দহন পর্ব-১১

0
568

#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_১১

সবাই চুপ হয়ে গেলো। তখন দাদু বলা শুরু করলো।

” আসলে আমার নাতী _ নাতনী দুইটির ইগো অনেক। ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করবে। তবুও কারো কাছে কেউ নত হবেনা। তোদের এরকম মনোভব হলো কবে থেকে নীলা।

” দাদু আমি অনেক বড় ভূল করে ফেলেছি। এই আগুনে এখন আমাকেই পুড়তে হবে। ”

” জানিস আকাশ তোর উপর জোড় খাটাতে কেনো পারে নাই। যতবার আকাশ তোর কাছে গেছে।আকাশকে শুধু অবহেলা করে গেছিস। এরজন্য ভরা লোকের সামনে আরেকবার তোর সম্মানহানির কারণ হয়ে দাড়াই নাই। কিন্তু তুইতো কবুল বলার পূর্বে আকাশের কাছে আসতে পারতি। কিন্তু জেদের বশে কবুল বলেই দিলি। বেশ ভালো কথা এখন ধ্রুবোর সাথে সংসার করবি না ক্যান? ”

” সরি দাদু, তোমার জন্য এইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি এর সম্পূর্ণ দোষ তোমার। তুমি ক্যান বাবাকে বলে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করলা? ”

” তোদের ভালোবাসার অগ্নিপরীক্ষা নেওয়ার জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করেছি। আমি কি জানতাম তোরা ফেইল করবি। ভালেবাসা হারিয়ে যাচ্ছে তবুও তোরা বাবা মায়ের সম্মান নিয়ে ভাববি। তোরা এখন অনেক বড় হয়েছিস তোদের নিজের ভালোমন্দ যাচাই করার ক্ষমতা আছে? ”

” বাবা শেষ বয়সে এসে তুমি ওদের বেয়াদপির শিক্ষা দিচ্ছো? ওরা আমাদের গর্ব হওয়ার মতো ছেলে মেয়ে। ভালোবাসার তৃষ্ণায় মারা যাবে। তবুও ওরা আমাদেরকে নিয়েই ভাববে। ”

” তুই চুপ কর আশফাকুল আজ ছেলে মেয়ের এই দশার কারণ তোরা। আমজাদ জামাই আকাশ নানাভাইয়ের বেডটা নিয়ে আসো। ”

” কিন্তু বাবা ডক্টর কিছু বলবে না। ”

” তুমি নিয়ে আসো। ডক্টরের সাথে আমি কথা বলেছি। আকাশ এখানে উত্তেজিত হবেনা। ”

” ওকে আচ্ছা। ”

” দাদুভাই আমি আঙ্কেল কে সাহায্য করি। ”

” হুম ধ্রুব যাও। ”

” দাদাভাই, আকাশ অসুস্থ তুমি খামখেয়ালি করছো ক্যান? ওকে এখানে আনিয়ো না আমি এই মুখ ওকে দেখাতে পারবো না। ”

” দেখাতে পারবি না, তাহলে একটু আগে ওর কেবিনে যাওয়ার জন্য ছটফট করছিস ক্যান? আকাশ এখানে আসলেই সুস্থ হয়ে যাবে। কারণ ডক্টর বলেছে আকাশ ট্রোমাতে আছে। আকাশকে সুস্থ করতে হলে এখানে আনতেই হবে। ”

নীলা,রেহেনা, দিলারা হু হু করে কেদে দেয়।

” এই তোরা কাঁদবি না। আশফাকুল ওদের চুপ থাকতে বল। এইটা বাড়ি নয় হসপিটাল। ”

” বাবা কই নিয়ে যাচ্ছো আমাকে। আমার কিছু ভালো লাগছে না দম বন্ধ বন্ধ লাগছে বাইরে। আমাকে কেবিনে ঢুকাও। আমি এই ছেলেটির মুখ আর দেখতে পারছি না। ”

” কেনো শালাবাবু আমাকে আপনার বোনজামাই হিসাবে পছন্দ নয়। ”

” বাবা তুমি কি এসব শোনার জন্য আমাকে কেবিন থেকে বের করলে। ”

” এটা তোর নানুভাইয়ের অর্ডার আকাশ। ”

” হে নানু ভাই, তোমাকে এখানে নিয়ে আসতে আমি বলেছি ! ”

” আকাশ ডানেদিকে মুখ ঘোরাতেই নীলার বধূবেশে মুখ দেখে হাউমাউ করে কেদে বলে নানাভাই তোমরা আমাকে বাঁচালে কেনো? এভাবে মানসিক যন্ত্রণা পাবো বলে আমি থাকতে চাই নাই। আমি ওর মুখটা নিতে পারছি না। ও আমার বধূ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সময় পরিস্থিতিতে আজকে আমি নীলাকে অন্যর বধূ দেখছি। ”

“এই কথা শুনে নীলা ঘামতে থাকে। এরপরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে আমিয়ো বাঁচতে চাইনা আকাশ। ধ্রুব আপনি আমাকে মুক্তি দেন।”

” ধ্রুব এবার অট্রহাসি দিয়ে বলে উঠে। আমি তোমাদের গল্পে ভিলেন নই। আমি তোমাদের মিলনকারী বন্ধু। আমি নীলাকে বিয়ে করি নাই আকাশ। ”

নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না রেহেনা, নীলা,দিলারা, আমজাদ, আশফাকুল ও আকাশ।

” নীলা মনে মনে বীড়বীড় করে বললো এর জন্য কি ধ্রুব গতকাল থেকে চুপ ছিলো? কারণ কোনো স্বামীর পক্ষে তার স্ত্রীর মুখে অন্য পুরুষের জন্য ভালোবাসা দেখা সম্ভব নয়। কিন্তু এই ধ্রুব গতকাল থেকে এসব দেখার পরেও চুপ ছিলো। ”

” কি নীলা বীড়বীড় করছো? আকাশ তোমার ভালোবাসা প্রচুর বীড়বীড় করে।”

” আকাশ এসব শুনে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। শুধু নীলার দিকে চেয়ে রইলো। ”

” দাদুভাই এবার তাহলে আমি আসি। আমার প্রয়োজন শেষ। বাকি গল্পটা আপনি তাদের শুনিয়ে দিয়েন। আসি নীলা সুখি হও ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে। অভিনন্দন আকাশ আমি তোমার শত্রু নই। ”

ধ্রুব চলে যায়।

” নীলা আর আকাশ একসঙ্গে বলে উঠে ___

কি হচ্ছে আমাদের সঙ্গে, ধ্রুব যা বললো তা কি সত্যি দাদা/নানুভাই?

” হ্যা সত্যি! ”

রেহেনা, আমজদা,দিলারা,আশফাকুল বিস্মিত চাহনিতে তাদের বাবাকে দেখে।

” আমি একটা পরিকল্পনা করেছি তোমাদের না জানিয়ে। ধ্রুব হলো আমার বন্ধু হাসানুর সরকারের নাতী। ধ্রুব কয়েকদিন আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরছে। আমিয়ো প্লান করে নীলাকে কানাডা থেকে আনি। আমি জানতাম কথার মাধ্যমে তোদের বিয়ে সম্ভব নয়। কারণ আমি আমার ছেলে_মেয়েকে ভালো করে চিনি। এর জন্য একটা নাটক করি। এই নাটকে সঙ্গ দিতে রাজী হয় ধ্রুব। আমি ভেবেছিলাম নীলার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হলে আকাশ / নীলা সবার বিরুদ্ধে গিয়ে এই বিয়ে ভেঙ্গে এক হবে। কিন্তু রেজাল্টস্বরুপ হলো উল্টো টা। আত্মসম্মানের কাছে আকাশ ও নীলা হেরে যায়। কিন্তু একদিকে ভালো হইছে। এটা নাহলে রেহেনা বুঝতো না। ও নীলাকে মেনে নিতোনা। আকাশ উপায় না পেয়ে নীলাকে নিয়ে অন্য জায়গায় যেতো। এদিকে আমি নাত নাতনীর মুখ দেখতে পারতাম না প্রতিদিন। কিন্তু আকাশ যে এরকম করবে আমার ধারণা ছিলো না। আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আকাশ আমাদের মাঝে সুস্থ অবস্থায় আছে। ”

” কিন্তু নানুভাই নীলা যে ধ্রুবকে কবুল বলেছে। কাজী সাহেব বিয়ে পড়ালো। রেজিস্ট্রি হলো এসব তাহলে কি? ”

” এই বিয়েতে কাজী সাহেব থেকে শুরু করে উকিল, ধ্রুবর পরিবার সব কিছু ফেইক ছিলো। ”

” দাদুভাই আমাদের কষ্ট দিয়ে, তুমিতো বড় মাফের অভিনেতা হয়ে গেলা। ”

” আমি এসব না করলে তোরা কি এক হতে পারতি। কি রেহেনা নীলাকে পুত্রবধূ হিসাবে মেনে নিবিনা। ”

” বাবা আমার মেনে নেওয়াতে কি যায় আসে। ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেছে ওদের মতামত হলোই বড়। একবার ভূল করেছি আর না। তবে নীলাকে কথা দিতে হবে। এই বাড়িতে আসার পর আমি নীলাকে যা বলবো তাই করতে হবে? ”

” আমি রাজি ফুপি। তোমার দেওয়া সব কাজ আমার কাছে আমানত। আমি শুধু আকাশের হতে চাই। ”

” নীলা তোমাকে রায়হান হত্যার কেইস রিওপেন করে লড়াই করতে হবে। কারণ আমি জানি রায়হান সড়ক দুর্ঘটনায় মোটেও মারা যায় নাই। শুধুমাত্র কপালে ফেটে রক্ত বের হয়েছিলো। সামান্য ব্লিডিং হওয়ার জন্য কেউ মারা যায়না। সে যদি আমার ভাই হয় তাকে সাজা দিতেই হবে। ”

” নীলা কথা দিয়ে দে মা! এতে যদি তোর ফুপি শান্তি পায় পাক শান্তি। তুইতো তোর বাবাকে চিনিস তোর বাবা কেমন লোক? আমার বোন হয়ে তুই আমাকে এখনো চিনতে পারলি না।?

” আমার তোমাকেই সন্দেহ হয় ভাইয়া। রায়হান হত্যার দোষী সামনে না আসলে আমি মরেও শান্তি পাবোনা। কারণ আমি জানি রায়হানকে কেউ হত্যা করেছে নিখুঁত প্লানের মাধ্যমে। ”

আকাশ এবার বলে উঠলো মা রায়হান কে?

” আকাশ এইটা একটা লম্বা স্টোরি পরে কোনো সময় নীলার কাছে শুনে নিস। এখন তোর রেস্টের প্রয়োজন? ”

” ফুপি কথা দিলাম তোমাকে সব করবো তোমার জন্য। তোমার মেয়ে যদি বেঁচে থাকে তাকেও সামনে নিয়ে আসবো। কিন্তু এসব বিয়ের আগে। আমাকে আমার প্রফেশনে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। ”

” আমজাদ এবার বলে উঠলো রেহেনা কি শুরু করছো তুমি ৩০ বছরের অতীত নিয়ে আবার জলখোলা হোক। তাছাড়া নীলা বাড়ির বউ হবে। বাড়ির বউ কি বিয়ের আগে অফিস করবে? ”

” আশফাকুল বললো আমজাদ রেহেনাকে করতে দাও সব। ও যদি এসব করে সত্যির কাছে যেতে পারে তাহলে ভালো। ”

” নীলা বাড়ির বউ হবেনা আমজাদ আমার মেয়ে হবে। মেয়েকে কখনো নিজ প্রফেশন থেকে আটকে রাখা উচিত নয়। ”

” আকাশ মনে মনে ভাবলো এরা এসব কি বলছে? সবতো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কোন অতীত নিয়ে জল ঘোলা হচ্ছে? মায়ের মেয়ে আছে মানে? সবার সামনে নীলাকে কিছু বলতে পারছিনা। এই বুড়োটাও একটুর জন্য নীলাকে অন্যকারো করে সঙ্গে বিয়ে দিতো। নীলা শুধুই আমার। কিন্তু নীলা এসব তো বিয়ের পর করা যেতো? বিয়ের আগেই অতীত নিয়ে ফোকাসের লড়াই ক্যান করতে হবে। ”

” কি আকাশ মনে মনে কি ভাবছো? নীলার উপর ভরসা রাখো এক্স ফুপার যদি সত্যি হত্যা হয়ে থাকে তা আমি সামনেই আনবো। আমাদের বিয়ের পর আর কোনো বাধা রাখতে চাইনা আমি? ”

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে