কেবিন নং থার্টি সিক্স পর্ব-১৩

0
1146

#কেবিন_নং_থার্টি_সিক্স
পর্ব:১৩
লিখা:জাহান আরা

১০ তলা ভবনের ৭ তলায় ডাক্তার আবিদ হাসানের পরিবার থাকে।গেইটের দারোয়ান কে ডাক্তার আবিদ হাসানের পরিবারের সাথে দেখা করতে যাবো বলার সাথে সাথে লোকটার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো।
জিজ্ঞেস করলো,”আগে এপয়েন্টমেন্ট ছিলো কি-না। ”
“না,ছিলো না।”

“কোথা থেকে এসেছেন?”

আমি অভ্রর হাসপাতালের নাম বললাম।দারোয়ান সাথে সাথে কল দিলো আবিদ হাসানের ফ্ল্যাটে। ওপাশ থেকে গ্রীন সাইন্যাল পাওয়ার পর এন্ট্রি বুকে আমার নাম এন্ট্রি করে নিলো দারোয়ান। তারপর বললো,”৭ তলার ফ্ল্যাট নং D।”

দারোয়ান কে ধন্যবাদ দিয়ে আমি আর নেহাল উপরে উঠে এলাম।লিফটে করে ৭ তলায় এসে নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে কলিং বেল টিপতেই ওপাশ থেকে কেউ দরজা খুলে দিলো।মনে হয় যেনো আমার অপেক্ষাতেই ছিলো ওপাশের ব্যক্তি।

ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম ৬০+ বয়সী এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। সালাম দিতেই সালামের জবাব দিলেন তিনি।তারপর আমাদের বসতে বললেন।
পাশাপাশি সোফায় আমি আর নেহাল বসতেই শুনতে পেলাম ভিতর থেকে নারী কণ্ঠে কেউ জিজ্ঞেস করছে,”কে এসেছে ভিতরে? ”

লোকটা জবাব দিলো আবিদের হাসপাতাল থেকে এসেছে।
পর মুহূর্তে ওপাশ থেকে এক মহিলা ছুটে এলেন।দেখেই বুঝা গেলো দুজন স্বামী স্ত্রী।
আমাদের দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে মহিলা জিজ্ঞেস করলো,”আপনারা?
আবিদের খুনীদের ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছেন?”

কথাটা শুনে চমকে উঠলাম আমি।আবিদ হাসান তাহলে খুন হয়েছেন!
তার ক্ষেত্রেও স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলো না,খুন ছিলো?

আমি আগ্রহী হলে জিজ্ঞেস করলাম,”খুনী মানে?
আবিদ হাসান কী খুন হয়েছেন?”

আমার প্রশ্ন শুনে মহিলার ব্রু কুঁচকে গেলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো,”আপনারা আসলে কে?
হাসপাতালের কেউ হলে তো জানতেন আমার ছেলে খুন হয়েছে আট মাস আগে।”

আমি বুঝতে পারলাম আমার পরিচয় দেওয়া উচিৎ এবং সব কিছু খুলে বলা উচিৎ। তাই সব কিছু খুলে বললাম ওনাদেরকে।আমার কথা শুনে দুজনেই হতবাক হয়ে গেলেন।
কিছুটা যন্ত্রচালিতর মতো লোকটি বলে উঠলো,”ঠিক এভাবে আমার ছেলেও খুন হয়েছে,বিয়ের ৭ দিনের মাথায়।”

চমকে উঠে আমি নেহালের দিকে তাকালাম।নেহাল নিজেও যথেষ্ট অবাক হয়েছে।

লোকটি আবার বলে উঠলো,”বিয়ের ৭ দিনের মাথায় বাসায় ডাকাত পড়ে।ওদের হাতেই খুন হয় আবিদ।আমাদের বুড়ো বুড়ী কে একা করে দিলো ওরা,আমার তো আর কোনো ছেলে ও নেই,মেয়ে ও নেই।”

আমার খুব কষ্ট হতে লাগলো ওনাদের জন্য।কি এমন ঘটেছে যার জন্য ওদের দুজনকেই একইভাবে খুন করলো?
আমি জানি এই প্রশ্নের উত্তর কে দিতে পারবে।

কিছুক্ষন চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করলাম,”আপনারা কি রিপা হক নামে কাউকে চেনেন?”

লোকটা জবাব দিলো,”না তো,এই নাম তো আগে কখনো শুনি নি।কে এই মহিলা?”

আমি আর কিছু বললাম না।ওনাদের থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে এলাম।
এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম গেইটে এরকম সতর্কতার কারণ কী ছিলো।
গাড়িতে বসে নেহাল কে বললাম,”বাসায় যাবো আমি,বাবার বাসায়।”

নেহাল কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো। আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে রিপা হক আর রূপা হকের কথা।
ফোন বের করে ভাবীকে কল দিলাম,”ভাবী,কোথায় তুমি?”
ভাবী যথেষ্ট অবাক হলো আমার প্রশ্নে আমি বুঝতে পারলাম,তার কণ্ঠে বিস্ময় ফুটে উঠেছে যদিও।তবু প্রশ্ন না করে উত্তর দিলো,”বাসায় আছি আমি। কেনো?”

“কিছু না ভাবী,আমি আসতেছি।”

ভাবীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি ফোন কেটে দিলাম। মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক প্রশ্ন।
কেনো ভাবী এরকম করলো?
কি কারণ রয়েছে এর পেছনে?
কতোগুলো প্রশ্ন জমেছে মনে,ভাবী কি জবাব দিবে সব প্রশ্নের?
আমি জানি আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই।ভাবীকে হাতেনাতে ধরতে পারবো না আমি।উভয় সংকট বোধহয় এটাকেই বলে।
এতোদিন ধরে মাথায় যেই প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিলো,সেই প্রতিশোধ নেবার পথে আজ বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে ভাইয়ার সংসার। ভাইয়ার ভালোবাসা।

বাসায় পৌঁছে আমি দৌড়ে ভাবীর রুমে গেলাম।গিয়েই একটা শক খেলাম।ভাবী রুমে নেই।মা’কে জিজ্ঞেস করতেই মা বললো,কিছুক্ষণ আগেই ভাবী বের হয়ে গেছে।কী কাজ আছে নাকি বাহিরে তাই,বলে গেছে আসতে দেরি হবে।

আমি বুঝতে পারলাম পাখি উড়াল দিছে।যেকোনো ভাবেই হোক ভাবী বুঝতে পেরে গেছে আমার উদ্দেশ্য। নিজেকে মস্ত বড় আহাম্মক মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে। কেনো বোকার মতো ভাবীকে জিজ্ঞেস করতে গেলাম তখন।আমি বুঝতে পারছি আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।নিজেকে সবচেয়ে বড় বোকা মনে হচ্ছে।
মাথায় ধরছে না কিছুই।

আমাকে হতাশ হয়ে বসে থাকতে দেখে নেহাল এগিয়ে এলো।একটা কাগজ বাড়িয়ে ধরলো আমার দিকে।
হাতে নিয়ে দেখি গোটাগোটা অক্ষরে লিখা,”আমি জানি তুমি সব বুঝে গেছো লতা,তোমার মতো মেধাবী মেয়ে খুব সহজেই দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে পারবে।ভেবো না আমি পালিয়ে যাচ্ছি,আমার কর্তব্য পালন করেছি আমি।তবে তুমি যদি জানতে চাও তবে চলে এসো অভ্রর হাসপাতালের কেবিন নং থার্টি সিক্সে।
আমি সেখানেই অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।”

আবারও কেবিন নং থার্টি সিক্স!

আমি বুঝতে পারছি না এই নাম্বারটার মধ্যে কি আছে!
সব রহস্যের চাবিকাঠি এই নাম্বারে। নেহাল কে কিছু বলতে হলো না।নেহাল উঠে দাঁড়ালো।
গন্তব্য এখন কেবিন নং থার্টি সিক্স!

চলবে…???

(রিচেক দিই নি,ভুল হতে পারে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে