…………………দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
…………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
…………………………PART:10………………………….
অনুষ্ঠানের সব শব্দ, আওয়াজ, মাতামাতি থেমে গেলো। এলিনাকে বলি দেওয়ার জায়গায় দাঁড় করানো হলো। গোত্রপ্রধান ঘোষণা দিলো, “আজকেই সেই দিন, আজকের পর থেকেই আমরা দেবী অ্যাথিনার পূজা শুরু করতে পারবো। আজকে এই জেরায়াস উপজাতির মিনার্ভার পূজারী এলিনাকে বলিদানের মাধ্যমে পাহাড়ের সর্বশেষ সিঁড়ি কাটা হবে। কিন্তু তার আগে একটা ছোট্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হোক।”
ট্রুডো দেখলো গোত্রের সবাই গোত্রপ্রধানের দিকে মনোযোগ দিয়ে তার ঘোষণা শুনছে। এই সুযোগে তার বন্ধুদের খোঁজতে লাগলো। ঝোঁপের আড়ালে ব্লেডিকোকে ইঙ্গিত করলো তার সাথে খুঁজার জন্য। ব্লেডিকো এসে ট্রুডোর সাথে জেফারী আর মেডেকিকে খুঁজতে লাগলো। আর ভিরেক্সকে ইশারা করে কয়েকটি শক্ত ডাল জোগাড় করতে বললো ট্রুডো যাতে বিপদের সময় কাজে লাগে। ভিরেক্স তার আশেপাশে শক্ত ডাল খুঁজতে লাগলো। জেফারী আর মেডেকিকে চারদিকে হন্যহারা হয়ে খু্ঁজছে দুজন। এতটুকু জায়গায় কোথাও খুঁজে পেলো না তাদের। হঠাৎ গোত্রের এক টং ঘর থেকে টেনে হিচড়ে নামালো হলো জেফারী আর মেডেকিকে। ট্রুডো আর ব্লেডিকো তাদের শোচনীয় অবস্থা দেখে খুব আফসোস করতে লাগলো। হয়তো তাদের সচেতনতা বজায় থাকলে আজকে এই অবস্থা হতো না। হঠাৎ এলিনার দিকে নজর চলে গেলো ট্রুডোর। এমনিতেই গোত্রের মাঝে সবচেয়ে রুপসী নারী এলিনা। তার উপর জঙ্গলের ফুল-লতাপাতা দিয়ে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে তাকে দেখে চোখ আটকে গেছে ট্রুডোর। স্থির দৃষ্টিতে এলিনার দিকে তাকিয়ে রইলো সে। এদিকে জেফারী আর মেডেকিকে জঙ্গলের এক অংশে বেঁধে রাখলো দুজন লোক। সাথে সাথে পেছনে ভেসে উঠলো লাল আলো ঝলকানো শতশত চুপাকাবরার চোখ। অন্ধকারে তারার মতো ফুটে উঠেছে চুপাকাবরার হিংস্র চোখ। আলোর ঝলকানিতেই বুঝা যাচ্ছে এরা কতোটা হিংস্র আর ক্ষুধার্ত। কয়েকশ মানুষ বা প্রাণীকে এরা কয়েকমিনিটের মধ্যেই রক্তচুষে সাবাড় করে দিতে সক্ষম। ব্লেডিকো ট্রুডোকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু ট্রুডো এলিনার রুপের সাগরে ডুবে আছে। সবাইকে বাঁচানোর কথা মনেই নেই তার। ব্লেডিকো জোরে একটা ধাক্কা দিলো ট্রুডোকে। স্বজ্ঞানে ফিরে এসে ট্রুডো আমতা আমতা করতে লাগলো। জেফারী আর মেডেকিকে মুক্ত করার জন্য এগিয়ে গেলো ব্লেডিকো আর ট্রুডো।
এদিকে গোত্রপ্রধান সেই ছোট্ট অনুষ্ঠান শুরু করার ঘোষণা দিলো,”এখন সেই ছোট্ট অনুষ্ঠান শুরু করা হোক। বন্দি মেয়েদুটোকে এনে একজনকে বলি দিয়ে তার রক্ত গোত্রের সকল উঁচুজাতের মানুষের মধ্যে দাও আর আরেকজন মেয়েকে চুপাকাবরার দলে ছেড়ে দাও। এই অনুষ্ঠান শেষ হলেই বলি দেওয়া হবে।”
শুরু হলো আয়োজন। নাচ-গান, আনন্দ-ফুর্তি ও জাক-জমকতার মধ্যে ট্রুডো মেডেকিকে মুক্ত করলো। ব্লেডিকো জেফারীর রশ্মি খুঁলতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেলো চুপাকাবরার গিরিখাদে। চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে উঠলো জেফারী। চোখ খুলে দেখে ব্লেডিকো গাছের একটা ছোট্ট ডাল ধরে আটকে আছে। তাড়াতাড়ি ট্রুডো গিয়ে ব্লেডিকোকে টেনে হিচড়ে তুললো। কিন্তু পেছনে তাকিয়ে দেখে অস্ত্র হাতে উপজাতিদের গোত্র রক্ষক পালোয়ান। একেকজনের চেহারা দানবের মতো। শরীরের আকার আকৃতি দানবকেও হার মানাবে। দেরি না করে ভিরেক্সকে ইশারা করলো ট্রুডো। সাথে সাথে ডালপালা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো সবাই। মেডেকি একটু চালাকি করে একটা ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলো। সবাই ভয়ে একদিকে সরে যেতে লাগলো। ট্রুডো মৃত্যুকে উপেক্ষা করে দৌঁড় দিলো এলিনাকে বাঁচানোর জন্য। সাথে সাথে পালোয়ানের দল চুপাকাবরা আসার রাস্তা খুলে দিলো। মৌমাছির মতো ঝাকে ঝাকে চুপাকাবরা আসতে লাগলো। জেফারী, মেডেকি, ব্লেডিকো আর ভিরেক্স ভয়ে পেছনে যেতে লাগলো। ব্লেডিকোর হঠাৎ মনে পড়ে গেলো মিউরিস এর কথা। মিউরিস যখন চুপাকাবরার কবলে পড়েছিলো তখন তার সামনে আগুন ধরলেই তা পালিয়ে গিয়েছিলো। বুদ্ধি খাটিয়ে জ্বলন্ত ঘর থেকে একটা জ্বলন্ত লাঠি নিয়ে চুপাকাবরার সামনে ধরলো ব্লেডিকো। আগুনের আলো আর উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে অদ্ভুত সব আওয়াজ করতে লাগলো। তাদেরকে ঘীরে নিলো চুপাকাবরার দল। চারপাশে ঘুরতে লাগলো গড়গড় আওয়াজ করতে করতে। মুখ দিয়ে রক্তমিশ্রিত লালা মাটিতে নিগড়ে পড়ছে। চোখগুলো জ্বলছে। সবার হাতের গাছের ডালটায় আগুন ধরিয়ে চুপাকাবরার সামনে ধরতেই চুপাকাবরাগুলো জঙ্গলের ভেতরে অন্ধকারে চলে যেতে লাগলো।
আবার ঝাপিয়ে পড়লো পালোয়ানের দল। ব্লেডিকোর মাথায় এক ঘা বসিয়ে দিলো এক পালোয়ান৷ মাথায় হাত চিৎকার দিয়ে উঠলো ব্লেডিকো। মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে লাগলো অঝোর ধারায়। ব্লেডিকোর চিৎকারে সবাই তার দিকে তাকিয়ে রইলো। জ্ঞান হারালো ব্লেডিকো। ক্ষেপে গেলো ভিরেক্স। পকেট থেকে একটা ছোট্র কৌটা বের করে জোরে মাটিতে আঘাত করা সাথেই নীলচে ধোয়া বের হতে শুরু করলো। ট্রুডোর দলের সবাই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। ট্রুডো এক হাত দিয়ে নিজের মুখ ধরে আরেক হাত দিয়ে এলিনার মুখ চেপে ধরলো। সাথে সাথে গোত্রের সব লোক অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো মাটিতে। কিছু মায়াবিদ্যার জন্য শুধু রইলো গোত্রপ্রধান। ধোয়া কমতে লাগলো। হঠাৎ আকাশ কালো মেঘে ভরে গেলো। শুরু হলো বিদ্যুৎ চমকানো। নীলচে ধোয়া কমতেই ভেসে উঠলো সেই দানবীয় ছায়া। এলিনা ব্লেডিকোর দিকে এক নজর তাকাতেই দেখে তার মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে। রক্ত দেখে এলিনার মাঝে ভ্যাম্পায়ার শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। চোখদুটো লাল হয়ে গেলো। ঠোট ভেদ করে বেরিয়ে এলো চোখালো বড় দুটি দাঁত। পীঠে তৈরি হলো কালো পালকের বিশাল দুটি ডানা।
সাথে সাথে দুপা পিছিয়ে নিলো ট্রুডো। ভয়ে আতঙ্কে চোখদুটো ছানাবড়া হয়ে গেলো গোত্রপ্রধানের। সাথে সাথেই খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো ছায়াটি। একটা গাছের ডালে এসে বসলো সেই লাল চোখের দাঁড়কাকটি। এলিনা উড়তে লাগলো হাওয়ায়। বিদ্যুৎ চমকানোর সাথে শুরু হলো ঝড়ো হাওয়া। কর্কশ কণ্ঠে ডাকতে শুরু করলো কাকটি। আস্তে আস্তে ব্লেডিকোর দিকে উড়ে যেতে লাগলো এলিনা। ট্রুডো বুঝতে পারলো যে এলিনা এখন ব্লেডিকোর রক্ত খাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ব্লেডিকোকে বাঁচানোর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেনা ট্রুডো। আশেপাশে ছটফট করে তাকাতে লাগলো ট্রুডো। এলিনাকে থামানোও যাচ্ছে না। হাওয়ায় উড়ে যাচ্ছে সে। মনে মনে মেনেই নিলো ট্রুডো যে আজকে ব্লেডিকো এলিনার খাদ্য হবে। তাকে আর বাঁচানো যাবে না। তবুও শেষ চেষ্টা হিসেবে ট্রুডো জোরে জোরে এলিনাকে বললো,”না, এলিনা থামো। আমার কথা শুনো। আমার বন্ধু সে। ”
এলিনা কাউকে পরোয়া না করে সামনে যেতে লাগলো। উড়ে গিয়ে ব্লেডিকোর মাথার কাছে বসলো। মাটিতে পড়া রক্ত জিহ্বা দিয়ে একটু চেটে একটু মুচকি হাসলো এলিনা। চোখের লাল আলো আরও ঝকঝক করতে লাগলো এলিনার। সবাই এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে এলিনার দিকে। আস্তে আস্তে হাত বাড়াচ্ছে এলিনা ব্লেডিকোর রক্ত চুষে খাওয়ার জন্য। কালো ছায়াটাও আরও জোরে জোরে হাসতে লাগলে। তার হাসির আওয়াজে কান ধরলো সবাই। ব্লেডিকোকে ধরে মুখের কাছে নিলো এলিনা। ঘাড়টা মুড়িয়ে বড় বড় দাঁতদুটি ব্লেডিকোর ঘাড়ের দিকে নিতে লাগলো। হঠাৎ সামনে এলো আনাহী। হাতে এক গ্লাস রক্ত। টুকটুকে লাল রক্ত দেখে এলিনা ব্লেডিকোকে ছেড়ে দিয়ে আনাহীর দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকালো। আনাহীর মুখে বড় বড় নখ দিয়ে একটা আচড় দিয়ে হাত থেকে রক্তপূর্ণ গ্লাসটা নিয়ে দাঁড়ালো এলিনা। এলিনার দাঁড়ানো দেখে সবাই ব্লেডিকোর বেঁচে যাওয়ার একটা দিশা খুঁজে পেলো। হঠাৎ হাসি থেমে গেলো কালো ছায়াটার। শুরু হলো এলিনার হাসি। কিছুক্ষণ হেসে গ্লাসের সব রক্ত তৃপ্তিভরে খেয়ে নিলো এলিনা। কালো ছায়াটা আর দাঁড়কাকটা জঙ্গলের অন্ধকারে মিশে গেলো।
এলিনা আবার মানুষ রুপে ফিরে এলো। গোত্রপ্রধান তাড়াতাড়ি ধ্যানে বসলো। মন্ত্র জপতে লাগলো। এদিকে এলিনা ট্রুডোকে বললো,”এখনই পালাতে হবে নাহলে পরে আফসোস করতে হবে।”
ট্রুডো বললো,”কিন্তু আমার বন্ধু মিউরিস তো চুপাকাবরার কাছে এখনো বন্দি আছে। তাকে না নিয়ে পালাতে পারবো না।”
এলিনা বললো,”এখন পালাতে হবে। আপনার বন্ধুকে আমি পালানোর পর ফিরিয়ে আনবো।” কথাটা বলার পর আবার ভ্যাম্পায়ার হলো এলিনা। আনাহী তাড়াতাড়ি ব্লেডিকোর মাথা বেধে দিলো। সবাইকে নিয়ে জঙ্গলের ভেতরে উড়ে যেতে লাগলো এলিনা। গোত্রপ্রধান তার মায়াবী শক্তি আর মান্ত্র দিয়ে গোত্রের সবাইকে আবার জাগিয়ে তুললো। ঘোষণা দিলো গোত্রপ্রধান,”যে করেই হোক এলিনাকে এনে বলি দিতে হবে। তা না হলে দেবী অ্যাথিনার অভিশাপ লাগবে আমাদের।”
সবাই পুরো জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো এলিনাকে ধরতে। গোত্রপ্রধান উঠে তার ঘরে গেলো। তার পেছনে পেছনে উড়ে যেতে লাগলো দাঁড়কাক। এদিকে বলি দেওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।
..
..
..
..
..(চলবে………..)
..
..
..
আগামীকাল ১-১০ পর্যন্ত পর্বের লিংক একসাথে দেওয়া হবে। গল্প পড়ে গঠনমুলক মন্তব্য করবেন। শেয়ার, মেনশন করে আপনার বন্ধুদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ সকলকে।