তি আমো পর্ব-৩৩+৩৪

0
1228

#তি_আমো❤
#পর্ব_৩৩
Writer: Sidratul muntaz

🍂
ঈশানের চোখজোড়া মাত্রতিরিক্ত লাল, সদ্য ঘুম ভাঙার কারণে ফুলে ফেপে আছে চোখ দুটো। দেখতে কিছুটা ভয়ংকর লাগছে উনার মুখ। আমি সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম। ঈশান এতোক্ষণে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছেন। আমি উনার সামনে গেলেও আমাকে সম্পুর্ণ উপেক্ষা করলেন উনি।যেন আমাকে দেখছেনই না।আশেপাশে কিছু একটা হন্যি হয়ে খুজছেন উনি। কিন্তু কি খুজছেন? ঈশানের হাত-পাও কাপছে। যেন শিরা-উপশিরা গুলো বাকিয়ে যাচ্ছে উনার। আমি ভয়ে তটস্থ হয়ে উনার কাছে গেলাম। অস্থির গলায় জানতে চাইলাম,

“কি হয়েছে আপনার? ”

ঈশান ভারী টেবিলের জিনিসগুলো উলট পালট করে খুজে যাচ্ছেন। লন্ড ভন্ড করে ফেলছেন সবকিছু। কিচ্ছু খুজে না পেয়ে টেবিলের সাথে ঠেস দিয়ে দাড়ালেন উনি। বাম হাতটা দিয়ে মাথার চুলগুলো খামচে ধরলেন। আমি আবার একঝাক আতঙ্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

“ক কি হয়েছে ঈশান? কি খুজছেন?”

ঈশান কম্পিত কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন,

“ক কোথায়? কোথায় ওটা? কোথায়??”

চেচিয়ে উঠলেন ঈশান। আমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম ঈশান নিজের গলায় মালিশ করছেন। যেন খুব কষ্ট হচ্ছে উনার। দাড়িয়ে থাকতে পারছেন না ঠিকমতো। আমি বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম। ভয়ে আমার আত্মাটা ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্র হয়ে আসছে। ঈশান ফ্লোরে বসে কাপতে শুরু করলেন। মারাত্মক কাপুনি দিচ্ছে উনার শরীর। চোখমুখ অস্বাভাবিক ভাবে উল্টে যাচ্ছে। আমার আতঙ্ক, অস্থিরতা দ্বিগুণ হয়ে উঠল এবার। আমিও বসে পড়লাম ফ্লোরে। ঈশানের পিঠে হাত রেখে উনাকে সামলানোর চেষ্টা করলাম৷ বললাম,

“কি হলো ঈশান? কোথায় কষ্ট হচ্ছে আপনার বলুন?”

আমার কথায় কর্ণপাত না করে উনি ফ্লোরে হাতড়াচ্ছেন। প্রত্যাশিত সেই জিনিসটি এখনো তন্নতন্ন করে খুজছেন। আবার মাঝে মাঝে নিজের চুল খামচে ধরছেন। আর্তনাদ করে উঠছেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

“দাও। প্লিজ একটু। একটু দাও।”

আবার একই কান্ড পুনরায় করতে লাগলেন। গলায় মালিশ করে করে বললেন,

“কোথায়? দাও না! পাচ্ছি না কেনো? একটু, একটু লাগবে।”

আমার কান্না চলে আসল। মুখে হাত দিয়ে কাদতে শুরু করলাম। এমন সময় সাফিন ভাইয়া আমার নাম ধরে ডাকলেন,

“তারু।”

সাফিন ভাইয়াকে দেখে আমি তড়িঘড়ি করে উঠে গেলাম, কাছে গিয়ে কাদতে কাদতে বললাম,

“দেখেন না, কি হয়েছে উনার? উনি এমন করছে কেনো? কি খুজছেন এভাবে? কি চাইছেন!”

সাফিন ভাইয়া আক্ষেপী সুরে বললেন,” ও ড্রাগস চাইছে।”

সাফিন ভাইয়ার উত্তর শুনে দৃষ্টি বিস্ফোরিত হয়ে এলো আমার। মুখে হাত ঠেকিয়ে খুব অবাক হয়ে উচ্চারণ করলাম,

“ড্রাগস?”

সাফিন ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওয়্যারড্রোপের ড্রয়ার থেকে একটা প্যাকেট বের করলেন। প্যাকেট টা আমাকে এগিয়ে দিয়ে ঈশানের দিকে ইশারা করে বললেন,

“দাও ওকে।”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

“মানে কি? এটা সত্যি সত্যি উনাকে দিবো? এটা খুব খারাপ জিনিস। আমি উনার হাতে এসব তুলে দিতে পারবো না।”

“তারু এটা না পেলে ঈশান ঠান্ডা হবে না। তোলপাড় করে ফেলবে সবকিছু। কেয়ামত শুরু হয়ে যাবে। তার থেকে ভালোয় ভালোয় দিয়ে দাও, শান্ত হয়ে যাক।”

আমি তীব্র প্রতিবাদী কণ্ঠে বললাম,

“কিছুতেই না। আমি ঈশানকে এটা জীবনেও দিবো না। আর আপনাকেও দিতে দিবো না।”

আমি সাফিন ভাইয়ার হাত থেকে প্যাকেটটা ছো মেরে নিয়ে নিলাম। এক ঢিলে জানালার বাইরে ফেলে দিতে নিলেই ঈশান সশব্দে উচ্চারণ করলেন,

“তারিন!”

আমি ঢিল ছুড়তে নিয়েও থেমে গিয়ে ঈশানের দিকে তাকালাম। উনি উঠে দাড়িয়েছেন। গলায় মালিশ করতে করতে কম্পিত হাতটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,

“দাও। প্লিজ দাও! ”

আমি মাথা নেড়ে না বললাম। ঈশানের চোখ শক্ত হয়ে আসলো।খুড়িয়ে খুড়িয়ে এগিয়ে আসতে লাগলেন আমার দিকে। আর আমি পিছাতে লাগলাম। প্যাকেটটা হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে পেছনে লুকিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেসে দাড়ালাম আমি। ঈশান আমার অনেকটা কাছে চলে এসেছেন। সাফিন ভাইয়া ফিসফিস করে অনুরোধ জানালেন,

“দিয়ে দাও তারু! ঝামেলা করো না প্লিজ।”

ঈশান আমার পেছনে থাকা হাতটা খামচে ধরলেন। আমি ব্যথায় কুকিয়ে উঠলাম। ঈশানের চেখেমুখে হিংস্রতা। দাত কিড়মিড়িয়ে উনি বললেন,

” দাও বলছি।”

আমি এবারও ভয়ে ভয়ে না সুচক মাথা নাড়লাম। কড়া গলায় বললাম,

“দিবো না। মরে গেলেও না।”

ঈশান তীক্ষ্ণ স্বরে গর্জে উঠলেন। এক হাত মুষ্টি করে ডানপাশের জানালায় সজোরে আঘাত করলেন উনি। সম্পুর্ণ জানালা কেপে উঠল।জানালায় থকে থকে সাজানো ফুলের টবগুলোর সাথে অন্যান্য জিনিসগুলোও ঝনঝনিয়ে পড়ে যেতে লাগল। মুহুর্তেই যেন ছোটখাট ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেল ঘরে। এমতাবস্থায় বাহিরে থেকে কেউ আওয়াজ দিল,

“কি হচ্ছে?”

কারো পায়চারী শোনা গেল। হয়তো এদিকেই আসছে কেউ।সাফিন ভাইয়া আতঙ্কিত হয়ে বললেন,

“শিট! আন্টি চলে আসছে মনে হয়। তারু তুমি এখানেই থাকো। বের হবে না কিন্তু। আমি বাহিরে গিয়ে দেখি ম্যানেজ করতে পারি কিনা।”

সাফিন ভাইয়া দরজাটা ভিতর থেকে লক করে বাহিরে চলে গেলেন। আর ঈশান?আগের মতোই একই বুলি আওরাতে লাগলেন,

“দাও তারিন দাও। খুব কষ্ট হচ্ছে দিয়ে দাও প্লিজ!”

আমি প্যাকেটটা জানালা দিয়ে ঠাস করে ফেলে দিলাম। ঈশান অগ্নদৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার দুই কাধ চেপে ধরলেন। তীব্র ক্রোধ নিয়ে উচ্চারণ করলেন,

“এইই! কি করলে এটা তুমি..”

উনি আর কিছু বলার আগেই আমি উষ্ণ পরশে থামিয়ে দিলাম। নিমেষেই এক ফালি স্বর্গীয় সুখের আনম্র শীহরণ প্রবাহিত হতে লাগল সম্পুর্ণ ঘর জুড়ে…

হাতে কফি মগ নিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে আছি। ভেজা চুল নিঃসৃত টুপ টুপ পানি আধভেজা করে তুলছে আমার পিঠের অর্ধাংশ। আমার দৃষ্টি নিচের দিকে। ভোর সকালে শহুরে মানুষের ব্যস্তজীবন পর্যবেক্ষণ করছি। হঠাৎ পেছন থেকে আমার শীতল শরীরে উষ্ণ দুটো হাতের স্পর্শ পেলাম। ঈশান আমার ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে বেশ খানিক সময় দাড়িয়ে থেকে হঠাৎ বলে উঠলেন,

“এসব কি তারিন? জামাটা পেছন থেকে অর্ধেক ভিজে আছে। চেঞ্জ করো যাও। ”

আমি মুচকি হেসে ঈশানের দিকে ঘুরলাম। কফি মগটা এক পাশে বারান্দার গ্রিলের স্ট্যান্ডে উঠে দাড়ালাম। এবার ঈশান আর আমি সমান সমান। আমি ঈশানের মুখে আর চুলে হাত বুলিয়ে বললাম,

“একটু পর চেঞ্জ করবো। দেখি তো, আপনার জ্বর কমেছে মনে হচ্ছে। ”

ঈশান দুই হাত দিয়ে আমাকে কাছে এনে বললেন,

“কমেনি। একদম ভ্যানিশ হয়ে গেছে। ইটস ম্যাজিক। তারিনের ম্যাজিক।”

আমার মুখ হালকা লাল হয়ে আসল। প্রসঙ্গ পাল্টানোর উদ্দেশ্যে আমি বললাম,

“শুনুন, সাফিন ভাইয়া আন্টির সাথে কথা বলে আমাকে এখানে রেখে গেছেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা নিজেদের ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতে পারবো এ বাসায়। যখন তখন যে কেউ ঘরে চলে আসতে পারে। তাই আমাকে আগের মতো পাগড়ি, চশমা লাগিয়ে ঘুরতে হবে। খুব সাবধানে থাকতে হবে।”

“আরে ধ্যাত! এসব কিছুই করতে হবে না। আন্টি আঙ্কেল খুব ভালোমতোই জানে আমি রুম থেকে বের হইনা। আর রুমে কাউকে ঢুকতেও দেইনা। এতো টেনশনের কি আছে?”

“আপনি ঘর থেকে বের না হলেও আমাকে বের হতে হবে। আমিও যদি সারাদিন আপনার মতো ঘরবন্দী থাকি, সবাই তো অন্যকিছু মিন করবে।”

“অন্যকিছু কি?”

কথার মাঝখানেই দরজায় ঠকঠক শব্দ বেজে উঠল। এই সকাল সকাল কে এসেছে? আমি চটজলদি ঈশানকে ছেড়ে নেমে গেলাম।
🍂

চলবে

#তি_আমো❤
#পর্ব_৩৪
Writer: Sidratul muntaz

🍂
আমি টি শার্ট, পাগড়ি, চশমা, আর্টিফিসিয়াল দাড়ি, সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েছি। ঈশান গিয়ে রুমের দরজা খুললেন। দরজার আড়ালে থাকা মানুষটির কণ্ঠ শুনে যতটুকু বুঝলাম, সায়রা এসেছে। ঈশান বললেন,

“সায়রা তুমি! কোনো দরকার?”

“ভাইয়া.. শুনলাম আপনার নাকি জ্বর এসেছিল রাতে? এখন কি অবস্থা দেখি?”

“আ.আ! কিছু হয়নি। আই এম ফাইন।”

“শরীর তো এখনো হালকা গরম মনে হচ্ছে।আচ্ছা ভাইয়া, মা আপনার জন্য এই লিকার চা পাঠিয়েছে। প্রাকৃতিক জড়িবুটি দিয়ে তৈরি। খালি পেটে খেলে অনেক রোগের উপশম হয়। একটু খেয়ে নিন না প্লিজ!”

“আন্টি হোমিওপ্যাথি বানানো কবে থেকে শুরু করলেন?”

সায়রা আগে হাসল। তারপর বলল,

“হোমিওপ্যাথি না ভাইয়া। মা এটা আপনার জন্য ইউটিউব দেখে বানিয়েছে। ”

ঈশান হালকা হাসি জড়ানো কণ্ঠে বললেন,

“ও আচ্ছা। ঠিকাছে দাও খাচ্ছি।”

ঈশান দুই ঢোকে শেষ করে দিলেন। সায়রা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে অবাক স্বরে বলল,

“ভাইয়া আপনার শরীর সত্যিই ঠিকাছে তো?”

“হ্যা! আমি ফিট। একদম ঠিকাছে। ”

সায়রা আবার ঈশানের কপালে হাত দিল। ঈশান হালকা বিরক্ত হয়ে হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললেন,

“বললাম তো ঠিকাছি। ”

সায়রা হা করে তাকিয়ে ঈশানকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা শুরু করল। তারপর বলল,

“উহুম! টাটকা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। কিছু তো একটা গর্ভর আছেই। ভাইয়া, এই প্রথমবার আপনি আমার সঙ্গে হেসে কথা বললেন! আমি তো ভাবতেই পারছি না,স্বপ্ন মনে হচ্ছে আমার। জানেন মা যখন এই চায়ের কাপ আমার হাতে ধরিয়ে বলল আপনাকে দিয়ে আসতে, আমি মনে মনে দরুদ শরীফ পড়ছিলাম। হাত-পা হিম হয়ে আসছিল আমার। কারণ এই চা নামক জিনিসটা ভুলেও আপনার পেটে যাওয়ার কথা ছিলনা বরং আমার মাথায় পড়ার কথা ছিল। আর কাপটাও আস্তো থাকার কথা না। ভেঙে গুড়িয়ে যাওয়ার কথা। সকাল সকাল ঘরের মধ্যে ছোটখাটো একটা সাইক্লোন বয়ে যাওয়ার কথা ছিল।কিন্তু সেসব কিছুই হচ্ছে না? একরাশ রুক্ষ মেজাজী ধমকের বদলে আমি কিনা সকাল সকাল একটা কিউট হাসি উপহার পেলাম? আমার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে ভাইয়া! তাও আবার কোন গানের সাথে জানেন? ”

“কোন গান?”

“বেত্তোমিজ ইয়ে দিল, বেত্তোমিজ ইয়ে দিল, মানে না মানে না! এই গানটার সাথে এখনি উরাধুরা ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে ইয়াহ!”

“এতো ডান্স দেওয়ার মতো কিছু হয়নি। তুমি এখন যেতে পারো।”

সায়রা চুপসানো গলায় বলল,” চলে যাবো?”

হ্যা, অবশ্যই যাবে।

“ঠিকাছে যাচ্ছি।”

মিনমিনিয়ে শব্দটা উচ্চারণ করে হঠাৎ খুব উৎসাহের সাথে সায়রা বলল,

“কিন্তু ভাইয়া আপনি তো এখন সুস্থ। আজকে পড়াতে আসবেন আমাকে?”

ঈশান বিভ্রান্তি নিয়ে বলল,”আচ্ছা দেখি। ভালো লাগলে আসবো।”

“প্লিজ ভাইয়া আসবেন। অনেকদিন হল আপনি আসেন না। আর সামনে তো আমার ইয়ার ফাইনাল! অথচ আমি এখনো কিছুই পারিনা। প্লিজ আসবেন ভাইয়া৷ প্লিজ প্লিজ?”

“ঠিকাছে আসবো। এবার তুমি যাও।”

“ওকে ভাইয়া। যাই। ”

দরজা লাগানোর আওয়াজ পেয়ে আমি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। ঈশান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার দিকে ঘুরলেন। আমাকে এক নজর দেখেই সাথে সাথে আবার উল্টোদিকে ঘুরে বিড়বিড় করে বললেন,

“শেষ! আই এম ডান। ”

আমি ভ্রু কুচকে ঈশানের কাছে গেলাম। আর বললাম,

“কি হলো?”

ঈশান আমাকে আড়চোখে একবার দেখে নিয়ে সম্পুর্ণ আমার দিকে ঘুরলেন। তারপর বললেন,

“মাথায় হলুদ পাগড়ির সাথে সাদা টি-শার্ট পড়ার আইডিয়া কে দিয়েছে তোমাকে?”

আমি মৃদু স্বরে বললাম, “সায়রা চলে এসেছিল বলে আমি আগের মতো তৈরি হতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আপনি ওকে চলে যেতে বললেন দেখে আমি আর সম্পূর্ণ তৈরি হইনি। পাগড়ী আর টি শার্ট পড়েই চলে এসেছি। কেনো খারাপ লাগছে দেখতে? তাহলে খুলে ফেলি পাগড়ীটা।”

আমি মাথায় হাত দিয়ে পাগড়ী খুলতে গেলাম। তখন ঈশান আমায় আটকালেন। আমার হাত দুটো ধরে নিচে নামিয়ে আমার মুখের কাছে ঝুকে বললেন,

“আস্তো একটা কাঠগোলাপ লাগছে। একদম হলুদ-সাদার নেশা ধরানো মিশ্রণ। এতোটা সুন্দর! আমি তো পাগল হয়ে যাবো তারিন!”

আমি নিম্নাংশে নিবদ্ধ দৃষ্টি ঈশানের দিকে তাক করতেই এক জোড়া ঘোরমাখা চোখ খুজে পেলাম।ঈশানের ক্ষুদ্র দৃষ্টি দেখে আমার চোখ দুটো ডিম্বাকৃতি হয়ে উঠল। ঈশান আগের মতোই মৃদু কণ্ঠে বললেন,

“ফায়ার!”

আমি ঈশানের পেট বরাবর জোরে আঘাত করতেই উনি সরে দাড়ালেন। পেটে হাত রেখে অবাক স্বরে বললেন,

“কি হলো এটা?”

“আমাকে ফায়ার বলার শাস্তি এটা।”

ঈশানের কৌতুহলী দৃষ্টি মুহুর্তেই তীক্ষ্ণ হয়ে এলো। এক ভ্রু উচু করে উনি আমার ডানহাতটা টেনে ধরলেন। আমি ধমকের সুরে বললাম,

“কি হচ্ছে?”

ঈশান একটানে আমাকে ঘুরিয়ে আলমারির সাথে চেপে ধরলেন। আর আমার ডানহাতটা আমারই পিঠের সাথে লাগিয়ে শক্ত করে মিশিয়ে রাখলেন। আমি কিছুটা ব্যাথা পেয়ে শব্দ করলাম,

“আহ! ”

ঈশান বললেন, “ফায়ার বলার জন্য আমার শাস্তি যদি এমন হয়, তাহলে ফায়ার হওয়ার জন্য তোমার কেমন শাস্তি হওয়া উচিৎ? একটু ইমাজিন করো তো!”

আমি মুখ কুচকে আর্তনাদ করলাম, “ঈশান আমার ব্যথা লাগছে।”

কথাটা শেষ করার সাথেই সাথেই ঈশান আমায় ছেড়ে দিলেন। আর আমি এক লাফে বিছানায় উঠে বালিশ হাতে নিয়ে হাসতে লাগলাম। ঈশান কোমরে হাত রেখে কিছুক্ষণ আমার কান্ড দেখলেন। তারপর ধপ করে বিছানায় বসে পড়লেন। আমি পেছন থেকে ঈশানের গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,

“সত্যিই ব্যাথা পেয়েছি কিন্তু। এখনো ব্যাথা করছে।”

“তাই? দেখি কোথায় ব্যাথা করছে।”

ঈশান আমার দিকে ঘুরলেন। আমি ডানহাতটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,

“এইযে এখানে। কনুইয়ের জয়েন্টে ব্যাথা করছে।”

ঈশান আমার ডানহাতটা উনার দুই হাতের সাথে জড়িয়ে ফট করে একটা টান দিলেন। অদ্ভুত একটা শব্দ হতেই আমি চেচিয়ে উঠলাম। ঈশান বললেন,

“আস্তে! বাহিরে থেকে শোনা যায়।”

আমি ডানহাত ডলতে ডলতে বললাম,” এইমাত্র এটা কি করলেন আপনি?”

ঈশান মুচকি হেসে বললেন, “এখনো ব্যথা করছে?”

আমি কুচকানো ভ্রু নিয়েই মাথা নাড়লাম। মানে ব্যথা করছে না। ঈশান হো হো করে হাসলেন। আমি বোকার মতো তাকিয়ে বললাম,

“আপনি আমার হাত ভেঙে দেন নি তো?”

ঈশানের হাসি থামতে গিয়েও আবার শুরু হল। হাসতে হাসতেই উনি বললেন,

“ভাঙিনি বোকা। টেনে ঠিক করেছি।পেশি বেকে গিয়েছিল হয়তো। সেটাই ঠিক করেছি বুঝেছো? ”

বলতে বলতে আমার নাক টেনে দিলেন উনি। আমি মাথা চুলকে বললাম,

“ও আচ্ছা।”

ঈশান মুখে দুষ্ট হাসি নিয়েই হালকা ভ্রু কুচকে বললেন,

“তারিন! আমারও না একটা জায়গায় খুব ব্যথা করছে। ব্যাথাটা ভ্যানিশ করে দিবে?”

“কোথায় ব্যথা করছে?”

“এইযে, ঠিক এইখানটায়।”

বুকের বামপাশে হাত রাখলেন ঈশান। আমি ভ্রু উচু করে ঠোটে হালকা হাসি জমিয়ে বললাম,

“এই ব্যথা আমি কিভাবে ভ্যানিশ করবো শুনি?”

“কেনো? কালরাতের মতো!”

আমি মুখ হা করে সরুচোখে তাকালাম। আর বললাম,

“ঈশান! আপনি একটা, আপনি একটা..”

“আমি একটা?”

“আপনি একটা সাদা গোল্লা।”

বলেই দুম করে ঈশানের কোলে চড়ে উনার ঠোটের উপর হামলে পড়লাম আমি। আমার আচরণে ঈশান সম্পুর্ণ বাকরুদ্ধ। আমি নিজেও মোটামোটি অবাক। এই কাজ করার সাহস আমার কিভাবে হল সেই হিসেব নিজেও মিলাতে পারছি না। শুধু ঈশানের ঠোটের সাথে নিজের ঠোট দুটো মিলিয়ে চলেছি অবলীলায়। খানিক সময় পর ঈশানও আমায় খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। চুম্বনরত অবস্থাতেই আমায় বিছানায় শুয়িয়ে দিলেন উনি। আমার মাথার পাগড়ীটা খুলে ভেজা চুলগুলো উন্মুক্ত হলো। নিজের চুলের গাঢ় সুভাষটা বেশ ভালোই উপলব্ধি হচ্ছে আমার। আর ঈশান? উনার পাগলামি যেন আরো কয়েক ধাপ বেড়ে গেছে। সম্পুর্ণ শরীরের ভার আমার উপর তুলে দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরলেন উনি । আমি ব্যথা পেয়ে উনার ঠোট ছেড়ে দিলাম। কিন্তু ঈশান ছাড়লেন না। ঠোটের পাশাপাশি আমার সম্পুর্ণ মুখে, গলার চারিপাশে সর্বানাশা সেই উষ্ণ পরশ ঢেলে দিতে লাগলেন। আমি বিছানার চাদর খামচে ধরলাম। ইচ্ছে করছে মরে যেতে, তাও যদি এই যন্ত্রণাময় প্রশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই অবস্থায় আরেকবার দরজাটা ঠকঠকিয়ে বেজে উঠল। ঈশানের সেই উপলব্ধি নেই। আমি চাপা কণ্ঠে উচ্চারণ করলাম,

“ঈশান! কেউ এসেছে..”

ঈশান মাথা তুলে তাকাতেই বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে উঠে বসলাম আমি। যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছি। ঈশান গিয়ে দরজা খুললেন। আর আমি সাদা কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখলাম। আবার সেই সায়রা মেয়েটা এসেছে। এবার কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে কে জানে? রুমের ভিতর ঢুকে পড়লে তো সর্বনাশ!
🍂

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে