তুমি এসেছিলে বলে পর্ব-২২+২৩+২৪

0
268

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ২২
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

মেহতাবের কথাটা সৌরভের কর্নপাত হতেই । সে বলে ওঠে ,

সৌরভ : তাহলে আজকেই ফ্লাইটের টিকেট বুক করি কী বলিস দোস্ত । লাভ গুরুর পক্ষ থেকে উগান্ডা হানিমুন গিফট । ( মুচকি হেসে )

.

.

সকাল গড়িয়ে দুপুর । সবাই নিচের কেফ এ বসে গল্প করছে । মেহতাব আর মেঘ রুমে আছে । তাই তারা আর বিরক্ত করেনি । তাদের কেউ প্রাইভেসি দেওয়া উচিত । আহতাব আর অহনার নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নরমাল থাকলেও তারা ঝগড়ার অ্যাক্টিং করছে । সৌরভ তার বাকি বন্ধুদের টিম আর মিথিলার টিম আলাদা বসে আছে । সৌম আর মেহসান শান্তি বজায় রাখার কাজে নিযুক্ত । টিনার শরীর ব্যাথা করছে । সে ওয়াশরুমে ঘুমাচ্ছিল সে এটাকে তার ঘুমের ওষুধ না খাওয়ার জন্য ঘুমের মধ্যে হাটাকে দায়ী করছে । কাউকে বলেও নি মজা করবে ভেবে । নিরব নিস্তব্ধ পরিবেশ । দুই দল তাদের চোখের ইশারায় তর্ক বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছে । সৌম আর মেহসান ক্ষণে ক্ষণে শুঁকনো ঢোক গিলছে আর পানি খাচ্ছে । আহতাব আর অহনা বেশ মজা পাচ্ছে । এই ছমছমে পরিবেশ সম্পর্কে অবগত নয় টিনা । টিনা এক ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তাদের মুখ পানে । বলে উঠলো ,

টিনা : কী হয়েছে ?

সকলের অগ্নি নিক্ষেপণ দেখে আগ বাড়িয়ে আর কিছু বললো না টিনা । নিরব দর্শকের মতো দেখতে লাগলো । জল কতটুকু গড়িয়েছে তা বোঝাই যাচ্ছে ।

.

.

মেহতাবদের রুমে মেঘ কোনো এক উপন্যাসের বই পরছে । মেহতাব মেঘের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আছে আর ল্যাপটপে কাজ করছে । মেঘকে সে দাড়ি বাইট দিয়েছে । তা সম্পর্কে সে অবগত ছিলো না । মেঘের নরম গালগুলো ফুলে গেছে । হয়তো তাই সে আজ নিচে যায় নি আর মেহতাব এর সাথে কথাও বলে নি বইয়ে মশগুল হয়ে আছে । মেহতাব কে আড় চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেঘ বলে উঠলো ,

মেঘ : কিছু বলবেন ?

মেহতাব ইতস্তত করে বলে উঠলো ,

মেহতাব : ব্যাথা করছে মেডিসিন এনে দিবো ?

মেঘ : না ঠিক আছি ।

মেহতাব : ওকে ।

এই বলে সে রুম থেকে চলে গেলো । মেঘ একটা তপ্ত শ্বাস ফেললো । গালে হাত দিতেই ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো । সামান্য ব্যাথা কিন্তু ভীষণ জ্বলছে । সে বই রেখে বারান্দায় খোলা আকাশের পানে তাকিয়ে রইলো । লোকটার প্রতি অনুভুতিটা ভালোবাসায় পরিপূর্নরূপ ধারণ করেছে তা বুঝতে পারছে মেঘ । অপলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয় লোকটার মুখের পানে । তার মুখে বিষন্নতার ছাপ এই ব্যাথার জন্য নয় বরং তার মন মধ্যিখানে মানুষটিকে নিজের করে না পাবার ব্যাথা যা সর্বক্ষণ ধাওয়া করে । উথালপাথাল করে দেয় তাকে । সে চায় নিজে মেহতাবের ভালোবাসার শিকড়ে জড়ানোর আগে মেহতাব যেন তাকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে নেয় । একটিবার যেনো মেঘকে নিজের অনুভুতি সম্পর্কে অবগত করিয়ে দেয় । বেশি কিছু নয় একটু ভরসা , আস্থা আর কিঞ্চিৎ ভালোবাসাই যথেষ্ট ।

পিছনে কিছুর শব্দে ভাবনার ছেদ ঘটে মেঘের । পিছনে তাকাতেই দেখতে পায় মেহতাব এসেছে হাতে অনেকগুলো প্যাকেটে ফল , চকলেট আর কিছু একটা নিয়ে । জিনিসটা নিয়ে এগিয়ে আসতেই মেঘ জিজ্ঞেস করে ,

মেঘ : কী এটা ?

মেহতাব উত্তর দেয় না বরং মেঘের অনেকটা কাছে চলে আসে সে । মেহতাবের হৃদস্পন্দনের আওয়াজ শুনতে পারছে সে । মেহতাব বিনাবাক্য খরচ করে একটু ক্রিম বের করে মেঘের গালে লাগিয়ে দেয় । মেঘের দৃষ্টি মেহতাবের মুখের পানে । আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে সে নির্ঘাত কিছু একটা করে বসবে । ক্রিমটা লাগানো শেষ হতেই সে কোনো রিয়েক্ট না করে সেখান থেকে নিচে চলে গেলো । মেঘকে লজ্জা পেতে দেখে মেহতাব আনমনে হাসলো । পিছনে চুলে হাত দিয়ে বলে উঠলো ,

মেহতাব : লাজুকতা মেয়েদের শোভা পায় । বউ আমার বড্ড লাজুক একটু বেশি । ( মুচকি হেসে )

সৌরভ : তাহলে দেরী কিসের উগান্ডার প্ল্যান টিকেট কেটে ফেলি ।

কারো আওয়াজ পেয়ে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো ,

মেহতাব : তোদের কী আর কোনো কাজ নেই ?

সিয়াম : হুমম গভীর প্রশ্ন । একটা এপস খুলবো ভাবছি ভালোবাসা ডট কম । দামে সস্তা ভালোবাসার বস্তা ।

মেহতাব কিছু বললো না ওদের কথায় হাসতে বাধ্য সবাই এই ভেবে বারান্দার সোফায় বসে পড়লো । রৌফ বলে উঠলো ,

রৌফ : দোস্ত আজকে একটা পার্টি আছে । মেয়েদের থেকে ছেলেরা যেন এগিয়ে থাকে । বি রেডি ।

সামির : পার্টিতে কী ভালো খাবার পাওয়া যাইবো ?

সৌরভ : তুই বরং বেগুনের সাথে বিয়ে করিস । কুমড়োর সঙ্গে গাঁয়ে হলুদ । ফুলকপির সঙ্গে ফুলসজ্জা । অধপেটুক একটা ।

সামির : তাহলে খাবো কাকে ?

সৌরভ : এটা তো ভেবে দেখিনি গুড কোয়েশ্চেন ।

সৌরভ আর সামিরের কথায় হাসিতে ফেটে পরলো সবাই মেহতাব ও তাদের সাথে যোগ দিলো ।

.

.

অহনার রুমে বসে আছে সবাই । টিনা সবার হাতে কিছু একটা ধরিয়ে দিলো । সবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে টিনা বলে উঠলো ,

টিনা : সিস এটাতে শাড়ি আছে হোয়াইট কালার সবার জন্য । সন্ধ্যায় পার্টি আছে । ছেলেদের থোতা মুখ ভোতা করে দিয়েই ছাড়ব ।

শাম্মী : উফফ এই প্রথম আমার মন জয় করে নিয়েছো টিন আপু এক বালতি চুমু ।

এই বলে শাম্মী টিনাকে চুমু দিয়ে রুম থেকে চলে গেলো । টিনা অবাক ভঙ্গিতে দাড়িয়ে বলে উঠলো ,

টিনা : আমাকে কী অপমান করলো না প্রশংসা ।

সিমরান : যাই হোক । সবাই আমাদের রুমে চলে আসো । ওখানে রেডি হয়ে নিবো । অহনা আর মেঘ ভাবীতো আছেই ।

মেঘ : আমি পার্টিতে থাকতে পারবো না ।

মিথিলা : কেনো ভাবী ? এমন করো না প্লিজ ।

অহনা : মেঘ আসবে আমার লাস্ট কথা নাহলে আমিও আসবোনা ।

মেঘ : আপু এমন করিস না আমার শরীর ভালো লাগছে না ।

অহনা : না কোনো কথা নয় । আপুর কথা রাখবি তুই নাহলে ভাববো তুই আমায় ভালবাসিস না ।

মেঘ : ব্ল্যাকমেল করছিস ভালো খুব ভালো । ( রাগ দেখিয়ে )

টিনা : হোয়াইটমেল এটা মেঘু ভাবী ।

টিনার কথায় সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো ।

টিনা : যাক ভাবীর মুখে হাসি ফুটলো । ( মুচকি হেসে )

.

.

সন্ধ্যা আকাশ । শীত হওয়ায় পার্টির আয়োজন সন্ধ্যার দিকে করা হয়েছে । মেহতাব একটা ব্ল্যাক শার্ট তার সাথে ব্ল্যাক প্যান্ট পড়েছে । চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে নিয়েছে । মেঘ এখনও রুমে আসে নি । তাই মেহতাব রেডি হয়ে নিচে মেঘকে খুঁজতে চলে গেছে । পথের মাঝখানে কাঁটার মতো সৌরভ আর তার দল দাড়িয়ে আছে ।

সৌরভ : বাহ্ ! দোস্ত কারো নজর না লাগে বড্ড রূপবতী তুই ।

সৌরভের কথায় মেহতাব মুচকি হাসলো ।

মেহতাব : হুম তাই নাকি বেশি দিন নেই সেই তো লান্ডান ব্যাক করতে হবে । তখন শোধ তুলবো । উগান্ডা হানিমুন গিফট করবো মিথিলার সাথে যাস ওকে ।

শেষ কথাটা আস্তে বলাতে বাকিরা না শুনলেও সৌরভের কান অব্দি পৌঁছেছে । সে শুঁকনো ঢোক গিলে বিড়বিড় করে বলে উঠলো ,

সৌরভ : ওর চোখ এনাকণ্ডার মতো । কান ডাইনাছর এর মতো। কিভাবে জানলো শালায় ।

মেহতাব এর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো ,

সৌরভ : চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে , জেনে যাবে হবু জ্বালা জেনে যাবে ।

মেহতাব কিছুই বললো না তার চোখ এড়ানো এতো সহজ নয় । সৌরভের ভয়ার্ত কন্ঠে বলা কথায় হেসে দিলো ।

মেহতাব : জ্বালা নয় শালা হবে ।

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ২৩
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

সন্ধ্যার পার্টি সবাই যার যার মতো ইনজয় করছে । মেহতাব নিজের ফোনে কোনো জরুরি কল এটেন্ড করছে । সৌরভ একটা জুস নিয়ে তাকিয়ে আছে । রৌফ , সামির , সিয়াম তিনজনের নজর মেহতাবের দিকে । সৌম আর মেহসান প্রকৃতি কি অবস্থায় আছে আঁচ করার চেষ্টা করছে । বেশ কিছুক্ষণ পর মেহতাব কথা বলা শেষ করে ওদের সাথে একটা টেবিলে বসে পড়লো । মেহতাবকে আসতে দেখে সিয়াম বলে উঠলো ,

সিয়াম : দোস্ত মেঘ কই ?

মেহতাব : জানিনা তুই যেখানে আমিও সেখানে ।

সিয়াম সৌম আর মেহসান এর দিকে ইশারা করলো । তারা কথা না বাড়িয়ে মেয়েদেরকে খুঁজতে চলে গেলো । সবাইকে গোমড়া দেখে সবার মন ভালো করার জন্য রৌফ চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে উঠলো ,

রৌফ : বিলকিসের মা ওঠ ।

সবাই নিজেদের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করলো রৌফ কাকে কথাটা বলেছে সেটা বোঝার জন্য । রৌফ কিঞ্চিৎ হেসে সামিরের কোমর জড়িয়ে ধরে বললো ,

রৌফ : রূপবতী হওয়া উচিত তোমার মতো । তোমার বিড়ালের মতো চোখ , কুকুরের মতো দাঁত, হাতির মতো নাক, বাদুড়ের মতো কান আমায় তোমার দিকে আকৃষ্ট করে প্রিয় । ওরে বিলকিসের মা চুল গুলা পাইকা গেছে হাওয়াতে ।

সিয়াম ফোরণ কেটে বলে উঠলো ,

সিয়াম : বিলকিসের মারে দেইখা ক্রাশের নামে বাঁশ খাইলাম ।
.

.

( মেহতাবদের রুমে )

অহনা মেঘকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে । সিমরান মেঘের মেকআপ করিয়ে দিচ্ছে । মিথিলা মেঘের চুলে গোলাপ ফুল লাগিয়ে দিচ্ছে । টিনা গহনা পড়িয়ে দিচ্ছে । শাম্মী বিছানায় আধশোয়া হয়ে তাদের কান্ড দেখছে আর হাসছে । সিমরান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো ,

সিমরান : এখানে শুয়ে আছিস‍ কেনো ? দেখ কেউ আসছে নাকি । একদম ঢুকতে দিবি না ।

শাম্মী : জো হুকুম হুজুর ।

এই বলে শাম্মী দরজায় ঠেস হয়ে দাড়িয়ে রইলো । তখনি সৌম আর মেহসান ঢুকতে গেলেই শাম্মীর পায়ের সাথে উষ্ঠা খেয়ে পড়তে পড়তে বেঁচে গেলো । মেহসান বুকে ফুক দিয়ে বলে উঠলো ,

মেহসান : আপু কী করছো ? আমরা তো উভয় পক্ষ ।

শাম্মী তাচ্ছিললের সুরে বলে উঠলো ,

শাম্মী : ওরে আমার সিঙ্গারার আলু । তোদের ভালো করেই জানা আছে ।

মেহসান : সরো ভাবীকে দেখতে চাই ।

শাম্মী : উহুম একদম চালাকি না । নাহলে ছাদে শুকো দিয়ে শুঁটকি বানিয়ে দিবো ।

সৌম : দেখতে ভেটকি মাছের মতো আমাদের আবার শুঁটকি বানাবে আসামী একটা । (মজা করে)

শাম্মী আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠলো ,

শাম্মী : যা যা মাফ করে দিলাম ।

সৌম আর মেহসান কথা বাড়ালো না । ওরা চলে গেলে শাম্মী পিছনে মেঘ কে দেখেই মুখ হাঁ করে তাকিয়ে রইলো ।

সিমরান : মশা ডুকে যাবে ।

সিমরানের কথায় হুশ ফিরল শাম্মীর।

শাম্মী : হায়! হায়! কারো নজর না লাগে ।

.

.

সবাই নিচে বসে বোর হচ্ছে । সৌরভ মুখে তালা দিয়ে রেখেছে । মেহতাব ফোনে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করছে আর আহতাবের সাথে ডিসকাস করছে । সিয়াম , রৌফ চুপচাপ বসে আছে । সৌম আর মেহসান ফোনে মগ্ন । সামির পরিস্থিতি ঠিক করতে বলে উঠলো ,

সামির : এক বনে এক সাহসী ছেলে ছিলো ।

মেহসান ফোন থেকে মাথা তুলে বলে উঠলো ,

মেহসান : নাম নিশ্চয়ই সামির ।

সামির : তুই বুঝলি কেমনে ? ব্রেইন হ্যাক করে নিয়েছিস নাকি । ( অবাক ভঙ্গিতে )

সবাই সামিরের ভঙ্গি দেখে হেসে নিজেদের কাজে মন দিলো । তৎক্ষণাৎ মেঘ আর বাকিদের নিচে নামতে দেখে সবার দৃষ্টি সিড়ির দিকে গেলো । মেহতাবের নজর কেড়ে নিলো সাদা শাড়ি পরিধানরত রমণী । চোখে গাঢ় কাজল , ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক , মাথায় লাল গোলাপ । যাকে বলা যায় কোনো কিছুর খামতি নেই । মেহতাব কে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে উপস্থিত সবাই হেসে দিলো । সৌরভ মুখ খুলে বলে উঠলো ,

সৌরভ : দোস্ত এটা মেঘ তোরই বধূ এমন ভাবে দেখছিস যেনো প্রথমবার দেখলি ।

সৌরভকে চিমটি মেরে থামতে বললো আহতাব । আহতাব মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো ,

আহতাব : শালিকা তোমায় দেখে তো মেহতাব কল্পনাতে ডুব দিয়েছে ওকে বাঁচাও ।

আহতাবের কথায় সবাই হেসে দিলো । হাসলো না মেহতাব । মেঘ লজ্জা পেলো প্রকাশ করলো না । মেয়েরা এসে সবাই এক টেবিলে গোল করে বসলো । মিউজিক চালানো হলো । মুহূর্তেই রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি হলো । সবাই ডিনার পার্টির জন্য ভালো ভালো খাবার অর্ডার দিয়েছে । খাবার এসে পড়েছে সঙ্গে পার্টি আরো রসালো করার জন্য টিনা আর সামির এক পাশে এসে পড়লো । টিনা বলে উঠলো,

টিনা : একটা প্লান আছে । আমি আর তুমি এখানে সবচেয়ে অকাজের চরিত্র । তো আমাদের কে আরো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে হবে । তাহলে কোম্পানিতে মেহতাব আমাদের দুজনকে প্রমোশন করিয়ে দিতে পারে ।

সামির : টিনা এমন কিছু করিস না বইন যাতে মেহতাব প্রমোশন তো ধুর চাঙায় তুইলা রাখে ।

টিনা : নো টেনশন ওদের বিয়ে আরো রসালো করবো জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ ।

সামির : আমি জানতাম না তুমি বাবুচি গিরি করতে পারো ।

টিনা মুচকি হেসে টেবিলে এসে বসে পড়লো । সামির কে ইশারা করতেই ও উপরে চলে গেলো । সবাই যার যার মতো খাচ্ছে । সৌরভ পা দিয়ে মিথিলার পায়ে গুতো দিচ্ছে । মিথিলার অগ্নি দৃষ্টি দেখেও থামে নি সে । মিথিলা কেশে বলে উঠলো ,

মিথিলা : সিমরান , শাম্মী আমার পায়ে কিছু একটা পড়েছে দেখ না প্লিজ ।

সৌরভ এই কথা শুনে পা নিজের জায়গায় গুটিয়ে নিলো ।

মেহতাবের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে ওঠে ,

সৌরভ : দোস্ত আমারে কিছু মেয়েদেরকে পটানোর টিপস দে । লাভ গুরু তোরে ময়মসিংহগামী ট্রেনে হানিমুনের টিকেট কাইটা দিবো । ফ্রীতে ট্রেভেল আর হানিমুন হইয়া যাইবো । এক ঢিলে দুই পাখি আর কী ।

মেহতাব বিষম খেয়ে উঠলো সৌরভের কথা শুনে । সৌরভ হা করে তাকিয়ে রইল সে ভুল কিছু বলেছে নাকি ? মেঘ মেহতাব কে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো ।

মেঘ : এই নিন ।

মেহতাব পানি এক ঢোকে শেষ করলো । মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,

মেহতাব : থ্যান্ক ইউ মেঘ ।

সবাই যার যার খাওয়া শেষ করে ফেললো । সামির সবাইকে ড্রিংক সার্ভ করে দিলো । মেঘ ড্রিংক করবে না । সামির বলে উঠলো ,

সামির : ডোন্ট ওয়ারী ভাবী এটা আ্যলকোহল না ফ্রুট জুস।

সামির মেঘকে জোর করে ধরিয়ে দিলো । সামির কে মেহতাব বলে উঠলো ,

মেহতাব : তোরা আজেবাজে কিছু করবি না । আমি ওয়ার্নিং দিচ্ছি ।

সামির : দোস্ত ওইটা ফ্রুট জুস সত্যি রৌফের দাড়ির কসম ।

রৌফ চিবুকে হাত দিয়ে বললো ,

রৌফ : কিন্তু আমার তো দাড়ি নাই ।

#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ২৪
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া

সবাই ডিনার করে একসাথে বসে আছে । সবার হাতে ড্রিঙ্কস মেহতাবের বাদে । টিনা ফিসফিস করে সামিরের কানে কিছু বলে দিলো । সামির কথামত মেঘ আর মেহতাবের ড্রিঙ্কস এ ট্যাবলেট জাতীয় কিছু একটা মিশিয়ে দিলো । সামির ড্রিঙ্কস নিয়ে মেহতাব কে জোর করে ধরিয়ে দিলো । মেঘ নিতে না চাইলে সামির টলমল চোখে তাকাতেই নিতে বাধ্য হলো মেঘ । সবাই ভালো লেভেলের ড্রিঙ্কস করে নিয়েছে । কেউ দুলছে তো কেউ উল্টোপাল্টা কথা বলছে । টিনার বুঝতে বাকি নেই সামির সবাইকে আ্য‍লকোহল দিয়েছে ফ্রুট জুসের বদলে । অকর্মন একটা এই ভেবে সে সবাইকে যার যার রুমে দিয়ে আসার চেষ্টা করছে । সবাইকে নিয়ে সামির আর টিনা চলে গেলো মেঘ আর মেহতাবকে বাদে তাদের জন্য আজ বাসর ঘর সাজাবে এই প্লান ওদের । ওদের কাছাকাছি আনলে ওদের ঝামেলাও ঘুচে যাবে আর টিনাকেও ক্ষমা করে দিবে । যতই হোক সে মেহতাবের খারাপ অন্তত চাইনি । সে ভালো থাকুক এটাই তার প্রত্যাশা । এই ভেবে তপ্ত শ্বাস ফেলে সামির আর টিনা সবাইকে রুমে দিয়ে আসার জন্য নিয়ে গেলো ।

মেহতাব আর মেঘ দুজন পাশাপাশি বসে আছে । টেবিলে হেলান দিয়ে দুজন দুজনকে দেখছে মেঘ মেহতাবের দিকে আর মেহতাব মেঘের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । মেঘ বলে ওঠে ,

মেঘ : আপনি এতো সুদর্শন কেনো ? আপনার মতো এতো সুদর্শন পুরুষ পৃথিবীতে একজনকেও দেখিনি ।

মেহতাব মুচকি হেসে মেঘের কপালের উপর পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দেয় । বলে ওঠে ,

মেহতাব : তোমার দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সুন্দর আর আমি তো তোমারই অর্ধেকঅঙ্গ । তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী । প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে শ্রেষ্ট সুদর্শন পুরুষটি হচ্ছে তার স্বামী ।

মেঘ : আপনি এতো রোমান্টিক কথা বলছেন । আজ কি হলো সাহেব ?

মেহতাব : জানিনা আমি যখনই তোমাকে দেখি আমি ভুবন ভুলে যাই কেবল তোমাকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা অনুভব করি । আমি যখনই তোমাকে আমার পাশে একাকী পাই তখন আমি তোমাকে ভালোবাসার সুযোগ হারাতে পারি না ।

মেঘ মুচকি হাসে নিজের মুখটাকে মেহতাবের আরো কাছে এনে ভালোবাসার স্পর্শ দেয় কপালে । মেহতাব মেঘের আরো কাছে চলে আসে । টিনা আর সামির নিচে এসে ওদের এতো কাছাকাছি দেখে চোখ বন্ধ করে ফেলে ।

টিনা : সামির আমি যা দেখেছি তুমিও কী তাই দেখেছো ?

সামির : আমি এমনি আধপাগল আমার দেখায় কিছু যায় আসে না ।

টিনা : কথায় যুক্তি আছে ।

সামির রাগী দৃষ্টিতে তাকায় টিনার পানে । টিনা ইতস্তত করে বলে ওঠে ,

টিনা : সরি ভুল হয়েছে । এখন কী করবো এই দুই চাতক পাখিকে নিয়ে ।

টিনা আর সামির উপরে চলে যায় । কোনো স্টাফের সাহায্য নিতে মেঘকে নিতে পারলেও মেহতাব কে তুলতে পারবে না তারা । আর রুমও তো সাজাতে হবে ।

মেঘ মেহতাব কে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয় । বুকে কয়েকটা কিল ঘুষি দিয়ে বলে উঠে ,

মেঘ : আপনি বড্ড খারাপ আমায় ভালোবাসেন না , অনুভব করেন না ।

মেহতাব মেঘের হাত তার বাম বুকে চেপে ধরে । মেঘ অনুভব করতে পারছে মেহতাবের হার্টবিট বিদ্যুতের বেগে চলছে । মেহতাব মেঘের চোখে চোখ রেখে বলে উঠে ,

মেহতাব : কিছু জিনিস শুধু দুর থেকে অনুভব করা যায় ধরা ছোঁয়া যায় না । এই হৃদয়ে তোমার জন্য ব্যাকুলতা অনুভব করতে তোমার কি ধরা ছোঁয়ার প্রোয়জন ?

মেঘ ওষ্ঠাধর প্রসারিত করে মুচকি হেসে নেশালো কণ্ঠে বলে ওঠে ,

মেঘ : না আপনার কিঞ্চিৎ ভালোবাসাই যথেষ্ট এই মেঘকে অনুভব করিয়ে দিতে । এই সাহেব মেঘের একান্ত মেঘের ।

মেহতাব স্মিত হেসে বলে ওঠে ,

মেহতাব : তোমার ঠোঁটের হাসি যথেষ্ট আমায় অনুভব করিয়ে দিতে যে তুমি আমার । ভীষণ ভালোলাগে যখন তুমি আমার চোখে চোখ রেখে তাকাও তোমার চোখের এক চাহনি আমায় বিশ্বাস করিয়ে দেয় তুমি আমার শুধু আমার । তোমার মুখের চাহনি আমার মনের ছবিতে আকা হয়ে গেছে চাইলেও তা ছিঁড়ে ফেলা সম্ভব নয় । তোমার ঠোঁটের হাসি আমার বুকে গেথে গেছে চাইলেও তা মুছে ফেলা সম্ভব নয় । আসলে তুমি টাই এই মেহতাবের সব । এই সাহেব তোমায় বড্ড চায় অনেক চায় ভীষণভাবে চায় অর্ধাঙ্গিনী ।

মেহতাবের প্রকাশ্য কথাগুলো আজ বেশ ভালো লাগছে শুনতে মেঘের কাছে । মেঘ মেহতাবের চোখে দৃষ্টি রেখে বলে ওঠে ,

মেঘ : ভালোবাসেন আমায় ?

মেহতাব উত্তর দেয় না কোলে তুলে নেয় তার প্রিয়তমাকে ।

সকাল হয়ে গেছে । বাইরে কুয়াশার কারণে জানালায় পানির সূক্ষ কণা জমে আছে । মেঘ বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে । মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে । মেঘ শোয়া থেকে উঠে পরে । আসে পাশে তাকায় মেহতাব কে খুঁজতে মেহতাব ঘরের কোথাও নেই । মেঘ হাই তুলে নিজের গায়ে মেহতাবের শার্ট দেখে থমকে যায় । কালকের ঘটনা কিছুই মনে পরছে না তার । তারাতারি বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে । ফ্রেশ হয়ে বের হতেই তার চোখ যায় বিছানার পাশে টেবিল ল্যাম্প এর দিকে । তার পাশে চিরকুট জাতীয় কিছু রাখা । মেঘ চিরকুট খুলতেই থমকে যায় ।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে