প্রনয়ের দহন পর্ব-২২+২৩+২৪

0
430

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২২

গাড়ি থামে ফরাজী ভিলা আর আহমেদ ভিলার মাঝ বরাবর। গাড়ি থামার সাথে সাথে তীর তাড়াহুড়ো করে চলে যায় নিজের বাড়িতে এক বারও পিছন ফিরে তাকায় নি পর্যন্ত। ইশা বার বার প্রশ্ন করেছিলো হাতটা কি করে কেটেছে কিন্তু তীর টু শব্দটা পর্যন্ত করে নি এক ধ্যানে বাইরের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছিলো। ইশা ভাইয়ের দিকে তাকায়। ইশান ইশার তাকানো বুঝতে পেরে বলে।

–বাড়ি যা আর আমার রুম থেকে আমার ধূসর কালারের কোর্টটা আনবি আর টেবিলের উপর যা যা ফাইল আছে সেগুলা অফিসের ব্যাগে ভরে নিয়ে আয় আমি অপেক্ষা করছি এখানে। সাথে ল্যাপটপটাও আনবি।

–আচ্ছা।

–আর শুন মা যদি ব্রেকফাস্টটের কথা বলে তাহলে বলবি অফিসের ক্যান্টিনে করে নিবে।

ইশা মাথা দুলিয়ে সায় দেয়। ইশা গেইট পেরিয়ে বাড়ির ভেতরে ডুকার সাথে সাথে ইশান মাথাটা সিটে হেলিয়ে দিয়ে চোখের পাতা বন্ধ করে দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে। দু আঙুল দিয়ে কপালের এক সাইড চেপে ধরে। সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব। মেয়েটা দিন দিন ইশানকে পাগল করে দিচ্ছে এক দন্ডও ভালো করে নিশ্বাস নিতে দিচ্ছে না। কি করবে এখন ইশান কি করে বুঝাবে এই‌ অবুঝ মেয়েটাকে।

ইশা পাঁচ মিনিট পরেই এসে ইশানের সকল প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে যায়। জিনিস গুলা পাওয়ার সাথে সাথেই ইশান অফিসের পথে রওয়ানা দেয়।

_____

অন্যদিকে তীর বাড়িতে প্রবেশ করার সাথে সাথে আজিজুল আহমেদের সামনে পরে। আজিজুল আহমেদ মেয়ের চোখ, মুখের এমন করুন অবস্থা দেখে বিচলিত কন্ঠে শুধায়।

–কি হয়েছে আমার মায়ের মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন?

তীর আস্তে করে উত্তর দেয়।

–কিছু হয় নি বাবা।

অন্য পাশ থেকে আয়েশা সুলতানা বলে।

–তাহলে তর চোখ মুখের এমন বেহাল দশা কেন?

–ওই আসলে আর এক মাস পরেই তো এক্সাম তারেই জন্য।

আজিজুল আহমেদ তীরের হাত ব্যান্ডেজ করা দেখে চিন্তিত গলায় বলে।

–আচ্ছা তা নয় বুঝলাম কিন্তু তোমার হাতে ব্যান্ডেজ কেন? হাতে কি হয়েছে মা?

তীর তড়িৎ বেগে হাতটা লুকিয়ে বলে।

–ও কিছু না একটু কেটে গেছে।

আয়েশা সুলতানা বিচলিত হয়ে মেয়ের হাত নিজের হাত নিয়ে বলে।

–হাত কাটলো কি করে তীর?

তীর চুপ করে আছে কি মিথ্যা বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

–কি হলো বল?

–আ.. স‌‌… লে…. মা হয়েছে কি! ব্রেঞ্চে যে লৌহা ছিলো সেখানে না দেখে আমি হাত দিয়ে ফেলেছিলাম আর সাথে সাথে কেটে যায়।

–সাবধানে হাত পা ছুটাছুটি করবি তো নাকি। বড় কিছু হয় নি তো।

–নাহ মা।

এমন সময় ইশান এসে হাজির হয় আহমেদ ভিলাতে। ইশান অনেক আগেই এসেছে আর তীরের বলা মিথ্যে কথাটাও শুনেছে। ইশানকে দেখার সাথে সাথে আজিজুল আহমেদ বলে।

–ইশান তুমি?

তীর ইশানের দিকে তাকায় কিন্তু ইশান অন্য দিকে তাকিয়ে আছে একে বারের জন্য তীরের দিকে তাকাছে না। ইশান বলে।

–আসলে আঙ্গেল তীরের ঔষুধ গুলা গাড়িতে ফেলে এসেছিলো সেটাই দিতে আসলাম।

–ও আচ্ছা তাহলে তুমি ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলে। কিন্তু ফোনে যে বললে…

–আসলে আঙ্গেল আপনারা চিন্তা করবেন তাই সত্যিটা বলি নি।

–দাঁড়িয়ে আছো কেন ইশান? বসো।

–না না আঙ্গেল আমার ইম্পরট্যান্ট একটা মিটিং আছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

–আচ্ছা।

–আর আঙ্গেল ঔষুধ গুলা ঠিক মতো খাওয়াবেন। বুঝতেই তো পারছেন হাতটা কি দ্বারা কেটেছে। অবশ্য ভালো করে ড্রেসিং করে দেওয়া হয়েছে তাই এত বেশি চিন্তা করার কারন নেই।

এর মাঝে তীর বলে উঠে।

–আমাকে নিয়ে আপনার এত চিন্তা করতে হবে না। আমার বাবা মা এখনও বেচে আছেন আমাকে নিয়ে চিন্তা করার জন্য। তাই আমাকে নিয়ে আপনার চিন্তা না করলেও চলবে।

আয়েশা সুলতানা কিঞ্চিৎ রেগে বলেন।

–তীর এসব কি কথাবার্তা ভদ্র ভাবে কথা বল।

–মা আমার ভালো লাগছে না আমি উপরে গেলাম আর আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

বলেই ধপধপ পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের ঘরে চলে যায়। ইশান আবাক চোখে তাকিয়ে আছে তীরের যাওয়ার দিকে। তীর আড়াল হওয়ার সাথে সাথে ইশানের ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্য হাসি ফুটে উঠে। তীরের মনের ভেতরে যে পাহাড় সমান অভিমান জমে আছে এটা ইশান ভালো করেই টের পাচ্ছে। কি করে এই‌ পাহাড় সমান অভিমান ভাঙবে ইশান।

আজিজুল আহমেদ ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে।

–কিছু মনে করো না বাবা তুমি ও আসলে….

–না না আঙ্গেল আমি কিছু মনে করি।

আয়েশা সুলতানা বলেন।

–মেয়েটার যে কি হয় মাঝে মাঝে বুঝি না আমি।

–আঙ্গেল তাহলে আমি আসি।

–আচ্ছা বাবা! সাবধানে যাও।

_____

তীর নিজের ঘরের ডুকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে হাত থেকে কলেজ ব্যাগটা মেঝেতে ফেলে দিয়ে নিজেও বসে পড়ে দরজার সাথে পিট ঠেকিয়ে মেঝেতে। এতক্ষন বুকের ভেতরের জমে থাকা কান্নাটা যেন আর চেপে রাখতে পারছে না ডুকরে কেঁদে উঠে তীর। ইশান আর আবিরা বলা কথা গুলা বার বার কানে বারি খাচ্ছে। কেন এমন করছে ইশান ওর সাথে ভালো যখন বাসেই তাহলে কেন বলছে না? কেন স্বীকার করছে না? কেন এত লুকোচুরি করছে? চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে তীরের কিন্তু পারছে না শুধু বাড়ির লোকজনের জন্য। চাপা গলায় কান্না করা যে খুব কষ্টের। গাল ফাটিয়ে কান্না করায় যে সুখটা পায় চাপা কান্না করলে সে সুখটা পাওয়া যায় না বরং আরও কষ্ট বাড়ে। তীর বুকের বা পাশটা চেপে ধরে এত ব্যাথা অনুভব করে কেন এই জায়গাটাতে ইদানিং।

আচমকা তীর উঠে দাঁড়িয়ে সোজা ওয়াশরুমে ডুকে শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে শাওয়ারের নিচে। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়েই চিৎকার করে কেঁদে উঠে। আস্তে আস্তে হাটু মুড়ে বসে পড়ে নিচে। সারা শরীর ভিজে যাচ্ছে আস্তে আস্তে সাথে সদ্য করা হাতের ব্যান্ডেজটাও। পানির সাথে গাল বেয়ে পড়ছে তীরের চোখের নোনা পানি। চোখের পানি আর শাওয়ারের পানি মিলে একাকার হয়ে গেল!

বিশ মিনিট পর তীর বের হয় ওয়াশরুম থেকে শুকনা কাপড় পড়ে। সারা শরীর, ঠোঁট, হাত-পা, মুখ ফ্যাকশে হয়ে গেছে বেশিক্ষণ ভিজার কারনে, চোখ দুটো লাল হয়ে আছে অতিরিক্ত কান্নার কারনে। শরীর বার বার কেঁপে উঠছে ঠান্ডার জন্য। হাতের ব্যান্ডেজটা খুলে ফেলেছে ভেজার জন্য। কাটা স্থানটা কেমন বাজে ভাবে সাদা হয়ে গেছে। মাথাটা ভার হয়ে আসছে, মনে হচ্ছে যেন শত মণের বোঝা কেউ ওর মাথার উপর রেখে দিয়েছে। চুলগুলোও ভালো করে মুজার শক্তি টুকুও পাচ্ছে না তীর, শরীরের বিন্দু পরিমান বল পাচ্ছে না। চোখে ভর করছে রাজ্যের ঘুম কান্না করার ফলে। না পেরে কোনো মতে দুর্বল পা ফেলে সোজা বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ে কম্বল গায়ে দিয়ে।

______

দুপুর পেরিয়ে বিকেলে হয়ে গেল কিন্তু তীর এখনও নিচে নামচ্ছে না। তীর একা থাকতে চেয়েছিলো তাই আর ওকে কেউ ডির্স্টাব করে নি। তবে তীরের মা মাঝে একবার ডেকেছিলো খাবার খাওয়ার জন্য কিন্তু সাড়া দেয় নি তীর। ভেবেছেন ঘুমাচ্ছে মেয়ে তাই আর ডির্স্টাব করে নি। কিন্তু এখন আয়েশা সুলতানার টেনশন হচ্ছে এত ঘুমাচ্ছে কেন মেয়েটা? তাই এক প্রকার ধৈর্য হারা হয়ে তীরের দরজায় শব্দ করে কিন্তু কোনো রেস্পন্স আসে না ভেতর থেকে। বার বার ডেকে যাচ্ছে তীরকে কিন্তু প্রত্যেক বারের মতো কোনো সাড়া আসছে না। আজানা ভয় হানা দিচ্ছে মাথায়। বার বার উপরওয়ালার কাছে মেয়ে যাতে ঠিক থাকে তারেই দোয়া করছেন। আয়েশা সুলতানা মেয়ের ফোনে কল দেয় কিন্তু ফোন বেঁজে কেটে যায়। ওনার চিল্লাচিল্লি শুনে ঘুমন্ত শাপলা বেগম আর ছোট অভি আসে। আয়েশা সুলতানা কে এভাবে চিৎকার করতে দেখে শাপলা বেগম বলে।

–কি হয়েছে বউ মা?

আয়েশা সুলতানা কাঁদতে কাঁদতে বলেন।

–আম্মা দেখুন না মেয়েটাকে কখন থেকে ডাকছি কিন্তু কোনো সাঁড়া দিছে না।

–কি বলছো বউ মা! দেখি সরো আমি ডাকি তো একবার।

শাপলা বেগমের সাথে ছোট অভিও ডাকে কিন্তু তীরের কোনো রেস্পন্স নেই। তীর কোনো সাড়া দিছে না দেখে ছোট অভি ভয়ে শেষমেষ কেঁদেই ফেলে। আয়েশা সুলতানা মেয়ের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে সোজা বাড়ি থেকে বের হয়ে ফরাজী ভিলাতে যায়। ফরাজী ভিলাতে গিয়ে সমান তালে কলিং বেল বাজাতেই থাকেন। কিছুক্ষন পরেই নেহা বেগম এসে দরজা খুলার সাথে সাথে আয়েশা সুলতানা কাঁদতে কাঁদতে বলেন।

–ভাবি আমার মেয়েটা ভাবি।

নেহা বেগম উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধায়।

–কি হয়েছে ভাবি?

–তীরকে কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি কিন্তু কোনো সাড়া দিছে না। কিছু একটা করুন ভাবি আমি কিছু বুঝতে পারছি না। ওর বাবার একটা মিটিং আছে তাই ওনাকেও ফোনও করতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে আপনাদের কাছে আসে।

–আপনি চিন্তা করবেন না। তীরের কিচ্ছু হবে না।

নেহা বেগম আর আয়েশা সুলতানার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে বাড়ির সবাই এসে পরে শুধু ইশান ছাড়া। ইশান এখনও অফিসে। ভাগ্যক্রমে আজ ইহানও হসপিটাল থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এসেছে। ফরাজী পরিবারের সকল সদস্যই আহমেদ ভিলায় যায় তাড়াতাড়ি করে। সবার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে মেয়েটা কিছু করে বসে নিতো আবার।

ইশা তো আজহারি শুরু করে দিয়েছে। ওর প্রিয় বান্ধবীটার কি হলো হঠাৎ করে? কিছু দিন ধরে দেখছে কেমন উদাসীন হয়ে থাকে। আগের মতো হাসি-খুশি থাকে না সবসময় চুপচাপ থাকে।

সোহেল ফরাজী আর ইহান দুজনে মিলে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ডুকে যা দেখে তাতে সবাই শকড।

#চলবে________

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৩

ফ্লোরে পরে আছে তীর অজ্ঞান হয়ে। তীরের এমন অবস্থা দেখে আয়েশা সুলতানার মাথা আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ইহান জলদি তীরকে কোলে তুলে বেডে শুয়েই দেয়। তীরের সারা শরীর জ্বরে পুঁড়ে যাচ্ছে। শরীরের হাত পর্যন্ত দেওয়া যাচ্ছে না এত পরিমানেই জ্বর এসেছে। ইহান তীরের পালস চেক করে বলে।

–জ্বর এসেছে আর সাথে পালসের গতিই খুব একটা স্বাভাবিক নয়।

আয়েশা সুলতানা দু কদম পিছিয়ে যায়। এই জ্বরটা তীরের জীবনে একমাত্র দুশমন। গতবারের জ্বরে তীরের অবস্থা খুব খা’রাপ হয়ে গিয়েছিলো। আয়েশা সুলতানার শরীর অবশ হয়ে আসছে আগের জ্বরের ঘটনার কথা মনে পড়তেই ধপ করে ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কান্না করতে করতে বলে।

–আমার মেয়েটাকে বাঁচাও ইহান। ওর কিছু হয়ে গেলে আমার সুখের সংসারটা ধ্বংস হয়ে যাবে। ওর বাবা তো পাগল হয়ে যাবে ইহান তুমি কিছু একটা করো বাবা।

নেহা বেগম আয়েশা সুলতানাকে জড়িয়ে ধরে বলে।

–ভাবি আপনি শান্ত হোন এভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে কি করে হবে। তীরের কিচ্ছু হবে না সব ঠিক হয়ে যাবে একটু সময় দেন।

ইহান বলে।

–ইশা বাড়িতে গিয়ে আমার অফিসের ব্যাগটা নিয়ে আয়।

ইহান বলার সাথে সাথে ইশা ছুটে চলে যায়। কিছুক্ষন পরেই ইশা ফিরে আসে। ইহান জলদি তীরের চিকিৎসা শুরু করে দেয়। এখন হসপিটালে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই যা করতে হবে সব বাড়ি থেকেই করতে হবে। থার্মোমিটার দ্বারা চেক করে দেখে ১০৪° জ্বর তীরের। সবাই এটা শুনে আতংকে উঠে। গত বারেও এমনটা হয়েছিলো। এবারও যদি গত বারের মতো খারাপ কিছু ঘটে তাহলে? সবাই তীরের জন্য উপরওয়ালার কাছে দোয়া চাইতে লাগলো। ছোট অভি তো বোনের এমন অবস্থা দেখে কেঁদেকুটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।

ইহান তাড়াতাড়ি করে তীরকে ইনজেকশন পুশ করে। ইনজেকশন পুশ করার পাঁচ মিনিট পরেই তীরের শরীরের স্বাভাবিক হতে শুরু করে। আয়েশা সুলতানা জট করে উঠে মগ দিয়ে পানি এনে মেয়ের মাথায় ক্রমাগতভাবে জলপট্টি দিয়ে যাচ্ছে যার জন্য আরও তাড়াতাড়ি জ্বরটা নেমে যাচ্ছে। এর মাঝে তীর পিটপিট চোখে একবার তাকিয়ে আবার ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। আয়েশা সুলতানা মেয়ের তাকানো দেখে প্রফুল্ল কন্ঠে বলে।

–তীর মা আমার তুই ঠিক আছিস? এক বার মা বলে ডাক না মা আমার।

ইহান বলে।

–আন্টি ওকে ডাকবেন না। ঘুমিয়ে পড়েছে তবে ও এখন আউট অফ ডেঞ্জার তাই চিন্তা করার কিছু নেই।

ইহান তীরের পালস চেক করার সময়ে নজর যায় তীরের কাটা স্থানটার দিকে। ভ্রু-কুচকে নেয় ইহান এটা ভেবে হাতটা এভাবে কাটলো কি করে? তাই আয়েশা সুলতানাকে প্রশ্ন করে।

–ওর হাতটা কাটলো কি করে?

–লৌহাতে লেগে নাকি কেটে গেছে।

–উহু! দেখে তো মনে হচ্ছে অন্য কিছু দ্বারা কেটেছে। কিন্তু কি দ্বারা কেটেছে বুঝতে পারছি না। আমি ওর হাতটা ড্রেসিং করে দিচ্ছে। এই কাঁটা স্থানটার বিষক্রিয়ার জন্যই ওর জ্বরটা উঠেছে।

ইহান তীরের হাতটা ভালো করে ড্রেসিং করে ঔষুধ লাগিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে বলে।

–তীরের জ্ঞান ফিরতে কিছুক্ষন সময় লাগবে। তবে চিন্তার কোনো কারন নেই সময় মতো ইনজেকশনটা দেওয়াতে অনেকটা কট্রোলের ভেতরেই আছে জ্বরটা আর একটু দেরি করলেই হয়তো প্রবলেম হতে পারত।

আয়েশা সুলতানা ভাঙ্গা গলায় বলেন।

–তোমাকে কি করে ধন্যবাদ দিবো তা আমার জানা নিয়ে ইহান। আজ যদি তুমি বাড়িতে না থাকতে তাহলে যে কি হতো মেয়েটার।

–আন্টি আপনি প্লিজ এভাবে বলবেন না। আমি একজন ডাক্তার আমার কাজটাই রোগীর সেবা করা তার জন্য ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো দরকার নাই। আমি বরং ওর প্রেসারটা চেক করে দেখি।

ইহান তীরের প্রেসার চেক করে দেখে প্রেসারও স্বাভাবিকেই আছে। কপালে হাত দিয়ে তাপমাএ চেক করে বলে।

–এখন স্বাভাবিক হয়েছে শরীরের তাপমাএ। আর ঘুম থেকে উঠার পর কিছু খাইয়ে দিয়ে ঔষুধ গুলা খাওয়াবে। ওকে ডেকে তুলে খাওয়াবে না ওর নিজে থেকে যখন ঘুম ভাঙ্গবে তখন খাওয়াবেন।

—আচ্ছা বাবা।

–তাহলে আমি এখন আসি আন্টি আমার আবার হসপিটালে যেতে হবে।

সোহলে ফরাজী, ইহান আর কেয়া চলে যায়। শুধু থেকে যায় ইশা আর নেহা বেগেম। ইশা তীরের মাথার পাশে বসে বন্ধবীর মাথা পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ছোট অভি বোনের পাশে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। শাপলা বেগম আগেই চলে গেছেন নাতনীর এমন অবস্থা দেখে ওনার প্রেসার “ল” হয়ে গিয়েছিলো। তাই ঔষুধ খেয়ে নিজের ঘরে শুয়ে আছেন। নেহা বেগম তীরের মাকে বলে।

–ভাবি এখন আর চিন্তা করবেন না। তীর এখন বিপদমুক্ত আপনি বরং একটা কাজ করেন ও কি খেতে পছন্দ করে সেটা বানিয়ে ফেলুন। ঘুম থেকে উঠার পর খাইয়ে দিবেন।

–জি ভাবি। কিন্তু মেয়েটাকে একা রেখে আমি কিভাবে?

এর মাঝে ইশা বলে।

–একা কোথায় আন্টি? আমি আছি তো! মা আজকে আমি এখানেই থাকবো তীরকে এমন অবস্থায় রেখে বাড়িতে যেতে পারবো না।

নেহা বেগম মুচকি হেসে বলে।

–ঠিক আছে মা তুই থাক তর প্রিয় বন্ধবীর কাছে।

তারপর আয়েশা সুলতানার দিকে তাকিয়ে বলে।

–তীরের পাশে ইশু আছে আপনি বরং নিচে গিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করুন।

–হুমম।

__________

রাত সাড়ে আটটা বাজে ইশান তখন বাড়ি ফিরে। কলিং বেল বাজানোর কিছুক্ষন পরেই বাড়ির কাজের মাহিলা রেহেলা খালা এসে সদর দরজা খুলে দেয়। ইশান বাড়িতে ডুকে সোজা নিজের ঘরে ডুকে ফ্রেস হতে চলে যায় ওয়াসরুমে। আধ ঘন্টা পর নিচে নেমে আসে ইশান টিশার্ট আর ট্রাউজার পরে। চুল গুলা এখনও ভিজা সদ্য শাওয়ার নিয়ে নিজেকে খুব সতেজ লাগছে ইশানের। নিচে নেমেই মাকে ডাকতে থাকে কিন্তু কারোর কোনো সাড়া শব্দ নেই। বাড়িটা কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। বাড়ির কারোর কোন সাড়াশব্দ নেই গেলো কোথায় সবাই? ইশান মায়ের ঘরে যেতে নিলেই রেহেলা খালা এসে বলে।

–ছোট ভাইজান বাড়িতে কেউ নেই!

ঈশান ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বলে।

–নেই মানে! কোথায় গেছে এই অসময়ে সবাই?

–আসলে ভাইজান হয়েছে কি? তীর আপার….

তীরের নামটা শুনার সাথে সাথে ইশানের বুকটা ধ্বক করে উঠে। অজানা ভয় কাজ করতে থাকে মনের ভেতরে। মেয়েটার হাত কেটেছে এখন আবার কি হলো! রেহেলা খালার কথা মাঝেই ইশান অস্থির কন্ঠে বলে।

–কি হয়েছে তীরের?

–আসলে তীর আপায় জ্ঞান হারায়া ফেলাইছিলো জ্বর আসার কারনে। বড়ো ভাই জান বাড়িতে থাহনে রক্ষা হইছে না হলে যে কি হইতো তীর আপার আল্লাই জানে। এহন একটু আগেই জ্ঞান হিরছে আপার তাই সব্বাই মিলে দেখতো গেছে।

ইশানের পা জোড়া থমকে গেছে। এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে তীরের আগের বারের জ্বর উঠার দৃশ্যটা যে জ্বর সবাইকে এক প্রকার কাঁদিয়ে ছেড়েছিলো। ইশানকে এমন ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রেহেলা খালা বলে।

–কি হইছে ছোট ভাই জান?

ধ্যান ভেঙ্গে ইশানের কিছু না বলে ছুটে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে উদ্দেশ্য তীরকে এক নজর দেখার। মেয়েটা এখন কি অবস্থায় কে জানে? ইশান বার বার খোদার কাছে একটা দোয়াই করছে তীরের যেন কিছু না হয়। এই মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে যে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না। ইশানের তো এখন মনে হচ্ছে যা কিছু তীরের সাথে হচ্ছে সবটা ওর জন্যই। তাই নিজেকে যত পারছে তত গালি দিচ্ছে।

ইশান তীরের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ায় শব্দহীন ভাবে। কেউ এখনও বুঝতে পারে নি যে ইশান এসেছে সবাই তো ব্যস্ত অসুস্থ তীরকে নিয়ে। ইশানের নজর যায় তীরের দিকে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে আধ শুয়া হয়ে‌ শুয়ে আছে। মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কেমন কাল সেটে দাগ পরে গেছে মেয়েটার। আগের সেই উজ্জ্বলতাটা হারিয়ে গেছে যেন এই দুইদিনে।

তীর ঔষুধ গুলা খাওয়ার পরপরেই নজর যায় ইশানের দিকে। ইশানকে দেখার সাথে সাথে তীর অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তীরের এই ইগনোরটা ইশান সহ্য করতে পারছে না একে বারে বুকের বা পাশটায় গিয়ে ধনুকের তীরের মতো যেন বিঁধছে। ইশান অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে তার ভালোবাসার মানুষটার দিকে। ইশান কি করে বুঝবে এই মেয়েটাকে ওর কিছু হয়ে গেলে যে ও নিঃস্ব হয়ে যাবে।

এমন সময় অভি তীরের ঘরে ঢুকতে যাবে তখন ইশানকে দেখে থেমে যায় আর সাথে সাথে বলে।

–ইশান ভাইয়া তুমি এখানে?

অভির কথা শুনে সবাই ইশানের দিকে ফিরে তাকায়। ইশানকে দেখে আজিজুল আহমেদ বলে।

–একি ইশান তুমি বাইরে কেন দাঁড়িয়ে ভেতরে এসো।

–না না আঙ্গেল আমি এখানেই ঠিক আছি। আসলে বাড়িতে এসে জানতে পারি রেহেলা খালার কাছে তীর নাকি অসুস্থ। তাই তীরকে দেখতে আসলাম। এখন ও কেমন আছে?

–ভালো আছে বাবা এখন। তুমি ভেতরে এসো।

ইশান ঘরের ভেতরে পা ফেলতে নিবে সাথে সাথে তীর বলে উঠে।

–বাবা আমি এখন রেস্ট নিবো তাই ঘরটা খালি করলে একটু সুবিধা হয় আমার জন্য। এত কোলাহল ভালো লাগছে না আমার মাথা ব্যথা করছে। শুধু ইশু থাকুক আর তোমরা সবাই যাও এখান থেকে।

ইশানের পা জোড়া থেমে যায় ভেতরে ডুকতে গিয়েও ডুকতে পারলো না। ইশান বুঝতে পারছে তীর যে ওকে দেখেই এই কথাটা বলেছে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ইশান। ভেতরে থেকে এক দীর্ঘ নিশ্বাস বেরিয়ে আসে। তীরের চোখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে #প্রনয়ের_দহন যে দহনে এত দিন ও পুড়েছে আজকে সেই দহনে পুড়ছে তীর। আজিজুল আহমেদ বলে।

–হে হে মা তুমি রেস্ট নাও আমরা চলে যাচ্ছি।

একে একে সবাই বের হতে শুরু করে ঘর থেকে। ইশান এখনও দাঁড়িয়ে থেকে তীরকে দেখে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে মেয়েটা বুকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু একটা অদৃশ্য জড়তা যেন বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সামনে। নেহা বেগম যখনেই বের হতে নিবে তখনেই ইশানকে বলে।

–চল বাবা ও রেস্ট করুন।

ইশান মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। ইশান বের হতে নিবে তখনেই কিছু একটা মনে পড়ে তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।

–ভালো থাকিস তীর। আসি আমি। নিজের খেয়াল রাখিস।

ইশান চলে যেতে ডুকরে কেঁদে উঠে তীর। ইশা হতভম্ব হয়ে বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করে।

–কি হয়েছে তীর?

তীর কোনো উত্তর দেয় না নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে আর মনে মনে বলে।

–কেন এমন করছেন আমার সাথে ইশান ভাইয়া কেন? কেন নিজের মনের কথা বলছেন না? কেন এত লুকোচুরি কেন এত জড়তা কাজ করে আপনার মনে কেন?

ইশান বাড়িতে ডুকেই নিজের ঘর থেকে নিজের ফোন, ওয়ালেট আর গাড়ির চাবি নিয়ে বের হতে নিবে তখনেই সামনে এসে মা দাঁড়ায় আর বলে।

–কোথায় যাচ্ছিস ইশান এই সময়?

–আমি একটু আসছি মা।

–না কোনো আসা আসি নাই। তুই এখন বাইরে যাবি না ব্যস্।

–প্লিজ মা এমন ছেলে মানুষী করো না তো।

বলে পাশ কেটে চলে যায় আর নেহা বেগম চিৎকার করে বলে।

–ইশান আমার কথা শুন বের হোস না এখন।

কে শুনে কার কথা ইশান মার কথা অগ্রাহ্য করে বের হয়ে পড়লো। ইশানের ধম বন্ধ হয়ে আসছে ঘরে থাকতে তাই নিজেকে হালকা করার জন্য এখন বের হওয়াটা খুব দরকার ওর জন্য।

#চলবে______

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৪

গাড়ি থামে জনমানব শূন্য এক জায়গাতে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, ঝিঁঝি পোকার আওয়াজ ভেসে আসছে রাস্তার পাশের ঝোঁপ থেকে, মাঝে মাঝে দুর থেকে ভেসে আসছে শেয়াল আর কুকুরের ডাক। তবে রাস্তার পাশে একটা সোডিয়াম লাইট জ্বলছে কিন্তু সেটাও খুব ক্ষীন আলোর। যে আলো দ্বারা এক জন আরেক জনের চেহারা ভালো করে বুঝতে পারবে না। আকাশে আজকে চাঁদ নেই মেঘেরা দল বেঁধে যেন চাঁদকে আঁড়াল করে রেখেছে যাতে ইশানের কষ্ট চাঁদকে না দেখতে হয়।

ইশান গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। চোখে মুখে ফুঁটে উঠেছে বিষাদের যন্ত্রনা। তীরের অভিমানি মুখশ্রীটা চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে। ইশানের দিক থেকে তীরের মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটা ইশান যেন সহ্য করতে পারছে না। বুকের মাঝে চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে। ইশান হাটু ভে*ঙে বসে পরে ফাঁকা রাস্তায়। বসার কিছুক্ষন পরেই ইশান আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার করে উঠে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে। চারিপাশ থেকে ইশানের চিৎকার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে নিজের কাছে। ইশানের চোখ বেয়ে দু ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। এত বেদনা এত বিরহে সইতে পারছে না আর। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে প্রতিনিয়ত চোখের সামনে দেখেও বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরতে পারছে না এক মুহূর্তের জন্য। বুকের বা পাশটা যে বড্ড যন্ত্রনা হয়! ইশানের এই যন্ত্রনা এক মাএ তীরেই পারবে লাঘব করতে। ইশান দু হাত দ্বারা চুল গুলা আঁকড়ে ধরে। অতঃপর কিছু একটা ভেবে স্টান দাঁড়িয়ে পড়ে আর বলে উঠে।

–আর পারবো না এত লুকোচুরি করতে। বলে দিবো সব আমি তীরকে যে ওকে আমি ভালোবাসি। আর সহ্য করতে পারবো না এই #প্রনয়ের_দহন। মনের ভেতরের অনুভুতি গুলা আর লুকিয়ে রাখতে পারব না। যা হওয়ার হবে আমি বলে দিবো ওকে সবটা খুব তাড়াতাড়ি। ভেবেছিলাম ওর আটারো তম জন্ম দিনের দিন বলবো কিন্তু না এখন সেই সময় এগিয়ে আনতে হবে না হলে তীর হয়তো আমার কাছ থেকে আস্তে আস্তে দুরে সড়ে যাবে। নাহ সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না।

বলেই ইশান বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকাতেই চমকে যায়।

______

–তীর এখন তো ফুপানো বন্ধ কর আর কত কান্না করবি। আমাকে কিছু বলছিসও না আর কাউকে ডাকতেও দিচ্ছিস না। বলবি তো কি হয়েছে?

তীর অশ্রুসিক্ত নয়নে ইশার দিকে তকায়। তীরের এমন চেহারা দেখে ইশা কোমল কন্ঠে বলে।

–কি হয়েছে বল আমাকে না বললে বুঝবো কি করে?

তীর এবার তার জবান খুলে।

–আমি কি দেখতে খুব খারাপ ইশু!

–কে বলেছে এই ফালতু কথাটা? আমার বন্ধবী হলো একটা মায়াবতী যাকে দেখলে যে কেউ পছন্দ করবে।

–তাহলে ইশান ভাই আমাকে কেন তার মনের কথা বলছে না।

ইশার ভ্রু-কুচকে আসে। আবাক হয়ে বলে।

–মানে।

তীর বিয়ে বাড়ির ঘটনা থেকে শুরু করে যা যা হয়েছে তার সাথে ইশার কাছে সবটা খুলে বলে। ইশা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না ইশান এত কিছু করতে পারে।

–কি বলছিস এসব তুই তীর। তার মানে ভাইয়া সত্যি তকে পছন্দ করে।

তীর মাথা নেড়ে সায় দেয়। ইশা এবার একটু ভাব নিয়ে বলে।

–দেখিস আমি বলেছিলাম না ভাইয়া তকে পছন্দ করে। আমার কথা তো তখন বিশ্বাস করিস নি এবার বিশ্বাস হলো তো।

তীর ভাঙ্গা কন্ঠে বলে।

–পছন্দ যদি করেই তাহলে এভাবে এভয়েড করে কেন আমাকে? কেন স্বীকার করে যে আমাকে ভালোবাসে।

–শুনেছি ছেলেরা কাউকে ভালোবাসলে সে ব্যাপারে খুব হিংসুটে হয়ে যায়। যাকে ভালোবাসবে তার আশেপাশে কোনো পুরুষ মানুষ দেখলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে একেবারে। আর রেগে বোম হয়ে যায়।

তীর অবাক হয়ে বলে।

–তো!

–গর্দভ! ভাইয়া যদি তকে মন থেকে ভালোবেসে থাকে তাহলে অন্য কোনো ছেলের সাথে তেক দেখে ভাইয়া রেগে তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নিশ্চিত তকে ভালোবাসার কথা বলে দিবে ভাইয়া।

তীর ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলে।

–সিরিয়াসলি।

–বিশ্বাস না করলে ট্রাই করে দেখতে পারিস।

–কিভাবে ট্রাই করবো?

–পরে বলবো তকে এসব আমি। এখন রেস্ট নে তুই তর শরীর ঠিক নেই।

–আমি ঠিক আছি তুই বল।

–নাই তুই ঠিক নেই।

বলেই তীরকে জোর করে শুইয়ে দেয় ইশা।

_____

ইশানের সামনে তিনটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির হেডলাইনের আলোর দ্বারা ভালো করেই বুঝতে পারছে ছেলে গুলা নেশাগ্রস্ত। হাতে নেশা করার জিনিসপএ। ইশান চারিপাশটা ভালো করে নজর বুলিয়ে দেখে সে এক ভুল জায়গাতে চলে এসেছে এবার তার সাথে কি হবে। সচারচর এই জায়গাতে রাতে কেউ যাতায়াতে করে না। সাড়ে নয়টার পরেই সব যাতায়াতে বন্ধ হয়ে যায় এই রাস্তার। কারন সাড়ে নয়টা পরেই শুরু হয় বখাটে, সন্ত্রাস, নেশাখোরদের আনাগোনা এই রাস্তায়। আর তাদের সাথে নানা ধরনের অস্ত্র থাকে যার দ্বারা সাধারন মানুষদের আক্রমন পর্যন্ত করে। ইশান ফেঁসে গেছে এখন এর থেকে উদ্ধার কি করে হবে? ঠান্ডা মাথায় সবটা সামলাতে হবে ইশানকে এই ব্যাপারটা তাই ছেলে গুলার উদ্দেশ্যে বলে।

–কি ভাইয়েরা কিছু বলবে?

ছেলে তিন জন এক জন আরেক জনের মুখের দিকে তাকায়। কিছু একটা ইশারা করে একজন বলে উঠে।

–এই শালা একদম বেশি ভাব ধরবি না। তাড়াতাড়ি মাল বের কর না হলে কিন্তু একদম গুম করে দিবো।

ইশান চাইলে এদের সাথে লড়তে পারতো এতটুকু শক্তি আছে ওর কাছে। কিন্তু এদেরকে দেখে মনে হচ্ছে একজনের সাথে লড়তে গেলে আরেক জন এসে পিছন থেকে আঘাত করে বসবে। তাই কোনো বেজাল না করেই পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে দেখে ওয়ালেটে মাএ তিনশো টাকা আছে। ইশান সেই টাকাটা ওদের দিকে ধরতেই ক্ষপ করে একজন নিয়ে নেয়। এক জন আরেক জনের মুখের দিকে তাকায়। এই তিনশো টাকা পেয়ে কতটা খুশি যে হয়েছে ওরা যা বলার বাহিরে। তিন জন পিছন ফিরে চলে যেতে নিলেই একজন ওই দুই জনের হাত ধরে থামিয়ে বলে।

–ভাই লোকটা অনেক বড়ো লোক। দেখ এত বড়ো গাড়ি
দাঁড় করানো পাশে আর আমাদের দিলো মাএ তিনশো টাকা। আরও টাকা নিবো এর কাছ থেকে যাতে পরের বার টাকা নিয়ে চিন্তা না করতে হয়।

অন্য ছেলে গুলাও সম্মতি জানায় এই কথাটাতে। তাই ইশানের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে।

–এই ব্যাটা আরও টাকা বের কর।

এবার ইশান কি করবে ওয়ালেট তো পুরা খালি। টাকার কোন নোট নেই যা আছে সব কার্ড। ইশান ওদেরকে বুঝিয়ে বলে।

–দেখো আমার কাছে আর কোনো থাকা নেই। যা ছিলো তোমাদের দিয়ে দিয়েছি।

–শালা আমাদের বোকা পেয়েছিস। এত বড় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিস আর বলছিস পকেটে টাকা নেই।

বলতে বলতে পেকেট থেকে একটা ধারালো ছুড়ি বের করে ফেলে। সেটা ইশানের সামনে নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলে।

–টাকা বের কর না হলে কিন্তু এটা পেটে ডুকিয়ে দিবো।

এবার ইশান রেগে বলে।

–আরে বাপ আমার কাছে টাকা নেই বলছি তো।

–শালা আবার মিছে কথা বলিস।

বলতে বলতে ইশানের দিকে ছুড়িটা এগিয়ে নিতে নিলে ইশান বা হাতটা দিয়ে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সামনে ধরলে বা হাতেই ছুড়ি দিয়ে পোস মারে ছেলেটা। সাথে সাথে গলগলিয়ে রক্ত পরা শুরু করে হাত থেকে। অন্য দিকে ছেলেটা হিংস্র হয়ে বলে।

–টাকা বের না করলে কিন্তু মেরে দিবো একদম।

ইশান কি করবে মাথা কাজ করছে না। অন্য হাত দিয়ে ক্ষত স্থানটা চেপে ধরে রক্ত বের হচ্ছে আগে রক্তকরন বন্ধ করতে হবে। কিন্তু সামনে থাকা মানুষ নামক পশু গুলা যে আবার আক্রমণ করা শুরু করে দিয়েছে। ছেলেটা যেই আবার ছুড়ি নিয়ে আক্রমণ করতে যাবে ওমনি ইশান নিজের গায়ের সর্ব শক্তি দিয়ে ছেলেটার বুক বরাবর দেয় এক লাথি। ছিটকে পড়ে ছেলেটা এমনেতেই নেশা করে আধমরা হয়ে আছে তাই ইশানের লাথিতে নিজেকে সামলাতে পারে নি। অন্য দিকে দুটো ছেলে এক সাথে আক্রমণ করতে নিবে তখনেই একটা আলোর রেখা ফুটে উঠে ছেলে দুটো তৎক্ষণাত থেমে গিয়ে বলে।

–ভাই পুলিশ পুলিশ আসছে চল চল পালাই।

ছেলে দুটো তো পালিয়ে যায় কিন্তু যেটাকে ইশান লাথি মেরেছে সেটা অজ্ঞান হয়ে গেছে তাই নিচেই পড়ে আছে। ইশান তাড়াতাড়ি করে পকেট দেখে রুমাল বের করে ক্ষত স্থানটা চেঁপে ধরে। ইশানের এখন মনে হচ্ছে মার কথাটাই মেনে না বের হওয়াটাই উচিত ছিলো।

পুলিশের গাড়ি এসে থামে ইশানের সামনে। গাড়ি থেকে তিন জন পুলিশ নেমে ইশানের সামনে এসে দাঁড়ায়। পুলিশ তিন জনের মধ্যে দু জনেই ইশানকে চিনে তাই ইশানকে চিনার সাথে সাথে বলে।

–ইশান স্যার আপনি এই রাস্তায় এ সময়।

–আসলে আমি।

–একি আপনার হাত থেকে তো রক্ত বের হচ্ছে।

–না না আমি ঠিক আছি কিছু হয় নি। আপনারা বরং ছেলেটাকে দেখুন ওই আমাকে আঘাত করেছে।

দুজন পুলিশ মিলে নেশাগ্রস্ত ছেলেটাকে তুলে দু হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয় না হলে কখন আবার আক্রমন করে দেয় তার ঠিক নেই। ছেলেটা দুলতে দুলতে পুলিশের গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে। একজন পুলিশ ইশানকে বলে।

–স্যার চলুন আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাই।

–না না আমি ঠিক আছে আর থ্যাংকস ঠিক সময় আসার জন্য।

–ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু হয় নি। এটাই আমাদের ডিউটি সাধারন মানুষকে হেল্প করা।

–ঠিক আছে। আমি তাহলে আসি।

–কিন্তু স্যার আপনি এই হাতে ড্রাইভ করবেন কি করে? বরং আমি আপনাকে ড্রাইভ করে বাড়ি দিয়ে আসি।

ইশান আর না করে কারন এই হাত নিয়ে ড্রাইভ করতে পারবে না। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার আগে হাসপাতালে যেতে হবে। হাতটা ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করা দরকার। হয়তো দু একটা সেলাইও লাগতে পারে।

#চলবে______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে