18.8 C
New York
Sunday, October 5, 2025

Buy now

spot_img







গোধূলী রাঙা দিগন্ত পর্ব-০৩

#গোধূলী_রাঙা_দিগন্ত
#পর্বঃ৩
#ফারিহা_খান_নোরা
রহস্যময় পৃথিবীতে মানুষের জীবনটা বৈচিত্র্যময়! তা না হলে আরিবা প্রণয়ের লাইফে অপশনাল হয়ে আসতো না।রুমে প্রবেশ করা মাত্রই আরিবা বিভিন্ন ধরণের ফুল দিয়ে রুম ও বেড সাজানো দেখতে পায়। তবে সাদা বেডশীটের উপরে লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে প্রণয় প্লাস রূপা দেওয়া আর রুমের দেওয়ালে প্রণয়ের বাহু জড়িয়ে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে অন্য একটি মেয়ের ছবি দেখে অবাক হয় আরিবা। প্রণয়ের মায়ের বলা একটা কথায় বার বার আরিবার কানে বাজতে থাকে,

‘এই মেয়েটা প্রণয়ের ব‌উ হলে আমার রূপা কোথায়?’

কে এই রূপা যার নাম তার সদ্য বিবাহিত স্বামীর বাসরঘরের বেডশীটে পর্যন্ত আছে।আর দেওয়ালে টাঙানো ছবিটার মেয়েটিই বা কে?আরিবার চোখে অবাক ও আগ্রহ বিরাজমান।প্রণয় নিমিষেই বুজতে পারে সেজন্য বিয়ে ভাঙা থেকে শুরু করে তার কারণ অবধি, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আরিবাকে বলে প্রণয়।আরিবা সব কিছু শুনে একটা বড়সড় শকে চলে যায়।শেষ পর্যন্ত বাবাও কি না তাকে এভাবে ঠকালেন।আরিবাকে বিচলিত হতে দেখে প্রণয় অত্যন্ত শান্ত কন্ঠে বলল,

‘তুমি আমার অনেক ছোট সেজন্য তুমি করেই বললাম রূপাকে আমি পছন্দ করতাম যা বিয়ে অবধি গড়ায়নি তবে এখন তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী বিয়েটা যেভাবেই হোক না কেন আমি অস্বীকার করতে পারবো না।তবে আমার সময় লাগবে সব কিছু স্বাভাবিক করতে আশা করি তুমি সেই সময়টুকু আমায় দিবে।’

আরিবা মনে মনে বলে,

‘এ পছন্দ করে একজনকে বিয়ে করলো আরেকজনকে!এই ব্যাটা দেবদাস হয়েও কি সুন্দর ডায়ালগ দিয়ে গেল।ব্যাটা তুই কি একাই দেবদাস?তোদের বাপ ছেলে শশুড়ের গেরাকলে পড়ে মাঝখান থেকে আমার জারিফটা আজ থেকে দেবদাসের খাতায় নাম দিবে।যদিও সে এখনো জানে না তবে জানতে কতোক্ষণ?’

এসব ভাবনার মাঝে উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মায়াবী মুখশ্রীর একটি মেয়ে হন্তদন্ত হয়ে লাগেজ নিয়ে রুমে প্রবেশ করে আরিবার হাত ধরে উচ্ছসিত হয়ে বলে,

‘তুমি‌ই আমার ভাবি?আমি তোমার একমাত্র ননদিনী প্রেমা।এই নাও লাগেজে তোমার ড্রেস রাখা আছে তুমি যেকোনো একটা ড্রেস নিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো আমি গেলাম আজ তুমি বেশ টার্য়াড ইনশাআল্লাহ! কাল জমিয়ে আড্ডা দিবো।আর হ্যা ময়না রুমে তোমাদের রাতের খাবার দিয়ে যাবে খেয়ে নিও গুড নাইট ভাবি।’

বলেই প্রেমা নামের মেয়েটা যেমন ঝড়ের গতিতে এসেছে তেমনি ঝড়ের গতিতে চলে গেল।আরিবা কিছু বলার সুযোগ অবধি পেলো না ।হাতে দেওয়া লাগেজ টা ওপেন করে দেখতে পায়,ভিতরে তিনটি সুতি শাড়ি ও ছয়টির মত জামদানী ও কাতান শাড়ি রয়েছে সাথে বেশ কিছু খ্রীপিচ ও রয়েছে যা এখনো বানানো হয় নি।বেশ কিছু কসমেটিক আয়টেম আছে।আর একটা বক্সে দেখতে পেলে সিম্পেল এক লহরের শীতাহার, একজোড়া ইয়ার রিং ও বেশ বড় সাইজের একটি আংটি। আরিবার তখনি মনে হলো এগুলো রূপার জন্য কেনা শাড়ি।নিজেকে ভীষণ তুচ্ছ মনে হচ্ছে। তার করার কিছুই নাই সে রাগের বশে বাড়ি থেকে একটা কিছুও নিয়ে আসে নি। দীর্ঘশ্বাস দিয়ে গোলাপী রঙের কারুকাজ করা সুতির একটি শাড়ি নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।

প্রণয় এতোক্ষণ বারান্দায় ছিলো ময়না খাবার দিতে আসলে ময়নাকে দিয়ে প্রণয় রুম ও বেডের ফুল গুলো পরিষ্কার করে আর রুমের ছবিটাও স্টোর রুমে পাঠিয়ে দেয়। এর মাঝে আরিবা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলে দুজন‌ই ডিনার করে নেয়।আরিবা ভীষণ ক্ষুধার্ত ছিলো চুপচাপ খেয়ে নিয়েছে।ঘড়িতে এখন রাত একটা বেজে চল্লিশ মিনিট।প্রণয় বেডে এসে শুয়ে পড়ে।আরিবা আমতা আমতা করে দাঁড়িয়ে আছে।

‘এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে লাইট অফ করে শুয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে।’

প্রণয়ের কথায় আরিবা আমতা আমতা করে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,

‘আমি কোথায় শোব?’

প্রণয় বালিশ থেকে মাথা তুলে আরিবার দিকে ঘাড় কাত করে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ধমক স্বরে বলে,

‘জীবণটা কি সিনেমা মনে হচ্ছে তোমার? এখন সিনেমার নায়কের মত আমি বলব, আমি খাটে আর তুমি মেঝেতে শুবে। সেই আশায় এক বালতি পানি ঢেলে দেও। ন্যাকামি না করে খাটে শুতে পারলে শুয়ে পড় নয়তো রুমের দরজা খোলা আছে বেরিয়ে যাও।’

আরিবা প্রণয়ের এমন ধমক খেয়ে সুরসুর করে লাইট অফ করে দিয়ে প্রণয়ের পাশে দুরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়ে আর মনে মনে বলতে থাকে,

‘এই ব্যাটা তো দেখছি দেবদাস নামের কলঙ্ক।কোথায় ভাবলাম দেবদাসদের মত বলবে তুমি আমার সঙে এক খাটে থাকতে পারবে না! ধাৎ ভেজাল খাদ্যদ্রব্য এর এই দুনিয়ায় আজকাল দেখছি এই ব্যাটা দেবদাসটাও ভেজাল হয়ে গেছে।’

____________________________

আরিবা মনে মনে গজগজ করে ভাবতে ভাবতে রাতে কখন ঘুমিয়েছে ঠিক মনে নেই।চোখ খুলে নিজেকে এক নতুন পরিবেশে আবিষ্কার করল।কাল রাতে প্রণয়ের সাথে রূপার নাম দেখে ও তার সাথে ঘনিষ্ট ভাবে অচেনা মেয়েকে দেখে রা’গে’র মাথায় রুমটা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করাই হয় নি আরিবার। আজ কেন জানি দেখতে ইচ্ছে করে সেজন্য আরিবা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো, বেডটা রুমের ঠিক মাঝখানে, ডান পাশে বড় সড় চার পার্টের একটি আলমারি, কিছু দূর দূরত্বে অপরপাশে ড্রেসিং টেবিল রাখা।সামনে সোফা ও সেন্টার টেবিল।বাম পাশে টেবিল ও দুটো চেয়ার রাখা যেখানে প্রয়ণের ব‌ই ও লেপটপ সহ যাবতীয় জিনিস রাখা আছে তাছাড়াও কর্ণারে বিভিন্ন ধরণের শো পিস রাখা।রুমের সাথে এ্যাটাচড ওয়াশরুম ও বারান্দাও রয়েছে।সব মিলিয়ে রুমটা বেশ বড় সড়।প্রণয় পেশায় বিজনেস ম্যান, বাবার ব্যাবসা সে নিজ হাতে হ্যান্ডেল করে।সব মিলিয়ে বলা চলে প্রণয় গুছানো মানুষ শুধু তার জীবণটাই অগোছালো হয়ে গেল।

এত আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রণয় আরিবার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে।আরিবা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে ধীরে সুস্থে বলল,

‘গুড মর্নিং ‘

প্রণয় মৃদু হেসে জবাব দেয়। ঠিক তখনি ঘড়িতে দশাটার ঘন্টা বেজে উঠে।এতো বেলা হয়ে গেছে আর সে এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে সময় দেখেই তো আরিবার মাথা গরম হয়ে গেল।বিয়েটা যেমন ভাবেই হোক না কেন আরিবা তো এই বাড়ির নতুন ব‌উ। নতুন ব‌উ এতো বেলা অবধি ঘুমিয়ে আছে বাড়ির লোক কে কি ভাববে বা কিভাবে নিবে?

তড়িঘড়ি করে লাগেজ থেকে লাল রঙের গোল্ডেন জরির পাড়ের একটা সুতি শাড়ি নিয়ে আরিবা ফ্রেশ হতে চলে যায়।

____________________________

রুম থেকে বেরিয়ে আবার‌ও একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হলো।রূপার জায়গায় সবাই তাকে দেখে কি মনে করছে আরিবা নিজেও জানে না।তবে সবার উৎসুক দৃষ্টি বেশ বুজতে পারলো।

সোফায় বসে থাকা মধ্যবয়স্ক একজন মহিলা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলেন,

‘কি ব্যাপার ভাবি এই যদি আপনার ছেলের ব‌উ হয় তাহলে রূপা কোথায়? আপনি যে বলেছিলেন রূপার‌ই এই বাড়ির ব‌উ হবে যার জন্য আমার ভাইয়ের এমন সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়েকেও বাতিল করলেন।যাইহোক আপনার ছেলের ব‌উ দেখি সুন্দরীই আছে।তা কি কি দিলো মেয়ের বাড়ি থেকে?’

নাসিমা শেখ চুপচাপ শুনছিলেন প্রথমে রা’গ হলেও এতোক্ষণ জেনো বলার কিছু খুঁজে পেলেন।ঝনঝন করে বলে উঠলেন,

‘কি আর দিবে!খালি হাত পায়ে এসেছে।দেখতে হবে প্রণয়ের বাবার কর্মচারীর মেয়ে বলে কথা।আমাদর রূপা হলে খালি হাত পায়ে আসতে পারতো ভাবি? ফ্ল্যাট দিতে চেয়েছিলো তাও আবার উত্তরায়।সব‌ই কপাল প্রণয়ের বাবা ক‌ই থেকে যে ধরে নিয়ে আসলেন।’

বলেই মুখ ঝা’ম’টা দিলেন তিনি।নাসিমা শেখের কথায় আরিবার মাথা নিচু হয়ে গেছে এমন লজ্জায় সে কোনো কালে পড়ে নি।নাসিমা শেখ যে তাকে দু’চোখ সহ্য করতে পারছে না এটা বেশ বুঝতে পারছে তার সাথে এটাও বুঝতে পারছে তাঁর ভবিষ্যত আশঙ্কায় রয়েছে।

প্রণয়ের ফুফু আমেনা বেগম রয়েসয়ে বললেন,

‘ভাবি বুঝলাম আরিবা না হয় খালি হাতে এসেছে। তোমার রূপা ফ্লাট সহ অনেক কিছু নিয়ে আসতো বললে,তার সাথে এটাও জানা উচিত উনাদের, এতো কিছুর সাথে দুই মাসের বাচ্চাও পেটে করে নিয়ে আসত যা কিনা মৃ’ত বোনের স্বামীর সাথে অগাত মেলামেশার ফল।এবার বুজতে পারছেন আপনারা? আমার ভাই কেন রূপার বদলে আরিবাকে শেখ বাড়ির ব‌উ করে নিয়ে এসেছে।’

শেষের কথাটা সবার উদ্দেশ্যে বলল।আমেনার কোনো কালেই তার ভাবিকে পছন্দ না।কারণ নাসিমা শেখ অহংকারী মহিলা কথায় কথায় অপমান করে।নাসিমা শেখের মুখ চুপসে গেলো।সবাই তাকে নানান ধরণের প্রশ্ন করছে। আরিবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রেমা এসে হাসিমুখে বলল,

‘একি ভাবি দাঁড়িয়ে আছো কেনো এখানে এসে বসে পড়।’

আপমানে আরিবা চোখ তুলে তাকাতে পারছে না।এভাবে সে কোনো কালেই অপমানিত হয় নি।প্রেমা আরিবাকে সোফায় বসিয়ে দেওয়ার পরেই প্রণয়ের মামি কটাক্ষ করে বললেন,

‘তা যাইহোক যা হ‌ওয়ার হয়ে গেছে তবে কোন জমিদারের মেয়ে এনেছো আপা যে কিনা এগারোটায় ঘুম থেকে উঠে?’

ঠিক তখনি আরিবা শুনতে পায়,

‘সে জমিদারের মেয়ে না হলেও জমিদারের ব‌উ।আমার কি কম আছে নাকি মামি ? আমি আমার ব‌উকে জমিদারের মত পালতে পারবো সমস্যা নাই। আপনাদের এতো কিছু না জানলেও চলবে।’

প্রণয় নামতে নামতে কথাটি বলল।প্রণয়ের কথা শুনে সকলের দৃষ্টি তার দিকে গেল।প্রণয়ের মুখে এমন কথা শুনে আরিবাও অবাক হয়ে যায়।

নাসিমা শেখ ও অবাক হয়ে যায়।যে ছেলে নিজের মায়ের মুখের উপর একটা কথা বলার সাহস পায় না সেই ছেলে ব‌উয়ের হয়ে সকলের সামনে কথা বলছে।এক রাতেই এই ফলাফল বাকি জীবণ তো পড়েই আছে।না ভাবতে হবে ছেলেকে আঁচল ছাড়া করা যাবে না।কতো সাধের ছেলে তাঁর!

।চলবে।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......

Related Articles

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Stay Connected

20,625ভক্তমত
3,633অনুগামিবৃন্দঅনুসরণ করা
0গ্রাহকদেরসাবস্ক্রাইব
- Advertisement -spot_img

Latest Articles