দু মুঠো বিকেল পর্ব-৬০ এবং শেষ পর্ব

0
3102

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৬০(শেষ পর্ব)
Writer-Afnan Lara
.
বেশ অনেকদূর এসে এখন রোডের কিনারায় শুকনো বালুতে বসে সমুদ্র দেখছি আর চোখের পানি মুচতেছি,,বারবার চোখ জোড়া ভিজে আসে
পেটটা হালকা করে ব্যাথা করছে,মনে হয় রাত এখন দুটো বাজে
এখন এই মূহুর্তে আমি আর সমুদ্র ছাড়া আর কোথাও কিছুই নেই,জনমানবশূন্য এলাকা,সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ বারবার মনে ভয় জাগিয়ে তুলছে আমার
ঢেউ এসে আবার চলে যাচ্ছে,পুনরায় নতুন ঢেউ আসছে
আর আমার জীবনের ঢেউটা পুনরায় ফিরলো না!!
হয়ত মরে যাব এভাবে পাগলের মতন ছুটতে ছুটতে তাও তো বেশ হবে,স্পর্শকে খোঁজার চেষ্টা তো করেছি আমি এটাই বা মন্দ কিসের?
প্রেগন্যান্ট নাহলে এতক্ষণে মান ইজ্জত সব যেতো,আর পেটটা এত বেশি বড় লাগে কেন!!ভিতরে কয়টা আছে কে জানে
তাতে আমার কিছু যায় আসে না,আমার শুধু স্পর্শকেই চাই আর জিরানো যাবে না,আবার ও যেতে হবে আমায়
যতদূর পারি,তাকে ফিরে পেতেই হবে
.
রিম বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেউ পেটে ভীষণভাবে ব্যাথা অনুভব করলো,পেট ধরে এখন সে হাঁটছে,,এরকম একটু বসে একটু জিরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এখন ফজরের আজান দেওয়া শুরু হয়েছে,দূরের একটা মসজিদ থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে
রিম আর চলতে পারছে না,মাথা ঘুরছে সাথে পেটের যন্ত্রণা
দূরে কিছু জেলে মাছের জাল নিয়ে সমুদ্রের দিকে যাচ্ছে,আর কিছু পর্যটক ও নজরে আসছে যারা কিনা সূর্য ওঠা দেখবে বলে এসময়ে ভীড় করেছে
আবার কতগুলো লোককে দেখলো কমলা রমের পোশাক পড়ে জমাট বেঁধে হাসিমজা করছে,বাংলালিংক কোম্পানির কর্মচারী মনে হয় দেখে
রিম আনমনে তাদের দেখতে দেখতেই মূহুর্তে অজ্ঞান হয়ে বালিতে পড়ে গেলো
যখন সে চোখ খুললো,সাদা বিছানার চাদরের একটা বেডে নিজেকে শুয়ে থাকা অবস্থায় পেলো সে
এতসব ভাবতে গিয়ে পেটে ব্যাথা অনুভব করে এক চিৎকার দিলো রিম,আগের চেয়ে ব্যাথাটা এখন অনেক বেশি
তার চিৎকারে নার্স দুজন দৌড়ে আসলো,তারা একজন আরেকজনকে বললো ডাক্তারকে ডাকতে হবে,একজন সাথে সাথে দৌড়ে গেলো ডাক্তারকে ডাকতে,আরেকজন বেরিয়ে বললো”তার জ্ঞান ফিরেছে”
ওপাশে থাকা লোকটি কথা শুনে রুমে ঢুকলো,রিম চিনলো না তাকে
চিনবেই বা কি করে,গাল ভর্তি দাঁড়ি,চোখে সানগ্লাস পরনে শার্ট প্যান্ট, তাও কিসের যেন কোম্পানির,,আরে হ্যাঁ বাংলালিংক কোম্পানির যেটা সে অজ্ঞান হওয়ার আগে দেখেছিলো
রিম পেটে হাত দিয়ে আরেকদিকে ফিরে গিয়ে ব্যাথায় স্পর্শর নাম নিলো আস্তে করে
লোকটা হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছে একটি দূরে
.
এবার রিম চিৎকার করছে বারবার,ডাক্তার ও এসে পড়লেন ততক্ষণে
রিম কাঁদছে,আর মাঝে মাজে সামনে মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকাচ্ছে,বেশ চেনা মনে হয় তাকে কিন্তু না,এখন শুধু স্পর্শকে নিয়ে ভাবতে হবে
.
রিমপর কান্না দেখে লোকটা একটু এগিয়ে এসে ওর হাত ধরলো
রিম হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো”আমাকে ছুঁবেন না,, কে আপনি?”
.
হাত ছাড়িয়ে রিম কাঁপতে কাঁপতে আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেললো
এবার যখন সে চোখ খুললো তখন পেট ফুলা না দেখে ভয় পেয়ে পাশে তাকাতেই তার নবজাতক শিশু দুটোকে দেখলো,,তাদের দিকে তাকিয়ে সে সব ভুলে গেছে
মেয়ে দুটো যেন স্পর্শর চেহারা নিয়ে এসেছে দুনিয়ায়
রিম হাসলো,তারপর স্পর্শর কথা মাথায় আসতেউ সে উঠতে গেলো,সেই লোকটা এসে আবারও ওকে আটকালো
রিম এক ধমক দিয়ে বললো”কি সমস্যা আপনার,কে আপনি?বারবার আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছেন কেন?”
.
লোকটা শুধু বললো”তোমার পাশের বাচ্চা দুটোর বাবা আমি”
.
রিম ভূত দেখার মতন মুখ করে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ তারপর হাত বাড়িয়ে লোকটার গা ছুঁলো,কিছু বলার আগেই বাহিরে থেকে মা রিহাব,আঁখি ছুটে আসলো ওকে দেখতে,উনাদের লোকটি খবর দিয়েছে নার্সকে দিয়ে
.
স্পর্শ দূরে সরে দাঁড়িয়েছে,,হ্যাঁ!!সামনে মূর্তিমান লোকটিই স্পর্শ
রিম এখনও ওর দিকে তাকিয়ে
আর বাকিরা বাচ্চা দুটোকে দেখছে
রিম চোখের পলক ফেলে আঙ্গুল উঠিয়ে বললো”স্পর্শ!”
.
ওর কথা শুনে রিহাব আর বাকিরা পিছনে তাকালো
স্পর্শ চোখ নামিয়ে ফেলে দাঁড়িয়ে আছে
রিহাব এগিয়ে এসে বেশকিছু ক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো”স্পর্শ?”
.
স্পর্শ রিহাবের কথার উত্তর না দিয়ে রিমের কাছপ এসে হাঁটু গেড়ে বসলো,রিম বেডের উপরে আর সে নিচে,স্পর্শ রিমের হাত দুটো ধরে বললো”আমার কথাটা শুনবে রিম??”
.
রিম নিজের চোখকে বিশ্বাস কর‍তে পারছে না,কি থেকে কি হয়ে গেলো,এই স্পর্শকে সে একদমই চিনতে পারছে না
চোখে মুখে ক্লান্তিভাব,,হাত শক্ত,,গাল ভর্তি দাঁড়ি,গায়ের রঙ ফর্সা থেকে একটু কালো কালো লাগছে এখন
এই হাল কেন উনার,এতদিন কোথায় ছিলেন,সব কিছুর প্রশ্ন তৈরি হয়ে তার দিকেই তাক হয়ে আছে
সে বললো”সেদিন আমার হারিয়ে যাওয়ার পিছনে জাকিরের দলবল ছিলো
আমি তোমাকে একটিবার ডাকার সুযোগ ও পাইনি রিম,তারা আমাকে বালি এরিয়াতে নিয়ে এসে হাত বেঁধে বসিয়ে রেখেছিল বালির উপরে
সবার হাতে ছোট বড় পিস্তল ছিল,,
বাতাসের কারণে ঠিকমত তাকাতেও সমস্যা হচ্ছিল আমার
তবে জাকিরকে দেখেই আমি চিনেছি,,জাকির আমাকে বলেছিলো সে আমাকেই মারবে,তোমাকে মারতে চেয়েছিলো কিন্তু সে সেটা করবে না,তবে আমি না মরলে আগে তোমাকেই মারত,আমার সামনে তোমায় মেরে সেটা আমাকে দেখাতো,,
আর সেটা সম্ভব হচ্ছিলো না বলে প্রতিশোধ যার থেকে নেওয়ার তার থেকেই নিবে ঠিক করে
আমি বুঝলাম আমি বেঁচে থাকলে ওরা সুযোগ পেয়েই তোমাকে মারার চেষ্টা করবে
সেদিন আমি এমনিতেও মরতাম না,আমার লিংক জাকির চাচার চেয়েও একটু উপরে ছিল,আমার সেফটিতে একজন পুলিশ অফিসার ছিল
জাকিরের দলের একজন সদস্য ছিল আমারই দলের
জাকির তার দলের একজনকে বললো আমাকে মেরে ফেলে কাজ খতম করে চলে যেতে এখান থেকে
সে আশিককে মেরেছিলো কারণ আশিক তার হয়ে কাজ করতো,নিজ থেকেই কাজ ছেড়ে দেওয়ায় তার কিসের যেন বিরাট বড় লস হলো,আর সেটার বদলে সে আশিককে মেরে ফেললো,,
.
তার দলের যে সদস্য ছদ্দবেশে ছিল,সে হলো দিদার,,সে না থাকলে হয়তবা আমি বাঁচতাম না সেদিন,কিন্তু যখন আমি বেঁচে গেলাম আমার মনে হলো তোমার সেফটিটা জরুরি,,
দিদার শুধু আমার ফ্রেন্ড নাহ সে একজন পুলিশ অফিসার ও
আর সে বেশ প্ল্যান করেই ওদের দলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল
জাকিরকে ধরা এত ইজি ছিল না বলে
আমি তোমাকে চেয়েও খবর দিতে পারিনি রিম
গা ঢাকা দিতে এখানেই থেকে গেলাম,কারন আমি ঢাকায় ফিরে গেলে জাকিরের নজরে ইজিলি এসে যেতাম
ভাবতে থাকলাম কি করে কি করবো,এর ভেতরে খবর আসলো আশিক মারা গেছছে,ঐ জাকিরের নজরে যেন না পড়তে হয় সে জন্য আমি আশিকের কবরে মাটি দিতে যেতেও পারিনি
আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিল আশিক,,ওর জন্য এতকিছু করা কিন্তু ওকে দেখা হলো না আমার,শেষবারের জন্য ও না!!!
.
দিদারকে রিকুয়েস্ট করতে থাকলাম কিছু একটা বিহিত করতে
দিদার জানালো আস্তে আস্তে জাকিরের সব আস্তানা সম্পর্কে লোকেশন জারি হচ্ছে
একটা সময়ে চারিদিক থেকে জাকিরকে আটকানো হবে
.
আমি তোমাকে ছাড়া অচল হয়ে পড়েছিলাম,কাউকে দিয়ে তোমার খবর আনানো ও পসিবল হচ্ছিলো না
তোমাকে দেখার ইচ্ছা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিলো,একদিন তো ঠিক করলাম তোমায় দেখতে যাব আমি ঠিক সেদিন দিদারের কাছ থেকে খবর পেলাম জাকির নাকি কয়েক মাসের জন্য তোমার বাসার আশেপাশে লোক লাগিয়েছে তদারকি করার জন্য
কারণ সে সিউর হচ্ছিলো না আদৌ আমি মারা গেছি কিনা
সে আফসোস করলো কেন সে নিজের হাতে আমাকে মারলো না,কেন সদস্যদের দিলো কাজটা,দিদার তার সদস্য সেজেছিলো এবং সে জানিয়েছিলো সে আমাকে মেরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছে
জাকিরকে অলমোস্ট ধরে ফেলবে পুলিশ ঠিক সেসময়ে আমরা খবর পাই সে আউট অফ কান্ট্রি
কিভাবে সে বুঝে গেলো তা আমাদের জানার বাহিরে
এর ভেতর সে তার লিংক দেশেও রেখে গিয়েছিলো,তার একমাত্র নিশানা ছিলে তুমি
শেষে সে ঠিক করলো তোমাকে মেরে তার মনের অশান্তি দূর করবে,আমাকে নিজের হাতে মারেনি বলে সে অনেক মাস আফসোস করেছে তাই সে এবার ঠিক করলো সে নিজের হাতে তোমায় মারবে
দিদার জানতে পারলো জাকির দেশে ফিরেছে
সে তৈরি ছিল জাকিরকে ধরার জন্য
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস,আমরা তাকে ধরার আগেই সে যে জায়গা দিয়ে বাংলাদেশ ফিরছিলো সেখানে পাহাড়ধসে সে নিহত হয়
খবরটা পেয়ে আমি এবার মন দিলাম তোমার আশেপাশের জাকিরের তৈরি হওয়া লিংকটা ভেঙ্গেছে কিনা তা জানার জন্য
এবার বের হলো আরেক রহস্য
জাকিরের ছেলে আবির তদারকি করছে তোমার আশেপাশের নজর দারিতে
এবার কাঁধে পড়লো আরেক ঝামেলা,,দিদার আমাকে রিস্ক নিতেনা মানা করলো,এদিকে তোমাকে কল করে জানাবো সেই উপায় ও পাইনি কারনটা হলো আবির তোমাদের সবার ফোন সিস্টেম হ্যাক করিয়ে রেখেছিলো,বাহির থেকে কল আসলে তারা জাগ্রত হয়ে যেতো
আমার একবারের জন্য ও মনে হয়েছিলো হয়ত আমি আর চেয়েও তোমার সমানে গিয়ে দাঁড়াতে পারবো না কোনোদিন
কি অবস্থায় ছিলাম তা শুধু দিদারই ব্যাখা দিতে পারবে আর কেউ নয়
এত মাস আমি ফাইট করেছি নিজেই নিজের সাথে
জাকির চাচাকে ধরতে যতটা কষ্ট করতে হবে আমরা ভেবেছিলাম ততটা কষ্ট হয়নি
তবে তার ছেলে আবির ডেঞ্জারাস ছিলো,মানে যত হ্যাকার আছে সব মনে হয় ওরই ফ্রেন্ড,যার দিকে তাকাই সেই আবিরের দলের
দিদার আর আমি মিলে মহা ঝামেলায় পড়লাম,,
তারপর মাথায় আসলো “কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হবে”
মানে আবির নিজেও একটা হ্যাকার তাহলে আমাদের আরেকটা হ্যাকার লাগবে যে আবিরের গ্রুপটাতে কি চলে সে খবর আমাদের দেবে
এবার খুঁজতে থাকলাম আরও ডেঞ্জারাস হ্যাকারকে
বেশ খোঁজাখুঁজির পর পেয়ে গেলাম এডওয়ার্ডকে
সে লন্ডনে থাকে, সে আমাদের হেল্প করবে,দিদারের রিকুয়েস্ট সে রাজি হলো,তার আবার ফি দিতে হবে
তাকে হায়ার করে আনা হলো এখানে
সে মাত্র ২দিনে আবিরের গোটা লিংককের পাসওয়ার্ড আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলো
আমরা শকড্!!
জানতে পারলাম আবির ঠিক কি চাইছে
এবার জানলাম আবির তোমাকে চাইছে,মানে জেলে থাকা আসামীর প্রেমে পড়েছে পুলিশ নিজেই,ওমন ব্যাপার হলো
তোমাকে পাহারা দিতে গিয়ে সে তোমার প্রেমে পড়ে গেলো
এখন সে তোমাকে চাইছে,তোমার উপর নজর রাখার যে কয় মাস ঠিক করা ছিল তা পার হয়ে গেছে তাও সে তোমার উপর নজর রাখছে,আর এটাও জানলাম তুমি প্রেগন্যান্ট, আর সে এবার বাচ্চা হওয়ার পরে তোমাকে উধাও করবে
সেই অপেক্ষায় সে আছে,তার লিংকে থাকা সব সদস্যের থেকে সে ঘটনা গুলো জানাতো,আর আমরা জানতাম হ্যাক করার পর
মজার ব্যাপার হলো এডওয়ার্ড এমনভাবে হ্যাক করলো কোনো কাকপক্ষী ও টের পায়নি
এবার আমার দায়িত্ব বেড়ে গেলো,,আমার মাথা কাজ করছিলো না কি করে তোমাকে আর বেবিকে বাঁচাবো,,আবির ঠিক কোথায় আছে সেটা সে লিংকে জানাতো না কখনও
তো ভাগ্যবশত একদিন আমরা জানলাম সে তোমাকে ফলো করতে করতে কক্সবাজার আসছে
তার মানে তোমার সাথে সাথে আমিও রিস্কে
এবার দিদার সব দিক থেকে রেডি হলো,তার কাছে এখন চ্যালেঞ্জ তোমাকে বাঁচানো আর আবিরকে হাতেনাতে ধরা
আবির তুমি যে বাসে উঠেছিলা সেই বাসেই উঠেছিলো
তুমি বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর ওরা আমাকে ঠিক যেমন করে কিডন্যাপ করেছিলো তোমার পাশ থেকে
দিদারের টিম ঠিক সেইভাবে আবিরকে উধাও করেছে তোমার পাশ থেকে,তুমি টেরই পেলে না
দিদার আমাকে কল করে খুশির খবর জানালো যে বাকি থাকা শত্রু আমাদের হাতে এখন
আমি ছুটে গেলাম তোমাকে একটিবার দেখতে
.
এসে দেখলাম তুমি আমার কাছেই আসছো,আমার একটু কাছে এসেই তুমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে
নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি এই ভেবে যে তোমার এই মূহুর্তে আমি তেমার পাশে থাকতে পেরেছি
তবে আজীবন মনে দাগ লেগে থাকবে আমি তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছি
দু মুঠো বিকেল কাটানোর স্বপ্ন দেখিয়ে আমি তোমায় বিকেল দেখানো থেকেই বঞ্চিত করে ফেলেছিলাম
বেঁচে থেকেও মরার মতন ছিলাম
না একটিবার তোমাকে দেখার সুযোগ ছিল হাতে না তোমার সাথে কথা বলার সুযোগ
এরকম মাস্টারমাইন্ড প্ল্যানারদের ধরতে একবছরের কাছাকাছি লেগে গেলো আমাদের
দিদার আমাকে অনেক হেল্প করেছে,অনেক অনেক!!
সবসময় আশা জুগিয়েছে একদিন সবকিছু ধুয়ে মুছে নতুন কিছু আসবে আর তাই হলো
আজ সূর্য ওঠার সময় আমি জানলাম আমি দুটি রাজকন্যার বাবা হয়ে গেছি,আর আমার রাণী সুস্থ
এতদিনের প্রতিক্ষার আজ অবসান হলো,, তার সাথে এই প্রাপ্তি
আমি যেন তোমার থেকে আজ দু মুঠো বিকেল পেয়ে গেলাম
.
রিম ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে,রিহাব এগিয়ে এসে স্পর্শকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে হাত রাখলো,রিহাব কেঁদে ফেলেছে,তার বোনকে এত কষ্টে দেখে সে ভেবেছিল এর চেয়ে কষ্টে হয়ত আর কেউ থাকতে পারে না কিন্তু স্পর্শ সে তো দেখি আরও কষ্টে ছিল এতদিন
.
আঁখি বাচ্চা দুটোকে স্পর্শর কোলে দিয়ে দিলো
.
ওদিক থেকে চিৎকার চেঁচামেচি করে রোকসানা বেগম আসছেন,তার মুখে এক কথা”আমার নাকি দুটো নাতিন হয়েছে,কাউকে ধরতে দিব না,ঐ রিমকেও না,আমার নাতিনদের আমি নিয়ে যাব,সরো সবাই”
তার হাতের আঙ্গুল ধরে হনহনিয়ে আসছে তামিম
অথচ এই তামিম তার আরও বড় শত্রু ছিলো,কারণ তামিম সবসময় ছাদে গিয়ে পাশে থাকা উনাদের ছাদের ফুলগাছের ফুল চুরি করত,সব খালি করে দিতো তামিম
আর আজ কিনা সেই তামিমকে হাতে ধরে তিনি কক্সবাজার এসে গেছেন
এসেই স্পর্শর কোল থেকে বাচ্চা দুটোকে কেড়ে নিলেন তিনি,চিনলেন না ওকে
রিমের মা অবাক হয়ে তামিমকে জিজ্ঞেস করলেন ও এখানে কি করে
তামিম উঁকি দিয়ে বাচ্চা দুটোকে একবার দেখে নিয়ে বললো”আসলে আমি আবারও ফুল চুরি করতে গিয়েছিলাম ছাদে,তো আন্টি আমাকে ধরে ফেলে বকছিলেন
সেসময়ে আঁখি ভাবী উনাকে ফোনে করে বললো রিম আপুর বাবু হয়েছে,সেসময় উনি আমাকে নিয়ে ছুটলেন তো ছুটলেন
.
মা মুচকি হাসলেন কথা শুনে
রোকসানা বেগম হাউমাউ করে কাঁদছেন বাচ্চা দুটোকে বুকে ধরে,কেঁদে কেঁদে বলছেন”আজ আমার স্পর্শ থাকলে কতই না খুশি হতো,দুটো মেয়ে একদম তার চেহারা নিয়ে এসেছে গো!!”
.
স্পর্শ পিছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের কপালে চুমু খেয়ে বললো”আমাকে চিনলে না মা”
.
রোকসানা বেগম অবাক হয়ে পিছনে তাকালেন,স্পর্শর চোখ দেখে তার কলিজা কেঁপে উঠলো,এটা যে তারই স্পর্শ
এই কি হাল হয়েছে তার কলিজার টুকরা ছেলের
.
বাচ্চা দুটোকে রিমের মায়ের কোলে দিয়ে তিনি কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরলেন স্পর্শকে
রিম বেডের এক কোণায় বসে মুখে হাত দিয়ে কেঁদে যাচ্ছে,একসাথে সব পেয়ে গেল সে আজ
স্পর্শর রিমের দিকে তাকিয়ে আছে মাকে জড়িয়ে ধরে
.
মা ওকে ছেড়ে চোখের পানি মুছে বললেন”যা শেষ হবার তা শেষ হয়েছে,সবাই চলো সকালের নাস্তা করবো,এই রিহাব!!হোটেল থেকে নাস্তা আনানোর ব্যবস্থা করো,স্পর্শ বউের কাছে মাফ চাও কেন এতদিন উধাও ছিলে তুমি,আমি রিমের সাথে হিসাবনিকাশ পরে করে নেবো,আগে ওকে ঘরে তুলবো আমার দুই নাতিন সমেত
বাই টাটা,এই তামিম চোর!! ফলো মি”
তামিম ও বাধ্য ছেলের মতন চললো রোকসানা বেগমের পিছু পিছু
রিমের মা গালে হাত দিয়ে বললেন”আমার নিজের ছেলেই পল্টি খেয়ে গেলো?”
.
রিহাব হাসতে হাসতে মাকে আর আঁখিকে নিয়ে চলে গেলো,রুম খালি এখন
স্পর্শ আর রিম শুধু,বিছানার একপাশে মেয়ে দুটো
রিম সবাই যেতেই একটু এগিয়ে গিয়ে স্পর্শকে ধরলো গলা জড়িয়ে
চোখ দিয়ে আজ বেশি অশ্রু জড়ছে না তার
আজ এতটা মাস কম কাঁদেনি সে,আজ চেয়েও পারছে না,মনে হচ্ছে সব অশ্রুর ভান্ডার শেষ
আমারও মনে হয় আর দরকার নেই,এখন থেকে হাসির বন্যা বইবে
স্পর্শ চোখ বন্ধ করে রেখেছে
রিমঝিম হালকা করে বললো-স্পর্শর ছোঁয়া
স্পর্শ ও মৃদু স্বরে বললো-রিমঝিম বৃষ্টি
তাদের দুই মেয়ের নাম তাদেরই নামের সাথে মিলিয়ে ছোঁয়া এবং বৃষ্টি রাখা হলো
এখন থেকে প্রতিটা দু মুঠো বিকেল আমরা কাটাবো
আমাদের দুই মেয়েকে নিয়ে
আর একটি বিকেল ও ছাড় দেবো না
♥♥♥♥♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥♥♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে