তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-১৮+১৯+২০

0
194

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৮
#মেহরিন_রিম
_যাবো ঠিক আছে,কিন্তু যাবো টা কোথায়?
সোফায় বসে চিপস খেতে খেতে প্রশ্নটা করলো ইশা। ফাইজা তার পাশে বসেই টিভি দেখছিল। ইশার প্রশ্নে উত্তর দিয়ে বলে,
_আমার ইউনিভার্সিটিতে পিঠা উৎসব চলতেছে। চাইলে আমরা সেখানেই যেতে পারি।

ইশা বোকার মতো প্রশ্ন করলো,
_কিন্তু আমার তো পিঠা পছন্দ না,তুমি তো জানোই।

_আরে বলদি, যাবো ঘুরবো ফিরবো মজা করবো। পিঠা খেতেই হবে তা তো নয়।

_তাও ঠিক বলেছো।

_আর ওখান থেকে বেড়িয়ে রেস্টুরেন্ট এ যাবো। ওখানে ডিনার করে তারপর ফিরবো।

_তাহলে মোহনা কেও নিয়ে যাই?

_হ্যা অবশ্যই।

_আচ্ছা শোনো, তুমি শাড়ি পরবে তো?

_আমি? তুই পরবি তাহলে আমিও পড়তাম।

_আমার এখন শাড়ি পরার মুড নেই গো। কিন্তু তুমি পরো না প্লিজ। কতদিন তোমাকে শাড়ি পড়তে দেখিনা।

_যদি হাটতে গিয়ে পড়ে যাই তখন?

_আরেএএএ,আমি থাকতে তোমায় পড়তেই দেবোনা।

ফাইজা সামান্য হেসে ইশার গাল টেনে দিয়ে বলল,
_আচ্ছা ঠিক আছে বাবা পড়বো। মোহনাকে ফোন করে জানিয়ে দে। আর আমায় শাড়ি পড়িয়ে দিতে হবে কিন্তু।

_হ্যা হ্যা চলো চলো।

ইশাকে এমন হাসিখুশি দেখে ফাইজাও অনেক খুশি হলো। মেয়েটার সাথে মুড অফ করে থাকাটা একদম ই মানায় না।

___
আদৃত অফিসে বসে কিছু ফাইল চেক করছিল তখনই তার ফোনে সায়ান এর কল আসে। আদৃত ফোনটা রিসিভ করতেই সায়ান বলে ওঠে,
_কোথায় তুই?

_অফিসে,কেন?

_যেখানেই থাকিস না কেন। এক্ষুনি বেড়িয়ে ভার্সিটিতে আসবি,কতদিন বন্ধুরা একসাথে আড্ডা দেওয়া হয়না বলতো!

_তো তোরা যা না, আমার কাজ আছে কিছু।

_কোন দিন তোর কাজ থাকেনা বলতো? কোনো কথা নয়, আসতে বলছি যখন আসবি ব্যাস।

কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো সায়ান। আদৃতের এখন বন্ধুমহলে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। এমনিতেই এই কদিন ধরে ইশার কোনো দেখাই পায়নি। কখনো বা ঐ আশ্রমের আশেপাশে গিয়ে ঘুরেছে আবার কখনো ছাঁদে গিয়ে দুরবিন দিয়ে ইশার বাড়ির ছাঁদের দিকে নজর রেখেছে,তবে কোনো লাভ ই হয়নি। আদৃত বুঝতেই পারছেনা ও এমন পাগলামি কেন করছে।
মাথা চেপে ধরে কিছুক্ষন বসে রইলো আদৃত। অত:পর বাইকের চাবিটা হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালো, ভাবলো হয়তো বন্ধুদের সাথে থাকলে ওর মনটাও কিছুটা শান্ত হবে।

পূর্ণও নিজের কাজ নিয়ে বিজি, কদিন ধরেই একটা কিডন্যাপিং কেস এর ইনভেস্টিগেশন নিয়ে খুব ব্যাস্ত সময় কাটছে তার। অবশেষে সেই কেস সলভ করতেও সক্ষম হয়েছে সে। তবে পূর্নর কাজটা সবসময় গোপন ভাবেই সম্পন্ন হয়, এমনকি নিজের পরিচয় ও তাকে গোপন রাখতে হয়। নিজের ব্যাক্তিগত জীবনে যাই ঘটে যাকনা কেন, কাজের ক্ষেত্রে তার প্রভাব কখনোই পড়তে দেয়নি পূর্ন আর দেবেও না।
সায়ান পূর্ণকে ফোন করেও ভার্সিটিতে যেতে বলেছে, পূর্ণ আর আপত্তি করেনি। এমনিতেও দেশে ফেরার পর পুড়নো বন্ধুদের সাথে দেখা করা হয়নি, একটা গেটটুগেদার হলে খারাপ হয়না।

___
_ইশা হয়েছে তোর?

_চুপ করে দাড়াও তো আপু,ঠিক করে পড়াতে দাও শাড়িটা।

_দেখিস ভাই, আমি কিন্তু সেই কবে লাস্ট শাড়ি পরেছি নিজের ও মনে নেই। উষ্টা খেয়ে পড়ে গেলে কিন্তু মান ইজ্জর সব শেষ।

ইশা শাড়ির কুচিটা ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_আরে এত ভয় পাও কেনো বলো তো, আমিতো শাড়ি পড়ে দৌড়াতেও পারি।

_তোর তো অভ্যাস আছে আমার নেই।

_কিচ্ছু হবে না, মোহনা মেবি দাঁড়িয়ে আছে নিচে এসে। চলো যাই..

ফাইজা শাড়ির কুচি ধরে সাবধানে পা বাড়িয়ে নিচে এলো। রুকসানার থেকে বিদায় নিয়ে ইশা,ফাইজা,মোহনা তিনজন বেড়িয়ে পরলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

___
পূর্ন,সায়ান,আদৃত সহ তাদের আরো পাঁচ থেকে ছয়জন বন্ধু একসঙ্গে মাঠে বসে আছে। একটা কথা একদম সত্যি, লাইফে যতই ঝামেলা থাকুক না কেন বন্ধুরা একসঙ্গে থাকলে সবকিছু গায়েব হয়ে যায়। তাদের মধ্য থেকে অনিক নামের একটি ছেলে বলে উঠলো,
_প্রেম করায় ভীষণ প্যারা ভাই, ভাবতেছি এবার বিয়েটা করেই ফেলবো।

সায়ান বলল,
_তোরা বিয়ার চিন্তা করতাছোস,আর আমি কিনা একটা প্রেমও করতে…

হঠাৎ সামনের দিকে সায়ানের চোখ পড়তেই থেমে যায় সে। মোহনাকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
_প্রে…ম, এবার একটা প্রেম তো আমি করবোই। ঐ তোরা থাক, আমি আসতেছি একটু পর।

পূর্ণ ভ্রু কুঁচকে বলল,
_তোর আবার হঠাৎ হলো টা কি?

কে শোনে কার কথা,সায়ান সেখান থেকে উঠে মোহনার দিকে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়।
গাড়ি থেকে নেমে মোহনা একটু আগেই ভিতরে ঢুকেছিল, আর ফাইজা তার শাড়ি সামলে ইশাকে নিয়ে কিছুটা পড়ে ভিতরে আসে, ক্যাম্পাস অনেক বড় হওয়ায় মাঝে অনেক জায়গা রয়েছে,চারপাশে সব স্টল।
ইশা ভিতরে ঢুকেই দেখতে পেলো মোহনা একটা স্টল এর দিকে যাচ্ছে আর সায়ান তার দিকেই এগিয়ে আসছে। এটা দেখে ইশা ফাইজাকে বলল,
_আপু তুমি ধীরে ধীরে আসো হ্যা।

কথাটা বলেই ইশা ছুটে গিয়ে সায়ান এর সামনে দাঁড়িয়ে মেকি হেসে বলল,
_আরে আপনি এখানে ভাইয়া? ভালো আছেন তো?

হঠাৎ ইশা সামনে এসে পড়ায় সায়ান ও কিছুটা চমকে যায়, তবে সেও মুচকি হেসে জবাব দেয়,
_হ্যা তুমি ভালো আছো তো?

_আমিতো ভালোই থাকি, কারোর কাছে যাচ্ছিলেন বুঝি?

এতক্ষনে ইশার গলার আওয়াজ শুনে মোহনাও সেখানে উপস্থিত হয়। সায়ান কে দেখে বেশ ভালোই বুঝতে পারে যে সে তার দিকেই আসছিল আর ইশা মাঝখানেই তাকে আটকে দিয়েছে।
সায়ান কিছু না বলায় ইশা আবারো বলে,
_শুধু মেহুকে গিফট দিলে চলে বলুন তো? ওর বেস্টফ্রেন্ড কেও মাঝে মাঝে কিছু গিফট দিতে পারেন তো নাকি।

মোহনা ইশার কানে কানে গিয়ে বলল,
_কিসব বলছিস ইশা,চুপ কর।

ইশা এবার হেসে বলে,
_আরে তুই থাম তো। আর ভাইয়া আপনাকে বলছি,এত নার্ভাস হলে চলে? থাক আমি আবার কারোর মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে চাইনা। যেদিকে যাচ্ছিলেন যান।

ইশার কথায় মোহনা কিছুটা লজ্জা পায়। ইশা সেখান থেকে সরে যাওয়ায় সায়ান ও খুশি হয়ে মোহনার সাথে কথা বলতে চলে যায়।

ফাইজা একটু দূড়ে দাঁড়িয়েই ওদের কার্যকলাপ দেখছিল। ইশা তার কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করে,
_কিরে? কেসটা কি বল তো,আমাকে তো আগে বলিসনি কিছু।

ইশা হাসতে হাসতে বলে,
_আরে বলবো বলবো, আমিতো একটু মজা নিতে গেছিলাম আরকি। ওরা থাকুক তো, আমরা ঐদিকে যাই চলো।

_ওকে চল।

এদিকে আদৃত,পূর্ণদের গ্রুপের একটা ছেলে ফাইজা কে দেখতে পেয়ে বলে,
_এই, ঐ মেয়েটা আমাদের জুনিয়র ছিল না? নামটা যেন কি?
ছেলেটার নজর লক্ষ্য করে সেদিকে তাকাতেই আদৃত আর পূর্ন দুজনেই অবাক হয়ে যায়। পূর্ণ ফাইজাকে শাড়ি পরা অবস্থায় এর আগে কখনো দেখেনি, আর আদৃত যে এখানে ইশাকে পেয়ে যাবে সেটা তো সে কল্পনাও করেনি।

_আরে মনে নেই তোর! ওটা তো ফাইজা,পূর্ণর পিছনে ঘুড়ে বেড়াতো যে।

ছেলেটার কথা শুনে সেখানের সবাই ই হাসতে লাগলো।আদৃত ওদের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_এখানে হাসার কি হলো?

একজন পূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলল,
_হাসা নাহয় থামালাম। কিন্তু পূর্ণ, তুই ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? প্রেমে ট্রেমে পড়লি নাকি?

পূর্ণর ধ্যান ভাঙে এবার। ফাইজার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,
_এই টপিক বাদ দে। ও এই ভার্সিটিতেই পড়ে, আমরা যেমন এসেছি তেমনি ও এসেছে। এ নিয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাইছিনা আমি।

বাকিরাও আর কিছু বললোনা এই নিয়ে। তবে আদৃত এর নজর অন্যদিকে, সে তাকিয়ে দেখছে প্রাণোচ্ছল ইশাকে। তার এই কদিনের সকল অস্থিরতা যেন নিমিষেই কেটে গেলো এই প্রাণোচ্ছল ইশাকে দেখে। ভাগ্যেস সায়ানের কথায় এখানে এসেছিল,নাহলে তো ইশার দেখাই পেতোনা। আর দেখতেও পেতোনা তার হাস্যজ্জল মুখখানা।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৯
#মেহরিন_রিম
_ফাইজা? তুই আসবি আমায় বলিসনি তো।
ক্যাম্পাসের অন্যপাশ থেকে ফাইজার বান্ধবী সোহা এসে বললো কথাটা। ফাইজা সামান্য হেসে বলল,
_ঐতো একটু বোনেদের নিয়ে এলাম,তাই আর জানানো হয়নি।

সোহা ইশার দিকে দেখিয়ে বললো,
_ইশা রাইট? ফাইজা আমাদেরকে তোমার কথা অনেক বলেছে।

ইশা মুচকি হাসলো। সোহা আগেই দেখেছে পূর্ন এখানে এসেছে। সোহা ফাইজা কে একটু পাশে নিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো,
_পূর্ণ ভাইয়া কবে দেশে ফিরলো রে? তুই জানিস কিছু।

ফাইজা কপাল কুঁচকে বলল,
_আমায় জিজ্ঞেস করছিস কেন? আমি কি করে জানবো?

_ঐদিকে দেখ।
পূর্নর দিকে নজর রেখে কথাটা বলল সোহা। ফাইজা সোহার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকাতেই পুর্ন, আদৃতসহ আরো অনেককে দেখতে পেল। ফাইজা বেশ বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে ঘুরে বললো,
_যার ইচ্ছে আসতেই পারে,এখানে আমাকে দেখানোর কি আছে সোহা?

সোহা কিছুটা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
_না এমনিই বললাম আরকি।

ইশা ওদের সামনে এসে বিরক্ত হয়ে বললো,
_কি হলো আপু? আমরা কি এখানে দাঁড়িয়েই থাকবো নাকি অন্যদিকেও যাবো? চলো ঐদিকটায় যাই…

কথাটা বলেই ইশা ফাইজার হাত ধরে পূর্নরা যেদিকে বসে আছে সেদিকে যেতে নিলেই ফাইজা তাকে থামিয়ে দিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
_ওখানে তেমন কিছু নেই রে ইশা, আমরা বরং ঐদিকটায় যাই? মোহনাও তো বোধহয় ওদিকেই গেছে।

_মোহনাকে ছাড়ো তো ওর মতো। আর ওদিকে মেবি নাচগান ও হচ্ছে,চলো না যাই।

ফাইজা আর কিভাবে বোঝাবে যে সে পূর্নর সামনে পড়তে চায়না। বাধ্য হয়ে ইশার সঙ্গে সেদিকেই যেতে হলো।
ইশার এখনো আদৃতের দিকে চোখ পড়েনি তাই হয়তো সে ওদিকটায় যেতে চাইছে,নাহলে সে নিজেও যেতোনা।

আদৃতের ফোনে একটা কল আসায় সে একটু সাইডে গিয়ে ফোনে কথা বলছিল আর ইশার দিকে নজর রাখছিল।
ইশা ফাইজা কে নিয়ে একদম আদৃতের পাশ থেকে হেটে দু কদম গিয়েই হাটা থামিয়ে দেয়। ফাইজা ভ্রু কুঁচকে বলে,
_কি হলো থামলি কেন?

ইশার যেন মনে হলো ও আদৃত কে দেখেছে। তাই ধীরেধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে একটু পিছনে তাকালো। আদৃত ও তখন ফোন কানে ধরে ইশার দিকেই তাকিয়ে ছিল। ইশা চট করে চোখটা সরিয়ে নিয়ে বিরক্তির সুরে ফিসফিস করে বলল,
_এই লোকটা অল টাইম আমার সামনে চলে আসে কেন!

_কি হলো,কিছু বললি?

_হ্যা,না না কিছুনা চলো।

পূর্নদের কিছুটা পাশ থেকেই চলে গেলো ইশা আর ফাইজা। পূর্ণ চোখ তুলে ফাইজার দিকে তাকালেও ফাইজা একবারের জন্যও তাকায়নি তার দিকে।

___
সায়ান মোহনার সঙ্গে হেটে হেটে বিভিন্ন কথা বলে চলেছে। মোহনাও তার সঙ্গে হাটছে আর এটা ওটা খাচ্ছে। মোহনা এবার সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_আপনি যে এত ভীতু জানতাম না তো।

_হুয়াট! আমি ভীতু? কেন কেন?

_ইশার কথায় যেভাবে নার্ভাস হয়ে যাচ্ছিলেন,তাতেই তো বোঝা যায় আপনি কত্ত ভীতু। এত ভীতু হলে মোটা,চিকন কোনো মেয়েই আপনাকে বিয়ে করবেনা হুম..

সায়ান মোহনার কানের কাছে গিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
_বউতো বোধ হয় আমি পেয়েই গেছি।

সায়ান এর কথায় বেশ লজ্জা পায় মোহনা। আমতা আমতা করে বলে,
_ই ইশা আমাকে খুজছে মনে হয়,আমি গেলাম।

কথাটা বলেই সেখান থেকে ছুটে চলে যায় মোহনা। আর সায়ান সেই একই যায়গায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন হেসে আবারো বন্ধুমহলে ফিরে যায়।

সায়ান হাসিমুখে ফিরে আসতেই পূর্ণ গম্ভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
_তোর হাবভাব কিন্তু ভালো ঠেকছে না সায়ান। কি করতে গিয়েছিলি তুই?

সায়ান বেশ ভাব নিয়ে বললো,
_তোদের জন্য ভাবি নিয়ে আসার প্ল্যান করছি বুঝলি।

সায়ান এর কথা শুনে সেখানে বসে থাকা সবাই হাসলো, পূর্ন আবারো বলল,
_তাই জন্য বাচ্চা একটা মেয়ে?

_আরে মেরা ভাই, পেয়ার উমার নেহি দেখতা হে রে..

___
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে, তবে ক্যাম্পাসে মানুষের সংখ্যা কমেনি বরং বেড়েছে। পূর্ণ,সায়ান সহ বাকি সবাই চলে গেলেও আদৃত এখনো ক্যাম্পাসেই রয়েছে। ঘুড়েঘুড়ে ইশাকে খুজতে তার কিছুটা অস্বস্তি লাগছে, তাই ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে একই জায়গায় থেকে আশেপাশে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে ইশাকে।

মোহনা,ফাইজা,ইশা পুড়ো ক্যাম্পাস ঘুরে বেশ ভালোই মজা করেছে। ফাইজা প্রথম থেকে একটু আনইজি থাকলেও পূর্নকে বেড়িয়ে যেতে দেখার পর সেও কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। তিনজনই বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হবে তখন ই ইশার কানে একটা বিড়ালের ডাক ভেসে আসে। ইশা পাশে তাকাতেই দেখতে পায় একটা পার্সিয়ান বিড়াল মানুষের মাঝে গুটিসুটি মেড়ে বসে জোড়ে জোড়ে ডাকছে,তার গলায় একটা বেল্ট বাধা। ইশা দৌড়ে গিয়ে বিড়াল টাকে কোলে নিয়ে আদর করে,ইশার পিছন পিছন মোহনা আর ফাইজাও চলে আসে সেখানে।
ইশার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে বিড়াল টা হয়তো তার মালিক এর থেকে হারিয়ে গেছে। ইশার ভীষণ মায়া হলো বিড়াল টার জন্য। ইশা ফাইজা আর মোহনার দিকে তাকিয়ে বললো,
_তোমরা একটু পানি নিয়ে আসোনা ওর জন্য, কি জানি বেচারা কতক্ষন ধরে কাঁদছে।

_আচ্ছা তুই দাঁড়া এখানে, আমরা পানি নিয়ে আসছি।
কথাটা বলেই মোহনা আর ফাইজা পানি আনতে চলে গেলো। ইশা বিড়াল টাকে নিচে নামিয়ে নিজেও ওর সামনে বসে আফসোস এর সূরে বললো,
_ইশ কি কিউট বিড়াল টা। কার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে কে জানে! এখন ওর মালিককে খুঁজবো কি করে? আর ওকে তো এভাবে রেখেও যেতে পারবো না।

আদৃত দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটাই দেখছিলো। একটা বিড়ালের জন্য কিনা মেয়েটা কত টেনশন করছে, আসলেই সেদিনের আন্টি ঠিক ই বলেছিল। মেয়েটা ভীষণ সহজ সরল। মনে মনে এসব ভেবে আদৃত শান্ত পায়ে হেটে ইশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

ইশা বিড়ালটার দিকে তাকিয়েই তার কথা ভাবছিল। হঠাৎ সামনে একজনকে দাঁড়াতে দেখে সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে উপরে তাকায় সে। দেখতে পায় আদৃত বুকে হাত গুজে তার দিকেই তাকিয়ে আছে, চট করে উঠে দাঁড়ায় ইশা। তার মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকার পরও আদৃত কে সেখানে থেকে যেতে না দেখে ইশা এবার বলে ওঠে,
_এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

আদৃত কিছু বলে না, ইশা আবার ও বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
_কি হলো চুপ করে আছেন কেন? আর আপনি সবসময় আমার সামনে চলে আসেন কেন বলুন তো?

আদৃত কিছুটা ঝুকে বিড়াল টা কে কোলে নিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,
_একই প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি।

ইশা আঙুল উঁচিয়ে বলতে যায়,
_আপনি আবারো…

ইশার কথা সম্পূর্ন হতে দেয়না আদৃত। তার মাঝেই বিড়ালের থেকে চোখ সরিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ঝগড়া করে নিশ্চই বিড়ালের মালিককে খুঁজতে পারবে না।

থেমে গেলো ইশা। বিড়ালটার দিকে তাকিয়ে আবারো মায়া হলো তার। আদৃতের দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_তাহলে কি করবো?

আদৃত সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
_ঝগড়া করার ক্ষেত্রে পিএইচডি না করে নিজের ব্রেইন খাটালেই উপায় পাওয়া যায়, আর সেটা তো তুমি করবে না।

ইশা রাগী দৃষ্টিতে তাকালো আদৃতের দিকে। আদৃত সেদিকে খেয়াল না করে সামনে এগোতে এগোতে বলল,
_এসো আমার সাথে।

ইশা ঘুড়ে গিয়ে আদৃর এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_কেন কেন কেন? আপনার সাথে আমি কেন যাবো শুনি? মতলব কি আপনার?

আদৃত বিরক্তিসূচক দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
_আসতে হলে এসো,নাহলে থাকো এখানে।

আদৃত চলে যেতে নিলেই ইশাও তার পাশেপাশে যেতে লাগল। আর অনর্গল বলতে রইলো,
_আরে আরে,এভাবে ওকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? চুপ করে আছেন কেন? কথা বলতে পারেন না? আরে কিছু তো বলুন।

আদৃত মনে মনে হাসলো ইশার কথা শুনে কিন্তু বাহিরে তা প্রকাশ করলো না। আদৃত বিড়াল টাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে স্টেজ এর পাশে এসে কয়েকজন লোকের সঙ্গে কিছু কথা বলল। তারপর সেখান থেকে একজন লোক স্টেজ এ উঠে বিড়াল টার হারিয়ে যাওয়ার কথা বলল এবং তার মালিককে স্টেজ এর সামনে এসে বিড়ালটাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলল।
ইশা এতক্ষনে সবটা বুঝতে পারলো। নিজের মাথায় গাট্টা মেরে ক্ষীণ স্বরে বলল,
_ইশ,এই আইডিয়া টা আমার মাথায় এলোনা কেন?

দু তিন মিনিট এর মধ্যে বিড়ালের আসল মালিক সেখানে এসে আদৃতের কোল থেকে বিড়ালটিকে নিয়ে আদর করতে লাগলেন। আদৃত কে ধন্যবাদ জানাতে গেলে সে বাধা দিয়ে ইশার দিকে দেখিয়ে বলল,
_না না আমাকে থ্যাংকস বলতে হবেনা, আপনার বিড়ালটিকে ও পেয়েছিল আমি না।

মহিলাটি ইশাকেও ধন্যবাদ জানিয়ে বিড়ালটিকে নিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। ইশা আশাপাশে তাকিয়ে আদৃতের থেকে নিজের নজর লুকোনোর চেষ্টা করতে লাগলো। আদৃত কিছুক্ষন ইশার দিকে তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে চলে যেতে নিলেই ইশা পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,
_শ শুনুন..

আদৃত মুচকি হেসে পিছনে ঘুরে গম্ভীর দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
_হুম বলো।

ইশা ঘাড়ে হাত ঘষে আমতা আমতা করে বলল,
_থ্যাংক ইউ।

আদৃত খানিকটা অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
_হুম? কি বললে?

_ব বললাম থ্যাংক ইউ।

_হঠাৎ থ্যাংক ইউ কিসের জন্য?

_আপনি যে বিড়াল টাকে ওর মালিক এর কাছে পৌঁছে দিতে হেল্প করলেন তাই।

আদৃত নিজের সানগ্লাস টা চোখে দিতে দিতে ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসির রেখা টেনে বলল,
_যাক তুমি তাহলে থ্যাংক ইউ ও বলতে পারো।

ইশা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
_পারবো না কেন শুনি? আমি মোটেই অকৃতজ্ঞ নই, হেল্প করেছেন তাই থ্যাংক ইউ বলেছি।

আদৃত ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
_ওয়েলকাম..

কথাটা বলেই আদৃত আবারো পিছনে ঘুড়ে হাটতে লাগলো। আজকে আর ইশার রাগ হচ্ছেনা কোনো। আদৃতের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
_না ইশা,লোকটাকে যেমন ভেবেছিলি উনি ততটাও খারাপ নয়..

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২০
#মেহরিন_রিম
_তোকে আমরা পুড়ো ক্যাম্পাস এ খুজে বেড়াচ্ছি,আর তুই স্টেজ এর পিছনে দাঁড়িয়ে কি করছিস? বিড়াল টাই বা কোথায়?

একনাগাড়ে কথাগুলো বলল ফাইজা। ইশা সামনে হাটা শুরু করে বলল,
_ওর মালিক এসে নিয়ে গেছে।

মোহনাও ইশার পাশে হাটতে হাটতে বলল,
_ওর মালিক কে তুই কোথায় পেলি?

_সন্ধ্যা হয়ে গেছে,চল যেতে যেতে বলছি।

ইশা,ফাইজা,মোহনা গাড়িতে উঠে পড়লো রেস্টুরেন্ট এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে। গাড়িতে বসেই ইশা সব ঘটনা খুলে বলতে লাগলো। সবটা শুনে ফাইজা বললো,
_আমি তোকে আগেই বলেছিলাম, লোকটা খারাপ নয়। তুই শুধুশুধুই ওনার সঙ্গে ঝগড়া করিস।

ইশা চুপ করে রইলো,মোহনা হঠাৎ করে সোজা হয়ে বসে বলল,
_ভাইয়ার সাথে তোর এতবার দেখা হলো,আর তুই কিনা একটা সেলফি ও তুলতে পারলিনা ইশা!

সেলফির কথা মাথায় আসতেই ইশা হা করে তাকালো মোহনার দিকে। তারপর অসহায় চোখে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বললো,
_ওনার সঙ্গে বোধ হয় সত্যিই এ জীবনে আমার আর সেলফি তোলা হবেনা।

ইশার কথা শুনে ফাইজা,মোহনা দুজনেই হাসতে লাগলো, আর তা দেখে ইশা মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।

___
_কি ব্যাপার বলতো আদি? হঠাৎ এত খুশি খুশি লাগছে তোকে।

সোফায় বসে খুশিমনে এলোমেলোভাবে গিটারে সুর তুলছিলো আদৃত। পূর্ন বেড এ বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল। আদৃতের দিকে চোখ পড়তেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটা বলল পূর্ন। আদৃত গিটার থেকে মনোযোগ সরিয়ে পূর্নর দিকে তাকিয়ে বলে,
_কোথায়? আমি তো নরমাল ই আছি।

_হ্যা কিন্তু একটু বেশিই নরমাল আছিস,আর এটাই তো অদ্ভুত লাগছে।

আদৃত মুখে কিছুটা বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বলল,
_এত বেশি ভাবতে কে বলেছে তোকে?

পূর্ণ আর কথা বাড়ালো না,সে জানে আদৃত এখন তাকে কিছুই বলবেনা। তবে আদৃতের হাবভাব দেখে পূর্ন বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যে তার মনে কিছু তো চলছে।

___
রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সারে আটটার মতো বেজে গেলো ইশা আর ফাইজার। অবশ্য তারা বাড়িতে বলেই গিয়েছিল ফিরতে দেড়ি হবে।
এত ঘোরাফেরা করে ইশা বেশ ক্লান্ত,আর এতক্ষন শাড়ি পরে থাকায় তো ফাইজা আরো বেশি বিরক্ত। বাড়ির দরজায় এসে কলিং বেল দিতেই রুকসানা এসে দরজা খুলে দিলেন। তবে ভিতরে এসে যে ইশা এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে তা ভাবতেও পারেনি।

ভিতরে দিকে সোফার দিকে তাকিয়ে তার বাবা জহির আহমেদ কে দেখে ঠোঁটে চওড়া হাসি ফুটে ওঠে ইশার। দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
_হুয়াট আ সারপ্রাইজ বাবাই! কখন এলে তুমি? আই মিস ইউ সো মাচ।

জহির সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললে,
_আই মিস ইউ টু মাই গার্ল।

ফাইজাও তার কাছে এসে বলল,
_কেমন আছো ছোট আব্বু? আর তুমি আসবে বলোনি তো।

জহির সাহেব হেসে বললেন,
_সারপ্রাইজ দেবো বলেই তো বলিনি কিছু।

ইশা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_এবার কিন্তু দু তিনদিন থেকে চলে গেলে হবেনা বাবাই। অন্তত দশদিন থাকতেই হবে।

_আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে থাকবো। যা তোরা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।

ব্যাবসায়িক কাজে জহির সাহেবকে অধিকাংশ সময় বিভিন্ন শহরে যেতে হয়,তাই বাড়িতে থেকে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো টা আর হয়ে ওঠেনা। তবে এবার তিনিও ভাবছেন ব্যাবসায়িক কাজ থেকে একটু দূড়ে সরে আসবেন,অনেক তো কাজ করলো জীবনে। এখন নাহয় পরিবার এর সাথে থাকা যাক।
এমনিতেই আজ ইশার মনটা ভালোই ছিল,তার উপর বাবাকে পেয়ে আরো দ্বিগুণ ভালো হয়ে গেলো। খুশিমনে নিজের ঘরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

___
আরো দশদিন কেটে গেছে। ইশা এখন নিরব এর বিষয় থেকে অনেকটাই বেড়িয়ে এসেছে, ছুটির সময়টা বেশ আনন্দের মধ্যেই কাটাচ্ছে সে। তার উপর বাবা থাকায় রোজই বিভিন্ন জায়গায় ঘুড়তে যাওয়া তো আছেই।

তবে ইশার দিন যতটা ভালো কাটছে আদৃত এর দিন এখক্ন ততটাই খারাপ কাটছে। অফিস এর কাজে তাকে চারদিন আগে সিলেট আসতে হয়েছে, সায়ান আর পূর্ণ ও তাকে কম্পানি দিতে চলে এসেছে। ঢাকায় থাকাকালীন সময়ে যেকোনোভাবে ইশাকে এক নজর দেখতে পারতো সে, তবে এখানে এসে চারদিনে ইশাকে না দেখতে পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে তার মন।

রাত দুটো বাজে। আরো এক ঘন্টা আগে থেকে ঘুমানোর চেষ্টা করছে আদৃত,তবে কিছুতেই তার চোখে ঘুম নামছে না। অবশেষে মুখে হাজারো বিরক্তির ছাপ নিয়ে উঠে বসলো আদৃত। পাশের দুটো বেডে তাকিয়ে দেখলো পূর্ণ আর সায়ান শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। ওদের এই ঘুমও এখন সহ্য হচ্ছেনা আদৃত এর। আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুজতে লাগলো আদৃত, অবশেষে তেমন কিছু না পেয়ে বেডসাইড টেবিল থেকে চার্জার টা নিয়ে ছুড়ে মারলো সায়ান এর গায়ে।
কোমড়ের উপর আঘাত পেতেই হকচকিয়ে উঠে বসে সায়ান। আশেপাশে তাকিয়ে চার্জার টা হাতে নিয়ে কপাল কুচকে তাকায় আদৃতের দিকে। তারপর বিরক্তিকর ভাবে বলে ওঠে,
_এটা কি হল? চার্জার মারলি কেন?

আদৃত আর কিছু না পেয়ে বললো,
_কি তখন থেকে নাক ডেকে চলেছিস,তোর নাক ডাকার শব্দে ঘুমোতে পারছিনা আমি।

_এমন ভাব করতেছিস যেন আমি আজকে নতুন নাক ডাকতেছি! কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখতেছিলাম, শালা দিলিতো নষ্ট করে।

ওদের কথাবার্তা শুনে পূর্নরও ঘুম ভেঙে গেলো। বিরক্তিকর চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
_রাত দুটোর সময় কি শুরু করলি তোরা? নিজেরাও ঘুমা আমাকেও ঘুমোতে দে।

সায়ান এক নজর আদৃত এর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবারো শুয়ে পড়লো। কিন্তু আদৃত এর চোখে যে ঘুম নেই। বিছানা থেকে উঠে ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো আদৃত। ইশার নম্বরটা সে অনেক আগেই নিয়েছিল, ইশার থেকে নয় তার এক ফ্রেন্ড এর থেকে গোপনে ম্যানেজ করেছিল।
নম্বরটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আদৃত,এত রাতে কল দেওয়া কি ঠিক হবে? আর কল দিয়ে কি ই বা বলবে?
হাজারো চিন্তা ছাপিয়ে অবশেষে কলটা করেই ফেললো আদৃত,যা বলার বলবে কিন্তু এখন ইশার কণ্ঠ না শুনলে তার কিছুতেই ঘুম হবেনা।

আজ একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ায় বেশ গভীর ঘুমে মগ্ন ছিল ইশা, এর মাঝে ফোনটা বেজে ওঠায় চোখমুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে তার। ধীরেধীরে চোখ খুলে ফোনটা হাতে নিতেই দেখে একটা আননোন নম্বর, রাত দুটোর সময় কে ই বা কল করবে ওকে? এসব ভাবতে ভাবতেই কলটা রিসিভ করে কানে ধরলো ইশা।
চোখ বন্ধ করেই ঘুমঘুম কণ্ঠে বলল,
_হ্যালো..

কোনো প্রতিত্তর করলোনা আদৃত, ইশার কণ্ঠস্বর শুনতে পেরে এখন কিছুটা শান্তি লাগছে তার। কোনো উত্তর না পেয়ে ইশা বিরক্তির সুরে বলল,
_কে রে ভাই? এত রাতে কল দিয়ে এখন চুপ করে আছেন কেন?

আদৃতের মাথায় বুদ্ধি এলো ইশাকে রাগানোর। তাই নিজে বেশ শান্ত গলায় বললো,
_আরে আজব তো? আপনি আমাকে কল করে এখন জিজ্ঞেস করছেন আমি কে! আপনি কে সেটা আগে বলুন।

ইশা কপাল কুঁচকে রাগী গলায় বললো,
_ফালতু কথা বলার জায়গা পাননা তাইনা? এত রাতে কল দিয়ে ইয়ার্কি করছেন আমার সঙ্গে? রাখুন ফোন, যতসব আজাইরা পাবলিক।

কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো ইশা। ইশাকে এমন রাগিয়ে বেশ মজা পেলো আদৃত,নম্বরটার দিকে তাকিয়ে আনমনেই বলল,
_কে তুমি মেয়ে? কেন তোমার সান্নিধ্য আমায় প্রশান্তি দেয়? আর কেনই বা তোমার অনুপস্থিতি আমার মাঝে অস্থিরতার সৃষ্টি করে?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে