“তিমির” পর্ব ৭…
“আমি জানি না আমার বোনকে আমি কেন ধাক্কা দিয়েছি। হয়তো ভয় পেয়েছি।” না, কেমন এক ঘৃণা কাজ করেছিল। “তুমি কি কাল আমার বাসায় আসতে পারবে?”
“কাল কি আবির স্যাররা আসবে?”
“বিকেলের দিকে স্যার কলেজ থেকে ফিরেন। তখনই হয়তো আসবেন।”
“ওহ্, আমি হয়তো কলেজে যাব। অন্য কোনো সময় দেখা হবে।”
“কিন্তু বিকেলে এলে সমস্যা কী?”
“ওরা ইনভেস্টিগেশন করতে যাবে। আমার ভালো লাগবে না সেসময় গেলে।”
আমি হতাশ হলাম। সে এখানে এলে তাকে সবকিছু খুলে বলতে পারতাম।
“তুমি কলেজে কখন থেকে যাওয়া শুরু করবে?”
“আমি প্রতিটি জায়গায় আসিয়ার অভাব বোধ করছি। কলেজে যাওয়া হবে না। আমার সে শক্তি নেই।”
“আচ্ছা, তবে নিজের খেয়াল রেখো। চিন্তা করো না। আসিয়া হয়তো আবার আসতে পারে।”
ফোনটা রেখে দেই। বাবা খাবার খেতে ডাকলেন। আমি তাঁর কথায় সাড়া দেইনি। তিনি বিরস মুখে চলে গেলেন। তাঁর ওই মুখ দেখে আমার দয়া হয় না। তিনি তাকে চড় না দিলে..
আমি চোখ বুজে কিছুক্ষণ বসে থেকে বিগত সময়ের কথা ভেবে হলঘরের দিকে যাই। অন্তত একদিক থেকে ভালো লাগছে যে, আসিয়ার আত্মা বর্তমান আছে। আমি খাবার খাওয়ার সময় মুখে কেন যেন রুচি লাগেনি। সবকিছুই পানসে লেগেছে। আমি সামান্যটুকু খেয়ে শুয়ে পড়ি। হয়তো জ্বর আসছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমার গায়ে জ্বর আসেনি। কিন্তু অদ্ভুত রকমের ঠান্ডা হয়ে আছে আমার শরীর। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাশতা করে নেই। আমার আবারও ঘুম এলো। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। দুপুরের দিকে আমার ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে খালি পেটকে খাবার দেই। এবারও পানসে লেগেছে। হয়তো আমার মুখের রুচি কমে গেছে। মজিদ ভাই রান্নাবান্নার কাজও দেখেন। আমি তাঁকে বলে দেই, যাতে আমার খাবারে মরিচ বেশি দেওয়া হয়। তিনি অবাক হয়ে বললেন, “আপা, আপনাদের বংশের কেউই তো তেমন ঝাল পছন্দ করে না।”
আমি কড়া দৃষ্টিতে তাকাই, “যেমনটা বলেছি, তেমনটাই করবেন।”
তিনি একটু অবাক হয়ে সায় দিলেন। আমিও নিজের ওপর অবাক হই। আমি কারও সাথে এতটা শক্ত হয়ে কখনও কথা বলি না! কী হচ্ছে আমার সাথে?
আমি হলঘরে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। করার যেন কোনো কাজ নেই। যাওয়ার মতো কেবল একটিই জায়গা আছে। ওখানে কী যাব? আমার কেন যেন মনে হলো, আমার কিছু হবে না। আসিয়া আছে। ধ্রুবও আছে। কেউ না দেখে মতো আমি চুপটি করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে জঙ্গলের দিকে এগুলাম। গতবার যতটা ভয় লেগেছে, ততটা এখন লাগছে না। কারণ এখন ঘন কালো অন্ধকারটা নেই।
আমি জঙ্গলের গভীরে যাচ্ছি নাকি আমার বিষণ্ণতাই আমাকে নিয়ে যাচ্ছে আমি জানি না। গতবারের প্রাণিগুলো কোথাও যেন লুকিয়ে পড়েছে। আমার কেবল একটাই উদ্দেশ্য মাথায় আছে, সেই বাড়িটি দেখা। আমি গতবারের দৌড়ার পথটা মনে করে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি ওই খোলা জায়গাটায় এসে থমকে যাই। একটি গাছের পেছনে আমি লুকিয়ে পড়লাম। উঁকি দিয়ে অবাক হয়ে দেখলাম, ধ্রুব একপ্রকার লুকিয়ে বাড়িটির দিকে আগে থেকেই চেয়ে আছে। সেও বুঝি প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে এসেছে? আমার কেন যেন মনে হলো, ধ্রুবকে দূর থেকে হলেও আগের চেয়ে আরেকটু লম্বা দেখাচ্ছে। তার দাঁড়িয়ে থাকা জায়গাটিতে তার পায়ের পেছনে মোটা একটি গাছের টুকরো আছে। সে হয়তো ওদিকে কিছু একটার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
আমি লুকিয়ে ওর গতিবিধি লক্ষ করছি। সে একভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রইল। আমার নিজের পায়ে ব্যথা লাগল। সে কী আবির স্যারদের ওপর নজর রাখছে? এতটা নজর রাখার কী আছে? আর সে কি কলেজে যায়নি? হঠাৎ বাইকের আওয়াজ শুনে আমি এবং ধ্রুব একই সাথে বামদিকে তাকালাম। বাড়িটির মূল পথ দিয়ে আবির স্যার ঢুকছেন। তিনি বাড়িতে ঢোকার সময় কী ভেবে জঙ্গলের দিকে তাকালেন। ধ্রুব তৎক্ষণাৎ ওর জায়গা থেকে সরে গাছের পেছনে লুকিয়ে গেল। আমি বিস্ময়ে অস্ফুট একটা শব্দ করতেই যাচ্ছিলাম, তাড়াতাড়ি নিজের মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরি। স্যার কাউকে না দেখে হয়তো ইতোমধ্যে ভেতরে চলে গেছেন। আমি এখনও ধ্রুবের পায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। সে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে! এটা… এটা.. কীভাবে… সম্ভব?
আমি অনড়ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছি। ধ্রুব ওভাবেই মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় না হেঁটেই চলতে লাগল, যেন সে দাঁড়িয়েই আছে কিন্তু স্থানান্তর হচ্ছে এবং দ্রুত। তার ওই অদ্ভুত স্বাভাবিক চলন মানুষের দৌড়ের ন্যায় দ্রুত। আমি বিস্ময়ে মুখটা আরও চেপে ধরলাম। এটা সত্য হতে পারে না। ধ্রুব সত্যিই মানুষ নয়? আমার সন্দেহ কী অবশেষে বাস্তবে ফলছে?
ধ্রুব আমাকে দেখেনি। কিন্তু আমি তার চিন্তিত চেহারা দেখেছি। নিশ্চয় এই বাড়িটিতে কিংবা ওখানের মানুষগুলোতে কিছু একটা লুকিয়ে আছে। ক্রমে আমি বেরিয়ে ওই জায়গায় যাই, যেখানে একটু আগে ধ্রুব লুকিয়ে ছিল। ওখানে ভাঙা, শুকনো মোটা গাছটির পাশে কিছুই নেই। আমি ওসব খেয়াল করতে গিয়ে কারো হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম। তড়িঘড়ি করে তাকিয়ে দেখি, বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় সামনের ঘরটির জানালার পাশে আবির স্যার তার স্ত্রীর সাথে সন্ধিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তাদের দিকে তাকানোর সাথে সাথে তারাও আমাকে দেখতে পায়। ইশ! আমি ধ্রুবের ন্যায় লুকাতে ভুলে গিয়েছি। তাদের হাসির আওয়াজটা কয়েক সেকেন্ডের জন্যই কানে বাজল। এখন তাদের মুখটা স্তব্ধ হয়ে আছে। তারা হয়তো এইমাত্র এসেছে, আর সাথে সাথে আমাকে দেখে ফেলেছে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
আমি আমার সন্ধানী চোখ দিয়ে মেয়েটিকে এবার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম। পরোয়া করলাম না, তারা আমার দিকেই তাকিয়ে একে অপরকে চাওয়া-চাওয়ি করছে। আমি ঠোঁট কামড়ে ফেরার জন্য উদ্যত হই। এই জঙ্গলটা যেটুকু ভেবেছি, তার চেয়ে অধিক রহস্যময়…
আমি বাসায় এলে বাবা জিজ্ঞেস করলেন কোথায় গিয়েছিলাম। আমি কথা না বাড়িয়ে বলে দেই, বাইরে একটু হাঁটতে গিয়েছিলাম। দুপুরটা গড়িয়ে গেছে। আমি আসার পর বেলকনিতে যাই। কিছুক্ষণ পর গাড়ির আওয়াজ শুনতে পেলাম। আবির স্যার পুলিসের গাড়ি থেকে নামার সময় আমি তাঁর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালাম। তারা বাসায় ঢোকার পর আমি কান খাঁড়া করে রাখি। তারা বাবাকে বলছেন, আবির স্যারের ব্যস্ততা থাকায় তিনি বিকেলের দিকেই এখানে আসবেন। বাবা আপত্তি করলেন না। তবে বললেন, তিনি চান, শীঘ্রই যেন আসিয়ার খুনি ধরা পড়ে। তিনি তাদের কঠোর শাস্তি পেতে দেখতে চান।
আর কোনো শব্দ না পেয়ে আমি বাড়ি থেকে বেরুই। ওরা বাড়ির চারিদিকে নানাকিছুর সন্ধান করছে। দারোয়ানকে তারা জিজ্ঞেস করল, অপরিচিত কাউকে দেখেছে কিনা বা অস্বাভাবিক কিছু এই বাড়ির আশেপাশে হয়েছিল কিনা। দারোয়ান কাকা নির্দ্বিধায় শিওর হয়ে বলছেন, তিনি এমন কিছু দেখেননি। ইতোমধ্যে মজিদ ভাই পুলিসদের দেখে বেরিয়ে এসে তাদের ইনভেস্টিগেশন দেখতে লাগলেন। আবির স্যার পেছনে ফেরার পর আমায় দেখতে পান। আমিও একটা দর্শকের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু আমার ভেতর বাকিদের চেয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা কাজ করছে। স্যার কি সরাসরি আমার কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন নাকি আমাকে মিথ্যা কিছু বলে যাবেন?
স্যার আমায় অবাক করে দিয়ে হাসলেন। এটার অর্থ বুঝলাম না। ইশ। এখানে যদি ধ্রুব থাকত, তবে তার মাইন্ড পড়তে পারত। ধ্রুবের কথা মনে পড়তেই আমি আন্দাজ করে ফেলতে পারলাম ওর অসামান্য দক্ষতার পেছনের রহস্য। একটি সাধারণ মানুষ সহজেই হাতের মাধ্যমে টেলিপ্যাথি সম্পন্ন করতে পারে না। যদি দক্ষতার মাধ্যমে করাও যায়, তবে সে দক্ষতা অর্জনের জন্য ধ্রুবের বয়স খুব কম হয়ে যাচ্ছে।
আবির স্যাররা তাদের কাজ কন্টিনিউ রাখলেন। মজিদ ভাইকে আরিয়ান স্যার জিজ্ঞেস করলেন, “সেদিন কার কার গাড়ি কয়টায় বেরিয়েছিল, দারোয়ান তো এক্সেক্টলি বলতে পারছে না। তুমি কি পারবে, অন্তত লোকের বেরুনোর পর্যায় হিসেবে?”
“আমি যতটুকু বলতে পারি, তা হলো মালিকের বন্ধুরা খাওয়ার পর পর বেরিয়ে পড়েছেন। কারো গাড়ি ছিল, কারো ছিল না। তারা মোটামুটি বয়স্ক ছিল। একজন খুব তাড়াতাড়ি গেছে। বরকত সাহেব। আপনারা সন্দেহ করতে পারবেন, এমন কিছু দেখি নাই। এগারোটার দিকে আলিয়া আপার বন্ধুরাও বেরিয়ে পড়েছে। ওরা সবাই একটা বড় গাড়িতেই গিয়েছিল। ওইটা হয়তো আসিয়া আপার এক ধনী বন্ধুর গাড়ি ছিল।” সম্ভবত জিসান ভাইয়ার কথা বলছেন।
আবির স্যার বললেন, “ওদের বন্ধুদেরও সন্দেহ করা যায় না। আর মুনতাহা মেয়েটি?”
“মুনতাহা আপাও তাদের সাথে একই গাড়িতে বেরিয়েছিলেন।”
“এরপর?”
“এরপর গ্যারেজে দুটা গাড়ি ছিল। একটা মালিকের, আরেকটা তার আপার। তাদের গাড়িটাও পরপর বেরিয়ে পড়েছে।”
“পার্টিতে সাড়ে দশটার আগে কিংবা পরে অস্বাভাবিক কিছু দেখনি?”
মজিদ ভাই বলতে পারলেন না, “ততকিছু খেয়াল করি নাই। খাওয়ার দিকের ব্যবস্থাটাও দেখছিলাম।”
“কেসটা জটিল।” স্যার আরিয়ান স্যারকে বললেন, “সন্দেহের মতো কোনো ক্লুই পাচ্ছি না। এমন একটা সময়ে মার্ডারটা হয়েছে, যখন কেউই ভালো একটা সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিল না।”
“হয়তো এই সময়ই সিলেক্ট করা হয়েছিল খুনের জন্য।”
তারা এভাবেই নানা কিছু নিয়ে আলোচনা করছিল। মজিদ ভাইয়ারা চলে যায়। আমি দাঁড়িয়ে আছি লক্ষ করে আবির স্যার আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আরিয়ান স্যারও ইতোমধ্যে আমার দিকে তাকিয়েছেন, অপছন্দের দৃষ্টিতে।
আবির স্যার রহস্যময় ভঙ্গিতে বললেন, “ওইরাত তুমি আমাকে আর সাবিলাকে দেখেছিলে তাই না?”
ওহ্, মেয়েটির নাম সাবিলা। “হ্যাঁ।”
“তো আজ কী দেখতে গিয়েছিলে জঙ্গলে?”
“আপনাদেরকে।”
তিনি অস্বস্তি বোধ করলেন না। তবে ঢোক গিললেন। ভয় পাওয়ার লক্ষণ। “আমাদেরকে কেন?”
“কেন বারবার আপনাদের বাসস্থানটা লুকাতে চান তা জানতে গিয়েছিলাম।”
“তা কী জানতে পেরেছ?”
“আপনার স্ত্রী মানুষ নয় বিধায় আপনারা নির্জন ওই জঙ্গলে থাকছেন।”
আমার কথা শোনে স্যার বিস্ফারিত চোখে তাকালেন। এই কথায় এতক্ষণে আরিয়ান স্যার আমার দিকে তাকালেন। কিন্তু এবার আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে।
আমি কথাটি কিছুটা শিওর হয়ে এবং কিছুটা আন্দাজ করে বলেছিলাম। এটা শিওর যে, সাবিলা মানুষ নয়। কারণ আমি এবার তাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। সে কমবয়সী। তার বয়স বিশ-বাইশই আন্দাজ করি। সে ধ্রুবের মতোই স্বর্গীয় সাদা রং পেয়েছে। উভয়ের ত্বক অতিরিক্ত সাদা নয়। তবে মায়া জাগানোর মতো আকর্ষণীয় এবং অমানবিক। মেয়েটির ভ্রূ কিছুটা মোটা এবং ঘন, ঠিক ধ্রুবের মতোই। আমি তখন কিছুটা বিস্মিত হয়েছিলাম, এই ধরনের ভ্রূ মেয়েদের চেহারায় এতটা সুন্দর কী করে হয় ভেবে। তার ঠোঁটগুলোর গঠন ভিন্ন হলেও, আকার এবং রং ধ্রুবের ঠোঁটের মতোই, মিষ্টির রং। চোখের পাপড়িও অনেক ঘন হওয়ায় তারা দু’জনই অসম্ভব মায়াবী। ধ্রুবের মুখ খানিকটা চারকোণা আকৃতির। কিন্তু সাবিলার মুখ গোলও ছিল না, লম্বাও ছিল না। ধ্রুবের মতোই তার সবকিছু অনেক পারফেক্ট। ধ্রুব অমানব হলে মেয়েটি কেন নয়? আমি যদি ধ্রুবকে তার আসল রূপে জঙ্গলে না দেখতাম, তবে এই তত্ত্বে পৌঁছতে পারতাম না। আর অবশ্য আন্দাজ করেছি যে, সাবিলা অমানব হওয়ায় আবির স্যাররা তাকে লুকানোর জন্যই তাদের বাসস্থান লুকাচ্ছেন।
কথাটি বলার পর আরিয়ান স্যার ভাইয়ের পেছনে এসে দাঁড়ালেন, “তুমি কি বলতে চাও?”
“তার রূপ একটি সাধারণ মানুষের মতো না।”
“তাই বলে কি ও মানুষ নয়?”
“তা সরাসরি বলছি না। তবে এই বিষয়ে খটকা আছে।”
“কেমন?”
“আপনারা জঙ্গলে নির্বিঘ্নে থাকছেন, ওখানে এতগুলো ভয়ানক প্রাণী থাকার সত্ত্বেও। নিশ্চয় সাবিলা আপনাদের রক্ষা করছে।”
“এমনটা নয়।”
“হয়তো আমার সব আন্দাজই সঠিক নয়। কিন্তু সাবিলা মানুষ নয়, তাই না?”
তারা দুজনই পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। আমি বিশ্বাসের যোগ্য হওয়ার চেষ্টা করলাম, “আমি কাউকেই কিছু বলব না। আপনারা আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।”
এতক্ষণে উভয়ের মুখে স্বস্তি ফিরে এলো। তাদের মুখ উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। আবির স্যার বললেন, “ঠিক আছে। প্লিজ প্লিজ, কাউকে বলো না।”
“কিন্তু কেন?”
“কিছু নিষেধাজ্ঞা আছে।”
“কিসের নিষেধাজ্ঞা? আর সাবিলা আসলে কী?” আমরা খুবই নিচু স্বরে কথা বলছি, প্রায় ফিসফিসানির মতোই।
“কিসের নিষেধাজ্ঞা তা বলব না। তবে সাবিলা কিন্তু মানুষই।”
“মানে?”
“কীভাবে বুঝাই! ও একটা মানুষ ঠিক, কিন্তু একটা পরীও বটে।”
আমার আশ্চর্যের সীমা রইল না। “বলছেনটা কী? এটা কী করে সম্ভব? সাবিলা পরী? সে দুটোই একসাথে কী করে হতে পারে?”
“অনেক লম্বা এই পরীর স্টোরি। আমারও বুঝতে সময় লেগেছিল, কারণ সে মানুষই। কিন্তু পরীর সন্তান। আসলে ওর বাবা একজন মানুষ ছিল।”
“ইন্টারেস্টিং।” চোখ ডাগর ডাগর করে বললাম।
দু’জনই হাসল। হাসলে আবির স্যারের গালের দু’পাশে টোল পড়ে। তিনি সত্যিই অনেক হ্যান্ডসাম। তার বয়স হয়তো ছাব্বিশ- সাতাশই হবে। স্যার বললেন, “তুমি অদ্ভুত। অন্য কেউ হলে আমি শিওর, সে এই প্রতিক্রিয়া দিত না।”
“না, সত্যিই ইন্টারেস্টিং। পরী। মানুষ.. পরীরা থাকে কোথায়?’
“তারা দেখা দেয় না। এটুকু জেনে রাখ, তারা আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকে। ওখানে আমরা সাধারণেরা পৌঁছতে পারব না।”
আমরা সাধারণেরা মানে? তিনি কি মানুষ? তাকে মানুষের মতোই তো এতদিন মনে হয়েছে। কিন্তু তার কাছ থেকে আসা ধ্রুবের মতো সুগন্ধটা?
“তাদের জগতের ছেলেরা কেমন হয়?”
“কেন?”
“আমি কিউরিয়াস।”
“তাদেরকে আমরা মনুষ্য ভাষায় জ্বীনই বলতে পারি। সংজ্ঞায়িত করার মতো আর কোনো শব্দ আপাতত নেই।”
“ওহ্।” আমি ঠোঁট কামড়ালাম। এরকমই কিছু ধ্রুবের সম্বন্ধে ভাবছিলাম। কিন্তু তারা কোথায় থাকতে পারে, এটার ধারণা করিনি। তারা কি আকাশের অংশ? তাহলে সাবিলা এখানে কী করছে? ধ্রুবই বা এখানে কেন? অনেক প্রশ্ন। কিন্তু আমি ইতোমধ্যেই লক্ষ করেছি, স্যারেরা বিরক্ত বোধ করছে। আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব, আরিয়ান স্যারের ফোন বেজে উঠল।
তিনি ফোন রিসিভ করার পর তাকে আতঙ্কিত দেখাল। আবির স্যার উত্তেজিত হয়ে বললেন, “কী হয়েছে ভাইয়া?”
“আমাদের এখন যাওয়া উচিত।”
তারা যেতে উদ্যত হলে আমি বললাম, “আমিও কি আপনাদের সাথে যেতে পারি? সাবিলার সম্ভবত কিছু একটা হয়েছে। সে বোধ হয় অসুস্থ। আমি ওকে দেখতে চাই।”
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার
#________পরী________
পর্বসমূহের লিংক:
১– https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=354525311951647&id=100021825420290
২– https://free.facebook.com/story.php?story_fbid=354950821909096&id=100021825420290&ref=dbl&_rdr
৩– https://free.facebook.com/story.php?story_fbid=355497155187796&id=100021825420290&ref=dbl&_rdr
৪– https://free.facebook.com/story.php?story_fbid=355960838474761&id=100021825420290&ref=dbl&_rdr
৫– https://free.facebook.com/story.php?story_fbid=356484925089019&id=100021825420290&ref=dbl&_rdr
৬– https://free.facebook.com/story.php?story_fbid=356970568373788&id=100021825420290&ref=dbl&_rdr
৭– https://free.facebook.com/story.php?story_fbid=357850364952475&id=100021825420290&ref=dbl&_rdr
৮– https://free.facebook.com/story.php?story_fbid=358761161528062&id=100021825420290&ref=dbl&_rdr
৯– https://free.facebook.com/story.php?story_fbid=359233134814198&id=100021825420290&ref=dbl&_rdr
১০– https://free.facebook.com/story.php?story_fbid=359760441428134&id=100021825420290&ref=dbl&_rdr
১১– https://free.facebook.com/story.php?story_fbid=360225681381610&id=100021825420290&_rdr
১২– https://free.facebook.com/story.php?story_fbid=360657791338399&id=100021825420290&_rdr