গোধূলি রাঙা দিগন্ত পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0
198

#গোধূলি_রাঙা_দিগন্ত
#পর্বঃ১২ অন্তিম পর্ব
#লেখিকাঃফারিহা_খান_নোরা
প্রকৃতিকে এখন ঋতুর রাজা বসন্ত চলছে। বসন্ত মানেই যে সবার জীবনে রঙ বেরঙের সমাহার এমন‌ কিন্তু না। এমন যদি হতোই তাহলে কি প্রেমার জীবণটা এমন হতে পারতো?

প্রেমা পাতলা একটা শাল গায়ে জড়িয়ে রাতের আঁধারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।ঠিক এক বছর আগের স্মৃতি মনে মনে স্মরণ করছে। এক বছর আগে যখন প্রেমা জারিফের সাথে আরিবার ভালোবাসার কথা বলেছিলো জারিফ বেশ চ’ম’কে যায়। প্রেমা একটু হেঁসে বলেছিলো সেদিন প্রেমাদের বাড়িতে রুমের ভিতরে সে তাদেরকে দেখে নেয়।প্রেমা জারিফকে তাঁর সাথে নতুন করে শুরু করার কথা জানায়।জানায় জারিফের জন্য প্রেমার হৃদয়ে এক আকাশ সমান ভালোবাসার কথা কিন্তু জারিফ প্রেমাকে ফিরিয়ে দেয়।এতে প্রেমা ভীষণ কষ্ট পায়‌ ক্ষ’ত বি’ক্ষ’ত হৃদয় নিয়ে চলে আসে।তার ঠিক এক মাস পরেই জারিফের বাবা মা জারিফকে নিয়ে প্রেমাদের বাড়িতে উপস্থিত হয় সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেয়। জারিফ যেহেতু প্রীতমের বন্ধু যার জন্য দুই পরিবারের সম্পর্ক আগে থেকেই ভালো। প্রেমার বাবা মা প্রেমার সিধান্ত জানাতে বললে প্রেমা কম্পনরত কন্ঠে বলে,

‘আমি রাজি।’

প্রীতমের এই বিয়েতে মত নেই কিন্তু প্রেমা যেহেতু রাজী সে আর কি বলবে? জারিফ তার বন্ধু কিন্তু প্রীতম জানে জারিফ অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে তবে মেয়েটি কে সে জানে না।সেই মেয়েটির জন্য জারিফ সু’ই’সা’ই’ড এ’টে’ম করেছে।সব জেনে শুনে আদরের বোনকে সে কিভাবে জারিবের তুলে দেওয়ার কথা চিন্তা করে? প্রীতম প্রেমাকে বুঝাতে গিয়েছিল তবে প্রেমা কোনো কথা না শুনেই খুশি হয়ে বলে,

‘ছোট ভাইয়া আমি এই বিয়েতে রাজী। আমি জারিফ ভাইয়াকে আগেই থেকেই পছন্দ করতাম।’

প্রেমার কাছে তখন বিষয়টা মেঘ না চাইতে জলের মতো। জারিফ রাজি হয়েছে তার মানে জারিফ নতুন করে সব শুরু করতে ইচ্ছুক তবে প্রেমার ধারণা সব ভুল প্রামাণ করে বাসর রাতে জারিফ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আজ জারিফ ও প্রেমার বিয়ের একবছর পূর্ণ হলো কিন্তু জারিফ নেই।প্রেমা জারিফদের বাড়িতেই আছে তার বাড়ির মানুষ গুলো যে কতো বার নিতে এসেছে প্রেমা বার বার তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছে।জারিফকে সবাই অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও পায় নি।পরে জানতে পারে পরিবার থেকে চাপ দেয় যার ফলে জারিফ এই বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। বিয়েটা করার পর জারিফ জে’দে’র বসে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। প্রেমার উদ্দেশ্য একটা চিঠি রেখে যায়।ঠিক চিঠি বলা যায় না,কারণ জাস্ট দুই লাইন কথা ছিলো,

‘আমার #গোধূলি_রাঙা_দিগন্ত অন্যকে ঘিরে সেখানে তোমার প্রবেশ নিষিদ্ধ। তুমি সব জেনে শুনে প্রবেশ করেছ।’

_______________________

মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে আরিবা। সামনে রক্তচক্ষু নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে প্রণয়।

‘আর কতো জ্বালাবে আমায়! মানুষ মনে হয় না? কতো চিন্তায় থাকি তুমি জানো? আর একটুর জন্য কি হতো।এতোটা কেয়ারলেস হলে চলে?’

নয় মাসের ভরা পেট নিয়ে প্রণয়ের কথা শুনছে আরিবা।একটু আগেই সে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সামনে পা রাখতেই পা স্লীপ করে। প’ড়া’র আগেই প্রণয় এসে ধরে যার জন্য আল্লাহ রক্ষা করেছে।আরিবা ভীষণ ভয় পায় আর একটুর জন্য কি হতো? এক হাত পেটের উপর রেখে বেশ লম্বা একটা শ্বাস টেনে মিনমিন করে বলল,

‘আসলে আমি বুঝতে পারি নি। হঠাৎ করে এমনটা হলো।’

প্রণয় ধ’ম’কে’র সুরে বলল,

‘তোমায় কতোবার বলেছি এই অবস্থায় একা চলাফেরা করবে না।আমায় ডাকবে নয়তো মা কিংবা ময়নাকে ডাকবে।’

‘আর এমনটা হবে না।’

নাসিমা শেখ ফল দিয়ে পরিপূর্ণ একটা প্লেট হাতে নিয়ে রুমে এসে প্রণয়কে বলে,

‘তুই আবার ব‌উমাকে ধ’ম’ক দিয়েছিস?’

‘কেন দিয়েছি তোমার ব‌উমাকেই বলো।’

নাসিমা শেখ আরিবার মায়া ভরা মুখের দিকে তাকালেন।এই মেয়েটাকে সে কিছুতেই সহ্য করতে পারতো নি।কতো অপমান করেছে কিন্তু দিন শেষে তার ভুলটা ঠিক বুঝতে পেরেছে আরিবার কাছে সে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে।এখন আরিবা তার আরেক মেয়ে।রূপার জন্য আরিবাকে সে দেখতে পারতো না।সেই রূপা এখন জে’লে।সে অতিরিক্ত ড্রা’গ নিতো যার জন্য বাচ্চাটাও নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁর কিছু উশৃঙ্খল সঙ্গী ছিলো তাঁরা কয়জন মিলে ড্রাগ নেওয়া অবস্থায় একজন পথচারীর উপর গাড়ি চালিয়ে দেয়।সেখানেই পথচারী নি’হ’ত হয় পুলিশ এসে সব কটাকে নিয়ে যায়।
নাসিমা শেখ আরিবাকে বসিয়ে দিয়ে পরম মমতায় মাথায় হাত রাখে।এক পিস আপেল নিয়ে আরিবার মুখে তুলে দেয়।

‘এ অবস্থায় সাবধানে চলতে হবে মা।এমন অসাবধানতাবশত চললে অনেক দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে আজ না হয় প্রণয় সামলিয়ে নিয়েছে কিন্তু সব সময় তো আর ও থাকে না।তুমি আর একা চলাফেরা করবে না।আমরা আছি কি করতে? তুমি আমাদের এতো কষ্ট করে বংশধর উপহার দিবে আর আমরা তোমার এইটুকু যত্ন আত্মী করতে পারবো না?

আরিবা মুগ্ধ হয়ে শাশুড়ি কথা শুনছে এই সেই নারী যার চোখে আরিবা বি’ষে’র ন্যায় ছিলো আর এখন সময়ের সাথে সাথে মধুর ন্যায় হয়ে উঠেছে।ইশ আজকাল এসব ভাবতেও আরিবার ভালো লাগে।

__________________

কনসিভ করার পর থেকে আরিবাকে নিচে নামতে দেওয়া হয় নি।প্রণয় আরিবাকে কঠোর ভাবে নিষেধ করে দিয়েছে আর এখন তো আরিবা চলাফেরা তেমন করতে পারে না।মাঝে মাঝে ময়না তার শাশুড়ি এসে গল্প করে যায়।তার ভীষণ সুখ সুখ লাগে কিন্তু প্রেমার কথা মাথায় আসলেই ঠোঁটের কোনে থেকে সুখের হাঁসিটুকু আপনা আপনি গায়েব হয়ে যায়। শুধু মনে হয় তার জন্য প্রেমা সুখী হচ্ছে না।এই অবস্থার জন্য সে নিজেই দায়ী।মাঝে মাঝে তো প্রণয়কে বলেও ফেলে।প্রণয় তাঁকে শান্তনা দেয় এই বলে,

‘দেখো আরিবা প্রেমা জেনে শুনেই এই পথে পা বাড়িয়েছে তোমার সাথে জারিফের সম্পর্ক ছিলো যা আমি বিয়ের পর জেনেছি তুমি বলার আগেই।বিয়ের পর প্রথম যখন তোমাদের বাড়িতে গেলাম সেই দিন জেনেছি কিন্তু এই জাহিন যে জারিফ তা জেনেছি হাসপাতালে।যেদিন আমি জারিফকে র’ক্ত দিলাম।বিয়ের আগে জানলে আমি তোমাকে কিছুতেই বিয়ে করতাম না ,সেখানে প্রেমা বিয়ের আগেই সব জেনেছে।হ্যা ভাই হিসাবে আমার বোনের জন্য খা’রা’প লাগে কিন্তু ও জেনে শুনে আ’গু’নে ঝাঁপ দিয়েছে। তুমি নিজেকে দোষী করছো কেন? সেক্ষেত্রে আসল দোষী তো আমি। আমার জন্য তুমি তোমার ভালোবাসা হারিয়েছো।

আরিবা অসহায় চোখে প্রণয়ের দিকে তাকায়।প্রণয় বরাবরের মতো নির্বিকার। আরিবা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

‘সব জেনেও আমায় মেনে নিয়েছেন?’

প্রণয় হেঁসে বলে,

‘তুমিও তো সব জেনেও আমার সাথে থাকছো। আমার জীবণে অন্য কেউ ছিলো তুমি এটা জেনেও চলে যেতে পারো নি,তাহলে আমি কেন মেনে নিবো না বলো?’

আরিবা প্রণয়ের বুকে মাথা রাখে।এই বুকে মাথা রাখার কথা আগে কল্পনাতেও ভাবে নি কিন্তু এখন মাথা রাখলে আরিবার চোখ জুড়ে হাজার রঙিন স্বপ্ন ভেসে ওঠে।

‘আমি যদি না থাকতাম?’

‘তাহলে মুক্ত করে দিতাম।’

প্রণয়ের সরল কন্ঠ, আরিবা একটু মন খারাপ করে। এতে করে প্রণয় হেঁসে উঠে শাড়ির আঁচলটা পেটের উপর থেকে সরিয়ে আরিবার উঁচু পেট উন্মুক্ত করে। উন্মুক্ত পেটে অজস্র বার উষ্ণ পরশ দেয়।আরিবা কেঁপে উঠে চোখ পিটপিট করে।আরিবার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রণয় ফিসফিস করে বলে,

‘তুমি আমার জীবনে থেকে গেলে বলেই আমি যত্ন করে তোমায় রেখে দিলাম।’

আরিবা আবেগে আপ্লুত হয়। প্রণয়ের মতো এমন জীবণ সঙী পেয়ে সে সত্যি সুখি সে সাথে তার বাবা ও শশুড়ের প্রতি কৃতজ্ঞ।তারপর কিছু একটা মনে হয়ে বলে উঠে,

‘আপনার মনের কোথায় কি রূপা আছে?’

প্রণয় আরিবার কপালে ভালোবাসার স্পর্শ আঁকে মুচকি হেঁসে বলে,

‘রূপা আমার কাছে বিষন্নতায় ঘেরা দিনের মতো যেখানে একটু শান্তি নেই,নেই কোনো স্বস্থি। আর তুমি আমার জীবণটা রঙিন করে তুলেছো তোমার মধ্যে আমার অস্তিত্ব বিরাজমান করছে। তুমি আমার কাছে #গোধূলি_রাঙা_দিগন্ত ।

__________________সমাপ্ত_________________

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে