প্রতারক part 19

0
1201

প্রতারক part 19
#Roja_islam

আমি হ্যাঁ বলার সাথে সাথে রাহুল চোখ খুলে আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। চাহনি শান্ত হলেও আমার ভয় করছে!! সাথে অস্বস্তিও লাগছে!! কিছু বলতেও পারছিনা। রাহুলের চাহনি অপেক্ষা করে। বেশকিছু ক্ষণ পড় আমায় ছেরে দাঁড়ায় রাহুল তারপর এক্টু দূরে গিয়ে বলে উঠে।
.
.
— কাল পূর্নির জ্ঞান ফিরেছে। হিরাকে দেখতে চাইছে। আমি এড্রেস মেসেজ করবো তোমায়। হিরাকে কাল হস্পিটাল পাঠিয়ে দিও। নাও আউট।
.
.
আমার খুব কষ্ট হলো রাহুলের ব্যাবহারে এভাবে কথা বলায়। কেনো তা বুঝলাম না। আমি কিছু না বলে দাঁড়িয়েই আছি। তাই রাহুল চেঁচিয়ে উঠে।
.
— আই সেইড আউট হীর!!
.
আমি কিছু বললো।
— রা………!
— আই সেইড গেট লস্ট!!!
.
আমি আর দাড়ালাম না। ছুটে বেরিয়ে যাই ওখান থেকে। তারপর রিকশা করে বাসায় চলে আসি। সারাদিন আর একবারো শিহাবের কথা মাথায় আসেনি এসেছে রাহুলের কথা।
.
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


যদিও রাহুল আমার সাথে ওতো
খারাপ ব্যবহার করেনি।
কিন্তু রাহুলের ঐ চাহনি কেমন তাড়া করছে আমায়।
সারাদিন বেডে এপাশ ওপাশ করেই কাটে আমার।
রাতে ভাইয়া এলে খাওয়া দাওয়া করে ভাইয়ার রুমে যাই।
কথা বলতে কারণ এক্টু আগেই রাহুল মেসেজ দিয়ে এড্রেস দিয়েছে সেটা ভাইয়াকে দিতে হবে। কিন্তু
আমি রুমে ঢুকে দাঁড়িয়ে আছি কিছু বলছিনা তাই।
ভাইয়া আমায় ধরে বসায় বেডে।
.
.
— কি হইছে তীর মুখ এমন কেনো দেখাচ্ছে??
কিছু হয়েছে তোর???
.
.
ভাইয়ার প্রশ্ন শুনে মনে হলো। ভাইয়া কে সব বলে কিছু ডিসিশন নেওয়া যায় ভালো মন্দ। একমাত্র ভাইয়াই পারে আমায় এখন সঠিক পথ দেখাতে। কারণ ভাইয়া তো আর আমার খারাপ চায় না। আর তাছাড়া রাহুলের টপিক বাদ দিলেও শিহাব ক্ষমা চাইছে তাকে ক্ষমা করা যায় কিনা তাও ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবো। এসব ভেবেই বলে ফেললাম।
.
.
— ভাইয়া!!!
— হ্যাঁ বল??
— পরামর্শ চাই তোর??
— বল!! কি পরামর্শ চাই সব পাবি।
.
.
আমি ভাইয়াকে শিহাবের আজকের কথা আর রাহুলের সব কথা ও বলিদেই। তারপর মাথা নুইয়ে রাখি। কারণ বুঝিতে পারছি ভাইয়া রেগে গেছে সব শুনে। বারবার পানি খাচ্ছে বেড সাইড থেকে নিয়ে! ভাইয়া রেগে গেলে বেশী বেশী পানি খায়। অদ্ভুত অভ্যাস পানি খেলে কি হয় বুঝিনা রাগ চলে যায়?? নাকি অন্য কিছু কে জানে!! অনেকক্ষণ পড় ভাইয়া। রেগে বলে উঠে।
.
.
— তুই পাগল হীর??
— কি করলাম আমি?? আমি তো কিছুই করিনি!! করেছে ওরা।
— তুই কি করিসনি তাই বল। এতো কিছুর পড় তুই ঐ বাস্টার্ড এর সাথে কথা বলতে গেলী। কি করে!! নির্লজ্জ হয়ে গেছিস তুই??
— ভাইয়া আমি!!!
— চুপ তুই মহৎ হতে চাস ক্ষমা করে। তাহলে শোন ঐ ছেলেকে ক্ষমা করা গেলেও সে আর তোর যোগ্য নয় হীর বিবাহিত সে!! যাই হোক না কেনো নিতুকে একটা সুযোগ দিয়ে তার সাথে মানিয়ে নিয়ে সংসার করাই শিহাবের জন্য ভালো। তা না করে নিতুর সাথে তোর লাইফ টাও নষ্ট করতে চাইছে সে এখন। বোন তুই আর ওর ফাদে পা দিশ না প্লিজ। এই বোকামো বাদদে হীর প্লিজ।
.
.
চুপ করে বসে চিন্তা করছি। কিছুক্ষণ ভেবে আমি মুচকি হেসে বললাম।
.
.
— আচ্ছা তাহলে আমি শিহাবকে ক্ষমা করে দিবো আর ওকে।কিন্তু ওর লাইফে আর পা দিবোনা। তাহলে ঠিক আছে??
— হালকা হেসে হিরা বললো। হ্যাঁ ঠিক আছে। কিন্তু পারবি তো তুই??? ঐ শিহাব কে ভুলতে??
.
আমি জোরে একটা হাসি দিলাম ভাইয়ার কথা শুনে। তারপর বললাম।
— আরে ভুলেই গেছি কিন্তু খাটাশ টা নিজেই সামনে এসে মনে করিয়ে দেয় বারবার কিন্তু আর না ভুলে যাবো আমি শিহাবকে!!
.
.
হিরা বোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর
কি ভেবে বললো।
.
.
— শিহাকে ভুলে যাবি আর রাহুল কে কি করবি??? সে এতোকিছু করেছে তোর জন্য!!
— হীর অবাক হয়ে বললো। জানিনা ভাইয়া কিছু জানি নাহ।
.
হিরা ভাবছে হীর একদিন ঠিক রাহুলের মায়ায় পড়েই যাবে। সেও তো পড়ে গিয়েছিলো পূর্নির উপর। তারপর হেসে বললো।
— আমি তোকে কোনো কিছুর জন্যই জোর করবোনা হীর। কিন্তু তুই শিহাব কে ভুলে যা এই টুকুই বলবো। এখন বল। আমার পূর্নি কেমন আছে? জানিস কিছু কত দিন দেখিনা!!
.
.
ভাইয়ার মন মরা কথা শুনে সব ভুলে আমি শয়তানী হাসি দিয়ে বললাম।
.
.
— ১০০০ টাকা দে আমি তোকে পূর্নিকে দেখার টিকেট দিবো??
— হিরা ভ্রু কুঁচকে বললো। টিকেট???
— হ্যাঁ???অনলি পূর্নিকে দেখার টিকেট এটা স্পেশাল তাই ১০০০ টাকা লাগবে।
.
.
ভাইয়া আমার কথা শুনে রেগে আমার চুল টেনে ধরলো।আমি ব্যথায় চেঁচিয়ে বললাম।
— ভাইয়া দিচ্ছি দিচ্ছি প্লিজ ছাড়।
— তাড়াতাড়ি দে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি আর তুই টাকা নিয়ে পড়ছিস?? আল্লাহ আমার অপেক্ষা শেষ হলো এট লাস্ট!!!
.
.
আমি আর কষ্ট দিলাম না এড্রেস দিয়ে দিলাম।সে কি খুশী ভাইয়ার এড্রেস পেয়ে। খুশীতে চোখ চকচক করছে তার। কিন্তু সে কি কি ভেবে ভাইয়া রেডী হচ্ছে হন্তদন্ত হয়ে। আমি কিছু বুঝতে পেরে চেঁচিয়ে উঠলাম।
.
.
— তুই পাগল ভাইয়া এখন ১১ টা বাজে!! ঐটা গ্রাম এলাকা তুই যেতে পারবিনা!–
— চুপ করতো অনেক নিজেকে কন্ট্রোল করেছি আর না। আমি এখুনি দেখবো ওকে। আমি জানি পূর্নি আমায় দেখার জন্য পাগলামী করছে। আমি এখুনি যাবো আমার পেইন এর কাছে।
.
এই কথা শুনে আর কিছু বললাম না কারণ রাহুল বলেছিলো। পূর্নি দেখতে চাইছে ভাইয়াকে। আমি বললাম।
.
.
— আচ্ছা তাহলে আমিও যাবো??
— তুই…….!
— দেখ আমি যাবো। ব্যস ডিস্টার্ব করবোনা তোদের ওকে।
— আচ্ছা আচ্ছা চল।
.
.
হীর আর কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে গিয়ে রেডী হয়ে নেয়। তারপর ভাই বোন বেরিয়ে পড়ে বাইক নিয়ে হিরার। মাকে বলে বেরুয় অবশ্য দুজনি। তারপর এড্রেস অনুযায়ী পৌঁছাতে পুড়ো ১ ঘণ্টা লেগে যায়।
তাও দুজন কথা বলতে বলতে পৌঁছে যায়।
হস্পিটাল পৌঁছে হীর পাঁচ তালায় নিয়ে যায় হিরাকে। সেই লাস্ট কেবিনে ঢুকতেই দেখতে পায় পূর্নি ☺ রাহুল কথা বলছে।
.
.
পূর্নি হীরের পিছনে হিরাকে দেখেই ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো। রাহুল অবাক হয়ে পূর্নির কান্না দেখে পিছন ফিরে হিরা হীর কে দেখে আর কিছু বলেনা পূর্নিকে। হীরের দিকে আর একবারো না তাকিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে রাহুল। রাহুল বেরিয়ে যেতেই হিরা দৌড়ে গিয়ে ঝাপ্টে ধরে পূর্নিকে দুজনি কাঁদছে। আর হিরা।
সরি, সরি জান সরি পেইন বলছে।
আর পূর্নি কান্নার মাঝেই এসব শুনে হাসছে।
.
.
হীর এসব দেখে কেঁদে দেয় তারপরি তার মনে হয়। অদের একা ছাড়া উচিৎ। মুচকি হেসে বেরিয়ে যায় হীর।
.
.
বাইরে বেরুতেই দেখে রাহুল হস্পিটাল এর বারান্দায় পাতা চেয়ারে বসে আছে। বারান্দার লাইট অতোটা ভালো না তাও আবছা আলোয়। রাহুল কে চিনতে ভুল হয়নি হীরের। হীর আশেপাশে তাকায় কেমন ভূতুরে ভূতুরে কেউ কেউ নেউ আশেপাশে। ও আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় আর রাহুলের পাশে বসে পড়ে। রাহুল তাকায়নি হীরের দিকে একবারো। না কথা বলেছে। মাথা নিচু করে চেয়ারে এক ধ্যান এ বসে রাহুল। হীর রাহুল কথা বলছেনা দেখে বসেই ঘাড় ঘুরিয়ে বারান্দার পিছনে তাকায়। গ্রাম অঞ্চল তাও দূরে দূরে এক্টু এক্টু আলো দেখা যাচ্ছে। আর বাকি সব অন্ধকার আর খুব শব্দ করে ডাকা ঝি ঝি পোকার ডাক কানে বেসে আসছে। সাথে গ্রিল দিয়ে মৃদু ঠান্ডা বাতাস।হীরে ভালোলাগছে তবে। রাহুল কথা বলছেনা তাই ভাবছে।
.
.
এখন কি করবো সরি বলবো?? এই গুন্ডাকে?? কিন্তু কি কারণে বলবো?? তাহলে কথা বলছেনা কেনো? তাকাচ্ছেও তো না একবার কথা বলবে দূর? আর কথা বলছেনা তাকাছেনা তাই আমার কেনো খারাপ লাগছে?কেনো তাই বুঝতে পারছিনা এ কোন চিপায় পড়লাম? প্রায় ১৫ মিনিট হাবিজাবি চিন্তা করার পড় আমি রাহুলের সাথে কথা বলার জন্য মরিয়া হয়ে গেলাম তার পাশে বসে থেকে। আর পেটে কথা গুলা মুখে আসার জন্য আকুপাকু করছে তাই জিজ্ঞেস করেই বসলাম।
.
.
— আপনি রেগে আমার উপর??
.
.
রাহুল কিছু বলছে না আগের মতোই বোবা মূর্তি হয়ে বসে আছে।ভাব এমন আমার কথা সে শুনেইনি। এটা আবার কোন নাটক ভাবছি। কিন্তু ঐ যে মরিয়া হয়ে গেছি তাই আবার জিজ্ঞেস করলাম।
.
.
— কথা বলছেন না কেনো??
— কি বলবো?? রেগে মৃদু চিৎকার দিয়ে বললো রাহুল।
— রেগে….
— হ্যাঁ রেগে আছি!! তো??
— রাগ….
— হ্যাঁ কি রাগ??? রাগ ভাঙাতে চাও?? সো কিস মি। রাগ ভেঙে যাবে। বলেই বাঁকা হাসলো রাহুল।
.
.
এই কথা শুনেউ মুখ দিয়ে ছিঃ বেড়িয়ে এলো। আমি উঠে চলে যেতে নেই। রাহল আমায় হাত টেনে বসিয়ে দেয় ধ্রিম করে।
আমি হাত ছাড়ানোর চেস্টায় লেগে পড়ি।
.
.
— যাচ্ছো কোথায়। রাগ ভাঙাবে না?? কিস মি!!
গম্ভীর কণ্ঠে বলে রাহুল।
.
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম।
— ছাড়ুন কি বলছেন??
— আমার খারাপ রূপ দেখাতে চাইনি বাট ইউ ডাম্প…. । বিষন রেগে এইটুকু বলেই থামে রাহুল তারপর চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে উঠে। কেনো এসেছো এখানে?? হ্যাহ আমি বলেছি তোমায় আসতে?? আমি হিরাকে পাঠাতে বলেচি কানে যায় নি???
.
আমি রাগে দুঃখে বললাম।
— সরি ছাড়ুন আর আসবোনা।
.
রাহুল বাঁকা হেসে বললো।
— এসেছো তার দাম দেও আগে??
.
অবাক হয়ে বললাম।
— মানে!!
.
.
রাহুল!!!!
আর কিছুনা বলে হীরে গলায় দ্বিতীয় কামড় বসায়। হীর ঠোঁট চেপে কেঁদে দেয়। জেনো আওয়াজ না হয়। এদিকে রাহুল কারম দিয়ে হীরের দিকে তাকিয়ে। হীরের চোখে পানি দেখে আরো রেগে হীরের হাত সজোরে চেপে ধরে। কিরবির করে বলে উঠে।
.
.
— তোমাকে আমার দশ হাত কাছেও দেখতে চাইনা আর কোনোদিন। আর ঐ শিহাবের সাথে দেখলে দুইটাকেই মেরে পুতে ফেলবো।
.
এই টুকু বলেই রাহুল হীর কে ছেরে হনহন করে নিচের দিকে চলে যায়। হীর বসে কাঁদতে থাকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে।
.
.
আস্ত গুন্ডা এতো জোরে কামড় দিয়েছে যে মনে হচ্ছে দাঁত ঢুকিয়ে দিয়েছে। জ্বলে যাচ্ছে যেখানে কামড় বসিয়েছে। ভাবছি এটা কেমন কিছু হলেই কামড়??
.
.
চলবে!
[ কি লিখছি আমার আল্লাহ জানে শুধু ?]
Roja Islam

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে