গল্প:-#তুমি চাইলে যেতে পারো (পর্ব:-০৫+০৬)
লিখা:- AL Mohammad Sourav
।
অানো’কে যদি তুই নিজের বাচ্চা বলে মেনে নিস তাহলে তোর প্রথম স্ত্রী সাহানাকে পরকীয়ার অভিযোগে ডির্ভোস দিতে গেলি কেনো? আনো যদি সত্যিই তোর মেয়ে হয়ে থাকে তাহলে সাহানা কোনো অপরাধ করেনি বরং তুই মিথ্যা পরকীয়ার অভিযোগ সাহানার উপর দিয়ে ওকে ডির্ভোস দিয়েছিস। তোর এই মিথ্যা অভিযোগের জন্য এখন ঝিনুকের স্বামীর ঘর ছাড়ার উপক্রম হচ্ছে। কেনো করলি আমাদের সাথে এতসব কিছু? কথা গুলি আলের বাবা বলেছে। আল কিছুটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে।
আল:- আমার মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় তোমরা আমার বাবা মা তো? নাকী রাস্থা থেকে আমাকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছো! যে জন্য আমাকে সবসময় এতটা অবহেলা করে আসছো! যে সাহানা আমার জীবনটা একদম নষ্ট করে দিয়েছে আজ তোমরা সবাই তার হয়ে কথা বলছো সত্যি বলতে আমার মনে হয় সবকিছুর পিছনে তোমাদের সবার হাত আছে। আলের কথা শুনে বাড়ীর সবাই থমকে যায় ঠিক তখনি ওর মা ঠাস করে ওকে দুইটা থাপ্পড় দিয়েছে তখনি আলের দাদী ওর মাকে ডেকে উঠেছে বৌমা কি করছো? তখনি আলের মা বলে বলে।
মা:- ছিঃ আমার ভাবতে অবাক লাগে আমি তোকে জন্ম দিয়েছি আমি তোর মা। আমরা সবাই যা বলি সবকিছু তোর বিরুদ্ধে বলি তাইনা? যে তুই কোনোদিন তোর বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহোস হয়নি আর আজ সে তুই তোর বাবার মুখে মুখে তর্ক করিস। তখনি আরিফ বলে।
আরিফ:- আজ বুঝতে পারলাম সবকিছুর জন্য তুই নিজেই দায়। তোর জন্য আমাদের গোচানো সংসারটা নষ্ট হয়ে গেছে। সমাজে তোর জন্য আমরা মুখ দেখাতে পারি না। সাহানা আবার আমাদের নামে মালমা করবে বলে হুমকি দিচ্ছে কেনো করছিস এসব!
ঝিনুক:- আমার জীবনটা তো তুই এক প্রকার নষ্ট করে দিয়েছিলি। আমি অনেক কষ্টে সবকিছু ম্যানেজ করেছি। এখন তুই যদি আনো’কে নিজের মেয়ে বলে দাবী করিস তাহলে আবার আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।
দাদী:- আল তুই না আমার সবকথা শুনিস তাহলে ভাই তুই আনো’কে ওর মায়ের কাছে দিয়ে আয়। যে মেয়েটাকে নতুন করে বিয়ে করেছিস তাঁর সাথে সুন্দর ভাবে সংসার কর।
বাবা:- হ্যা আল যা হয়ছে সবকিছু ভুলে গিয়ে সুন্দর করে সংসার কর। সাহানা যে টাকা দাবী করছে ওকে আমরা সেই পরিমান টাকা দিয়ে দিবো। আমি তোর উকিল আংকেলর সাথে এই ব্যাপারে নিজে কথা বলবো। এক এক করে সবাই আলকে বলছে আনো’কে দিয়ে দিতে তখনি আল বলে।
আল:- আচ্ছা আনো যদি আমার মেয়ে হয় তাহলে তো তোমাদের কারো কোনো সমস্যা হবে না। তখন সবাই চুপচাপ হয়ে আছে। তখনি আল ওদের কাজের মেয়ে লতাকে ডাক দিয়ে বলে। লতা তোর কাছে যে ভাইয়া একটা ফাইল দিয়েছিলাম যত্ন করে রাখতি সে ফাইলটা কোথায়?
লতা:- সেইটা আমার কাছে আছে।
আল:- যা সেই ফাইলটা নিয়ে আয়। লতা গিয়ে ফাইলটা এনেছে সবাই দাঁড়িয়ে আছে তখনি আল বলে। এই যে দেখুন হাসপাতালের রিপুট আনো আমার মেয়ে। আমি জানতাম আপনারা সবাই আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। তাই আমি হাসপাতালে গিয়ে আনো’র আর আমার দুজনের ডি এন টেষ্ট করিয়েছি। আর সেখানে স্পষ্ট লিখা আছে আনো আমার মেয়ে। ফাইলটা সবাই দেখতেছে তখন আল বলে। এবার তো আর কোনো সন্দেহ নেই আনো যে আমার মেয়ে! সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে তখনি কলিং বেলর আওয়াজ হয়। কি হলো সবাই এখন চুপচাপ কেনো? তখনি একজন বলে।
অফিসার আসুন এই যে এই লোকটা আমার মেয়েকে দশদিন যাবৎ কিডন্যাপ করে আটকিয়ে রেখেছে। তখন সবাই তাকিয়ে দেখে সাহানা ওর বাবাকে আর দুইজন পুলিশ সাথে নিয়ে এসেছে। আর সাহানা আলেকে দেখিয়ে দিচ্ছে আঙুল দিয়ে পুলিশকে। তখনি আনো সাহানাকে দেখে বলে।
আনো:- মামুনি মামুনি বলে ডেকে উঠে। সিমি আনো’কে কোলের উপরে রাখছে। নিচে নামতে দেয়নি তখনি আল ইশারা করেছে আনোকে এখান থেকে নিয়ে যেতে। তখন পুলিশ বলে।
পুলিশ:- মিষ্টার আল সাহেব ওনি আপনার বিরুদ্ধে ওনার মেয়ে আনো’কে কিডন্যাপ করার দায়ে মামলা করেছে। আমাদের চোখের সামনে ওনার মেয়ে আনো আপনাদের বাড়ীতে আছে। যেহেতু আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে সেহেতু আপনাকে আমাদের সাথে এখুনি থানায় যেতে হবে। আর ওনার মেয়েকে ওনার কাছে দিয়ে দেন। (তখন আর সিমি আনো’কে নিয়ে যায়নি এখানে দাঁড়িয়ে গেলো)
আল:- অফিসার আপনাকে ভুল অভিযোগ করা হয়ছে। আনো আমার মেয়ে আমি ওকে কোনো কিডন্যাপ করিনি। ও নিজে থেকে আমার সাথে এসেছে।
সাহানা:- অফিসার ও মিথ্যা বলছে আনো ওর মেয়ে নয়। ও আমার মেয়ে আর ওর বাবার নাম হচ্ছে ফয়সাল আহমেদ। তখনি আল একটা হাঁসি দিয়ে বলে।
আল:- এখন থেকে মুখে কোনো কথা হবে না। সব কথা হবে প্রমাণ সহ আর কাগজে কলমে। অফিসার এই যে আমার আর আনো’র ডি এন টেষ্টের রিপুট। পুলিশ রিপুটটা হাতে দেখে সত্যি আনোর বাবার জায়গা আলের নাম লিখা। পুলিশ সাহানার দিকে তাকিয়ে বলে।
অফিসার:- দেখুন মিস সাহানা রিপুট অনুযায়ী আনো ওনার মেয়ে। আর আপনি বলছেন আনো’র বাবা অন্য কেউ। আপনাদের সমস্যা সমাধান করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আপনারে দুজনে আদালতে যান সেখানে থেকে আপনাদের সমস্যা সমাধান করুন। তখনি সাহানার বাবা হায়দার সাহেব বলে।
হায়দার সাহেব:- অফিসার এমন ভুয়া রিপুট ডর্জন খানেক তৈরি করা যায়। আপনি ওর দেওয়া রিপুটের উপর বৃত্তি করে বলতে পারেন না। আমার নাতনীর বাবা আল ইসলাম। একজন মা যখন বলেছে ওর বাবা অন্য কেউ তাহলে আপনি সেটা বিশ্বাস না করে একটা কাগজের উপর বিশ্বাস করছেন! আপনি কি জানেন না এক মাত্র একজন মা বলতে পারে তার সন্তানের বাবা কে!
সাহানা:- দেখুন অফিসার আমি বলছি ও হাসপাতালে টাকা দিয়ে মিথ্যা রিপুট তৈরি করেছে। আপনি এসব রিপুট বিশ্বাস করবেন না। আপনি ওকে এখুনি হাত কড়া পড়িয়ে থানায় নিয়ে গিয়ে দু চারটা দিলে সবকিছু সিকার করবে।
আল:- ছিঃ সাহানা তোমার লজ্জা করে না এত বড় মিথ্যা কথা বলতে? আমি এর প্রতিটা জবাব তোমাকে দিবো। তুমি যা ভাবছো তাঁর বিন্দু পরিমান কিছুই হবে না। আমি এতদিন চুপচাপ ছিলাম কিন্তু আর থাকবো না। আমি তোমার সব কুকৃর্তি ফাস করে দিবো।
সাহানা:- তুমি কি ফাস করবে আমি তো শুধু বাড়ীর সবার কাছে বলেছি। এখন তো আদালতে সবার সামনে বলে দিবো। তখন তো তুমি আর জীবনে বিয়ে করতে পারবে না। তখনি আল হেসে বলে।
আল:- তোমার মিথ্যা অপবাদ আমার জীবনে কিছুই আসবে না। তখন সিমিকে দেখিয়ে বলে। এই যে আমার স্ত্রী সিমি রহমান দেখতে শুনতে তোমার থেকে কোনো অংশে কম মনে হচ্ছে না বরঞ্চ তোমার থেকে একটু অর্ফা আর লম্বা আছে। সিমিকে দেখে সাহানা অবাক হয়ে যায় আর বলে। (এতক্ষণ সাহানা সিমিকে খেয়াল করেনি আলের কথায় সিমির দিকে তাকিয়ে সাহানা বলে)
সাহানা:- মেয়েটা তোমার সম্পর্কে সবকিছু জেনে বিয়ে করছে নাকী আমার মত টাকা আর সুন্দর চেহারা দেখে বিয়ে করেছে? তখনি পুলিশ অফিসার বলে উঠে।
অফিসার:- দেখুন আমি বুঝতে পারছি আপনাদের সমস্যা অনেক জটিল। আমি বলিকি আপনারা দুজনে আগামীকাল সকাল দশটায় থানায় আসুন। সেখান থেকে আমি নিজে আপনাদের দুজনের সমস্যাটা কোর্টে পাঠাবো।
হায়দার সাহেব:- অফিসার আপনাকে আমরা যে কাজের জন্য এনেছি সেই কাজটা আপনি করুন। আপনি এখুনি আলকে থানায় নিয়ে চলুন। আদালতে আমরা যাবো কি যাবো না সেইটা আমাদের একান্ত ব্যাক্তিগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিবো। আপনি হাতে নাতে প্রমাণ পয়েছেন এখন আপনি ওকে থানায় নিয়ে যান। একটা কাগজের রিপুটে কখনো সত্যিকারের বাবা হয় না। আমার মেয়ে যা বলছে সেইটা ঠিক।
(এতক্ষণ আলের বাড়ীর সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে কথা গুলি শুনছে। সাহানার বাবার কথা শুনে আলের দাদী বলে)
দাদী:- হায়দার সাহেব আপনি এসব কি বলছেন? আমার নাতীর সাথে আপনার মেয়ে তো পাঁচ বছর সংসার করেছে। এমন হতে পারে সাহানা নিজেই সবকিছু মিথ্যা বলছে। দেখুন অফিসার আলের মেয়েকে আমরা কোথাও দিবো না। আপনাকে আমরা প্রমাণ দেখিয়েছি যদি ওরা সেই প্রমাণ না মানে তাহলে ওনাদের বলেন আদালতে মামলে দায়ের করতে। (এর মাঝে আল অফিসারকে তাঁর মোবাইলটা হাতে দিয়ে বলে)
আল:- নেন অফিসার একটু কথা বলুন। আমি যে ডাক্তার কাছে ডি এন টেষ্ট করিয়েছি ওনার সাথে একটু কথা বলুন। অফিসার মোবাইলটা হাতে নিয়ে কথা বলছে শুধু তিনবার ওকে বলে ফোনটা কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলে।
অফিসার:- দেখুন মিস সাহানা এখানে আমাদের সামনে রিপুট আছে। আর তাছাড়া ওনার ডাক্তার চ্যালেঞ্জ করেছে বাচ্চাটা ওনার। যদি কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে আপনাকে আদালতে যেতে বলছে। সুতুরাং যদি আপনি মনে করেন যে বাচ্চার বাবা আল সাহেব না তাহলে আপনি কোর্টে মামলা দায়ের করেন। আমি এখন এর বেশী কিছু করতে পারবো না।
সাহানা:- অফিসার আপনি আমাদের সাথে এসেছেন আর কথা বলছেন ওনাদের হয়ে। বড় লোক দেখে কি দল বদল করেছেন?
অফিসার:- দেখুন মিস সাহানা আপনার কথার লাগম টানুন। এমন মন্তব্যের কারণে আমি আপনাকে তখনি হায়দার সাহেব বলে।
হায়দার:- অফিসার সরি। আমার মেয়ের হয়ে আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা আদলতে মামলা করবো আর সেইটা আগামীকালকে। সাহানা চল আমরা এখন যাই। আর তাছাড়া কোর্টে যদি প্রমাণ হয়েও যায় যে আনো আলের মেয়ে কিন্তু আনো’র বয়স কম হওয়াতে আমাদের পক্ষে জর্জ রায় দিবেন।
সাহানা:- আল তুমি টাকার পাওয়ারে আমার মেয়েকে আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না। আমি ঠিকই আমার মেয়েকে তোমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিবো। দেখা হবে আদালতে আর তুমি তৈরি থেকো তোমার জীবনে তুমি সুখ পাবে না। বাবা চলো আমরা যাই।
হায়দার সাহেব:- বেয়াই সাহেব যাই দেখা হবে আদালতে আর ঝিনুক আজকের ঘটনার পরে আর তুমি মনে করোনা যে তুমি তোমার স্বামীর বাড়ীতে যেতে পারবে। আমার মেয়ের জীবনটা যেমন ভাবে তোমার ভাই নষ্ট করেছে ঠিক তেমন ভাবে আমি তোমার জীবনটা নষ্ট করিয়ে দিবো। এসব কথাবার্তা বলে ওনারা চলে গেছে তখনি ঝিনুক বলে।
ঝিনুক:- বাবা মা শুনলে তো কি বলে গেছে ওনি? আল এবার তুই খুশি হয়েছিস তো?
আল:- হ্যা খুশি হয়েছি এমন বাড়ীতে আর না যাওটায় তোর জন্য ভালো হবে। তখনি ঝিনুক ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দেয় আলকে। আল রেগে মেগে আগুন হয়ে যায়। তখনি ঝিনুক বলে।
ঝিনুক:- তোকে আমার ছোট ভাই বলতে লজ্জা লাগে। তোর জন্য আমার স্বামীর বাড়ী থেকে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর আজ ওনি আমাকে হু*ম*কি দিয়ে গেছে আমিও বলতেছি তুই কখনো সুখে থাকতে পারবি না।
আল:- আমি যদি সৎ থাকি তাহলে সুখি হবো আর যদি অসৎ হয় তাহলে তোর কথা সত্যি হবে। আর হাঁ আনো যে এই বাড়ীতে আছে এই খবরটা সাহানাকে যদি এই বাড়ীর কেউ দিয়ে থাকে তাহলে এর পরিনাম খুবই ভয়ংকর হবে বলেই আল উপরে চলে গেছে। সিমি আনো’কে কোলে নিয়ে আলের পিছু পিছু উপরে এসেছে। আল ঘরে ঢুকে খাটের উপরে মাথায় হাত রেখে বসে আছে। সিমি এসেছে তখনি আল বলে। আচ্ছা সিমি কোর্ট কি সত্যি আনো’র বয়স কম হওয়াতে সাহানার কাছে রাখতে বলবে? তখন সিমি কিছুটা চুপচাপ থেকে বলে।
সিমি:- আমি আনো’কে আপনার কাছে রাখতে সাহায্য করবো তবে তার বিনিময়ে আমার কিছু শর্ত আছে। যদি আপনি আমার শর্ত গুলি মেনে নেন তাহলে আমি রাজি আছি। তখনি আল সিমির হাতটা ধরে বলে।
আল:- তুমি যে শর্ত দিবে আমি সব মানতে রাজি বলো তোমার কি শর্ত?
সিমি:- আমার শর্ত হলো দুইটা তবে এখন এক নাস্বার শর্ত হলো আমাকে আপনার অতীত সম্পর্কে সবকিছু বলতে হবে। যদি আপনি আপনার অতীত সম্পর্কে বলেন তাহলে আমি আনো’কে আপনার কাছেই রাখতে সাহায্য করবো।
আল:- তুমি আমার অতীত জানার এত আগ্রোহ কেনো?
সিমি:- আগ্রোহ এতদিন ছিলো না তবে আজ জানতে ইচ্ছে করছে। প্লিজ বলেন আপনার জীবনে কি এমন হয়ছে যার কারণে বাড়ীর সবাই আপনার বিরুদ্ধে থাকে। আর পাঁচ বছর সংসার করার পরেও আপনার স্ত্রী আপনার কাছ থেকে ডির্ভোস নিয়ে চলে গেছে। এমন কি আপনার স্ত্রী আনো’কে আপনার মেয়ে বলে পরিচয় করাতে রাজি হয়না। কি এমন করেছেন আপনি সবার সাথে প্লিজ বলেন!
আল:- আমার জবীনের অতীত শুনার জন্য তোমার যেহেতু এতটা আগ্রোহ তাহলে শুনো আমার জীবনের ভয়ংকর অতীতটা। সিমি অনেক আগ্রোহের সাথে আলের পাশে বসেছে আর বলতে আরম্ভ করেছে।
।
চলবে…
গল্প:-#তুমি_চাইলে_যেতে_পারো (পর্ব:-০৬)
লিখা:- AL Mohammad Sourav
।
আমার দ্বীতীয় স্ত্রী যখন আমাকে বলে পাঁচ বছর সংসার করার পরেও আপনার আগের বৌ আপনাকে ডির্ভোস দিয়ে চলে গেছে কেনো! এখন আপনার মেয়েকে আপনার পরিচয় দিতে রাজি হয়না কেনো! এমন কি আপনার বাড়ীর সবাই আপনাকে এতটা ঘৃণা করে কেনো! কি করেছেন সবার সাথে! সবকিছু আমাকে বলেন তাহলে আমি আনো’কে আপনার কাছে রাখতে সাহায্য করবো। বলেন আপনার জীবনে কি এমন ঘটনা ঘটেছে।
আল:- আমার অতীত শুনার যেহেতু তোমার এতটা আগ্রোহ তাহলে শুনো আমার অতীত। লতার কাছে আনো’কে দিয়ে বলে।
সিমি:- তুমি ওকে নিয়ে যাও। আনো’কে লতা নিয়ে যাবার পর সিমি অনেকটা আগ্রোহের সাথে আমার পাশে বসেছে। আমি বলতে আরম্ভ করি। আজ থেকে পাঁচ বছর ছয় মাস চারদিন আগে আমি বিদেশ থেকে ছয় মাসের ছুটিতে দেশে আসছি আর সাহানার সাথে আমার বিয়েটা হয় তার দুই মাস পরেই। সাহানার সাথে দুই মাস প্রেম করার পরে সাহানা হঠাৎ করে একদিন আমাকে হাসপাতালে যেতে বলে। আমি হাসপাতালে যাওয়ার পর ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আমি জিজ্ঞেস করি কান্না করছো কেনো? তখন সাহানা কি বলে জানো?
সিমি:- কি বলেছে?
আল:- সাহানা বলে ও প্রেগন্যান্ট যদি আমি বিয়ে না করি তাহলে সে গলাই দরি দিবে। আ*ত্মা*হ*ত্যা ছাড়া ওর আর কোনো রাস্থা থাকবে না। এমনকি আজকের মধ্যে বিয়ে করতে হবে।
সিমি:- প্রেগন্যান্ট হলো কি করে?
আল:- ওর সাথে ১৫দিন প্রেম করার পরেই আমরা দুজনে এক সাথে তিন চারবার ছিলাম। যদিও বলেছিলো কোনো সমস্যা হবে না কিন্তু পরে সে বলে প্রেগন্যান্ট। তারপর আমি সবকিছু চিন্তা করে রাজি হয় সাহানাকে বিয়েটা করতে। তোমার সাথে যেমন ভাবে হঠাৎ করে বিয়েটা করি। ঠিক একই রকম ভাবে সাহানাকে বিয়েটা করি। সাহানাকে বাড়ীতে নিয়ে আসার পরেই বাবা মা সহ বাড়ীর সবাই অনেক রাগারাগি শুরু করে। একপ্রকার সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে সবাইকে রাজি করিয়েছি। তবে বাড়ীর সবার একটা শর্ত দিয়ে দেয়।
সিমি:- কি শর্ত?
আল:- ছুটি শেষ হলে আমাকে আবার বিদেশ যেতে হবে। আর কমপক্ষে দুই বছর আরও বিদেশ থাকতে হবে। আমি রাজি হয়ে যায় ওদের সবার শর্তে। দেশে যে বাকী কিছুদিন ছিলাম খুব ভালো সময় কাটছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীতে আমি সবচেয়ে সুখী মানুষ। আনো যখন সাহানার পেটে পাঁচ মাসে পড়ছে তখন আমি আবার বিদেশ চলে যাই। বিদেশ যাবার কয়েক মাস পরেই আমি জানতে পারি আমার একটা রাজকন্যা হয়ছে। আমি যে কতটা খুশি হয়েছি তা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না। আমার খুব ইচ্ছে করতো আমি দেশে চলে আসি। আমাদের তো কোনো কিছু অভাব নেই তাহলে আমি কেনো বিদেশে থাকবো! কিন্তু যখন বাড়ীর লোকের সাথে কথা বলতাম তখন ওরা বলে।
বাবা:- সবে মাত্র বাড়ীটার কাজ শুরু করেছি। আর আমাদের ব্যবসটা একটু বড় করেছি। অনেক টাকার প্রয়োজন। তুই অন্তঃত তিনটা বছর শেষ করে তারপর বাড়ীতে আয়।
মা:- বিয়ের পড় মানুষ দশ বছর বিদেশ করে। তুই গেছিস মাত্র একবছর হয়ছে। আরও দুইটা বছর থেকে তারপর দেশে আয়। আর তাছাড়া ঝিনুকের শ্বশুর বাড়ীতে এখনো অনেক কিছু দেওয়ার বাকী রয়ছে। কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশী অবাক হয়েছি যখন সাহানাকে দুই বছর পড়ে বাড়ীতে আসতে বলেছি তখন সাহানা কি বলেছো জানো?
সিমি:- কি বলেছে?
আল:- সাহানা বলে এত তাঁড়াতাড়ি দেশে এসে কি করবে! বর্তমানে দেশের যে অবস্থা কোনো কাজ করতে পারবে বলে মনে হয় না। সবে তো গেলে আরও কিছুদিন থেকে তারপর দেশে আসো। সাহানার এমন কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যায় আর মনের মধ্যে জিদ চেপে যায়। আমি ঠিক চার বছর পড়ে দেশে এসেছি। চার বছর পরেও আমার দেশে আসাটা বাড়ীর সবাই ভালো চোখে দেখেনি। আমি দেশে এসে সবাইকে বলে দেয় আমি আর কোনো সময় বিদেশে যাবো না। এখন থেকে আমাদের ব্যবসাতে আমি সময় দিবো তখনি বাবা বলে।
বাবা:- সবাই যদি একটা ব্যবসা নিয়ে বসে থাকি তাহলে না খেয়ে ম*র*তে হবে। বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। তুই কিছুদিন থেকে আবার বিদেশ চলে যাস কেমন।
আরিফ:- আমি এত প্ররীশ্রম করে ব্যবসাটা সবে মাত্র দাঁড় করিয়েছি আর এখন তোর চোখ পড়ে গেছে। তোর বিদেশে যেহেতু ভালো টাকা ইনকাম করিস তাহলে তুই দেশে কিছুদিন থেকে আবার বিদেশে চলে যা।
মা:- আমার মনে হয় আল সবার সাথে মজা করছে। ছুটি শেষ হলে আবার বিদেশ চলে যাবে তাইনা? বাড়ীর সবার কথা শুনে আমি অবাক হচ্ছি তখনি আমি বলি।
আল:- আমি আগামীকাল থেকে আমাদের ব্যবসায় জয়েন করবো। আমি আর কোনো দিন বিদেশে যাবো না। তারপর থেকে বাড়ীর সবাই আমার সাথে কেমন ভাবে ব্যবহার করতে লাগলো কিন্তু আমি সে কোনো কিছু মনে না নিয়ে খুব সুন্দর ভাবে ওদের সাথে মিল থেকে দিন কাটাতে লাগলাম। আমার মেয়ে আনো’কে নিয়ে আমাদের সংসার খুব ভালো যাচ্ছে। একদিন অফিস থেকে দুপুরবেলা একটা কাজের জন্য বের হলাম আমি সিগন্যাল দাঁড়িয়ে আছি তখন দেখি সাহানা একটা ছেলের বাইকে পেছনে করে উল্টো রাস্থা দিয়ে যাচ্ছে।
সিমি:- ছেলেটা কে ছিলো যার সাথে সাহানা যাচ্ছে!
আল:- ছেলেটা হচ্ছে ঝিনুকের দেবর আর সাহানার খালাত ভাই ফয়সাল। ও তোমাকে তো আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। সেই কথাটা হচ্ছে সাহানার খালাত ভাই ফিরুজের সাথে ঝিনুক আপুর বিয়ে হয়। সাহানার সাথে ওর খালার বাড়ীতে মানে ঝিনুক আপুর শ্বশুর বাড়ীতে পরিচয়টা হয় আর সেখান থেকে আমাদের প্রেম শুরু হয়। যদিও ওদের রাস্থায় দেখে আমি তেমন কিছু মনে করিনি। কারণ সাহানা আমাকে বলেছিলো ওদের বাড়ীতে যাবে। হয়ত ফয়সালের সাথে দেখা হয়ছে তাই বাড়ীতে নামিয়ে দিবে। তবে যখন আমি বাড়ীতে গেছি তখন জানা সত্যেও রাতে সাহানাকে জিজ্ঞেস করি। সাহানা তুমি আজ কোথায় গেছিলে?
সাহানা:- কোথায় আবার আমাদের বাড়ীতে গেছিলাম। তোমাকে তো বলেছিলাম মনে নেই তোমার?
আল:- ভুলে গেছিলাম। আচ্ছা তুমি আসার সময় কিসে করে এসেছো? তখনি সাহানা বলে।
সাহানা:- সি*এন*জি করে। বাবা আমাকে নিজে সি*এন*জি ঠিক করে দিয়েছে। সাহানার কথা শুনে আমি কোনো রিয়াক্ট না করে সুন্দর ভাবে বলি।
আল:- ঠিক আছে। তখন সাহানা বলে।
সাহানা:- আমাকে কি তুমি সন্দেহ করছো? তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যা বলছি?
আল:- দেখো আমি শুধু জিজ্ঞেস করেছি আর তাছাড়া তুমি যেহেতু বলছো সন্দেহ করছি কিনা তাহলে শুনো। আমি নিজের চোখে দেখেছি তোমাকে ফয়সালের সাথে বাইকে করে আসতে। আর তুমি বলছো সি*এন*জি করে এসেছো।
সাহানা:- বুঝতে পারছি তুমি আমাকে সন্দেহ করছো। ফয়সাল ভাইয়ার সাথে আমার কোনো দেখা হয়নি। তুমি হয়তো অন্য কোনো মেয়েকে দেখেছো। আর তাছাড়া ফয়সাল ভাইয়ার কত মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে তুমি জানো।
আল:- সাহানা তুমি বার বার এক কথা কেনো বলছো? তখন এক কথা দুই কথা ওর সাথে ঝগড়া হয় আমার। এক সময় রাগের মাথায় আমি ওর উপরে হাত উঠিয়ে ফেলি। তখন সে রাগ করে বাপের বাড়ীতে চলে যায়। দুইদিন পর আমি যখন ওকে আনতে যাচ্ছি তখন আমাদের ড্রাইভার রহিছ মিয়া আমাকে বলে।
রহিছ:- ভাই একটা কথা বলবো!
আল:- হ্যা বল কি বলবি?
রহিছ:- ভাই কি ভাবে কথাটা বলি তাও আপনাকে কথাটা বলা জুরুরী।
আল:- এত ভঙ্গিমা না করে সুজা বলে ফেল আমি কিছু মনে করবো না।
রহিছ:- ভাই আপনার বৌয়ের চরিত্র ভালো না। আপনার বৌকে আমি প্রায় দেখেছি ঝিনুক আপার দেবরের সাথে অনেক হোটেল থেকে বেড়িয়ে আসতে। আপনি বিদেশ যাবার এক বছর পড় থেকেই ওরা দুজনে এক সাথে ঘুরাঘুরি করে। রহিছের কথা শুনে মাথায় রক্ত চেপে গেছে তখন রহিছ আবার বলে। ভাই আপনি বিদেশ থেকে আসার পড়েও আমি তিন চারবার ওনাদের দুজনকে হোটেল থেকে বেড়িয়ে আসতে দেখেছি। আমি নিজেকে কিছুটা কন্ট্রোল করে ঠান্ডা মাথায় রহিছকে বলি।
আল:- রহিছ মিয়া তুই যা বলছিস চিন্তা ভাবনা করে বলছিস তো? তখনি রহিছ আমাকে তাঁর মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বলে।
রহিছ:- ভাই দেখেন আপনি। তখন আমি মোবাইলে তাকিয়ে দেখি সাহানা আর ফয়সাল দুজনের অনেক গুলি ছবি তবে ভিন্ন ভিন্ন জায়গাতে।
আল:- রহিছ ছবি কি সব এখানে নাকী অন্য কোথাও আছে?
রহিছ:- সব এখানে। আমি তো ছবি তুলেছি শুধু আপনাকে দেখাবো বলে। এখন আপনি দেখছেন সব ছবি ডিলেট করে দিবো। তখন আমি নিজেই সব ছবি ডিলেট করে দিয়েছি আর রহিছ মিয়াকে বলেছি।
আল:- রহিছ মিয়া এসব কথা আর কাওকে বলার দরকার নেই কেমন? সে হ্যা বলেছি। গাড়ীটা সাহানাদের বাড়ীতে এসে থামছে আমি ভিতরে ঢুকতেই দেখি ফয়সাল আনো’কে কোলে নিয়ে বসে আছে আর সাহানা ফয়সালের সাথে দুষ্টমি করছে। আমাকে দেখেই আনো দৌড়ে চলে এসেছে। আর সাহানা রেগে গিয়ে বলে।
সাহানা:- আল তুমি এসেছো কেনো?
আল:- সাহানা চলো যা হবার হয়ছে এখন বাড়ীতে চলো। সেদিনের ঘটনার জন্য আমি ক্ষমা পার্থী।
সাহানা:- ঠিক আছে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর যদি তুমি আমাকে কোনো রকম সন্দেহ করো তাহলে আমি সারাজীবনের জন্য তোমার জীবন থেকে চলে যাবো। আমি ওর কথা মেনে নিয়ে ওকে নিয়ে এসেছি।
সিমি:- আপনি ওর সব কথা মেনে নিলেন কেনো? আর আপনি নিজেও দেখেছেন ফয়সালের সাথে বাইকে করে যাচ্ছে। এরপর আপনাদের ড্রাইভার আপনাকে বলেছে ছবি দেখিয়েছে। তাও কেনো ওকে মেনে নিতে গেলেন।
আল:- আগে শুনো তারপর বলো। তখন সিমি চুপ করে গেছে। আমি চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম। সাহানার সাথে যদি আমি এখন কোনো খারাপ আচোরন করি তাহলে ঝিনুক আপুর শ্বশুর বাড়ীতে সমস্যা হবে আর আমার মেয়েটা ছোট ভবিষৎ ওর সমস্যা হবে সেই সব চিন্তা করে ওর কথা মেনে নিয়ে ওকে নিয়ে বাড়ীতে আসি। এরপর মাস খানেক ভালো ভাবে সময় গেছে হঠাৎ একদিন রাতে মোবাইল টিপাটিপি করছি তখনি ইমুতে কিছু ভিডিও ফুঁটেজ আসে আর একটা মেসেজ। সেখানে লিখা থাকে আমার দাবী মানলে আমি সবকিছু ডিলেট করে দিবো আর নয়তো সব ভিডিও ইন্টারন্যাটে ছেড়ে দিবো। আমি ভিডিও ক্লিক করতেই আমার মাথায় আঁকাশ ভেঙ্গে পড়ছে। নিজের প্রিয়তমা স্ত্রী এমন ভিডিও দেখার জন্য মুটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তবে সবচেয়ে বেশী অবাক হয়েছি সাথে যেই ছেলেটা আছে সেইটা ফয়সাল। আমি রেগে যায় পচন্ড আর সাহানাকে সাথে সাথেই ভিডিও গুলি দেখিয়ে বলি। সাহানা এসব কি কেনো করেছো তুমি? কি দোষ করেছি আমি? তখন সাহানা আমার পায়ে পড়ে যায় আর বলে ক্ষমা করে দিতে। আমি একদম রাজি হয়নি ওর বাবা মাকে খবর দিয়েছি আর ঝিনুকের জামাইকে আর ওর শ্বশুরকে বলেছি খুব সকালে আমাদের বাড়ীতে আসতে। বাড়ীর সবাইকে বলেছি সকালে সবাই থাকতে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে কেনো করেছে এমনটা এসব ভাবতে ভাবতে বারান্দায় নিচে ফ্লোরে বসে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গেছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেছি চেয়ে দেখি সবাই এসেছে।
বাবা:- আল সবাইকে এত সকালে কেনো আসতে বলেছিস?
আল:- আমি সাহানার সাথে আর সংসার করবো না। ওর মত চরিত্রহীন মেয়ের সাথে আর সংসার করবো না।
মা:- আল কি বলছিস এসব?
ঝিনুক:- তুই তোর বৌয়ের সাথে সংসার করবি না সেটা তোর ব্যপার কিন্তু তুই আমার শ্বশুর আর জামাইকে খবর দিয়েছিস কেনো?
আল:- বলতেছি। তোর দেবর আর সাহানা দুজনে আমাকে ঠকিয়েছে। ওরা দুজনে এক সাথে স্বামী স্ত্রীর মত মেলামেশা করেছে। তখনি সাহানা বলে।
সাহানা:- আল তুমি কি বলছো এসব? আমার নামে এই মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ার মানে কি? আমি কি করেছি যার কারণে তুমি এমন চরিত্রহীন বলতেছো?
আল:- কি করেছো দাঁড়াও আমি বলতেছি। ফয়সাল আর সাহানা মিলে অনেক সময় হোটেলে গিয়ে রাত কাটিয়েছে তখনি ঝিনুকের জামাই বলে।
ফিরুজ:- আল কারও নামে কিছু বলার আগে প্রমাণ লাগে। তোমার কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে? যদি প্রমাণ থাকে তাহলে আমাদের প্রমাণ দেখাও। ফয়সাল আর সাহানার চরিত্রে বদনাম করার আগে তুমি প্রমাণ দেখাও। আমার ভাইয়ের নামে এমন মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার মানে কি?
আল:- হ্যা দেখাচ্ছি তবে সবাইকে না আমি শুধু সাহানার মা’কে শুধু দেখাবো বলে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি গতকাল রাতে মোবাইলে যে ভিডিও গুলি ছিলো তাঁর কোনোটাই নাই। আর যে ইমু নাম্বার থেকে ভিডিও গুলো এসেছিলো সেই নাম্বারটা পর্যন্ত মোবাইল থেকে ডিলেট হয়ে গেছে। আমি হতবাক হয়ে গেছি কি করে এসব ডিলেট হলো তখনি সাহানা মুচকি হেসে আমার কানে কানে বলে।
সাহানা:- রাতে ঘুমিয়ে ছিলে আমি তোমার আঙুলের ছাপ নিয়ে লক খুলে সব ডিলেট করে দিয়েছি। এখন দেখো তোমার কি অবস্থা করি। তোমার জীবনটা আমি তেজপাতা বানিয়ে ছাড়বো।
বাবা:- আল দাঁড়িয়ে আছিস কেনো কি দেখাবি তো দেখা সাহানার মাকে। আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি তখন সাহানা বলে।
সাহানা:- কি দেখাবে ওর কাছে কোনো প্রমাণ নেই। ও আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ এনেছে। সত্যি বলতে আমি নিজেই ওর মত ছেলের সাথে সংসার করবো না। ওর পুরুষত্ব সমস্যা আছে। এই কথা শুনে আমি ঠাস করে সাহানাকে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। সাহানার বাবা মা আর ঝিনুকের জামাই ওরা সবাই রেগে যায় আমার উপরে। এক কথা দুই কথা কাটাকাটির সময় আমি ফিরুজ ভাইকেও থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। আর সাহানা সহ সবাইকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। ঝিনুকের শ্বশুর বাড়ীর সবাই এতটা অপমানিত হওয়ার কারণে ঝিনুকে আর ওদের বাড়ীতে নেয়নি। তবে ফিরুজ ভাই ভালো মানুষ ওনি এখনো আপুকে ভালোবাসে আর মাঝে মধ্যে আমাদের বাড়ীতে আসে। যদিও আমার সাথে কোনো রকম কথাবার্তা বলে না। এক মাস পড়ে আমি সাহানাকে ডির্ভোস দিয়ে দেয় আর আমি বাড়ীর সবার সাথে খারাপ আচোরন করতে থাকি। এক পর্যায়ে সাহানা বলে আনো নাকী ফয়সালের মেয়ে আমার সন্তান না। তখন বাড়ীর সবাই সেইটা বিশ্বাস করে। আমি ওদের যখন বলেছি এখন তো আমার কথা সত্যি হলো তখন ওরা বলে তোর সমস্যা তাই সাহানা এমনটা করেছে। এই কথা শুনার পর আমি আর বাড়ীতে ঠিক মত যাওয়া আসা করি না। সবার সাথে খারাপ আচোরন করতে আরম্ভ করি। সিমি তুমি জানো আমি কতটা ভালোবেসেছি সাহানাকে কিন্তু বিনিময়ে কি পেয়েছি বলো! আর এই বাড়ীর সবাই আমাকে ঠকিয়ে গেছে। দাদা আমার নামে এই বাড়ীটা আর কিছু জমি জমা দিয়ে গেছে তাঁর জন্য সবাই আমাকে ছোট থেকেই অপছন্দ করে। এতসব কিছু হবার পড়েও কি আমি ওদের সাথে ভালো আচোরন করতে পারি বলো? আমি চেয়ে দেখি সিমির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। সিমির চোখ গুলি মুছে বলে।
সিমি:- স্যতিই আপনার সাথে অনেক অন্যায় হয়ছে।
আল:- আমার মেয়েটা আমার কাছে রাখতে পারবো তো?
সিমি:- আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো আনো’কে আপনার কাছে রাখতে। তবে একটা কাজ করতে হবে।
আল:- কি কাজ করতে হবে।
সিমি:- আনো’কে অন্তঃত এক মাস আমার সাথে রাখতে হবে। আনো এখনো ওর মাকে অনেক ভালোবাসে। কোর্টে যখন আনো’কে বলবে সে কার সাথে থাকবে তখন সে ওর মায়ের সাথে থাকবে বলে দিবে। আর তাছাড়া আনোর বয়স মাত্র পাঁচ বছরের মত এত ছোট বাচ্চাকে ওর মায়ের সাথে রাখতে বলবে।
আল:- কিন্তু এত সময় পাওয়া যাবে না। সাহানা সকালে গিয়ে আদালতে মামলা করে দিবে। দুই এক দিনের মধ্যে আমাদের কোর্টে হাজির হতে হবে। প্লিজ সিমি তুমি যেভাবে হোক আমার মেয়েটাকে আমার কাছে রেখে দাও বিনিয়মে তুমি যা চাইবে তাই দিবো। যদি তুমি আমার কাছ থেকে ডির্ভোস চাও তাও দিবো তখনি সিমি মুচকি হেসে বলে।
সিমি:- সত্যি সত্যি ডির্ভোস দিবেন!
আল:- হ্যা ডির্ভোস দিবো আর তুমি চাইলে যেতে পারবে। সাথে তোমার দেনমোহরের টাকাটা সাথে পাবে।
সিমি:- যদি আপনি পড়ে রাজি না হোন তার জন্য আমার প্রমাণ চাই।
আল:- কি প্রমাণ লাগবে তোমার?
সিমি:- আপনার কাছে কোনো সাদা কাগজ আছে?
আল:- হ্যা আছে।
সিমি:- দেন আমাকে।
আল:- কেনো কি করবে?
সিমি:- লিখিত প্রমাণ রাখবো। তখন আল উঠে একটা সাদা কাগজ এনে দেয় সাথে একটা কলম। তখনি সিমি কাগজে কিছু না লিখেই আলকে বলে। এখানে একটা সাইন করে দিন আর আজকের তারিখটা লিখে দিন।
আল:- কোনো কিছু লিখা নেই এমন কাগজে আমি সাইন করবো না।
সিমি:- তাহলে আপনি আপনার মেয়েকেও পাবেন না। কাগজে সাইন করেন তাহলে আমি আপনার মেয়েকে আপনার কাছে রাখতে সাহায্য করবো। আল কিছুটা চিন্তা করে বলে।
আল:- আমার মুখের কথা তুমি বিশ্বাস করতে পারলে না।
সিমি:- আপনাকে আপনার পরিবার বিশ্বাস করে না আর আমি তো মাত্র কিছুদিন হলো আপনাকে চিনি। তাহলে বিশ্বাস করবো কি করে?
আল:- ঠিক আছে দাও সাইন করে দিচ্ছি বলেই সাদা কাগজে সাইন করে দিয়েছে। নাও সাইন হয়ে গেছে আর শুনো যদি আনো আমার কাছে থেকে যায় তাও আমি তোমাকে মুক্ত করে দিবো আর যদি ওর মায়ের কাছে চলে যায় তাহলেও তোমাকে আমি মুক্ত করে দিবো বলেই আল ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে আর তখনি সিমি মুচকি হেসে বলে সেইটা সময় হলে দেখা যাবে কে কাকে মুক্ত করে এই কথা বলেই সিমি ঘুমাবার জন্য খাটের উপরে শুয়ে পড়ছে আর আল বেড়িয়ে গেছে।
।
চলবে…