তোমার জন্য সাইকো পর্ব-১৯

0
2134

তোমার জন্য সাইকো
লেখক: নুসরাত জাহান অংকুর
পার্ট_১৯
২দিন পর

এই ২দিন মুন সেন্সলেস ছিল। অতিরিক্ত শকড পাওয়ার জন্য সেন্স হারায়।
মুনের যখন সেন্স ফিরলো মুন নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো।
পিট পিট করে তাকিয়ে দেখে রাইমা চৌধুরী বসে আসে মুন মামনির দিকে উঠে বসে।
মুন কে উঠতে দেখে রাইমা চৌধুরী বলে
রাইমা: একি তুই উঠছিস কেনো তোর শরীর ভালো না
মুন: মামনি রোদ ( কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে অনেক কষ্টে বললো)
রাইমা :…….
মুন: কি হলো মামনি বলো
রাইমা:….
মুন: তুমি বলছো না কেনো
তখনই রোদের বডিগার্ড আসে।
মুন রোদের বডিগার্ড কে দেখে বলে
মুন: আপনার স্যার কোথায় ?
রাইমা চৌধুরী চোখের ইশারায় না করে সেটা মুনের চোখ এড়ালো না
মুন: কেউ কি আমাকে বলবে রোদ কোথায়? ও কি আমার সাথে লুকুচুরি খেলছে আমার কিন্ত ভালো লাগছে না।
মুন অস্থির হয়ে পরলো।
রাইমা: মুন একটু শান্ত হো মা আমার এক ছেলেকে তো হারিয়েছি তোকে হারাতে চাইনা( কান্না করে)
মুন: এক ছেলেকে হারিয়েছ মানে?( অবাগ হয়ে)
রাইমা…
মুন: তোমরা কি কেউ আমায় বলবে ( চিৎকার করে)
সবাই….
মুন পাগলামি করছে দেখে রাইমা চৌধুরী বললো
রাইমা: তুই একটু শান্ত হো
মুন যেনো শুনতে পাচ্ছে না
রাইমা: রোদ আর নেই রোদ মারা গেছে( চিৎকার করে)
মুনের যেনো সব কিছু ঝাফসা লাগছে।
মুন: কিইই বলল ছো আআআআমমর রোদের কীইইছুই হতে পারে না ( কথা আটকে যাচ্ছে )
রাইমা: হা এটাই সত্যি রোদ আর নেই রোদের গাড়ি পাহাড় থেকে পরে গেছে( কান্না করে)
মুন তো ধপ করে বসে পরলো ওর মুখ দিয়ে যেনো কোনো কথা বের হচ্ছে না ।
রাইমা: মুন নিজেকে ঠিক কর
মুনের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না ।
রাইমা: মুন
মুন: আমি একা থাকতে চাই
রাইমা: কিন্ত
মুন: প্লিজ ( চিৎকার করে)
সবাই ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।

১মাস পর
এই ১মাসে অনেক কিছু বদলে গেছে সবার জিবনে। মুন এই ১মাসে ঘর থেকে একবারের জন্য বের হইনি। সারাক্ষণ রোদের ছবি বুকে নিয়ে কাদে খাওয়া দাওয়া ও বন্ধ করে দেছে।
মাঝে মাঝে মুন কাদতে কাদতে সেন্স হারায় । না খাওয়ার জন্য শরীর দুর্বল হয়ে পরে।রাইমা চৌধুরী ও আগের মত তেমন কথা বলে না সব কাজ এখন সার্ভ মেন্ট করে রাইমা চৌধুরী দিনে একবার মুনের ঘরে গিয়ে ওকে খাওয়ানোর চেষ্টা করে কিন্ত লাভ হয়না।
নিহাল চৌধুরী সারাদিন অফিস এ থাকে উনার শরীর ও তেমন ভালো না কিন্ত কিছু করার নেই। উনি এখন আর বাড়ি খায় না। লামিয়া আর রুমা মাঝে মাঝে এসে দেখে যায় মুনকে।রোদ দের বাড়িতে এখন রোদের মামা মামী, মামার ছেলে নাহিদ আর মেয়ে তানিশা থাকে।
রোদের চলে যাওয়ার পর ওরা এখানে এসে থাকে ।
সব চলছে কিন্ত মুন থেমে আছে ।

মুন রোদের ছবি আকরে কাদচে আর বলছে ।
মুন: কেনো চলে গেলেন আমাকে ছেড়ে আপনি না বলতেন কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না তাহলে কেনো গেলেন খুব খারাপ আপনি প্লিজ একবার ফিরে আসুন আর কখনো আপনার কথার অবাধ্য হবো না প্লিজ ( কাদতে কাদতে)
তখনই রাইমা চৌধুরী আসলেন
রাইমা: মুন এই দেখ তোর বান্ধবী আসছে।
মুন কিছু বলে না শুধু রোদের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে।
রাইমা কিছু বলতে কবে লামিয়া আটকিয়ে দেয়।
রাইমা চৌধুরী কাদতে কাদতে চলে যায়।
লামিয়া: মুন কিছু খেয়ে নে একটু কিছু খা প্লিজ।
মুন চুপ করে আছে।
রুমা: মুন এভাবে আর কত দিন থাকবি রোদ ভাইয়া যদি তোকে এভাবে দেখে তাহলে উনি কত কষ্ট পাবে রোদ তো বেচে আছে তোর মধ্যে আমাদের সবার মধ্যে তুই যদি এমন করিস তাহলে তো তুই রোদ ভাইয়া কে কষ্ট দিচ্ছিস ।
রোদ ভাইয়া তো তোর হাসির মধ্যে বেচে আছে তোর জিবনে বেচে আছে তুই কেমন ভালবাসিস যে রোদ ভাইয়া কে কষ্ট দিচ্ছিস আসলে রোদ ভাইয়া সেদিন মারা যায়নি মারা যাচ্ছে ।
মুন: তোরা চলে যা।আমার রোদ মরে নি। আমার উপর রাগ করে দূরে আছে
লামিয়া: মুন প্লিজ কিছু খেয়ে নে আর কত দিন এভাবে থাকবি।
মুন: তোরা কি যাবি ( রেগে)
লামিয়া আর রুমা কিছু না বলে চলে গেলো।

মুন: আমি কেনো কাদছি কেনো কষ্ট পাচ্ছি আপনি তো কোথাও যাননি শুধু আমার উপর রাগ করে একটু দূরে আছে আমি জানি আপনর কিছু হয়নী আপনর কিছু হতে পারে না। আপনি আছেন আমি জানি । আমি এভাবে আছি বলে কি আপনি আসছেন না প্লিজ ফিরে আসুন তাড়াতাড়ি আমি আর কাদব না। আপনি যা লাইক করেন না টা আমি কখনো করবো না আর না আমি আপনার সব কথা শুনবো।
এসব নিজে নিজে বলে মুন রোদের ছবি বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।

আফজাল হোসেন: দুলাভাই আপনি আর কত সামলাবেন রোদ ও তো এখন আর নেই এখন আমাদের মধ্যে শুধু নাহিদ আছে ওকে অফিসের কাজে বসিয়ে দেন মনে করে ও রোদ( রোদের মামা)
নিহাল চৌধুরী কিছু বললো না ।
আফজাল হোসেন: দুলাভাই মন খারাপ করেন কেনো এক ছেলে গেছে তো কি হয়েছে আরেক ছেলে তো আছে । আমরা সবাই আছি আপনার পাসে আমরা মিলে এই সব সামলাবো।
নিহাল: আমরা এই সব নিয়ে অন্য সময় কথা বলি এখন আমার কিছু ভালো লাগছে না।
বলে চলে গেলো।
আফজাল হোসেন কিছুক্ষণ বসে উনি ও চলে যায়।

সকালে মুন ঘুম থেকে উঠে ফ্রশ হয়। রেডী হয়ে নিচে নামে ।
মুনকে দেখে সবাই অবাগ
রাইমা: মুন মা কিছু লাগবে কোথায় যাচ্ছিস?
মুন: মামনি আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি।
রাইমা: সত্যি তুই আগের মত হয়ে যা তোকে নিয়ে তো আমরা বেচে আছি।( চোখের পানি ফেলে)
মুন: হা মামনি সব আগের মত হয়ে যাবে ।আমি এখন যাচ্ছি।
বলে মুন চলে গেলো।
রাইমা চৌধুরী ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে উপরে চলে গেলেন।

মুন নিজের স্কুটি নিয়ে ভার্সিটিতে চলে গেলো সেখানে গিয়ে সে তার বান্ধবীদের কাছে যায়।
সবাই তো মুনকে দেখে খুব খুশি ।
লামিয়া রুমা তো খুশির জন্য মুনকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলে।
সবাই মিলে ক্লাস করতে যায়।
ক্লাস শেষে মুন বাইরে এসে যেই বের হতে যাবে ওমনি ওর সামনে আরুশ এসে দাড়ায়।
আরুশ: কেমন আছো মুন?
মুন: জী ভালো থাকার তো কথা
আরুশ: হা ভালো থাকলে তো আমি ও ভালো। টা এখন কি বাড়ি যাচ্ছাও?
মুন: হুম বাই
আরুশ: মুন পুরনো সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করো। তাকিয়ে দেখো সবাই তোমার নতুন লাইফ এর জন্য wait করছে।
মুন: হুম
আরুশ: আমি কিন্ত এখন ও তোমায় আগের মত ভালোবাসি।
মুন কিছু না বলে চলে গেলো।
আরুশ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

মুন বাড়ি এসে সোজা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রোদের ছবির সামনে দাঁড়ায়।
মুন: দেখছেন আমি আপনার সব কথা শুনছি এখন তো আপনি ফিরে আসুন। এখন ও কি রেগে আছেন আমার উপর আমি
আর কিছু বলতে পারলো না নিহাল চৌধুরী ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
নিহাল: মারে এবার তো নিজেকে ঠিক কর নতুন করে শরু কর।
মুন: হা পাপাই
নিহাল: তোর সুখে আমরা সুখী।
মুন: জানি পাপাই তুমি কি খেয়েছো?
নিহাল: তুই খায়ছিস?
মুন: না আচ্ছা চলো। এক সাথে খাই
এই বলে নিহাল কে কিছু বলতে না দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।
খাওয়া শেষ করে মুন নিজের ঘরে রোদের ছবি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে।

মাঝ রাতে মুনের মনে হচ্ছে কেউ ওকে খুব ভালো করে দেখছে।
শীতের রাতে মুনের চোখ খুলতে নারাজ।
অনকে কষ্টে চোখ খুলে দেখে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে