দূর আলাপন পর্ব-২৪+২৫

0
203

দূর আলাপন ~ ২৪

___________________________
রাতে সেদিন বেশ একটু দেরি করেই বাসায় ফিরল নিনাদ। আজকাল প্রায় সারাক্ষণ তার মেজাজ সপ্তমে চড়ে থাকে। বদ্ধ ঘরের নির্মক্ষিক জীবন সেই মেজাজে আরো রঙ ছড়িয়েছে। দিন যত যায়, যত সুশৃঙ্খল হতে থাকে নিনাদের মস্তিষ্ক, সে আরো ভালো করে বুঝতে পারে মানসিক অস্থিতিশীলতার দরুন একই সময়ে একাধিক বোকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। যার জন্য এখন প্রতিনিয়ত পস্তাতে হচ্ছে।
নিনাদের প্রথম ভুলটাই হয়তো ছিল তিহার কথা শোনার পর আগেপাছে কিছু না ভেবে দেশে ফেরা মনস্থির করা, দ্বিতীয় ভুল হঠাৎ করা ওই অসমবদ্ধ আচরণ। ওহিওতে বসে তার অনিয়মিত যোগাযোগ আর উদ্ভট ব্যবহারে ফুআম্মার মনে যারপরনাই সন্দেহের চারাগাছ রোপিত হয়েছে। আর শেষতক ক্রোধ সামলাতে না পেরে তিহার সঙ্গে বাজে ব্যবহার।

ঠিক এভাবে, এসব এলোমেলো সময় ও অপ্রতিরোধ্য আবেগের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে এখানে ফেরার উদ্দেশ্যটাই যেন ক্রমশ ধোঁয়াটে হয়ে উঠল নিনাদের কাছে। আজকাল নিজেকে জিজ্ঞেস করে সে, কোথায় হারালো সেই অদম্য ইচ্ছেশক্তিটা? যে কারণ টা ওকে উদ্ভুদ্ধ করেছিল ফিরতে?
আদতেই সেসব হারিয়ে গেছে। এমনকি তিহার কথা শুনে ওর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল… সেসবও আজকাল স্পষ্ট মনে পড়ে না। নিনাদ বোধহয় সেদিন এক অবিদিত ঘোরে সন্নিবেশিত হয়ে পড়েছিল। আচমকা পাওয়া মানসিক আঘাত, আফসোস, ক্রোধ, অনুশোচনা.. সবকিছু একসাথে আঁকড়ে ধরেছিল ওকে।

তারপর.. এখানে এসেও সেই সমাচ্ছন্ন ভাব পুরোপুরি কেটে গেল না৷ ঢাকায় আসার পর গোটা একটা সপ্তাহ সে পড়ে থেকেছে ঘরবন্দী হয়ে। একদম অকারণ। অবসরে সব ঘটনা পুনরনিরীক্ষণ করতে গিয়ে নিজের ওপরেই মুহুর্মুহু ফেটে পড়েছে অসহায় রাগে।
সেই খিচঁড়ে যাওয়া মেজাজটাকে খানিক মেরামত করতেই আজকাল একটু আধটু বাইরে বেরুতে শুরু করেছে নিনাদ।

আসরের সলাতের সময় ঘর ছেড়েছিল, যখন ফিরল তখন দেয়াল ঘড়ির কাটা শব্দ তুলে জানান দিচ্ছে রাত ন’টা বাজে।
আজকাল দুটো বাড়তি কথাও কারো সঙ্গে বলতে ইচ্ছে যায় না। যেন ঘরে ফিরেই কারো মুখোমুখি হতে না হয় সেজন্য নিনাদ বাসার চাবি নিয়ে বেড়িয়েছিল। চুপচাপ দরজা খুলে ভেতরে চলে যাবে, এই মনোবাঞ্ছা নিয়ে দরজা খুলতেই সামনে একটা দৃশ্যপট স্পষ্ট হয়ে উঠল।
ঘরের শুরুতে আধখানা ডাইনিং এ দুটো চেয়ার পেতে মুখোমুখি বসে আছে আফরিন ও ফুআম্মা। কি একটা কথা নিয়ে দুজনে খুব হাসছে। নিনাদ ভেতরে পা রাখতেই কথা থামিয়ে দুজনে ঘুরে তাকাল ওর দিকে। ঠোঁটের ভাজে তখনো হাসির লীন রেখা। আফরিন মৃদু হর্ষধ্বনি করলো, ‘নিনাদ ভাই ফিরছে!’

ওর ছেলেমানুষী উৎসাহে হাসলেন শিউলি। নরম গলায় বললেন,’কিরে, এতো দেরি হইলো যে?’

‘এমনিই.. কাছেই ছিলাম। হাটছিলাম এদিক সেদিক…’

‘আয়, এহানে আইসা বস।’ শিউলির সহাস্য আন্তরিক আহ্বানের সামনে কিঞ্চিৎ বিব্রত বোধ করে নিনাদ। বসতে ইচ্ছে করছে না, চলে যাওয়াটাও চরম বেয়াদবি হবে। নিজের করনীয় ঠিক করতে না পেরে নিনাদ দু পা এগিয়ে টেবিল থেকে বোতল তুলে একটা গ্লাস টেনে পানি ঢালে। তারপর সেই পানি খাওয়াকে নিমিত্ত করে বসে পড়ে একটা চেয়ার টেনে।
‘অন্য কিছু খাবি?’

‘নাহ’ নিনাদের নিরাসক্ত উত্তর শোনামাত্র আফরিন ব্যস্ত হয়ে তাড়া দেয় শিউলিকে।

‘ও চাচি আম্মা… আসল কথাডা কন না নিনাদ ভাইরে…’

শিউলি ভ্রু কুঁচকে তাকান,’অত তাড়া যখন তাইলে তুই ই ক।’

‘আমি! না না… আপনি থাকতে আমি কেন!’

‘কেন? তোর বলাতেই বা অসুবিধা কি? একজন কইলেই হইলো।’

‘আচ্ছা তাহলে কইতেসি।’ বলে রিমঝিম হেসে শাড়ির আঁচলে আঙুল পেঁচিয়ে কথা শুরুর পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করে আফরিন।
তীব্র উৎসাহে চোখ ঘুরিয়ে বলে, ‘আজ বড় আপুর লগে কথা হইসে। কি কইসে জানেন?’

মূল কথাটা বলার আগেই মাঝপথে নিনাদের প্রশ্ন ওকে থামিয়ে দেয়।
‘কোন বড় আপু?’

‘ওমা! বড় আপু আবার কয়জন? তিহা আপুরেই তো আমি বড় আপু ডাকি। আর তিতিক্ষা আপুরে ছোট আপু..’

‘তিহা কল দিয়েছিল?’ সন্দিগ্ধ স্বরে জিজ্ঞেস করে নিনাদ। যেন বিশ্বাস করতে পারে না এতকিছুর পর তিহা নিজ থেকে কল দেবে।

‘না আপু কল দেয় নাই। আমিই দিসিলাম। কল দিলাম দেইখাই তো জানতে পারলাম কথাডা!’

‘ও… কি কথা?’ ভ্র জোড়া সন্দিগ্ধ করে নিনাদ তাকিয়ে রইল।

আফরিন হাসল। দুরন্ত পাজি হাসি। অতুগ্র উৎসাহে
তিহার কথাটাতেই রঙ ছড়িয়ে দুটো একটা কথা বাড়তি যোগ করে বেচারি বলল,’আপনে দেখি কিছুই জানেন না!ছোট আপুরে তো আজ দেখতে আইসে। আজই আঙ্কটি পড়ায়া যাবে। আপুর বিয়া হইতেও আর দেরি নাই বুঝলেন? সামনের সপ্তাহে আপনার বিয়া, আর তারপর শীগ্রই কোনো একদিন ছোট আপুর…
এইটাই বেশ হইলো, আপনের বিয়ার সাথে সাথে ছোট আপুর বিয়াটাও খায়া যাইতে পারমু। না চাচিআম্মা?’

নিনাদ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল কতক্ষণ। একই সাথে কয়েকটা মানসিক ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ও। এসব কি বলছে আফরিন? হতভম্ব হয়ে নিজেকেই শুধাল, বোনের বিয়ে ঠিক করে ফেলছে তিহা? এত জলদি? আর শেষে কি বলল আফরিন?
নিনাদ কি ঠিক শুনেছিল? ওর নিজের বিয়ে নাকি সামনের সপ্তাহে!
আর এইকথা সে জানলো মাত্র আজ, ছোটবোনের মুখ থেকে!

‘তিতিক্ষার বিয়ে’ এই দুটো শব্দ মাথার ভেতর অশনির মতো ঝিলিক দিয়ে বারবার ফিরে ফিরে আসছে। আর কিছু ভাবা যাচ্ছে না। তবে সঙ্গে সঙ্গে বাস্তব বুদ্ধি হারালো না নিনাদ। ভাবাবেগের বশবর্তী হয়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটা ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, আজও তার পুনরাবৃত্তি ঘটুক তা সে চায় না। শিউলির সামনে তিতিক্ষা বিষয়ক যেকোনো কথা তোলাই এখন অসমীচীন হবে। মনের এই দুর্বহ অবস্থাতেও এই সহজ কথাটা বুঝতে পেরে নিনাদ শান্ত হলো। দ্বিতীয় কথাটার ওপর জোর দিয়ে হঠাৎ সচকিত ভাবে তাকাল সম্মুখের মানুষ দুজনের পানে।

‘সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ে মানে? আফরিন এসব কি বলছে ফুআম্মা?’ নিনাদের চোখে তীব্র প্রশ্নের বান।

ছেলের এই রুদ্রমূর্তির সামনে শিউলি কিঞ্চিৎ অসহায় বোধ করলেন। বিয়েতে তার নিজের আগ্রহের আতিশয্য অন্যদিকে ছেলের উদ্ভট নির্বিকার আচরণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পর্যবসিত হয়ে সবকথা ছেলেকে না জানিয়েই বিয়ের তারিখ ঠিক করেছিলেন শিউলি। আড়ম্বরহীন বিয়ে, তেমন কোনো জোগাড়জন্ত যখন হবে না, সয়ে সয়ে লোককে দাওয়াত করার হ্যেপা পোহাতে হবে না, তবে বিয়ের সময় অত পিছিয়েই বা লাভ কি? তাছাড়া নিনাদের হালচালও তো বড় একটা সুবিধের ঠেকছে না। সব দিক বিবেচনা করেই… মেয়ের বাবা ভাইয়ের সঙ্গে বসে তারিখটা এগিয়ে এনেছেন।
আজ সকালে ভয়ে ভয়ে ছেলের ঘরে গেছিলেন এই কথাটাই জানাতে। নিনাদ তখনো বিছানা ছাড়েনি। আধ ঘুম নিয়ে উঠে বসেছিল ফুআম্মার কথা শুনতে। ছেলের অমনোযোগীর সুযোগে শিউলিও অসীম সাহসে অনর্গল বলে গেলেন সমস্ত কথা। এর ফলে পরবর্তীতে অন্তত নিনাদ তার বিরুদ্ধে কিছু না জানানোর অভিযোগ তুলতে পারবে না।

আধো ঘুমে আধো জাগরণে নিনাদ কি শুনেছিল কে জানে! শিউলির সব কথাতেই হু হু করে যেতে লাগল। কথা শেষ করে শিউলি উঠে আসতেই আবারো বিছানায় শুয়ে পড়ল কাঁথা গায়ে জড়িয়ে।
এখন বোঝা যাচ্ছে সকালে ও আসলে কিছুই শোনেনি।

ঢোক গিললেন শিউলি। ঈষৎ ভয়ও হলো। আগের নিনাদ হলে কোনো চিন্তা ছিল না। তবে এই নিনাদ সামান্য অন্যরকম। কখন কি চাইছে, কি করছে শিউলি ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। সামান্য ইতিউতি করে শিউলি কৈফিয়ত সরূপ ইতস্তত করে বলার চেষ্টা করলেন,’বিয়ের দিন আগানোর কথাডা তো সকালে তোরে…’

শিউলির কথার মাঝখানে সহসা উঠে দাঁড়ালো নিনাদ৷
‘আমি একটু আসছি। এই নিয়ে তোমার সাথে ফিরে কথা হবে।’ বলে যেপথে এসেছিল, সেপথেই আবার বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।

.

ডাইনিং এ মাথায় নত করে বসে আছেন মারুফ। পাশাপাশি দুটো ঘর। এক ঘরের দরজা বিকেলের পর থেকে বন্ধ। পাশের ঘর থেকে ক্রমাগত ছোটনের ফোঁপানোর আওয়াজ ভেসে আসছে। বিকেলের ওই ঘটনার পর পাত্রপক্ষ চলে যাবার পর মেজাজ সামলাতে না পেরে তিহা ছেলের গায়ে দু ঘা বসিয়েছে। মারুফ অসহায় চোখে দরজা দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকেন। বড় মেয়েটা তো ওর বাচ্চা ছেলের ওপর আক্রোশ ঝেরে খানিক বাদেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তখন ছেলের প্রতি ওর মমতার অন্ত থাকবে না। কিন্তু ছোট মেয়ে? ওর কি হবে? তিতির সঙ্গে কত কি ঘটে গেছে, বাবা হয়ে তিনি সেসব থামাতে পারেন নি। সে দায় তো কম নয়। সর্বক্ষণ অনুতাপে মারূফ আড়ালে আড়ালে পুড়ে মরেন। তার ওপর আজ আবার অমন তিক্ত ব্যপার ঘটে গেল।

বিয়ের সিদ্ধান্তে হয়তো মন থেকে তিতিক্ষার সায় ছিল না। তবু রাজি হয়েছিল নিজের বাবা বোনের কথা ভেবে। অথচ ওকে কিনা আবার কষ্ট পেতে হলো। সেই প্রথম বার, তিতিক্ষা কে ঘিরে বিপর্যয়টা সংগঠিত হয়েছিল যখন, মারুফ তখনো অনেকটাই নিরুপায় ছিলেন। কিন্তু আজ, আজকের এই অঘটনে যে মারুফের অবদানই সবচেয়ে বেশি। তিতি কি এবারও বাবাকে নিঃশর্ত ক্ষমা করবে?
যদি না করে? বড় ভয় হতে থাকে মারুফের…

সন্ধ্যায় তিহা কষ্টে ক্ষোভে বলেছিল তিতিক্ষার বিয়ে দেবার প্রচেষ্টা এখানেই সমাপ্ত থাক। আর দরকার নেই ওই ভঙ্গুর প্রাণ টিকে নিয়ে অযথা টানাহেঁচড়া করার। এরচেয়ে যতকাল সম্ভব ও নিজের মতো করে ভালো থাকার চেষ্টা করুক। ভবিষ্যতে কি হবে, তা ভবিষ্যতেই দেখা যাবে। আপাতত আর বিয়ের কথায় কাজ নেই।
কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বাবাকে জানিয়ে ঘরে চলে গেল তিহা। মারুফের মনে হলো তিহাও হয়তো এবার একটু মুক্তি চাইছে এই অবিশ্রান্ত মানসিক যন্ত্রণা থেকে। চাইবেই তো! আর কতকাল দুর্ভোগ বইবে বেচারি বাবার সংসারের জন্য?

মারুফ পুনরায় মাথা নিচু করে ঝিম ধরে বসে রইলেন। একসময় ঘরের বাতাসে দ্বিতীয় কারো অস্তিত্ব প্রতিভাত হতেই চোখ মেলে অবাক হয়ে দেখলেন মাথার কাছে তিতিক্ষা স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা কখন দরজা খুলে এসে পাশে দাঁড়িয়েছে তিনি অনুমাত্র আভাস পাননি। অস্ফুটে মারুফের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো, ‘তিতি মা…’

পাথরের মতো নিশ্চল তিতিক্ষার মুখ। কোনোরকম আবেগ অনুভূতির সামান্যতম আঁচড় সেখানে নেই। খড়খড়ে গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘ভাত খাবে না বাবা?’

মারুফ শূন্য চোখে উদ্ভ্রান্তের মতো তাকিয়ে থাকেন। ঘোরনিবিষ্টের মতো বলেন, ‘ভাত….’

‘হ্যাঁ ভাত খাও। আমি বেড়ে দিচ্ছি।’

খানিকটা সময় কেটে যেতে মনের সামান্য থৈ খুঁজে পেলেন মারুফ। সম্বিত ফেরার মতো বললেন,
‘না রে মা আজ আর ভাত খাব না।’

‘কেন খাবে না?’ নিস্পন্দ জিজ্ঞাসা তিতিক্ষার।

মারুফ প্রতুত্তর দিতে পারলেন না। নিরবে চোখ বুজে বসে রইলেন।

কিয়ৎকাল পাশে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকে তিহা। একসময় ফিরে আসে মূল কথায়। কোনোরকম পূর্বাভাস ছাড়াই হঠাৎ বলে, ‘শুনেছি আমার বিয়ে নিয়ে তোমার খুব দুশ্চিন্তা ছিল। থাকবারই কথা। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে দিয়ে যেতে না পারলে দুনিয়া আখিরাত উভয় জাহানে পাকড়াও হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। বাবা হিসেবে যথেষ্ট চেষ্টাও তুমি করেছো। আল্লাহ রব্বুল আলামীন তোমার ঐকান্তিক চেষ্টাটা দেখেছেন, আশা রাখছি তিঁনি হয়তো এর জন্য পরকালে তোমায় পাকড়াও করবেন না বাবা। আর দুনিয়ার কথা?
সে নিয়ে দুশ্চিন্তা ছেড়ে দাও। আমার নসিবে যা আছে, যতটুকু আছে। তারচেয়ে সামান্য কম কিংবা বেশি আমি পাব না। এসব অহেতুক চেষ্টা বন্ধ করে তোমরা বরং আমায় ক্ষণকালের জন্য একটু মুক্তি দাও। পাড়াপড়শি, আত্মীয় স্বজনের কূট কথা শুনতে শুনতে জীবনের প্রতি আমার বিতৃষ্ণা অনেক আগেই এসে গেছে। নতুন করে আমাকে আর অপমানের উপলক্ষ হতে অনুরোধ করোনা৷’

মারুফ থমকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ, বহুক্ষণ… একসময় হতশ্বাসে জর্জরিত হয়ে বলেন,’জানি মা তুমি প্রতিনিয়ত মানুষের কথার আঘাতে কষ্ট পাচ্ছো। আজও যে ওরা বাকিদের মতই কাজ করবে সে আমি ঘুনাক্ষরেও বুঝিনি। বুঝলে তোমার কাছ পর্যন্ত ওদের যাবার সুযোগ দিতাম না। কিন্তু তাই বলে… সব বন্ধ করে দেয়া… সব মানুষ তো এক না। হয়তো সামনে আরো ভালো… ‘

বাবার কথার মাঝখানে কথা বলে ওঠে তিতিক্ষা।
‘দুনিয়াটাকে তুমি এখনো যথেষ্ট ভালো ভাবো, এটা তোমার সরলতা বাবা। তবে দুনিয়ার আদত রূপ আমার কাছে অনেক আগেই উন্মোচিত হয়েছে। আমি জানি মানুষ সামান্য একটু চিত্তপ্রসাদের জন্যও কতটা অমানুষ হতে পারে। তোমার মতো সরল চোখে দুনিয়াকে দেখতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু একবার যে এর সরূপ দেখে ফেলে তার চোখে আর কিছুতেই দুনিয়ার কোনো ভালো মানুষি ধর্তব্য হয় না।’
হঠাৎ একটু দৃঢ়তার সাথে তিতিক্ষা বলে, ‘বাবা তুমি বুঝতেই পারোনি ওরা আজ যা বলেছে তা নিতান্তই স্বাভাবিক। বোঝোনি কারণ সমাজে আমার অবস্থান কোথায় তুমি এখনো স্পষ্ট করে জানোনা। এই ধরনের মেয়েদের একটা সুস্থ জীবনের কামনা করাও অপরাধ। আমি যেখানেই যাই, সমাজ কিছুতেই আমাকে আমার অতীত ভুলে থাকতে দেবে না।
তাছাড়া এইদেশে হাজার হাজার কন্যাদায়গ্রস্ত বাবা আছে, তাদের মেয়েদের হয়তো আমার মতো কোনো সর্বনাশা অতীত নেই, খুঁত নেই, বদমেজাজ নেই। কেন ওদের ছেড়ে কেউ আমাকে বিয়ে করবে বলতো?
এইসব অলীক স্বপ্ন দেখা বাদ দাও। আমি একটু শান্তি চাই ব্যস। সেটুকুও দিতে না চাইলে তোমরা আমায় বলে দাও। যেদিকে দুচোখ যায় আমি চলে যাব।’

‘তিতি….’ ক্ষীণ একটা আর্তনাদ বেরিয়ে আসে মারুফের গলা দিয়ে। বাবার ডাকের পরোয়া না করে তিতিক্ষা তখন নিজের ঘরের দিকে হাটতে শুরু করেছে।
চলবে…..

দূর আলাপন ~ ২৫

_________________________
দরজা খুলে চমকে গেলেন মারুফ। ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে রাত এখন প্রায় দশটা। এত রাতে হঠাৎ কেন নিনাদ এখানে? কোনো দুঃসংবাদ নয়তো? দরজার ওপাশে বিব্রত নিনাদ তখন অস্থির চোখে মারুফকে ডিঙিয়ে পেছনে তাকিয়েছে। কেউ নেই দেখে সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি ফিরিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো জিজ্ঞেস করল,’আঙ্কেল তিহা কোথায়?’

‘আছে…’ ধীরজ গলায় উত্তর দেন মারুফ। তার স্বরে আজ আপ্যায়নের তোয়াজ নেই বুঝেও খুব একটা আমলে নিল না নিনাদ। ও এসেছে দরকারে। দরকার ফুড়োলেই চলে যাবে। নিনাদ পুনরায় ব্যস্ত হয়ে অনুরোধ করে,
‘আঙ্কেল তিহাকে একটু ডেকে দেবেন প্লিজ।’

দরজা ছেড়ে নিঃশব্দে সরে দাড়ান মারুফ। নিনাদকে ওভাবেই রেখে অন্দরে পা বাড়ান বড় মেয়েকে ডাকতে।

মেয়েকে ডেকে দিয়ে মারুফ আর এলেন না। বসলেন সদ্য কান্না থামা নাতিটার কাছে। হতবাক ভাবটা নিয়েই বেরিয়ে এলো তিহা। তাড়াহুড়ায় হাতের কাছে সলাতের হিজাব পেয়ে সেটাই পড়ে এসেছে। কেন আজ হঠাৎ নিনাদের সামনে আসার আগেও হিজাব জড়ানোর চিন্তাটা মাথায় এলো তিহা জানে না। আজকাল সে বাইরে গেলে প্রায় সবসময় বোরকা পড়ে। এই মুহুর্তে হিজাব পড়ার সপক্ষে তিহার যুক্তি হলো যদি বাইরের মানুষের সামনে পর্দা রক্ষাই বোরকার প্রকৃত উদ্দেশ্য হয় তবে বাইরের মানুষ বাসায় এলে কেন সেই পর্দায় শিথিলতা আসবে?

নিনাদ তখনো ছন্নছাড়া ভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ওর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে তিহা বিস্মিত গলায় বলে, ‘নিনাদ তুই এত রাতে? বাসায় সব ঠিক আছে? ‘

‘আছে।’

‘আয়, ভেতরে এসে বোস।’

দ্বিরুক্তি না করে অসংলগ্ন পদাঙ্কে নিনাদ সোফায় এসে বসে।

পুরনো বিরোধ ভুলে সত্রাসে জিজ্ঞেস করে তিহা, ‘এবার বল কি হয়েছে?’

‘তুই তিতিক্ষার বিয়ে ঠিক করেছিস?’ নিনাদের চোখেমুখে খেলা করছে প্রবল নিষ্করুণ ভাব।

ওর অতর্কিত প্রশ্নে তিহা ঈষৎ চমকায়,’ হ্যাঁ… আসলে ঠিক বিয়ে নয়। ওরা শুধু তিতিকে দেখতে এসেছিল।’

‘কারা?’ নিনাদের গলায় সন্দিগ্ধতার ছাপ।

‘ছেলে.. ছেলের খালা আর.. ওনার বউমা।’

‘তিতিক্ষা ওই ছেলের সাথে দেখা করেছে?’

একটু মেজাজ খিচঁড়ে গেল তিহার। নিনাদের কথাতে বিকেলের ছবিটাই আরো স্পষ্ট হয়ে ভাসল মনের পটে। অনুভূত হলো কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটা পড়ার মত কষ্ট। তাছাড়া নিনাদ অত অধিকারবোধ দেখাচ্ছেই বা কেন? সতেজে বলল তিহা,’ তিতি ওই ছেলের সঙ্গে দেখা করুক আর নাই করুক। তা জেনে তোর কি লাভ?’

একটু থতমত খেয়ে যায় নিনাদ। আক্রোশে মাথাটা ঠিক সহজ ভাবে কাজ করছে না। ওর প্রশ্ন গুলো হয়তো একটু বেশি ব্যক্তিগত হয়ে গেছে, ‘আ… আমার কিচ্ছু না… তবে… ওর জীবন নিয়ে যা ইচ্ছে করার অধিকার তোরও কিন্তু নেই।’

চটপট প্রতুত্তর দেয় তিহা,’এটাকে যা ইচ্ছে করা বলে না। মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলে স্বাভাবিক ভাবেই সব অভিভাবক বিয়ে নিয়ে ভাবেন। তাছাড়া আমার বোনের আগেপাছে তো আর কেউ নেই। বাবার ভালোমন্দ কিছু একটা হয়ে গেলে তিতি একেবারে নিরাশ্রয়। ওর নিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা তো আমাদেরকেই চিন্তা করতে হবে!’

নিনাদ বুঝল, তিহার কথায় আদতে কোনো ভুল নেই। ও যা কিছু করছে বোনের ভালোর জন্য। সে অধিকার ওর আছে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরেই যেন ধীরে অনবদমিত হয়ে পড়ে নিনাদের অন্ধ ক্রোধ টা। স্তিমিত হয়ে আসা স্বরে একসময় বলে,
‘হ্যাঁ… তুই হয়তো ঠিক বলেছিস।’ বলে দ্রুত প্রসঙ্গ পালটায়, ‘তারপর কি হলো বল, কদ্দূর এগোলো বিয়ের সম্মন্ধ?’

‘কদ্দূর এগিয়েছে?’ নিবিড় ঘোরে নিনাদের প্রশ্নেরই পুনরাবৃত্তি করে তিহা। তারপর চুপ হয়ে যায়।

‘তিহা’

‘হু’

‘বলবি না?’

তিহা আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করল, ‘কি বলবো? ব্যপার টা তো এগোয় নি আর। হয়তো কখনো… কারো সাথে এগোবেও না…’

‘কখনো এগোবে না? কেন?’

নিশ্বাস ফেলে তিহা, ‘কারণ তো হাজারটা। ক’টা বলি? আর এসব জেনে তোরই বা কি লাভ? আগামী সপ্তাহে বিয়ে। এসব অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারাদী বাদ দিয়ে তোর এখন সে নিয়েই জোড় দিয়ে ভাবা উচিত।’

নিনাদের মুখে খেলে যায় একটু বিদ্রুপজড়িত হাসি,’তোর কানেও খবরটা এসেছে তাহলে? তবে কি আমিই সবার শেষে জানলাম!’

‘কি শেষে জানলি?’

‘আমার বিয়ের খবর টা।’

‘ওমা! আগে জানতি না বুঝি?’

‘শুনেছিলাম ফুআম্মা মেয়ে বাছাই করেছেন। তবে সেই বিয়ে যে এত জলদি, একেবারে সামনের সপ্তাহে তা তো জানতাম না।’

‘শিউলি ফুআম্মা তোর মতামত না নিয়েই এতটা এগিয়েছেন?’ তিহা বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থাকে।

‘আমার মতামতটা কখনোই কারো কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ তো ছিল না। যাকগে ওসব কথা। তিতিক্ষার ব্যপারে তুই কিছু একটা বলছিলি সেটা শেষ কর।’

তিহা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে মাথা নুইয়ে বসে। মেঝের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে বলে, ‘বলার কিছু নেই… ওদের আচরণ, কথাবার্তা ঠিক আশানুরূপ ছিল না… বাবা আগেই তিতির অতীত সম্মন্ধে কিছুটা বলে রেখেছিল, সেজন্যই কিনা কে জানে.. শুরু থেকে ওদের তিরস্কারের দৃষ্টি, কথার ভঙ্গি তিতিকে রাগিয়ে তুললো। ওকে তো জানিস, অল্পতে রেগে কাই হয়। তিতিও রাগলো আর ভদ্রমহিলাও তিতির অতীত তুলে উল্টোপাল্টা কথা বলতে আরম্ভ করলেন। এসব ব্যতিরেকেও আরো বড় যে কারণ টা আছে তা হলো ছেলের নামে রাজন। বুঝতেই পারছিস এই সম্মন্ধ কখনো হবার নয়…
শেষমেশ ওরা মুখ কালো করে ফিরে গেছে আর তিতি… ও বাবাকে বলেছে এসব অহেতুক চেষ্টা একেবারে ছেড়ে দিতে। নয়তো… ‘

‘নয়তো কি?’

‘ও বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাবে।’

‘বেরিয়ে যাবে কোথায়? ‘

‘কে জানে! অন্যকারো মুখে এসব কথা শুনলে হয়তো আমরা পরোয়াও করতাম না কিন্তু তিতি… ও অন্যরকম। বেরিয়ে যাবার চিন্তাটা মাথায় আছে বলেই সেটা ওর মুখ পর্যন্ত এসেছে।’

শেষ কথাটা শুনে কিছুক্ষণ নিরবে বসে রইল নিনাদ। একসময় নিচু স্বরে বলল,’তিতিক্ষার এই মানসিক হালতে ওকে এসবের মধ্যে টানাই মস্ত ভুল হয়েছে। কোনো টিপিক্যাল বয়স্ক মহিলা যে অতীত টাকে স্বাভাবিক ধরে ওর সাথে ট্রিট করবেন না সে তো জানা কথা।’

‘ওরা আজ তিতিকে যা তা বলেছে।’ বলতে বলতে তিহার রুদ্ধবাক স্বরে আচমকা একটা ফোঁপানোর আওয়াজ ওঠে। কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে মেঝেতে। নিনাদ অবাক হয়ে দেখে মাথা নিচু করে তিহা কাঁদছে।

‘কেন যে এসব ঘটানোর আগে আরেকটু সময় নিলি না…’

‘সব বুঝি রে.. তবু আমরা যে নিরুপায়। ভীষণ ভয় হচ্ছিল সামনের দিন গুলোর কথা ভেবে। যখন বাবা থাকবেন না, নিজের সংসার নিয়ে আমি ব্যস্ত থাকবো… আমার বোন টা তো একেবারে ভেসে যাবে। ওর অতীত, ওর আত্মসম্মান কখনো ওকে কারো দয়ার পাত্র হতে দেবে না। দিনশেষে ও হবে চির আশ্রয়হীন, নিঃস্ব…’

কেউ আর কোনো কথা বলল না। চুপচাপ নিজের স্থানে ভাবুক হয়ে বসে রইল নিনাদ আর অন্যপাশে তিহা নিরবে মুছতে লাগলো চোখের জল।
সহসা তিহার স্বাভাবিক সৌজন্য বোধটুকু উদয় হতেই ও প্রস্তাব করল,’এত রাত হলো। তুই নিশ্চয়ই কিছু খেয়ে আসিস নি। আমি ভাত দিচ্ছি, বাবার সঙ্গে বসে পড়।’ বলে উঠতে যেতেই নিনাদের ডাক ওকে থামালো।

‘ওসব কথা থাক। এখানে বোস। আমার একটা কথা শোন।’

নিনাদের চিন্তাগ্রস্ত দুর্বোধ্য মুখের পানে চেয়ে তিহা পুনরায় বসে পড়ে। নিনাদকে দেখে অনুধাবন করে ওর ভেতরে দুটো স্বত্তার মাঝে প্রবল দ্বন্দ্ব চলছে। একসময় শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিনাদ ডাকে, ‘তিহা’

‘কি?’

‘একটা কথা বলবো?’

কয়েক মুহুর্ত ইতস্তত করে তিহা। অস্বস্তি নিয়ে বলে, ‘বল..’

‘ছোট গিন্নিকে আমার দিবি?’

তিহা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। ও আশঙ্কা করছিল এমন কিছুর। নিনাদের বাস্তব জ্ঞান বরাবর কম। যেখানে প্রতিটা ছেলে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে সবচেয়ে নিখুঁত, কলুষ মুক্ত একজনকে বেছে নিতে চায় সেখানে ও যেচে তিতিক্ষার মতো কাউকে বিয়ে করতে চাইছে। একমাত্র নিনাদের দ্বারাই বোধহয় এমন মুহুর্তে এমন একটা প্রস্তাব পেশ করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা ভুললে তিহার চলে না। নিনাদ নাহয় রাজি হবে তবে ওর পরিবার? ফুআম্মা? ওরা কি বুঝবে?
সম্বিত ফিরতেই তিহা শীতল গলায় বলে,’সম্ভব না নিনাদ। প্লিজ এই নিয়ে আর কিছু বলিস না।’

‘কেন সম্ভব না? ‘

‘তুই বুঝতে পারছিস এটা হলে কতগুলো মানুষের মন ভাঙবে? এমনকি শিউলি ফুআম্মার সঙ্গে তোর সম্পর্কে চিড় পর্যন্ত ধরতে পারে। ‘

‘ফুআম্মা নিশ্চয়ই আমাকে বুঝবেন।’

‘আর ওই মেয়েটা? যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছেন ফুআম্মা?’

‘বিয়েটা তো ফুআম্মা আমার অমতে ঠিক করেছেন। আমার মতামতের পরোয়া যখন করেননি, হিসেবে তখন আমার আপত্তি জানানোটাই তো যুক্তিযত। তাছাড়া ওই মেয়েটা.. ওকে তো আমি দেখিও নি। কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত যার অস্তিত্ব সম্মন্ধেও জ্ঞাত ছিলাম না, তাকে বিয়ে করবো না বলা কি খুব বেশি নিষ্টুরতা? অল্প কদিনের নোটিশে ঠিক হওয়া বিয়ে অল্প কদিনে ভেঙে গেলে কোনো পক্ষেরই এতে দারুণ ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে না।’

‘অতকিছু আমি জানি না। কিন্তু… এটা একটা অসম্ভব প্রস্তাব।’

‘আমি তো অসম্ভব কিছু দেখছি না! ফুআম্মাকে রাজি করানো আমার দায়িত্ব। আর তুই… তুই এদিকটা সামলা।’

ক্রমশ অধৈর্য হয়ে উঠছিল তিহা, ‘রাজি করানো কি এতই সোজা? বললাম আর হয়ে গেল! তিতিকে চিনিস না তুই?’

‘চিনি বলেই তো যেচে খড়্গ মাথায় নিতে চাইছি। দুদিন পর পর মেজাজ দেখিয়ে বাইরেই একটা ছেলের মাথার ও খড়্গ ঘোরাবে, তারচেয়ে সব দায়ভার আমারি থাকুক।’

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে