তুমি ছিলে বলেই ২ পর্ব-১০

0
111

#তুমি_ছিলে_বলেই২
#পর্বঃ১০
#দিশা_মনি

দীপ্র বসে বসে অফিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিল। এমন সময় তার পাশে এসে বসে নিপুণ। দীপ্র কাজে ব্যস্ত থাকায় তার উপস্থিতি টের পায় না। নিপুণ একটা সময় পর বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যায়। নিজের উপস্থিতি বোঝানোর জন্য হালকা কাশি দেয়। যা শুনে দীপ্রর নজর যায় নিপুণের দিকে। নিপুণকে দেখে দীপ্র ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। অবাক হয়ে বলে,
‘তুই কখন এলি?’

নিপুণ হাপিত্যেশ করে বলে,
‘অনেক আগেই এসেছি। কিন্তু তুমি তো নিজের কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিলে যে আমার দিকে খেয়ালই ছিল না।’

‘সরি নিপুণ, আসলে আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছিলাম। এটা আমার ড্রিম প্রজেক্ট। গ্রাম্য এলাকায় আমাদের কোম্পানি নতুন একটা কারখানা খুলব খুব শীঘ্রই। যার দরুণ গ্রামের অনেক বেকার তরুণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। কত মানুষের উপকার হবে এই প্রজেক্টে।’

নিপুণ এসব শুনে খুব খুশি হয়। বলে,
‘শুনে ভালো লাগল। তো এই প্রজেক্ট কবে শুরু হবে?’

‘মাস খানেকের মধ্যেই শুরু হবে। আর পরশু আমি গ্রামে যাচ্ছি এই প্রজেক্টের কাজ কতদূর এগোলো সেটা দেখতে।’

নিপুণের মন এবার একটু খারাপ হয়ে যায় কারণ পরশুদিনের পরের দিনই তাদের এনগেজমেন্ট। তাই নিপুণ বলে,
‘তোমার গ্রামে যাওয়ার ডেট একটু পিছিয়ে নিলে হয়না? আমাদের এনগেজমেন্টের পর নাহয়..’

‘নাহ, নিপুণ। এমনিতেই এই প্রজেক্ট অনেক দিন ধরে পড়ে আছে। তাই আমি আর দেরি করতে চাই না। আর এমনিতেও সামনে কিছুদিন আমার অনেক ব্যস্ত সিডিউল আছে। আমি আর সময় পাবো না।’

নিপুণ ব্যাপারটা বুঝতে পারে। তাই সে আর মন খারাপ করে থাকে না। এরমধ্যে তার ফোনে একটি ম্যাসেজ আসে। নিপুণ ম্যাসেজটা চেক করে দেখে এডভোকেট ইসমাইল হোসেন তাকে ম্যাসেজ দিয়েছে। তিনি তাকে যত দ্রুত সম্ভব কোর্টে পৌঁছাতে বলেছেন একটা জরুরি কাজে। নিপুণ দীপ্রর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আমাকে এখনই কোর্টে যেতে হবে। ইসমাইল স্যার আমাকে জরুরি তলব করেছেন।’

‘আচ্ছা, যা। সাবধানে যাস।’

~~~~~
নিপুণ কোর্টে পৌঁছে গেছে। এখানে এসে সে অনেক অবাক হয়ে গেছে। কারণ ইসমাইল হোসেন তাকে এখানে ডেকে অনেক পুরাতন একটি কেসের ফাইল চেক করতে দিয়েছেন। নিপুণ ফাইলটা একনজর দেখে বলে,
‘স্যার, এটা তো ৮ বছর আগের একটা কেইস। আপনি আমাকে এই ফাইল কেন দিলেন?’

‘তোমাকে এই কেসটা স্টাডি করতে হবে নিপুণ।’

‘ঠিক বুঝলাম না।’

‘আজ থেকে ৮ বছর আগে একজন ব্যবসায়ীকে সস্ত্রীক মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তাদের বাড়িতে। আর তাদের খু**নের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাদেরই আপন পুত্রকে।’

নিপুণ হতবাক হয়ে যায় এই কথা শুনে। সে বলে ওঠে,
‘একজন সন্তান কতটা নিষ্ঠুর আর অমানুষ হলে তার মা বাবাকে এভাবে খু**ন করতে পারে।’

ইসমাইল হোসেন একটা ফাইল দেখতে দেখতে বলেন,
‘এই কেসটা এতটাও সহজ নয় নিপুণ। কেসটা বেশ জটিল। সেই সময় ছেলেটা দোষী সাব্যস্ত হলেও আজ ৮ বছর পর নতুন তথ্য সামনে এসেছে।’

‘নতুন তথ্য?’

‘জ্বি, আর যতদূর জানা যাচ্ছে এই খু**নের পেছনে তাদের ছেলের কোন হাত নেই। বরঞ্চ তাদের কোম্পানির ম্যানেজার রয়েছে এর পেছনে। তবে আমার মনে হয় তাদের কোম্পানির ম্যানেজার নিজে থেকে এসব করেনি। বরঞ্চ অন্য কেউ তাদের দিয়ে এই কাজ করিয়েছে।’

‘তাহলে তো সেই ম্যানেজারকে জেরা করা উচিৎ।’

‘সেটা আর সম্ভব নয়। কারণ সেই ম্যানেজার কিছুদিন আগে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে। আর এতে আমার সন্দেহ আরো বেশি গাঢ় হয়েছে যে আসল কালপ্রিট অন্য কেউ।’

নিপুণ বুঝতে পারে ব্যাপারটা আসলেই অনেক জটিল। সে ইসমাইল হোসেনকে প্রশ্ন করে,
‘তাহলে স্যার এখন আপনি কি করবেন?’

‘সেটাই ভাবছি। নতুন করে এই কেসের দায়িত্ব আমার কাধে এসে পড়েছে। আমার এসিট্যান্ট হিসেবে তোমাকেও আমার পাশে চাই। আমি জানি তুমি খুব ট্যালেন্ডেড তাই তুমি আমার পাশে থাকলে আমি এই কেসের সমাধান করতে পারব।’

‘জ্বি, স্যার। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’

‘ঠিক আছে। তুমি তৈরি হয়ে নাও।’

‘আমাদের কি কোথাও যেতে হবে স্যার?’

‘হ্যাঁ, আমাদের জেলে যেতে হবে।’

~~~
জেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ইসমাইল হোসেন এবং নিপুণ। তারা দুজনেই কারো আগমনের জন্য অপেক্ষা করছিল।

আজ সুদীর্ঘ ৮ বছর পর জেল থেকে মুক্তি পেল রুদ্র চৌধুরী। জেলের বাইরে এসে অনেকদিন পর প্রাণভরে বাইরের খোলা খাওয়া উপভোগ করল। দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলো একটা। তারপর নিজের দুচোখ বন্ধ করে নিল। মনে করল ৮ বছর আগের সেই অন্ধকার রাতের কথা। তার চোয়াল শক্ত হলো। নিজের মা-বাবার রক্তাক্ত দেহের কথা মনে পড়লো। মনে পড়ল তাদের বাঁচার আকুতি, আর্তনাদের কথা। আর মনে পড়লো কিছু নরপিশাচদের শয়তানী হাসির কথা। রুদ্র চৌধুরী যেন জেল থেকে বের হতেই নিয়ে নিলো প্রতিশোধের শপথ। তার মা-বাবার প্রতি হওয়া নৃশংসতা, তার জীবনে নষ্ট হয়ে যাওয়া ৮ বছর সবকিছুর হিসাব সে নিয়েই ছাড়বে।

ত্রস্ত পায়ে সামনে এগোয় রুদ্র চৌধুরী। কিছুদূর সামনে এগোতেই ইসমাইল হোসেন তার সম্মুখে এসে বলে,
‘তুমিই তাহলে রুদ্র চৌধুরী? রুবেল চৌধুরী আর প্রজ্ঞা চৌধুরীর ছেলে?’

রুদ্র চোখ তুলে তাকালো ইসমাইল হোসেনের দিকে। তাকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করল। কিন্তু কিছু বললো না।

এইদিকে নিপুণ ভালো করে দেখতে লাগল রুদ্র চৌধুরীর দিকে। ধবধবে ফর্সা দেহ, সুঠাম শরীর। দেখে বোঝাই যাচ্ছে যথেষ্ট সুদর্শন সে। তবে নিপুণের চোখ আটকে যায় রুদ্র চৌধুরীর চোখের নিচে থাকা কা’টা দাগে। সে বুঝতে পারে না এই দাগ কিভাবে হলো।সাথে নজর এড়ালো না মুখভর্তি লম্বা দাড়ি। ৮ বছর জেলে থাকায় হয়তোবা অযত্নে বেড়ে উঠেছে এই দাড়ি। রুদ্র চৌধুরী ইসমাইল হোসেনকে কোন রূপ পাত্তা না দিয়েই সামনে এগোতে লাগল। ইসমাইল হোসেন বারকয়েক তাকে থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। রুদ্র চৌধুরীর এমন আচরণে নিপুণও ভড়কে গেল। বিড়বিড় করে বলল,
‘এত এটিটিউড কেন লোকটার? নিজের মা-বাবার খু***নিকে ধরার জন্য তো ওনাকে আমাদের সাথে কো অপারেট করতেই হবে। সেটা কি উনি বুঝতে পারছেন না?’

ইসমাইল হোসেন রুদ্রর পেছন পেছন গেলে নিপুণও তার সাথে যায়। রুদ্র চৌধুরীর জন্য বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল তার চাচা। মিডিয়ার লোকজনও এসে ঘিরে ধরল তাকে। রুদ্র চৌধুরীর চাচা তাকে মিডিয়ার লোকের থেকে বাচিয়ে নিয়ে গেল। এসবকিছুই দেখল নিপুণ। ইসমাইল হোসেন নিপুণকে বলল,
‘যে করেই হোক রুদ্র চৌধুরীর সাথে আমাদের কথা বলতেই হবে। উনি ছাড়া এই কেসে আমাদের কেউ সাহায্য করতে পারবে না।’

নিপুণ বলল,
‘আপনি চিন্তা করবেন না স্যার। আমরা সফল হবোই।’

~~~~~~
স্নেহা আজ অফিসে এসেছে একটু লেট করেই। আর এতেই দীপ্রর ম্যানেজার তাকে নানান কথা শোনালো। স্নেহা তাকে সরি বলে কোনরকমে ব্যাপারটা ম্যানেজ করল। অতঃপর দীপ্রর কেবিনে গেল। দীপ্র খুব একটা রিয়্যাক্ট করল না। শুধু পরের দিন থেকে দ্রুত আসতে বলল। কিছুক্ষণ পর দীপ্র নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
‘আগামীকাল তোমাকে আমার সাথে গ্রামের দিকে যেতে হবে। আমার একটা প্রজেক্টের জন্য ওখানে যাব।’

স্নেহা বলল,
‘জ্বি স্যার।’

অতঃপর সে কিছু একটা ভেবে হাসলো। তার এই হাসির পেছনে লুকিয়ে থাকা রহস্যটা দীপ্র বুঝল না। সে নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকল। স্নেহা মনে মনে বলল,
‘আগামীকাল খুব বড় একটা ধামাকা হবে। যা চৌধুরীদের ভীত আরো একবার নাড়িয়ে দেবে।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে