জানে জিগার পর্ব – ৭

0
964

#জানে জিগার
#হৃদয়ের আকাশে মেঘ রোদ বর্ষণ
#Part-07
#Writer-NOVA

— আরে আপনি মিস্টার রোদ না?

কোন মেয়ের মুখে নিজের নাম শুনে বিস্মিত চোখে রোদ পেছনে তাকালো। মেয়েটাকে সে আদোও চিনে কিনা তাই কপাল কুঁচকে মনে করার চেষ্টা করছে। অপরপাশ থেকে বিষয়টা বুঝতে পেরে মেয়েটা বললো,

— আমি ফাইজা। ঐ যে সেদিন আপনার বন্ধু আকাশের এক্সিডেন্ট হলো। তখন আমি আপনাকে খবর দিলাম।

রোদের স্মৃতিতে স্পষ্ট সেদিনের স্মৃতি ভেসে উঠলো। সবকিছু মনে পরতেই এক টুকরো হাসি বিলিয়ে দিয়ে রোদ বললো,

— কেমন আছেন মিস ফাইজা?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?

— আলহামদুলিল্লাহ। তা মেলায় কার সাথে এসেছেন?বয়ফ্রেন্ডের সাথে নাকি?

বয়ফ্রেন্ডের কথা শুনেই ফাইজার মুখটা কালো হয়ে গেলো। গোমড়া মুখে বললো,
— বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। বান্ধবীদের সাথে এসেছি।

রোদ ছোট করে উত্তর দিলো,
— ওহ আচ্ছা।

দক্ষিণ দিক থেকে এক মেয়ে “ফাইজা” বলে ডাকতেই ফাইজা রোদকে বললো,
— আসছি,পরে কথা হবে।

রোদ থ্রি-কোয়াটার প্যান্টের পকেট থেকে একটা গাজর বের করে কামড় দিয়ে কচমচ করে খেতে খেতে বললো,
— জ্বি, নিশ্চয়ই।

ফাইজা চলে গেলো। মিনিট দুইয়ের মধ্যে আকাশ এসে হাজির। সে চিন্তিত মুখে রোদকে বললো,

— সব প্ল্যান কমপ্লিট। এখন শুধু একটা মেয়ে লাগবে। কোথায় পাবো বল তো? এই বর্ষণটা না একটা কাজও ঠিকমতো করতে পারে না। আগে জানলে মাইশাকে নিয়ে আসতাম।এখন আমি মেয়ে পাবো কোথায়? মেজাজটা আমার গরম হয়ে গেলো।

রোদ গাজরে শেষ কামড় বসিয়ে সরু চোখে তা চাবাতে চাবাতে বললো,
— তো এখন কি করবি?

বর্ষণ নিচু গলায় বললো,
— তুই একটা ব্যবস্থা করে দে না ভাই।

রোদ কপাল কুঁচকে বললো,
— আমি মেয়ে কোথায় পাবো?

— দেখ কোন ব্যবস্থা করে।

রোদ কিছু ভেবে খুশিমনে চেচিয়ে বললো,
— পাইছি!

— কি পেয়েছিস?

— মেয়ে।

— কোথায়?

— আসতেছি।

— আরে রোদ শোন…….

বর্ষণের কথা শেষ হওয়ার আগে রোদ দক্ষিণ দিকে ছুটলো। বর্ষণ সেদিকে একবার তাকিয়ে মেঘের কাছে চলে গেলো।

🔥🔥🔥

রোদ, ফাইজার হাত ধরে টেনে নিয়ে সোজা মেঘের সামনে এনে দাঁড়ালো। ফাইজা বিস্মিত চোখে একাবার রোদের দিকে তাকিয়ে আরেকবার সামনের ছেলেগুলোর দিকে তাকালো। বর্ষণ আর আকাশকে চিনতে পারলেও সামনের ছেলেটাকে চিনতে পারলো না। চোখ ছোট করে রোদের দিকে তাকালো। রোদ ওর দিকে তাকালো না। মেঘকে উদ্দেশ্য করে বললো,

— ভাই, মেয়ে পেয়ে গেছি।

মেঘ মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছিলো। রোদের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে পেছনে ঘুরলো। ফাইজাকে দেখে রোদকে হাতের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো মেয়েটা কে? রোদ মুচকি হেসে বললো,

— ওর নাম ফাইজা। সেদিন আকাশের এক্সিডেন্টের পর ও সব সামলিয়েছে।

এক্সিডেন্টের কথা শুনে আকাশ মেঘের সামনে থেকে উঁকি মেরে ফাইজাকে দেখলো। রোদের মুখে মেয়েটার কথা কয়েকবার শুনেছে। তাই মেয়েটাকে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিলো। আজ তার দেখা পেলো। সেদিনের স্মৃতি তার অস্পষ্ট। নয়তো এখন ফাইজাকে ঠাটিয়ে এক থাপ্পড় মারতো তাকে থাপ্পড় মারার প্রতিশোধ হিসেবে। আকাশ ভ্রুকুটি কুঁচকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফাইজা বিব্রত হয়ে রোদের আড়ালে চলে গেল। যদি থাপ্পড়ের কথা মনে করে ওকে একটা থাপ্পড় মেরে বসে সেই ভয়ে। আকাশ সামনে এসে সৌজন্য মূলক হাসি ঠোটে বজায় রেখে বললো,

— ধন্যবাদ, আমাকে রক্ষা করার জন্য।

ফাইজা জোরপূর্বক হাসলো। তবে মুখে কিছু বললো না। ফাইজা কিছুই বুঝতে পারছে না। হুট করে বান্ধবীদের মাঝ থেকে ওকে টেনে নিয়ে এলো। শুধু বললো কাজ আছে। কিন্তু কি কাজ তা বলেনি।মেঘ কথা বলা শেষ করে এগিয়ে আসলো। ফাইজাকে তীক্ষ্ণ চোখে খেয়াল করে বর্ষণকে বললো,

— বর্ষণ, ওকে সব বুঝিয়ে দে।

বর্ষণ মাথা নাড়িয়ে বললো,
— আচ্ছা।

মেঘ কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে এসে বললো,
— থাক বর্ষণ তুই মেলার বাইরে দেখ। আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।

বর্ষণ “ওকে” বলে চলে গেলো। আকাশের একটা কল আসতেই উত্তর দিকে ছুটলো। হৃদয় অন্য কাজে গিয়েছে। রোদ ওদের দুজনকে স্পেস দিয়ে উল্টোদিকে হাঁটা দিলো। সে এখন পাপড়িকে খুঁজতে যাবে। মেঘ স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফাইজাকে বললো,

— আপনাকে একটা কাজ করতে হবে।

ফাইজা ভয়ে তুতলিয়ে গেলো। তোতলাতে তোতলাতে বললো,
— কি কাজ?

মেঘ ওকে তোতলাতে দেখে মনে মনে হাসলো। তবে মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে বললো,

— আরে ভয় পেয়েন না। তেমন কোন কাজ নয়। একটা বাচ্চা নিয়ে আপনি অনেক সময় ধরে নিরিবিলি জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবেন।আসলে সেটা সত্যিকারের বাচ্চা নয়। পুতুল থাকবে। তবে এমন করে তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে রাখবে যাতে কেউ দেখেই মনে করে এটা একটা বাচ্চা।

ফাইজা নিষ্পলক চোখে মেঘের দিকে তাকালো। ছেলেটা কি পাগল-টাগল হলো নাকি? সে কি বাচ্চা মেয়ে যে পুতুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। মেঘ বিষয়টা বুঝতে পেরে একগালে হাসলো। মেঘের একগালের হাসিটা নজর এড়ালো না ফাইজার। ওর হাসিটা ফাইজার হৃৎপিণ্ডটা ধুক করে উঠলো। সে দ্রুত মেঘের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। মেঘ ফাইজার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধীর গলায় বললো,

— চলুন সামনের দিকে যাই। এখানে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না। যেতে যেতে আপনাকে সবটা খুলে বলি।

🔥🔥🔥

ফাইজা তোয়ালে পেঁচানো পুতুলটাকে নিয়ে আধা ঘণ্টা ধরে মেলার পূর্ব দিকে নিরিবিলি পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশের আনাচে-কানাচেতে ওরা পাঁচ বন্ধু লুকিয়ে আছে। ফাইজার এখন পা ব্যাথা করছে। তখন মেঘ ওকে সব খুলে বলেছে।

মেঘদের প্ল্যান হলো ফাইজা পুতুলটাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। পুতুলটা এমনভাবে তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে রাখবে যাতে বাচ্চা ছিনতাইকারীরা ভাববে এটা সত্যিকারের বাচ্চা। তাতে তারা ভ্রান্ত হয়ে বাচ্চাটাকে নিতে আসবে। আর তখুনি পাঁচ বন্ধু ওদের ধরে ফেলবে। কিন্তু ছিনতাইকারীদের কোন খবর নেই। ফাইজা ফিসফিস করে সামনের দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মেঘকে বললো,

— আর কতখন? আমার পা ব্যাথা করছে।

মেঘ নিজের ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে চুপ করতে বললো। তার কানে বাইকের শব্দ আসছে। ইশারায় ফাইজাকে তৈরি থাকতে বললো। মিনিট খানিকের মধ্যে বাইকটা শা করে ফাইজাকে ক্রস করে গেলো। ফাইজা আবারো ফিসফিস করে বললো,

— এটাও না।

মেঘ একগালে হেসে বললো,
— বাইকটা আবার ইউটর্ণ নিবে।

মেঘ বলতে না বলতেই বাইকটা আবার ইউটার্ণ নিয়ে ফাইজার দিকে আসলো। ফাইজা হতবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকালো। মেঘ চোখের ইশারায় ওকে স্বাভাবিক হতে বললো। ফাইজা বড় করে একটা শ্বাস টেনে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকালো। যাতে তাকে দেখে কেউ মনে করে সে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। বাইকটা ইউটার্ণ নিয়ে ফাইজার সামনে চলে এসেছে। ঝড়ের গতিতে কোলে থাকা পুতুলটাকে বাচ্চা ভেবে ছোঁ মারতে গেলেই তার থেকে বেশি ক্ষীপ্র গতিতে মেঘ আড়াল থেকে বের হয়ে পাশে থাকা বাশটা পিঠ বরাবরি ছুঁড়ে মারলো। হুমড়ি খেয়ে বাইকে থাকা দুজন বাইক নিয়ে উল্টে পরলো। ফাইজা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে চিৎকার জুরে দিলো। বেশ কিছু সময় পর মেঘের কন্ঠ পেলো।

— ধন্যবাদ, আপনাকে। আপনার জন্য ওদের ধরতে সক্ষম হলাম।

ফাইজা পিটপিট করে চোখ খুলে এদিক সেদিক তাকিয়ে বিস্ময় মাখা গলায় বললো,
— ছেলে দুটো কোথায়?

মেঘ স্মিত হাসলো। ফাইজা আবারো চোখ সরিয়ে নিলো। ছেলেটা হাসলে তার বুকের বা পাশটা ধুক করে উঠে। সেদিকে তাকিয়ে থাকলে নির্ঘাত সর্বনাশ। মেঘ ফাইজার সামনে চুটকি মেরে বললো,

— কোথায় হারিয়ে গেলেন?

— ওরা এতো দ্রুত কোথায় গেলো?

— ওদের তো আমার দোস্তরা এসে নিয়ে গেছে। এতখনে বোধহয় ওদের হাফ ধোলাই হয়ে গেছে।

ফাইজা অবাক চোখে হা করে বললো,
— এতো দ্রুত ওদের নিয়েও গেলো?

— জ্বি।

— আমি মাত্র চোখ বন্ধ করে মাত্রই চোখ খুললাম।এর মধ্যে ওদের দুজনকে হাওয়া করে দিলেন?

— অলরেডি কয়েক মিনিট চলে গেছে। তাছাড়া আমরা দ্রুত কাজ করতে পছন্দ করি। চোখের পলকে সব শেষ। দেরী শব্দটা আমরা পছন্দ করিনা।

— আমি সত্যি অবাক হচ্ছি।

মেঘ উত্তর দিলো না। আবারো মুচকি হাসলো। ফাইজা ওর হাসি দেখে মাথা নিচু করে বিরবির করে আপনমনে বলে উঠলো,

— এই ছেলে এতো হাসে কেন? আমি তো ঘায়েল হয়ে যাবো। কিন্তু আমি নতুন করে কারো মায়ায় পরতে চাই না। এক ভাদাইম্মারে ভালোবাসছিলাম। আমার জীবনটা বাঁশ পাতা না থুরি তেজপাতা বানায় দিছে।

মেঘ ফাইজার চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বললো,
— এই যে ম্যাম, আপনি একটু পর কোথায় হারিয়ে যান?

ফাইজা হকচকিয়ে বললো,
— কোথাও না,কোথাও না।

— চলুন সামনের দিকে যাই।

— আপনি ঐ লোকগুলোকে মারতে যাবেন না?

— না,ওরা চারজন সামলে নিবে।

— ওহ আচ্ছা।

— হুম চলুন। আপনি আমাদের এতবড় উপকার করলেন। সেই সুবাদে আপনাকে ফুচকার ট্রিট দিবো। পুরো ফুচকার স্টল আপনার জন্য উন্মুক্ত। যতখুশি খেতে পারেন।

ফাইজা মেঘের কথা শুনে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। মনটা তার লুঙ্গি ডান্স দিচ্ছে।যতখুশি তত ফুচকা খাবে। এর থেকে খুশির কি হতে পারে? ফাইজা অনেকটা নাচতে নাচতে সামনে এগিয়ে গেলো। মেঘ এক ধ্যানে ফাইজাকে লক্ষ্য করতে করতে ধীরপায়ে হাঁটতে লাগলো।

~~পারফেক্ট খুঁজতে গিয়ে বেটার হারিয়ে ফেলেন না।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে