কেন আমি ডাকি তারে পর্ব-৯+১০

0
1723

কেন আমি ডাকি তারে -৯

রেহান বাসায় ফিরে দেখল নিতু শাড়ি পরেছে৷ হালকা বেগুনি রঙের একটা সুতি শাড়ি, সাদা ব্লাউজে ভালো মানিয়েছে৷ এখন চুল আঁচড়ে নিচ্ছে, সাদা একটা জারবেরা লাগিয়ে নিলো৷ রেহান ঘড়ি দেখল, প্রায় এগারোটা বাজে৷ এত রাতে সাজগোজের কারন কি!

রেহান টাই আলগা করতে করতে জিজ্ঞেস করল, এত রাতে এত সাজ?

নিতু বলল, আজ তুহিনের জন্মদিন।

ওহ আচ্ছা। ডিনার করেছ?

হ্যা! আপনি তো খেয়ে এসেছেন?

নাহ, খাওয়া হয় নি!

সে কি! এত রাত হলো, আমি ভাবছি, আপনার বান্ধবীর সাথে হয়তো ডিনার করে ফিরবেন।

নিতু স্বাভাবিক ভাবে বললেও রেহানের মনে হল নিতু খোঁচা দিচ্ছে। সায়রার কথা মনে পড়ে গেল, মাথা হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল৷ বিষয়টা আরো ঘনিষ্ঠ হতে পারত৷ রেহান ইগনোর করে চলে এলো! আর এখানে, মহারানী বয়ফ্রেন্ডের জন্মদিন পালন করছে!

না খাওয়া হয় নি। এখন আর কিছু খাব না।

নিতু বলল, খাবার গরম করে দেব?

না, তুমি ব্যস্ত, তাছাড়া সেজেছ, ভালো লাগছে, কাজ করতে হবে না এখন।

নিতু কথা বাড়াল না। হয়তো খিদে নেই রেহানের। রেহান পোশাক পাল্টে শুয়ে পড়ল।
নিতু ফোনটা হাতে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসল।।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তুহিনকে ফোন করল। তুহিন পিক করল না। বেশ কয়েকবার ফোন করার পরে টেক্সট করল,আই এ্যাম এট ওয়ার্ক, কল ইউ ল্যাটার!

ল্যাটার! কখন কল করবে, এখনি তো বারোটা বাজে!

নিতুর প্রচন্ড কান্না পেল, কি সব হচ্ছে ওর সাথে। তুহিনের বদলে যাওয়া, ব্যস্ততা টের পাচ্ছে নিতু!

জানালার পাশে গিয়ে কানের ফুলটা খুলে নিতে গেল নিতু। কেউ হঠাৎ হাত চেপে বলল, করো কি, করো কি! খুলো না!

নিতু চোখ ছলছল করে বলল, এখন আর কি হবে!

রেহান বলল, কল রিসিভ করে নি?

না।

ব্যস্ত মনে হয়, ওখানে তো এখন ডে টাইম!

নিতু বলল, এত ব্যস্ত যে একবার ফোনে আসতে পারল না!

আরে বাদ দাও, ও মিস করল, তোমাকে মিষ্টি লাগছে।

নিতু বলল, চেইঞ্জ করে আসি।

বাইরে যাবে?

বাইরে, এত রাতে?

হ্যা, রাত তো সমস্যা কি! চলো, রাতের শহরে ড্রাইভ করে আসি!

আপনি তো কিছু খান নি।

চলো, বনানীর দিকে কয়েকটা রেস্তোরাঁ রাতে খোলা থাকে। ঘোরাঘুরি করে খেয়ে আসি।

নিতুর মনে হয় পছন্দ হলো কথাটা। রেহান আলমারি খুলে সাদা পানজাবীটা বের করল। তারপর নিতুকে নিয়ে বের হয়ে পড়ল।

চলবে

কেন আমি ডাকি তারে -১০

সংসদ ভবনের সামনে এসে রেহান থামল। নিতু একটু নরমাল হয়েছে। কান্নাকাটি করে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিল।

-চল নামি একটু
– এত রাতে, রিস্ক না?
-না এই জায়গায় পুলিশি টহল থাকে।
গাড়ি থেকে নেমে নিতু বসল। রেহান পাশে বসে জিজ্ঞেস করল, তুহিনের সাথে কত দিনের আলাপ তোমার?

নিতু বলল, এই বিষয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না।

রেহান বলল, আচ্ছা। আমার এমন অদ্ভুত শর্তে বিয়ে করতে রাজী হয়েছ, তাই জিজ্ঞেস করলাম। তুহিন আসলেই কী ভাবছে?

নিতু বলল, জানি না৷ আপনার কথা বলুন, ডিভোর্স ফাইল কবে থেকে করবেন। এজন্য কি কি করতে হয়।

রেহান বলল, এখনো ভাবি নি। তুহিনের আসার সময় ঠিক হয়েছে?

না৷

তারপর? ডিভোর্স নিয়ে তুমি কি করবে?

বাসায় চলে যাব।

হুম। আমাদের বাসায় অসুবিধা হচ্ছে মনে হয়।

খুবই অদ্ভুত কথা বললেন, আপনার বান্ধবী অপেক্ষা করে আছে, আপনার নিশ্চয়ই কোনো প্ল্যান আছে। আমি থেকেই বা কি করব। একটা সিস্টেমের মধ্যে সব কাজ কমপ্লিট করে ফেললেই হবে।

রেহান হঠাৎ বলল, আচ্ছা নিতু, আমার মাঝে মাঝে মনে হয়৷ যদি আমাদের বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হতো, মানে আমরা ট্রু লি হাজবেন্ড ওয়াইফ হতাম৷ তাহলে কেমন হতো, তুমি কী রকম আচরণ করতে তখন?
তখন নিশ্চয়ই আমার জন্য সেজে বসে থাকতে, অথবা….

নিতু একটু চুপ করে থেকে বলল, আপনার বোধহয় এরকম ভাবা উচিৎ না।

তারপর বলল, দেখুন একসাথে থাকতে গেলে মায়া জন্মায়, হয়তো সম্পর্ক আরো গভীর হয়, কিন্তু আমরা দুজনেই অন্য দুজন মানুষকে কথা দিয়েছি। তারা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এখানে কি হলে কি হতো, এসব ভাবনা অমূলক না?

-হ্যা হয়তো অমূলক, কিন্তু আমার মাঝে মাঝে মনে হয়৷ তাই বললাম। তুমি অন্য ভাবে নিও না।

নিতু উঠে বলল, চলুন, কোনো রেস্টুরেন্টে যাই।

রেহান বলল, সরি, তোমার মন ভার করে দিলাম।

কয়েকটা বাচ্চা বেলিফুলের মালা নিয়ে এসেছে।
এতরাতেও ঘুরছে।

রেহান সবগুলো মালা কিনে নিতুকে দিলো।

যা, বাসায় চলে যা।

নিতুর মনটা হালকা হয়ে গেল। গাড়িতে উঠে বলল, রেহান, আপনার মনটা ভীষণ ভালো। আপনার বান্ধবী অনেক লাকি!

রেহান হেসে বলল, ফুল কিনলাম বলে?

নিতু হাসল।

সায়রা এসব পছন্দ করে না। ও একটু পশ টাইপ, হাইক্লাশ মেইনটেইন করে, এরকম ঘোরাঘুরি ওর পছন্দ না।

নিতু বলল, আমার কিন্তু খুব ভালো লাগে। আমার প্ল্যানও ছিল, এরকম করে ঘুরব। তুহিন আবার এরকম না। একদমই অলস, ঘুমকাতুরে ভদ্রলোক। ঘুমাবে, এরকম ফুল টুল কেনা তার ছেলেমানুষি মনে হয়!

তোমার পছন্দ জেনে ভালো লাগল। আর কি পছন্দ বলো?

কাচ্চি পছন্দ- নিতু হেসে বলল।

ঠিক আছে, চলো কাচ্চি খেয়ে আসি৷

রাত সাড়ে তিনটা অবধি টই টই করে ঘুরে ওরা ফিরল যখন, নিতু ঘুমিয়ে গেছে গাড়িতেই।

চেইঞ্জ করা হলো না৷ কোনো রকমে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল নিতু। রেহান অবশ্য পোশাক পাল্টে শুতে এলো।

নিতু, এ্যাই নিতু।

নিতু ঘুমের মধ্যে বলল, হুম!

আমাকে ডেকে দিও৷ সকালে অফিস।

ঠিক আছে।

রেহান শুয়ে পড়ল। কিন্তু অন্যদিকে ফিরতে ইচ্ছে করল না। নিতুর শরীর থেকে বেলী ফুলের ঘ্রাণ আসছে।
রেহান একটু এগিয়ে চুল থেকে জারবেরাটা খুলে রেখে দিলো। কানের দুলটাও খোলে নি। রেহান সেটাও খুলে রাখল।
গলায় একটা পাতলা চেইন শুধু। ঘুমন্ত নিতু কি প্রবল ভাবে টানছে রেহানকে৷ রেহান ইচ্ছে করেই সরে গেল না৷
তবে সেন্স হারানোর কিছু নেই৷ রেহান কিছু করবে না।নিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রেহান কখন ঘুমিয়ে গেল নিজেই টের পেল না।

ঘুম ভাঙল সাড়ে নয়টার পরে। রেহান ঘুম ভেঙে দেখল, নিতু ওর হাতের উপর ওকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। এত কাছে কখন এলো!

নিতু, ওঠো, সকাল হয়ে গেছে!

নিতু উঠে বসে বলল, অফিস যান নি!

কীভাবে যাব, তুমি এমন ভাবে ঘুমুলে….

নিতু কানে হাত দিয়ে বলল, আপনি দুল খুলে কোথায় রেখেছেন?

রেহান বলল, তুমি টের পেয়েছিলে?

হুম।

তাহলে নিজে খুললে না কেন!

ইচ্ছে করছিল না।

রেহান এবারে বলল, তাহলে বলতে, শাড়িও পাল্টে দিতাম! বদ মেয়ে, কাজ করিয়ে নিলো!

নিতু বলল, আপনার ইচ্ছে করছিল আমার কাছাকাছি থাকতে, কে যে বদ, বুঝতে পারছি না।

রেহান এবারে নিতুর পেছন থেকে কানের কাছে এসে বলল, আমি মোটেই বদ নজরে তোমাকে দেখি নি। দেখলে এটলিস্ট চুমু খেতাম একটা।

নিতু বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল, আপনি মিস করেছেন, আমি কী করতে পারি!

বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। রেহান উঠে পড়ল। জামাকাপড় বের করতে গিয়ে দেখল, নিতু শাড়ি ও শাড়ির অনুসঙ্গ খুলে ওয়াশর দরজার বাইরে রাখছে!
রেহান একটু অস্থির বোধ করে দরজার নক করল, নিতু!
নিতু উঁকি দিলো ভেতর থেকে, একটু সময় লাগব, দেরী হচ্ছে?

রেহান দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেল। নিতু ভীষণ চমকে উঠল রেহানকে এভাবে দেখে। শাওয়ার ছাড়াই ছিল, ভেজা পোশাকে নিতুকে ওয়ালের সাথে ঠেকিয়ে বলল, আমাকে পুরুষ মনে হয় না তোমার?

নিতু ভীরু চোখে বলল, কি করছেন? ছাড়ুন!

রেহান দেয়ালে নিতুর একটা হাত চেপে ধরে ওর ঠোঁটের খুব কাছাকাছি চলে গেল। নিশ্বাসের উষ্ণতা নিতুকে ছুয়ে যেতে লাগল।

শেষ মুহুর্তে রেহান নিতুর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল, সরি!

বলে টাওয়েল নিয়ে দ্রুত বের হয়ে চলে গেল।

নিতু কিছুক্ষণ ওয়াশরুমের মেঝেতে চুপচাপ বসে রইল!

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে