পিয়ানোর সুর পর্ব-১৩

0
511

পিয়ানোর সুর
#১৩পর্ব

অসম্ভব মন খারাপ নিয়ে বাসায় ফিরে আমার ছেলে পিয়ানো নিয়ে বসেছে। ওর আঙুলের অগ্রভাগে সারগামের যে সুর উঠেছে তাতে আমার নিজেরই খারাপলাগার চূড়ান্তে।
একটু আগে লিয়ানা টেক্সট করেছে ওর বিমান পরশু ঢাকা এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবে। মিথির কথাই ঠিক। লিয়ানা উন্মাদের মত ছুটে আসবে ওর সাদমানের কাছে।
কতগুলো বছর সৌরভের খোঁজ নিতে কতবার কথা বলেছি লিয়ুর সাথে। একটা বার মনে হয়নি ও আমাকে ভালোবাসে। সৌরভ নিজে ওর মায়ের কত গল্প করেছে আমার সাথে। বুঝিনি কিছুই।
এই এক রিক্সা জার্নিতে মিথি সৌরভের কথায় বুঝে নিয়েছে লিয়ানার অব্যক্ত অনুভূতি।
যে মেয়ে না দেখেই সম্পূর্ণ অন্য কালচারে বেড়ে ওঠা একটি নারীর মন বোঝে, সেই মেয়ে তাহলে সৌরভকে কতখানি বোঝে!
নিশ্চয়ই সৌরভকে নিয়ে অসীমে বাস করে মিথির অনুভূতি। যা হয়ত বাবা মা হয়েও আমরা বুঝিনি। মিথি বুঝেছে ওর সৌরকে।
আমার অবুঝ ছেলে কিছুই বুঝলো না।
পিয়ানোর এমন ব্যথিত সুর শুনে নিশ্চয়ই মিথি লুকিয়ে কাঁদবে। ইশশ এই দুই অবুঝ বাচ্চার কান্না কী করে থামাই আমি!

— সৌর এভাবে বাজাসনে বেটা। মিথি কাঁদবে।

সৌরভের আঙুল থেমে গেছে এই এককথায়। ঘুরেই আমার পেটে মুখগুঁজে বলল,

— সৌর ডেকো না ড্যাড। মিথি ডাকে।

— আচ্ছা ডাকবো না। এখন যা ফ্রেশ হয়ে নে। বাইরে থেকে এসেছিস।

— মিথি কাঁদবে কেন ড্যাড?

— তোর পিয়ানোর সুর শুনে।

— কাঁদুক বেশি করে কাঁদুক।

মিথির উপর অবুঝ অভিমানে কাঁদতে থাকা ছেলেটার কপাল চুমে বললাম,

— তাহলে থামলি কেন? বাজা! মিথি কাঁদলে কী এসে যায়। কাঁদুক। পাজি মেয়েটা শুধু শুধু আমার অবুঝ শান্ত বাচ্চাটাকে কষ্ট দেয়।

সৌরভ ফুঁসে উঠলো এ কথায়। রাগে উঠে ওর রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। এবার বাবাই ভিলেইন হলাম বোধহয়। আমি হাসছি। পাগল ছেলের মিথিকে বকাটুকুও দেয়া যাবে না! নাসিম ঠিকই বলেছে, এই দুটোকে লাইনে আনতে হলে ভিলেইন না হয়ে রাস্তা নেই।
লিয়ানা! কাম অন সুইটহার্ট… আর দেরি সইছে না।

.

শাওয়ার নিয়ে এসে ব্যালকণির ফ্লোরে ধপাস করে বসছি। চেয়ারে বসলে মিথি দেখে ফেলবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে অন্ধকার বর্ষণমুখর আকাশের দিকে চেয়ে আছি। মিথির পছন্দ বৃষ্টি ভেজা আকাশ। আমার চোখ ফুলেছে মিথির জন্য কাঁদতে কাঁদতে। ব্যথা করছে। চোখ বুজে আছি। বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে দু’চোখ।
সারা শরীর ঝিম ঝিম করে উঠলো চেনা কন্ঠে গুনগুনিয়ে ভেসে আসা একটি গানের সুর শুনে। এটিই পিয়ানোতে একটু আগে বাজিয়েছিলাম আমি।
মিথি গাইছে,

“মুখে বলি দূরে যা
মন বলে থেকে যা
দূরে গেলে মন বোঝে তুই কত আপন
পাগল তোর জন্য রে.. পাগল এ মন.. পাগল..”

বসা থেকে ঝট করে উঠতে যাবো শুনি মুরুব্বী গোছের কেউ এসে মিথিকে বকাবকি করছে। সম্ভবত ওকে রুমে টেনে নিয়ে গেল। ওহ গড মিথিকে মারছে নাতো! আওয়াজ কিসের! স্ল্যাপস!

দুম করে দেয়ালে বক্সিং পাঞ্চ করছি। আমার সহ্য হচ্ছে না। দাঁড়িয়ে মিথির নাম ধরে চিৎকার দেবো মিথি নিজেই দৌড়ে এসে ব্যালকণির ফ্লোরে উপুড় হয়ে পড়ে ফোঁপাচ্ছে।

নিজেকে কোনোমতে শান্ত রেখে ডাক দিলাম,

— মিথি!

ফ্লোর থেকে উঠেই মিথি গ্রিলের ভেতর দিয়ে বাচ্চাদের মতো আমার দিকে দু’হাত বাড়িয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো। ওহ গড এই গ্রিল ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে না কেন? অস্থির হয়ে উঠছি মিথি কথা বলতে পারছে না দেখে। হিক্কাপ তুলে কাঁদছে।

— এক্ষুণি তোমাদের ছাদে এস মিথি। নো আর্গুমেন্ট। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ছাদে না এলে ছাদ থেকে সোজা রাস্তায় পাবে আমাকে।

মিথিকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি আমাদের ছাদে ছুটছি। আব্বু করিডোরেই ছিল।

— কী হয়েছে সৌরভ! এভাবে ছুটছিস কেন?

— ড্যাড মিথিকে মেরেছে ঐ ওল্ড লেডি।

— কোন ওল্ড লেডি?

— আই থিংক সুপ্তির মা। জানি না ড্যাড আমি ছাদে যাচ্ছি মিথির সাথে মিট করতে। তুমি নাসিম আঙ্কেলকে জানাও আসছি আমি।

.

সৌরের কথায় পায়ে যেন শেকড় গজালো ভয়েই। মেজো মামী মেরেছে নিশ্চয়ই ঐ সময় সৌর এখানে ছিল। নইলে অমন বদ্ধ উন্মাদ বিহেইভ করবে কেন! আল্লাহ ও ছাদ থেকে লাফ দিলে আমি বাঁচবো কেমন করে? ছাদের চিলেকোঠায় ছোটমামা থাকে। এই অজুহাত দেখিয়ে দাদীকে মামার কাছে যাচ্ছি বলে প্রায় দৌড়ে হেঁটে বের হয়ে এসেছি সিঁড়ি ঘরে। মেঝো মামী উল্টো বুঝলেন। ভাবলেন ছোট মামাকে বিচার দিতে যাচ্ছি। বুঝুক গে! সৌরকে কিছু হতে দেয়া যাবে না।

ছাদের দরজা খুলতে না খুলতে কোত্থেকে সৌর এসে আমায় ছো মেরে টান দিয়ে নিজের বুকের ওপর ফেললো। ভয় উৎকন্ঠায় কাঁদতে ভুলে গেছি। সিঁড়ি ঘরে অনেকগুলো পায়ের আওয়াজ।

— সৌরভ মিথিকে নিয়ে আমার ঘরে যাও।

ছোটমামার ভয়েস শুনে আতঙ্কে আমার কলিজা হিম। নড়তেই পারছি না। সৌরভ ছোটমামাকে তোয়াক্কা না করে আমায় কোলে তুলে মামার ঘরে দিকে হাঁটছে।
চিলেকোঠায় ঢুকতেই মামা বললেন,

— দরজা ভেতর থেকে লক করে দাও সৌরভ। আমি না বললে দরজা খুলবি না মিথি, খবরদার!

— মামা ডোন্ট অরি আমি দেখছি মিথিকে। আপনি পারবেন অন্যদের ট্যাকল করতে? এনি হেল্প?

— নো, থ্যাংকস সৌরভ। চিন্তা কোরো না।

— মিথিকে মেরেছে মামা।

— বিয়ের পর না’হয় জবাব দিও। এটা সঠিক সময় নয় প্রতিবাদ করার। এমুহূর্তে আমাকে সিচুয়েশন হ্যাণ্ডেল করতে দাও। লক দ্যা ডোর ভেরি কেয়ারফুলি সৌরভ। ডুপ্লিকেট কি’ আছে মেঝ’দার কাছে। ওরা চলে এসেছে হারি আপ! লক!

সৌরভ দড়াম করে দরজা লাগিয়ে দেয়ার আগমুহূর্তে সুপ্তি আপুকে দেখলাম মনে হলো। আমি কাঁপছি। চিলেকোঠার সব আলো নিভে গেল নাকি কারেন্ট চলে গেল কিছুই বুঝছি না। চারদিক অন্ধকার ছেয়ে যেতেই সৌর আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ফিসফিসালো,

— কোথায় মেরেছে মিথি?

অভিমানে আবারও ঠোঁট ফুলে উঠছে। কান্না আসছে। কী বলবো সৌরভকে। কেন মেরেছে মামী? সৌরভের সাথে এক রিক্সায় ওঠার শাস্তি দিয়েছেন মামী আর সুপ্তি আপু মিলে। এটা কী বলার মত কথা!

— বলো মিথি কোথায় হিট করেছে ওরা!

— গালে।

সৌরভ ওর ঠোঁটের আলতো পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে আমার অশ্রুসিক্ত ভেজা গাল দুটোয়। একে চুমু বলে না। ঠোঁটের লালা টনিক হিসেবে কাজ করে ক্ষতস্থানে। সৌর ঠিক সেই কাজটিই করছে চড়ের দাগগুলোর ওপর। ফিসফিস করে বলছে,

— ইট’স ওকে বেইবি ইট’স ওকে… এক্ষুণি ব্যথা সেরে যাবে। আমি সারিয়ে দেবো মিথির সব ব্যথা।

চোখের কোণ বেয়ে আমার অঝোরে ঝরছে অশ্রুরা সৌরের অবাধ ভালোবাসার প্রশ্রয়ে। বৃষ্টিতে ভিজে দুজনের জামা কাপড় আগেই একাকার। ছাদে তুমুল বৃষ্টি সেই সাথে কথা কাটাকাটির আওয়াজ। অস্থির হয়ে উঠছি দুশ্চিন্তায়।
সৌরভ অদ্ভুত এক কাজ করলো। আমায় একপাশে দাঁড় করিয়ে নিজের টি-শার্ট খুলে অন্ধকারে কোথায় জানি মেলে দিয়েছে। তারপর এসে আমায় বলল,

— ভেজা পোশাক খুলে ফেল মিথি ঠাণ্ডা লেগে যাবে।

নির্বিকার চিত্তে বলা সৌরভের নেভার মাইন্ড বাণী শুনে আমি টোটালি শকড। এরমানে একটাই, সৌরভের গায়ে কাপড় নেই। অন্ধকারে কিছুই দেখছি না তাইবলে কাপড় খুলবো! মরে গেলেও না।
সৌরভ এসে আমায় কাছে টেনে নিল। কানে ঠোঁট চেপে ধরে বলল,

— রুমের মেইন সুইচ আমি অফ করেছি। তুমি না চাইলে আলো জ্বালবো না। চেঞ্জ করে নাও মিথি কোনো লজ্জা নেই। এটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। সুস্থ থাকা জরুরী। বুঝেছো?

লজ্জায় সৌরভের পিঠ খামচে ধরেছি। মাথা নাড়িয়ে বললাম,

— পারবো না। মরে যাবো সৌর।

— হোয়াটস দ্যা একচুয়াল মিনিং অভ ‘সৌর’ মিথি?

— দ্যা মেরিডিয়ান মুন।

— শুধুই কী মুখে বলো, নাকি মন থেকে মানো আমি তোমার মেরিডিয়ান মুন! মানো?

ধরা পড়ে যাওয়া লজ্জায় সৌরের বুকে পারি তো মিশে যাই। স্বীকারোক্তি দিতেই হবে। এ নিয়ে অন্তত মিথ্যে বলা আসছে না। অস্ফুটস্বরে আওড়ালাম,

— হুউউউউ…

সৌর ক্রেইজি হয়ে উঠলো। অনুমতির তোয়াক্কা না করে আমার পোশাক নিজ হাতে এমনভাবে খুলে নিচ্ছে যেন একাজ সে রেগুলার করে। লজ্জায় মুখে হাত চাপা দিয়ে কাঁদছি। সৌর পোশাক কোথায় মেলে দিয়েছে কে জানে। ফিরে এসে আমায় ধরতে এলে অন্ধকারে পিছিয়ে দরজার দিকে যাচ্ছি। সৌর হাত ধরে ফেলল। এক ঝটকায় কাছে টেনে নিতেই অনুভব করছি আমার শরীরকে একটি চাদরে মুড়ে নিয়েছে সৌর।

— যে মেয়ের মুখ দেখিনি ঠিক করে তাকে নিজের বডি ক্লেইমড (Claimed) ইজিলি দেবো না। আমি জানি মিথি আমায় ভালোবাসে না। যে আমাকে ভালোবাসে না আমি তাকে ছুঁই না।

অভিমানী সৌর ফিসফিসিয়ে জেদ ঝাড়ছে আমায় নিজের আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে। চাদরের উপর দিয়ে সৌরকে জড়িয়ে ধরেছি। ছোট্ট একটি চুমু খেলাম ওর কন্ঠায়। রাগ কমেনি তারপরেও। এ ছেলে ভোগাবে আমায়।

.

— তুই সকালেই মিথিকে গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করবি নাসিম। আমি কোনো অশান্তি চাই না।

— তুমি যতই চেঁচাও মেঝ’দা সৌরভ সুপ্তিকে বিয়ে করবে না। গ্যারান্টি। মিথিকে নিয়ে সমস্যা তো? ওকে মিথি চিলেকোঠায় আমার ঘরে থাকবে।

— এ বাড়ীতেই থাকবে না।

— একথা আপনি বলার কেউ না মেঝো ভাবী। এটা আপনার নিজের বাড়ী না। হ্যাঁ, মিথির নিজের বাড়ী বলা যায়। মিথির মা ভাগ পাবে। আপনি না।

মেঝো ভাবী চিল্লাতে চিল্লাতে নীচে গেলেন মেঝো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে। সুপ্তি বলল,

— চাচু আমি সত্যিই সৌরভকে ভালোবাসি। গত একবছর ধরে…

— উচিত ছিল সৌরভকে বলা। বলিসনি যখন এখন বলে লাভ হবে না। তবু ক্ল্যারিফাই করতে চাইলে বলে দেখ সৌরভ কী বলে।

— তুমি মিথিকে গ্রামে পাঠিয়ে দাও।

— কী ভেবেছিস? মিথির অনুপস্থিতিতে সৌরভকে পাবি?

— হ্যাঁ। আমার জন্য সৌরভকে কানেক্ট করা ইজি হবে।

— ওয়েল, ট্রাই করে দেখ। মিথি কাল চলে যাবে এ বাড়ী ছেড়ে। এখন তুই যা সামনে থেকে।

— থ্যাংকইউ চাচু।

সুপ্তি চলে গেলে ছাদের দরজা সিঁড়ি ঘরের ভেতর থেকে লক করে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলাম। আজ আমি বড়’দার ঘরে থাকবো। খুব চাই মিথি সৌরভের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হোক।
সাদমান ভাই ফোনে বলেছেন আমায় মিথি এক্সাক্টলি কী করেছে। পাগল মেয়ে নিজের মামাকে বিশ্বাস করেনি। করবেই বা কেমন করে। মিথির মামাগুলো যে বড়ই স্বার্থপর।

.

— মিথি নাসিম মামা টেক্সট করেছে। সবাই চলে গিয়েছে। ছাদে কেউ নেই।

— আপনি কী চলে যাবেন সৌর?

— মামা চাইছেন তুমি আজ চিলেকোঠায় থাকো। তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের ঘরে থাকবেন আজ। তুমি বললে আমি তোমার সাথে থাকবো। নয়তো চলে যাবো। ঘরের আলো জ্বালবো মিথি?

— কাপড় শুকোয়নি। অন্ধকার ভাল লাগছে।

— বৃষ্টি থেমে গেছে। ছাদে যাবে?

— যাই।

গায়ে ভাল করে চাদরে মুড়িয়ে ছাদে এসেছি আমি আর সৌর। পুরোপুরি কাপড় ছাড়েনি সে। ভেজা জিন্স পরে আছে। শুধু টি-শার্ট খুলে মেলে দিয়েছে। দুজনে পাশাপাশি পায়চারী করছি।
কথারা ছুটি নিয়েছে।
কোনো কথা না বলে যে হাজারো কথা বলা যায় সৌর বুঝিয়ে দিচ্ছে তা। বৃষ্টিভেজা ঠাণ্ডা হিমেল বাতাসে সৌরের শীত শীত লাগছে হয়ত। কেমন হাত ভাজ করে ঝুঁকে হাঁটছে। অস্বস্তি নিয়ে চাদরের কিছু অংশ ওর গায়ে জড়িয়ে দিতে গেলে আমার খুব কাছে চলে এল সৌরভ।
চিবুক তুলে চোখে চোখ রেখে আকুল হয়ে জানতে চাইলো,

— ভালোবাসো মিথি? বলো না ভালোবাসো?

সৌরকে কষ্ট দিতে আর একটুও মন চাইছে না। চাদরের গুচ্ছ সৌরভের হাতে গুঁজে দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরেছি। আর অমনি এক হাত দিয়ে আমার কোমড় পেঁচিয়ে মাটি থেকে শূন্যে তুলে নিয়েছে সৌরভ। আরেক হাতে আমার ভেজা চুলের গোছা মুঠোয় পেঁচিয়ে ব্যথা দিয়ে ফের জিজ্ঞেস করছে,

— বলো ভালোবাসি.. নইলে বেশি ব্যথা দেবো।

— ভালোবাসি সৌরের চেয়ে বেশি।

— তিনদিন পর কার বিয়ে মিথি?

— সাদমান আব্বু সাথে লিয়ানা আম্মুর বিয়ে।

সৌর যেন পাগল হয়ে গেল। আমায় কোলে নিয়ে সারাটা ছাদ খুশীতে লাটিম হয়ে ঘুরছে ছেলেটা। আমার কোনো কথাই শুনছে না। মানছে না সীমারেখার বাঁধন। শিল্পের মতন প্রতিটি বাঁধার গিঁট খুলছে দু’জনের বাহ্যিক দূরত্বের। আমি কিছুতে পেরে উঠছি না। জানি না মন কী চাইছে। হাল ছেড়ে দিয়ে দ্বিধান্বিত লজ্জায় আরক্তিম হয়ে সৌরের কাঁধে দাঁত বসিয়ে দিয়েছি। হেসে উঠলো সৌরভ।

ফিসফিসিয়ে কানে কানে বলল,

— আজ আর কোনো বাঁধা নেই মিথি সৌরভের এক হতে। কোনো বাঁধা মানবো না।
তোমায় আমি ছাড়বো না মিথি। সন্ধ্যা থেকে যতখানি কষ্ট দিয়েছো তারচেয়ে অনেক বেশি সময় নিয়ে… হুম সারারাত ভর ভালোবাসবো তোমাকে।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে