#তুমিময়_নেশার_আসক্তি
#আলফি_শাহরিন_অর্পা
#পর্ব_৪
–হাতটা ছাড়ো।
এরকম গম্ভীর কণ্ঠের আওয়াজ শুনে নেশার অন্তরটা কেঁপে উঠলো। তাই সে তাড়াতাড়ি করে হাতটা ছেড়ে দিলো। তারপর সে উক্ত ব্যক্তির কাছে তার প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।কিন্তু ব্যক্তিটির কোনো হেলদোল দেখছে নাহ। তাই সে আবার প্রশ্ন করলো-
–কী হলো জবাব দিচ্ছেন না কেন?
–ফায়াজ চৌধুরী কাউকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয়। আর আরেকটা কথা কখনো আমার কাজে বাঁধা দিতে আসবে না। এই বলে ফায়াজ ছেলেটাকে আবার মারতে থাকে। মারতে মারতে একদম রক্তাক্ত করে ফেললো। ছেলেটার এ অবস্থা নেশা দেখতে পারলো না। তাই সে কোনো কিছু না ভেবে ফায়াজকে ধাক্কা দিয়ে দিলো। এর ফলে ফায়াজ কিছুটা পিছিয়ে গেলো। যার ফলে তার চোখ কিছুটা রক্তিম আকার ধারণ করলো।রক্তচক্ষু নিয়ে নেশার দিকে তাকালো ফায়াজ। তখনই সেখানে রিখিয়া উপস্থিত হলো। এবং ফায়াজকে উদ্দেশ্য করে বললো-
–ভাইয়া! এই মেয়েটা ভারি বেয়াদব। সিনিয়রদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় তা এই মেয়ে যানে নাহ।
–তোর সাজা শেষ। এখন তোর জায়গায় তোর যা শাস্তি পাওয়ার কথা ছিলো তা এখন এই মেয়ে পাবে। যা এখান থেকে। ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বললো ফায়াজ।
–তুমি নাম কী? নেশাকে উদ্দেশ্য করে বলে ফায়াজ।
–জী..নে..নেশা।
–এইটুকু কী কমন সেন্স নেই কেউ যদি নাম জিজ্ঞেস করে তাহলে পুরো নাম বলতে হয়?পুরো নাম কী?
–জী…আজমিরা মুনতাসীর নেশা।
–দোস্ত! দোস্ত! এই আমি কী শুনলাম!তুই নাকি ফায়াজ ভাইয়াকে ধাক্কা মেরেছিস? অবাক করা কণ্ঠে কথাটি বললো রিমঝিম।
–হ্যাঁ দিয়েছি। উনি অন্যায় করছিলো। কেউ কী একটা মানুষকে এভাবে মারে।
–দোস্ত উনি আমাদের ভার্সিটির ভিপি।করুণ কণ্ঠে রিমঝিম বললো।
–কী!
–হমম। ফায়াজ চৌধুরী ব্যক্তিটি দেখতে যতটা সুন্দর মানুষ হিসেবে ঠিক ততোটাই রাগী এবং জেদি। আমি শুনেছি উনি একবার যা ভেবে ফেলে তা করেই ছাড়ে।আর উনি ওনার প্রিয় জিনিস গুলো নিয়ে খুব বেশি পজেসিভ। বর্তমানে উনি আমাদের ভার্সিটির মাস্টার্স এর স্টুডেন্ট। তার বাবা রায়হান চৌধুরী বাংলাদেশের একজন সফল বিজনেস ম্যানদের মধ্যে একজন। আর তার মার সাথে তার বাবার অনেক বছর আগে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তাই তার ব্যাপারে কেউ কিছু জানে নাহ। এইটুকু বলে রিমঝিম হাঁপাতে লাগলো।
এতোক্ষণ রিমঝিমের কথা হা করে শুনছিলো নেশা।
–তুইতো তার উপর পুরা রিসার্চ করে বসে আছিস।
–কিন্তু তুই তাকে ধাক্কা মেরে ঠিক করিস নাই। যে ছেলেটাকে তিনি মারছিলেন সে কিছুক্ষণ আগে একটা মেয়েকে টিজ করছিলো। আর জানিস ওখানে উপস্থিত কেউ মেয়েটাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে নেই। ভাইয়াকে ফোন করে কেউ এই ব্যাপারে ইনফরমেশন দেয় তারপর সে এসে ঐ ছেলেটাকে ইচ্ছামতো কেলানি দেয়। ভাইয়াকে তার কাজে কেউ ডিসটার্ব করুক তা তার একদমই পছন্দ নয়। কেউ করলে তাকে এর শাস্তি ভোগ করতে হয়। তোর ওনাকে সরি বলা দরকার।
–উফফ! আমি কী করলাম। আমার ওনাকে সরি বলা দরকার কথাটি বলে নেশা উঠে দাড়ালো।অতঃপর নেশা বললো-
–তাকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে?
নেশা লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলো হঠাৎ সে কারো সাথে ধাক্কা খায়। নেশা পড়ে যেতে নিবে ঠিক তখনই কেউ তার হাত ধরে টান দিয়ে তাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়।
–আপনি ঠিক আছেন তোহ?
–জী আমি ঠিক আছি।
–আমি আবির। আপনার নাম কী?
–নেশা।
–তা আপনি কী এই ভার্সিটিতে নতুন ভর্তি?
–জী।
–তা আপনি এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছেন?
–লাইব্রেরি। কিছুটা বিরক্তি নিয়ে কথাটি বললো নেশা। আর মনে মনে ভাবলো (এই কার পাল্লায় পড়লাম। ভুল করে ধাক্কা খেয়েছি এখন কী ভুলের মাশুল হিসেবে নিজের পুরো বায়োডাটা দিতে হবে। এমনেও আমি অপরিচিত লোকদের মধ্যে কমফোর্টেবল ফিল করি নাহ। তার মধ্যে ইনি কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসছে।)
–আমি মনে হয় আপনাকে বিরক্ত করছি?
–এবার আপনি একটা ঠিক কথা বলেছেন। আপনি আসলে আমাকে অনেক বিরক্ত করছেন কথাটি মনে মনে বললেও মুখে বললো-
–দেখুন আমার লেট হচ্ছে। আমাকে এখন যেতে হবে। যখনি নেশা এগোতে যাবে তখনই আবির ওর হাতটা ধরে ফেলে এবং মুচকি হাসি দিয়ে বলে-
— মিস আপনার ফাইলটাতো নিয়ে যান। নেশা এই কথাটা শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তড়িঘড়ি করার ফলে ফাইলের কথা সে ভুলেই গেছিল। নেশাও মুচকি হাসি দিয়ে আবিরের হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে নিলো। ওদের দিকে কেউ দূর থেকে শকুনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর রাগে ফুঁসছে। চোখ দুটি রক্তিম আকার ধারণ করেছে। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। ব্যক্তিটির এখন ইচ্ছে করছে দু’জনকে জানে মেরে ফেলতে।
নেশা লাইব্রেরিতে গেলো ফায়াজকে খুঁজতে। কিন্তু লাইব্রেরিতে ফায়াজতো দূর একটা মশা-মাছি পর্যন্ত নেই। হঠাৎ করে লাইব্রেরির লাইট চলে গেল। পুরো রুম জুড়ে আঁধারের ছড়াছড়ি। তাই নেশার এখানে থাকা সেফ মনে হচ্ছে নাহ। তাই সে দ্রুত পায়ে গেটের দিকে এগিয়ে গেলো কিন্তু ঠিক তখনই সে কারো পদধ্বনি শুনতে পেলো,মনে হয় কেউ তার দিকে এগিয়ে আসছে। এখন তার খুব ভয় করছে। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
তখনই তার মনে হলো কেউ তার হাত ধরে টান দিয়ে তাকে দেওয়ালের সামনে দাড় করিয়ে দিলো। অতঃপর আগুন্তক ব্যক্তিটি দেওয়ালের দু’পাশে হাত রেখে তাকে বন্দী করে ফেললো। হঠাৎ করে আগন্তুক ব্যাক্তিটি তার খুব কাছে এসে পড়লো। এতোটা কাছে যে তারা একে ওপরের নিঃশ্বাস শুনতে পারছে।
চলবে….