#কে_বাঁশি_বাজায়_রে
#পর্ব_০৪
#নুর_নবী_হাসান_অধির
গ্রাম পঞ্চায়েত বাড়ির বউ হতে চলছে পরী৷ সারা গ্রাম জুড়ে পরীর কথা লটে যাচ্ছে৷ বিয়ের বাকী মাত্র একদিন৷ সমস্ত গ্রাম জুড়ে এলাহি আয়োজন। শহর থেকে রাজকীয় পালকি ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে। আসিফের জন্য ঘোড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আসিফ ঘোড়ার পিঠে চড়ে বিয়ে করতে যাবে৷
পলক হোসাইন পা স্থির রাখার সুযোগ পাচ্ছে না৷ মেয়ের বিয়ের জন্য দৌড়ে দৌড়ে কাজ করছে৷ রমরমা পরিবেশ। বাড়িতে অনেক লোকের আগমন। পরী মাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে৷ ভেজা গলায় বলল,
“আমি কিছুতেই আসিফকে বিয়ে করব না৷ আসিফের মতো খারাপ ছেলের সাথে সারাজীবন সংসার করতে পারব না৷ সেখানে কিছুতেই সুখী হতে পারব না৷ আসিফ এক নারীতে আসক্ত নয়৷ আমার টাকা পয়সা চাইনা৷ যে পুরুষ এক নারীতে আসক্ত সেই পুরুষকে ভালোবাসতে চাই৷”
মেয়ের পিঠে আলতো করে হাত রেখে বলল,
“চিন্তার কোন কারণ নেই৷ আমাদের কাছে পুরো দিনটাই আছে৷ আল্লাহর নীলা খেলা কেউ বুঝতে পারে না! কে বলতে পারে কাল সূর্যোদয় আসিফের নসিবে নেই?”
পরী চকিত স্বরে বলল,
“মা, তোমার কথার মাঝে কেমন জানি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি৷ তুমি কি করতে চাও৷ একবার মনে হয় বিয়েটা হবে৷ আরেকবার মনে হয় বিয়েটা হবে না৷
“সময়ের হাতে সবকিছু ছেড়ে দে৷ সময় সবকিছু মানুষকে ফিরিয়ে দিবে৷ আমার কানে এখনও পারুলের কন্ঠ ভেসে আসে৷ আমি কাউকে ছাড়ব না৷”
বলতে বলতে চোখ দু’টো ভেজে উঠল৷ পরীর চোখের জল টলমল করছে৷ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলল,
“আপু আমাদের মাঝে থাকতে আমরা কতই না সুখে ছিলাম৷ মাঝ রাতে মাঝে মধ্যে নৌকা নিয়ে দক্ষিণ দিকে ছুঁড়ে চলতাম৷ নদীর বয়ে চলা পানি দেখতাম৷ এখন সবকিছু স্মৃতি হয়ে রবে৷ আমাদের মন থেকে ভালোবাসা নামক শব্দটির পরিসমাপ্তি ঘটেছে৷”
“পারুলের জন্য মন খারাপ করবি না৷ আল্লাহর কাছে পারুলের জন্য দোয়া কর৷ পরকালে পারুল যেন ভালো থাকে৷ মনে মনে পণ নে, পারুলের এমন অবস্থার পিছনে যারা আছে তাদের ছেড়ে কথা বলবি না৷”
___________
রাতের খাবার শেষ করে মা মেয়ে চুপিসারে বেরিয়ে পড়ে৷ প্রকৃতি আজ নৌকা ভবনে তাদের সঙ্গী হচ্ছে না৷ সন্ধ্যার দিকে চাঁদের দেখা পেলেও রাতে মেঘমালার সাথে মিশে গেছে। নৌকার বৈঠা নিয়ে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে নদীর মাঝে আসল৷ নৌকা চলল আইয়ুব আলী বাড়ির দিকে৷ প্রতিদিন দক্ষিণ দিকে নৌকা নিয়ে ঘুরতে যেত৷ সেদিকে নদীর স্রোতে যাওয়া যায়৷ নদীর প্রসস্থ বেশি৷ আজ স্রোতের বিপরীত দিকে যাচ্ছে৷ কৌতুহল নিয়ে পরী প্রশ্ন করল,
“মা, আমরা তো এদিকে কোনদিন যাইনি৷ আমরা সব সময় দক্ষিণপাড়ার দিকে যেতাম৷”
“সময়ের সাথে সাথে সবার চাওয়া পাওয়া ভিন্ন হয়৷ আজ তোকে বিশেষ দু’জন মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব৷”
রাতের আঁধারে মা মেয়ের মুখমন্ডল স্পষ্ট দেখা না গেলেও পরীর মুখে ভয়ের ছাঁপ বুঝা যাচ্ছে৷ চকিত হয়ে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
“কে আসবে আমাদের সাথে দেখা করতে? প্রতিটি মানুষ এখন ঘুমের দেশে।”
“আজ তোর জীবনের পরীক্ষা হবে৷ যেই আসুক তোকে পরীক্ষা দিতেই হবে৷ এটা তোর জীবনের পরীক্ষা। তুমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে আসিফকে তোমার বিয়ে করতে হবে৷”
আয়েশা বেগমের কথা শুনে পরীর মুখ শুকিয়ে যায়৷ কি বলবে বুঝতে পারছে না? মনের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করে যাচ্ছে৷ পরী ভীতু কন্ঠে বলল,
“চরিত্রহীন ছেলে কোনদিন বিয়ে করব না৷ প্রয়োজন পড়লে নিজেকে শেষ করে দিব৷ তবুও আসিফকে বিয়ে করব না৷”
নৌকার গতি কমিয়ে বলল,
“নিজেকে নয়৷ অন্যকে শেষ করতে হবে৷ পারবি তুই নিজেকে বাঁচানোর জন্য অন্যকে হত্যা করতে! পারবি কি কাউকে খুন করতে৷ পারবি কি হাতে অস্ত্র তুলে নিতে?”
পরীর হাত পায়ে কম্পন শুরু হয়েছে রীতিমতো৷ ভীতু মন পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করতে পারছে না৷ কি বলবে বুঝতে পারছে না? আয়েশা বেগম লন্ঠনের প্রতীপ তুলে লন্ঠনের আলো বাড়িয়ে দিল৷ নৌকার পাঠা থেকে বের করল দুইটা রামদা৷ দু’টো হাতে নিয়ে বললেন,
“তুই যদি কাউকে খুন করতে না পারিস আজ আমি নিজেকে শেষ করে দিব৷ কোনদিন মায়ের মুখ দেখতে পারবি না৷ মা নামক ছায়া তোর জীবনে থাকবে না৷ এখনই নিজেকে শেষ করে দিব৷”
রামদা আয়েশা বেগম নিজের গলার দিকে নিয়ে যেতেই পরী চিৎকার করে বলল,
“আমি তোমার জন্য সবকিছু করতে পারি৷ একটা কেন হাজারটা খু’ন করতে পারি।”
গম্ভীর স্বরে বলেন,
“চোখের জল মুছে ফেল৷ সময় আসন্ন। এখনই তোর পরীক্ষা শুরু হবে৷ মনে ভয় থাকলে আমাকে চিরদিনের জন্য হারাবি৷”
পরী হাতের পিছনের অংশ দিয়ে চোখের পানি মুছল৷ মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না৷ কখনও মা’কে এমন নিষ্ঠুর হতে দেখেনি৷ কাউকে মা’রার জন্য উৎসাহিত করবে। চোখে মুখে প্রতিশোধের আগুন৷ কিছুক্ষণের মাঝে নৌকা ঘাটে থামল৷ আসিফ এবং তুহিন নৌকায় উঠল৷ তাদের দেখে পরী রীতিমতো অবাক৷ মনে পড়ল দুপুরের কথা৷ ‘আসিফের নসিবে সূর্যোদয় না থাকে৷’ মনে পড়তে সমস্ত শরীর শিহরিত হয়ে মনের অজান্তেঔ ঝাঁকুনি দিল৷ আয়েশা বেগম স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“তোমরা এখানে এসেছো কেউ জানে না? কেউ জানলে আমি কাল বিয়ে ভেঙে দিব৷”
গোপনে তুহিনের সাথে আয়েশা বেগমের কথা হয়৷ তিনি তুহিনকে বলেন,
“পরীকে তোমার সাথে বিয়ে দিব৷ তার বিনিময়ে আসিফকে এক জায়গায় বন্ধি করে রেখে দিব৷ বিয়ের পর আমরা তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসব৷” বোকা তুহিন আয়েশা বেগমের কথায় ভুলে যায়৷ অবশ্য পরী দেখতে শুনতে বাবার মতোন৷ গায়ের রং উজ্জল ফর্সা৷ সমাজে ফর্সা চেহারার কদর বেশি৷ তুহিন বলল,
“কেউ জানে না৷ সবাই ঘুমিয়ে পড়েছেন৷ কবিরাজের কাছ থেকে ঘুমের ওষুধ নিয়ে গেছিলাম৷ তরকারির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলাম। খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ঘুমিয়ে পড়েছে৷ আমরা দু’জন সে খাবার খাইনি৷”
আসিফ পরীর দিকে তাকাচ্ছে আর মুচকি হাসি দিচ্ছে৷ পরী অনমনে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। সবকিছু লক্ষ্য করল আয়েশা বেগম৷ আসিফের চাহনি খুবই বাজে৷ মুচকি হাসির সাথে জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছে৷ নৌকা ঘাটে থামাল৷ লাফ দিয়ে আসিফ আর তুহিন নেমে পড়ে৷ পরী নামার আগে আয়েশা বেগম পরীর হাত ধরে ফিসফিস করে বলল,
“তুই তুহিনের মাথায় আঘাত করে অজ্ঞান করে দিবি৷ তারপর হাত পা বেঁধে এখানে দাঁড়াবি।”
আয়েশা বেগম নৌকা থেকে নেমে আসিফকে নিজের কাছে ঢেকে বলল,
“তোমার সাথে কিছু কথা আছে৷ কথাগুলো আমি একান্ত বলতে চাই৷ তাই এতো রাতে তোমাকে নিয়ে এসেছি৷”
তুহিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“পরী একা ভয় পাবে৷ তুমি একটু তার সাথে যাও৷ দূরে কোথাও যাবে না৷ এখানেই থাকবে৷”
তুহিন পরীর কাছে আসতেই পরী তুহিনের মাথায় পরপর দুইটা আঘাত করল৷ তুহিনের চিৎকারে আসিফ পিছনে ঘুরার সঙ্গে সঙ্গে আয়েশা বেগম রামদা দিয়ে আসিফের পায়ে আঘাত করে একটা পা কেটে দেন৷ ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে যে কিছুই বুঝতে পারেনা৷
পরী রশি দিয়ে তুহিনের হাত পা বেঁধে ফেলে৷ মাথা থেকে রক্তের ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে৷ এই মুহুর্তে নিজেকে সব থেকে নিষ্ঠুর মানুষ মনে হচ্ছে৷ পরী আসিফের চিৎকার শুনে কাছে আসে৷ এতোক্ষণে আসিফের দুটো পা কেটে ফেলেছে৷ আসিফ বাঁচার জন্য আকুতি মিনতি করছে৷ হাত জোড় করে বলল,
“আপনাকে মা’রবেন না৷ আমি আপনার পায়ে পড়ি৷ আমি পরীকে বিয়ে করব না৷ এখন আমার পা দু’টোর মাঝে একটিও নেই৷ তবুও আমি বাঁচতে চাই৷ আমাকে বাঁচতে দেন৷”
আয়েশা বেগম গম্ভীর স্বরে বলেন,
“আমার কলিজার টুকরো, আমার পারুলকে তোরা বাঁচতে দেসনি৷ সারারাত তার উপর অমানবিক নির্যাতন করেছিস৷ ক্ষুধার্ত পশুর মতো ঝাপিয়ে পড়ছিলি৷ আমাকে মেয়ে বাঁচতে দিলি না৷ আমি তোকে কিভাবে বাঁচতে দিব৷”
আসিফ হামাগুড়ি দিয়ে আয়েশা বেগমের দিকে আসতে আসতে বলল,
“জীবনেও এমন কাজ করব না৷ আমাকে পৃথিবীর আলো দেখার একটা সুযোগ দেন৷”
আসিফের দেহ থেকে একটা হাত কেটে ফেলল। দেহ থেকে রক্ত ছিঁটকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল৷ গম্ভীর স্বরে বলেন,
“তুই বেঁচে থাকলে তো ভালো হবি৷ তোদের এমন শাস্তি দিব যে ধ’র্ষণ তো দূর কেউ কোন মেয়ের দিকে খারাপ নজরে তাকাতেও পারবে না৷”
আসিফের চিৎকার কেউ শুনতে পাচ্ছে না৷ জনমানবহীন এলাকায় কেউ নেই৷ চারদিকে ধূ ধূ বন৷ ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে৷ আসিফকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না৷ আসিফের আরও একটা হাত কেটে ফেলল। বাঁচার জন্য অনেক আকুতি মিনতি করছে৷ নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও বাঁচার জন্য একটু চেষ্টা করছে৷ তারপর আসিফের লিঙ্ক কেটে ফেলল৷ সর্বশেষে আসিফের গলা কেটে ফেলল৷ তবুও থেমে নেই৷ বুকের উপর একের পর এক আঘাত করে৷ উম্মাত হয়ে গেছে৷
আসিফের রক্ত দিয়ে মাটির উপর লিখেল, ❝ধ’র্ষকদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার নেই।❞
তুহিনকেও বাঁচতে দেয়নি৷ তুহিনকে নির্মম মৃত্যু দেয়নি৷ কিন্তু রামদা দিয়ে গলা কেটে দিয়েছে৷
_____________
পরী মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে৷ জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে৷ আয়েশা বেগম মেয়েকে ছেড়ে উঠতে পারছে না৷ এদিকে খবর এসেছে উত্তর পাড়ায় আসিফের মৃত দেহ পাওয়া গেছে৷ কে বা কারা জানি নির্মমভাবে হত্যা করেছে৷ বেলা ১০ টার দিকে আয়েশা বেগম পরীকে উঠানের চেয়ারে বসিয়ে দিল৷ সকালের রান্না পরীর সৎ মা করেছে৷ পরীর বিয়ে উপলক্ষে এসেছিল৷ গ্রাম বাসীর ধারনা আসিফের মৃত্যুতে পরীর এমন জ্বর এসেছে৷ অনেকে বলাবলি করছে সুন্দরী মেয়ের কপালে ভালো বর পাওয়া যায় না৷ মেয়ে সুন্দরী হলে কি হবে? পরী একজন অপয়া। তা নাহলে বিয়ের দিন হবু বর খুন হয়৷
আয়েশা বেগম পাড়া প্রতিবেশীর কথায় কান দেন না৷ অনেকে অনেক প্রশ্ন করে যাচ্ছে৷ তিনি তাদের কথার কোন কান দিলেন না৷ আশালতা সবার উদ্দেশ্যে বলেন,
“পরীর কেন জ্বর আসল? কিসের জন্য অসুস্থ? এসব নিয়ে আপনাদের ভাবতে কে বলেছে? পরীকে নিয়ে ভাবার লোক আছে৷ পরীর মা আছে, বাবা আছে।”
তাদের মাঝে একজন মহিলা বলে উঠল,
“পরীর বাপ তো আর এখানে থাকে না৷ পরীর বাপ তোমার লগে থাকে। সোয়ামিকে হাত করে রাখছো৷”
আশালতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়েশা বেগম বলেন,
“আপনাদের কি এখানে ডাকা হয়েছে। নাটক দেখতে আসছেন এখানে৷ যার যার বাড়িতে যান৷ বাঁচলেও আমার মেয়ে, মরলেও আমার মেয়ে৷ পরীকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷”
আয়েশার টান টান কথায় সবাই চলে যায়৷ ভাত মাখিয়ে পরী আর আরিয়ানকে খাইয়ে দিচ্ছে৷ আরিয়ান এক লোকমা খাবার মুখে নিয়ে বলল,
“বড় মা আমাদের সাথে ঢাকা যাবে। আমরা সবাই একসাথে থাকব৷ তুমি আম্মু, আব্বু৷ আমরা সবাই থাকব৷”
আর এক লোকমা খাবার মুখে দিয়ে বলল,
“না রে বাবা! আমার কাছে গ্রাম ভালো লাগে৷ আমি ঢাকা যাব না৷ মনে পড়লে আমাকে দেখতে চলে আসবে৷”
পিছন থেকে আশালতা বলে উঠল,
“আফা, আপনি তো কোনদিন আমাদের বাসায় গেলেন না৷ সেখানে না থাকলেন একবার তো ঘুরেও আসা যায়৷”
আশালতার কথার কোন প্রতিউত্তর করলেন না৷ মেয়েটার কোন দোষ নেই৷ মেয়েটা সবাইকে আপন করেই নিয়েছে৷ পারুল, পরীকে অনেক ভালোবাসত৷ মায়ার মোহে পড়ে বিয়ে করেছিল। অনেক মিশুক৷ পলক হোসাইন বাড়িতে ক্ষোভ নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলেন,
“পঞ্চায়েত মশাই নিজেকে কি মনে করেন? উনি আমাদের শাসিয়ে যান৷ আমার মেয়ের জন্য এমন হয়েছে৷ উনার লাফাঙ্গা ছেলে বিয়ের রাতেও বেরিয়ে পড়ে৷ কোন মেয়েকে ধ’র্ষণ করতে গিয়ে ধরা পড়ে৷ দোষ দিচ্ছে আমার মেয়ের। ভালো হয়েছে বিয়ে না হওয়ায়৷”
আয়েশা বেগম ইশারায় পানি দিতে বলেন৷ আশালতা রান্না ঘর থেকে পানি এনে দিল৷ পলক হোসাইন একা একা বকে যাচ্ছেন৷ আয়েশা বেগম শান্ত গলায় বলল,
“রাগারাগির কি আছে? উনার ছেলেকে হারিয়েছেন৷ উনার কথায় কান দিতে হবে না৷ সকাল থেকে তো কিছুই খাননি৷ ভাত খেয়ে নেন৷ ঘাট থেকে হাত মুখ ধুয়ে আসেন৷”
পরীর মাথায় বিলি কেটে তেল দিয়ে দিচ্ছে৷ সবাই চলে গেলে আয়েশা বেগম বলেন,
“মানুষের জীবন দুইদিনের৷ তুই যা দেখেছিস সব কাল্পনিক মনে কর৷ যুদ্ধের কথা মনে কর৷ পাক সেনারা কিভাবে আমাদের হত্যা করেছে৷ বুকে সাহস রাখ৷”
“আমি সে জন্য ভয় পাচ্ছি না৷ যদি কেউ কিছু জেনে যায়৷ পুলিশ যদি জানতে পারে৷ আমাদের জেল হয়ে যাবে৷”
“কিছুই জানতে পারবে না৷ সেখানে কোন প্রমান নেই৷ রক্তমাখা পোশাক পুড়িয়ে ফেলেছি৷ শুধু কথাগুলো দু’জনের মাঝে থাকলেই হবে৷”
চলবে…….
ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।