ডাকপিয়নের ছুটি নেই পর্ব-১০+১১

0
360

#ডাকপিয়নের_ছুটি_নেই 🌼
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব____১০

“শ্রাবণ ভাই..;

আতংকিত গলায় চেঁচিয়ে ওঠে ইশা। তুর্যকে টেনে তুলে আরেকটা ঘুষি মা*র*তে গিয়ে থেমে যায় শ্রাবণ। ইশা দৌড়ে এসে দাঁড়ায় তুর্যকে আড়াল করে। ইশার চোখের কোনে জল। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে,

“ত্ তুমি এখানে কি করছো? কেন এসেছো!;

“ছি ইশা! এখানেও সেই ছেলে? যার জন্য তুমি আমার হাতে চরটা খেলে, এখানেও সেই..;

তুর্য কথাটা শেষ করার পূর্বেই ইশাকে সামনে থেকে সরিয়ে পূণরায় তাকে চেপে ধরলো শ্রাবণ। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“এতো বড় স্পর্ধা? হু! ইশার গায়ে হাত তুলে আবার বড় গলায় কথা বলছিস জা*নোয়ার?;

শেষোক্ত কথাটা বলতে বলতে গর্জে উঠলো শ্রাবণের কন্ঠস্বর। কথাটা এতোটাই জোরে শোনালো যে ইশা ভ*য়ে চমকে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে এক কদম পিছিয়ে পড়ে মুখে হাত চাপলো! তুর্যও চমকে উঠলো শ্রাবণের এরূপ হুংকারে। ভড়কে যাওয়া দৃষ্টি মেলে শ্রাবণের দিকে তাকাতেই শ্রাবণ আবারও বলে উঠলো,

“কোন সাহসে হাত তুলেছিস? কে দিয়েছে এতো সাহস তোকে? বল?;(গর্জে ওঠে)

তুর্য পূণরায় কেঁপে উঠলো ভ*য়ে। তার চোখের পাতা কাঁপছে। গলা শুঁকিয়ে এসেছে। শুঁকনো গলায় ঢোক গিলে কিছু বলবে তার পূর্বেই ইশা পূণরায় এসে হাত ধরলো শ্রাবণের। আকুতিপূর্ণ গলায় বলল,

“ছেড়ে দাও শ্রাবণ ভাই। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়স্বজন। প্লিজ! একটা বাজে পরিস্থিতি হয়ে যাবে। নানা নানু..;

“আমাকে একদম বোঝাতে আসিস না ইশা!;

গম্ভীর গলায় কথাটা বলেই অগ্নি দৃষ্টিতে পূণরায় তুর্যর পানে তাকালো শ্রাবণ। তুর্য হাসফাস করছে। সে যে ভুল করেছে সেটা যেন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। কিন্তু দমলে তো চলবেনা। সে ভুল করলে, শ্রাবণ অন্যায় করেছে। এবং এখনও অব্দি করে যাচ্ছে।

“এসব কথা আমাকে না বলে নিজের ঘরের মেয়েকে বলো শ্রাবণ। তোমাদের কি চোখে পড়ছেনা সেই সকাল থেকে ওর ফষ্টিনষ্টি? কতক্ষণ এই ছেলের সাথে কতক্ষণ ঐ ছেলের সাথে! আমি ওর হবু হাসবেন্ড! আমার কি এসব দেখতে ভালো লাগবে? ও তোমার বউ হলে, তুমি সহ্য করতে পারতে ওর এসব নোংরামি?;

তুর্যর চিন্তাধারা দেখে অবাক বনে গেলো শ্রাবণ। কয়েক মুহুর্ত কিছুই বলে উঠতে পারলোনা সে।

“সকাল থেকে এসে থেকে দেখছি ওর এসব কান্ড! আমি এসব একদম সহ্য করবোনা এই বলে দিলাম। আমার সাথে থাকতে হলে ওকে এসব নোংরামি ছাড়তে হবে। নয়তো আমি ওকে বিয়ে করবোনা!;

“করোনা।;

“কি?;

“ইয়েস! এই বিয়ে ক্যানসেল। এন্ড আমি শ্রাবণ, দেখে ছাড়বো তোমার মতো লোকের সাথে আমার ঘরের মেয়ের বিয়ে কি করে হয়?;

“মানে? তুমি.. আমার কথাটা বুঝতে পেরেছো তো?;

“ইশা, নীচে চল। আমি এক্ষনি সবাইকে বলতে চাই, আমি তোর আর তুর্যর বিয়েটা ক্যানসেল করেছি।;

ইশার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। তুর্য বোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের পানে। শ্রাবণ তুর্যর শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে ইশার হাত ধরে রওনা হলো নীচে। তুর্য দৌড়ে এসে সামনে দাঁড়ালো ওদের। বোকা গলায় কতক্ষণ আমতাআমতা করে ইশার পানে তাকালো। অপরাধবোধে হাঁপিয়ে উঠে বলল,

“ইশা, শ্রাবণ এসব কি বলছে? ওকে বোঝাও! আ্ আমি তো তোমার হাসবেন্ড। তোমার উপর কি আমার কোনো অধিকার নেই? আমি কি তোমাকে…;

“জাস্ট শাটআপ তুর্য!(র-ক্ত চোখে চেয়ে) ইশার সঙ্গে আর জাস্ট একটা কথা বলার দুঃসাহস দেখালে আমি তোমার জিভ টেনে আলাদা করে ফেলবো! তুমি চিনোনা আমাকে, প্রয়োজনে আমি আমি কতটা ভ*য়ানক হতে পারি, কোনো আইডিয়া নেই তোমার!;

শ্রাবণের শান্ত স্বরের হুমকি ভেতরটা নাড়িয়ে দিলো তুর্যর। নিজের ভালো ভেবই সরে গেলো সে। শ্রাবণ আর এক মুহুর্তও দাঁড়িয়ে রইলোনা। হুড়মুড় করে চলে গেলো ইশাকে নিয়ে। তুর্য ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রা*গে ফুঁসতে লাগলো। ইশাকে সে কিছুতেই হাতছাড়া করতে পারবেনা! এতো কাঠখড় পুড়িয়ে শেষ অব্দি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারবেনা সে।

“মানে? কি বলছো কি এসব!;

বাড়ি ভরা লোকের সামনে খান সাহেবের উচ্চস্বর প্রতিধ্বনি হতেই সকল কোলাহল, সোরগোল থেমে গেলো। শ্রাবণ দাঁত চিবিয়ে নিজের রা*গটা সংবরণ করার চেষ্টা করছে। ইশা অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক কোনে। শমসের সাহেব, সাজ্জাদ সাহেব একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। মেয়ে বিদায়ের সময় আবার কোন আপদ হলো? মনে মনে ঠিক এটাই ভাবছেন। আফিয়া বেগম, নুপুর বেগম এবং মরিয়ম বিবি হাতের কাজ ফেলে দৌড়ে এলেন উপস্থিত মহলে। বিয়েটা তো সিষ্ঠু ভাবেই এগোচ্ছিলো, হঠাৎ কি গণ্ডগোল বাঁধলো?

“হ্যাঁ দাদাজান, তুর্য এবং ইশার বিয়েটা আমি ভেঙে দিচ্ছি। ইশা তুর্যকে বিয়ে করবেনা।;

“ও দাদুভাই, তুই এসব কি বলছিস রে?;

দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলেন আনোয়ারা বেগম। শ্রাবণের পিঠে কাঁধে হাত বুলিয়ে কথাটা বলেই থামলেন না। পূণরায় বললেন,

“মাথা ঠান্ডা কর ভাই। এতো রে*গে আছিস কেন? কি হয়েছে?;

“দাদু, আমার মাথা একদম ঠান্ডাই আছে। আমি মাথা গরম করে, কিংবা রা*গের মাথায় কিছু বলছিনা। যা বলছি একদম ভেবেচিন্তে বলছি।;

তুর্যর বাবা এবং মাও উপস্থিত রয়েছেন এখানে। শ্রাবণের এহেম বানীতে তারা অবাক হলেও খানিক ক্ষিপ্র হয়ে উঠলেন। তুর্যর মা রূপা বেগম ক্ষিপ্র গলাতেই বলে উঠলেন,

“বিয়ে ভাঙছো মানে? বিয়ে ভাঙার তুমি কে হ্যাঁ? তুমি কি গুরুজন!;

তুর্যর মায়ের কথায় তাচ্ছিল্য মিশ্রিত হাসলো শ্রাবণ। ভ্রু চুলকে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে এগিয়ে গেলো খান সাহেবের দিকে। খান সাহেবের হাত দুটো ধরে পূর্বের সেই গম্ভীর ভাবটা ফিরিয়ে এনে শান্ত স্বরে বলল,

“আমার প্রতি ভরসা আছে তো তোমার?;

“শ্রাবণ, এখানে ভরসা আর বিশ্বাসের কথা নয় দাদাজান। এখানে আমাদের খান বংশের সম্মান জড়িয়ে। ইশার সাথে তুর্যর আংটিবদল হয়েছে। বিয়ে ঠিক। হঠাৎ বিয়ে ভাঙলে.. লোকে ওকে হাজার কথা শোনাবে! আমাদের দিকে আঙ্গুল তোলার সাহস করবে!;

“লোকের কথায় তুমি কারোর জীবন নিয়ে এমন উদাসীনতা দেখাতে পারোনা। তুমি জানোনা, তুর্য কতটা অযোগ্য এই সম্পর্কের জন্য। এবং অবশ্যই একজন মানুষের তালিকাতেও ওর কোনো স্থান হতে পারেনা।;

“কি বলছোটা কি তুমি?;

অধৈর্য্য হয়ে উঠলেন খান সাহেব। বির*ক্ত হয়ে শ্রাবণের থেকে হাত ছাড়িয়ে অন্যপাশে সরে গেলেন। তিতির, তুতুন, আফিয়া বেগম এবং নুপুর বেগম গিয়ে দাঁড়ালো ইশার পাশে। তিতির ইশাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আস্তে করে জানতে চাইলো,

“কি হয়েছে রে? ভাইয়া ওমন ক্ষে*পে আছে কেন? তুর্য ভাই কি কিছু করেছে?;

ইশা কিছু বলতে পারলোনা। আফিয়া বেগম ইশাকে বুকে টেনে নিলেন। খানিকটা সময় পেরিয়ে গেলো নিরবতায়। নুপুর বেগম বললেন,

“কিছু না হলে শ্রাবণ ওমন ক্ষে*পতো নাকি? তাই না বলো ভাবি?;

“হ্যাঁ রে। ছেলেটা ওমন করে রেগে গেছে মানে তুর্য কিছু তো একটা করেছে।;

“এই ইশা বলনা মা? কি হয়েছে!;

ইশা নিজের মাঝে নেই যেন। ছাদে যা ঘটলো। তারপর এখানে পূণরায় যা ঘটছে!

“এই বিষয়ে আমরা পরে কথা বলি? এখন এই ঘরভর্তি লোকের সামনে এসব সিনক্রিয়েট করার কোনো মানে হয়না।;

ছেলের হাত ধরে পাশে টেনে আনলেন শমসের সাহেব। গলার স্বর খাদে নামিয়ে কিঞ্চিৎ রাগী গলায় বললেন শেষোক্ত কথাটা।

শ্রাবণ বাবার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পূণরায় খান সাহেবের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এবার সে গম্ভীর নয়, বরং তীব্র ক্ষো*ভে ফেটে পড়ছে। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা চালিয়ে বলে উঠলো,

“তুর্য তোমার বাড়ির সম্মানকে দুই পয়সারও দাম দেয়না খান সাহেব! তুমি কি জানো সেটা? সে তোমার বাড়ির সম্মানকে এক মুহুর্তের ব্যবধানে পায়ের কাছে এনে ফেলেছে, তুমি কি জানো সেটা? তুর্য কোনো কারন ছাড়া ইশার গায়ে হাত তুলেছে! ওকে তুলনা করেছে একজন ন.. থাক! আশাকরি, যতটুকু তোমাকে বোঝানোর তা বোঝাতে পেরেছি!;

একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হলো মহলে। বাড়ির সবাই একই সাথে আর্তনাদ করে উঠলো শ্রাবণের কথা গুলো শুনে। আফিয়া বেগম, নুপুর বেগম ইশাকে দেখতে লাগলেন রা*গী দৃষ্টিতে। ছুটে গেলেন মরিয়ম বিবিও।

“কি! এতো বড় স্পর্ধা? এতো বড় স্পর্ধা কারোর হয় কি করে, খানের নাতনির গায়ে হাত তোলে? কোথায় তু্র্য! ডাকো তাকে?;

গর্জে উঠলেন খান সাহেব। আতংকে কেঁপে উঠলো সবাই।

“না না, এটা অসম্ভব খান সাহেব! আমাদের ছেলে এমন কোনো কাজ করতেই পারেনা। ও মেয়েদের কতটা সম্মান করে, আপনি কি দেখেননি আগে? সেখানে ও, ওর হবু বউকে.. ছি ছি ছি! এটা আমি মানতে পারবোনা!;

বলে উঠলো তুর্যর মা। মহিলা বড় ধড়িবাজ। দেখলেই বেশ বোঝা যায়। কিন্তু, তাকে ধরা যে এতো সোজা নয়।

“এই বিয়ে আজ এখানেই ভেঙে দিলাম আমি। ইশা, এদিকে এসো। খোলো ওই কুলাঙ্গারের আঙটি। আর ছুঁড়ে ফেলো বাইরে।;

নানাজানের হুকুম অমান্য করলোনা ইশা। ছুটে এসে দাঁড়ালো নানাজানের সামনে। চটজলদি হাতের রিংটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিতেই সেটা গিয়ে পড়লো তুর্যর কপালে।

_____________

তিতিরকে তুলে দেওয়া হলো বরের গাড়িতে। মেয়ের বিদায়ে হাউমাউ করে কেঁদে ভাসালেন সবাই। বাবা-মা, ভাই বোন, দাদা-দাদী এমনকি বাড়ির কাজের লোকটাও। তিতিরকে ভালোবাসেনা, এমন মানুষ বড় কমই মিলবে। যেমন শান্ত, তেমন ভদ্র। বড়দের সম্মান করা, ছোটদের স্নেহ করা কোনো গুনেরই কমতি ছিলোনা তিতিরের মাঝে। বড্ড সহজ-সরলও বটে মেয়েটা। কে জানে, শশুর বাড়িতে গিয়ে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে পারবে কিনা!

আফিয়া বেগম কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। নুপুর বেগম আর মরিয়ম বিবি তাকে বুঝিয়েসুঝিয়ে ঘরে দিয়ে গেলেন। সারাদিনের এতো ধকলের পরে এমন করে কাঁদা যে মোটেই উচিৎ হয়নি। আরও কতরকম বুঝ বুঝিয়ে গেলেন তারা। কিন্তু, মায়ের মন বলে কথা! মেয়ে বিদায়ে মা কাঁদবে না, মায়ের বুক খালি হবেনা এও কি সম্ভব।

সবারই মন খারাপ। এই মন খারাপের ভীড়ে ইশার মনটা যেন একটু বেশিই খারাপ। নিজের উপর বড্ড রাগ হয় মাঝেমাঝে। যে ওকে নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবেসেছিল, তাকে বোকার মতো পায়ে ঠেলে দিয়েছিলো কেবল বাড়ির সম্মানের কথা ভেবে। আর আজ? আজ যা হলো, তাতে সত্যিই কি আর বেঁচে রইলো এ বাড়ির সম্মান। যার সাথে ও গোটা জীবনটা কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, সেই মানুষটাই তো ওকে এক ধাক্কায় ওর নিজের নজরেই নীচু করে দিলো।

“ইশু ইশু, ইশুপাখি ইশুপাখি!;

চমকে উঠলো ইশা। চটজলদি পেছন মুড়ে তাকাতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো ছোট্ট একটা ডাকপিয়ন বাক্স। যার উপর আসন জুড়ে বসে আছে কথা বলা একটা টিয়া পাখি। টিয়া পাখিটির পায়ের কাছে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, ” ডাকপিয়নের ছুটি নেই”। ইশা ছুটে গেলো ডাকপিয়নের বাক্সটার কাছে। যেটা হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণ। ইশা ছুটে এসে একরকম কেঁড়ে নিলো ডাকপিয়নের বাক্সটা। নিজের আনন্দ, খুশি যেন কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারছেনা সে। মৃদু চিৎকার করে হাসতে হাসতে বলে উঠলো,

“ডাকপিয়ন। আমার ডাকপিয়ন?;

“হ্যাঁ। তোর ডাকপিয়ন।;

মুগ্ধ হেসে বলল শ্রাবণ। সেই মুগ্ধ হাসিতে বসন্ত ফুটলো ইশার হৃদয়ে। পূণরায় মৃদু স্বরে চেঁচিয়ে বলল,

“আমার নামে চিঠি এসেছে শ্রাবণ ভাই?;

শ্রাবণ হেসে উঠলো শব্দ করে। ইশার গাল টেনে আহ্লাদ করে বলল,

“এসেছে পাগলি।;

ডাকপিয়নের এই ছোট্ট বক্সটি অনেক ছোট বেলায় একটা মেলা থেকে ইশাকে কিনে দিয়েছিলো শ্রাবণ। এবং তারপরের দিনই ডাকপিয়নে চিঠি জমার খবর দিতে কিনে আনলো এক কথা বলা টিয়াপাখি। যার নাম ছিলো মিঠু। রোজ যখন ইশা ঘুম থেকে উঠতো, ঠিক তখনই মিঠু মিষ্টি করে ডাকতো ইশু, ইশু! চিঠি, চিঠি। রোজ ইশার নামে চিঠি পড়তো এই ডাকপিয়নে। আর যেটাই ইশার অভ্যাসে পরিণত হতে লাগলো প্রতিনিয়ত। রোজ ঘুম থেকে উঠেই মিঠুর ডাক এবং ছোট্ট একখানা চিঠি। হঠাৎ একদিন মিঠুর বড্ড অসুখ করলো। কাউকে কোনো সুযোগ না দিয়েই মিঠু চলে গেলো না ফেরার দেশে। মিঠুর চলে যাওয়ার শোক ছোট্ট ইশা কিছুতেই কাটাতে পারলোনা। না খাওয়া, না ঘুম! সারাক্ষণ ডাকপিয়নের সামনে বসে থাকতো মিঠুর কথা বলার আশায়। কখন মিঠু ইশু বলবে, আর কখন চিঠি বলবে। রোজ একের পর এক চিঠি দিয়ে ভরে যেতে লাগলো ডাকপিয়ন। কিন্তু, ইশার তার প্রতি কোনো আগ্রহ বাড়াতে পারলোনা। এদিকে চিঠিদাতা যেন অস্থির হয়ে উঠলো। একদিন ইশার ঘরে খবর নিতে গেলো তার সমস্যা কি? কেন সে এমন উদাসীন হয়ে পড়লো, কেন সে কোনো চিঠি তুলছেনা?

ইশার ঘরে গিয়ে চিঠিদাতা দেখতে গেলো ডাকপিয়নের বক্সে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, “ডাকপিয়নের ছুটি নেই”। অবাক হলো চিঠি দাতা। এই সমস্যার সমাধান কি? পূণরায় সে চিঠি লিখতে আরম্ভ করলো। কিন্তু, রোজ চিঠি লিখেও যে কোনো লাভ হচ্ছে না! ইশা কিছুতেই স্বাভাবিক হচ্ছে না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো ইশার জন্য পূণরায় টিয়াপাখি আনা হবে। তবে এমন পাখি আনতে হবে যার কোনো ভাবেই মৃ*ত্যু হবেনা। যেই ভাবা সেই কাজ। চিঠিদাতা বাজার থেকে পূণরায় একটা কথা বলা টিয়া পাখি কিনে আনলো। তবে সে এমন পাখি, যে সারাক্ষণ রেকর্ডারের মতো ইশুপাখি, ইশুপাখি বলতে ডাকতে থাকে। কোনো কিছুতেই সে থামতো না। পূর্বের মিঠুর চেয়ে এই মিঠু হাজারগুন বেশি স্পিডে ও হাজারটা বেশি কথা বলতো। ইশা স্বাভাবিক হয়ে গেলো। পূণরায় তার রোজকারের নিয়ম মেনে ঘুম ভাঙতে লাগলো। এবং রোজ, ‘ইশু পাখি চিঠি এসেছে’ বলে তার ঘুম ভাঙাতে লাগলো।

“ইশুপাখি, চিঠি এসেছে। ইশুপাখি!;

ক্যাচক্যাচ করে কথাটা বলে শান্ত হয়ে গেলো মিঠু। ইশা খিলখিল করে হাসতে লাগলো। এতো আনন্দ সে কোথায় রাখবে? শ্রাবণ যে পূণরায় তার হাসির কারন তাকে ফিরিয়ে দিলো। এতো কৃতজ্ঞতা বোধ সে কি করে প্রকাশ করবে।

#চলবে

#ডাকপিয়নের_ছুটি_নেই 🌼
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব______১১

অভিমানের তীব্র পাহাড় জমে হঠাৎ একদিন ডাকপিয়নের বাক্সটি নিয়ে চলে যায় শ্রাবণ। সেদিন ছিলো এক কালবৈশাখী রাত। যে রাতের পর, ঝড় হাওয়া দেখলেই বুক ফেটে কান্না আসতো ইশার। ইশা অনেক অনুনয়-বিনয় করেছিলো ডাকপিয়নের জন্য, কিন্তু শ্রাবণের মন গলেনি আর। গত তিনবছরে ইশা আর একেবারের জন্যও দেখেনি এই ডাকপিয়নকে।

“আশাকরি আর মন খারাপ করবিনা। দেখ, আমাদের জীবনে সব মানুষ যে ভালো হবে এবং সবকিছু যে ভালো ঘটবে, ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। আমাদের জীবনে খারাপটা তখনই আসে, যখন আমরা ভালোর ব্যবহার ভুলে যাই, ভালোর কদর করতে পারিনা।;

“আমি তোমার সাথে বড্ড অ*ন্যায় করেছি। তারই শা*স্তি বুঝি..;

“তুই হয়তো তোর পাশ থেকে ঠিক ভেবেছিলি। আর আমি আমার পাশ থেকে ঠিক। তাই আমরা কেউই খারাপ হলাম না।;

“তুমি আমাকে কখনোও মাফ করতে পারবে শ্রাবণ ভাই?;

“কিসের মাফ? অ*ন্যায় করেছিস নাকি তুই?;

“তুমি আমার উপর রেগেও নেই?;

উচ্ছ্বসিত গলায় বলে উঠলো ইশা। শ্রাবণ মৃদু হেসে বলল,

“না রেগে নেই। যা এবার ঘরে যা। রেস্ট নে। সারাদিন অনেক ধকল সামলেছিস।;

“এটা নিয়ে যাই?;

শ্রাবণ পূণরায় হাসলো। বলল,

“তোর জিনিস, তোর ইচ্ছে। যা খুশি কর।;

খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো ইশা। ওর ইচ্ছে করলো শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেতে। পরক্ষণেই নিজের আবেগ সামলে আসতাগফিরুল্লাহ বলতে বলতে ডাকপিয়নের বাক্স নিয়ে চলে গেলো। শ্রাবণ ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে চোখমুখ শক্ত করে নিলো হঠাৎ। তার বারবার মনে পড়ছে তুর্যর কথা। তুর্যর ব্যাপারটা মোটেও স্বাভাবিক ভাবে হজম করতে পারছেনা সে। এতো অপমানের পরেও সে বারবার ইশাকে বিয়ে করার জন্য পায়ে পড়েছে খান সাহেবের! এই দু’মুখী আচরণের কারন কি? ইশার প্রতি ওর চিন্তা-ভাবনা, কার্যকপাল কিছুই যেন একে অপরের সাথে মিলছেনা। ওর উদ্দেশ্য কি শুধুই ইশাকে ভালোবাসা, নাকি এখানে অন্য কোনো ব্যাপার আছে। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।

__________

শ্রাবণের হাতে জোর আছে বেশ! এক ঘুষিতেই গাল কেটে র*ক্ত জমাট বেঁধেছে তুর্যর মুখে। চোখের কোনটাও কালশিটে হয়ে উঠেছে। হাতে বরফ নিয়ে ছেলের রুমে ঢুকলেন রূপা বেগম। তুর্য আধশোয়া হয়ে বসে আছে বিছানায়। ডান হাতের কোলে ল্যাম্পশেডটা বারবার অনঅফ করছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ ক্ষি*প্ত সে। রুপা বেগম রুমে ঢুকতে তার পানে ক্ষো*ভ নিয়ে তাকালো সে। পাত্তা দিলেন না রূপা বেগম। উল্টে রা*গ ঝেড়ে বললেন,

“তর সইছিলোনা এতো ভালো সম্মন্ধটা হাত ছাড়া করার তাইনা? এবার খুশি তো?;

আরও ক্ষে*পে গেলো তুর্য। কেমন হিং*স্র চাহনি নিক্ষেপ করে বলল,

“কাটা ঘায়ে নুনেরছিটে দিতে এসেছো?;

“ভুল যখন করেছিস, শুনতে তো হবেই তাই না?;

“ভুল করেছি কি আর সাধে? ওকে পায়ের নীচে রাখতে হলে একটুআধটু কড়া হতেই হতো! কিন্তু ঐ শ্রাবণটা এসেই তো..;

“হয়েছে হয়েছে, খুব করে দেখিয়েছো। এবার এটা লাগাও। ইশশ, মে*রে কি অবস্থা করেছে।;

আফসোস করে শেষোক্ত কথাটা বলে বরফের বাটিটা এগিয়ে দিলো রূপা বেগম। তুর্য উঠে বসলো। মায়ের থেকে বরফের বাটিটা নিতে নিতে বলল,

“সব শোধ তুলবো মা। তুমি এ নিয়ে চিন্তা করোনা।;

“কিভাবে তুলবি?;

“আছে, ও তুমি বুঝবেনা।;

“ও আমি বুঝতেও চাইনা। যা করবি, তাড়াতাড়ি করবি। ওরা কিন্তু তোর জন্য তাদের মেয়েকে নিয়ে বসে থাকবেনা। সুযোগ পেলেই ভালো ছেলের হাতে তুলে দিবে।;

“না মা। তুমি আসল ব্যাপারটাই মিস করে যাচ্ছো।;

“আসল ব্যাপার, মানে?;

“তুমি শ্রাবণকে লক্ষ্য করেছো কখনও? ও সবার চেয়ে ইশার প্রতিই একটু অন্যরকম। এখানে অন্য ব্যাপার আছে মা।;

“কি বলছিস তুই, সবই তো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।;

“ধুর ছাড়ো তো। যাও এখন তুমি। আমাকে আমার প্ল্যান সাজাতে দাও।;

“তোর কথা ছাতারমাথা কিছুই বুঝিনা আমি। বরফ গুলো লাগিয়ে নে। একটু পর আমি ঔষধ দিয়ে যাবো।;

“হু।;

ভাবুক মনে বসে রইলো তুর্য। শ্রাবণ কি ইশাকে ভালোবাসে? কিন্তু সেটা কি করে হবে? সে তো প্রায়ই ইশার সম্মন্ধে খোঁজ নিয়েছে। এরকম কিছু হলে একটুআধটু তো খবর পেতোই! আবারও খোঁজ নিতে হবে, ভালো করে খোঁজ নিতে হবে।

___________

চোয়াল শক্ত করে ইশার পানে তাকিয়ে আছে শ্রাবণ। যেন চোখ দিয়েই ভ*স্ম করে দিবে ওকে। ইশা গুটিশুটি হয়ে বসে আছে। চেহারার এমন ভাব করেছে যেন বিশ্বের সেরা অসহায় ব্যক্তি সে। বাড়ির প্রায় অর্ধেক লোকই ঘুমে কাদা। ঘুমোয়নি হাতে গোনা কয়েক জোড়া কপোত-কপোতী। তাদের মধ্যে ইশা এবং শ্রাবণ অন্যতম। যদিও বা তারা কপোত-কপোতী নয়।

ইশার গালের বা পাশে পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ পড়ে আছে। ফর্সা মুখে দাগ গুলো খুব বি*ভৎ*স লাগছে ইশার। তুর্যর দেওয়া চড়টা এতো সহজ ছিলোনা। দাগ গুলো যতবার শ্রাবণের চোখে ভাসছে ততবারই ভেতর থেকে হিং**স্র হয়ে উঠছে সে। ইচ্ছে করছে এক্ষনি চলে যায় তুর্যর কাছে, এবং যতক্ষণ না ইশার মুখ থেকে এই দাগগুলো সরছে ততক্ষণ তাকে লাগাতার মা*রে। চাইলেও পারছেনা দাদাজানের জন্য। যা হয়ে গেছে হয়ে গেছে, সে আর এই নিয়ে কথা টানতে চাননা।

“ওমন করে তাকিয়ে থাকলে আমার ব্যাথা ভালো হবেনা। তুমি বুঝতে পারছোনা, এতে উল্টো আমার ব্যাথা বাড়ছে!;

“ইচ্ছে করছে এই ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলি নীচে!;

“তুমি আমাকে মা*র্ডা*র করতে চাইছো নাকি?;

“উচিৎ তো সেটাই। যত সমস্যার মুলে তুই। কেন নাচতে নাচতে বিয়েতে হ্যাঁ করলি? আমাকে না করেও শান্তি হয়নি তাইনা? ডিরেক্ট বিয়ে করতে চলে এসেছে। আজ তোর জন্যই একটা বাইরের ছেলে তোর ঘরে ঢোকার সাহস পেয়েছে, আর তোর জন্যই একটা বাইরের ছেলে তোর গায়ে তা তোলার দুঃসাহস করেছে!;

“হু! জানি, এখন সব দোষ আমারই হবে!;

“এটাকে দোষ দেয়া বলেনা, এটাকে বলে গাধামি। বুঝেছিস?;

“গাধামি আবার কি?;

“এই তো সঠিক প্রশ্ন করেছিস। গাধামি কি?;

“ধ্যাৎ, এখন মোটেও মজা করার মুডে নেই আমি।;

“তোর কি মনে হয় আমি তোর সাথে মজা করার জন্য বসে থাকি? বড্ড সাহস বেড়েছে তোর!;

ইশা চুপসে গেলো। মনে পড়লো এই গুরুগম্ভীর লোকটার সাথে একটু বেশিই কথা বলে ফেলছে সে। কখন যে পরের চড়টা এর হাত থেকে পড়বে কে জানে!

শ্রাবণ একটা টুল টেনে বসলো ইশার সামনে। ইশা আশেপাশে দেখতে লাগলো। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ। কিছুক্ষণ আগেই খুব বৃষ্টি হয়েছে। তারই রেশ রয়ে গেছে বাতাসে, গাছের ডালে, রাস্তায় এবং বাড়ির ছাদে। ইশা টেনে নিঃশ্বাস নিয়ে শ্রাবণের পানে তাকাতেই শ্রাবণ ওর হাতে ধরে রাখা মলমটা নিয়ে নিলো।

“তুমি এটা দিয়ে কি করবে?;

প্রশ্ন করলো ইশা। শ্রাবণ বিনা জবাবে মলমটা খুলে নিজের হাতে খানিক নিয়ে নিলো। ইশা পূণরায় কিছু বলবে তার পূর্বেই শ্রাবণ তার হাতটা ইশার গালে চেপে ধরলো। ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো ইশা। আতংক নিয়ে শ্রাবণের পানে তাকাতেই শ্রাবণ গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,

“রিলিফ পাবি, এতো ঢং করার কিছু হয়নি।;

“ঢং? আ্ আমি ঢং করছি? ব্যাথা হলে বল..;

“চুপ!;

ইশার মুখে হাত চাপলো শ্রাবণ। ইশা চোখ বড়বড় তাকালো। শ্রাবণ চোখ দিয়েই শাসাল যেন। চোখ নামিয়ে নিলো ইশা। শ্রাবণও খানিক বাদে হাত নামিয়ে নিলো ওর মুখ থেকে। অতঃপর গালে ধীরে সুস্থে মলম মালিশ করে দিলো। ইশা আর কোনো কথা বলল না এরমাঝে। চুপচাপ সেবা নিতে লাগলো তার শ্রাবণ ভাইয়ের। আজকের শ্রাবণের মাঝে সেই তিন বছর আগের শ্রাবণের বড্ড মিল খুঁজে পাচ্ছে ইশা। ঠিক এরকমই তো ছিলো মানুষটা একটু রাগী, একটু কেয়ারিং।

“চুপ থাকতে বলেছি, এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে বলিনি!;

কথাটা শুনে লজ্জায় পড়ে গেলো ইশা। লজ্জা পেয়ে চোখ উল্টেপাল্টে নামিয়ে নিলো। মাটিতে বিদ্ধ করে আঁড়চোখে একবার তাকালো শ্রাবণের পানে। শ্রাবণ তখনও এক ভাবেই তাকিয়ে ছিলো ওর পানে। এবার যেন দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেলো। ইশা পূণরায় চোখ নামিয়ে নিলে শ্রাবণ হেসে উঠলো মনেমনে। মনেমনেই আওড়ালো, ‘পাগলি’

“আব.. তোকে একটা জিনিস দেওয়ার ছিলো?;

আমতাআমতা করে বলল শ্রাবণ। ইশা মুখ উঁচিয়ে তাকালো শ্রাবণের পানে। বিস্মিত কন্ঠে শুধালো,

“কি জিনিস?;

“বস এখানে।;

বলেই উঠে চলে গেলো সে। ইশা তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। শ্রাবণ গেলো আর আসলো। পূনরায় ইশার সামনে এসে বসলো সে। হাতে পলিথিনে মোড়ানো কিছু একটা ধরে রেখেছে। ইশার কৌতুহল তড়তড় করে বেড়ে গেলো। চোখমুখ ছোট ছোট করে দেখতে লাগলো শ্রাবণের হাতের ব্যগটা।

“কি আছে এতে?;

প্রশ্ন করলো ইশা। ইশার প্রশ্নে শ্রাবণ একবার তাকালো ইশার পানে। তবে ইশার প্রত্যাশা অনুযায়ী জবাব দিলোনা। মৃদু হেসে পলিথিনটা খুলে ভেতর থেকে বের করলো কিছু। যা দেখতেই ইশার চোখ চড়ক গাছ। চোখ জোড়া বড়বড় করে মৃদু স্বরে চেঁচিয়ে উঠে বলল,

“বেলী ফুলের মালা?;

“দেখি হাতটা দে?;

“অ্যা?;

শ্রাবণ জবাব দিলোনা। সে নিজেই ইশার হাতটা টেনে নিজের হাতে নিলো। অতঃপর পরম যত্নে বেলীফুলের মালাটা পড়িয়ে দিলো ইশার হাতে। ছাদের হলদে আলোতে গোটা মুহুর্তটি বড্ড নেশালো লাগছে ইশার কাছে। ঘোর লাগছে এতো সুন্দর মুহুর্তটির প্রতি।

“সেই সকাল থেকে এভাবে রেখে দিয়েছি! কতবার যে চেক করেছি নেতিয়ে যাওয়ার ভ*য়ে। ফাইনালি, আ’ইম সাকসেস।;

ইশা নিজের হাতটা চোখের সামনে উঁচিয়ে ধরলো। হাতের উপর একফালি হলদে আলো পড়ল। ইশা মাতাল হেসে বলল,

“তুমি আমার জন্য এতো ভাবো শ্রাবণ ভাই?;

“একদম না। এখানে ভাবার কি আছে? আর আমাদের মাঝে মোটেও সব আগের মতো নর্মাল নয়। ভুলে যাসনা।;

গম্ভীর হয়ে গেলো শ্রাবণ। ইশা অবাক বনে যাওয়া চেহারায় শ্রাবণের পানে তাকাতেই গম্ভীর ভাবটা বজায় রেখেই উঠে চলে গেলো সে। ইশা হতভম্ব হয়ে বলে উঠলো,

“মানে কি?;

মানে কি, কে জানে? এই ছেলেটাকে, বোঝার সাধ্য কারো নেই। ইশার তো আরও নয়।

_______

আজ তিতিরের বৌভাত। সকাল থেকে বাড়িতে তোড়জোড় শুরু হলো তিতিরের শশুর বাড়ি যাওয়ার। মোট চারটে গাড়ি ভাড়া করা হলো সবাই মিলে যাওয়ার জন্য। দুর্গম পথ। যেতে অনেকটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সেই চিন্তাতেই বাড়ির প্রায় প্রত্যেকটা মানুষ ভ*য়ানক সাজলেও মুখে বাড়তি একটা প্রসাধনীও ছোঁয়ালো না ইশা। বড় মামি আজও শখ করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে ইশাকে। ইশা শাড়ি না পড়ার জন্য অনেক জোরাজোরি করলেও সেদিনের মতোই পার পেলোনা। আসমানী এবং সাদার কম্বিনেশনে একটা সিল্ক শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। সঙ্গে পড়ালো স্বল্প অলংকার। চুলগুলো আগের দিনের মতোই ছেড়ে রাখলো। কানের পাশে একটা সাদা গোলাপ। কপালে পাথরের একটা টিপ আর হালকা লাল লিপস্টিক। এতেই বিরক্ত লাগছে ইশার। এতোখানি পথ, সেজেগুজে বসে থাকা তো দূর, এই শাড়ি সামলানোই তো তৃতীয় বিশ্বযু*দ্ধের বরাবর। তবে বাকিদের কথা না বলাই শ্রেয় যেন। একেকজন সেজেছে ভূতের মতো।

একটা গাড়িতে ১০দশ করে গাদাগাদি করে বসেছে। একটা গাড়িতে আট জন, এবং ইশাদের গাড়ি মোট তেরোজন। ইশাদের গাড়িটা দেওয়াই হলো মুলত সমবয়সীরা একসাথে মজা করে যাওয়ার জন্য। যেখানে বসলো তুতুন, তানি, ইশা, আরব, শ্রাবণ, শ্রাবণের তুই মামাতো বোন, আরবের তিনজন খালালো এবং মামাতো বোন আরও বেশ কয়েকজন। তবে বাকিদের গাড়ির তুলনায় এই গাড়িটাই বেশি ফুল হয়ে গেলো। শ্রাবণ ড্রাইভারের পাশের সীটে বসে বাকিদের সবগুলোকে পেছনে বসিয়ে দিলো। কিন্তু তারপরও বিপত্তি বাঁধলো। এখানে বেশিরভাগই ছোট হওয়াতে মা*রামা*রি চলছে কতক্ষণ পরপর। এ একে একটা কিল দিলে, ও ওকে একটা ঘুষি মা*র*ছে। আবার টানাটানি চলছে ইশার শাড়ির আঁচল নিয়ে। ইশার শরীর শুকনা পাতাল গড়নের। এক কোনে বসে সারাদিন পার করে দিতে পারে। তবে এদের সাথে বসাটাই অসম্ভব হয়ে উঠছে ক্রমশ। এরপর আরও একটা সমস্যা দেখা গেলো! ইশার চুল গুলো বড় হওয়ায় অনেকটা মাটি ছুঁই ছুঁই অবস্থা। যা দেখে বাচ্চাগুলো যেন নতুন খেলনা পেলো। কতক্ষণ পরপর ইশার চুল ধরে ঝুলে পড়ছে। বেচারী রেগে গেলেও বেশি কিছু বলতে পারছেনা। আর এর সবটাই সামনে থেকে দেখছে শ্রাবণ। তাই হঠাৎ পেছন এসে গাড়ির দরজা খুলে ইশার হাত ধরে নামিয়ে নিয়ে চলে গেলো সামনের সীটে। আগে নিজে উঠে পরে ইশাকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো তার পাশে। ইশা অবাক স্বরে বলে উঠলো,

“এটা কি হলো?;

শ্রাবণ গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,

“চুপ করে বস। একটুও নড়াচড়া করলে বাইরে ফেলে দিবো!;

“শুরু হয়ে গেলো হুমকিধামকি!(বিরবির করে);

“কি বললি?;

“কি বলবো? তুমি নিজেই তো বললে চুপ থাকতে। এখন আবার নিজেই জিজ্ঞেস করছে!;

ভাব নিয়ে বলল ইশা। শ্রাবণ চোখ পাকিয়ে তাকালে আবার চুপসে গেলো সে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে