দখিনের জানলা পর্ব-১২

0
481

#দখিনের_জানলা (পর্ব-১২)
লেখনীতে– ইনশিয়াহ্ ইসলাম।

২৪.
ডাইনিং টেবিল থেকে একটু পর পরই হা হি করে হাসির আওয়াজ আসছে। আব্রাহাম সেই অ’স’হ্যকর শব্দ না পারতে হজম করছে। ফাঁকে একবার চিনি আব্রাহামকে পাস্তা আর কফি দিয়ে চমচম আর অনামিকার সাথে ডাইনিং এ বসে গল্প করতে চলে গেল। আব্রাহাম ভ্রু কুঁচকে পাস্তার দিকে তাকিয়ে বি’র’ক্তি মুখ করে কফিটা হাতে তুলে নিল। তার ভীষণ রা’গ হচ্ছে। ভীষণ! সে অনামিকাকে নিয়ে এসেছিল চমচম, চিনিকে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার জন্যে। আর তারা কিনা তাকে এখানে বসিয়ে পাস্তা পার্টি করছে! এদিকে তার চমচম বে’য়া’দ’বটাও সেই যে তখন ভেঙচি কে’টে ভেতরে চলে গেছে আর একবারও এ দিকে আসেনি। পাস্তার উপর তার রা’গ লাগছে কারণ পাস্তাটা নাকি চমচম করেছে। চিনি বলল। খাবে না পাস্তা। আব্রাহাম বে’য়া’দ’ব চমচমের বানানো পাস্তা খাবে না। সে থমথমে মুখ করে বসে রইল। তারপর কফিতে চুমুক দিল। হুট করেই মাথায় এলো কফিটাও কি চমচম তৈরি করেছে? সে জোরে ডাক দিল,

-‘চিনি! এই চিনি!’

চিনি অনামিকাকে নিজের নতুন মোবাইলফোনটা দেখাচ্ছিল আর সেটা নিয়েই গল্প করছিল। আব্রাহাম ডাকাতে উঠতে নিলেই অনামিকা বলল,

-‘তুই যাচ্ছিস কেন? চমচম যাক না। তখন থেকে এক জায়গায় থম ধরে বসে আছে। এই চমচম! যা না, একটু গিয়ে দেখে আয় ভাই কেন ডাকছে!’

চমচম উঠতে চাইছিল না। কিন্তু চিনিও চোখ দিয়ে ইশারা করতেই মুখ দিয়ে বি’র’ক্তিতে ‘উফ’ শব্দ করে চমচম বসা থেকে উঠল। ধপাধপ পা ফেলে ড্রয়িং রুমের পর্দার কোণা ধরে দাঁড়িয়ে বলল,

-‘ডাকো কেন?’

আব্রাহামের দৃষ্টি টিভির দিকে ছিল। চমচমের গলা শুনতে পেয়ে পাশ ফিরল। চমচমকে দেখার পর তার মেজাজটা যেন একটু হালকা হলো। দুই তিনবার গলা ঝেরে নিয়ে বলল,

-‘কফিটা কে করেছে?’

-‘আপু করেছে। এটা বলতে ডেকেছ?’

চমচমের এমন চ্যা’টাং চ্যা’টাং জবাবে আব্রাহামের রা’গের পারদ বেড়ে গেল। গর্জে উঠে বলল,

-‘তুই দিন দিন কত বড় অ’ভদ্র হয়ে যাচ্ছিস জানিস?’

-‘জানব না কেন! আমি অ’ভদ্র এটা পাশের বাড়ির ছেলেটার জানার আগে আমার নিজেরই তো জানার কথা।’

-‘খুব কথা শিখেছিস?’

-‘সে তো কবেই শিখেছি। জরুরী কিছু থাকলে বলো! আমি এতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না।’

-‘তো দাঁড়িয়ে থাকতে কি আমি বলেছি তোকে? সোফায় বসে পড়।’

-‘না এখন এখানে বসার শখ নেই।’

আব্রাহামের রা’গটা যেন হুড়মুড়িয়ে বেড়েই যাচ্ছে। সে বলল,

-‘কেন? শখ নেই কেন?’

-‘ধুর! বেশি কথা বলো তুমি।’

আব্রাহাম মুখ ফিরিয়ে নিল। সে বেশি কথা বলে! থাক, আর কোনো কথা-ই বলবে না সে। চুপ করে এক ধ্যানে টিভির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর তার মনে হলো চমচম এখনও দাঁড়িয়ে আছে। সে আবারও পাশ ফিরতেই দেখল চমচমও টিভি দেখছে গভীর মনোযোগ দিয়ে। সে হুট করে চ্যানেলটা বদলে দিতেই চমচম তেঁ’তে উঠে বলল,

-‘সমস্যা কী তোমার! শান্তিতে একটু ক্রিকেট ম্যাচটাও দেখতে দিবে না নাকি?’

ওহ! তারমানে সত্যিই চমচম টিভি দেখেছিল। তার মনে একটু ভালো লাগার উদয় হয়েছিল এই ভেবে যে চমচম হয়তো সে রা’গ করেছে বলে যায়নি। তার রা’গ ভাঙানোরই হয়তো আয়োজন করছিল মনে মনে। কিন্তু সে ভুল! চমচমের জাগতিক আর সকল বিষয় নিয়ে চিন্তা থাকলেও তাকে নিয়েই কোনো চিন্তা নেই। সে আগের চ্যানেলে ফিরে এসে অনামিকাকে ডাক দিল।

-‘অনা? চল বাসায় যাই।’

অনামিকাও ভেতর থেকে জোরে বলল,

-‘তুমি নাহয় চলে যাও। আমি আজ চমচম আর চিনির সাথেই থাকি।’

আব্রাহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। দরজা পর্যন্ত যেতেই চমচম তাকে ডাকল,

-‘এই হাম ভাইয়া!’

আচানক চমচমের ডাক শুনে আব্রাহাম চমকে গেল। পেছন ফিরতেই দেখল চমচম দরজার সামনের পর্দা ছেড়ে একেবারে ড্রয়িংরুমের ভেতরে এসে দাঁড়িয়েছে। আব্রাহাম গম্ভীর মুখ করে বলল,

-‘কী!’

চমচম দোনামোনা করে বলল,

-‘পাস্তা তো খেলে না!’

আব্রাহাম ক্ষো’ভ প্রকাশ করে বলল,

-‘তোর পাস্তা তুই খা।’

-‘আমি তো খেয়েছি। এটা তো তোমার জন্য। একটু খাও না! খেয়ে রিভিউ দাও। আমার না কেউ আমার রান্নার প্রশংসা করলে খুব ভালো লাগে।’

আব্রাহাম ভ্রু কুঁচকে বলল,

-‘তুই জানিস কীভাবে যে প্রশংসা করব? টেস্টটা খা’রা’পও তো হতে পারে!’

-‘না না। খা’রা’প হয়নি। খুব ভালো হয়েছে খেতে। আমি খেয়েছি, আপু খেয়েছে, অনামিকা আপুও খেয়ে বলেছে দারুন হয়েছে।’

-‘তাহলে আর কী! দারুন হয়েছে, প্রশংসা তো করেইছে। আমার আর আলাদা করে প্রশংসা করার দরকার নেই। আমি গেলাম।’

চমচম বলল,

-‘সবাই আমার প্রশংসা করুক আমি এটাই চাই। আমার অনেক শখের মধ্যে একটা শখ হলো রান্না। সেটাতে কেউ প্রশংসা করলে আমি খুশি হই।’

-‘তোর খুশি দিয়ে আমার কি কাজ? যত্তসব!’

-‘বসো, খেয়ে দ্যাখো। খা’রা’প লাগলে নাহয় খেও না। মুখে তো দাও!’

চমচমের গলা করুন শুনালো। আব্রাহাম সেই সরল চাহনির দিকে তাকিয়ে রইল। চমচম নিঃস’ন্দে’হে বোকা। নয়তো কেউ এটা বলে যে প্রশংসা করলে ভালো লাগে। এসব তো একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। জনে জনে বলে বেড়ানোর কি আছে! এখন যদি অন্য কাউকে এই কথা বলত সে নিশ্চয়ই ব্যাড রিভিউ দিয়ে দিত আর তাতে চমচম নিজেই ক’ষ্ট পেত।

আব্রাহাম সোফায় এসে বসল, পাস্তার প্লেটটা হাতে নিয়ে এক চামচ মুখে দিল। না! খেতে অসাধারণ হয়েছে। চমচম রাঁধূনী ভালো। চমচম উৎসাহের সহিত জিজ্ঞেস করল,

-‘কেমন লাগছে খেতে?’

আব্রাহাম এক পলক চমচমের দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনোনিবেশ করে বলল,

-‘হুম ভালোই।’

শুনে চমচমের দিল খুশি হয়ে গেল। সোফায় বসে বলল,

-‘ক্রিম পাস্তায় সসটা ভালো না বানালে খেতে ভালো হয় না। বুঝলে!’

আব্রাহাম খেতে খেতেই মাথা নাড়ল। চমচম আবারও বলল,

-‘পাস্তা খেতে হয় গরম গরম। ঠান্ডা খেলে মজা কম লাগে। এখন তো ঠান্ডা খাচ্ছো। গরম গরম খেলেই বুঝতে কত সুস্বাদু হয়েছে।’

আব্রাহাম আবারও মাথা নাড়ে। চমচম একের পর এক এটা সেটা বলতে থাকে। কথা বলতে ভালোবাসা মানুষগুলো নিজের শ’ত্রুকেও বন্ধুর মতো পাশে বসিয়ে গল্প করতে পছন্দ করে। চমচম তেমনই একজন। একটু আগেও তার কত রা’গ, বি’র’ক্তি ছিল অথচ এখন সেসব কিছুই নেই। বরং নিজ থেকেই গল্প জুড়ে দিয়েছে। দৃশ্যটা এখন এমন লাগছে, অফিস থেকে বাসায় ফেরা স্বামীকে খাবার পরিবেশন করে স্ত্রী তার রাজ্যের গল্প নিয়ে বসেছে। যেন সুন্দর, সুখী দম্পতি!

২৫.
চমচমের এইচএসসির আর কয়েকদিন আছে। টেস্টে চমচমের ইংরেজীতে একটু দুর্বলতা ধরা পড়েছে। চমচম জানে সেটা নিজেরই ভুলে হয়েছে। কিন্তু বাসায় সবাই মানতে নারাজ। তারা ভাবছে গণিতের মতো ইংরেজীও চমচমের বোধগম্য হয় না। তাই বাবা একজন টিউটর খোঁজা শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষার মাত্র এই বিশ, বাইশদিন আগে কোন টিউটর তাকে পড়াতে রাজি হবে? সে বারবার তার বাবা-মাকে বোঝাচ্ছে তারা তার কথা পাত্তাও দিচ্ছে না। চমচম চিনিকে বললে চিনি বলল,

-‘সমস্যা কোথায়? একটা টিউটর পেয়ে গেলে শেষ সময় একটু ঝালাই ফালাই দিয়ে দেখতে পারিস। টুকটাক যা ত্রু’টি আছে সব ঠিক করে নিতে পারবি।’

টিউটর পাওয়া গেল না। সুমন আঙ্কেল শুনে চমচমের বাবাকে বলল,

-‘আরাফাত! তুমি শুধু শুধু এদিক সেদিক টিউটর খুঁজছ কেন? টিউটর তো ঘরেই আছে।’

চমচমের বাবা একটু অবাক হয়ে বললেন,

-‘মানে!’

-‘তুমি মানে বোঝো না! আমাদের সাদ তো টিউশনি করাতো আগে। ছেলেটা ইংরেজীতে দুর্দান্ত। ওর কাছে পড়তে দিতে পারো। নইলে আমি সায়নের সাথেও কথা বলে দেখতে পারি।’

-‘তাদের কেউ কি রাজি হবে?’

-‘আলবৎ হবে। দাঁড়াও সায়নটাকে আগে বলি।’

সায়নকে বলতেই সায়ন জানালো সে পারবে পড়াতে। কিন্তু সে টাকা নিয়ে পড়াবেনা। চমচমকে সে স্নেহ করে। সেই স্নেহ, ভালোবাসা থেকেই পড়াচ্ছে। আরাফাত হোসেন সায়নের এমন আন্তরিকতা দেখে খুব খুশি হলেন। তিনি আব্রাহামকেও বলতে পারতেন কিন্তু এর আগে একবার চমচমকে পড়ানোর জন্য যখন বলেছিল তখন আব্রাহাম সেই প্রস্তাব নাকোচ করে দেয়। তার সেই আচরণে সত্যি বলতে আরাফাত হোসেন ক’ষ্ট পেয়েছিলেন। যতই হোক! বাবার মন তো। কোনো বাবাই তার মেয়েকে নিয়ে তু’চ্ছ তা’চ্ছি’ল্য করা কথা হজম করবে না। তাই এবার আর আব্রাহামের ধারস্থ হন নি।

সায়ন চমচমকে প্রতিদিন পড়াবে বলেছে। আর সময় ঠিক করল মাগরিবের নামাযের পরপরই। চমচমেরও সায়নের কাছে পড়তে আপত্তি ছিল না। সে চিনির কথা সিরিয়াসলি নিয়েছে। যা একটু ত্রু’টি আছে সেগুলো তাকে ঠিক করে নিতে হবে। পরদিন নিয়ম মতো সায়ন পড়াতে এলো। চমচমের রুমে ঢুকে সায়ন বলল,

-‘দরজা জানলা সব বন্ধ করে রাখছস ক্যান! যা গরম পড়ে। খোল খোল!’

চমচম তার বারান্দার গ্লাসটা সরিয়ে দিল। কিন্তু তাতেও সায়নের ভালো লাগছিল না। দম বন্ধকরই লাগছিল পরিবেশটা তার কাছে। সে উঠে গিয়ে চমচমের দখিনের জানলাটা খুলে দিল। আব্রাহাম সেই সময় বারান্দায় বিন ব্যাগে পা ছড়িয়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। চমচমের জানালা খোলার শব্দ পেতেই চট করে সেদিকে তাকালো। সায়নকে জানলার পাশে দেখে তার চোখ গুলো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। সায়ন অন্ধকারে বসে থাকা আব্রাহামকে দেখেনি। জানলা খুলেই সে পড়ার টেবিলে গিয়ে বসল। আব্রাহাম কিছুক্ষণ হতভম্বের মতো তাকিয়ে থেকে চমচমদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ব্যাপার কি জানতেই হবে। সায়ন চমচমের বেডরুমে কি করছে?

সায়নকে দখিনের জানলা খুলতে দেখে চমচম বলল,

-‘ধুর! ওটা খুলতে গেলে কেন?’

-‘কেন? সমস্যা কি!’

-‘আছে সমস্যা।’

-‘বল শুনি!’

চমচমের ভালো লাগছিল না বলতে। সে বলল,

-‘এখন এত কথা বললে পড়ার সময় চলে যাবে। তুমি পড়াও তো!’

-‘বাহ্! পড়ার জন্য পা’গ’ল হয়ে যাচ্ছিস। না, ভালোই। সিরিয়াসনেস থাকা দরকার স্টুডেন্ট লাইফে।’

প্রথমেই ফার্স্ট প্যাপারটা চমচম ধরল। সায়নও চমচম যেটা যেটা বুঝছে না সেটা খুব যত্নের সহিত বুঝিয়ে দিচ্ছিল। এক ফাঁকে চিনি এসে নাস্তা পানি দিয়ে গেল। সায়ন শুধু চোখ তুলে চিনির দিকে তাকিয়ে ছিল কয়েক সেকেন্ড। চিনি চুপচাপ ট্রে রেখে চলে গেল। চিনি চলে যাওয়ার পরই আব্রাহাম এলো। আব্রাহাম একা আসেনি। নিজের মাকে নিয়েই এসেছে। একা আসলে ব্যাপারটা খা’রা’প দেখাতো। তাই তার মাকে ভুজুং ভাজুং বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে। আব্রাহাম এখানে এসে জানতে পারল সায়নের কাছে চমচম পড়বে এখন থেকে। শুনে তার চমচমকে চি’বি’য়ে খেতে ইচ্ছে করছিল। আব্রাহাম তো এখন চলেই এসেছে একেবারে। তার ব্যস্ততাও নেই। চমচম কি পারত না তার কাছে পড়তে? সায়নকেই টে’নে আনতে হলো! আব্রাহামের চমচমের উপরই সব রা’গ গিয়ে পড়ল। ইচ্ছে করছিল বে’য়া’দ’বটার গালে ঠা’স ঠা’স করে দুই তিনটা চ’ড়, থা’প্প’ড় লাগিয়ে দিতে।

সে রুমের সামনে এসে যখন দেখল খুব মনোযোগ দিয়ে চমচম পড়া বুঝে নিচ্ছে আর সায়ন তাকে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে তখন সে আ’হ’ত মন নিয়েই ফিরে গেল। সোজা বাসা থেকেই বের হয়ে গেল। তার নিজের উপরই রা’গ হচ্ছে এখন। অহেতুক কেন চমচমকে নিয়ে এত ভাবছে? এসব কোন ধরনের অনুভূতি? কোথায়! এতবছরেও তো এসব অনুভূতি অনুভব হয়নি। আর সেদিনের চু’মু ঘটিত ব্যাপারের পর থেকেই এসব হচ্ছে। আগের সব কিছু যেন বদলে যাচ্ছে। তার অ’স্থি’র অ’স্থি’র লাগছে। না না! চমচমকে নিয়ে এসব ভাবা বা চমচমের জীবনে এভাবে হ’স্ত’ক্ষে’প করা তার ঠিক হচ্ছে না। স্কলারশিপটা পেয়ে গেলেই সে সোজা দেশ ছাড়বে। তারপর আর এসব মাথায় আসবেও না। তাকে ভূ’তে ধরেছে তাই শেষমেষ কিনা চমচমকে নিয়ে আজেবা’জে অনুভব করছে!

#চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে