খোলা জানালার দক্ষিণে পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
156

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_১৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

চৌধুরী বাড়িতে আনন্দের মেলা বসেছে। রিয়াদ চৌধুরীর একমাত্র বোন আজ আমেরিকা থেকে আসবে। বিয়ের দুই বছর পর সুফিয়া চৌধুরী স্বামী-সন্তান নিয়ে প্রবাসে পাড়ি জমান। দীর্ঘ কয়েক বছর তিনি দেশে আসেনি। বহু বছর পরে নিজের প্রাণ প্রিয় বোন বাসায় আসবে শুনে, চৌধুরী বাড়িতে ঈদ লেগে গেছে। সকাল থেকে রান্নার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সমস্ত বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। পরিবারের প্রতিটি মানুষের মুখশ্রীতে সুখ এসে ধরা দিলে-ও ধরা দেয়নি একটি মানুষের মুখশ্রীতে সে হলো মুনতাসিম। সে নিজের কক্ষে বসে ছিল। ভেতরটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনটা তার বাবা কি করে ভুলে গেল! নিজেকে এতটা অসহায় বোধহয় কোনোদিন লাগেনি। আঁখিযুগল অসম্ভব ভাবে রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। তখনই নিজের কক্ষে কারো উপস্থিতি অনুভব করল মুনতাসিম। সে জানে কে এসেছে তার কক্ষে। সে ছাড়া কারো সাহস হবে না। তার কক্ষে অনুমতি না নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার। রিয়াদ চৌধুরী ছেলের মাথায় হাত রাখতেই মুনতাসিম দ্রুত হাত সরিয়ে দিল। রাগান্বিত হয়ে বলল,

–ছোঁবেন না আপনি আমাকে। আপনার মতো নিকৃষ্ট মানুষ আমি দু’টো দেখিনি। কিভাবে পারলেন আজকের দিনটা ভুলে যেতে! সবাই ঠিকি বলে মা মা’রা গেলে বাপ হয়ে যায় তাওই। একটা মানুষ মা’রা গিয়েছে। সেই সাথে মানুষটার প্রতি গুরুত্ব, ভালোবাসা, মায়া, টান সবকিছুও কি উঠে গিয়েছে। মানুষটাকে আপনি ভুলেই গিয়েছেন। আপনার মতো বাবার আমার দরকার নেই। আপনি থাকুন আপনার পরিবার নিয়ে, আমি আর আসব না আপনার পরিবারের আনন্দ নষ্ট করতে। আমি আসি আমার পেশার জন্য, জনগণকে ভালো রাখার শপথ গ্রহণ করেছি। তাদের ভালো রাখার দায়িত্ব আমার। আমি নিজের দায়িত্ব থেকে সরে আসতে পারছি না বলেই বারবার এখানে আসছি।

–মুনতাসিম আমার বাবা তুমি নিজেকে শান্ত কর। তুমি ভাবছ আমি সব ভুলে গিয়েছি। আমি বদলায়নি বাবা সময় আমাকে চুপ থাকতে শিখিয়ে দিয়েছে। আমি আমার ব্যথার কথা ভেবে যদি সবার আনন্দ নষ্ট করে দেই। তাহলে মানুষ আমাকে স্বার্থপর বলে উপাধি দিবে। আমি স্বার্থপর হতে চাই না বাবা। সেজন্য নিজের ব্যক্তিগত দুঃখ গুলোকে নিজের কাছেই রাখতে চাই। সেগুলো বাহিরে প্রকাশ করে হাসি ঠাট্টার পাত্র হতে চাই না। আমি যাব তোমার মায়ের কবরের কাছে, তুমিও আমার সাথে যাবে।

–আপনার মতো মানুষের আমার মায়ের কবরের কাছে যেতে হবে না। আপনি বরঞ্চ আপনার পরিবারকে সময় দিন। যে সময়টা আমার মায়ের কবরের কাছে গিয়ে অপচয় করবেন। সেই সময়টুকু আপনার পরিবার ছেলে-মেয়েকে দিন। তাদের কাছে আপনি অনেক মহান মানুষ হয়ে উঠবেন। আমি কে আমার কাছে মহান হতে হবে। আমার মতো মা নেই। আমাকে এত প্রাধান্য দিতে হবে কেন? যার মা নেই তার কেউ নেই। আপনি একদম আমার সাথে কথা বলবেন না। কথা গুলো বলেই মুনতাসিম কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল। রিয়াদ চৌধুরী অশ্রুসিক্ত নয়নে ছেলের যাওয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছেন। নিজেকে আজকাল ভিষণ অপরাধী বলে মনে হয়। ছেলের ভালো চাইতে গিয়ে, ছেলের জীবনটা বিষাদময় করে তুলল। বুকটা হাহাকারে ভরে উঠছে। ভেতরটা তীব্র যন্ত্রনা ছটফট করছে। দ্বিতীয় বিয়ে করা টাই যেন জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বলে মনে হচ্ছে। সাহেলা প্রতিটি মুহূর্তে মুনতাসিমকে বুঝিয়ে দিয়েছে। সৎ মা কখনো আপন মা হতে পারে না। ভাই-বোনকে করেছে আলাদা। মুনতাসিমকে দিয়েছে বুক ভরা যন্ত্রনা। সেই যন্ত্রনায় মুনতাসিম প্রতিটি মুহূর্তে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।

রিয়াদ চৌধুরী মলিন মুখশ্রী করে সোফায় গিয়ে বসলো। আমান চৌধুরী এসে ভাইয়ের পাশে বসে বুকে আগলে নিলেন। ভাইটা তার ভিষণ আবেগী। সে ছোট হয়ে যতটুকু বুদ্ধি অর্জন করেছে। তার বড় ভাই হয়ে সেটুকুও অর্জন করতে পারেননি। সে কোমল কণ্ঠে বলল,

–মুনতাসিম রাগ করে বের হয়ে গেল। আজ তার ফুপি আসবে। সে কি জানে না। ভদ্রতা বজায় রাখার জন্য হলে-ও তার বাসায় থাকা উচিত ছিল।

–আজকের দিনে ছেলেটা আমার মা হারা হয়েছিল। সারাবছর তার মায়ের কবরের কাছে সময় দেই না। আজকের দিনটাই ও আশা করে। তার সাথে তার মায়ের কবরের পাশে বসে সারাদিন সময় দিব। ছেলেটাকে বোঝাতে পারিনা। ভেতরটার খবর শুধু আল্লাহই ভালো জানেন। রিয়াদ চৌধুরীর কথা স্তব্ধ হয়ে গেল আমান চৌধুরী। তার তো মনেই ছিল না। মুহুর্তের মধ্যে মনটা বিষাদে ভরে গেল। প্রতি বছর এই দিনটায় বাবা ছেলের ভিষণ মনমালিন্য তৈরি হয়। সময়ের সাথে আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। এসব দেখতে দেখতে অভস্ত্য হয়ে গিয়েছে সবাই। সাহেলাও নিজের স্বামীকে সতীনের কাছে যেতে দিবে না বলে, নানান রকমের অশান্তি তৈরি করেন। পরিবেশটা কেমন বিষাদের ছেয়ে গেল।

মায়ের কবর জিয়ারত করে মুনতাসিম নিজের বৃদ্ধাশ্রমের দিকে অগ্রসর হলো। বাসা থেকে দশ মিনিটের দুরত্বে অবস্থান করছে বৃদ্ধাশ্রমটি। সে মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন এই আশ্রমে এসে সময় কাঁটায়। ছোট ছোট বাচ্চারাও এই আশ্রমে থাকে। তারা প্রতি বছর এই দিনের জন্য অপেক্ষা করে। আজকে মুনতাসিম তাদের সময় দিবে। মুনতাসিম তাদের ভিষণ ভালোবাসার মানুষ। মুনতাসিম আসতেই আশ্রমে হৈচৈ পড়ে গেল। প্রতিটি মানুষের মুখশ্রীতে সে কি মনোমুগ্ধকর কর হাসি। এই হাসিতেই মুনতাসিমের বুকটা প্রশান্তিতে ভরে উঠে। বাচ্চারা মুনতাসিমকে ঘিরে ধরেছে। হৈ-হুল্লোড় করে পুরো আশ্রম মাতিয়ে তুলেছে। কিছু মুহূর্তের জন্য মুনতাসিমের সমস্ত দুঃখ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। বাচ্চাদের সাথে সে মিশে গেল। বাচ্চারা তাদের প্রতিভা তুলে ধরছে। মুনতাসিম সবাইকে চকলেট দিল। আজকের দিনে আশ্রমটা অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই মেতে থাকে। মুনতাসিম অদ্ভুত ভাবে অনুভব করছে। তার যখন দুঃখ হয়। তখন তার মেহেভীনের কাছে ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করে। প্রেয়সীর সাথে একান্তে কিছু সময় উপভোগ করতে ইচ্ছে করে। এত আনন্দের মাঝে মেয়েটার শূন্যতা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে। সে শুধু অবসর সময়ে মেহেভীনে কাছে যায়। কাজের ব্যস্ততা থাকলে কখনো ফোন দিয়ে খোঁজ নেয়নি। সে কি মেহেভীনকে প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। কথা গুলো ভাবতেই অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। সে তো দেখতে চেয়েছিল। তার অনুপস্থিতিতে মেহেভীন অস্থিরতা অনুভব করে কি-না। তাকে দেখার তৃষ্ণায় মেহেভীনের আঁখিযুগল ছটফট করে কি-না। তার শূন্যতা মেহেভীনকে কাবু করে কি-না। এসব পরীক্ষা করতে গিয়ে মেয়ে টাকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলছে না তো আবার! কথা গুলো ভাবতেই ভেতরটা অস্থিরতায় ছটফট করতে লাগলো। আজকে ভিষণ করে পাখি হতে ইচ্ছে করছে। দু’টো ডানা মেলে মেহেভীনের কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। মুনতাসিম আজ বেশি দেরি করল না। গাড়িতে উঠতে যাবে তখনই একজন বৃদ্ধা মহিলা আসলো। মুনতাসিমের দিকে চেয়ে ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে বলল,

–আপনি মুনতাসিম বাবা না। আপনার জন্য আমি মেলা দিন ধরে অপেক্ষা করছি। আমাগো এলাকার মেয়ররে কতবার যে কইছি। আমার বাড়িত একটা ভালো টয়লেট নাই। আমার বাড়িত একটা ভালো টয়লেট দিয়া দেন। তিনি আমার কথা শুনে না। বলে দিব বলেও দেয় না। সবাইরে দেয় শুধু আমারে দেয় না। কেন বাবা আমি মানুষ না। আমি কি তারে ভোট দেইনি। আপনার তো মেলা ক্ষমতা বাবা। আপনি একটু হেরে বইলেন তো। যাতে আমার বাড়িত একখানা টয়লেট বসায় দিয়া যায়। আপনি কইলে ঠিক শুনবে। বৃদ্ধা মায়ের কথায় মুনতাসিমের হৃদয় স্পর্শ করে গেল। মানুষ কতটা অসহায় হলে এভাবে বলে। মুনতাসিমের ভিষণ রাগও হলো। সে বৃদ্ধার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

–আপনার বাসায় কল আছে আম্মা। মুনতাসিমের মুখে আম্মা ডাক শুনে, বৃদ্ধা মহিলাটি অদ্ভুত ভাবে হাসতে শুরু করল। সে কি সুন্দর হাসি। মুনতাসিম মুগ্ধ হলো সে উত্তরের অপেক্ষা করতে লাগলো। বৃদ্ধা মহিলা মুনতাসিমের গালে হাত স্পর্শ করে নিজের হাতে চুমু খেল। কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,

–কল নাই তো বাজান। পাশের বাড়ি থেকে পানি আইনা খাই। কল দিয়ে দিলে আমার মেলা উপকার হবে। কিন্তু মেয়ের সাহেব কি আমারে এতকিছু দিবো?

–আপনি চিন্তা করবেন না আম্মা। আপনি সময় মতো সবকিছু পেয়ে যাবেন। তাইয়ান তুমি কালকের মধ্যে সবকিছু ব্যবস্থা করে দিবে। কথা গুলো বলেই বৃদ্ধার হাতে দুই হাজার দিয়ে বলল,

–এই টাকা দিয়ে আপনি ঔষধ কিনে খাবেন। আর কোনো দরকার হলে আমাকে বলবেন। আমি আমার সাধ্যমতো আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। কথা গুলো বলেই চলে গেল। বৃদ্ধা নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে অশ্রুকণা গুলো মুছে মুনতাসিমের জন্য দোয়া করতে করতে বাড়ির দিকে চলে গেল।

পশ্চিম আকাশ জানান দিচ্ছে সূর্য মামার বিদায়ের সময় হয়ে এসেছে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে মাত্র মুনতাসিম গাড়ি থেকে নামল। বাসায় না গিয়ে সোজা মাঠের দিকে চলে গেল। সে জানে প্রতিদিনের মতো আজ-ও মেহেভীন এখানে আসবে। আজকে এসে যখন তাকে দেখবে। তখন মেহেভীন কি করবে? অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে। নাকি অস্থির হয়ে জানতে চাইবে। আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন? আজকে মেহেভীন রাগ করলে, সে মেহেভীনের রাগ ভাঙাতে ভিষণ বাজে ভাবে ব্যর্থ হবে। আজকে তার হৃদয়টা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে। মুনতাসিমের ভাবনার মাঝে এক মায়াবী মুখশ্রী তার সামনে এসে স্থির হয়ে গেল। দু’জন দু’জনের দিকে নিষ্পলক চাহনিতে দৃষ্টিপাত করে আছে। মেহেভীনকে দেখা মাত্রই তার নিজেকে গভীর ভাবে অসহায় মনে হচ্ছে। একটা অসহায় মানুষ যেমন খাবার পেলে আনন্দিত হয়। মেহেভীনকে পেয়ে মুনতাসিম আবেগে উৎফুল্ল হয়ে গেল। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে উঠে এসে মেহেভীনকে আলিঙ্গন করল। প্রথম কোনো পুরুষের স্পর্শ পেয়ে বুকটা কেঁপে উঠল মেহেভীনের। অভিমানের পাল্লাকে গ্রাস করে নিল একদল ক্রোধ। সে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে মুনতাসিম সরিয়ে দিল। রাগান্বিত হয়ে বলল,

–আপনারা সব পুরুষ এমন কেন? একটু সুযোগ পেলেই ছুঁয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পুরুষ জাতির রক্তে কি লিখা আছে। নারীকে একা পেলেই ছুঁয়ে দিতে হবে। নারীকে ভালোবাসা কি আপনার মা আপনাকে শেখায় নাই। আপনার মা ও তো একজন নারী। পারবেন এভাবে আপনার মাকে ছুঁয়ে দিতে? মেহেভীনের কথায় মুনতাসিমের মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠল। পরক্ষণেই মনে হলো সে আবেগের বসে কতবড় ভুল করে ফেলছে। মেহেভীন কি তাকে ভুল বুঝল। সে তো এমনটা করতে চায়নি। আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন হয়ে আসছে। মেহেভীন বিলম্ব করল না। দ্রুত পায়ে বাসার দিকে অগ্রসর হলো। মেহেভীন যে তাকে বুঝতে পারল না। সেটা ভেবেই মুনতাসিমেট আঁখিযুগলের পাতা ভিজে আসছে। এই মেয়েটার কাছে আসলেই সে অসহায় হয়ে পড়ে। হারিয়ে যায় তার ভেতরের আত্মসম্মানবোধ বেহায়া হয়ে যায় সে। মুনতাসিম নিজের দুঃখ কষ্ট গুলোকে দূরে ঠেলে দিয়ে মেহেভীনের পেছনে ছুটল।

–আপনি আমায় ভুল বুঝছেন। আমি আসলে এমনটা করতে চাইনি। আপনি হঠাৎ করে আমার সামনে চলে আসলেন। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আপনি অনুগ্রহ করে চলে যাবেন না। আপনি একটু বসুন আপনার সাথে আমার কথা আছে।

–আমি এই রাত্রীকালে আপনার পাশে বসে আপনার খাবার হতে চাই না। আমি একটা মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলাম। কোনো নরপিশাচের সাথে না। একটা নরপিশাচের খাদ্য হবার থেকে আ’ত্ম’হ’ত্যা করা ঢের ভালো। মেহেভীনের কথা গুলো মুনতাসিমের বুকে ধা’রা’ল অস্ত্রের মতো গিয়ে বিঁধল। মুহুর্তের মধ্যে ভেতরটা রক্তাক্ত হয়ে গেল। এতটুকু ভুলের জন্য মেয়েটা তাকে এতটা জঘন্য ভাবলো। মেহেভীন ঠিকই বলেছে দোষ তার। সে কেন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। কেন সে আবেগে উৎফুল্ল হয়ে গেল। এটাই তার প্রাপ্য ছিল। সে সব দোষ নিজের কাঁধে তুলে নিবে। তবুও নিজের প্রেয়সীর এতটুকু দোষ কারো সামনে তুলে ধরবে না। করুন চোখ মেহেভীনের দিকে চেয়ে আছে মুনতাসিম। মেহেভীন মুনতাসিমকে উপেক্ষা করে চলে গেল। মুনতাসিম বুকের মধ্যে অসহনীয় যন্ত্রনা নিয়ে মেহেভীনের যাওয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। হয়তো কেউ তার আড়ালে তার জন্য অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। কিন্তু মুনতাসিম জানতেই পারল না।

চলবে…..

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

নিজের কক্ষে গম্ভীর হয়ে বসে আছেন জাফর ইকবাল। মুখশ্রীতে তার বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। পাঁচটা বছর ধরে হেরে যাবার আগুনে জ্বলে পুড়ে দগ্ধ হচ্ছেন তিনি। এবারের নির্বাচনে যে করেই হোক তাকে উত্তীর্ণ হতেই হবে। সময় হাতে বেশি নেই। সামনে নিবার্চন এবার সে কিছুতেই বাচ্চা ছেলেটার কাছে হেরে যাবে না৷ তার তিলে তিলে গড়ে তোলা সাম্রাজ্য এইটুকু বাচ্চা ছেলের হাতে চলে গেল। জনগণ তার মাঝে কি পেল? বিশ বছর ধরে সে রাজনীতির সাথে যুক্ত আছে। আর দু’দিন ধরে রাজনীতিতে এসেই ছেলেটা সবার ভিষণ প্রিয় হয়ে উঠল। একবার মনোনয়ন পেয়েই সে উত্তীর্ণ হয়ে গেল। মাঝে মাঝে মুনতাসিমের প্রতি তার ভিষণ ঈর্ষা হয়। এবার তাকে শক্ত হাতে মাঠে নামতে হবে৷ দরকার পড়লে সকলের প্রিয় মুনতাসিকে ধরণীর বুক থেকে মুছে ফেলবে। কাজটা কি এতোই সহজ হবে!

মুনতাসিমের মুখশ্রীতে বিষণ্ণতার ছাপ স্পষ্ট। ধরণীর সকল মানুষের প্রতি ভিষণ অভিযোগ জমেছে। কেন ভালোবাসে না তাকে? সে একটু অসহায়ত্ব দেখিয়েছে বলে, সবাই তাকে অসহায় মনে করবে। এক তরফা কোনো কিছুই হয় না। একটা মানুষকে সে মূল্য দিয়ে যাবে। আর বিপরীত পক্ষের মানুষটা তাকে অবহেলা করে চলে যাবে। ভালো না বাসুক মানুষ হিসেবে সন্মান টুকু তো দিতে পারে। একটা দিন সময় পেয়ে এক পলক দেখার জন্য এসেছিল সে। কাল সকালেই চলে যাবে আর আসবে না। কিন্তু মন তো আর মানে না তাই ছুটে চলে আসে। মুনতাসিম তাইয়ানকে ডেকে বলল,

–যাও আমার জন্য ঘুমের ঔষধ নিয়ে আসো।

–স্যার আপনাকে ডক্টর ঘুমের ঔষধ খেতে নিষেধ করেছে।

–আমি তোমাকে ঔষধ নিয়ে আসতে বলেছি নাকি কে কি বলে বলেছে সটা জানতে চাইছি। তাইয়ানের মস্তক নত হয়ে গেল। কণ্ঠনালি দিয়ে আর কোনো বাক্য উচ্চারিত হলো না। সে নিঃশব্দে কক্ষ ত্যাগ করে ঔষধ আনতে চলে গেল। এটা কি তার নিজের এলাকা যে গিয়ে চাইলেই ঔষধ দিয়ে দিবে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে যাচ্ছিল তাইয়ান। তখনই মেহেভীনের সাথে দেখা। মেহেভীন নিম্ন কণ্ঠে বলল,

–কোথায় যাচ্ছেন ভাইয়া?

–স্যারের জন্য ঔষধ নিয়ে আসতে।

–বন্ধু থেকে স্যার হয়ে গেল! আপনার স্যার ভাত না খেয়ে ঔষধ খাবে। মেহেভীনের কথায় নিশ্চুপ হয়ে গেল তাইয়ান। মিথ্যা কথা বলতে তার ভিষণ খারাপ লাগে। সে মাঝে মাঝে অবাক হয়। একই এলাকার মানুষ হয়ে সে কেন মুনতাসিনকে চিনে না। সবাই মুনতাসিমকে এক নামে চিনে। পথেঘাটে তার পোস্টারের ছড়াছড়ি। এই মেয়েটা সবকিছু জেনেশুনে অভিনয় করে নাকি। তবে মেয়েটা যাই করুক না কেনো মেয়েটার জন্য তার স্যার ভালো থাকে। এই কথাটা ভাবতেই বুকটা প্রশান্তিতে ভরে উঠল। অদ্ভুত ভাবে তাইয়ান হেসে মেহেভীনকে বলল,

–স্যার সারাদিন কিছু খাইনি। এখানে এসে আপনার জন্য অপেক্ষা করছিল। আপনি খারাপ ব্যবহার করার কারণে স্যার ভিষণ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ডক্টর স্যারকে ঘুমের ঔষধ খেতে নিষেধ করছে। স্যার যখনই গভীর ভাবে আঘাত হয়। তখনই ঘুমের ঔষধ সেবন করে গভীর নিদ্রায় চলে যায়। মেহেভীনের ভিষণ খারাপ লাগলো তাইয়ানের কথা শুনে। বাসায় এসে সে গভীর ভাবে অনুতপ্ত হয়েছে। মানুষটা এতদিন পর এল তা-ও বিধস্ত অবস্থা। তার উচিৎ ছিল আগে সবকিছু জানা। কিন্তু সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। কোনো পুরুষ স্পর্শ করলেই অতীতে কালো ছায়া তাকে কাবু করে ফেলে। মনের শহরে মিছিল করে বলে সব পুরুষ জাতি এক। সুযোগ পেলেই নারীকে লুফে নেওয়ার চেষ্টা করে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেহেভীন বলল,

–ঘুমের ঔষধ নিয়ে আসতে যেতে হবে না। আপনাদের বাসায় রান্না হয়েছে।

–না এসেছি সন্ধ্যা বেলায় রান্না কখন করব।

–আপনি আমার সাথে আসুন। আমি রুপাকে বলছি আপনাকে খেতে দিতে। আমি উনার জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছি।

–কিন্তু স্যার যদি রাগ করে।

–সেটা আমি বুঝে নিব। আপনার এত ভাবতে হবে না। কথা গুলো বলেই মেহেভীন নিজের বাসায় গেল। একটা প্লেটে করে খাবার নিয়ে মুনতাসিমের বাসায় গেল। মুনতাসিম বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়েছিল। মেহেভীন কম্পন মিশ্রিত হাতে মুনতাসিমের কাঁধে হাত রাখলো। মুনতাসিম হাত বাড়িয়ে বলল,

–আমার ঔষধ দাও আর এক গ্লাস পানি দেও। মেহেভীন মুনতাসিমের হাতে খাবারের প্লেটটা এগিয়ে দিতেই মুনতাসিম ভার সামলাতে না পেরে ফেলে দিতে চাইলে, মেহেভীন সাথে সাথে ধরে ফেলল। উলটো দিক হয়ে খাবারের প্লেট ধরা যায়। মুনতাসিম রাগান্বিত হয়ে উঠে বসলো। মেহেভীনকে দেখে মুনতাসিম হতভম্ব হয়ে গেল। মুহুর্তের মাঝে মুখটা গম্ভীর করে ফেলল। সে কঠিন গলায় বলল,

–আপনি এখানে কেনো এসেছেন? আপনি আপনার বাসায় ফিরে যান। বলা তো যায় না কখন কোন নরপিশাচের খাদ্য হয়ে যাবেন। একা একা একটা পুরুষের গৃহে আসতে আপনার ভয় করল না।

–খোঁচা দিচ্ছেন। তখন আমি রাগ করে ফেলছি। দু’টো মাস আপনাকে কোথায় কোথায় আমি খুঁজেছি। আমি কি মানুষ না। আমার কি কোনো মূল্য নেই। আপনি এখানে দু’দিনের জন্য আসবেন। আবার না বলে মাসের পর মাস উধাও হয়ে যাবেন। আমার চিন্তা হয় না। আমি ঠিকমতো খেতে পারি না। ঘুমোতে পারি না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। এখন এই মুহূর্তে সবগুলো খাবার শেষ করবেন। আমার না শুনলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আমি আপনার থেকে কোনো কথা শুনতে চাইছি না। চুপচাপ হাত ধুয়ে খেতে বসুন।মেহেভীনের ওপরে যতটুকু রাগ ছিল। তা মেহেভীনের আদুরে শাসনের মধ্যে দিয়ে সব হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। সে এই মেয়েটার ওপরে কিছুতেই রেগে থাকতে পারে না। এই মেয়েটা তার জন্য এতটা অস্থির হয়েছে। তাকে খুঁজেছে ভাবেই বুকটা প্রশান্তিতে ভরে উঠছে। সে মেহেভীনের হৃদয়ে শক্ত ভাবে স্থান দখল করতে পারছে। এটা ভেবেই মুনতাসিমের বুক থেকে পাথর নেমে গেল। কতদিন পর তাকে কেউ কড়া করে শাসন করল। ভালোবাসার শাসন। যা পাবার জন্য মুনতাসিম প্রতিনিয়ত আকুল হয়ে থাকে। সে মেহেভীনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল,

–আর কখনো এমন করব না৷ আমি কিন্তু কালেই চলে যাব। আমার অনেক কাজ আছে। আজ আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। আব্বুর সাথে সকালে ঝগড়া করে বের হয়ে ছিলাম। কিছু সময় মায়ের কবর স্থানে আর কিছু সময় আশ্রমে পার করেছি। যতটুকু সময় ছিল নিজের কথা ভাবিনি। আপনার জন্য ভেতরটা ভিষণ পুড়ছিল। তাই ছুটে এলাম আপনার কাছে। আমার মায়ের পরে পৃথিবীতে আপনি-ই একমাত্র নারী যার কাছে আমার শান্তি মিলে। মুনতাসিম হাত ধুয়ে এসে বিনাবাক্যে খেতে বসলো। সারাদিন পেটে কিছু পরেনি। চুপচাপ খেতে লাগলো। মেহেভীন মুনতাসিমের পাশে বসে আছে। মেহেভীনের অভিমানী মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে মুনতাসিমের ভিষণ মায়া হলো। ভেতরে অসহনীয় যন্ত্রনা করছে। আজকের পর থেকে এই মেয়ে টাকে সে কিছুতেই কষ্ট দিবে না৷ খাওয়া শেষ হয়ে গেল মেহেভীন প্লেট গুলো নিয়ে যেতে যেতে বলল,

–তৈরি হয়ে নিচে আসুন আপনার জন্য শাস্তি অপেক্ষা করছে। কথা গুলো বলেই মেহেভীন চলে গেল। মুনতাসিমের শরীর ভিষণ ক্লান্ত লাগছে। সে আরাম করতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রেয়সীর আবদারে সব আরাম চুকে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। মেহেভীন কালো রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে। আচমকা কাজল দিয়ে আঁখিযুগল রাঙাতে ইচ্ছে করল। কাজল প্রতিটি মেয়ের আঁখির সুন্দর্য অদ্ভুত ভাবে বাড়িয়ে তুলে। কাজল কালো আঁখিযুগলের মায়ায় মেহেভীন নিজেই মুগ্ধ হয়েছে শতবার। সে সাজতে খুব একটা পছন্দ করে না। কালো রঙের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ছুটল নিচে। মেহেভীন গাড়ি বের করতে বলেছিল। বাহিরে এসে দেখল মুনতাসিম আগেই গাড়িতে উঠে বসে আছে। মেহেভীন গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি চলার সাথে সাথে আগে পিছে আরো কতগুলো গাড়ি তাদের গাড়িটাকে আড়াল করে রাখলো। মেহেভীন সেগুলোকে দেখেও আড়াল করে গেল। মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলল,

–আজকে আমাকে আপনি পুরো শহর ঘুরাবেন। ফুল কিনে দিবেন। কাঁচের চুড়ি কিনে দিবেন। পাশে বসে ফুচকা খাওয়াবেন। ফুটপাতের রাস্তা ধরে আমার সাথে কিছুক্ষণ হাঁটবেন। আমার কথা মতো না চললে কালকে আপনাকে যেতে দিব না। মুনতাসিম মুগ্ধ হলো মেহেভীনের প্রতি, মেয়েটা ভিষণ রাগী। কিন্তু তার চাহিদা খুবই স্বল্প। এমন মন মানসিকতার মেয়ে সে খুব কমই দেখেছে। কাজল কালো আঁখিযুগলের দিকে তাকিয়ে হৃদয়ের ঘরে উথাল পাথাল শুরু হয়ে গিয়েছে। বিষন্নতাকে গ্রাস করে নিয়েছে এক টুকরো সুখ। অনুভূতিরা আনন্দে মেতে উঠেছে। চারদিকে সুখ সুখ আমেজ লেগে গিয়েছে। না চাইতেও বেহায়া আঁখিযুগল আঁড়চোখে প্রেয়সীকে দেখে যাচ্ছে। গাড়ি এসে থামলো নিজ গন্তব্যে মেহেভীন গাড়ি থেকে নামলো। মুক্ত পাখি ন্যায় এদিক-সেদিক ছুটছে। মেহেভীন ফুলের দোকানের সামনে গেল। মেহেভীন বলার আগেই মুনতাসিম বলল,

–একটা মাথার ক্রাউন দিবেন। একটা গাজরা দিবেন। আর চারটা গোলাপ ফুল আর দু’টো রজনীগন্ধা ফুল দিবেন। ফুল মানেই নারীর ভালোবাসা। একটা নারী নিজেকে যতটা ভালোবাসে ঠিক ততটাই ফুলকে ভালোবাসে। ফুলের দোকানে আসতেই মেহেভীনের আঁখিযুগল চকমক করছে। তা চোখ এড়ায়নি মুনতাসিমের এত অশান্তির মাঝে-ও সে ভিষণ শান্তি অনুভব করছে। মন বারবার বলছে যে করেই হোক এই মেয়েকে তার লাগবে। মুনতাসিম গাজরা হাতে নিয়ে মেহেভীনের দিকে এগিয়ে দিল। মেহেভীন সেটা না নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল। গাজরাটা সে মুনতাসিমের হাতে পড়তে চায়। সন্ধ্যার কথা স্মরন হতেই মুনতাসিমের ভেতরে জড়তা কাজ করছে। মুনতাসিমকে চিন্তিত দেখে সে অভয় দিল। মুনতাসিম জড়তা নিয়েই মেহেভীনকে গাজরা পড়িয়ে দিল। একটু পরে ক্রাউন তৈরি হয়ে গেলে সেটাও মুনতাসিমের হাতেই পড়লো৷ মুনতাসিম গোলাপ আর রজনীগন্ধা মেহেভীনের হাতে দিয়ে টাকা পরিশোধ করে দিল। এই সুন্দর মুহুর্তকে তাইয়ান আড়াল থেকে ক্যামেরা বন্দী করে নিল। দু’জনের কেউ টেরই পেল না।

দু’জন পাশপাশি হাঁটছে সামনেই চুড়ির দোকান। চুড়ির দোকানে গিয়ে দু’জনের ঝগড়া লেগে গেল। মেহেভীনের প্রিয় রঙ কালো। আর মুনতাসিমের প্রিয় রঙ শুভ্র। সে কালো রঙের চুড়ি নিতে চায়। আর মুনতাসিম তাকে শুভ্র রঙের চুড়ি কিনে দিতে চায়। মেহেভীন রাগান্বিত হয়ে বলল,

–আপনার প্রিয় রঙ কি?

–শুভ্র।

–সেজন্য সব সময় সাদা গরুর মতো শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পড়ে থাকেন।

–আপনার প্রিয় রঙ কি?

–কালো।

–সেজন্য সব সময় কালো কালো কথা বলেন। আমি বলেছি আপনি শুভ্র রঙের চুড়ি পড়বেন। তারমানে শুভ্র রঙের চুড়ি আপনাকে পড়তেই হবে।

–আমার কালো পছন্দ আমি কালোই পড়ব। অবশেষে দু’জনের পছন্দ মতো সাদা-কালো মিশিয়ে চুড়ি পড়লো মেহেভীন। দু’জনের মুখশ্রীতে স্নিগ্ধ হাসি পাশাপাশি হাঁটছে দু’জন। সামনে ফুচকার দোকান নজরে আসতেই মুনতাসিম মেহেভীনকে নিয়ে সেখানে গেল। মুনতাসিমের গুরুত্বপূর্ণ ফোন আসায় মেহেভীনকে বসিয়ে দিয়ে একটু দূর গেল মুনতাসিম। ফোনের ওপাশে থেকে বিপদের সংকেত দিয়ে গেল। যে করেই হোক পরিবারকে রক্ষা করতে হবে। সে থাকতে কারো সাহস হবে না তার পরিবারের দিকে নজর দেওয়ার। তবুও সাবধানের মা’র নেই। সে ফোন রেখে মেহেভীনের কাছে আসলো। মনটা মুহুর্তের মধ্যে বিষাদে পরিণত হয়ে গেল। মলিন মুখশ্রী করে চুপ করে মেহেভীনের পাশে বসলো। মেহেভীন একটা ফুচকা মুনতাসিমের দিকে এগিয়ে দিল।

–এসব আমি খাই না আপনি খান। আমাকে বাসায় ফিরতে হবে। আপনাকে বাসায় দিয়ে আমি চলে যাব। মুনতাসিমের যাওয়ার কথা শুনেই মেহেভীনের মন খারাপ হয়ে গেল। ভেতরটা শূন্যতায় খাঁ খাঁ করে উঠল। গলা দিয়ে খাবার নামচে চাইছে না। সে খাবে না বলে ফুচকা রেখে উঠে দাঁড়ালো। মেহেভীনের মন খারাপ হয়ে যেতে দেখে, ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। সে মেহেভীনকে বসতে বলল। একটা ফুচকা নিয়ে খেল সে। তবুও মেহেভীনের মন ঠিল হলো না। বাধ্য হয়ে মেহেভীনের সাথে হাঁটা ধরলো। হঠাৎ করে মেহেভীনের চরণ দু’টি থেমে গেল। আশেপাশে এত মানুষ থাকা সত্বেও সে ভয়ে কাবু হয়ে আসছে। শরীর থরথর করে কাঁপছে। সে ভয় পেতে চাইছে না। মনে সাহস নিয়ে আসতে চাইছে। তবুও ভেতরটা তার সাথে বেইমানি করছে। ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়ালো সে। পুরোনো কালো অতীতকে সে আঁখিযুগলের সামনে দেখতে পাচ্ছে। মেহেভীনকে ভয় পেতে দেখে মনতাসিম বলল,

–কি হয়েছে আপনার এমন করছেন কেন?

–ও আমাকে মেরে ফেলবে। চলুন এখানে থেকে সে দেখার আগেই আড়ালে চলে যাই। মেহেভীনের বোকা বোকা কথায় হতভম্ব হয়ে গেল মুনতাসিম। যে মেয়েটা বুকে এতটা সাহস নিয়ে চলাফেরা করে। সেই মেয়েটা ভয় পাচ্ছে! কিসের জন্য সে এতটা ভয় পাচ্ছে। প্রতিটি কঠিন মানুষেরও একটি করে দুর্বল জায়গা থাকে। তবে কি মেহেভীনেরও কোনো গল্প লুকিয়ে আছে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করল মুনতাসিম। মেয়েটা ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে। মেহেভীনের এমন অবস্থা দেখে ভেতরটা অস্থির হয়ে উঠেছে মুনতাসিমের। সে মেহেভীনকে নিয়ে বাসার দিকে অগ্রসর হলো।

চলবে…..

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_১৮
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

মন্ত্রীসভা থেকে বের হতেই কনফারেন্স রুমের অন্য জেলার এক নেতা মুনতাসিমের দিকে এগিয়ে এল। মুখশ্রীতে তার বিশ্রী হাসি মুনতাসিম তাকে ভালোভাবেই চিনে। জাফর ইকবালের সাথে তার বেশ সখ্যতা রয়েছে। মাহতাব উদ্দিন তাকে খোঁচা মা’রা’র জন্য আসছে। সে সেটা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছে। বিরক্ততে মুখশ্রী কুঁচকে এল মুনতাসিমের। সে মাহতাব উদ্দিনকে দেখেও না দেখার ভান করে, সামনের দিকে অগ্রসর হলে, মাহতাব উদ্দিন রসালো কণ্ঠে বলল,

–ভালো আছো মুনতাসিম।

–আমার ভালো থাকা বুঝি আপনার সহ্য হচ্ছে না।

–একদম ত্যাড়া কথা বলবে না। বেশি বাড় বেড়ো না অকালে ঝরে যাবে। আমি তোমাকে ভালোর জন্য একটা পরামর্শ দিচ্ছি। ছোট মানুষ না বুঝেই রাজনীতিতে চলে আসছো। হুজুগে বাঙালি না বুঝেই তোমাকে আপন করে নিল। জাফর সাহেব দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সাথে যুক্ত আছেন। তুমি তার ক্ষমতার সাথে পেরে উঠবে না। তাই বলছি আগেই রাজনীতি থেকে সরে যাও। চোয়াল শক্ত হয়ে এল মুনতাসিমের আশেপাশে নানান মানুষের আনাগোনা। শান্ত মস্তিষ্কের ছেলে সে। মুনতাসিম মাহতাব উদ্দিনের কানে কানে ফিসফিস করে বলল,

–অন্যের দালালি কম করে করবেন। পরে দেখা গেল আপনার দালালি আছে। কিন্তু যে কাজ করে দালানকোঠা গড়েছেন। সেটাই নেই। আপনার মতো ফ্রীতে চা’ম’চা আর কোথায় পাওয়া যায়। আমার জন্য একটা জোগাড় করে দিবেন। আমি জাফর ইকবালের থেকে বেশি বকশিস দিব। মুনতাসিমের কথায় জ্বলে উঠল মাহতাব উদ্দিন। রক্ত চক্ষু নিয়ে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করল। চোয়াল শক্ত করে বলল,

–তুমি কি আমাকে অপমান করছ মুনতাসিম।

–আপনার আবার অপমানবোধ আছে! আমি তো জানি আপনি মেরুদন্ডহীন প্রাণী।

–নিজের সীমা লঙ্ঘন কর না মুনতাসিম।

–আপনি-ও নিজের অবস্থান ভুলে যাবেন না। আপনি কার সাথে কথা বলছেন৷ একটা কথা সব সময় মস্তকে রাখবেন। আপনার মতো ফ্রী তে পাওয়া দালালের কথার ধার আমি মুনতাসিম ধারিনা। কথা গুলো বলেই মুনতাসিম বিলম্ব করল না দ্রত পায়ে স্থান ত্যাগ করল। মাহতাব উদ্দিন অপমানে চুপসে গেলেন। থমথমে মুখশ্রী করে জাফর ইকবালকে ফোন দিলেন। দু’জনের কথোপকথন শেষ করে রহস্যময় হাসি হাসলেন।

নিজের কক্ষে এসে ফ্রেশ হতে গিয়েছিল মুনতাসিম। কাল থেকে দু’টো চোখের পাতা এক হয়নি। আজকে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাবে। ফ্রেশ হয়ে এসে লাইট অফ করে দিল। পুরো কক্ষ জুড়ে মুহুর্তের মধ্যে আঁধারে ছেয়ে গেল। ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই দরজায় টোকা পড়লো। মুনতাসিম বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে নিজের বাবাকে দেখতে পেল।

–আমি তোমার বাবা এটা নিশ্চই ভুলে যাবে না। আমি তোমার জন্য নিজের হাতে তোমার পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়েছি। একদম গরম গরম সাদা ভাত আর গরুর মাংস। এত স্বাদ হয়েছে তোমাকে না দিয়েই সব খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। তুমি খাবে নাকি আমি নিয়ে চলে যাব। বাবার এই ভালোবাসার কাছেই সে কাবু হয়ে যায়। বাহিরে যতই কঠিন ভাব দেখাক ভেতরটা তার কুসুমের ন্যায় কোমল। সে মুখশ্রী গম্ভীর করে বিছানায় গিয়ে বসলো। মুনতাসিমের বাবা হেসে নিজ হাতে ছেলের সামনে খাবার ধরলো। নিজের পছন্দের খাবার সামনে থাকলে রাগ করে বসে থাকা যায়। মুনতাসিমও রাগ করে থাকতে পারলো না। টুপ করে খাওয়ার গুলো মুখে তুলে নিল। মা ম’রা ছেলে টাকে একটু বেশিই ভালোবাসেন তিনি। ছেলের রাগ, অভিমান, অভিযোগ সবকিছু সম্পর্কে সে অবগত। সে এটাও জানে ছেলে তার বাবার ওপরে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারবে না। জিতে যাবে বাবার ভালোবাসা। হেরে যাবে ছেলের রাগ কথা গুলো ভাবতেই রিয়াদ চৌধুরী হালকা হাসলেন।

জাফর ইকবাল অন্ধকার কক্ষে বসে প্রহর গুনছিলেন। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একটি মেয়ে আসলো তার কক্ষে। মেয়েটিকে দেখে বিস্ময়ে তার আঁখিযুগল বেড়িয়ে আসার উপক্রম। তার কল্পনার বাহিরে ছিল। এই রমণী তার কাছে আসতে পারে। সুন্দরী রমণী এসে জাফর ইকবালের সামনে বসে বলল,

–পয়তাল্লিশটা মেয়ে তুলেছেন পাচারের জন্য খবরটা কি মুনতাসিম পর্যন্ত পৌঁছে দিব। নাকি আমার কথা মতো কাজ করবেন?

–মুনতাসিমের সাথে রাজনীতি নিয়ে আমার শত্রুতা। কিন্তু মুনতাসিমের সাথে তোমার শত্রুতা কিসের!

–এত অবাক হবার কিছু নেই। আপনার থেকে সাহায্য চাইতে এসেছি। আমাকে সাহায্য না করলে আপনার খবর কালকে প্রতিটি টিভি চ্যানেলের হেড লাইন হবে। তিনবার জয়যুক্ত মন্ত্রী নারী পাচারকারীর সাথে যুক্ত আছেন। পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে তদন্তের পরে ফের জানা যাবে। তার সব অপকর্মের কথা। চারদিকে জনগন আপনাকে ছি ছি করবে। ঘৃণায় আপনার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিবে। একবারেই রাজনীতিতে মুনতাসিমের জায়গা শক্তপোক্ত হয়ে গিয়েছে। সবার নয়নের মনি মুনতাসিম। এসব ঘটনা বাহিরে লিক হলে, আপনাকে ভালোবাসার যে দু’চার জন ছিল। তারাও হাওয়ার সাথে মিলিয়ে যাবে। জাফর ইকবাল রক্তিম চোখে রমণীর দিকে দৃষ্টিপাত করল। এতটুকু মেয়ের এতবড় সাহস তাকে হু’ম’কি দিচ্ছে! সে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তুমি জানো আমি কে? আমি চাইলে তোমার কি করতে পারি? এই কে কোথায় আছিস। এই মেয়ে টাকে মে’রে গুম করে দে। একটা পাখিও যেন টের না পায়।

–আপনি যা বলছেন ভেবে বলছেন তো জাফর সাহেব? আপনি এখানে আমাকে মারবেন। আর আমার লোক আপনাকে এত সহজে ছেড়ে দিবে। এত কাঁচা কাজ করার মতো মেয়ে আমি না। আপনি আপনার কর্ম ফলের জন্য প্রস্তুত হন। এবার আপনি আমাকে মা’র’তে পারেন। রমণীর কথায় ভয়ে কাবু হয়ে গেল জাফর ইকবাল। ললাটে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা তৈরি হলো। মেয়েটাকে সে যতটা সহজ ভেবেছিল। সে ততটা সহজ নয় আটঘাট বেঁধেই ময়দানে নেমেছে। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–কি চাই তোমার?

–মুনতাসিমের মৃ’ত্যু।

–সেটা আমিও চাই। তোমার কোনো ধারনা আছে। এই কয়েক বছরে আমি কম চেষ্টা করিনি। একজন মন্ত্রীকে খু’ন করা সহজ কথা না। তুমি তো তার কাছের লোক তুমি কেন মা’র’ছো না?

–যদি মা’র’তে পারতাম তাহলে আপনার মতো অপদার্থের কাছে আসতাম না। জাফর ইকবাল রাগান্বিত হয়ে রমণীর গালে প্রহার করতে যাবে। তখনই রমণী তার হাত ধরে ফেলে। আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করে। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–সাবধান ভুলেও এই কাজ করবেন না। আপনার হাত কে’টে টু’ক’রো টু’ক’রো করে ফেলব। আপনার মুনতাসিমের সম্পর্কে যা যা তথ্য লাগবে। আমি আপনাকে সব রকম তথ্য দিব। আপনি শুধু মুনতাসিম কে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিন৷ কথা গুলো বলেই বের হয়ে গেল রমণী। জাফর ইকবাল ক্রোধিত দৃষ্টিতে রমণীর দিকে চেয়ে আছে। পুরোনো ঝামেলার শেষ নেই। আবার নতুন করে ঝামেলা এসে ললাটে জুটলো।

সারাদিন পরিশ্রম করে ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে বাসায় ফিরল মেহেভীন। এসেই খোলা জানালার দক্ষিণে দৃষ্টিপাত করল। হঠাৎ করে যদি মানুষটার দেখা পায়। সে জানে মানুষটার দেখা পাবে না। তবুও তার নিয়ম করে আসতে বিরক্ত লাগে না। মানুষটা তাকে বলেই গিয়েছে। তবুও মানুষটার শূন্যতা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। কিছুক্ষণ নিরব আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে রাখলো। ফ্রেশ হয়ে ফোন নিয়ে বসেছিল। এমন সময় দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। রুপা কফি তৈরি করছিল। বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে একটা সুদর্শন যুবককে দেখে কিন্তু বিস্মিত হলো। সে শান্ত কণ্ঠে বলল,

–কাকে চাই?

–মেহেভীন বাসায় আছে?

–জি আছে।

–একটু ডেকে দিবেন। বলবেন তার ছোট বেলার বন্ধু এসেছে। রুপা আর কথা বাড়ালো না। মেহেভীনের কক্ষে এসে মেহেভীনকে জানালো তার বন্ধু এসেছে। কথা শুনেই মেহেভীনের ভ্রুযুগল কুঁচকে এল। তার ছোট বেলার কোনো বন্ধু নেই। তবে কে এল? মেহেভীন উঠে ড্রয়িং রুমে আসতেই দুপা পিছিয়ে গেল। পুরো শরীর কাঁপছে। সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসছে। মেহেভীন রুপাকে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–রুপা তোকে কতবার নিষেধ করেছি। তুই আমাকে না বলে দরজা খুলবি না। যাকে তাকে বাসার মধ্যে প্রবেশ করতে দিয়েছিস কেন? তোকে আর কিভাবে বোঝালে বুঝবি। সব মানুষ আমাদের ভালোর জন্য আসে না৷ কিছু কিছু মানুষ বিকৃত মন মানসিকতা নিয়ে আসে। যার পরিচয় সে তার আচরনের মাধ্যমে প্রকাশ করে।

–আমার তোর সাথে কথা আছে মেহেভীন। জারিফের মুখশ্রীতে নিজের নাম উচ্চারিত হতেই মেহেভীনের পুরো শরীর ঘৃণায় রি রি করে উঠল। সে রক্তিম চোখে জারিফের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। বজ্র কণ্ঠে বলল,

–তুই এখনই আমার বাসা থেকে বেরে হয়ে যা। আমার সাথে অসভ্যতা করার চেষ্টা করলে ফলাফল ভালো হবে না। আমাকে তুই আগের বোকা মেহেভীন ভাবিস না। আগুন নিয়ে খেলতে আসিস না। সেই আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবি।

–তোর জ্বালিয়ে দেওয়া আগুনে আমি প্রতিটি মুহুর্ত জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছি। আমাকে গ্রহণ করে আমার পিপাসিত হৃদয়কে শীতল করে দে অনুগ্রহ করে। তোকে পাবার তৃষ্ণায় ক্ষ্যা’পা কুকুর হয়ে আছি। ভালোবেসে কাছে টানতেও জানি আবার ভালো না বাসলে জোর করে টেনে ছিঁ’ড়ে খেতেও জানি। ঘৃণায় মেহেভীনের সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলে উঠল। সে নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে জারিফের গালে প্রহার করল। আকষ্মিক ঘটনায় জারিফ বিস্ময় নয়নে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। আজকে নতুন মেহেভীনের সাথে পরিচিত হলো সে। নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করে আদুরে ভাবে মেহেভীনের দুই গাল স্পর্শ করল। জারিফের স্পর্শ মেহেভীনের কাছে বিষাক্ত লাগলো। সে ধৈর্যের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে জারিফের মুখশ্রীতে এক দোলা থু’থু ছু’ড়ে মা’র’লো। জারিফ একহাতে নিজের মুখশ্রী মুছে নিল। আরেক হাতে মেহেভীনের দুই গাল শক্ত করে চেপে ধরলো। মেহেভীন নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। পুরুষ মানুষের শক্তির সাথে পেরে ওঠা এতই সহজ! চোয়াল শক্ত করে বলল,

–ভালোবেসে বুকে আগলে নিতে চেয়েছিলাম। আমার ভালোবাসা মূল্য দিলি না। তোকে পাবার আশায় নিজেকে কতটা পরিবর্তন করেছি। সেটা তোর আঁখিযুগলে ধরা দিল না। কয়েকবছর আগে একটা ভুল করেছি। সেটা ঠিকই ধরে বসে আছিস। আমাকে এতটা অবহেলা করিস না মেহেভীন। আমার খারাপ রুপ সহ্য করতে পারবি না। বাঁচতে দিব না তোকে। তোকে খু’ন করার অপরাধে যদি আমার ফাঁ’সিও হয়। তবে আমি হাসি মুখে ফাঁ’সি’র দড়িতে ঝুলে যাব। যে ধরণীতে আমি থাকব না। সেই ধরণীর বুকে তুইও থাকতে পারবি না। তোর অস্তিত্ব শেষ করেই আমার অস্তিত্ব বিলীন হবে। এটা সব সময় মনে রাখিস। বি’ষে’র চেয়েও বেশি বিষাক্ত লাগছে জারিফের ছোঁয়া। সে সহ্য করতে পারছে না দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। আশেপাশে হাতরে কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। মেহেভীনকে অবাক করে দিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বসলো রুপা। একটা ভারি ফুলদানি দিয়ে জারিফের মাথায় প্রহার করল। জারিফ ব্যথায় কুঁকড়ে গেল। রুপা দৌড়ে এসে মেহেভীনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। মেহেভীন রুপাকে শান্তনা দিতে বলল,

–কিছু হয়নি ভয় পাস না। ঠিক এভাবেই নিজেকে রক্ষা করবি। ফোনটা নিয়ে আয়। ওর মতো জা’নো’য়া’র’কে কিভাবে শায়েস্তা করতে হয়। সেটা আমার ভালো মতোই জানা আছে। কথা গুলো বলেই জারিফের বুক বরাবর লা’থি মা’র’ল। জারিফ ব্যথা কাতর দৃষ্টিতে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করল। সে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে সবকিছু ধংস করে দিতো। তা জারিফের রক্তাক্ত আঁখিযুগল বলে দিচ্ছে। একটু পরে মেহেভীনের গার্ড আসলে মেহেভীন রাগান্বিত হয়ে বলল,

–এই জা’নো’য়া’র টার এমন অবস্থা করবে। যেন প্রতিটি মানুষের রুহু কেঁপে উঠে। কোনো পুরুষ নারী জাতিকে নোংরা ভাবে স্পর্শ করার আগে একবার অন্তত ভাবে। দরকার পড়লে ওর মতো জা’নো’য়া’র’কে কে’টে কু’টি কু’টি করে রাস্তার কুকুরকে খাওয়াবে। একে আমার সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যাও। না হলে তাজাই পুঁ’তে ফেলব তাকে। ক্রোধে সমস্ত শরীর কাঁপছে মেহেভীনের। অদ্ভুত ভাবে সমস্ত শক্তি এসে তার শরীরে ভর করছে। সে নিজেকে দমিয়ে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। জারিফকে খু’কে মনের আগুন নেভাতে ইচ্ছে করছে।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে