………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
………………………..PART:12………………………….
সবকিছু এলোমেলো লাগছে ট্রুডোর। বুঝতে পারছে না এমনি এমনি এলিনার রক্ত খাওয়ার ইচ্ছাটা নষ্ট কিভাবে হবে। এলিনাকে প্রশ্ন করলো ট্রুডো, “কিন্তু আপনার তো এমনি এমনি এরকমটা হওয়ার কথা নয় তবুও কিভাবে হলো?”
এলিনা বললো,”সেটা তো জানি না। আমি ভ্যাম্পায়ার শক্তি সম্পূর্ণ পাওয়ার পর থেকে প্রথমবার রক্ত খেয়েছি।”
কথাটা শুনতেই আনাহীর উপর সন্দেহ হলো ট্রুডোর। অনুষ্ঠানে যখন এলিনা ব্লেডিকোর রক্ত খাওয়ার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলো তখন আনাহী তার সামনে এক গ্লাস রক্ত নিয়ে গিয়েছিলো। নির্দ্বিধায় প্রশ্ন করলো আনাহীকে, “তুই যখন এলিনাকে এক গ্লাস রক্ত দিয়েছিলি তখন সে রক্ত কোথায় পেয়েছিলি?”
সাথে সাথে ভিরেক্সও প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,”আমরা যখন সেখানে গিয়েছিলাম আর ট্রুডো বলেছিলো ঝোপের আড়ালে লুকোতে তখনও তো আনাহী ছিলো। কিন্তু পরে তাকিয়ে দেখি আনাহী নেই। কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই?”
আনাহী কিছুর উত্তর দিতে পারছে না। কারণ তখন সে কাইরোর মায়াজালে সম্মোহিত ছিলো। কাইরো যা যা বলেছে তাই তাই করেছে আনাহী। মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো আনাহী কিন্তু কিছুই মনে করতে পারলো না। নিচুস্বরে উত্তর দিলো, “আমার কিছু মনে নেই।”
ট্রুডো বললো,”তাহলে কি এলিনার রক্তের নেশা নষ্ট হওয়ার পেছনে আনাহীর সেই রক্তের কোনো কোনো সম্পর্ক আছে?”
আনাহী বললো,”আমি জানি না। আমার তো এটাও ভালোভাবে মনে নেই যে আমি এলিনাকে রক্ত দিয়েছি কি না৷”
জ্ঞান ফিরলো ব্লেডিকোর। উঠার চেষ্টা করতেই আহ্ করে চিৎকার করে উঠলো সে। আনাহী দৌঁড়ে গেলো ব্লেডিকোর কাছে। প্রশ্ন করলো,”সবকিছু ঠিক আছে তো?”
মাথা থেকে অনেক রক্ত বেরিয়েছে। এতো তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরেছে এটাই অনেক। তবুও আনাহী জঙ্গলের লতাপাতা দিয়ে একটা এন্টিসেপ্টিক তৈরি করে ব্লেডিকোর মাথায় লাগিয়ে দিলো। আনাহীর উপর কেউ জোর করলো না কোথায় সে রক্ত পেয়েছিলো। বরং ব্যাপারটা রেখে দিলো। হয়তো পরে আনাহীর মনে পড়ে যেতে পারে। আর এখন সেসব নিয়ে তর্কাতর্কি করারও সময় নয়। ভিরেক্স বললো,”আচ্ছা এসব বাদ দিয়ে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব মিউরিসকে বাঁচানোর চেষ্টা কর।”
কথাটা শুনার পরই ট্রুডো এলিনাকে বললো,”মিউরিসকে চুপাকাবরাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে আনতে হবে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদেরকে এখান থেকে চলে যেতে হবে। ”
এলিনা ট্রুডোর কথাটা শুনে সাথে সাথে উড়ে গেলো মিউরিসকে বাঁচানোর জন্য। বাকীরা অপেক্ষা করতে লাগলো।
আনাহী আস্তে আস্তে পায়চারি শুরু করে দিলো। মুখে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো একের পর এক ঘটনা। সেই অ্যাডোনিস গাছ পর্যন্ত সবকিছু মনে আছে আনাহীর কিন্তু তারপরের ঘটনা কিছুই মনে নেই তার।
এদিকে গোত্রপ্রধান তার ঘর থেকে একটা আয়না বের করলো। শুকনো তালপাতায় মোড়ানো। আয়নাটাকে সামনে রেখে এক গামলা পানিতে মায়া প্রয়োগ করলো গোত্রপ্রধান। পানিতে ভেসে উঠলো এলিনার প্রতিচ্ছবি। দেখে নিলো এলিনা কোথায় আছে। আয়নাটাকে কাঁধে নিয়ে বের হলো এলিনাকে ধরার জন্য।
এলিনা কয়েকমিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলো চুপাকাবরার আস্তানায়। এলিনাকে দেখে সব চুপাকাবরা নিশ্চুপ হয়ে গেলো। এলিনা তার বিশাল পাখাদুটি ঝাপটিয়ে এগোতে লাগলো সামনে। পাখার বাতাসে ডালপালা সব ভেঙ্গে যেতে লাগলো। পেছন থেকে ঝাকে ঝাকে উড়ে আসতে লাগলো চুপাকাবরার দল। আওয়াজ করতে লাগলো সব।লাল আলো ঝলাকানো চোখদুটো দিয়ে উড়ন্ত চুপাকাবরাদের দিকে তাকাতেই সব মাটিতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়তে লাগলো। বাকী চুপাকাবরাগুলো পেছনে উড়ে যেতে লাগলো। কয়েকক্ষণের মধ্যে খালি হয়ে গেলো আস্তানা। উড়ে উড়ে মিউরিসকে খুঁজতে লাগলো এলিনা। কাটাওয়ালা ডালপালা দিয়ে তৈরি একটা ঘরে বন্দি হয়ে আছে মিউরিস। ক্ষুধায় তৃষ্ণায় মুখ থেকে শব্দও বের হচ্ছে না মিউরিসের। কোনোরকমে আওয়াজ আসছে, “বাঁচাও আমাকে।” কান পেতে শব্দ শুনে উৎসের দিকে এগোতে লাগলো এলিনা। পৌঁছে গেলো মিউরিসের কাছে কিন্তু কাটাযুক্ত ডাল দিয়ে তৈরি ঘর থেকে বের করার কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে নিজের বিশাল দুটি ডানা দিয়ে আঘাত করলো ঘরে। ভেঙে চুরমাড় হয়ে গেলো ঘর। মিউরিসকে নিয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্বত হলো। কিন্তু পরোক্ষণেই এসে গেলো গোত্রপ্রধান। তালপাতায় মোড়ানো আয়নাটা বের করার সাথে সাথে পুরো জায়গাটা জুড়ে আলোয় ভরে গেলো। এতো আলোয় তাকানো যাচ্ছে না। আলোর প্রতিফলনে এলিনার ভ্যাম্পায়ার শক্তি অচল হয়ে আসতে লাগলো। ধুম করে পড়ে গেলো মাটিতে। মানুষ রুপে ফিরে এলো এলিনা। তাড়াতাড়ি জংলী লতা দিয়ে বেঁধে ফেললো এলিনাকে। উপড় থেকে পড়ে গিয়ে মিউরিসের ডান পা ভেঙ্গে গেলো। চিৎকার দিয়ে উঠলো মিউরিস। পায়ে হাত দিয়ে চিৎকার করতে লাগলো সে। ধরে নিয়ে গেলো এলিনাকে। যেহেতু সূর্যের আলো কিংবা আলোতে ভ্যাম্পায়ারদের শক্তি কাজ করে না সেজন্য গোত্রপ্রধান একটা মায়াবী আয়নায় আলো মায়া করে রেখেছিলো। যদিও তিনি জানতেন না যে এলিনা ভ্যাম্পায়ার হয়ে যাবে আর সেটা এমনভাবে কাজে লেগে যাবে। এমন আরো অনেক জিনিস আছে গোত্রপ্রধানের কাছে। কিন্তু আসল অস্ত্র তিনি এখনো কাউকে দেখাননি এবং বেরও করেননি।
এলিনাকে নিয়ে গোত্রপ্রধান হাজির হলো সেই বলি দেওয়ার স্থানে। সময় দেখলো গোত্রপ্রধান। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে এলিনাকে মুক্ত করে শিকলবন্দি করা হলো। খিলখিল করে হাসতে হাসতে এলিনা বললো,”আবার একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ততদিনে আমি কি থাকবো? হা হা হা”
গোত্রপ্রধান রেগেমেগে তার ঘরে চলে গেলো। ওদিকে মিউরিস জঙ্গলের ভেতরে চিৎকার করতে থাকলো। প্রায় দুয়েক ঘন্টা পর খুব দেরি হচ্ছে দেখে চিন্তায় পড়ে গেলো ট্রুডো। ভাবতে লাগলো,” ভ্যাম্পায়ারের এতো সময় লাগার কথা নয়। তাদের গতি বাতাসের থেকেও অনেকগুণ বেশি কিন্তু এলিনার এতো সময় লাগছে কেন? কোনো বিপদ হয়নি তো?”
মেডেকি, আনাহী আর ব্লেডিকোকে রেখে ট্রুডো আর ভিরেক্স একসাথে রওনা দিলো চুপাকাবরার আস্তানার উদ্দেশ্যে। আনাহীদেরকে সতর্ক হয়ে থাকতে বললো ট্রুডো।
ঘন্টাখানিক খুঁজাখুঁজির পর…….
ভিরেক্স শুনতে পেলো একটা চাপা গলার চিৎকারের শব্দ। বুঝতে পারলো শব্দটা মিউরিসের। ট্রুডোকে বলে তাড়াতাড়ি মিউরিসের দিকে দৌঁড়ে গেলো তারা। মিউরিসের কাছে গিয়ে দেখে তার অবস্থা প্রায় মৃত্যুমুখ। কোনোরকমে প্রাণটা আছে দেহে। চেংদোলা করে উঠাতেই চিৎকার দিয়ে উঠলো মিউরিস। ট্রুডো লক্ষ করলো তার ডান পা উল্টোভাবে ঝুলছে। মিউরিসের অবস্থা দেখে প্রায় কেঁদে দিলো ট্রুডো। ভিরেক্স শান্তনা দিয়ে বললো,”এখন কাঁদার সনয় নয়। কিছু একটা করে মিউরিসকে এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে।”
কান্না থামিয়ে ট্রুডো মিউরিসের কাছে বসে বললো,” তোকে যে বাঁচাতে এসেছিলো সে কোথায়? তোর এই হাল হলো কিভাবে?”
মিউরিস খুব কষ্টে চেষ্টা করলো বলার কিন্তু পারলো না। ভিরেক্স ট্রুডোকে মানা করে বললো,” সেসব পরে নাহয় ভাবা যাবে। এখন তাড়াতাড়ি এখান থেকে চল, নাহলে যেকোনো সময় আরেকটা বিপদ আসতে পারে।”
বলতে বলতেই দূর থেকে মৃদু আওয়াজ আসতে লাগলো চুপাকাবরার দলের। তাড়াতাড়ি দুজনে মিউরিসকে ধরে তাদের বন্ধুদের কাছে যেতে লাগলো। ব্যথায় চিৎকার করতে লাগলো মিউরিস। তার ডান পা ঝুলছে। ভেঙ্গে গিয়ে শুধু চামড়াটার জন্য আটকে আছে মিউরিসের পা। শরীরের কয়েক জায়গায় ক্ষত হওয়ার চিহ্ন।
এদিকে সবকিছু নিশ্চুপ। গোত্রের সবাই যে যার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে অনুষ্ঠানের হাজারো জিনিসপত্র। কয়েক জায়গায় লেগে আছে রক্ত। শিকলবন্দি এলিনা অন্ধকারের দিকে আনমনা হয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি ভাবছে আর শিউরে উঠছে। প্রায় মরে যেতে যেতে বেঁচে গেছে সবাই। কিন্তু মিউরিসের কথাটা চিন্তা করেই মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো এলিনার। তার দেওয়া কথাটা রাখতে পারলো না। তার উপর উড়ন্ত অবস্থায় পড়ে গিয়ে কি অবস্থা হয়েছে মিউরিসের সেটাও দেখতে পারেনি সে। তাকে সেখান থেকে মিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রুডো আসবে কি না সেটা নিয়ে আরও জোড়ালো ভাবনা মাথাতে ঘুরপাক খাচ্ছে এলিনার। হঠাৎ কর্কশ কণ্ঠে উড়ে এলো সেই কাক। এলিনাকে যে গাছে বেঁধে রেখেছে সেই গাছের একটা শুকনো ডালে এসে বসলো। শুকনো পাতার উপর দিয়ে হেঁটে আসার শব্দ আসতে লাগলো। সতর্ক হয়ে গেলো এলিনা। অন্ধকারের ভেতর থেকে বেরিয়প এলো কাইরোর ছায়া। মাথা নত করে স্বাগত জানালো এলিনা। আশপাশ ভরে গেলো নীলচে ধোয়ায়। ভেসে উঠলো কাইরোর আলো ঝলকানো চোখ। এলিনা প্রশ্ন করলো কাইরোকে, “চুপাকাবরা আমাকে চিনতে পেরেও ওমন আক্রমন করলো কেন? আমি তো এখন ভ্যাম্পায়ার। এখন তো আমাকে দেখে চুপাকাবরার পালানোর কথা। কি হলো এসব?”
এলিনার কথা শুনে রাগে কাইরোর চোখদুটো লাল হয়ে গেলো। থেমে গেলো এলিনা। কাকটা কর্কশ কণ্ঠে ডাকতে শুরু করলো। রাগে কাইরো কাকটার উপর একটা আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেই উড়ে চলে গেলো।কাকের গা থেকে ঝরে পড়লো কয়েকটা পালক। ঘুরে ঘুরে অনুষ্ঠানের সব কিছু নষ্ট হওয়া দেখতে লাগলো কাইরো। মিটমিট করে হেসে আবার এলিনার সামনে এসে দাঁড়ালো।
..
..
..
..
..
..(চলবে………….)
..