“তিমির”পর্ব ৫…

0
1540

“তিমির”পর্ব ৫…

আমার সামনে রাখা সাদা কাপড়ে আবৃত আসিয়ার লাশটির দিকে অপলক চেয়ে রইলাম। এসব মিথ্যা হতে পারে। কেননা মাত্র একদিন আগে ও আমার সাথে ফুর্তি করছিল। এমনটা হতে পারে না। কেউ এসে বলে দিক, আসিয়া জীবিত। কিন্তু কেউই আসছে না। বাবা তার পাশে বসে সেই অনেক আগে থেকে কাঁদছেন। আমার ক্লাসমেটদের চোখও নমনীয়। আবির স্যার একপাশে শোকাহতের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছেন। এক মুহূর্তের জন্য ইচ্ছে হলো, লোকটিকে বলে দেই, আপনি এখান থেকে চলে যান। আমার বোনকে না এনে আপনি তার লাশকে কেন এনেছেন? স্যার বলেছিলেন, আমি জঙ্গলের ভেতর ওর লাশকে পেয়েছি, একটি গর্তে। বস্তার ভেতরে ওর রক্তাক্ত মৃত শরীর কুঁকড়ানো ছিল।
আমি স্যারের একটি কথাও বিশ্বাস করতে পারছি না। এমনটা হতে পারে না। এতো তাড়াতাড়ি আমার সুখ উজাড় হয়ে যেতে পারে না। মায়ের যাওয়ার পর আসিয়াই সবসময় আমার সাথে ছিল। যদিও সময়টার পরিমাণ খুব কম, আমি তাকে এই সময়ে অনেক আপন করে পেয়েছি। সে আমাকে ঘৃণা করত না, আমার মাকেও না। সে কেবল আমাকে ভালোবেসেছে। না বলা কিছু কথাও আমাকে বলেছে। মাত্র দুটো সপ্তাহে সে আমাকে বোনের চেয়েও অধিক কিছু ভেবেছে। আমার কাছে নানাকিছুর আবদার করেছে। এরই মাঝে তার দুইবার অসুস্থ হয়ে পড়া নিয়ে তার প্রতি আমার চিন্তা দেখে সে মায়াপূর্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে থেকেছে। এসবের পর তো আমি একদমই মেনে নিতে পারি না, আসিয়া এই মুহূর্তে জীবিত নেই। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করিনি, তাই মোটেও কাঁদিনি। আমার সহপাঠীরা আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল। আমি কিছু বলছিলাম না। কেউ একজন আমাকে প্রায় সজোরে নাড়া দিয়ে বলল, আসিয়াকে দাফন করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার খানিকটা হুঁশ হয়। আসিয়াকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমার কাছ থেকে তাকে দূরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেভাবে মাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? আমি যখন চোখ তুলে তাকাই, তখন আসিয়ার লাশকে খাটিয়ায় তুলে ফেলা হয়েছে। আমি এতক্ষণে চিৎকার করে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। সাথে সাথে যারা আসিয়ার লাশকে বাইরে নিয়েছে, তারা পেছনে ফিরে তাকায়। বাবাও ওখানে ছিলেন। আমি দৌড়ে বাহিরে গেলে খাটিয়া নিচে নামানো হলো, হয়তো বাবার নির্দেশে। আমি গিয়ে আসিয়ার ওপর ঝুঁকে পড়ি। তাকে উঠতে বলি। কারা যেন আমাকে পেছন থেকে টানছে, যাতে আসিয়ার লাশকে জড়িয়ে না ধরি। তার মুখটা সাদাটে হয়ে আছে। আমি কখনও এমনটা দেখতে চাইনি। এখন আর বিশ্বাস না করে পারলাম না, এটি আসিয়ার মৃত মুখ। আমার বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল। ব্যথায় আরেকবার সজোরে আর্তনাদ করে উঠলাম। এই আর্তনাদ নিমিষেই আমার শক্তি কেড়ে নিল। আমার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। দৃষ্টির চারিদিকটা নড়ছে। ব্যাপারটা আমার অদ্ভুত লাগল। কেউই চায় না, মাটি নড়ুক। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। মনে হলো, আমার কোনো বিবেক নেই। কোনো শরীর নেই। কোনো আত্মা নেই। স্রেফ একটি আওয়াজ অস্পষ্ট ভাবে খেয়াল করলাম, কারো বাহুতে ঝোপ করে পড়ার মৃদু আওয়াজ….
চোখ মৃদুভাবে খোলার পর সবাইকে আবারও দেখতে পেলাম। এখন তাদের মাঝে কিছু অচেনা লোকও আছে, পুলিশের ইউনিফর্মে। কেউ আপাতত আমার দিকে তাকাচ্ছে না। এতক্ষণে খেয়াল করলাম, কেউ একজন আমার হাত ধরে আছে। এই হাত খুবই পরিচিত। এর গঠনের কথা আমি কখনও ভুলতে পারব না। সেই প্রথম ছোঁয়ার অনুভূতিটা এখনও স্মৃতিতে জায়গা করে আছে। ওই রহস্যময় ছেলেটির অদ্ভুত কোমল হাতটা আমি কিছুটা আঁকড়ে ধরলাম। সে কি আমার মস্তিষ্ক পড়ার চেষ্টা করছিল? এইবার পেরেছে? তার এমন কোনো দক্ষতা নেই যে, আমার মস্তিষ্কের ব্যথার ভার কমিয়ে দিতে পারবে?
ধ্রুব কাউকে বলল, “আঙ্কেল, ওর হুঁশ ফিরেছে।”
ওহ্, তাহলে সে আমার হৃদস্পন্দন অনুভব করছিল। মস্তিষ্ক এখনও পড়তে পারেনি। ইশ, কেন আমি অন্যান্য সাধারণের ন্যায় হলাম না।
ধ্রুব আমার হাতটা উন্মুক্ত করল। বাবার গলার কর্কশ আওয়াজ শুনতে পেলাম, “মা, কিছু খেয়ে নে। আসিয়ার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে পানি ছাড়া কিছুই খাসনি।”
“বাবা, ওকে কি আর পাওয়া যাবে না?”
চারিদিকটা নিস্তব্ধ। সত্যিই মনে হচ্ছে, এটা কারো মৃত্যুর পরের পরিবেশ।
শুকনো ঠোঁটের ফাঁকে বললাম, “আসিয়ার কী হয়েছিল?” সকালে যখন তার লাশ আনা হয়, তখনও তার লাশ দেখে আমি বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলাম।
“কিছুই জানতে পারছি না। কী হলো, কবে হলো। কে ওর পেটে ছুরি ঢুকিয়ে ওর হত্যা করেছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। পুলিশরা তদন্ত করছে।” বাবা ঢোক গিললেন।
দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেললাম। রাত নয়টার দিকে আমার পেটের ভেতর থেকে শব্দ হলে মৌমিতা আমাকে খাবার খাইয়ে দেয়। এরপর তারা আমাকে বিদায় দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। দেখলাম, ধ্রুব আমার কাছে আবার ফিরে আসছে। ওকে দেখে ঠোঁটের কোণ কিছুটা উঁচিয়ে হাসার চেষ্টা করলাম। আমাদের বন্ধুত্ব মাত্র কয়েকদিনের। কিন্তু ধ্রুব আমার কত চিন্তাই না করে। বাবাও হয়তো ইতোমধ্যে তা লক্ষ করেছেন।
সে আমাকে বলল, “নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা কর। তোমার বাবাকেও তোমার সামলাতে হবে।”
সে তার অপূর্ব সুন্দর হাতের মুঠো থেকে একটা কালো সুতার ন্যায় জিনিস বের করল।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

“কী এটা?”
“তুমি বুঝবে না। একটাই অনুরোধ করব, এটা কখনও সরাবে না।”
একফাঁকে চোখে পড়ল, ধ্রুবের একটি আঙুলে এই সুতাসরূপ জিনিসটি পেঁচানো আছে। ওখান থেকেই হয়তো সে আমাকে শেয়ার করেছে। ধ্রুব তা আমার এক আঙুলের আংটিতে পেঁচিয়ে দিতে গেলে সে অস্ফুট একটা শব্দ করল।
“কী হয়েছে?”
সে দাঁতের ফাঁক দিয়ে বলল, “স্টিলের আংটি কেন পরলে?”
“এমনিই। কেন?”
“আমার স্টিল পছন্দ নয়।”
সে সুতাটি আমাকেই পেঁচাতে দিয়ে বিদায় নেয়। আমি তার চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলাম। সে তার হাতের দুটো আঙুল কচলালো। কোথাও পুড়ে গিয়েছিল নাকি? ইশ, আমাকে সুতাটা পরাতে গিয়েই হয়তো ক্ষতস্থানে ব্যথা পেয়েছে। সুতাটা আমি পেঁচাতে লাগলাম। অদ্ভুত পিচ্ছিল, সামান্য এই পাতলা সুতাটি।
বাবা দুপুরের পর হয়তো কিছুই খাননি। আমি তাঁর ঘরের দিকে যাচ্ছি। হলে থাকা মেহমানের শোয়ার ব্যবস্থা মজিদ ভাই করছেন। বাবার ঘরে গিয়ে তাঁর পাশে বসে বলতে লাগলাম, “আমার জীবনে মা ছাড়া কেউই ছিলেন না। তাঁর পর কেবল আসিয়াকেই ভালোভাবে আপন করে পেয়েছিলাম। সেও হারিয়ে গেছে। এসবের পেছনে কে আছে, তা একবার জানলে আমি তার…” খারাপ কিছু বলতে গিয়ে আমি নিজেকে সামলালাম, “এখন আপনিই আছেন আমার জীবনে। যদিও মা আপনাকে পছন্দ করতেন না, আমিও না। তবু আমার বাকি জীবন আপনাকে পাশে রেখেই অতিবাহিত করতে চাই। প্লিজ, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে চেয়ে দেখুন। আপনি দুপুর থেকে কিছুই খাননি।”
“এসব আমার কারণে হয়েছে। আমিই ওকে চড় দিয়েছিলাম।” বাবা মুখ ঢাকলেন।
আমার ভেতরে চিনচিনে একটা রাগ উবলে উঠতে শুরু করল, “বুঝিনি।”
বাবা কেঁদে বললেন, “সেদিন পার্টিতে আসিয়া এসে আমাকে নাচতে নিয়ে যেতে চাইল। আমি গেলাম না। সেসময় আমাদের দুজনের চোখ এককোণায় পড়ল, মুনতাহার ওপর। ওই ছেলেটির নাম কী? জিসান। ওরা একে অপরকে পছন্দ করে হিসেবে মুনতাহা ছেলেটির গায়ে পড়ে নাচতেই পারে। কিন্তু আসিয়া এসব দেখে ফুঁসে উঠে মুনতাহার কাছে যেতে চাইল। আমি ওকে থামাই, বলি, ওরা যাই করুক, তুই ওদের বাধা দিস না।
ও বলল, ‘বাবা দেখুন, জিসানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মুনতাহা কীভাবে ওর গায়ে পড়ছে। জিসান এতোটা আনইজি ফিল করবে, আর আমি চেয়ে থাকব?’
‘এটা ওদের বিষয়। তুই ওদের মাঝখানে যাওয়ার চেষ্টা করিস না। তোর অধিকার নেই।’
‘বাবা, আপনার কথায় অনেকদিন চুপ করে থেকেছি। প্লিজ, আমায় যেতে দিন। জিসান ওকে ডিজার্ভ করে না। ও যদি জানতে পারে, আমি ওকে কতটা ভালোবাসি, তাহলে সে আমাকে কষ্ট দিতে পারবে না।’
আমার রাগ উঠল। কারণ আমি আমার আর শাহানার মাঝে আরেকজনকে আসতে দিয়ে যে ভুলটা করেছি, তা আসিয়াকে করতে দিতে চাইনি। আমি ওর হাত ধরে রয়েছিলাম। ও যাওয়ার জেদ ধরায় আমার ধৈর্য ফুরিয়ে আসে। আমি ওর গালে চড় বসাই। ও অপমানে, অভিমানে, রাগে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি যদি চড়টা না দিতাম, তবে সে পার্টিতে আমার চোখের সামনে থাকত। এভাবে নিখোঁজ হতো না। পরবর্তীতে বাসায় ওর লাশ আসত না।”
বাবার কান্নার বেগ যতই বাড়ছে, আমার ভেতরের রাগটা ততই উবলে উঠছে। বাবার কারণেই? হোক খুনটা অন্য কেউ করেছে। কিন্তু বাবা যদি ওকে জিসান ভাইয়ার কাছে যেতে দিতেন, তবে ও অন্তত পার্টিতে থাকত, জীবিত থাকত। আমি দাঁতের ফাঁক দিয়ে কথাগুলোকে চিবিয়ে বললাম, “আপনি কি জানতেন না, মুনতাহাই ওদের দু’জনের মাঝে এসেছিল?”
“কী?” বাবার চোখে বিস্ময় খেলে গেল।
নাহ্, আমি তাঁকে আর বাবা বলে ডাকব না। তিনি আমার মাকে কষ্ট দিয়েছেন, আমার সর্বশেষ ভালোবাসার মানুষটিকে ছিনিয়ে নিয়েছেন। আমার রাগটা ক্রমশ বাড়ছে। আমার ভেতর হয়তো একটা পশুর জন্ম হয়েছে। আমি রাগটা তাঁর মতো বয়স্ক লোকের উপর ঝাড়তে না পেরে ড্রেসিং টেবিলের জিনিসগুলো ছুঁড়ে ফেললাম। কিছু জিনিস মেঝেতে আঁচড়ে ভাঙলাম। বাবার কারণে আমি আসিয়াকে হারিয়েছি? আসিয়া। আসিয়া। ও এখন আমার সাথে নেই। এই পৃথিবীতে আমার আর কেউই নেই।
বাবা কাঁপা কণ্ঠে বললেন, “তুমি দেখছি, তোমার মায়ের ভয়ঙ্কর রাগটাই পেয়েছ। প্লিজ, এমন করো না। নিজের কোনো ক্ষতি করে বসবে।”
আমি শুনলাম না। যদি বাবার জায়গায় অন্য কেউ হতো, তবে হয়তো আমি তার গলা চেপে ধরতাম। কিন্তু না পারায়, আমি রাগে ছটফট করে তাঁর সামনে থেকে নিজেকে সরালাম। বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে। বাবা আমার পিছু নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। আমি দৌড়াতে লাগলাম। রাগ উঠলে আমার এমন কেন হয় জানি না। সেদিনও রাগ উঠায় আমি খালার মাথায় আঘাত করে নানুর বাসা থেকে দৌড়ে পালিয়েছিলাম। রাগান্বিত অবস্থায় আমার দৌড়ার গতি এতো দ্রুত কেন হয়, তাও আমি জানি না। আমি নিজেকে চিনি না। কিন্তু একজন চিনেছিল। আসিয়ার আত্মা আমার সাথে জুড়েছিল। মাত্র কয়েকদিনে সে আমাকে সৎবোন থেকে “বোন” করেছে। ওর মতো কেউই হতে পারে না। বোনের ভালোবাসাটা আমি আর পাব না। এর জন্য কোনো না কোনোভাবে বাবাই দায়ী। আমি রাগে কাঁদতে লাগলাম। বারবার হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছছি। কবে বাড়ির সামনের রাস্তা পেরিয়ে গাছের সারির ভেতর ঢুকে পড়েছি, বুঝতে পারিনি। দৌড়ে যতই ভেতরে ঢুকব, ততই আমি জঙ্গলের গহীনে চলে যাব। জায়গাটা ভালো নয়। তবু আমি যাব। আমি আর বাঁচতে চাই না। আমি একের পর এক ধাক্কা আর সইতে পারছি না। প্রথমে মা। তারপর বোন। আমি আর ভাবতে পারছি না। হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। খেয়াল করি, আমার আশেপাশে ঘন আঁধার, আমার পাশে কেবল গাছের ফাঁক দিয়ে আসা চাঁদের এককোষ আলোই আছে। আমার ভেতরের রাগটা এখন কমে গেছে। আমি ভয় পাচ্ছি। দারুণ ভয় পাচ্ছি, স্বপ্নে দেখা জঙ্গলটার রূপ বাস্তবে দেখে। আশেপাশে ভয়ংকর সব গাছপালা, যেন এরা রক্ত হিম করা কোনো বড় একটা ভয়ঙ্কর রাতের সাক্ষী। এমন সময় আমি হিসহিস শব্দ শুনতে পাই। সাপ? পাশ ফিরে চাঁদের আলোয় আমি সাপটাকে দেখতে পেলাম। এতো বড় সাপ? এটা কি ব্ল্যাক মাম্বা? আমি বরফের ন্যায় জমে রয়েছি, ভয়ে এবং সতর্ক হয়ে। সাপটা স্থির রয়েছে কালো একটা কাঠের মতো। আমিও একবিন্দু নড়ছি না। যেই সাপটা ফণা ছাড়ল, আমি উঠে এদিক-ওদিক না তাকিয়ে প্রাণপণে দৌড়াতে লাগলাম। কারণ আমি জানি, কালো সাপটা আমার কাছে আসার জন্যই ফণা ছেড়েছে। আমি বুঝি জঙ্গলের আরও গহীনে যাচ্ছি। ইশ, আমার রাগটা কেন এতো তীব্র হয়েছিল? আমি কি জঙ্গল থেকে বেঁচে ফিরতে পারব? হিসহিস শব্দটা কমে গেলে আমি নতুন একটা গর্জন শুনতে পেলাম। বাঘ? সিরিয়াসলি? এখানে বাঘ কোত্থা থেকে আসবে? আমি আজ পাগল হয়ে যাচ্ছি না তো? চাঁদের আলোয় আমি কিছু হরিণও দেখলাম। এসব হয়তো মায়া। আমি মায়াটা কাটানোর জন্য আরও দ্রুত দৌড়াতে লাগলাম। এই পা আমি থামাতে পারব না। আজই কেন আমি সাদা কাপড় পরতে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর একটি ভালো জায়গায় পৌঁছলাম। কিন্তু কাছেই কী যেন নড়তে দেখা যাচ্ছে। সেই সাথে মানুষের গলার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। ওখানে কি মানুষ? আমি উঁকি দিতে দিতে এগিয়ে গেলাম। যখন আমি ওদের দেখি, তখন আরও অবাক বনে যাই।
একটি মেয়ে সাইকেল চালাচ্ছে। তার পেছনের অংশই দেখতে পাচ্ছি। তার পিঠে হেলান দিয়ে একটি ছেলে উল্টো করে বসে আছে। আমি আজ সত্যিই পাগল হয়ে গিয়েছি। এই দুর্গম জায়গায় এতো রাতে মানুষ কেন সাইকেল চালাবে? আমি ইলিউশান ভাবলেও এতই অভিভূত হই যে, শব্দ না করে তাদের পিছু নেই। মেয়েটি সাইকেল ধীরে ধীরে চালাচ্ছে। ওরা একসময় খোলা এক আলোকময় জায়গায় পৌঁছায়। ওরা সাইকেল থেকে নামার সময় অবাক হয়ে খেয়াল করি, ওরা একটা বাসার সামনে থেমেছে। জঙ্গলের ভেতর একটা পরিপাটি বাসা? আমি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখলাম, ছেলেটি সাইকেল থেকে নেমে মেয়েটিকে নামাচ্ছে। মেয়েটি যখন নেমে যায়, তখন ছেলেটি তাকে তার বাহুতে চেপে রাখে, যেন মেয়েটি হাঁটতে পারে না। আরেকটু এগিয়ে গেলে আমি থ হয়ে গেলাম, ছেলেটি আর কেউ নয়, আবির স্যার।
না, এটা ইলিউশান হতে পারে না। মেয়েটিকে আমি যখন দেখি, আমি আর নিজের পা, নিজের ভার অনুভব করতে পারলাম না। এতো সুন্দর মেয়ে কি পৃথিবীতে বর্তমান আছে? আমার কাছে মুহূর্তের জন্য ধ্রুবের কথাই মনে পড়ে গেল। আমি আবারও কিছু পশুর গর্জন শুনলাম, যেন ওরা আমার জন্য আসছে, যেন ওই ভালোবাসার জুটিকে অপরিচিতের কাছ থেকে পশুগুলো রক্ষা করতে চাইছে। আমি প্রাণপণে উলটো পথে দৌড়াতে শুরু করলাম। আমার শরীর ঘেমে ভিজে একাকার। আমি মরতে যাচ্ছি। আমাকে ওরা মেরে ফেলবে। আমার ওড়না পড়ে গেল। চুলের বান খুলে গেল। আমার আংটির অদ্ভুত সুতাটিও হয়তো খুলে পড়ে গেছে। আমি তবু দৌড়ছি। একসময় আবারও চক্কর খেতে লাগলাম। দৌড়ার গতি কমে এলো। মাটির সাথে আমার দূরত্ব কমে এলো। ওহ্, আমি মাটিতে পড়ে যাচ্ছি…
.
“আলিয়া। আলিয়া। পানি খাবে?”
“হু”, আমি চোখ খুললাম। সামনের দেয়ালের বড় ঘড়িটা চোখে পড়ল। জঙ্গল কোথায়? আর এই কোমল কিন্তু গম্ভীর স্বর্গীয় সুরেলা সুরটা…
ধ্রুব আমাকে পানি খাইয়ে দেয়।
“আমি বেঁচে আছি?”
“সৌভাগ্যক্রমে।”
“এখানে কীভাবে এসেছি?”
“আমি এনেছি।”
“কোথায় পেলে?”
“জঙ্গলে, বেহুঁশ অবস্থায়।”
আমি রহস্যময় ছেলেটির দিকে তাকালাম। প্লিজ, আমায় বলে দাও, তুমি এতো বড় একটা জঙ্গল থেকে আমাকে জীবিত কীভাবে ফিরে এনেছ। কিন্তু চুক্তি.. “জঙ্গলে তুমি কী করছিলে?”
“তোমায় খুঁজছিলাম। তুমি চিৎকার করতে জানো না? ভয় পেলে তো মানুষ প্রথমই এই কাজটা করে।”
আমি ভীত, আতঙ্কিত আরও কত কি ছিলাম। কীভাবে গলার আওয়াজ বেরুবে? “আমি আগামীবার ট্রাই করব।”
ও হাসল, “আমিও তোমার মতো ওই গর্তটা দেখতে গিয়েছিলাম, যেখানে আসিয়ার লাশ পাওয়া যায়।”
(চলবে…)
লেখা: ফারিয়া কাউছার
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share