই। ইশান যেন তীরের মতিগতি বুঝতে পেরে গেছে আগে ভাগেই তাই তীর যখনেই ঘুরে দৌঁড় দিতে যাবে সাথে সাথে ইশান তীরের হাত খপ করে ধরে ফেলে। অন্য দিকে তীর ইশানের হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ দুটো ঝাপ্টে বন্ধ করে নেয় লজ্জা আর ভয়ে। ইশান তীরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গভীর স্বরে ডাক দেয়।

–তীর!

বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠে তীরের আবারও সেই ডাক যেই ডাকটা শুনলে তীরের ছোট্ট কিশোরী হৃদয়টা যেন চঞ্চলে পরিণত হয়ে যায়। রক্ত চলাচলের গতি ক্রমশ বেড়ে যায়। ইশান পুনরায় বলে।

–তাকা আমার দিকে।।

তীর ধীরে ধীরে মাথা তুলে ইশানের দিকে তাকালো চোখে চোখ মিলতেই শিহরণ বয়ে গেল সারা সর্বাঙ্গ জুড়ে। ইশানের শীতল চাওনির দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না তীর বেশিক্ষণ সাথে সাথে মাথা আবার নত করে ফেললো। কন্ঠনালি কাঁপছে কথা বললে কি কথা আটকে আসবে নাকি। কিন্তু তারপরও তীর নিজেকে সামলে রেখে ঢোক গিলে সরু কন্ঠে বলে।

–ঘরে যাবো।

ইশানের কন্ঠ স্বর আধার রাত্রির থেকে গভীর শুনা গেল যেন।

–পরে যাস। আগে আমার একটা কথা রাখবি এই মুহূর্তে।

ইশানের কথা শুনে তীরের শিড়দাঁড়া বেয়ে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যায়। কি বলবে ইশান কি রিকোয়েস্ট করবে যা এই মুহূর্তে রাখতে হবে? অজানা ভয় কাজ করছে তীরের মনে। চলে যেতেও পারছে না ইশান হাতটা ধরে রেখেছে বলে। তীর বাধ্য হয়ে মাথা উপর নিচ করে বুঝায় যে সে ইশানের কথা রাখবে।

ইশান আকুতি ভরা কন্ঠে বলে।

–তোকে একবার জড়িয়ে ধরতে দিবি। শুধু একবার।

তীরের পেট মোচর দিয়ে উঠে ইশানের এমন দ্বারা কথা শুনে। বুকের ভেতরের রঙিন প্রজাপতিরা জেগে উঠছে। শ্বাস প্রশ্বাসের গতি ঘন হয়ে আসছে ক্রমশ। তার কি হাপানি রোগ আছে নাকি যে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। না হলে হাপানিতে নিশ্চিত মারা যাবে।

অন্য দিকে ইশানকে খুব অধৈর্য লাগছে। প্রেয়সীর উত্তর পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু প্রেয়সী তো কিছুই বলছে না। ইশান নজর বন্দী করলো প্রেয়সীর মায়বী মুখপানে। শুকনো ঢোক গিললো ইশান। চাঁদের আলোতে তীরের মুখটা খুবেই আবেদনময়ী লাগছে। ইশান নিচের অধর কামড়ে ধরে আশপাশটায় তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আচমকা তীরের চিকন কোমড়ে নিজের পেশিবহুল হাত রেখে নিজের কাছে টেনে এনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

আচমকা এমন হওয়াতে তীর বড় বড় চোখ করে তাকায়। শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে। বিন্দু পরিমাণ শক্তি পাচ্ছে না দাঁড়িয়ে থাকার। ইশান যদি তাকে ছেড়ে দেয় তাহলে নিশ্চিত নিচে পড়ে যাবে।

তীরের ডান কান গিয়ে ঢেকে ইশানের বুকের বা পাশটা। ইশানের প্রত্যেকটা হৃদস্পন্দনের শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে। তীরের কচি মন তাতে থরথর করে কেঁপে উঠে। ইশানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে ইশান তীরের কোমড়ে রাখা হাতের বন্ধন আরো দীর্ঘ করে নেয়। এক পর্যায়ে তীর ইশানের কাছে হার মেনে ইশানের বুকে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ইশানের হৃদস্পন্দনের শব্দ গুলা গভীর ভাবে অনুভব করছে। মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীর সকল সুখের উৎস ইশানের এই‌ চাওড়া বুকে।

তীরের ছটপটানি কমতে দেখে ইশানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুঁটে উঠে। এতো বছরের আকাঙ্ক্ষা যেন পূরণ হলো ইশানের প্রেয়সীকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে। ইশানের তুলনায় তীর অনেকটাই খাটো যার কারনে ইশানকে অনেকটা ঝুকেই তীরকে জড়িয়ে ধরতে হয়েছে। এত বড় ইশানের বুকের উপর পড়ে থাকা তীরকে যেন দেখাই যাচ্ছে না। ইশানের তো ইচ্ছে করছে প্রিয়তমাকে নিজের মনের গহীনে বন্দী করে রাখতে। যাতে আর দুরে সড়ে যেতে না পারে।

#চলবে________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে