কিশোরী কন্যার প্রেমে পর্ব-০৭

0
815

#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_৭
.
নোটঃ গল্প যাদের কাছে পৌঁছাবে তারা সবাই রেসপন্স করবেন।
.
সকালে অর্ঘমা স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে অভ্রর রুমে গেল তাকে ডাকতে। ঘুমের মাঝে অভ্রর চেহারাটা বড্ড মলিন দেখাচ্ছে। পাশের টেবিলেই ভাঙা ফোনটা পড়ে আছে অবহেলায়। ভ্রু কুঁচকাল অর্ঘমা। অভ্রর চুলের মাঝে হাত বুলিয়ে তাকে ডাকতে লাগল। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকিয়ে অর্ঘমাকে দেখে অভ্র বলল,
-“আমি আজ যেতে পারব না তোর সঙ্গে।”
-“তাহলে কী আমি আজ স্কুলে যাব না?”
-“যাবি। আমি নীরদকে বলে রেখেছি। ও তোকে দিয়ে আসবে স্কুলে। আবার ও-ই তোকে নিয়ে আসবে।”
-“আচ্ছা। কিন্তু তোমার ফোন ভাঙল কী করে?”
-“গতকাল রাগের মাথায় আছাড় মেরেছিলাম। এবার যা। তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে। নীরদ মনে হয় দাঁড়িয়ে আছে তোর জন্য।”
-“ঠিক আছে, যাচ্ছি।”
অর্ঘমা নিজের রুমে গিয়ে তার ফোনটা নিয়ে সিম খুলে ড্রয়ারে রেখে দিল। আবারও ফিরে এলো অভ্রর রুমে। ঘুমন্ত অভ্রকে আবারও জাগিয়ে তুলে বলল,
-“নতুন ফোন না কেনা অব্দি আমার ফোন ইউজ কর। আমি সিম খুলে রেখেছি।”
-“লাগবে না। আমি ম্যানেজ করে নিব।”
-“অবশ্যই লাগবে। আমার তো ফোনের তেমন একটা দরকার পড়ে না। কম্পিউটার তো আছেই বাসায়। আমি নাহয় কম্পিউটারে টাইম পাস করব। তুমি এটা নাও।”
অভ্র জানে ফোন না নেওয়া পর্যন্ত অর্ঘমা মানবে না। তাই ফোন নিয়ে টেবিলে রেখে বলল,
-“নিয়েছি। এবার যা, দৌড় দে।”
সত্যি সত্যি অর্ঘমা দৌড়ে বেরিয়ে গেল। কারণ তার স্কুলের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে।
___
তিন তলায় এসে দেখল নীরদ দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে। পায়ের আওয়াজ শুনে সামনে তাকিয়ে অর্ঘমাকে আসতে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল। ঘড়ি দেখে বলল,
-“এত দেরি হলো কেন?”
-“ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলাম।”
-“আচ্ছা, এসো এখন।”
-“চলুন।”
যেতে যেতে অর্ঘমা বলল,
-“আপনাকে সকাল সকাল এভাবে জ্বালানোর জন্য দুঃখিত।”
-“জ্বালানোর কী আছে? আমি সকালেই উঠি। ছোটবেলার অভ্যাস আমার।”
-“কী করেন এত সকালে উঠে?”
-“একটু হাঁটাহাটি করি, ছাদের গাছগুলোতে পানি দেই, বই ঘাটি, মাঝে মাঝে ফোনে ভিডিও দেখি।”
-“বাহ!”
-“শুনলাম তোমার নাকি অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা গেল কিছুদিন আগে!”
-“হ্যাঁ।”
-“কেমন হয়েছে?”
-“মোটামুটি ভালোই। প্রশ্ন একেবারে কঠিনও আসেনি আবার একেবারে সহজও আসেনি। মাঝামাঝি অবস্থায় এসেছে। তাই আমার পরীক্ষাও অমনই হয়েছে।”
-“রেজাল্ট কবে দিবে?”
-“পরশু দেওয়ার কথা।”
-“আচ্ছা। কিছু কিনবে?”
অর্ঘমা সামনে তাকাল। তারা স্কুলের সামনে চলে এসেছে। অর্ঘমা খেয়াল করল তার মনটা ভালো হয়ে গেছে। গতকাল থেকে তার মন খারাপ ছিল। তবে নীরদের সাথে কথা বলে তার মনটা এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে। অর্ঘমা নীরদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলল,
-“না, কিছু কিনব না। পৌঁছে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি তাহলে আসছি এখন।”
-“গেইটের ভেতরে গিয়ে একটু দাঁড়াও। আমি আসছি এখনই।”
অর্ঘমা মাথা নাড়িয়ে স্কুল গেইটের ভেতরে ঢুকে একপাশে দাঁড়াল। নীরদ ছুটে কোথায় যেন গেল। অর্ঘমা হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিল। তার ক্লাস শুরু হতে দশ মিনিটের মতো বাকি এখনো। নীরদ ফিরে এলো পাঁচ মিনিটের মাথায়। হাতে একটা পলিথিন ব্যাগ। সেটা অর্ঘমার দিকে এগিয়ে দিতেই অর্ঘমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল। নীরদ মুচকি হেসে বলল,
-“সকালে নাস্তা করে আসো নি আমি নিশ্চিত। তাই এটা রাখো। ক্লাসের এক ফাঁকে খেয়ে নিয়ো। আর বাকিটা টিফিন টাইমে খেয়ো।”
পলিথিন ব্যাগটা হাতে নিয়ে অর্ঘমা দেখল ভেতরে একটা কেকের প্যাকেট, একটা চিপস, একটা জুস আর কিছু চকলেট রাখা। একগাল হাসল অর্ঘমা। নীরদ হুমকি দেওয়ার মতো করে বলল,
-“আমি না আসা পর্যন্ত স্কুল গেইটের বাইরে এক পা-ও রাখবে না। বুঝেছো?”
-“হ্যাঁ, বুঝেছি। এবার আপনি বাসায় যান। আমিও ক্লাসে যাই। টিচার মনে হয় ক্লাসে ঢুকে গিয়েছে।”
-“আচ্ছা, যাও। সাবধানে থেকো।”
মাথা নাড়িয়ে ক্লাসের দিকে অগ্রসর হলো অর্ঘমা। নীরদ আরও মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে রইল সেখানে। যদি অর্ঘমা কোনো কিছুর দরকারে আবার ফিরে আসে, এই ভেবে। তারপর চলে গেল বাসার উদ্দেশ্যে।
___
স্কুল ছুটির পর অর্ঘমা গেইটের বাইরে উঁকি দিতেই দেখতে পেল নীরদ একদম গেইটের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তাকে আর অপেক্ষা করতে হলো না ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। নিধির সাথে বাইরে আসতেই অর্ঘমা পরিচয় করিয়ে দিল নীরদকে। অভ্রর বন্ধু হিসেবেই পরিচয় দিল। তাছাড়া নিধিকে সে আজ সবই বলেছে। তাই নাম শুনেই নীরদকে চিনে গেছে নিধি। অল্প কুশলাদি বিনিময় করে নিধি চলে গেল নিজের বাসার উদ্দেশ্যে। অর্ঘমাও নীরদের সাথে চলতে লাগল নিজের বাসার উদ্দেশ্যে।
___
বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে বসতেই অভ্র এসে জানালো এখন থেকে নীরদ পড়াবে অর্ঘমাকে। আজ বিকেল থেকেই আসবে সে। অর্ঘমা কপাল কুঁচকে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“ব্যাপার কী বলতো? সবকিছুতে তুমি নীরদ ভাইকে টানছো কেন?”
-“তোর তো আরও ভালো লাগার কথা। তোর ক্রাশ এখন থেকে সবসময় তোর আশেপাশে ঘুরঘুর করবে।”
-“সেসব কথা বাদ দাও। তাকে কীভাবে রাজি করালে সেটা বলো।”
-“আমি শুধু বলেছিলাম তুই যেখানে কোচিং করতে যাস সেখানে শাকিলের বাসা। তাই তুই আর কোচিং করতে যাবি না। কিন্তু তোর টিচার দরকার বাসায় পড়ার জন্য। ব্যস! ও নিজে থেকেই বলল ও পড়াবে তোকে। আমিও রাজি হয়ে গেলাম।”
-“তোমরা আবার আমার পিঠ পিছে কোনো খিচুড়ি পাকাচ্ছ না তো!”
-“আরে নাহ!”
-“না হলেই ভালো।”
-“আচ্ছা, এখন খেতে চল। আম্মু ডাকছে।”
-“ভাবীর কী খবর?”
রুম থেকে বের হতে গিয়েও থেমে গেল অভ্র। রিয়ার কথা অর্ঘমাকে এখনো জানানো হয়নি। জানতে পারলে অর্ঘমা শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ করতে শুরু করবে। তাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে মনে মনে ভেবেচিন্তে বলল,
-“ওকে আর ভাবী ডাকবি না।”
-“কেন?”
অবাক হয়ে গেল অর্ঘমা। অভ্র রিয়াকে কতটা ভালোবাসে তা অর্ঘমা ভালো মতোই জানে। তাহলে হঠাৎ এই কথার মানে কী?
-“ব্রেকআপ হয়ে গেছে।”
-“তোমাদের তো দু’দিন পর পরই ব্রেকআপ হয়। আবার দু’দিন পরেই ঠিক হয়ে যায়। এবারও ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা কর না।”
-“এবার আর কিছু ঠিক হওয়ার নয়। ওর বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করেছে। রিয়া নিজেও রাজি। আমি বেকার বলে আমাকে গতকাল ফোন করে অপমান করেছে। আর আমাদের সম্পর্কটাও শেষ করেছে।”
অর্ঘমা যেন মুহূর্তেই থমকে গেল। রিয়ার এহেন আচরণের কথা এর আগে কখনো শুনেনি। তাহলে আজ হঠাৎ কী হলো? তবে অর্ঘমার রাগও লাগল এই ভেবে যে রিয়া তার ভাইকে অপমান করেছে। অভ্রর হাত ধরে বলল,
-“মন খারাপ কর না। তোমাদের জুটি ওপর থেকে লেখা ছিল না তাই তোমরা আলাদা হয়ে গিয়েছ। জানি কষ্ট পাচ্ছ। আর এই কষ্ট কমতে সময় লাগবে। তবুও বলব, নিজের মনকে শক্ত কর। যে মেয়ে তোমাকে অপমান করতে পারে সেই মেয়ে কখনো তোমার ভালোবাসা হতে পারে না।”
অর্ঘমার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল অভ্র। বাইরে এসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। অর্ঘমা মিথ্যে কথাগুলো না বললে অর্ঘমা বারবার রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইত। আর অর্ঘমা যদি একবার জানতে পারে তার কারণেই রিয়ার সাথে অভ্রর ব্রেকআপ হয়েছে তাহলে মেয়েটা মানতে পারত না। হয়তো শাকিলের সাথে বিয়েতেও রাজি হয়ে যেত তাদের সম্পর্ক ঠিক করার জন্য।
___
বিকেলে নীরদ যখন বাসায় আসলো তখন অর্ঘমা ঘুমোচ্ছে। অভ্রও বাসায় ছিল না। অর্ঘমার মা রুমে গিয়ে অর্ঘমাকে ডেকে উঠিয়ে ফ্রেস হয়ে আসতে বলে বাইরে এসে নীরদকে বলল অর্ঘমার রুমে যেতে। নীরদ অর্ঘমার রুমে ঢুকে দেখল অর্ঘমা বিছানায় বসে ঝিমাচ্ছে। হেসে ফেলল নীরদ। অর্ঘমার সামনে গিয়ে তার মাথায় একটা টোকা দিতেই অর্ঘমা চোখ মেলে তাকাল।
-“ফ্রেস হয়ে আসো। এখন পড়ার সময়। তাছাড়া একটু পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। এই সময় ঘুমানো ঠিক না।”
-“আমার শান্তির ঘুম কারো সহ্য হয় না। সবার আমার ঘুমের সাথে এত কিসের শত্রুতা?”
-“সেটা পরে বসে ভেবো। এখন চটজলদি ফ্রেস হয়ে আসো।”
-“ধুর!”
মেঝেতে পা দিয়ে লাথি মেরে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল অর্ঘমা। নীরদ হেসে পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে বসল। টেবিলের উপরে একটা উপন্যাসের বই নামানো। বইটা হাতে তুলে নিল নীরদ। হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা ‘অপেক্ষা’। এই উপন্যাসটা সে পড়েছে। অর্ঘমার রুমের আশেপাশে তাকিয়ে বিছানার অপর পাশের কোণায় একটা বুকশেলফ দেখতে পেল। বুকশেলফ ভরতি উপন্যাসের বই।

ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে সেদিকে তাকাল নীরদ। অর্ঘমা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই নীরদের সাথে চোখাচোখি হলো তার। অর্ঘমার সারা মুখ ভরতি বিন্দু বিন্দু জলকণা।
-“মুখ মুছোনি কেন?”
-“টাওয়াল বারান্দায়।”
বারান্দায় গিয়ে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে ঘরে ফিরল। নীরদের পাশে চেয়ার টেনে বসতেই নীরদ জিজ্ঞেস করল,
-“তুমি উপন্যাস পছন্দ কর?”
-“হ্যাঁ। আব্বুর থেকে পাওয়া গুণ। আব্বু অবসর সময়ে উপন্যাস পড়তে পছন্দ করেন। তার দেখাদেখি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল পড়ার। এরপর থেকেই নেশার মতো হয়ে গেছে।”
-“এটা বেশ ভালো নেশা। আমার বাসায় অনেকগুলো উপন্যাসের বই আছে। আমি এনে দেবো তোমাকে। আসলে আমার আগে পড়ার অভ্যাস ছিল। এখন আর পড়া হয় না। যখন পড়তাম তখন কিনেছিলাম ওগুলো।”
-“আচ্ছা।”
-“এখন পড়ার বই বের কর। কোন বিষয়ে সমস্যা সেটা দেখাও।”
পরবর্তী সময়টা পড়ার মাঝে কেটে গেল অর্ঘমা আর নীরদের। এর মাঝে অর্ঘমার মা এসে নাস্তা দিয়ে গিয়েছিলেন। নীরদ প্রথম দিনেই বুঝতে পারল অর্ঘমাকে পড়াতে তার খুব একটা কষ্ট হবে না। বেশ ভালো ছাত্রী মেয়েটা।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে