ডাকপিয়নের ছুটি নেই পর্ব-৮+৯

0
593

#ডাকপিয়নের_ছুটি_নেই 🌼
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব____০৮

বড় মামীর দেওয়া মিষ্টি রঙের লেহেঙ্গাটা পড়ে ঘরময় পায়চারি করছে ইশানি। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলো! এখনও শ্রাবণকে কিছু জানিয়ে উঠতে পারলোনা! ওদিকে সাজিদ আর ওর সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে তিতিরের বিয়ে ভাঙার মতলব আঁটছে। বারবার ম্যাসেজ করে যাচ্ছে তিতিরের নাম্বারে। এবার ইশার নিজেরও যেন ভ*য় হতে লাগলো। এখনই যদি ঐ বদমাইশটাকে আঁটকানো না যায়, তবে অনেক গুলো জীবন একসাথে ন*ষ্ট হয়ে যাবে। নানাভাইয়ের সম্মান, মামাদের সম্মান! কিছুই যে আর থাকবেনা! আর ভাবতে পারছেনা ইশা। এবার কিছু একটা করতেই হবে।

“তুতুন, এই তুতুন?;

“আরে বাবা, সাজার সময় এতো ডিস্টার্ব করছিস কেন?;

“সাজবি পরে। আগে যা, শ্রাবণ ভাইকে খুঁজে নিয়ে আয়!;

“ও বাবাগো! সে আমি পারবোনা। ডাকলেই কেমন খেঁকখেঁক করে!;

“আজ করবেনা।;

“কেন, আজ কি?;

“আজ যাই হোক, আজ করবেনা! তুই যা ডেকে নিয়ে আয়!;

“তুই আমাকে বাঘের গুহায় পাঠাচ্ছিস কিন্তু!;

“উফফ ড্রামা কুইনরে, পরে ড্রামা করিস বোন! আগে যা বললাম তা কর।;

সাজ অর্ধেক কমপ্লিট করেই চলে গেলো তুতুন। বিয়ে বাড়ির এতো ভীড়ে কোথায় খুঁজবে এই যমরাজকে! তবে খুঁজতে, আর খুঁজে পেতে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হলোনা তুতুনকে। নীচতলাতেই নিজের বন্ধুদের সাথে পেয়ে গেলো শ্রাবণকে।

“তোমাকে মেজ আপা ডাকছে!;

আগে পরে কোনো কথা না বলে, এহেম কথা বলাতে শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তুতুনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,

“কে ডাকছে?;

“মেজ আপা!;

“কেন?;

“জানিনা। জরুরি কাজ আছে। জলদি চলো।;

বলেই আবার দৌড়ে চলো গেলো তুতুন। শ্রাবণ ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে দেখলো কোথায় গেলো ও! বন্ধুদের বলে সেও চলে গেলো তুতুনের পেছন পেছন। অফহোয়াইট একটা পাঞ্জাবি পড়েছে শ্রাবণ। গৌর দেহে রঙটা ঝাঁকিয়েছে বেশ। গাল ভর্তি চাপদাড়ি গুলো, আরও সৌন্দর্য্য বাড়িয়েছে এই পুরুষের। তবে এই রূপই এই মুহুর্তে বাঁধা হলো ইশার কাছে পৌঁছাতে। সিঁড়ি ধরে উপরে উঠতেই একগাদা মেয়ে এসে জড়োসড়ো হলো তার সামনে। সে এপাশ থেকেও যেতে পারছেনা, আবার ওপাশ থেকেও যেতে পারছেনা। তাই একপাশ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লে মেয়েগুলোও দাঁড়িয়ে পড়লো। যা দেখে শ্রাবণ বিরক্ত গলায় বলল,

“আপনারা আগে নামুন।;

মেয়ে গুলো গলা বেঁধে হেসে উঠলো। শ্রাবণ বুঝলো এরা তাকে ডিস্টার্ব করার জন্যই এমন করছে। ভাবতেই মেজাজটা বিগড়ে গেলো তার। মুখ তুলে ওদের পানে তাকাতেই সবগুলো মাথা ঝুকিয়ে ফেললো। যেন, লজ্জা পেয়েছে। শ্রাবণ নিজেকে যথেষ্ট কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে আবারও বলল,

“কিছু বলতে চান?;

একটা মেয়ে বড় কৌতুহলের সঙ্গে প্রশ্ন করলো,

“আপনি শ্রাবণ, তাইনা?;

“জি। আমিই শ্রাবণ।;

সঙ্গে সঙ্গেই কানাঘুঁষা শুরু হলো। ‘বলেছিলাম না ইনিই তিনি!’ ‘হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যান্ডসাম আছে’ ‘তোর সাথে মানাবে’। কানাঘুঁষা করতে হয়, অন্যের থেকে লুকিয়ে। কিন্তু মেয়েগুলো তা করছেনা। ফিসফিসিয়ে কথাগুলো বলছে স্বাভাবিকের তুলনায় জোরে। শ্রাবণ গলা খাঁকারি দিয়ে উপরে উঠে যেতে নিলে তাকে আবারও আঁটকায় মেয়েগুলো!

“আপনার নাম্বারটা কি দেওয়া যাবে?;

“কেন?;,

ভ্রু কুঁচকে ফট করে প্রশ্ন করলো শ্রাবণ। মেয়েগুলো খানিক ভড়কে গেলো। আমতাআমতা করে বলল,

“এমনি।;

শ্রাবণ আর কিছু বলল না। আবারও উঠতে নিলে আবারও পিছুডাক পড়ে। এবার সে রেগে যায় ভেতরে ভেতরে! তবে এবারও নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে। মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে পেছন মুড়ে তাকিয়ে বলল,

“আবার কি হলো?;

“আপনি কি সিঙ্গেল আছেন? নাকি…;

“না, সে মোটেই সিঙ্গেল নেই! সে বিবাহিত, আর সে তার বউকে ভীষণ ভালোওবাসে। তাদের বাচ্চাও আছে। তিনটা! (আঙুল দেখিয়ে)। আর একটা অন দ্য ওয়ে!;

ঝাসিকি রানি যেন উপর থেকে টপকে পড়লো! ঝাঁঝালো গলায় কথাগুলো বলেই শ্রাবণের হাতটা ধরে টেনে নিয়ে গেলো ইশা। রুমে ঢুকে শ্রাবণের হাতটা ছেড়ে দিয়ে রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে দরজাটা লক করে দিলো! ইশার এই রণচণ্ডী রূপে মোটেই পরিচিত নয় শ্রাবণ। হাতে গোনা কয়েকবার ইশাকে রাগতে দেখলেও, এভাবে কখনও রণচণ্ডী হতে দেখেনি।

“কি হয়েছে? এভাবে ওখান থেকে টেনে নিয়ে এলি কেন?;

“চুপ! একদম চুপ..;

শ্রাবণ প্রশ্ন করতেই তেড়ে গেলো ইশা। শ্রাবণ ভড়কে গিয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেলো। আমতাআমতা করে বলল,

“স্ট্রেঞ্জ!;

“খুব খেজুরে আলাপ হচ্ছিলো তাইনা? আর এদিকে আমি? আমি সেই সকাল থেকে তার পিছু পিছু ঘুরে ম*র*ছি তার বেলায় সে ব্যস্ত! তার সময় নেই! তার কাজ আছে! আর এখন? সব কাজ শেষ?;

“খেজুরে আলাপ হচ্ছিলো না আঙ্গুরের হচ্ছিলো সেটা তোকে বলতে হবে?;

“হ্যাঁ বলতে হবে! কারন, আমি তোমার সাথে মজা করছিনা। আর না ছোট বেলার মতো আমার খেলার ঘর ভেঙেছে বলে তোমাকে খুঁজে ম*র*ছি! এদিকে সত্যি সত্যি সবটা শেষ হতে বসলো, আর তুমি..;

ইশার শেষোক্ত কথাটা মাথায় বাজলো শ্রাবণের। সঙ্গে সঙ্গে তার গম্ভীর রাগী মুখটা ভেসে উঠলো। গম্ভীর গলাতেই বলল,

“মানে?;

“একটা সর্বনাশ হয়ে গেছে শ্রাবণ ভাই!;

“কি হয়েছে?;

“আপাকে একটা ছেলে ব্ল্যাকমেইল করছে। তুমি তাকে চিনবে! তমাল ভাইয়ের কাজিন সে!;

তার বোনকে ব্ল্যাকমেইল করছে, কথাটা শুনতেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো শ্রাবণের! অগ্নি দৃষ্টিতে ইশার তাকিয়ে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

“সাজিদ!;

“হ্যাঁ হ্যাঁ! সাজিদ! ও আপার বিয়ে ভেঙে দেয়ার হু*মকি দিচ্ছে.. এ্ এই যে দেখো (তিতিরের ফোনে সাজিদের পাঠানো ম্যাসেজ গুলো দেখিয়ে) আমাদের কিছু একটা করতে হবে।;

ইশার হাত থেকে ফোনটা একরকম কেঁড়ে নিলো শ্রাবণ। সাজিদের পাঠানো ম্যাসেজ গুলো দেখে তার মস্তিষ্ক যেন জ্বলে উঠলো। রাগে ফুঁসে উঠে বলল,

“ওর এতো বড় বুকের পাটা!

“তুমি জানোনা, ও আপার সাথে কি করেছে!;

“চল আমার সাথে!;

ইশার হাত ধরে নিজের সঙ্গে নিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে গেলো শ্রাবণ। সে জানে এই মুহুর্তে সাজিদকে কোথায় পাওয়া যাবে! শ্রাবণ ইশাকে বাইকের পেছনে তুলে সেদিকেই রওনা হলো। সাজিদ শ্রাবণের কলেজের জুনিয়র ছিলো। তমালের কাজিন হিসেবে সাজিদের সাথে তার একটা পরিচিতি থাকলেও অন্য সব দিক থেকে তাদের সম্পর্ক ছিলো সাপেনেউলে। সাজিদ বরাবরই বড় উচ্ছৃঙ্খল ধরণের ছেলে। ছোট বেলা থেকে রাজার হালে বড় হওয়ার এই একটাই অসুবিধা ছিলো! ও ভাবতো, ওর বাবার টাকা দিয়ে হয়তো সব কিছু ও কিনে ফেলতে পারে। আর সেটা যে সম্ভব না, তারই প্রমাণ দিতো শ্রাবণ। যার ফলে, দু’জনের মাঝে একটা প্রতিশোধ নেওয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হয়তো, সেই ক্ষোভ থেকেও সাজিদ তিতিরের সাথে এই মিসবিহেইভটা করতে পারে।

কালো গাড়িটার উপর আয়েস করে বসলো সাজিদ। হাতে ধোঁয়া উড়ানো গরম চা। চায়ে একটা ফু দিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে চোখ বুলালো। তিতিরের সাথে এই ব্ল্যাকমেইলের খেলাটা খেলতে ভীষণ ভালো লাগছে তার। এটা তার একধরনের নেশা। মেয়েদের সম্মান নিয়ে খেলতে কার না ভালো লাগে! মানুষ অযথাই ভালো মানুষ হওয়ার মুখোশ পড়ে থাকে! আসল মানুষ, আসল পুরুষ তো সাজিদ, কেননা সে কখনোও আড়ালে কিছু করেনা। যা করে একদম প্রকাশ্যে। কথাটা ভাবতে ভাবতে বাঁকা হাসলো সাজিদ। গুণগুণ করতে করতে একহাতেই সে পূণরায় টাইপ করলো তিতিরের নাম্বারে,

“হেই তিতিরপাখি, কামঅন বেইব! একটা তো রিপ্লাই দাও। এভাবে চুপ করে থাকলে কি করে হবে বলোতো? আজ না তোমার বিয়ে। এখনই যদি চুপ হয়ে যাও, তবে বিয়ে ভাঙার পর কি করবে? বোবা হয়ে যাবে তো!;

ম্যাসেজটা সেন্ট করে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠলো। ফোনটা অফ করে পূণরায় রেখে দিলো আগের জায়গায়। ক্লাবের বাইরে তার গাড়ি রাখা। ভেতরে জমিয়ে পার্টি হচ্ছে। আপাতত তার সেসবে মন নেই! আজ সে একটা মেয়ের গোটা ভবিষ্যৎ ন*ষ্ট করতে যাচ্ছে, এখন পার্টি-ফার্টিতে মন দিলে চলবেনা। এখন এই দিকে ফোকাস হতে হবে। ভাবতে ভাবতে চায়ের কাপে চুমুক বসাতেই হাওয়ার বেগে ছিটকে পড়লো সাজিদ। মনে হলো তার পা ধরে কেউ টেনে হিঁচড়ে ছুঁড়ে ফেলেছে। ঘটনার আকস্মিকতাশ ভ*য়ে চিৎকার করে উঠলো সে। নীচে পড়ে আশেপাশে তাকাতে তাকাতে হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ালো শ্রাবণ। হাতে একটা হকিস্টিক। সাজিদের হঠাৎ মনে পড়লো, এটা সেই কলেজের হকিস্টিকটা। যেটা দিয়েই শ্রাবণ তাকে একবার মে*রেছিলো। খানিক ভড়কে গেলো সাজিদ। তবে দমলোনা। নিজের ভেতরের পুরুষকে জাগিয়ে গর্জে উঠে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়ালো। পড়নের সাদা লেদারের দামী জ্যাকেটটাতে ময়লা লেগেছে। সেটাই ঝাড়তে ঝাড়তে শ্রাবণের দিকে জ্ব/ল/ন্ত দৃষ্টিতে তাকাতে শ্রাবণ তেড়ে গিয়েই বসালো এক বারি। বারিটা পড়লো সাজিদের ডান হাতের বাহুতে। খানিক ঝুঁকে পড়লো সাজিদ। আবারও সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। আপাতত তার খেলা নয়, আগে শ্রাবণ খেলুক, তারপর সে নিজের খেলা দেখাবে। এখন শ্রাবণের হাতে মা*র খেয়ে নিজের জেদটা আরও গাঢ় করবে সে।

শ্রাবণের চোখ জোড়া হিং*স্র হয়ে আছে। র*ক্তবর্ণের এই চোখ জোড়াই এককালে ফোবিয়া ছিলো সাজিদের। তবে এখন আর সেটা ফোবিয়াতে নেই। ভ*য়কে জয় করে সেটাকে এখন জেদে পরিণত করেছে সাজিদ! আরও বেশ কয়েকটা মা*র খেলো হকিস্টিকের। এবার শ্রাবণ মা*র*তে নিলে সাজিদ ধরে ফেলে হকিস্টিকটা। কিন্তু ধরেও যে কায়দা করতে পারেনা! সাজিদের হাঁটু বরাবর শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে লাথি দেয় শ্রাবণ। সাজিদ হাঁটু ভেঙে হুমড়ি খেয়ে পড়ে নীচে। শ্রাবণ এবার নিজেই টেনে তোলে ওকে! টেনে দাঁড় করিয়ে শার্টের কলার চেপে ধরে গর্জে উঠে বলে,

“আমার বোনকে টার্গেট করিস তুই? তোর এতো বড় কলিজা!;

শ্রাবণের হাতে বন্দি হলেও সাজিদের বড়াই কমেনা এক ফালিও। ফিক করে হেসে দেয় শ্রাবণের কথা শুনে। যেন শ্রাবণ তাকে কোনো মজার বাক্য শুনিয়েছে।

“নিজের বোনকে তো সামলে রাখতে পারিসনি! এখন আমাকে মে*রে কি হবে বন্ধু? পারলে নিজের বোনের বিয়ে ঠেকা! তোর বোনের সম্মান লোডিং হচ্ছে ব্রো। খানিক বাদেই বুমমম!;

বলেই আবারও উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো সাজিদ। শ্রাবণ রা*গে থরথর করে কেঁপে উঠলো। ভেতরটা জ্ব*লে যাচ্ছে তার। কি করেছে এই জা*নো*য়ারটা তার বোনের সাথে!

ঠাসস ঠাসস করে বারকয়েক বিকট শব্দ হওয়াতে কেঁপে উঠলো চারিপাশ। সাজিদ গালে হাত দিয়ে সামনে তাকাতেই আবারও একটা চড় পড়ার শব্দ হলো। এবং সাজিদের হাত তার অন্যগালে গিয়ে ঠেকলো! পরক্ষণেই তার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে অন্য পাশে নিয়ে গেলো ইশা! ফের পূণরায় শুরু হলো সাজিদের উপর তার এট্যা*ক! এমন ভাবে কুংফু ক্যারাটি চালাচ্ছে, সাজিদ যেটা ধরতেই হিমশিম খাচ্ছে। অতঃপর এক পর্যায়ের সাজিদের কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো ইশা,

“আমার আপাকে অসম্মান করা? আমার আপাকে! জানিস, তোর জন্য কতটা কাঁদতে হয়েছে আমার আপাকে? তোর মতো একটা জা*নো*য়ার না জানি কত গুলো দিন ধরে আমার আপাকে ক*ষ্ট দিয়ে যাচ্ছিস। শ*য়*তানের বাচ্চা!;

বলতে বলতে পেট বরাবর ঘুষি মা*র*লো সাজিদের। ঘুষি খেয়ে ভাজ হয়ে গেলো সাজিদ! কাশতে কাশতে পেটে হাত চাপতেই পা তুলে পূনরায় সাজিদের পেট বরাবর লাথি মা*র*লো ইশা! সাজিদ ছিটকে পড়লো রাস্তায়!

#চলবে

#ডাকপিয়নের_ছুটি_নেই 🌼
#লেখিকা_মুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্ব____০৯

ইশা তেড়ে গিয়ে সাজিদের উপর চড়াও হয়ে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মা*র*তে মা*র*তে বলতে লাগলো,

“আর কত মেয়ের জীবন এভাবে ন/ষ্ট করেছিস তুই? কত মেয়ের সাথে এমন মিথ্যে অভিনয় করে তাদের ক্ষতি করেছিস? বল! বল বলছি?;

সাজিদ কাশতে কাশতে র*ক্ত বমি করছে! যা দেখে একটু ভ*য় পেলো শ্রাবণ। দ্রুত গিয়ে ইশার হাত চেপে ধরলো। ওকে সাজিদের উপর থেকে সরিয়ে আনতে চাইলেও ওর সাথে যেন পেরে উঠছে না। রা*গে, ক্ষোভে ইশা আউট অফ মাইন্ড হয়ে গেছে যেন। কলেজে ইশা ক্যারাটে শিখেছিলো। ভ*য়ানক রকমের মা*রের কৌশল তখনই রপ্ত করে এই মহারানী! ক্ষণকালের জন্য তো ভুলেই গিয়েছিলো শ্রাবণ।

“ইশা, ছাড় ওকে! এভাবে মা*র*লে কোনো সমাধান হবেনা!;

“আজ ওকে আমি মে/রেই ফেলবো! আমার আপাকে ব্ল্যাকমেইল করার সাহস কি করে হয় ওর? বোকা ভেবেছে আমার আপাকে তাইনা? ভেবেছে, আমার আপাকে বাঁচানোর কেউ নেই?;

বলতে বলতে আবারও দিলো দু-তিন ঘা! শ্রাবণ টেনে তুলে আনলো ইশাকে। ওর হাতদুটো শক্ত করে চেপে ধরে নিজের দিকে ফেরাতে চেষ্টা করলে, সফল হলোনা কোনোমতেই। ইশা এখনও বারবার তেড়ে যেতে লাগলো সাজিদের পানে।

“ওর যা মা*র খাওয়ার খেয়েছে ও! এবার ওকে পুলিশে দিতে হবে, উইথ প্রুফ।;

” হ্যাঁ, ঠিক বলেছো তুমি। এই কুলাঙ্গারকে অবশ্যই অবশ্যই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া উচিৎ।;

কিঞ্চিৎ শান্ত হতে পারলো ইশা। শ্রাবণ ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইশার মাথায় হাত রাখলো। অতঃপর মৃদুস্বরে বলল,

“শান্ত হ। ওর বাকি শাস্তি আমরা না, পুলিশ দিবে।;

শ্রাবণের হাতটা ইশার কপাল ছুঁতেই অদ্ভুত ভাবে ইশার সমস্ত রাগ গলে জল হয়ে গেলো। এবং সেই সাথে সে ভেবে অবাক হলো, রেগে গিয়ে সে কোনোদিন কাউকে এমন রাম ধোলাই করেনি। আজ কি হলো হঠাৎ করে?

“আ্ আমি কি একটু বেশি বেশি করে ফেললাম শ্রাবণ ভাই?;

ইশার হঠাৎ করা এই বোকা প্রশ্নটায় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলোনা শ্রাবণ। ফিক করে হেসে দিলো সে। তার হাসিতে প্রকৃতি বাকরূদ্ধ হয়ে গেলো! স্তব্ধ হয়ে গেলো ইশার হৃৎস্পন্দন। এই তো, এই তো সেই হাস্যমুখ, প্রাণোচ্ছল মানুষটা। এই তো সে!

“তোকে এভাবে রা*গতে আমি কোনোদিনও দেখিনি। তবে, যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে কিন্তু!;

ইশা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো! শ্রাবণ ওর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে এখনও। ইশা তার হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকতে থাকতে শ্রাবণ পুলিশে কল করলো। অবশেষে সব মুশকিলের আসান হলো। পুলিশের মাধ্যমে সাজিদের কাছে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করার সমস্ত ডকুমেন্ট ফাইল ডিলিট করিয়েছে শ্রাবণ। এমনকি, সাজিদের মুখ থেকেও বয়ান নিয়েছে, তিতিরের সাথে যা হয়েছে, সবটাই সে জোর করে করেছে। তিতিরকে শরবতের বদলে সে বিদেশি এলকোহল খাইয়ে নিজের বসে এনে অসভ্যতা করতে চেয়েছে, একই সাথে তার ছবি ধারণ করেছে, এবং আজ এতোবছর বাদে সেই ছবি ব্যবহার করে তিতিরের বিয়ে ভা*ঙার হু*মকি দিয়েছে! সবকিছুর শা*স্তি হিসেবে তিন বছরের জন্য কারাবন্দী করা হলো সাজিদ।

সব কাজ মিটিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো দু’জনে। মাথার উপর সূর্য মামার নাচনকোঁদন শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। গরমে আধাসিদ্ধ হয়ে মাঝপথেই গাড়ি থামালো শ্রাবণ। ইশাকে পেছন থেকে নামতে বলে সেও নামলো। ইশা আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বিস্মিত গলায় জিজ্ঞেস করলো,

“এটা কোথায় থামালে! বাসায় যাবেনা?;

“গরমে মাথা গরম হয়ে গেছে। পানি নিতে হবে!;

এই বলে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সামনের একটা দোকানের দিকে এগিয়ে গেলো শ্রাবণ। ওদের ঠিক সামনেই একটা মুদি দোকান। শ্রাবণ সেখানে গিয়ে একটা পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো খানিক। অতঃপর যখন ইশার কথা মনে পড়লো, পেছন ফিরে ওর দিকে পানির বোতল ধরে ভ্রু নাচালো। অর্থাৎ, তারও পানির প্রয়োজন আছে কিনা, জিজ্ঞেস করলো!

ইশা এপাশওপাশ মাথা নাড়লো। অর্থাৎ, তার দরকার নেই। শ্রাবণ পানির টাকা দিয়ে ইশার জন্য একটা কিটক্যাট নিয়ে চলে গেলো ওর কাছে। চকলেটটা ওর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে আবারও উঠে বসলো বাইকে। ইশা এহেম ঘটনায় হতবাক হয়ে ওর হাতে থাকা চকলেটটার পানে চেয়ে রইলো! বছর তিনেক আগেও শ্রাবণ এই কাজটা রোজ করতো। ভেসে উঠলো যেন চোখের তারায়।

“দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি বাইকে উঠবি?;

“অ্যা?;

মনের ভেতর সুখ সুখ অনুভূতি হলো ইশার। তাই শ্রাবণের কথাটা ঠিক শুনতে পায়নি সে। শ্রাবণ কপাল কুঁচকে তাকালো ইশার পানে। চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল,

“আছিস পৃথিবীতে?;

ইশার ঘোর কাটে সেই শব্দে। তবে তখনও ব্যাপারটা ধরতে পারছিলো না। তাই শ্রাবণ ধমকে উঠে বলল,

“গাড়িতে ওঠ জলদি!;

চমকে উঠে পৃথিবীর বুকে অবতরণ করলো ইশা। চটজলদি শ্রাবণের পেছনে উঠে বসতে শ্রাবণ পূণরায় গাড়ি স্টার্ট দেয়। ইশা লেহেঙ্গা সামলে শ্রাবণকে ধরে বসতেই গাড়ি টান দিলো শ্রাবণ। আধঘন্টার মাঝেই ফিরে পৌছে গেলো বাসায়।

বাসায় ফিরতেই ইশা সোজা চলে গেলো তিতিরের কাছে। যা ঘটেছে, সবটা যতক্ষণ বলতে না পারবে, ততক্ষণ যেন শান্তি নেই। তিতিরকে কনে সাজানো হচ্ছিলো। এতো ভালো ব্রাইডাল লুক সে কাঁদতে কাঁদতেই বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছে। তবে ইশা যখন পৌঁছালো তার কাছে, তখনই যেন তার কান্নার ইতি ঘটলো। বোনকে সবটা খুলে বলে, সারাজীবন সুখে শান্তিতে থাকার পরামর্শও দিলো ইশা। তিতির ইশাকে জড়িয়ে ধরে আরও কতক্ষণ কেঁদে কেটে পুরোপুরি শান্ত হতে পারলো। তারপর আরকি, পূণরায় জমজমাট হয়ে উঠলো বিয়ে বাড়ি।

ইশা নিজের রুমে এলো। খানিক ফ্রেশ হয়ে বসে পড়লো আয়নার সামনে। গত ২/৩ ঘন্টায় চেহারার তেরোটা বাজিয়ে ফেলেছে। একটু ঠিক না করলেই যে নয়। আর তাছাড়া, বোনের বিয়ে উপলক্ষেও তো খানিক সাজগোজ প্রয়োজন। একদম সাদামাটা মোটেও মানায়না। তাই প্রয়োজন মাফিক যতটুক লাগলো ততটুকুই করলো। মুখে যতসামান্য পাউডার, দিয়ে চোখে কাজল পড়লো, অতঃপর ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক পড়ে চুলগুলো ছেড়ে রাখলো। কপালে পাথরের একটা টিপ পড়তে পড়তে লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং করা প্লাস্টিকের ফুলগুলো কানের একপাশ থেকে আঁটকে দিলো ক্লিপ দিয়ে। অতঃপর দু’হাত ভর্তি কাচের চুড়ি গুলো পড়ে তাকালো আয়নায় মাঝে। এই সামান্য সাজেই ভীষণ ফুটে উঠেছে গোলাপফুলটা। কথাটা ভেবে আপন মনেই হেসে উঠলো ইশা। লেহেঙ্গার ওড়নাটা একপাশে ফেলে লম্বা চুলগুলো সব একপাশে নিয়ে এলো। ভীষণ সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে। নিজেকে একবার ঘুরে ফিরে দেখে সব কিছু ওকে আছে ভেবে দরজার দিকে হেঁটে আসতেই থমকে দাঁড়ালো। সামনে শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে। হাতে কাঁচা ফুলের মালা। এগুলো দেখে ইশার চিনতে অসুবিধা হয়নি এগুলো তিতরকে মেহেদী পড়ানোর সময় দেওয়া হয়েছিলো। তখন তাজা থাকলেও সময় গড়াতে এখন সব গুলোই নেতিয়ে পড়েছে।

“এগুলো নিয়ে কোথায় চললে?;

ভাবুক মনে প্রশ্ন করলো ইশা। শ্রাবণ জবাব দিতো পারলোনা। কেননা, তার চোখ জোড়া অনেক পূর্বেই আঁটকে গেছে মনোহারিণীর প্রতি। যখন সে আনমনে ভীষণ যত্নে নিজেকে সজ্জিত করছিলো কাজল পড়ে? যখন তার ওষ্ঠদ্বয় নড়েচড়ে হঠাৎ প্রশান্ত হয়েছে লিপস্টিকের মেটে গন্ধে। যখন কারোর থেকে নজর কাড়বে বলে আহ্লাদ করে ঐ টিপটা স্থান পেলো তার কপালের শীর্ষে। যখন ভীতমনে এক এক করে হাতজোড়া ভরে উঠছিলো কাঁচের চুড়িগুলোতে। তখনই, ঠিক তখনই সে আঁটকে গেলো মায়াবতীর প্রতি! ভীষণ ভাবে আঁটকে গেলো।

“ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? আ্ আমাকে দেখতে ভালো লাগছেনা!;

ইশা ডানহাতটা তুলে নিজের মুখে হাত বুলালো। হাতটা তুলতে ঝুড়ির ঝনঝন আওয়াজে ধ্যান ভেঙে গেলো শ্রাবণ। নিজের অবস্থান বুঝে গলা খাঁকারি দিয়ে নেতিয়ে পড়া ফুল গুলো ধরিয়ে দিলো ইশার হাতে। ইশা অবাক হয়ে গেলো শ্রাবণের কান্ড দেখে।

“কি হলো, এগুলো আমাকে.. মানে এগুলো কি করবো আমি?;

শ্রাবণ তাড়াহুড়ো করে কোনো কথা না বলেই চলে গেলো! ইশা অবাকের উপর অবাক হয়ে শ্রাবণের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল! এটা কি হলো?

বর যাত্রী চলে এসেছে। সবাই গেইটের কাছে আসতেই তাদের আটকানো হলো। ইশা, তুতুন, তানি, এবং তাদের কাজিনরা মিলে প্রায় ২০জন মিলে গেইট ধরলো। হৈচৈ হল্লাহল্লি করতে করতে বরের কাছে মোট ৫০হাজার টাকা ডিমান্ড করা হলো! যা শুনতেই হাঁপিয়ে উঠলো বরপক্ষের লোক। শাকিলের কাজিনরা এবং বন্ধুরা মিলে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া শুরু করলো ইশাদের সাথে। কিছুতেই ৫০হাজার টাকা দিবেনা তারা। কেউ একজন বলে উঠলো,

“৫০টাকা দেখছেননি জীবনে? আসছে, ৫০হাজার ডিমান্ড করতে!;

মেয়ে পক্ষের একজন বলে উঠলো,

“বাইরের রাস্তা চিনেন মশাই? বিয়ে করার চিন্তা বাদ দিয়ে বাড়ি গিয়ে নাকে তেল মেখে ঘুমোন। কাজে আসবে!;

কথাটা বলতেই হাসির রোল পড়লো মেয়েদের পাশে। বরপক্ষের মুখ আঁটকে গেলো যেন! পরক্ষণেই আবার আরেকজনের জবাব এলো,

“সেকি, টাকার লোভে এখন মেয়েও দিবেন না নাকি? আপনারা দেখি যৌতুক দাবী করছেন! টাকার বিনিময়ে বিয়ে হবে!;

“যৌতুক আবার কি? এটা আমাদের প্রাপ্য! আর প্রাপ্য কখনোও হাতছাড়া করতে নেই, হ্যাঁ!;

তর্কে বিতর্কে কেটে গেলো বেশ কিছুটা সময়। নিয়ম অনুযায়ী বরপক্ষই হারলো কনেপক্ষের সাথে। যুক্তি মিলাতে না পেরে জোরাজোরি করে ৫০থেকে ৩০এ আসলো। অতঃপর ত্রিশ হাজার দিয়েই গেইট পার করতে হলো তাদের। ভেতরে এসে বরকে বসানো হলো তার আসনে। কনের ডাক পড়তে কনেকেও নিয়ে আসা হলো বরের কাছে। দু’জনকে পাশাপাশি বসিয়ে বড়দের কিছু নিয়ম পালন করে কাজীকে ডেকে বিয়ে পড়ানো শুরু করা হলো। আলহামদুলিল্লাহর সহিত তিনবার কবুল পড়ে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হতেই আবারও শুরু হলো মেয়েদের দুষ্টামি। বরের জুতা চুরি করা হলো। জুতা চুরির পেছনে প্রধান হলো ইশা। অনেক্ষন যাবত বরের জুতা নিখোঁজ হওয়ার খবর মাত্রই রটালো। শাকিলের কাজিনরা এবং বন্ধুরা কপাল ডলতে লাগলো। কখন গায়েব হলো বরের জুতা? তারাও যে ওত পেতে ছিলো!

ইশা চিলেকোঠার ঘরে এসে শাকিলের জুতা লুকিয়ে আবারও নীচে নেমে গেলো। ইশাকে নীচে দেখতেই শাকিলের বন্ধুরা এসে ধরলো।

“বেয়ান, এটা কিন্তু ঠিক নয়! এভাবে না বলে কারোর জুতা চুরি করা একদম ভালো কাজ নয়!;

“জুতা লাগবে?;

ইশার এহেম প্রশ্নে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো তারা। জুতা লাগবে মানে কি? তারা আমতাআমতা করে একে-অপরের দিকে তাকালো। ইশা ভাব নিয়ে বলল,

“জুতা লাগলে বলবেন, ভালো জুতা আছে।;

বলেই মুখ টিপে হাসতে হাসতে চলে গেলো। এভাবে জুতা চাওয়া মানে নিজেই নিজের ইজ্জতের ফালুদা বানানো। তারচেয়ে বরং তারাই খুঁজবে। মাথা চুলকে চলে গেলো তারা। দূর হতে তাদের গোটা কান্ড দেখে হাসলো শ্রাবণ। ইশাকে সে চিনে। এতো সহজে হারবার পাত্রী সে নয়।

“আপা, তুর্য ভাই ডেকে পাঠিয়েছে তোকে!;

তুতুনের লেহেঙ্গার রঙটা গাঢ় লাল। লাল টুকটুকে বউয়ের মতো লাগছে ওকে। একটু আগেই ওর চুল খুলে যাওয়ায় ইশা সুন্দর করে আঁটকে দিলো পূণরায়। তখন তুতুনের ভীষণ রাগ জমেছিলো পার্লারের মেয়েগুলোর প্রতি! এতোগুলো টাকা নিলো, অথচ ঠিক করে চুলটাও বাঁধতে পারলোনা। তবে এখন মনটা বেশ ফুরফুরে। তাই তুর্যর এক বাক্যে এসে হাজির হয়েছে ইশার কাছে। ইশা তখন তার নানীকে শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিতে ব্যস্ত। তাই তুর্যর ডাকটাকে উপেক্ষা করে তুতুনকে বলল,

“বল কাজ করছি। শেষ হলে আসবো।;

বেশি সময় লাগলোনা নানীর শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিতে। তবে, এরপরের কাজটা ততক্ষণে বেমালুম ভুলে গেলো ইশা। ওদিকে তুর্যর বাবা-মা অনেকক্ষণ ধরেই অপেক্ষা করছেন তাদের হবু বউকে দেখার জন্য। কিন্তু ইশার যেন সেকথা মাথাতেও এলোনা।

জুতা চুরির বিষয়টা এবার বড়দের মাঝেও ছড়াছড়ি হয়ে গেলো। এবার আর বরের মুখ লুকানোর জায়গা নেই। টানা ২ঘন্টা ধরেও কেউ বরের জুতা খুঁজে বের করতে পারেনি। তার জুতা ফেরত পেতেও বরের পকেট খসিয়ে ১০হাজার হাতিয়ে নিলো কনে পক্ষ। অতঃপর এলো, কনের মুখ দেখার পালা। কবুল বলার পর কনের মুখ দেখানো হলোনা শাকিলকে। একটা আয়না এনে তাকে বলা হলো, এটায় তার বউয়ের মুখ দেখতে হবে। এবং খুব সুন্দর একটা ডায়লগ বলতে হবে তার প্রিয় মানুষটিকে। তবে তার আগে একটা শর্ত আছে। মুখ দেখতে হলে আগে ১০হাজার ছাড়তে হবে। তারপর এই মহৎ কাজ সম্পন্ন হবে। প্রথমে রাজি হলোনা বরপক্ষ। হৈচৈ পড়ে গেলো এই বলে, অলরেডি চল্লিশ হাজার নেওয়া হয়েছে। আর দিতে হলে, গরীব হয়ে যাবে বর। কিন্তু তাতেও লাভ হলোনা। বাধ্য হয়ে পূণরায় দশ হাজার ভাঙতে হলো।

রাত ৮টা বাজে। বরপক্ষের, কনে পক্ষের সবারই খাওয়াদাওয়া শেষ করিয়ে, কনে বিদায়ের সময় হয়ে গেলো। সবাই যেন মহা ব্যস্ত। তবে এর মাঝেও ইশাকে বার কয়েক ডেকে পাঠালো তুর্য। ইশা নানান বাহানায় প্রতিবারই তার ডাক উপেক্ষা করে গেলো! তবে কাজটা যে ইশা মোটেও ভালো করলোনা, তা যে এবার হাড়েহাড়ে টের পেতে হবে তাকে। সবার চোখের আড়ালেই ইশার হাত ধরে ছাদে নিয়ে গেলো তুর্য। রাগে কেমন ফোঁস ফোঁস করছে সে। ইশা বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। বিস্ময় নিয়েই প্রশ্ন করলো,

“কি হয়েছে তুর্য? আপনি ঠিকাছেন! আপনাকে এরকম…;

ইশা কথাটা শেষ করার পূর্বেই ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো তুর্য। রাগে গর্জে উঠে ইশার গাল চেপে ধরতেই ঝড়ের বেগে ছিটকে পড়লো অনেকটা দূরে! ইশা ঘটনার আকস্মিকতায় এতটাই চমকালো যে, সে আসলে কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভড়কাবে সেটাই ভুলে গেলো! গালে হাত চেপে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সম্মুখে তাকালো ইশা! ততক্ষণে শ্রাবণ তেড়ে গিয়ে তুর্যর শার্টের কলার ধরে টেনে তুললো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে