ছায়া মানব পর্ব-২৬+২৭+২৮

0
583

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম

২৬.
চিঠিটা মেলে ধরতেই মাহতিম প্রথমে দেখতে পায় তাকে উদ্দেশ্য করে এই চিঠি লেখা। মাহতিম পড়তে থাকে,

মাহতিম,
আমি জানি তুমি অন্যায় করনি। কেউ ফাঁসিয়েছে তোমাকে। বিষয়টা আমার খটকা লাগতেই আমি খোঁজ নিতে শুরু করি। তুমি একজন আর্মি অফিসার, তোমার পালিয়ে যাওয়াটা একদম উচিত হয়নি। যদিও এটা আমি বিশ্বাস করি না। তবুও যদি এই ভুলটা করে থাকো, তাহলে বলছি, ঠিক করনি। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিশ্রমী, ন্যায়পরায়ণ ছিলে তুমি। যে কিনা দেশের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। সেই তুমি দেশদ্রোহীতা করবে আমি সেটা কখনোই বিশ্বাস করব না। নাজের থেকে দূরে থাকবে। সে কখনোই তোমার আপন হতে পারেনা। তোমার সব খবরাখবর সেই শত্রুদের দেয়। তুমি যেহেতু বাংলাদেশ সিক্রেট এজেন্টের লিডার তাই নাজ বন্ধু হিসেবে তোমার সাথে মিশে, তোমার সকল পরিকল্পনা শত্রুদের দিয়ে দেয়। টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে নাজ। ওকে বিশ্বাস করো না‌। আমি জানি না এর মূলে কে আছে। হয়তো সে আমাদের মধ্যে‌ই কেউ। গোপন শত্রুর থেকেও আপন শত্রুরা ভয়ঙ্কর হয়। অরোরা, অমৃতার অবৈধ ব্যবসা আছে। সেটাই তাদের জন্য কাল হবে। মূলত তারাও দেশদ্রোহী। তারা গুরুত্বপূর্ণ সব খবরাখবর শত্রু দেশকে বিক্রি করে টাকার বিনিময়ে। অথচ তোমাকে সেই দোষ দেওয়া হলো। আমি আবারও বলছি, তুমি একজন আর্মি অফিসার সাথে একজন সিক্রেট এজেন্ট এদেশের। এর থেকেও বড় পরিচয় তুমি এখানকার লিডার। সেদিন কি ঘটেছিল সেটা শুধু আমি আর তুমি জানি। আর কেউ জানতে পারবে না। আমি জানি আমরা কেন গিয়েছিলাম দেখা করতে বিদেশীদের সাথে। কেউ সেটাকেই প্রমাণ ধরে তোমাকে ফাঁসিয়েছে, আমি সিউর। জানি না কোথায় আছো, কেন হঠাৎ উধাও হয়ে গেলে। হয়তো অন্য কোনো কারণ, আমার জানা নেই। এদেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব তোমার, আমার, আমাদের সবার। কখনো ছেড়ে যাবে না এই দেশ ছেড়ে। মৃ’ত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবেসে যাবে।
ইতি নিমো

মাহতিম দুইবার পড়ে চিঠিটা। নাজের সম্পর্কে এমন তথ্য পেয়ে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাওয়ার জোগাড়। মাহতিম বেরিয়ে পড়ে। সোজা নাজের ঘরে যায়। সেখানে তাকে পায় না।
মাহতিম অনুজের অফিসে যায়। এই রাতের বেলা সে দেখতে পায় নাজ অনুজের ঘরে ঢুকছে। মাহতিম একপাশে গিয়ে দাঁড়ায়। কেউ তাকে দেখতে পাচ্ছে না। নাজ গিয়েই অনুজের বুকে হাত রেখে গরম নিঃশ্বাস নিল। পরক্ষণেই শার্টের বোতাম খুলে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর অনুজ বলল,’ মাহতিমের কি খবর?’

‘ বাদ দাও তার কথা।’

‘ কেন? সে আবার কি করল?’

‘ বোকাটা কখনোই মানুষ চিলতে পারেনা। আমাকেও বিশ্বাস করে বসে আছে। পারেও বটে এই ছেলে। কিন্তু সুইটহার্ট, আমার একটা কথা জানার ছিল।’

‘ বলতে থাকো তুমি। একটা নয় হাজারটা প্রশ্ন করো। আমিতো উত্তর দিতেই তৈরি হয়ে আছি।’

‘ অরোরা, অমৃতাকে কে মা’রল?’

অনুজ নাজের বাহু চেপে ধরে,’ এতো প্রশ্ন ভালো নয়।’

‘ বলতে পারো। আমিতো তোমার দলেই।’

‘ আমি মে’রেছি।’

‘ একদম ভালো করেছ। কিন্তু কেন মা’রলে?‌ কারণ কি?’

‘ ওরা নিজেদের কাজ বন্ধ করে দেবে বলেছিল। ভালো হতে চায় তারা।‌ সংসার করতে চায় ভালোমতো। তারা জানে না যে রাস্তায় পা দিয়েছে তা থেকে কেউ বের হতে পারেনা। তারাও পারেনি। বের হলেই কোনো না কোনোভাবে কেউ না কেউ জানতে পারতো। আমাদের বিপদ তখন।’

মাহতিম আর দেখতে পারেনা। নাজ আর অনুজের মেলামেশাটা বেরে যেতেই মাহতিম বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।

আপন মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই অদ্ভুত জীবন নিয়ে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এখানে কখনোই মানুষ চেনা যায় না।

নাজ কৌশল করে মাহতিমের থেকে অহনার সব খবরাখবর নিয়ে নেয়। সবকিছু বলে দেয় অনুজকে। সব বলা শেষে অনুজ ছু’রি বসিয়ে দেয় নাজের বুক বরাবর। গলগল করে র’ক্ত’স্রোত ব‌ইতে থাকে।

নাজ রক্তমাখা হাতে অনুজের হাত চেপে ধরে,’ কেন করলে এমনটা? কি করেছি আমি? আমি তো তোমার জন্য‌ই কাজ করছিলাম।’

‘ তুই আমার জন্য কাজ করছিলি, নাকি আমার টাকার জন্য। টাকার জন্য যখন নিজের বন্ধু মাহতিমের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছিস, কিছূদিন পর আমার সাথে করবি না, তার কি গ্যারান্টি?’

নাজের চোখ বুঁজে আসে। প্রাণ চলে যায়। অদ্ভুত এক আওয়াজ শুনে মাহতিম দেখতে আসে। দেখল, র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় নাজ পড়ে আছে। অনুজ দুইজন লোককে ডেকে বলল নদীতে লা’শটা ফেলে আসতে। মাহতিম স্তব্ধ হয়ে যায়। ভেবেছে নাজের কাছে যাবে। কিন্তু তার চক্ষু কুলায়নি। বি’বস্ত্র অবস্থায় মেয়েটিকে খু’ন করেছে অনুজ। শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে আরেক নজর দেখে নেয় নাজকে। তারপর শয়তানি হাসে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

মোড়ল নিজে এসেছে রোস্তমের কাছে। হাতজোড় করে রোস্তমের কাছে ক্ষমা চাইলো তার ছেলের অপরাধের দায়ে। মোড়ল বলল,’ যা হবার হয়ে গেছে। এবার তাহলে নতুন বন্ধনটা মজবুত করে তৈরি করি।’

রোস্তম গলে যায়। তিনি রাজি হয়ে যান আরেক দফা।

আরিশ কখনো কোনো মেয়েকে নিয়ে এতটা গভীর চিন্তা করেনি। আজ করছে। আজ তার চিন্তা করতেও ভালো লাগছে। অদ্ভুত এক ভালো লাগা থেকেই সে ভেবে চলেছে। মোড়ল বলেছে পরদিন সকালেই আবার যাবে মেয়ে দেখতে। আরিশের মনটা মুহূর্তেই খারাপ হয়ে গেল। একজনকে তার ভালো লেগে গেল, অথচ জানেই না সে কে, কিন্তু অন্য একজনকে বিয়ে করতে হবে। এত এত ভাবনার ভীড়ে আরিশ ঘুমাতে পারল না।

মাহতিম আশিশকে সব ঘটনা খুলে বলে। নিমোর চিঠিটা আশিশ একবার পড়ে নেয়, বলল,’ চিঠিটা ঠিকই আছে। নাজকে বিশ্বাস করে সবচেয়ে বড় ভুল করেছিস। সে তোকে ঠকাচ্ছিল, আমি আগেও বলেছি। আমার কথা বিশ্বাস করলি না। আর শোন, সব খু’ন কিন্তু অনুজ করছে, ওকে শাস্তি দিতেই হবে। ওর কাছেই তোর নির্দোষ হ‌ওয়ার সব প্রমাণ আছে। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে খুব শিঘ্রই এখান থেকে চলে যাবি। আমি চাই না এই কাজটা তুই কনটিনিউ করিস। অহনার কাছে চলে যাবি। একটা সুন্দর জীবন নিয়ে বাঁচবি।’

‘ আমিও এটাই চাই, কিন্তু হবে না এমনটা। আমার সাথে আগেই এত খারাপ ঘটেছে, আর ভালো কিছু আশা করতেই পারি না‌।’

‘এক কাজ কর, এখন গিয়ে অহনাকে একবার দেখে আয়। সেও হয়তো তোর অপেক্ষায় বসে আছে।’

‘না, আমি গেলে ও কষ্ট পাবে। আমি একেবারের জন্য বিদায় নিয়ে চলে এসেছি।’

‘ কোনো ব্যাপার না। মেয়েদের মন খুব নরম হয়। তুই গিয়ে একটু কথা বলবি হেসে। সব রাগ চলে যাবে। তুই গিয়ে দেখ।’

,’ আচ্ছা ঠিক আছে‌।’

মাহতিম মুহুর্তেই অহনার কাছে যায়। অহনার ঘরের ভেতর ঢুকেই দেখল সে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। মাহতিম চলে যেতে নিতেই অহনা পিটপিট করে তাকায়। মাহতিম আসার সংকেত পেয়েছে সে। নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি এসেছ?’

চলবে….

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম

২৭.
মাহতিম চুপ করে র‌ইল। অহনা বিছানা থেকে উঠে যায়,
‘আমি জানি তুমি এসেছ। আমার মন মিথ্যে বলেনা। আমি তোমার অস্তিত্ব টের পাচ্ছি।’

মাহতিমের চোখ দুটো ভেজা। অস্বস্তি নিয়ে এগিয়ে আসে। অহনা আরো কাছে এসে দাঁড়ায়। মাহতিমকে এবার পুরোপুরি দেখতে পাচ্ছে অহনা। দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাহতিমের বুকে। পোশাক খামচে ধরে অঝোড়ে কেঁদে উঠে। পুরো শরীরের শক্তি দিয়ে অহনা বেঁধে নেয় মাহতিমকে। এক অদ্ভুত ভালো লাগা ভিড় করে উভয়ের চোখে মুখে। তারা এমনভাবে নিজেদের একে অন্যের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে। মাহতিম হাতদুটো দিয়ে আরো শক্ত করে আলিঙ্গন করে অহনাকে। অহনা কান্নাভেজা ঠোঁটে মাহতিমের বুকে চুমু খায়,
‘ছেড়ে গিয়েছিলে কেন?’ অবুঝ উক্তি অহনার।

‘ এইতো চলে এলাম।’

‘এত দেরি করে। তুমি জানো না আমার কত বড় ক্ষতি হয়ে যেত।’

‘কিছু হবে না, আমি আছি। ছেড়ে যাব না আর কখনো।’

‘মনে থাকে যেন। এভাবেই জড়িয়ে রাখবে সবসময়।’

মাহতিমের গলায় কথা আটকে আসে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার‌। কষ্টে ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। এতো মায়া, এতো ভালোবাসা কিভাবে সে ভুলে যাবে‌? এই বুকে জড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে কিভাবে সে ভুলে যাবে। অহনা নীড় হারা পাখির মতো মাহতিমের বুককে বাসা করে নিয়েছে।

মাহতিম বলল,’ আমাকে যেতে হবে।’

অহনা রেগে যায়,’ কোথাও যাবে না তুমি। আমার কাছে, এখানেই থাকবে।’

‘ সম্ভব নয়। আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এটা।’

‘ তোমাকে থাকতেই হবে আমার কাছে। আমি এভাবেই তোমার বুকে থাকতে চাই সবসময়।’

‘ কেন এমন করো? আমিতো তোমার কেউ না।’

‘ তুমি কে? কেন এসেছ? কি উদ্দেশ্য? এসব জানার কোনো আগ্রহ আমার নেই। আমার শুধু তোমাকে লাগবে ব্যাস। ছেড়ে গেলে খু’ন করব।’

‘ পাগ’লামো করো না।’

‘ আর একটু জোড়ালোভাবে জড়িয়ে ধরুন। শক্তি নেই নাকি? কয় বছরের অনাহারী ছিলেন?’

‘ কি বলছ? ব্যথা পাবে তো।’

‘ পেলে পেলাম। তবে এই ব্যথার স্পর্শ থেকে যাবে আমার কাছে। আমি চাই তুমি সবসময় আমাকে আগলে রাখো। এভাবেই, আজকের মতো করে আজীবন বুকের সাথে মিশিয়ে রাখো।’

মাহতিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দিন দিন মায়া বেড়েই যাচ্ছে। বার বার কাছে পেতে ইচ্ছে করে অহনাকে। চারিদিক হাহাকার লাগে। একটু স্পর্শ পেলেই যেন প্রাণ ফিরে পায়।অহনা বলল,
তোমার স্পর্শ পেলেই আমার লাজ লজ্জা চলে যায়। একটুও খারাপ লাগে না। আমার শান্তি লাগে, এত শান্তি আর কোথাও পাওয়া যাবে না মনে হয়। এই শান্তি থেকে তুমি কেন আমাকে বঞ্চিত করতে চাও? বলো আমাকে, কেন দূরে সরে যেতে চাও? আমার প্রতি কি তোমার মায়া হয় না?’

‘এটাই ভবিতব্য।’

‘ আমি মানি না এমন ভবিতব্য। আমার তোমাকেই লাগবে।’

‘ ভালোবাসো?’

‘একদম না। তোমাকে কেন আমি ভালোবাসতে যাব?’

‘ তাহলে একসাথে থাকতে চাও কেন?’

‘ এতকিছু জানা নেই। তোমার এই পাঁজরের প্রতিটি হাড় আমাকে ডাকে। তোমার বুকের বা পাশটা আমার জন্য‌ই স্পন্দিত হয়। তোমরা শরীরের প্রতিটি লোমকূপ আমার জন্য‌ই দুলে উঠে। তুমি কি খেয়াল করোনা?’

মাহতিমের বলতে ইচ্ছে করছিল, তোমার জন্য‌ই তো বেঁচে আছি এখনো। তোমার জন্য‌ই এই অস্তিত্বহীন জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছে হয়।

বলতে পারে না মাহতিম‌ মুখে জড়তা। ছিটকে দুরে সরিয়ে দেয় অহনাকে। অহনা অবাক হয়ে তাকায় মাহতিমের দিকে,
‘তুমি সরিয়ে দিলে আমাকে?’

মাহতিম কোনো কথা না বলে উধাও হয়ে যায়। অহনা চারিদিক খুঁজেও তাকে পায় না। চলে গেছে সে। কেঁদে উঠে অহনা। গগনবিদারী চিৎকার দেয়।

রোস্তম উঠে পড়েছে। মেয়ের ঘরে এসেই দেখতে পায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কাঁদছে। রোস্তম মেয়ের পাশে যায়,
‘ কি হয়েছে মা?’

‘ বাবা, তুমি জানো না আমার কতটা কষ্ট হচ্ছে।’

হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠে অহনা। রোস্তমের কাঁধে মাথা রেখে বলে,’ আমি কিভাবে এত কষ্ট সহ্য করব বাবা। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।’

‘ কেন মা, কি হয়েছে? আমাকে বল‌। জেগে উঠে সবাই। হ্যারি এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় অহনাকে। পানি খেয়ে অহনা‌ শান্ত হয়। রোস্তম আবার জিজ্ঞেস করে,’ কি হয়েছে, বল আমাকে? এভাবে কাঁদছিস কেন?’

‘ বাবা, ও বাবা। কেউ কেন আমাকে বুঝে না?’

‘ কে বুঝেনি? কিসের কষ্ট হচ্ছে তোর?’

অহনা হঠাৎ বুঝতে পারে সে কি বলতে যাচ্ছিল। স্বজ্ঞানে এসে চোখ মুছে বলল,’ একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছিলাম। অনেক কষ্ট হলো সেটা দেখে। তোমরা ঘুমাতে যাও।’

রোস্তম আর কিছু জিজ্ঞেস করে না। সবাই শুয়ে পড়ে আবার। ময়না অহনার গায়ে হাত রেখে বলে,’ আপা, আমি জানি তোমার কষ্টের কারণ।’

অহনা চমকে উঠে,’ কি জানো তুমি?’

‘ তোমার কষ্টটা সাধারণ হয়। এই কান্না তখনই আসে তখন আমাদের প্রিয়জনদের থেকে কষ্ট পাই বা তারা দূরে যায়। আমার স্বামীর বিয়োগে আমিও এমন কষ্ট পেয়েছি। জানি না তোমার সেই স্বপ্ন পুরুষ কে! এটাই বলব, তোমাদের মিলন হোক। অপূর্ণ ভালোবাসা খুব কষ্টের হয়। বিচ্ছেদ সহ্য করা যায় না।’

‘ এত কথা বলতে হবে না। ঘুমিয়ে যাও।’

ময়না কিছু না বলে ঘুমিয়ে যায়। অহনার দুচোখের পাতা আর এক হয়নি। বাইরে বেরিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে আসে। ভেবেছিল মাহতিম বাইরে থাকবে। কিন্তু ছিল না। আবার চলে গেছে। ভীষণ কষ্ট পায় অহনা। মুখ ফুটে বলতেও পারেনা সে মাহতিমকে ভালোবাসে। আবার কবে আসবে তা নিয়ে ভেবে ম’রে অহনা। চিন্তা হয়, যদি বিয়ে হয়ে যায় আরিশের সাথে।

সকাল হতেই বাড়ি বয়ে ঝগড়া করতে আসা মহিলারা আবারো কাজে লেগে পড়ে। এই মহিলাগুলো সুযোগের দালাল। একটু খুঁত পেলে যেমন কাউকে ছাড়ে না। তেমনি উন্নতি দেখলে লেপ্টে থাকে।

কয়েকজন মহিলা অহনাকে সাজাতে থাকে। অহনার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে বলে কাজল পরাতে পারছে না। একজন বলল,’ মোড়লের ছেলের সাথে বিয়ে হবে, তুই কি খুশি না? কাঁদছিস কেন রে?’

অন্য একজন বলল,’ ঠিক করে থাক দেখি। আহা, কাজলটা নষ্ঠ হয়ে গেল। কিসের এত কান্না তোর? বিয়েতো হচ্ছে না। দেখতে আসবে শুধু।’

সাজগোজে মনোযোগ নেই অহনার। আয়নায় তাকালেই মাহতিমকে দেখছে সে। চোখ সরিয়ে পাশে তাকালেও মাহতিমকে দেখছে। যেখানে তাকাচ্ছে, সেখানেই মাহতিমের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়।

অহনাকে অনেক সুন্দর করে সাজানো হলো। নজর কাড়ার মতো রুপ তার। তার মধ্যে এত সুন্দর সাজ। সাক্ষাৎ পরী মনে হচ্ছে। পাশ থেকে একজন ভাবী বলল,’ অহনা, তোকেতো পরীর মতো লাগছে। মোড়লের ছেলেতো আজ চোখ কি মনটাও সরাতে পারবে না তোর থেকে।’

একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা বলল,’ আহা, এই রুপেইতো মোড়লের এক বেটা পাগল হলো। বাকিজন দেখলেতো এখন‌ই নিয়ে যেতে চাইবে। এমন সুন্দর যদি আমার মেয়েটার হতো। তাহলে একটা ভালো ঘরে সম্বন্ধ করতে পারতাম। কপাল লাগে রে বোন, কপাল‌।’

অহনা কর্ণপাত করল না তাদের কথায়। অহনার সমবয়সী একটা মেয়ে বলল,’‌আপা, আয়নায় তাকাও। কত সুন্দর লাগছে তোমাকে, দেখবে না তুমি?’

অহনা তাকায় না। নিজেকে দেখার তার কোনো ইচ্ছে নেই। সব ধ্যান ধারণা যাকে নিয়ে সে পাশে নেই।

মোড়ল বাড়ি থেকে লোকজন এসে গেছে। সবাই মোড়লের ছেলেকে দেখতে যায়। শহরে থাকে বলে কেউ তাকে দেখেনি। মাঝে মাঝে আসলেও সে গোপনে ব্যস্ত থাকতো মোড়লের বাংলোতে। সবাই একে একে উঁকি দিয়ে দেখে আরিশকে।

তিনজন মেয়ে অহনার কাছে আসল। অহনা ঘরে একা বসে ছিল। একজন বলল,’ আপা, এত সুন্দর বর হবে তোমার। কত ভাগ্য গো। আমারো যেন এমন রাজকুমার বর হয়।’

অন্য একজন বলল,’ আপার মতো সুন্দরী হয়ে দেখা আগে। তোকে ততটা সুন্দর লাগে না।’

অহনা এবার মুখ খোলে। তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ সৌন্দর্যতা সবার মনে থাকে। যার মন যত সুন্দর, সে অন্যকে ঠিক ততটাই সুন্দর মনে করে। বাইরের রুপ দেখে কখনো কাউকে বিবেচনা করবে না, ঠিক আছে?’

তারা বলল,’ আচ্ছা আপা। কিন্তু এটা মানতেই হবে। তোমার বর লাখে একটা।’

রোস্তম সবাইকে আপ্যায়ন করে। মোড়ল আলিঙ্গন করে রোস্তমের সাথে। প্রথমে রোস্তমের কিছুটা অস্বস্তি হলেও মোড়ল নিজের ভাইয়ের মতো করে তাকে বুঝিয়ে দেয়, তারা দুজন সমান।

আরিশ মোবাইলে চিৎ হয়ে আছে। বাবার মান রাখতে সে মেয়ে দেখতে এসেছে। বলতেও পারবে না সে বিয়ে করতে চায় না। তবে কোনো উৎসাহ না দেখিয়ে ফেসবুক স্ক্রল করে যায় আপন মনে। সবার হালকা নাস্তা শেষে মোড়ল গিন্নি রনুজা বলল,’ মেয়েকে নিয়ে আসেন ভাই। দেখি হবু ব‌উয়ের চাঁদমুখখানা।’

দুজন মহিলা ভেতরে গিয়ে অহনাকে নিয়ে আসে সবার সামনে।
মাথায় অর্ধ ঘোমটা টানানো। নীল শাড়ি, নীল চুরি, বাহারী সাজে আছে, গোলাপি লিপস্টিক, কাজল। বাইরের আলোয় আরো আকর্ষণীয় লাগছে অহনাকে। রনুজা বলল,’ বসো মা।’

তারপর একজন মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলল,’ ঘোমটাখানা ভালো করে তুলো, প্রাণ ভরে দেখি।’

একজন এসে ঘোমটা খুলে দেয়। উজ্জ্বল মুখশ্রী ফুটে উঠে। এতদিন সবাই তার রূপের প্রশংসা শুনেছে, আজ নিজ চক্ষে দেখল। সবার চোখ কপালে। আরিশ মোবাইলের স্ক্রিনেই তাকিয়ে আছে। যেহেতু বিয়েতে তার মত নেই তাই মেয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করছে না সে। যেমনি হোক বিয়ে করে নেবে।
রনুজা অহনাকে দেখেই হাতে দুটো সোনার বালা পড়িয়ে দেয়। আদর করে বলল,’ এতদিন তোমার রুপের যত প্রশংসা শুনেছি, তা তোমার জন্য কম। তুমি একটা পরী। আমার কি সৌভাগ্য, আমি আমার বাড়িতে পরী নিয়ে যাব।’

এত এত সুনাম শুনে আরিশ মোবাইলের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে সামনে বসে থাকা মানবীর দিকে তাকায়….

চলবে…..

#ছায়া_মানব
#সাথী_ইসলাম

২৮.
আরিশ অহনার দিকে তাকাতেই তার চোখ মুখ বিকৃত হয়ে যায়। আর একটু সুক্ষ্ম নজর দিয়ে বুঝতে পারে এটা সেই মেয়ে যার সাথে তার গতকাল দেখা হয়েছিল। আনন্দের ফুল ফুটে তার কোমল মনে। পরক্ষণেই মনে এই মেয়েটা তাকে কাকু ডেকেছে।
ছেলের লাজুক মুখ দেখে মোড়ল খুশি হয়। বুঝতে পারে, ছেলের সম্মতি আছে। রনুজা অহনাকে বলল,’ কিগো মেয়ে, আরিশের দিকে একবার দেখো! একবারও তো দেখলে না। যাকে বিয়ে করবে, যার সাথে সারাটা জীবন কাটাবে তাকে একবার দেখে নাও।’

অহনা আরিশের দিকে তাকায়। ভূত দেখার মতো চমকে উঠে। চারিদিকে তাকিয়ে আবার শান্ত হয়ে যায়। গুরুজনদের সামনে এমন কোনো কথা বলতে পারবে না যা বাজে বলে মনে হয়। অহনা চুপ করে থাকে। কিন্তু বাঁকা চোখে দেখে আরিশকে। আরিশ অহনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। দুজনেই চরম বোকা বনে গিয়েছে।

মোড়ল কথা পাকাপাকি করতে যেতেই রোস্তম বাঁধা দেয়, বলল,’ ছেলে-মেয়েদের জীবনের ব্যাপার। সিদ্ধান্তটা ওদের উপর ছেড়ে দিই। কিছুক্ষণ কথা বলে নিক তারা।’

মোড়ল সাঁয় দেয়। রোস্তম আরিশকে অহনার ঘরে নিয়ে যায়। দুজনকে রেখে চলে আসে রোস্তম।

অহনা কি বলবে বুঝতে পারছে না। মিরাকল ঘটে গেল। আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তখন‌ই খেয়াল করল আরিশ তার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। চোখ তার সরছে না। অহনা তুড়ি মেরে বলল,’ কাকু আপনি? বুঝলাম না কিছু।’

কাকু শব্দ শুনে আরিশের কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুতে থাকে। হবু ব‌উ তাকে কাকু ডাকছে। ইচ্ছে করছে আজ, এই মুহূর্তেই শহীদ হয়ে যাক। লজ্জায় নুইয়ে বলল,’ তোমার কি মাথায় কোনো বুদ্ধি নেই?’

‘আমার বুদ্ধি আছে অনেক প্রকাশ করিনা।’

‘ আমি সেটা বলিনি। তুমি আমকে কাক* এসব ক ডাকো?’

‘ কেন? কি ভুল বলছি। আপনাকে তো প্রথম থেকেই আমি এই নামে ডাকি।’

‘ এখন থেকে ডাকবে না।’

‘ কেন?’

‘ তুমি মোটেও ছোট ন‌ও। বুঝো না কি বলছি, নাকি বুঝতে চাও না?’

‘‌সম্পর্ক কি হবে না হবে সেটা দেখার বিষয় না। আপনি কাকু, ভাই, মামু যাই হোন। একজন হলেই হলো।’

আরিশ বিড়বিড় করে বলে,’ মা বলতো,‌ সুন্দরীদের বুদ্ধি হাঁটুতে থাকে। আজ তার জলজ্যান্ত প্রমাণ পেলাম।’

অহনা বলল,’ আমাকে কিছু বললেন কাকু?’

আরিশ বিরক্ত হয়। কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর বলল,’ তোমার কাছে সম্পর্ক কোনো বিষয় না তাই না?’

‘ একদম। পরিচয় একটা হলেই হয়।’

‘ তাহলে আমাকে আরিশ বলে ডাকবে। সম্পর্ক আমাদের এখন বন্ধুর মতো থাকুক। কারণ তোমার কাছেতো সম্পর্ক একটা হলেই হয়। সো, এখন বন্ধুত্ব বানিয়ে নাও‌।’

অহনা নিজের বোকামিতে হেরে গেছে ভেবে আরিশের উপর রাগ হয়,
‘ ঠিক আছে আরিশ।’

‘যা বুঝলাম। কাল এই জন্য‌ই উপস্থিত থাকতে পারোনি। আমার ভাইয়ের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি।’

‘ ক্ষমা চাইলেন কোথায়। স্যরি বলুন। আর বলেন, আর কখনো এমন ভুল করবে না আমার ভাই।’

আরিশ অবাক হয় অহনার সাহস দেখে। কিভাবে তাকে শাসাচ্ছে। একটু আগেও তাকে শান্তশিষ্ট ভেবেছিল। আরিশ স্যরি বলল। অহনা তাকে দশবার উঠবস করায়। কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও তাকে শাস্তি পেতে হলো। মনে মনে নিজের ভাইকে ক’বরে পাঠিয়ে দিয়েছে। বলল,’ এত শাস্তি কেন আমার?’

‘সেকি, নিজের ভাইয়ের দোষ আপনি নিজের ঘাড়ে নিলেন এটা কি আমার দোষ?’

অহনা তাকে এমন অদ্ভুত শাস্তি দেয়, যেন সে নিজেই অতিষ্ট হয়ে বিয়ে করবে না বলে দেয়। কিন্তু হচ্ছে না। আরিশ রাগ করছে না। অহনার সব কথা মেনে চলছে। এক পর্যায়ে আরিশ বলল,’ বিয়ে করতে চাও। নাকি আমাকে মা’রতে চাও? মনে হচ্ছে আমি তোমার সাত জন্মের শ’ত্রু।’

‘ আমিতো চাই না। কিন্তু আপনি ছাড়া বিয়েটা কেউ ভাঙতে পারবে না।’

‘ কী বললে তুমি?’

হঠাৎ অহনার মনে হয় রোস্তমের কথা। এই বিয়েটা না হলে রোস্তম কষ্ট পাবে। লোকে তাকে কথা শোনাবে। অহনা বলল,’ বলেছি, বিয়ে তো করব। তার আগে পরীক্ষা নিচ্ছিলাম। আপনি পাস করেছেন।’

‘ যাক ভালোই হলো। এভাবে আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এতোটা কাহিল করতে পারেনি। কোনো মেয়েই না।’

‘ সুন্দর ছেলে তাই।’

‘ কিছু বললে?’

‘‌বললাম, আপনি কি আমাদের গোয়ালের গরুটা দেখছেন?’

‘ আমি কেন তোমাদের গরু দেখতে যাব।’

‘ তার মানে দেখেননি। ভাগ্যিস, দেখলে সর্ব’নাশ হয়ে যেত।’

আরিশ উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে,’ কি হতো?’

‘ কারণ আপনি নিজেকে চিনতে পারতেন না।’

‘ কেন?’

‘দূইটা জিনিস এক রকম হলে চেনা দায়।’

তুমি কি আমাকে গরুর সাথে তুলনা করলে?’

‘ ক‌ই নাতো।’

আরিশ পূর্ণ দৃষ্টি দেয় অহনার দিকে। একটা মানুষ কিভাবে এতটা নিখুঁত হতে পারে ভাবতে পারছে না। বার বার তার দিকে তাকিয়ে থাকতেই যেন ভালো লাগছে। গোলাপি ঠোঁটজোড়া মৃদু নড়ছিল। কাজলে আবৃত চোখ তাকে টানছিল অহনার দিকে। এক প্রকার জাদু কাজ করে তার মনে। হাতের দিকে তাকালো। নীল চুড়ির সাথে তার মায়াময় হাতটাও যেন সেজে উঠেছে। অপরুপ দৃশ্য।

আরিশ অহনার কাছে এসে বলল,’ তুমি অপরূপা। একদম পরীর মতো।’

‘কথাটা শুনতে শুনতে আমি অতিষ্ট। আমার মধ্যে অন্য কিছু থাকলে বলুন।’

আরিশ গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,’ একটা কথা বলার ছিল।’

‘ জ্বী বলুন।’

‘ আসলে আমি এখন বিয়েটা করতে চাই না।‌ আমার কিছু কাজ আছে। সেগুলো শেষ না দিয়ে বিয়ে করাটা বোকামি হবে। তাই আমি চাই দুমাস পরে বিয়েটা করতে।’

অহনা আনন্দের সাথে সাঁয় দেয়,
‘এটা খুব ভালো খবর। আমিও এটাই চাইছিলাম। আমার পরীক্ষা সামনে। সো, আমার জন্য‌ও ভালোই হয়।’

‘রাগ করে বলছ নাকি মন থেকে? দেখো, যাই হোক আমি তোমাকে বিয়ে করব। তুমি চিন্তা করো না, আমাদের দেখা হবে, কথা হবে। এর মাঝেই দেখবে দু’মাস অনায়াসেই কেটে গেছে।’

ময়না অহনাকে ডাকতে আসে। আরিশ আর অহনা বাইরে চলে আসে।
আরিশের সাহস হচ্ছিল না মোড়লকে বিয়ে পেছানোর কথা বলতে। দম নিয়ে এক গ্লাস পানি সাবার করল, তারপর বলল,’ বাবা আমি কিছু বলতে চাই।’

‘এখন কোনো কথা নয়। এখন কথা হবে বড়দের মাঝে। তুমি নিজের মতামত দিয়ে দিয়েছ, তারপরের কাজ আমাদের।’

আরিশ মুখ বন্ধ করে ফেলে। সবার মাঝে অহনার কিছু বলার সুযোগ নেই। তবুও মুখ খুলল। মোড়লের দিকে তাকিয়ে বলল,’ কর্তা, আমি কিছু বলতে চাই।’

মোড়ল কিছুটা রাগী ভাব ফুটিয়ে তুলে বলল,’ তোমার প্রতি আমি ক্ষুব্ধ।’

অহনা নড়ে উঠে,
‘ মানে, আমি….’

‘ তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে কর্তা ডাকার?, বাবা বলে ডাকবে, মনে থাকে যেন‌।’

অহনা হেসে দেয়,
‘জ্বী বাবা।’

‘এবার বলো, কি কথা?’

‘ বাবা, আসলে আমার কিছুদিন পর পরীক্ষা। তো আমি চাই পরীক্ষাটা শেষ করে বিয়ে করতে চাই। আপনি যদি পারমিশন দেন তাহলেই।’

অহনা নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। মোড়ল বলল,’ আমিতো বলেছি বিয়ের পরেও তুমি পড়তে পারবে, তাহলে এমনটা কেন? তুমি কি বিয়ের পর পরীক্ষা দিতে পারবে না?’

অহনা কি বলবে বুঝতে পারে না। আরিশ বলল,’ বাবা আমার একটা কাজ আছে। তার জন্য আমাকে পনেরোদিন বাইরে থাকতে হবে‌। এরপর দুইদিন গ্যাপ করলে আবার এক মাস। আমি বাড়ি আসতে পারব না। তাই আমি চাই দুমাস পরেই বিয়েটা হোক।’

‘তোমাদের যা মর্জি। আমি তোমাদের মতামতকে সম্মান করি। জীবনটা তোমরা কাটাবে, তাই সিদ্ধান্ত‌ও তোমাদের। ঠিক আছে, তাহলে বিয়ে হবে দুমাস পর।’

এত সহজে মোড়ল মেনে গেল ভেবে অহনা আরিশ খুব খুশি হয়। অহনা নিজের ঘরে চলে আসে। আরিশ সবার সাথে বাইরে বসে থাকলেও তার মন খুঁজে ম’রছে অহনাকে। সে ভাবছে অহনাও তাকে চায় হয়তো।
অহনা ঘরে গিয়েই খুশিমনে নাচতে শুরু করে‌। বিয়েটা দুমাস পেছাতে পেরে অনেক আনন্দিত।

অরোরা, অমৃতা, নিমো, নাজ কেউ বেঁচে নেই। সবার খু’নি অনুজ। যদিও তারা অপ’রাধী তবুও তারা কাজ করত অনুজের জন্য। সেই অনুজ তাদের থাকতে দিল না‌‌। মাহতিম ঠিক করে, যেভাবেই হোক তাদের শা’স্তি দিতে হবে। আশিশের সাথে দেখা করে।
মাহতিম আশিশের ঘরে ঢুকতেই দেখতে পেল আশিশের মা দাড়িয়ে আছে। মাহতিম ভয় পেয়ে যায়। পরক্ষণেই মনে হয় সেতো অদৃশ্য, কেউ তাকে দেখতে পাবে না। তাই আশিশের খাটে গিয়ে বসে পড়। কিছুক্ষণ পর আশিশ ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলে মাহতিম বলল,’ একটা বড় কাজ করতে যাচ্ছি।’

‘ কি এমন কাজ?’

‘ অনুজকে মা’রতে যাচ্ছি।’

‘এটা করিস না। আগে সব জেনে নে। ‘

‘আর যাই করি, একে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।’

‘ কালকে একটা বিষয় দেখলাম। তার ল্যাপটপটা ঘেঁটে পেলাম একটা ফাইল।’

‘ কি ছিল সেটায়?’

‘ দাঁড়া দেখাচ্ছি।’

আশিশ একটা ফাইল এনে দেয় মাহতিমের কাছে। সেটা পড়তেই তার হাত পা শীতল হয়ে আসে।…

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে