প্রনয়ের দহন পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
434

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৬

তীর এক ধ্যানে আরশির ভেতরে পড়ে থাকা নিজের প্রতিবিম্বর দিকে তাকিয়ে আছে। আর বার বার কানের দুল গুলা দেখছে নেড়েচেড়ে। কানের দুল গুলা ওর ভীষন ভালো লেগেছে আর কিছু একটা ভেবে আনমনে হাসছে। মাথায় এখন একটা কথাই ঘোরপাক খাচ্ছে এই অচেনা লোকটা কে হতে পারে। মন বলছে ইশান আর মস্তিষ্ক বলে দিচ্ছে হঠাৎ করে ইশান এই কাজটা করতে যাবে কেন? কিন্তু এতটুকু বুঝতে পারছে পরিচিত কেউ একজন এই কাজটা করেছে। তবে সন্দেহের তীর বার বার ইশানের দিকেই যাচ্ছে। গলার কন্ঠটাও কিছুটা ইশানের মতোই ছিলো কিন্তু চাপা কন্ঠে আর ফিসফিসিয়ে কথা বলাতে ধরতে পারছে না তীর। লোকটার গায়ের গন্ধটাও কেমন পরিচিত মনে হলো।

হঠাৎ করেই বাইরে থেকে চেঁচামেচির শব্দ ভেসে আসে ভয়ে কেঁপে উঠে তীর। বিয়েতে কোনো গন্ডগোল হলো না তো আবার। তীর তাড়াহুড়ো করে টেবিলের উপর থেকে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়।

বাড়ির বাইরে এসে দেখে এক জায়গাতে ভীড় জমে আছে। আর তার ভেতরের থেকে কারোর আর্তনাত ভেসে এসেছে। তীর ভ্রু কুঁচকে নেয় বিয়ে বাড়িতে এসে কে কাকে মারছে? তীর ভীড় ঢেলে ভেতরে ডুকে যা দেখে তাতে চোখ কপালে উঠে যায়। হা করে তাকিয়ে আছে সমানের দিকে। ইশানের হাতে চেলাকাঠ অর্ধেকটা ভেঙ্গে নড়ভড়ে হয়ে আছে আর পাশে পড়ে আছে তীর আর ইশাকে বাজে কথা বলা ছেলেগুলার মাঝে দুটো ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায়। শুধু তারা যে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে তা নয় ইশানের ডান হাতের অনেকটা জায়গা কেটে গেছে। যা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ইশানের ক্ষত স্থানটা দেখে তীরের বুকটা ধ্বক করে উঠে। লোকটা এভাবে মারামারি করছে কেন হঠাৎ করে বুঝে উঠতে পারছে না। তবে কি ইশান কিছু জানতে পেরেছে।

ইশানকে রিফাত, ইহান আরও কয়েকজন ধরে রেখেছে। ছেলে দুইটাকে এত মেরেও ইশানের মনের মাঝে শান্তি লাগছে না ইচ্ছে করছে আরও কয়েক গাঁ দিতে। ইশান হুংকর দিয়ে বলে উঠে।

–আমাকে ছাঁড় বলছি! ওদের দুজনকে আজকে জানে মেরে ফেলবো আমি।

ইহান বলে।
–ইশান পাগল হয়ে গেছিস তুই শান্ত হ। ওদেরকে যা মেরেছিস তাতে মন হয় না ঠিক মতো উঠে দাঁড়াতে পারবে।

সোহেল ফরাজী ছেলের এমন ভয়ংকর রুপ থেকে স্তম্ভিত হয়ে আছে। ছেলের এমন রুপ কোনো দিন স্বপ্নেও আনতে পারেন নি। বড় ছেলেটা যবুক বয়সে টুকটাক মারামারি করছে কিন্তু ছোট ছেলে মারপিট থেকে সর্বদা দূরে দূরে থেকেছে আর সেই ছেলে কিনা আজকে এভাবে মারামারি করছে। কি এমন হলো যে এমন শান্তশিষ্ট, গম্ভীর ছেলেটা মারামারি করলো। মানছে ছেলেটা ভীষন রাগী কিন্তু এভাবে কোনো দিন রেগে যেতে দেখে নি ইশানকে। সোহেল ফরাজী ছেলের এমন হিংস্রতা দেখে চিৎকার করে বলে।

–ইশান স্টপ ইট। সব কিছুর একটা লিমিট থাকে তুমি লিমিটের বাইরে চলে যাচ্ছো এবার। এটা আমাদের কুটুম বাড়ি নিজের বাড়ি না যে তুমি যা খুশি তাই করতে পারো।

ইশান বাবার কথা শুনে শান্ত হয়ে যায়। হাত থেকে চেলাকাঠটা ফেলে দেয়। বাবার সাথে সকলের সামনে কোনো ধরনের খা’রাপ আচরণ করতে চায় না ইশান। কিন্তু চোয়াল শক্ত করে রেখেছে। ইশানের কানে এখনও বাজছে তাকে বলা কথা গুলা। ইচ্ছে করছে ছেলে দুটার জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। যাতে পরের বার এমন কথা না বলতে পারে কিন্তু এখন যেই মার মেরেছে নেক্সট টাইম চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না। ইহান আর রিফাত ইশানকে ধরে নিয়ে একটা চেয়ারে বসায়। ক্ষত জায়গাটা পরিস্কার করতে হবে না হলে সেপটিক হয়ে যেতে পারে।

অন্যদিকে সোহেল ফরাজী সবার উদ্দেশ্যে অনুনয় করে বলেন।

–প্লিজ ওদেরকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন যত টাকা লাগে সব আমি দিবো।

এর মাঝে এহসান তালুকতার মানে হইানের শশুড় মশাই বলে উঠে।

–বেয়াই সাহেব আপনি চিন্তা করবেন না। আমি সামলে নিবো সব। যাদের ইশান বাবা মেরেছে তারা এই এলাকার বখাটে ছেলে নিশ্চয়ই এমন কিছু করেছে যার জন্য বাধ্য হয়ে ইশান বাবা এমন একটা কাজ করে ফেলেছে। আপনি টেনশন করবেন না।

–কিন্তু আমাকে জানতে হবে কি এমন হলো যে এভাবে মারধোর করার প্রয়োজন হলো।

____

সদ্য বিবাহিত ইহান ইশানের ক্ষত স্থান ড্রেসিং করে দিচ্ছে নিজের নববধুকে রেখে। কোথায় এখন তার নববধুর পাশে বসে হাতে হাত রেখে গল্প করবে কিন্তু তা না করে এখন ছোট ভাইয়ের সেবা করতে ব্যস্ত। সবেই পোড়া কপাল।

ইহানের প্রোফেশান ডাক্তার তাই আর ইশানকে হাসপাতালে যেতে হলো না ইহানেই সামলে নিলো। ইশানের ভ্রুদ্বয়ের মাঝে ভাঁজ পড়ে আছে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিছে রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। তীরের নামে বলা বিচ্ছির কথা গুলো যেন কানে বার বার কান বাজছে। ইশান জোরে বলে উঠে।

–উফফ ভাইয়া ছাড় আমাকে। এতটুকু ক্ষততে আমার কিছু হবে না।

এমন সময় সোহেল ফরাজী ছেলের উদ্দেশ্যে বলে।

–হে ঠিকেই এতটুকু ক্ষততে তোমার কিছু হবে না। কিন্তু যাদের এমন নির্মম ভাবে মেরেছো তাদের কি হবে ভেবে দেখেছো একবার। ওদের কথা বাদেই দিলাম তোমার কথা একবারও ভেবেছো। এখন যদি ওরা তোমার নামে থানায় মামলা করে তখন তোমার অবস্থান কোথায় হবে ভাবতে পারছো একবার। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে ইশান তোমার এমন কান্ড দেখে।

সোহেল ফরাজী থামে কয়েক মুহুর্ত। তারপর আবারও বলে।

–কেন মেরেছো ওদের ওভাবে?

ইশান কোনো কথা বলছে না দেখে সোহেল ফরাজী বাজখাই কন্ঠে বলে।

–কি হলো আমি কিছু প্রশ্ন জিঙ্গেস করছি তো তোমায়।

ইশান শান্ত কন্ঠে বলে।

–মারামারি করতে শখ জেগেছিলো তাই করেছি।

সোহেল ফরাজী আবাকের চূড়ান্তে চলে যায়। কি বলে এই ছেলে মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে নাকি।

–মানে মারামারি করতে শখ জেগেছিলো মানেটা কি?

ইশান আগের মতোই উত্তর দেয়।

–জীবনে কোনো দিন মারামারি করি নাই তো তাই আজকে খুব শখ জেগেছে মারামারি করার তাই শখটা পূরন করলাম। আর এমন সুযোগ কোনো দিন হয়তো পেতাম না তাই সু্যোগের সত্ ব্যবহার করলাম।

–একদম ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলবে না ইশান। স্পষ্ট ভাবে বলো কেন মারামারি করেছো তুমি?

ইশান তীরের দিকে তাকায়। তীর ইশানের দিকেই তাকিয়ে আছে ইশানের কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার আশায়। তবে ইশান তাকাতেই নজর অন্য দিকে ফিরিয়ে নেয় তীর। ইশান নিচের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসে। মেয়েটা যে ওর দিকে তাকাতে ইততস্ত বোধ করে তা আর বুঝতে বাকি নেই। ইশান কিছু একটা ভেবে স্টান দাঁড়িয়ে পড়ে বলে।

–রিফাত তর গাড়ির চাবিটা দেওয়া যাবে।

–গাড়ির চাবি দিয়ে এখন কি করবি তুই?

ইশান দাতে দাত চেপে বলে।

–গাড়ির চাবি দিয়ে মানুষ কি করে নিশ্চয় মাথায় দেয় না বা খায় না।

রিফাত থতমত খেয়ে বলে।

–না আমি সেটা বলি নি।

–ঠিক আছে গাড়ির চাবিটা দে বাড়ি যাবো।

সোহেল ফরাজী রাগী কন্ঠে বলে।

–ইশান যাওয়ার আগে আমার কথার জবাব দিয়ে যাও।

ইশান বাবার কথা পাত্তা না দিয়ে বলে।

–চাবিটা দে।

–ঠিক আছে চল তাহলে আমিও যাই তর সাথে।

বলতে বলতে পকেট থেকে গাড়ি চাবিটা বের করে রিফাত।

–নাহ। তুই ওদের সবাইকে সাথে করে নিয়ে আসবি।

সোহেল ফরাজী রিফাতকে উদ্দেশ্য করে বলে।

–রিফাত ওকে তুমি চাবি দিবে না।

ইশান দাতে দাত চেপে রিফাতকে বলে।

–তুই কি চাবি দিবি।

সোহেল ফরাজী বলে।
–না ও তোমাকে চাবি দিবে না। তুমি আমার কথার জবাব দাও কেন মারামারি করেছো?

রিফাত একবার সোহেল ফরাজী দিকে তো আরেক বার বন্ধুর দিকে তাকায়। বেচারা রিফাত বাপ বেটার চিপায় পড়ে গেছে। একজনের থেকে আরেকজন কম যায় না। রিফাত কার পক্ষ নিবে বুঝতে পারছে না। প্রান প্রিয় বন্ধুর পক্ষ নিবে নাকি ভবিষতে হওয়া শশুড়ের পক্ষ নিবে। রিফাতের ভাবনার মাঝেই ইশান রিফাতের হাত থেকে ছুঁ মেরে চাবিটা নিয়ে বলে।

–সবাইকে সাবধানে নিয়ে আসবি।

এর মাঝে ইহান ইশানের সামনে এসে দাঁড়ায়।

–ইশান তর হাতের অবস্থা ভালো না ড্রাইভ করতে পারবি না।

–সমস্যা হবে না ভাইয়া।

বলেই ইশার কাছ থেকে নিজের কোর্টেটা নিয়ে তীরের দিকে এক পলক তাকিয়ে হনহন করে চলে যায়। আর অন্য দিকে সোহেল ফরাজী চিৎকার করে ছেলেকে বকে চলছে। ছেলেটা ওনার হঠাৎ করেই কেমন যেন পাল্টে গেল। একেই বলে ভোঁতা কাচির ধাঁর উঠলে যা হয় আর কি! ইশানের ক্ষেএেও আজকে তাই হলো।

ইশা তীরের কানে কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।

–দোস্ত ভাইয়া কি কিছু জানতে পেরেছে নাকি রে?

–বুঝতে পারছি না।

–আমার মনে হয় ভাইয়া কিছু জানতে পেরেছে না হলে ভাইয়া এভাবে মারামারি করার লোক না। দেখেছিস ভাইয়া তকে কত ভালোবাসে।

–সত্যি কি তাই। কিন্তু ওনি যদি ভালোবেসে থাকেও তাহলে মুখ ফুটে এসে বলুক আমাকে।

–গাদী তুই বুঝতে পারিস না ভাইয়ার হাবভাব দেখে। একটা মেয়ে একটা ছেলের হাবভাব দুর থেকে দেখলেই তো বুঝে যায় যে ছেলেটা ওকে কি নজরে দেখে। আর সেখানে তুই ভাইয়ার এত কাছে থেকেও বুঝতে পারিস না।

–বুঝতে তো পারি কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছি না যে ওনি আমার মতো একটা মেয়েকে ভালোবাসবে। যেখানে ওনার আশেপাশে আমার থেকেও সুন্দরী মেয়েরা ঘুরাফেরা করে সেখানে আমি তো কোন ছাই।

–ভাইয়া তকে ভালোবাসার কথা মুখে বললে বিশ্বাস করবি তো।

–কিন্তু সে তো বলে না অতোও বলবে কিনা সন্দেহ।

–ভাইয়াকে বাধ্য করবো বলাতে।

–কিভাবে?

–আগে ইহান ভাইয়ার বিয়ের ঝামেলাটা শেষ হোক তারপর ইশান ভাইয়ার ভালোবাসা স্বীকার করার মিশনে নামবো আমরা।

তীর ইশার কথা শুনে হেসে দেয়। শেষে কিনা ছোট বোন হয়ে বড় ভাইয়ের মুখে ভালোবাসার কথা স্বীকার করাবে। বড়ই অদ্ভুত ঘটনা।

কিন্তু এবার দেখে যাক ইশা কি করে যেটা করলে ইশান তার মনের কথা বলবে তীরকে।

#চলবে_______

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৭

ইশান বাড়িতে এসে নিজের ঘরে ডুকে বেডে চিৎ হয়ে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়ে আর নজর তার ছাদের দেয়ালে। বাড়িতে আসতেই মায়ের অনেক প্রশ্নের সম্মুখে পড়েছে সে। তখন শুধু একটা কথাই বলেছে মাকে “ভালো লাগছে না তাই চলে এসেছে বিয়ে বাড়ি থেকে”।

ইশান জোরে তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। চোখ বন্ধ করতেই ভেসে ওঠে কয়েক ঘন্টা আগে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা।

ইশান বিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় ফোনে একটা গুরুত্বপূর্ণ কল আসার জন্য। বিয়ে বাড়িতে চিৎকার চেচামেচির হওয়ার কারনে ঠিক মতো কথা বুঝতে পারছিলো না তাই বাধ্য হয়ে বের হতে হয়েছে। যখন ফোনে কথা বলছিলো তখনেই বখাটে ছেলে গুলা ইশানের উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।

–আরে ওই দেখ আমাদের হিরোকে।

–তা হিরো এখানে তার হিরোইন কোথায়? কেউ একটু হিরোকে বল আমাদের কোলেও একটু তার হিরোইনকে দিতে। আমরা তার হিরোইনকে কোলে তোলে স্বযত্নে একটু ফিটার খাইয়ে দেই কি বলিস তরা।

বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সবাই।

আর এই দিকে রাগে ইশানের নাকের পাঁটা ফুলে উঠছে। পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে। চোয়াল শক্ত করে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে কল কেটে দিয়ে ফোনটা প্যান্টের পকেটে ডুকিয়ে ছেলে গুলার সমানে এসে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলে।

–কি বলছিলি আমার বল তো!

–আরে আরে দেখ দেখ হিরোর দেখি রাগ উঠে গেছে তার হিরোইনকে নিয়ে কথা বলার জন্য।

ইশান বিরক্তিকর ভাব নিয়ে মুখ দিয়ে চ উচ্চারন করে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আশেপাশে মাথাটা নাড়িয়ে বাকাঁ হাসি দেয়। ছেলে গুলা একটু আবাক হয় ইশানের এমন কান্ডে। ইশান আশে পাশে তাকিয়ে কিছু একটা খুজার চেষ্টা করে। অদুরে চোখ যায় একটা চেলাকাঠ পড়ে আছে। পুনরায় ছেলেগুলার দিকে রক্তচুক্ষু দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে।

–এখানে দাঁড়া কেউ এক পাও নড়ঁবি না।

ইশানের এমন ভয়ংকর রক্তচুক্ষু চাওনি দেখে ছেলেগুলা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। ছেলেগুলা নিতান্তই ইশানের থেকে হ্যাংলা পাতলা, বয়সেও ছোট হবে, লম্বা, চাওড়া সব দিক থেকেই ইশানের থেকে পিছিয়ে। ইশান চেলাকাঠটা হাতে তুলে নেয়। তা দেখে চারটা ছেলের মাঝে থেকে দুটো ছেলে আলগোছা সড়ে যায়। কিন্তু দুটো ছেলে রয়ে যায়। এমন উঠতি বয়সে ছেলেদের শরীরের রক্ত গরম একটু বেশিই থাকে তাই নিজের প্রতি পূর্ন বিশ্বাস ছিলো ওদেকে ইশান কিছুই করতে পারবে না। ইশান চেলাকাঠটা হাতে করে নিয়ে এসে ছেলে দুটোর সমানে দাঁড়িয়ে হুংকার দিয়ে বলে।

–একটু আগে কি কি বলছিলি এবার বল?

–বললে কি করবি তুই?

–তুই বলে তো দেখ কি করি?

–বলেছি তর হিরোইনকে আমাদের কোলে তুলে…..

আর কিছু বলার আগেই বলিষ্ঠ পুরুষালী হাত দিয়ে ইশান নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয় ছেলেটার গালে। ছেলেটা নিজের ঠাল সামলাতে না পেরে মুখ তুবড়ে পড়ে যায় মাটিতে। পাশের ছেলেটা কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই ইশান ওই ছেলেটার গালে চড় বসিয়ে দেয়। ছেলে দুটোকে পুনরায় কিছু বলার বা করার সুযোগ না দিয়ে চেলাকাঠ দিয়ে পিটাতে শুরু করে। পিটানোর সময় চেলাকাঠের আগটা লেগে ইশানের হাতটা কিছুটা ছিলে যায়। তাতে ইশানের কোনো হেলদোল নেই সে আছে নিজের কাজে কি করে ছেলে গুলাকে শায়েস্তা করা যায়।

ইশান চোখ মেলে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়ায়। লম্বা একটা শাওয়ার নিতে হবে তাহলে কিছুটা রিলেক্স লাগবে।

আধ ঘন্টা পর বের হয় ইশান শাওয়ার নিয়ে। কোমড়ে টাওয়াল পেচানো, গলায় টাওয়াল ঝুলছে সেই টাওয়াল দিয়ে মাথার পিছনের সাইড মুছতে মুছতে এসে দাঁড়ায় আয়নার সামনে। আয়নাতে তাকাতেই নজর যায় সোফার উপরে রাখা তার পরিহিত ড্রেসের দিকে। ইশান সেখানে গিয়ে প্যান্ট হাত নিয়ে তার পকেট থেকে তীরের বড় বড় কানের দুল গুলা বের করে। ইশান ভেবে পাচ্ছে এত ভারি কানের দুল মেয়েটা পড়ে কি করে। ইশান মুচঁকি হেসে নিজের ডান গালে হাত রেখে। তীরের ছোট হাতটা দিয়ে প্রথম ছোঁয়া পেয়েছে ইশান ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। এর মাঝে বাইরে থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছে বউ নিয়ে চলে এসেছে ইহান। ইশান কার্ভাড খুলে আপতত কার্ভাডের এক সাইডে কানের দুল জোড়া রেখে দেয়। কিন্তু কে জানতো এই কানের দুল জোড়ার জন্য ইশানকে প্রশ্নের সম্মূখীন পড়তে হবে।

_______

আগের জীবন শুরু সকলের। সময় অতিবাহিত কারো জন্য সময় অপেক্ষা করে না সময় তার নিজের গতিতে চলে। ইহানের বিয়ের পর কেটে গেছে এক সপ্তাহ চোখের পলকেই। কিন্তু এই এক সপ্তাহ’য় তীর না পেরেছে পড়াশোনায় মনযোগ দিতে, না পেরেছে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতে আর না পেরেছে ঘুমাতে। তীরের সব কিছু আলোমেলো করে দিলো ইহানের বিয়ের দিনে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা। মস্তিষ্ক থেকে কিছুতে ডিলেট করতে পারছে রুদ্ধশ্বাস সেই ঘটনাটা। বার বার এই ছোট মাথায় ইশান ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু এই এক সপ্তাহর মাঝে ইশানকে তীর দু বার দেখেছিলো এর পর আর দেখে নি। ইশা বলেছিলো ইশানকে বাধ্য করবে মুখে ভালোবাসি কথাটা বলাতে কিন্তু না ইশার এখন কোনো পাত্তা নেই সেই আছে তার প্রেমে মজে।

তীর পড়ার টেবিলে বসে কলম কামড়াছিলো নজর তার বইয়ের দিকেই কিন্তু কোনো পড়াই সে পড়ছে না। তার মাথায় তো ঘুরছে ইশান নামক পোকটা। যে পোকাটাকে শত চেষ্টা করেও বের করতে পারছে না। মাথায় সারাক্ষন ঘিলবিল করছে। তীর হাত থাকা কলমটা রাগে টেবিলে উপর রাখে।

–নাহ এভাবে থাকতে পারবো না আমাকে কিছু একটা করতে হবে কিন্তু করবো’টা কি? ওই হিটলার ব্যাটা আমাকে ভালোবাসে কিনা সেটাও তো বুঝতে পারছি না।

তীর পড়ার টেবিল থেকে উঠে দাড়িয়ে সারা রুম জুরে পায়চারি করা শুরু করে দেয় আর কিছু একটা বিরবির করে। হঠাৎ করেই কিছু একটা ভেবে ঘর থেকে বের হয়ে পড়ে।

বাড়ির সদর দরজা খুলে বাড়ির বাইরে যেতে নিবে তখনেই আয়েশা সুলতানা এসে বলে।

–একি তীর এমন ভরসন্ধ্যা বেলা কোথায় যাচ্ছিস তুই?

তীর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে।

–মা ইশুর কাছে যাচ্ছি আমার কিছু নোট লাগবে এখনেই।

–ও আচ্ছা ঠিক আছে যা। আমি কি এগিয়ে দিবো তকে।

–ঠিক আছে চলো।

আয়েশা সুলতানা তীরকে ফরাজী ভিলাতে পৌঁছে দিয়ে চলে আসে। তীর কলিং বেল বাজাতেই কেয়া এসে দরজা খুলে দেয়। কেয়াকে দেখে তীর মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে বলে।

–কেমন আছো ভাবি?

–ভালো! তুমি?

তীর ভেতরে ডুকতে ডুকতে বলে।

–আর ভালো কারো বিরহে ভালো থাকতে পারছি কই?

কেয়া হেসে উত্তর দেত।

–সেটা কে গো যার বিরহে তুমি ভালো থাকতে পারছো না?

–আছে একজন কিন্তু এখন বলা যাবে সিক্রেট বুঝলে ভাবি।

এমন সময় তীরের চোখ যায় সিঁড়ির প্রথম মাথায় ইশান দাঁড়িয়ে আছে হাতে ফাইল টাইল নিয়ে আর তীরের দিকে কেমন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইশানকে দেখেই তীর কেয়াকে বলে।

–ভাবি ইশু কোথায়?

–ওতো ওর ঘরেই আছে যাও তুমি।

–হুম।

তীর শুকনো একটা ঢোক গিলে কাপাকাপা পায়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু ইশান টাই দাঁড়িয়ে আছে। এই লোক সড়ঁছে না কেন দেখতে পারছে তীর উপরে উঠবে তারপরও এভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন? তীর কাপাকাপা গলায় বলে।

–ইশান ভাইয়া একটু সাইড দিবেন উপরে যাবো।

ইশান তীরের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নেয়। তখন ইশান তীরের কথাটা শুনে ফেলেছে এখন এটাই চিন্তা করছে কার বিরহে মেয়েটা ভালো নেই। কেয়া ইশানকে দেখে বলে।

–ইশান তুমি কি ডিনার করে আসবে বাইরে থেকে।

ভাবির কন্ঠ শুনে ইশান নিজের জায়গায় থেকে সঁড়ে আসতে তীর দৌঁড়ে উপরে চলে যায়। ইশানের তীক্ষ্ম চাওনি দেখে মনে হচ্ছিলো হার্টটা এক্ষুনি বের হয়ে যাবে ওর। এভাবে কেন তাকায় লোকটা যে তাকানোটা ছোট হৃদয়ের তীর সহ্য করতে পারে না। ইশান ভাবির উদ্দেশ্যে বলে।

–হুম ভাবি বাইরে থেকে ডিনার করে আসবো। একটা মিটিং আছে নয়টা তাই ওখান থেকে ডিনার করে ফিরবো।

–আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যাও।

–হুম।

কেয়া যেতেই ইশান দু’তলার দিকে তাকায় তাকাতেই তীরকে দেখতে পায় ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ইশান তাকাতেই তীর সড়ে যায়। ইশান মুচকি হেসে নিজের কাজে বেরিয়ে পড়ে।

তীর নিজের বুক চেপে ধরে ইদানিং এই দুষ্টু হার্টটা একটু বেশি লাফালাফি করছে। আর সেই লাফালাফিটা শুরু হয় ইশানের সামনে পড়লে। ইশানের রুম পেরিয়ে ইশার রুমে যেতে হয়। তীর যেই ইশানের রুম পাড় হতে যাবে তখনেই তীরের পা দুটো থেমে যায়। মনে মনে কিছু একটা ভেবে চারিপাশটা ভালো করে দেখে আস্তে আস্তে করে ইশানের ঘরে ডুকে পড়ে।

#চলবে______

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৮

কাঁপাকাঁপা ছোট হৃদয়টা নিয়ে তীর ইশানের ঘরে পা রাখে। ঊদ্দেশ্য ইশানের ঘরে তার কানের দুলটা আছে কিনা তা খুজে বের করা। যদি কানের দুলটা ইশানের ঘরে থাকে তাহলে বুঝে নিবে যে ইশানেই ওই‌ লোকটা যে তাকে ভালোবাসে আর না থাকলে কি আর করার কিচ্ছু করার নেই। তীর একটা ঢোক গিলে ইশানের ঘরের চারিপাশটা ভালো করে চোখ বুলিয়ে নেয় কোথায় থেকে শুরু করবে কান দুলটা খোজা। ভয়ও হচ্ছে না জানি আবার কে কখন চলে আসে এই ঘরে। তবে সচারচর এই ঘরে কেউ আসে না তাই একটু রিলেক্স আছে তীর কিন্তু তার পরও ভয় লাগছে। ইশানকে নিয়ে কোনো ভয় নেই না কারন ইশান চলে গেছে কখন আসবে তারও ঠিক নেই।

তীর ইশানের সারা ঘর তন্নতন্ন করে খুজেছে কিন্তু না কোথায় কানের দুল জোড়া পেলো না। বুকসেলফ আর ওয়াড্রোব থেকে শুরু করে ঘরের সব জিনিস খুজা শেষ এখন শুধু বাকি রইলো ইশানের আলমারিটা চেক করা। তীরের ভয় হচ্ছে আলমারিতেও যদি না থাকে দুলটা তাহলে। তীর মনে প্রানে চায় যাতে আলমারির ভেতরে দুলটা থাকুক। ঠিক তাই হলো আলমারি খোলে কিছুক্ষন খুজাখুজির পরেই দেখে এক কোনে দুল জোড়া পড়ে আছে।

তীর কাঁপাকাঁপা হাতে দুল জোড়া হাতে তুলে দেয়। তারমানে ওই দিনের লোকটা ইশানেই ছিলো। তীরের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠে। চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। চোখ মেলে তাকালো কানের দুল গুলার দিকে বুকের ভেতরের অদ্ভুদ একটা ভালো লাগার টেউ খেলে যাচ্ছে। হঠাৎ চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে তীরের সেটা আনন্দে নাকি কষ্টে বুঝতে পারছে না। তবে এটা সিউর হয়ে গেলো ইশান তাকে ভালোবাসে কিন্তু স্বীকার করে না কেন?

তীরের ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার শব্দ পেয়ে কেঁপে উঠে সারা শরীর। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ঢোক গিলে। ভয়ে হাত পা কাঁপছে তীরের কে এসেছে এখন এই ঘরে? যদি সে তাকে প্রশ্ন করে ইশানের ঘরে কেন এসেছো তাহলে কি উত্তর দিবে তীর তাকে? ভয়ে ভয়ে মাথা নিচু করে সামনের দিকে ফিরে তীর। কিন্তু মাথা উপরে তুলে সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।

–তুই এখানে আমার ঘরে কি করছিস?

কারো কন্ঠ শুনে তীর সাথে সাথে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে ইশান স্বয়ং ইশান দাঁড়িয়ে আছে তার চোখের সামনে। যাকে মোটেও সে আশা করে নি এখানে।

ইশান ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে তীরের দিকে। একটা ফাইল ফেলে গিয়েছিলো ইশান আর সেটাই নিতে এসেছে মাঝ রাস্তা থেকে ফিরে এসে। কিন্তু এসে যে এমন একটা পরিস্থিতে পরবে কল্পনা করতে পারে নি।

ইশান আপতত তীরকে এই সময় তার ঘরে একদমেই আশা করে নাই। একবার তীরের হাতের দিকে তো আরেকবার তীরের মুখের দিকে তাকায় ইশান। অজানা একটা ভয় কাজ করছে ইশানের মনে তাহলে কি মেয়েটা বুঝে ফেললো সব কিছু। মেয়েটা যদি তাকে এখন প্রশ্ন করে তাহলে কি উত্তর দিবে এখন ইশান কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। সারা মুখে ফুটে উঠছে চিন্তার বলি রেখা। জিভ দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নেয় ইশান।

তীরের কেন জানি ইশানকে দেখা মাএই ভয়টা মিলিয়ে গেল। মনের ভেতরে সকল প্রশ্ন এসে ভিড় জমিয়েছে যে প্রশ্ন গুলা এখন ইশান না করলেই নয়। নিজেকে স্বাভাবিক করে ইশানের চোখের দিকে তাকিয়ে কানের দুল জোড়া ইশানের সামনে ধরে প্রশ্ন করে।

–এগুলা কি?

ইশান যে ভয়টা পেয়েছে সেটাই হলো এখন কি উত্তর দিবে। ফেঁসে গেছে ইশান তীরের জালে ফেঁসে গেছে খুব বাজে ভাবে ফেঁসে গেছে। এখন এই জাল থেকে যেই করেই হোক তাকে মুক্ত হতে হবে। তাই নিজের সত্ত্বায় ফিরে এসে গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে বলে।

–মেয়েদের কানের দুল।

–সেটা তো‌ আমি দেখতে পারছি।

–তাহলে আমাকে প্রশ্ন করছিস কেন তুই? আর তুই আমার রুমে কি করছিস?

–ভ্যাগিস আপনার রুমে এসেছিলাম না হলে তো জানতেই পারতাম না।

–কি জানতে পারতি না।

–এই যে আপনার রুমে আপনার আলমারিতে আমার কানের দুল।

–তুই আমার আলমারিতে হাত দিয়েছিস কেন?

–একশো বার হাত দিবো হাজার বার হাত দিবো।

ইশান একটু জোরেই বলে উঠে।

–তীররর!

–একদম চিৎকার করবেন না। কি ভেবেছেন আপনি কিচ্ছু বুঝতে পারবো না আমি কিচ্ছু না। ওই দিন আপনি সেই অচেনা লোকটা ছিলেন তাই না, যে কিনা আমার কান থেকে এই দুল গুলা খুলে নতুন দুল পরিয়ে দিয়েছিলেন।

সব শেষ সবটা ধরে ফেলেছে তীর এবার কি হবে। ইশানের বুকের ধুকপুকানিটা বেড়ে দ্বিগুন হয়ে গেছে মনে হচ্ছে এক্ষুনি হার্ট অ্যাটাক করে হয়ে যাবে। হাটু ভেঙ্গে আসছে ইশানের, মনে হচ্ছে এক্ষুনি হাটু মোড়ে নিচে বসে পড়বে। গম্ভীর, বদমেজাজী, রগচটা ছেলেটা যেন এখন সামনে দাঁড়ানো পিচ্চি মেয়েটার কাছে এখন কিচ্ছু না। নিজেকে এতটা অসহায় ইশানের কোনো দিন লাগে নি আজকে যতটা লাগছে। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে।

–কার কথা বলছিস তুই হুম? আমি কিছু বুঝতে পারছি না আর আমিই বা এমন করতে যাবো কেন তর সাথে? আমার কি কোনো কাজ নেই নাকি।

তীর নিঃশব্দে হাসে।

–অস্বীকার করছেন আপনি বলতে চাইছেন ওই লোকটা আপনি ছিলেন না।

ইশান তীরের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে কথা বলতে পারছে না তাই দ্রুত পায়ে টেবিলের কাছে গিয়ে ফাইলটা তুলে নিয়ে জবাব দেয়।

–নাহ আমি ছিলাম না।

তীরের গলা ধরে আসছে ইশান কেন এভাবে অস্বীকার করছে সবটা বুঝতে পারছে না। তীর ধরা গলায় বলে।

–সত্যিই আপনি ছিলেন না।

ইশান এবার জোরেই বলে।

–আর কত বার বলবো তকে ওই অচেনা লোক আমি ছিলাম না।

ইশানের এমন চিৎকার শুনে তীর কিছুটা কেঁপে উঠে। ইশান অন্য দিকে ফিরে আবারও বলে।

–আমার ঘর থেকে বের হো তীর।

তীর ছলছল চোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে।

–আপনি কি আমায় ভালোবাসেন ইশান ভাইয়া।

থমকে যায় ইশান। কেঁপে উঠে হাতে ধরে রাখা লাল ফাইলটা। এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবে এখন তীরকে। তবে ইশানের গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে–

“হে ভালোবাসি তকে আমি খুব ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তকে আমি।”

কিন্তু ইশান নিরুপায় এখন ও এমন কথা বলতে পারবে না। ইশান চায় না আবেগের বশে কিছু ভুল করে ফেলতে। তীর যতই‌ নিজের কাছে থাকবে ততই নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ভুল কিছু করে বসবে। আপতত সেটা ইশান এখন চায় না। তীর যে এখনোও ছোট এখনোও আঠারো বছর পূর্ন হয় নি। মেয়েটার আঠারো বছর পূর্ন হতে যে আরও কিছু দিন বাকি। এর আগেই‌ ইশান চায় না ওদের মাঝে প্রনয়ের সম্পর্ক সৃষ্টি হোক। তীরকে সম্পূর্ণ বৈধ ভাবে নিজের করে‌ পেতে চায় ইশান অবৈধ ভাবে নয়। তাই নিজের সব আবেগ ভালোবাসা গুলা ধামা চাপা দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ইশান‌ কোনো জবাব দিচ্ছে না দেখে তীর ভাঙ্গা গলায় আবারও বলে।

–কি হলো ব.. ব বলুন?

ইশান নিজের ঠোঁট জোড়া চেপে ধরে আছে। তীরের ভাঙ্গা গলার স্বর শুনে ইশান ফিরে তাকায় তীরের দিকে। মেয়েটা অসহায় চোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে উত্তর পাওয়ার আশায়। ইশান ঢোক গিলে নেয় সাথে সাথে। মেয়েটা এভাবে চোখের জল ফেলছে কেন উত্তরটা শুনার জন্য তবে কি ও ইশানকে ভালোবাসে। এই‌ কথাটা ভাবতেই ইশানের শিরদাড়া দিয়ে স্রোত বয়ে যায়।

ইশানের হাত দুটো নিশপিশ করছে তীরের চোখের কোণে জমে থাকা নোনা জলটা মুজে দিতে। কিন্তু নিরুপায় হয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়। চাইলেও পারছে না সামনে থাকা ভালোবাসার মানুষটার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরতে। একবার মাথাটা বুকে গেঁথে ধরলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে।

ইশানের কি হলো কে জানে হঠাৎ করেই এক পা এক পা করে তীরের দিকে এগিয়ে যায়। ইশানের এগুনো দেখে তীরও ঠাই দাঁড়িয়ে আছে এক পাও নড়ছে না। আসলে চাইলেও নড়তে পারছে না একটা অদৃশ্য শক্তি যেন তীরের সব শক্তি লোপে নিয়েছে। তবে বুকের মাঝে ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ।‌ যে শব্দটা ইশান আরেকটু কাছে আসলেই শুনতে পাবে।

ইশান তীরের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় হাত থাকা ফাইলটা আনমনেই ফ্লোরে পড়ে যায়। ইশান কাছে এসে দাঁড়াতেই তীরের নাকে সেই দিনের স্মেলটা এসে বারি খায়। এবার আরও নিশ্চিত হয়ে গেলো তীর ওই দিনের লোকটা ইশানেই ছিলো ইশান ছাড়া আর কেউ নয়।

ইশান নিজের ডান হাতটা এগিয়ে দেয় তীরের মুখের দিকে তা দেখে তীর চোখ জোড়া আপনাআপনি বন্ধ করে নেয়। ইশান তীরের বা চোখের জলটা মুজে দেয় অতি সাবধানে। ইশানের ছোঁয়া পেয়ে তীরের ছোট্ট দেহটা কেঁপে উঠে, সারা শরীরের অজানা শিহরন বয়ে যাচ্ছে, তল পেটটা কেমন অসহনীয়ভাবে মুচর দিয়ে উঠছে বার বার। সারা শরীরের লোমকূপ দাড়িয়ে গেছে। এই সব অনুভুতিরা তীরের কাছে একান্তই নতুন অনুভুতি যেগুলার সাথে আজকে এক এক করে পরিচিত হচ্ছে। পরপর ডান চোখের জলটাও মুজে দেয় ইশান। এবার তীর চোখ মেলে তাকায় ইশানের দিকে, তাকিয়ে চোখের পাতা জোড়া দু তিন বার ঝাপ্টায়। ইশান সম্মোহনী চোখে তাকিয়ে আছে তীরের টগর টগর চোখের দিকে। কান্না করার ফলে গোলাপি রাঙা ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাপছে তীরের। গাল দুটো লাল হয়ে আছে টমেটোর মতো। তীরের এমন আবেদনময়ী চেহারা দেখে ইশান একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে না চাওয়া শর্তেও। ইশানের মনের ভেতরের বিষাক্ত ইচ্ছেরা জেগে উঠছে যে ইচ্ছে গুলা এত বছর জমা রেখে দিয়েছিলো মনের কোঁটায়। মেয়েটা তার কাছ থেকে সড়ে যাচ্ছে না কেন ইশান বুঝতে পারছে না। সে না হয় তগড়া জোয়ান কোনো মেয়ে তার সন্নিদ্ধে আসে তাহলে বিষাক্ত ইচ্ছেরা সজাগ হয়ে যাবেই আর সেই মেয়েটা যদি হয় তার ভালোবাসার মানুষ তাহলে যেন মনের ভেতরের বেসামাল অনুভুতিরা তেড়ে আসে।

#চলবে________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে