তুই শুধু আমার পর্ব-২৮+২৯

0
1489

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 28+29

আমান আর আশা আজ হিমছড়িতে যাবে বলে ঠিক করে, সাথে আজ কিছু কেনাকাটাও করবে। আশা আজ একটা নীল কালারের কুর্তী, ব্লাক জিন্স, ইয়োলো কালারের স্কার্ফ গলায় পেচিয়ে নিয়েছে। আশা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুলে আচড়িয়ে নিচ্ছে। আমান একটু বাহিরে গেছে। হঠাৎ দরজার কারোর নক করার আওয়াজে সেহের দরজা খুলে দেখে কেউ নেই। আশা আবার দরজা লক করে দিয়ে ভেতরে আসতেই আবার নক করার আওয়াজ পায় আশা। কিন্তু দরজা খুলে দেখে কেউ নেই। আশা দরজা লক করে ভেতরে আসতেই আবার একই রকম আওয়াজ পেয়ে রাগ উঠে দরজা খুলে দেখে আমান দাড়িয়ে আছে। আমানের কাছে আশার মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনো কারনে সে বিরক্ত। আমান বলে ওঠে,
–” কিছু হয়েছে?”

–” কে যেনো বার বার দরজায় নক করছে? কিন্তু দরজা খুলে দেখি নেই।”

–” কোনো বাচ্চা হবে হয়তো! আচ্ছা ওদের বলে দিবো।”

–” নাহ, থাক। বাচ্চাই হবে মেইবি। দুষ্টামি করছে। বাদ দাও।”

–” ওকে! আচ্ছা চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

–” হুম!”
আশা আর আমান বেরিয়ে যায় হিমছড়ির উদ্দেশ্যে। আমান আর আশা বেরিয়ে যেতেই অচেনা লোকটিও বেরিয়ে এসে, ওদের ফলো করতে থাকে।

★★★
নেহা পুরো রুম জুড়ে নুপুর খুজছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে এক পায়ে নুপুর নেই। নুপুরটাহ নেহার অনেক পছন্দের। কখন খুলে গেছে নেহা বুঝতেই পারে নি। সকালে চোখ পড়তেই দেখে এক পায়ে নুপুর নেই। তখন থেকেই পুরো রুমে নুপুর টাহ খুজছে, আর বলতে থাকে,
–” উফ! নুপুর টাহ যে কই? কোথাও খুঁজেই পাচ্ছি নাহ। পা থেকে কখন খুলে গেছে সেইটাও বুঝতে পারছি নাহ।”

আরসাল নেহার রুমে এসে দেখে নেহা কিছু খুজছে, আর নেহার মুখের কথা শুনেই আরসাল বুঝতে পারে নেহা কি খুজছে। আরসাল বলে ওঠে,
–” নেহা এইটা খুজছো নাকি?”

নেহা কারো আওয়াজে পিছন ফিরে দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে, আর আরসালের এক হাতে রয়েছে তার নুপুর টাহ। নেহা এগিয়ে এসে অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যা! এইটাই তোহ আমার নুপর। এইটাই খুজছিলাম। কিন্তু এইটা কোথায় পেলে তুমি?”

–” গতকাল রাতে আমাদের বাগান বাড়িতে তুমি ফেলে এসেছিলে। তাই নিয়ে এলাম।”
আরসালের কথা শুনে নেহা চমকে আরসালের দিকে তাকায়। দেখে আরসাল মুচকি হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নেহা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” মানে?”

–” মানে গতকাল রাতে ক্যান্ডেল টাহ ভেঙে কাপড়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার সময় মেইবি এটা খুলে পড়ে গেছিলো। কিন্তু তুমি মনে হয় খেয়াল করো নি। তাই আমি নিয়ে এলাম।”
নেহা আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে। নেহার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আরসালকে একদম শান্ত দেখাচ্ছে। আরসাল নুপুর টাহ এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” নেও, তোমার নুপুর। আমি জানি তোমার নুপুর অনেক পছন্দ। কি হলো নাও। আরেহ নাও।”

আরসাল নেহার হাত টাহ টেনে নিয়ে নুপুর টাহ ধরিয়ে দিয়ে চলে আসতে যেয়েও থেমে যায়। আর উল্টা দিক ফিরেয় বলে ওঠে,
–” আমার আর সেহেরের মাঝে আগুন জ্বালাতে এসো নাহ নেহা৷ তাহলে নিজেই সেই আগুনে পুড়ে যাবে। বি কেয়ার ফুল।”

কথাটাহ বলেই আরসাল বেরিয়ে যায় নেহার রুম থেকে। নেহা আরসালের দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে। নেহা ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
–” আগুন তোহ জ্বালাবোই। এক আগুনে সেহের আর তোমাদের ভালোবাসা পুড়বে। আর এক আগুনে তুমি আমার কাছে আসবে।”

★★★
সেহের আরসালের রুমে এসে দেখে আরসাল সোফায় বসে ফোনে কি যেনো করছে। সেহের রুমে এসে আরসালের পাশে দাড়াতেই আরসাল সেহেরের দিকে তাকায়। আরসাল ফোন টাহ সেন্টার টেবিলের উপর রেখে সেহেরের হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের কোলের উপর বসায়। আরসালের মনে হলো সেহেরের মন খারাপ। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের, তোর কি মন খারাপ?”

–” নাহ।”

–” আমার দিকে তাকিয়ে বল।”

–” নাহ।”

–” প্লিজ জান, চুপ করে থাকিস নাহ বল।”

–” তুমি কি আর আমাকে ভার্সিটি যেতে দিবা নাহ?”
সেহেরের কথা শুনে আরসাল সেহেরের মুখ কাছে এনে কপালে একটা চুমু একে দেয়। তারপর সেহেরের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভার্সিটি যেতে চাস?”

–” হুম! আমার স্টাডির ক্ষতি হচ্ছে।”

–” আচ্ছা। কাল থেকে আমি নিয়ে যাবো আবার নিয়ে আসবো। ওকে!”

–” তুমি কেনো এতো কষ্ট করবা? আমি একাই যেতে পারবো। তাছাড়া ড্রাইভার আছে তোহ।”

–” থাকুক। ইয়াশ কে আমি খুব ভালো করেই চিনি। আমি তোকে নিয়ে যাবো এইটাই ফাইনাল। নাহলে ভার্সিটি অফ।”

–” নাহ, তুমিই নিয়ে যাবা।”

–” তাই?”

–” হুম।”
আরসাল সেহেরের মুখ একদম কাছে নিয়ে এসে হাতে বৃদ্ধ আঙুল সেহেরের ঠোঁটে ছোয়াতেই সেহের চোখ বন্ধ করে ফেলে। আর তাহ দেখে আরসাল মুচকি হেসে সেহেরের কপালে একটা চুমু দেয়। আরসালের ভালোবাসার পরশ পেতেই সেহেরের মুখে ফুটে উঠে প্রশান্তির হাসি।

★★★
আমান আর আশা হিমছড়ি চলে এসেছে। আশা ঝরনার কাছে গিয়ে পানি ধরছে। কিছুক্ষণ পর ওরা পাহাড়ে উপর উঠতে থাকে। পাহাড়ের উপর উঠে দাড়াতেই যেনো বোঝা যায়, কত সুন্দর এই প্রকৃতি, আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য। আশা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখছে। আর আমান আশাকে।
ওখানে থেকে বিকালে কিছু শপিং করে আশা। সেহেরের জন্য বেশ কিছু জিনিস কিনে নেয় আশা। তারপর হোটেলে ফিরে আসে।
আশা বারান্দায় দাড়িয়ে সমুদ্রের বাতাস উপভোগ করছে। আমান একটু বাহিরে গেছে। দরজায় নক করার আওয়াজে আশা ভাবে আমান এসেছে। তাও গিয়ে দরজা খুলে সামনে যাকে দেখতে পায়, তাকে দেখে যেনো আশা চমকে যায়। আর আশার সামনে শয়তানি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে সাইফ। আশা কাপা কাপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” সাইফ! আপনি?”

–” কেনো আমাকে দেখে ভালো লাগে নিহ?”

–” আপনি এখানে কিভাবে?”

–” আমাকে চাপে ফেলে আমানকে বিয়ে করে সংসার করবা, আর আমি কি বসে বসে তোমাদের সংসার দেখবো?”

–” মানে?”

–” মানে! এমন ভাব করছো যেনো কিছুই যানো নাহ। আশা এমন নয়তো এইসব কিছুর পিছনে তুমিই আছো।”

–” সাইফ আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতেছি নাহ।”

–” তাই নাকি? একটু পরে সব বুঝে যাবে। আমিও দেখি, আমি তোমাকে ছোয়ার পর আমান তোমাকে মেনে নেয় কি নাহ?”
আশা সাইফের কথা শুনে দরজা বন্ধ করতে গেলে সাইফ দরজা চেপে ধরে, ভেতরে ঢুকে যায়। আশা ভয় পেয়ে পেছনে যেতে থাকে, আর বলতে থাকে,
–” দেখুন আমার কাছে আসবেন নাহ বলে দিলাম। ভালো হবে নাহ কিন্তু।”

সাইফ আশাকে ধরতে গেলেই আশাকে ধরতে গেলেই আশা সাইফকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে তাকিয়ে দেখে আমান। আশা আমানকে জড়িয়ে ধরতেই আমান আশাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে সাইফের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” দেখো ফাস্ট কথা তোমার সাথে যাহ যাহ হয়েছে আশা এই ব্যাপারে কিছুই জানে নাহ। তাই ওর উপর এইসব রাগ দেখাইও নাহ।”

–” রাগ নাহ। ওকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছি। এখন ওর ঘর ভাঙার স্বপ্ন দেখি।”

–” তাই নাকি। তাহলে ভেঙে দেখাও। ওকে ভালোবাসি আমি। এতো সহজ নাহ।”
সাইফ রেগে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আমান আশার দিকে তাকিয়ে দেখে আশা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমান আশার মুখে হাত রেখে বলে ওঠে,
–” কি দেখছিস?”

–” কি বললে তুমি?”
আমান আশার হাত ধরে এক হাটু ভাজ করে বসে আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” I love you Asha. নিজের অজান্তেই ভালোবেসেছি তোকে। তোকে নিয়ে বাঁচতে চাই। আর বলতে চাই, #তুই_শুধু_আমার।”

আশার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। গতকাল রাতে আমানকে নিজের করে পেয়ে আজ আমানের মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনতেই আশার মনে হচ্ছে তার জীবন আজ পরিপূর্ণ। নিজের ভালোবাসার মানুষকে এরকম ভাবে কেই বা পায়। আশা আমানের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। আমান দাড়িয়ে আশার চোখের পানি মুছে দিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখে নিজের সাথে। আশাও আমানকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।

★★★
আশফি নিজের রুমে যাওয়ার জন্য উপরে উঠতেই চোখ যায়, নেহা রুফটপের দিকে যাচ্ছে। আশফিও নেহার পিছনে পিছনে যায়। নেহা রুফটপের রেলিং এর কাছে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আশফি নেহার পেছনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” নেহা!”

কারো আওয়াজ পেয়ে নেহা পিছনে তাকিয়ে দেখে আশফি দাড়িয়ে আছে। আশফি আবার বলে ওঠে,
–” তুমি এতো রাতে রুফটপে কেনো এসেছো?”

–” এমনি, ভালো লাগছে নাহ তাই।”

–” কি হয়েছে নেহা?”

–” কিছু নাহ এমনি।”

–” বলবা নাহ?”

–” মম ড্যাড এর কথা মনে পড়ছে।”

–” ওহ আচ্ছা।”
নেহা হঠাৎ করে আশফির দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আমার ফ্রেন্ডস হবা আশফি?”

আশফি মুখে হাসি নিয়ে বলে ওঠে,
_” Yes!”

নেহা আশফির দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই আশফি মুখে নেহার হাতের উপর হাত রাখে, আর নেহার মুখে ফুটে উঠে শয়তানি হাসি।

★★★
আরসাল বারান্দায় ডিভানের উপর বসে আছে। হঠাৎ ফোনে ভাইব্রেটের শব্দে তাকিয়ে দেখে আমানের ফোন। আরসাল ফোন টাহ রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” কিরেহ, কেমন লাগছে কক্সবাজার?”

–” ভালো। বাট একটা প্রব্লেম হয়ছে।”

–” প্রব্লেম? কি প্রব্লেম?”
আমান সাইফের সাথে আজকের সব ঘটনা আরসালকে বলতেই, আরসাল বলে উঠে,
–” আশা কি সব জেনে গেছে?”

–” নাহ! বলি নি।”

–” হুম! বলার দরকার নাই। শোন তোদের ওখানে থাকাটাহ আর ঠিক হবে নাহ। ঢাকা ব্যাক কর।”

–” আমিও সেইটায় ভাবছি, আগামীকাল ঢাকা ব্যাক করবো।”

–” হুম, চলে আই।”
আরসাল ফোন কেটে দিয়ে, বারান্দায় রেলিং এর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” কি করতে চাচ্ছে এই সাইফ। বিষয় টাহ ভালো লাগলো নাহ। আমানকে আরও সাবধান করতে হবে। আর সাইফের সম্পর্কে তেমন কিছুই তোহ জানি নাহ। খোঁজ নিতে হবে।”

আরসাল কাউকে ফোন করে। কলটাহ রিসিভ হলেই আরসাল বলে ওঠে,
–” সিরাজ রহমানের ছেলে সাইফ রহমানে সব ডিটেইলস আমার চাই।”

ফোনের ওপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে,
–” Ok sir.”

আরসাল ফোন কেটে দিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয়।

কেটে যাচ্ছে দিন। এগিয়ে যাচ্ছে সময়। এই কয়েকদিনে আরসাল আর সেহেরের ভালোবাসা আরও বেড়ে গেছে। আরসাল সেহেরকে ভার্সিটি নিয়ে যায় আবার নিয়ে আসে, কখনো কোথাও ঘুরতে চলে যায়, আরসালের কেয়ার, সেহেরের দুষ্টামি দিয়ে কাটছে দিন। নেহা সেইদিনের পর আর কিছুই করে নি, মাঝে দুই একদিনের জন্য বাহিরে কোথাও গিয়েছিল, আবার চলে এসেছে। আশফির সাথে নেহার বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়েছে, নেহার প্রতি বেড়েছে আশফির ভালোবাসা। আমান আর আশা কক্সবাজার থেকে পরেরদিনই ফিরে আসে, সংসারে খুশি নামক জিনিস দিয়ে ঘিরে রেখেছে, আমানের ভালোবাসা আর আশার ভালোবাসা যেনো বেড়েই চলেছে, সেইদিনের পর সাইফও আর কোনো ঝামেলা করে নি তাদের জীবনে।

এখন বেশ রাত, ১১:৪৫ বাজে। সেহের একটা বই পড়ছে। হঠাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজের শব্দে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আরসালের ম্যাসেজ। আরসাল লিখেছে, ” তাড়াতাড়ি রুফটপে আই। আমি রুফটপে তোর জন্য ওয়েট করছি। কাম ফাস্ট।” এতো রাতে এরোকম ম্যাসেজ পেয়ে সেহের অনেকটাহ অবাক হয়ে গেলেও রুফটপে চলে আসে সেহের। সেহের রুফটপে এসে আরসাল কে কোথাও দেখতে নাহ পেয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া কোথায় তুমি? ভাইয়া? আমার ভয় করছে আমি গেলাম।”

কথাটাহ বলে সেহের নিচে চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই একটা শব্দে চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখে রুফটপের বাম পাশে একটা বোর্ডে হলুদ কালারের বাতি দিয়ে “HAPPY” লেখা ভেসে উঠেছে। সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আবার একটা শব্দ হতেই সেহের আবার চমকে রুফটপের মাঝে তাকিয়ে দেখে আরও একটা বোর্ডে “BIRTHDAY” লেখা ভেসে উঠছে। আবারও একটা শব্দে ডানপাশে তাকিয়ে দেখে আরও একটা বোর্ডে “SEHER” লেখা ভেসে উঠছে। সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সেহেরের মনেই নেই আজ তার জন্মদিন। হঠাৎ পেছন থেকে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে ওঠে,
–” Happy birthday. Happy birthday to you Jan.”

সেহেরের বুঝতে অসুবিধা হয় নাহ মানুষটি তার ভালোবাসা আরসাল। আরসাল সেহেরের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে মুচকি হাসি দিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে বলে ওঠে,
–” আজকের এই সময়টাহ আমার জন্য খুব স্পেশাল। কারন এই দিনটাতেই এই পৃথিবীতে একটা পরির জন্ম হয়েছিল। যার রুপের আগুন আজও আমাকে মুগ্ধ করে, যার বাচ্চামো স্বভাব আমি আজও দুচোখ ভরে দেখি, যার গলার মধু মাখা কন্ঠ আমাকে মাতাল করে দেয়, আমার স্বপ্নের রানি, যাকে নিয়ে আমি সারাজীবন বাঁচতে চাই, আজ সেই পরি, রানির জন্মদিন। অনেক স্পেশাল! এই দিন টাহ এসেছিলো বলে সেই রাজকন্যা আমার জীবনে এসেছিলো, এই দিন টাহ এসেছিলো জন্য আমি তাকে পেয়েছি। তাই আজ সারা দুনিয়াকে বলতে চাই, সবাই তাকে উইশ করো, সবাই বলে ওঠো, Happy birthday to you Seher.”

সেহের অবাক+ ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। আরসাল আগেও সেহেরকে বার্থডে উইশ করেছে, কিন্তু এরকম ভাবে নাহ। একদম আলাদা, একদম অন্যরকম, ভালোবাসায় পরিপূর্ণ, জীবনের প্রথম এমন উইশ। সেহের আরসালের দিকে এগিয়ে যায়। আরসাল সেহেরের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। সেহের কোনো কিছু নাহ বলেই আরসালকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” I love you. I love you very much.”

কথাটাহ শুনেই আরসাল প্রশান্তির হাসি দিয়ে সেহেরকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে। কিছুসময় পর আরসাল সেহেরকে নিজের কাছের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা ভালোবাসা আরও পরে হবে। আগে কেক কেটে নে।”

কথাটাহ বলেই আরসাল সেহেরকে হালকা জড়িয়ে ধরে একটা টেবিলের সামনে দাড়ায়। টেবিলের উপর একটা চকলেট ফ্লেভারের কেক রাখা আছে। আরসাল সেহেরের হাতে একটা নাইফ ধরিয়ে দিয়ে নিজে তার উপর হাত রেখে কেক কেটে সেহেরের মুখের সামনে ধরলে, সেহের একটু খেয়ে, আরসালের মুখে কেক তুলে দিতেই আরসাল সেহেরের হাত ধরে থামিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি কেক খাবো, বাট এভাবে নাহ।”

–” মানে? তাহলে কিভাবে?”

–” আমি আমার মতো করে কেক খাবো।”
কথাটাহ বলেই আরসাল সেহেরের হাত থেকে কেক নিয়ে সেহেরের মুখে মাখিয়ে দেয়। সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আরসাল সেহেরের কোমর ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। হঠাৎ এমন হওয়ায় সেহের চমকে উঠে আরসালের টিশার্ট এর কলার্ট চেপে ধরে। আরসাল সেহেরের মুখ কাছে এনে সেহেরের মুখের কেক লিক করে খেতে থাকে। আরসালের এমন স্পর্শে সেহের কাপতে শুরু করে। সেহের চোখ কুঁচকে বন্ধ করে ফেলে। আরসাল সেহেরের মুখে লিক করতে করতে সেহেরের ঠোঁটে হালকা করে চুমু দেয়। সেহের কেপে চোখ খুলে আরসালের দিকে তাকায়। সেহের আরসালের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটু সরে দাড়িয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আরসাল সেহেরের পিছনে দাড়িয়ে সেহেরের কাঁধের চুল গুলো সরিয়ে একটা চুমু দিতেই সেহের কেঁপে উঠে। আরসাল সেহেরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এক হাত সেহেরের কোমর চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে সেহেরের কপালে একটা চুমু একে দেয়। তারপর সেহেরের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের আমি কি তোকে একটা কিস করতে পারি?”

সেহের কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারে নাহ। সেহের চোখ বন্ধ করে রেখে, আরসালের টিশার্টের কলার্ট চেপে ধরে আরসালকে নিজের দিকে হালকা টান দিতেই আরসাল তার উত্তর পেয়ে যায়। আরসাল সেহের কে নিজের সাথে আরও জোরে চেপে ধরে সেহেরের ঠোঁটে হালকা চুমু দিতেই সেহের কেঁপে উঠে। সেহেরের ঠোঁট গুলো কাপছে। আরসাল আর দেরি নাহ করে সেহেরের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আরসাল সেহেরের কোমরের দিকের টিশার্টের নিচে হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে। আরসাল যেনো মাতাল হয়ে যাচ্ছে সেহেরের ঠোঁটের ছোয়া পেয়ে। সেহের এক অদ্ভুত শান্তির মাঝে আছে। সেহেরের চোখের কোনা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
কিছুসময় পর আরসাল সেহেরের ঠোঁটের স্পর্শ ত্যাগ করে, সেহেরের দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের চোখ বন্ধ করে আছে। আরসাল মুচকি হেসে সফট ভয়েজে বলে ওঠে,
–” সেহের!”

আরসালের ডাকে সেহের চোখ খুলে আরসালের দিকে তাকাতেই আরসাল বলে উঠে,
–” তুই তোহ আমাকে পাগল বানিয়ে দিবি। পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি তোর ভালোবাসায়। এতো মিষ্টতা কেনো তোর মাঝে?”

আরসালের কথা শুনে সেহের লজ্জা পেয়ে আরসালের বুকে মুখ লুকায়। আরসালও সেহেরকে জড়িয়ে ধরে। আরসাল সেহেরকে কোলে তুলে নিয়ে রুফটপ থেকে নিচে এসে সেহেরের রুমে চলে যায়৷ আরসাল সেহেরকে বিছানার উপর শুইয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এখন চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়বি। ওকে?”

–” হুম!”
আরসাল সেহেরের কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে সেহেরের শরীরে কম্বল টেনে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

★★★
আশা নিজের রুম গুছিয়ে নিচ্ছে। হটাৎ দেখে আমান আলমারিতে কিছু খুজছে। আশা এগিয়ে এসে আমানকে বলে ওঠে,
–” কিছু খুজছো?”

–” হুম! একটা ফাইল রেখেছিলাম। বাট এখন পাচ্ছি নাহ।”

–” নীল কালারের ফাইল?”

–” হুম দেখেছিস?”

–” হ্যা! ঐ ড্রয়ারে আছে।”

–” আচ্ছা।”
আমান ফাইলটাহ নিয়ে বের হবে, তার আগেই আশা বলে ওঠে,
–” শোনো।”

–” হুম বল।”

–” আজ তোহ সেহেরের বার্থডে। তুমি ঐ বাসায় যাবা নাহ?”

–” হ্যা, তোরা চলে যাস আমি বিকালে যাবো।”

–” আচ্ছা।”

★★★
আজ সকাল থেকেই অন্যরকম কাটছে সেহেরের। কাল ১২ টায় আরসালেরে সাথে কাটানো সময় টাহ যেনো সবথেকে বেশি সুখময় ছিলো। সেহেরের জন্য আজ একটা বড় বার্থডে পার্টি রাখা হয়েছে। সেহের রেডি হয়ে গেছে। সেহের আজ আরসালের দেওয়া একটা ব্লাক কালারের গাউন পরেছে, চুল গুলো সামনে পাফ করে ব্যান্ট বেনি করে ছেড়ে দেওয়া, চোখে মোটা করে কাজল, ঠোঁটে রেড লিপস্টিক, হাতে একটা হোয়াইট ব্রেসলেট, গলায় একটা লকেট, কানে হোয়াইট কালারের টপ, সব মিলিয়ে সেহেরকে যেনো অন্যরকম সুন্দর লাগছে।
ড্রইংরুমে পার্টি রাখা হয়েছে। চারপাশে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আস্তে আস্তে ড্রইংরুমের লাইট কমিয়ে নিয়ে, সিড়ির দিকে একটা এন্ট্রি লাইট ফেলতেই সবার নজর পড়ে সেদিকে। সবার মতো আরসালও সেদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সেহের দাড়িয়ে আছে। এন্ট্রি লাইটে সেহেরকে আরও ঝলমলে দেখাচ্ছে। আরসালের পাশেই এসে দাড়ায়, সেহেরের দিকে তাকিয়ে থাকা মুগ্ধ নয়নে রাহুল। সেহেরের সামনে একই জায়গায় একইভাবে সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে আরসাল এবং রাহুল।
***কি হবে? আরসাল রাহুল দুইজনেরই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। কার ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পাবে, আরসাল নাকি রাহুল নাকি এদের মাঝের কেউই নাহ।কোন ভালোবাসার জয় হবে? আর কোন ভালোবাসা গাছের পাতার মতো ঝরে যাবে কে জানে?

চলবে……………..🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে