চুপিসারে ভালবাসি পর্ব-০৩

0
2730

চুপিসারে ভালবাসি
–পর্বঃ৩
Sadia afrin nishi
__________________

রাতে সকলে একসঙ্গে খাবার খেয়ে নিল। নীলের পছন্দের রান্না করেছে তার ফুপি।খিচুড়ি আর গরুর মাংসের ভুনা। এই বর্ষাভেজা পরিবেশে এমন খাবার একদম পারফেক্ট। তবে যার জন্য এতো আয়োজন সেই বেশি খেতে পারল না। নীলের শরীরটা ধীরে ধীরে খারাপ করে নিয়ে আসছে তাই অল্প খেয়েই উঠে গেল। জ্বর আসার পূর্ব লক্ষণ। সোহাও তেমন একটা খেল না। নীলের সামনে থাকতে আজ তার একটু বেশিই অস্বস্তি লাগছে। খাওয়া শেষে যে যার মতো ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সূর্য খাওয়ার সময়ও সোহাকে বেশ জ্বালিয়েছে।

ঘড়ির কাঁটায় রাত তিনটে বেজে দশ মিনিট। সোহা ধরফরিয়ে লাফিয়ে উঠে বসে পরল। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করল৷ নাহ, কেউ তো নেই। তাহলে সে কী অনুভব করল? পাশে থাকা গ্লাসের পুরোটা পানি এক নিশ্বাসে খেয়ে নিল সে। অতঃপর চুপটি করে শুয়ে পরল। ঘুমের মধ্যে তার মনে হচ্ছিল কেউ তার কাছে, ভীষণ কাছে এসেছে। সোহা হাসফাস করতে করতেই লাফ দিয়ে ওঠে কিন্তু কাউকেই দেখতে পায় না।

___

মালিহা আহমেদ সকাল সকাল ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নীলকে নিয়ে। রাতে জ্বরের ঔষধ আগে থেকে খায়িয়ে দেওয়ার পরেও নীলের জ্বর আয়ত্তে আসি নি। বরং ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় বৃষ্টিতে ভিজলে তার সবসময়ই এমন হয়৷ পুরো একদিন জ্বর থাকে তারপর আস্তে আস্তে কমে আসে। কোনো ঔষধেও কাজ হয় না। নীলের মা এই নিয়ে দশ বার ফোন করে ফেলেছে ছেলের খবর জানতে। মালিহা নীলের দেখাশোনায় কোনো কমতি রাখবে না সেটা সে জানে তবুও মায়ের মন বলে কথা। সন্তানের জন্য ছটফট করবেই।

ডক্টরকে খবর দেওয়া হলো।ডক্টর এসে আরও কিছু মেডিসিন দিয়ে গেলেন। মেডিসিন খেতে হলে আগে কিছু খাবার খেয়ে নিতে হবে কিন্তু নীলকে কিছুতেই খাবার খাওয়ানো সম্ভব হচ্ছে না। সকলেই ব্যর্থ হলো।

ঘুম থেকে উঠে এসব দেখে সোহা বেশ হতাশ। এমনটা হওয়ারই ছিল। ছোট থেকেই এগুলো সে দেখে আসছে। সকলে যখন হাল ছেড়ে দিয়ে চলে আসল ঠিক তখনই সোহা চুপিচুপি সে ঘরে প্রবেশ করল।

এক হাত চোখের ওপর রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে নীল। পা থেকে বুক বরাবর কাঁথা দিয়ে ঢাকা। হয়তো ঠান্ডা লাগছে জ্বরের প্রকোপে। ওষ্ঠ জোড়া শুষ্ক বর্ণ ধারণ করেছে। মুখ,হাত ফ্যাকাশে। জ্বর হলে যেমনটা হয় আরকি। সোহা নিরবে দাড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছে নীলকে। পাশেই টেবিলের ওপর খাবার রাখা। নানারকম ফল,কুকিজ,পায়েস,ভাত,রুটি, তরকারি, এটা ওটা দিয়ে টেবিলটি পরিপূর্ণ। বোঝাই যাচ্ছে নীলকে খাওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে এসব কিছুর আয়োজন। সোহা কীভাবে কী শুরু করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। হঠাৎ শোনা গেল নীলের গম্ভীর কণ্ঠ,

“কিছু বলবি?”

আচমকা কেঁপে উঠল সোহা। নীল এখনো সেভাবেই চোখ বন্ধ করে আছে। বুকে ফুঁ দিতে দিতে বলল সোহা,

“তুমি কী করে বুঝলে আমি এখানে আছি?আমি তো এসে থেকে একটা শব্দও করিনি?”

নীল ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল কিন্তু কিছু বলল না। সোহা ভ্রু কুঁচকে দেখল সেই হাসি। যার অর্থ সে কিছুই বুঝল না।

সোহা বারকয়েক নীলকে খাবার খেয়ে নিতে অনুরোধ করল তবুও নীল শুনল না। ঘাপটি মে’রে পড়ে থাকল। বাধ্য হয়ে সোহা টেবিল থেকে রুটি আর তরকারির বাটিটা নিল। রুটি ছিড়ে তাতে তরকারি মাখিয়ে সেই খাবার তুলে ধরল নীলের মুখের সামনে। অতঃপর বলল,

“মুখ খোলো।”

নীল চোখ খুলল। মুখের সামনে খাবার দেখে চমকালো। সে কখনোই এটা ভাবেনি যে সোহা তাকে নিজে থেকে খাইয়ে দিতে চাইবে। নীল সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। অতঃপর খাবারটা খেয়ে নিল। দুটো রুটি আর তরকারি সেই সঙ্গে কিছু ফল খাইয়ে দিল সোহা নীলকে। খাবার শেষ হতেই সোহা উঠতে নিচ্ছিল হাত ধোঁয়ার জন্য কিন্তু দেখা গেল আচমকা নীল তাকে আঁটকে দিয়েছে। সোহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। নীলের সেদিকে পরোয়া হলো না। সে সোহার এঁটো হাতটা নিজের দিকে টেনে নিল। সোহা কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। নীল সোহার আঙুল একটা একটা করে নিজের মুখের মধ্যে পুড়ে নিয়ে সেগুলোর স্বাদ নিতে ব্যস্ত। সোহা হতভম্ব। এটা সে কখনোই আশা করেনি। নীলের অধর বারংবার ছুয়ে দিচ্ছে সোহার আঙুল। অজানা শিহরণে বন্ধ হয়ে এলো সোহার চক্ষু। মুক্ত হাতটি দিয়ে চেপে ধরল নিজের কামিজের কিছু অংশ। ওপরের অধর দ্বারা চেপে ধরল নিচের অধর। নীল আড়চোখে দেখল সেই হৃদয়-হরনীকে। ফের মনোযোগ দিল নিজের কার্যে।

নীল থেকে মুক্তি পেতেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল সোহা। ঝটপট উঠে পড়ল খাট থেকে। বিনাবাক্যে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। সবকিছু এলোমেলো লাগছে তার কাছে। দৌড়ে নিজের ঘরে এসে দরজা আটকে হাঁপাতে লাগল সে। হাঁপাতে হাঁপাতে হঠাৎ মনে পরল সে তো নীলকে মেডিসিন টা খাওয়াতেই ভুলে গেছে। এখন কী হবে? নীলের মুখোমুখি হওয়া এই মুহুর্তে তার পক্ষে আর সম্ভব নয়। অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে।

___

ঘর থেকে বেড়িয়ে সোজা সূর্যের রুমে চলে গেল সোহা। সেখানে সূর্য আর জিসান ছিল। সূর্য ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখ নিয়ে ফোন টিপছে। আর জিসান তার মায়ের সঙ্গে কথা বলছে। সোহা কাচুমাচু মুখ করে দাড়িয়ে পরল জিসানে সামনে। জিসান বুঝতে পারল সোহা কিছু বলতে চায়। সে অল্প কথা বলেই ফোন কেটে দিল। তারপর সোহাকে বলল,

“কী ব্যাপার পিচ্চি কিছু বলবি? মুখটা এমন কাচুমাচু করে আছিস কেন?”

সোহা বিরক্তির সুরে বলল,

“আহহ ভাইয়া বলেছি না আমাকে পিচ্চি বলবে না। আমি এখন অনেক বড় হয়ে গেছি।”

জিসান ঠোঁট টিপে হেসে বলল,

“তাই বুঝি। তো কতবড় হয়েছিস তুই?”

“অনেক অনেক অনেক বড়। আমার বয়স কতো জানো ১৬+। তারমানে আমি এখন অনেক বড় হয়ে গেছি।”

জিসান আলতো হাতে সোহার মাথায় একটা চাটি মে’রে বলল,

“তুই যদি বড় হয়ে যেতি তাহলে তো কবেই সব সমস্যা মিটে যেত।”

“কীসের সমস্যার কথা বলছ তুমি ভাইয়া?”

“কিছু নাহ। এখন বলতো তুই কেন এসেছিলি এসেছিস?”

সোহা আমতা আমতা করে বলল,

“ওই আসলে হয়েছে কী তোমার ভাইকে খাবার টা তো আমি খাইয়ে এসেছি কিন্তু ঔষধ টার কথা না একদমই ভুলে গেছি।”

জিসানের সাবলীল উত্তর,

“তো কী হয়েছে আবার যা ঔষধ টা খাইয়ে আয়।”

সোহা ঝটপট করে বলল,

“নাহহ নাহহ না, আমি যেতে পারব না। না মানে আমার স্কুল টাইম হয়ে গেছে। লেট হলে অনেক ঝামেলা হয়ে যাবে। তাই বলছি তুমি গিয়ে তাকে খাইয়ে দিয়ে এসো।”

“আমি বললে কী সে খাবে।”

সোহা বিদ্রোহী কন্ঠে বলল,

“কেন খাবে না অবশ্যই খাবে। না খেলে মুখ চেপে ধরে খাইয়ে দিয়ে আসবে।”

“ওকে, চেষ্টা করে দেখি।”

“হুম যাও।”

___

ব্রেকফাস্ট করে স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে নিল সোহা। আজ একটা ইম্পর্টেন্ট ক্লাস আছে তার। জিসানের থেকে জেনে নিয়েছে নীল ঔষধ টা খেয়ে নিয়েছে। প্রথমে খেতে চায়নি যখন জিসান বলেছে তাকে সোহা পাঠিয়েছে তখন আর কোনো দিরুক্তি করে নি।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে