কিশোরী কন্যার প্রেমে পর্ব-১৩+১৪

0
766

#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৩
.
নোটঃ প্রথমে ৩ দিনের জন্য রেস্ট্রিকশন পড়েছিল। ৩ দিন পার না হতেই ১৫ দিনের জন্য রেস্ট্রিকশন পড়ল। ১৫ দিন পার হওয়ার পর মিনিটের মাঝে ৩০ দিনের জন্য রেস্ট্রিকশনে পড়ল আইডি। লাইক, কমেন্ট, পোস্ট কিচ্ছু করতে পারছিলাম না দেখে অনলাইনে আসাই বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম। তার ওপর ফোনটাও জীবন মরণের মাঝে লড়াই করছে। সব মিলিয়ে আমার অবস্থা বলার মতো না। ফোনের এই অবস্থায় নিজেকে কেমন যেন এতিম এতিম লাগছে। সামনের বছরের আগে নতুন ফোন পাবো না। অতএব এখন কম্পিউটারই আমার একমাত্র ভরসা।
…………
পর্ব_১৩
.
অর্ঘমাদের এক্সাম শুরু হয়ে গেছে। নিধি এখনো অর্ঘমাদের বাসাতেই আছে। গত কয়েকদিন অর্ঘমা আর নীরদ মিলে নিধিকে সব পড়া বুঝিয়ে দিয়েছে। নিধি ভালো ছাত্রী হওয়ায় তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি পড়া বুঝাতে।
ইদানিং অর্ঘমা খেয়াল করছে তার মায়ের ব্যবহার নিধির প্রতি কিছুটা অন্যরকম। আগের মতো আদর করেন না তিনি নিধিকে। কেমন যেন সারাক্ষণ ফরমায়েশ দিতে থাকেন। অথচ অর্ঘমাকে তিনি কখনো একটা কাজের কথা বলেন না। নিধির সাথে আচরণটা এমন করেন যেন সে এই বাড়ির আশ্রিতা। অর্ঘমা আশ্চর্য হয়ে দেখে মায়ের এসব কর্মকাণ্ড।

অর্ঘমার বাবা পারিবারিক ঝামেলা থেকে সবসময় দূরেই থাকেন। যেমন নিধির এই বাসায় থাকা বা না থাকা নিয়ে তার কিছু আসে যায় না। মিনা বেগম এই নিয়ে প্রায় রাতেই তার সাথে ঘ্যানঘ্যান করেন কিন্তু তিনি এসবে কান দেন না। নিধির ব্যাপারে সবই শুনেছেন তিনি। মেয়েটার এই দুঃসময়ে তার পাশে থাকার মতো কেউ নেই। সেখানে নিজের ছেলেমেয়ে নিধিকে সাহায্য করছে তো করুক। এতে ক্ষতি কি! কিন্তু মিনা বেগমের কথায়বার্তায় ও ব্যবহারে তিনি যারপরনাই বিরক্ত। সবসময় এককাঠি উপরে বুঝা যেন এই মহিলার স্বভাব। মিনা বেগমকে এখন হাজার প্রমাণ দেখালেও তিনি বিশ্বাস করবেন না যে নিধির সাথে কিছুই হয়নি। সে ধ/র্ষি/তা নয়। শুধু শুধু কথা বাড়িয়ে মুখ ব্যথা করে লাভ নেই। তাই অর্ঘমার বাবা তার কথা চুপচাপ শুধু শুনে যান কিন্তু কিছু বলেন না।

পরীক্ষা দিয়ে নীরদের সাথে বাসায় ফিরল অর্ঘমা আর নিধি। বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই মিনা বেগম নিধিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“ওয়াশরুমে জামাকাপড় ভিজিয়ে রেখেছি। ওগুলো একটু ধুয়ে ছাদে দিয়ে আয় তো নিধি।”
নিধি কিচ্ছুটি না বলে চুপচাপ রুমে গিয়ে স্কুল ড্রেস বদলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল জামাকাপড় ধোয়ার জন্য। অর্ঘমা প্রায় সাথে সাথেই মায়ের কাছে গিয়ে বলল,
-“বাসায় ওয়াশিংমেশিন থাকতেও নিধিকে দিয়ে জামাকাপড় ধোয়ানোর মানে কী মা?”
-“মানে কী মানে? একটা উটকো ঝামেলা আমার বাসায় থাকছে, খাচ্ছে তো সামান্য কাজ করে দিতে পারবে না? সারাক্ষণ তো শুয়ে-বসে থাকছে আর গাণ্ডেপিণ্ডে গিলছে। একটু কাজ করে সেসব শোধ করুক।”
-“ছিঃ মা! তোমার কাছ থেকে আমি এসব একদমই আশা করিনি। তুমি এভাবে বলতে পারলে নিধিকে? ও কী ইচ্ছে করে এসেছে এখানে? ওর অবস্থাটা বিবেচনা করে আমি ওকে এখানে নিয়ে এসেছি জোর করে।”
-“হ্যাঁ, জানি তো। মূল দোষীটা যে তুই তা কী আর জানতে বাকি আছে আমার? দেখেছিস তো বাবার টাকা। ভেবেছিস বাবার কারিকারি টাকা আছে তাই বাসাটাকে একটা আশ্রম বানিয়ে ফেলি।”
-“মা!”
-“চুপ কর। তোর উপরে আমার এত রাগ উঠছে যা আমি বলে বোঝাতে পারব না। তুই কোন আক্কেলে ওকে বাসায় নিয়ে এসেছিস? বাসায় যে তোর জোয়ান ভাই আছে সে খেয়াল নেই তোর? ওমন একটা পরিবারহীন ধ/র্ষি/তা মেয়েকে যে আমার বাসায় নিয়ে এসেছিস, এখন যদি আমার ছেলেকে ওই মেয়ে ব/শ করে নিজের কাছে নিয়ে যায় তখন? এমন মেয়েকে দিয়ে আমি চার আনা বিশ্বাসও করি না।”
-“নিজের মুখে লাগাম টানো মা। মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছ তুমি। ভাইয়া আসুক আগে। ওকে আমি সব বলব। বাবাকেও বলব। তোমার এই হীন মনমানসিকতার কথাবার্তা শুনে ওরা তোমাকে কতটুকু সাপোর্ট করে আমিও দেখব। তুমি নিজেও তো একটা মেয়ে। তাহলে মেয়ে হয়েও কীভাবে অন্য একটা মেয়েকে এসব বলতে পারো তুমি?”
অর্ঘমার গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিলেন মিনা বেগম। হতভম্ব হয়ে গালে হাত দিয়ে মায়ের দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অর্ঘমা। মায়ের অগ্নি দৃষ্টি যেন ঝ-ল-সে দিতে চাইছে তাকে। যে মা তার গায়ে কখনো একটা ফুলের টোকাও লাগতে দেয়নি সেই মা আজকে তাকে মা/র/ল! তাও সামান্য একটা বিষয় নিয়ে! এটা কী আদৌ তার মা?
___
আজ শুক্রবার। বন্ধের দিন। অভ্র খেয়াল করেছে নিধি বাসার প্রায় সব কাজই করছে। এতদিন ব্যস্ত থাকায় এসব খেয়াল করা হয়নি। নিধিকে বাসার কাজ করতে দেখে যতটা না অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি বিস্মিত হয়েছে মিনা বেগমের নিধিকে হুকুম করা দেখে। মিনা বেগম যা যা বলছেন নিধি বিনা বাক্য ব্যয়ে তাই তাই করে যাচ্ছে।
অর্ঘমাকে দেখা যাচ্ছে না আশেপাশে কোথাও। অফিসে প্রচুর ব্যস্ততা চলছে ইদানিং। বাসায় আসতে আসতে রাত দশটার বেশি বেজে যায়। গত দু’দিন যাবৎ অর্ঘমা তার সাথে কথা বলতে আসেনি। সে নিজে কথা বলতে গেলে দেখা গেছে অর্ঘমা ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই আর কথা বলার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। মেয়েটার আবার হুট করে কী হলো কে জানে। নীরদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছে অর্ঘমা তার সাথেও বাড়তি কোনো কথা বলেনি পড়া সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া। এমনটা অর্ঘমা তখনই করে যখন তার মন বিষণ্ণ থাকে অথবা কারো প্রতি তার খুব অভিমান হয়।

অর্ঘমার রুমে ঢুকে দেখতে পেল অর্ঘমা পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে। অভ্র তার পাশে গিয়ে বসল। কিছু বলল না অর্ঘমা। তাকাল পর্যন্ত না। অভ্র তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“কী হয়েছে তোর? ক’দিন ধরে দেখছি আমার সাথে কোনো কথা বলছিস না। যে মেয়ে পরীক্ষার সময় সারারাত জেগে পড়াশোনা করে সেই মেয়ে রাত দশটা বাজতে না বাজতে ঘুমিয়ে পড়ছে। ব্যাপারটা তো স্বাভাবিক না। কোনো সমস্যা হলে বল আমাকে।”
চুপ করে কিছুক্ষণ বসে থেকে বই বন্ধ করে ভাইয়ের দিকে ঘুরে বসে তাকে জড়িয়ে ধরল অর্ঘমা। অভ্র বোনের মাথায় আদরের সহিত হাত বুলিয়ে দিতে গেলে টের পেল তার বোন কাঁদছে। বিচলিত হলো অভ্রর মন। উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“কী হয়েছে অর্ঘ? কাঁদছিস কেন বোন? ভাইয়াকে বল। ভাইয়া সব ঠিক করে দিব।”
অভ্র অনেক চেষ্টার পর অর্ঘমার কান্না থামাতে সক্ষম হলো। অর্ঘমা ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে পানি দিয়ে এলো। অভ্র তার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল। অল্প পানি খেয়ে অর্ঘমা বলল,
-“ছাদে যাব ভাইয়া।”
ঘড়িতে সময় দেখল অভ্র। সকাল দশটা বাজে। আজকে জুমার নামাজ আছে। অবশ্য নামাজ শুরু হতে এখনো অনেক সময় বাকি। তাই বোনের কথায় সায় দিয়ে তাকে নিয়ে ছাদে গেল।
ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দূর আকাশ পানে তাকিয়ে অর্ঘমা জিজ্ঞেস করল,
-“জন্মের পর থেকে কী এখন পর্যন্ত কখনো আমার গায়ে হাত তোলা হয়েছে ভাইয়া?”
-“না। তোর গায়ে হাত তুলব কেন? তুই তো আমার লক্ষী বোন। আমার পুতুল বোন। তোকে মা/রা/র প্রয়োজন পড়েনি আজ পর্যন্ত।”
-“অথচ গত পরশু মা আমার গায়ে হাত তুলেছে। থা/প্প/ড় মেরেছে আমাকে।”
অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকাল অভ্র। অর্ঘমা মলিন হেসে বলল,
-“আমিও তোমার মতো ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম যে মা আসলেই আমাকে মেরেছে তখন খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার। এখনো হচ্ছে।”
-“কেন মে/রে/ছে? মানে হয়েছিল কী আসলে?”
অর্ঘমা তার ভাইকে পুরো বিষয়টা খুলে বলল। সবটা শুনে অভ্রর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছে ভ/স্ম করে দেবে সবাইকে। রাগে তার র/ক্ত টগবগ করে ফুটছে। অর্ঘমাকে সাথে নিয়ে নিচে নেমে গেল অভ্র। বাসায় এসে কোনো চেঁ/চা/মে/চি কিছুই করল না। মাথা ঠান্ডা করে নিধিকে ডাকল। নিধি তো আসলই সাথে মিনা বেগমও হন্তদন্ত হয়ে বের হলেন রান্নাঘর থেকে। তার ছেলে আবার নিধিকে কেন ডাকছে? অভ্র নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,
-“তোমাকে এই বাসায় কাজ করার জন্য নিয়ে আসা হয়নি। পরীক্ষা চলছে না? রুমে গিয়ে পড়াশোনা করো। তোমাকে যেন আমি আর কখনো বাসার কোনো কাজ করতে না দেখি। লাগলে বাসায় কাজের মানুষ একটা রেখে নিব। তুমি শুধু মন দিয়ে পড়াশোনা করবে।”
অর্ঘমার দিকে তাকিয়ে অভ্র বলল,
-“ওকে নিয়ে রুমে যা। পড়াশোনা ছাড়া ওর আর তোর অন্য কোনো কাজ নেই। গিয়ে পড়তে বস দু’জনে। পরীক্ষা ভালো হওয়া চাই।”
অর্ঘমা ভাইয়ের কথামতো নিধিকে নিয়ে রুমে চলে গেল। মিনা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন অভ্রর দিকে। অভ্র সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজের রুমে চলে গেল। ছেলে যখন একবার বলে দিয়েছে তখন আর নিধিকে কোনো কাজে ডাকা যাবে না বুঝতে পেরে রাগে গজগজ করতে করতে নিজেই রান্নাঘরে ঢুকলেন।

অভ্রকে সন্দেহ করার কোনো মানেই হয় না। অভ্র তেমন ছেলেই নয়। তবুও চিন্তা হচ্ছে মিনা বেগমের। যতই হোক জোয়ান ছেলে বলে কথা। যদি মতিভ্রম হয়ে যায়? এছাড়াও আশেপাশের প্রতিবেশীরা সকলে জেনে গেছে তাদের বাসায় অর্ঘমার অবিবাহিত বান্ধবী থাকছে। তারা এখন বিভিন্ন বা-জে মন্তব্য করছে। অনেকে তো আবার তার কাছ থেকেই নিধির ব্যাপারে জেনে তার মনে সন্দেহ তৈরি করে দিয়েছে। সবাই বলছে নিধিকে বাসা থেকে বের করে দিতে। তা না হলে নিধি নাকি তার ছেলের মাথা নষ্ট করে দিবে। মূলত এজন্যই তার ভয়।
___
বিকেলবেলা অর্ঘমা আর নিধিকে নীরদের সাথে বাইরে পাঠিয়ে দিল অভ্র। মায়ের সাথে তার একান্তে কথা বলা উচিত। বাবাকেও ডেকে নিবে সাথে। বাবা-মাকে ডেকে সোফায় এসে বসল অভ্র। এবার খোলাখুলি ভাবে কথা বলা যাবে। মায়ের এত কিসের সমস্যা তা-ও জানা যাবে।
-“কী হয়েছে?”
বাবার কথায় অভ্র শান্ত গলায় বলল,
-“কী হয়েছে সেটা তো মা বলবে। নিধি, অর্ঘমা দু’জনকেই নীরদের সাথে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছি। এবার মা বলো, সমস্যা কী?”
-“কিসের সমস্যা?”
-“তুমি অর্ঘমার গায়ে হাত তুলেছ কেন? আর নিধির সাথে তোমার এমন জঘন্য আচরণের মানে কী?”
থতমত খেয়ে গেলেন মিনা বেগম। মেয়েটা এভাবে অভ্রকে সব বলে দিবে সেটা কে জানত? মনে মনে কথা গুছিয়ে নিয়ে বললেন,
-“অর্ঘমা বেয়াদবি করেছে তাই মে/রে/ছি। এতটুকু মেয়ে মায়ের সাথে বে/য়া/দ/বি করার সাহস পায় কীভাবে? এই সাহস যাতে দ্বিতীয়বার না দেখায় তাই মে/রে/ছি। শাসন করার অধিকার আমার আছে।”
-“অবশ্যই শাসন করার অধিকার তোমার আছে। কিন্তু অযৌক্তিক কারণে শাসন করার অধিকার তোমার নেই। অর্ঘমা শুধু নিধির হয়ে কথা বলায় তুমি ওকে মে/রে/ছ।”
-“আমাকে একটু খুলে বলবি, আসলে হয়েছে কী?”
বাবার প্রশ্ন শুনে অভ্র তার দিকে তাকাল। অর্ঘমার বলা সব কথা তাকে বলল। সব শুনে বেজায় রেগে গেলেন তিনি। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে তাকে ধ/ম/কে উঠলেন। অভ্র থামাল তাকে। তিনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
-“অর্ঘমা নিধিকে বাড়িতে নিয়ে আসায় তো আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আর আমার মেয়ে আমার টাকা উড়াচ্ছে। এতে তোমার সমস্যাটা কোথায়? কোন সাহসে ওর গায়ে হাত তুলেছ তুমি?”
-“বেশ করেছি মে/রে/ছি। আরও মা/র/ব লাগলে। নিধিকে আমি আমার বাসায় দেখতে চাই না। ধ/র্ষি/তা একটা মেয়েকে বাসায় রেখে কত কথা শুনতে হচ্ছে আমাকে তা জানো তুমি?”
-“মা! কথাবার্তা বলার আগে ভেবে চিন্তে বলবে। তোমাকে বারবার বলেছি নিধির কোনো ক্ষ/তি হয়নি সেদিন। তবুও বারবার মেয়েটাকে তুমি ধ/র্ষি/তা বলছ কেন?”
-“তোরা বললেই আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? আমি তোদের চেয়ে অভিজ্ঞ মানুষ। আমি ওকে দেখেই বুঝতে পেরেছি ওর সাথে কী কী হয়েছে।”
-“তুমি অভিজ্ঞ মানুষ হতে পারো, কিন্তু ডাক্তার নও। নিধির শরীর খারাপ থাকায় সেদিন ওকে হসপিটালে ভর্তি করেছিলাম। ডাক্তার তখনই চেকাপ করে জানিয়েছিলেন ওর শারীরিক কোনো ক্ষ/তি হয়নি।”
মিনা বেগম নিজের মনে গড়া আরও কিছু অযৌক্তিক কথা বলতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু তাতে বাধ সাধলেন অভ্রর বাবা। স্ত্রীকে ধমকে চুপ করিয়ে দিলেন। শাসিয়ে বললেন,
-“নিধির যতদিন মন চাইবে থাকবে এখানে। ওকে কোনো প্রকার কটু কথা তুমি শোনাবে না বা ওকে দিয়ে কোনো কাজ তুমি করাবে না। আর না অর্ঘমাকে এই নিয়ে কিছু বলবে। যদি শুনেছি এমন কিছু তুমি করেছ তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন। কথাটা মাথায় রেখো। টাকা তোমার যাচ্ছে না। টাকা গেলে আমার যাচ্ছে। আমার যখন সমস্যা হচ্ছে না তখন তোমারও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”

চলবে…

#কিশোরী_কন্যার_প্রেমে
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৪
.
আলোর তীব্রতায় ঝলমল করছে চারপাশ। আজ নুসরাতের বিয়ে। বিয়ে হচ্ছে কনভেনশন হলে। অর্ঘমা ভেতরে ঢুকেই আশেপাশে একবার ভালো করে দেখে নিল। সে ভেবেছিল লোকসমাগম খুব বেশি হবে। কিন্তু তার ভাবনার থেকে লোকসমাগম এখানে অনেকটাই কম দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। বেশি ভীড় তার কোনো কালেই পছন্দ না। অস্বস্তি হয় প্রচন্ড। অর্ঘমা ওড়না ঠিক করে এগিয়ে গেল স্টেজের দিকে। উদ্দেশ্য নুসরাতের সাথে দেখা করা। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নীরদকেও খুঁজল। কিন্তু ছেলেটা লাপাত্তা। কোথায় গেছে কে জানে! অভ্রকে দেখা যাচ্ছে খাবারের ওখানে দৌড়াদৌড়ি করছে। তার মানে নীরদও সেখানেই আছে। আর যাই হোক নীরদকে ছাড়া অভ্র একা একা কখনো ওখানে দৌড়াদৌড়ি করবে না।

স্টেজের নিচে একপাশে নুসরাতের মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন মিনা বেগম। অর্ঘমা তাকে দেখেও কিছু বলল না। নুসরাতের মাকে সালাম দিয়ে স্টেজে গিয়ে নুসরাতের পাশে বসে পড়ল। অর্ঘমার মায়ের সাথে অর্ঘমার একটা নীরব যুদ্ধ চলছে। সেদিন অভ্র আর বাবার ঝাড়ি খেয়ে মা অর্ঘমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছেন। অর্ঘমা নিজে থেকে কয়েকবার গিয়েছিল মায়ের সাথে কথা বলতে কিন্তু তিনি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। হঠাৎ মায়ের এমন অবহেলা সহ্য করতে পারছে না অর্ঘমা। এমন কী হয়েছে যে মা তার সাথে কথা বলছে না? মা সারাক্ষণ তাকে এমনভাবে উপেক্ষা করে যাচ্ছে যেন সে অদৃশ্য। অর্ঘমার ভেতরটা কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছে মায়ের সাথে কথা বলতে না পেরে, সেটা কী মা বুঝতে পারছে না? হয়তো পারছে না। কান্না পেল অর্ঘমার। কিন্তু নিজেকে দমিয়ে রাখল সে। মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে নুসরাতের সাথে কথা বলতে লাগল। প্রায় আধঘন্টা পর নীরদকে দেখতে পেল। তাও শুধুমাত্র একপলক। ছেলেটা ভীষণ ব্যস্ততায় আছে বুঝা যাচ্ছে। এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছে সমানে। শত হোক একমাত্র বোনের বিয়ে বলে কথা। সবকিছু একদম ঠিকঠাক হওয়া চাই।

নিধি আসেনি অনুষ্ঠানে। নীরদ এবং নুসরাত দু’জনেই বারবার আসতে বলেছিল তাকে, তবুও সে আসেনি। অর্ঘমা বার কয়েক জোরাজোরি করছিল কিন্তু নিধি আসবেই না। কারণ দু’দিন বাদেই আবার পরীক্ষা আছে। নিধির প্রস্তুতি কিছুটা কম থাকায় সে এখন বইয়ের ভেতরে মুখ গুঁজে বসে আছে। সেদিনের পর থেকে মিনা বেগম নিধিকে আর কোনো কাজে ডাকেন না। এমন কি কোনো কথাই বলে না তার সাথে। নিধি বুঝে অর্ঘমার মা তাকে পছন্দ করে না। কিন্তু তার কিছুই করার নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে অনেক কিছুই হজম করে নিতে হয়। অর্ঘমাদের পাড়া-প্রতিবেশিরা তাকে দেখতে পেলেই কটু কথা শোনাতে পিছপা হয় না। নিধি প্রথম প্রথম বিস্মিত হতো এদের কথার ধরন শুনে। কিন্তু পরবর্তীতে সে যখন জানতে পারল এসব কথা অর্ঘমার মা নিজেই ছড়িয়েছে তখন তার আর কিছু বলার মতো ভাষা ছিল না। মানুষের মন-মানসিকতা তো সে আর পরিবর্তন করতে পারবে না। যে পর্যন্ত না নিজে কিছু করতে পারছে, সেই পর্যন্ত তাকে এখানেই থাকতে হবে। এসব কথার মাঝেই নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পড়ায় মনোযোগ দেয় নিধি। তার জীবনে সুখ বলতে কিছুই নেই। সুখ তার কাছে মরীচিকার মতো। সুখ শব্দটাই তো তার জীবনের জন্য হাস্যকর।

অর্ঘমা স্টেজ ছেড়ে খাবারের ব্যবস্থা যেদিকে করা হয়েছে সেদিকে গেল। যদি অভ্র বা নীরদকে পাওয়া যায় এই আশায়। স্টেজে বসে থাকতে তার একদমই ভালো লাগছিল না। এত এত আন্টি-আঙ্কেলের দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে পরিচয় দেওয়া দেখে তার ঘুম পাচ্ছিল প্রচন্ড। অবশেষে আর না পেরে নেমেই গেল স্টেজ থেকে। খাবারের সাইডে এসে দেখা গেল অভ্র, নীরদ দু’জনই ব্যস্ত। তাই অর্ঘমা আবারও ফিরে গেল। এবার স্টেজে গিয়ে না বসে চেয়ার নিয়ে স্টেজের পেছন দিকে বসল। এখানে জনমানব তেমন একটা নেই। দু’একজন ছেলেমেয়ে আছে। এরা তার বয়সী কিংবা তার থেকে ছোট হবে। তাই নিশ্চিন্ত মনে বসে মাথা পিলারের সাথে হেলিয়ে রেখে ফোন টিপতে লাগল। কিছুক্ষণ পরে পাশে কেউ বসায় ফোন থেকে চোখ সরিয়ে তার দিকে তাকাল। নীরদ বসে আছে তার পাশে। মৃদু হাসল সে। চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলল,
-“ব্যস্ততা কমেছে?”
-“হ্যাঁ, একটু কমেছে। তোমার ভাইয়ের কাঁধে কাজ গছিয়ে দিয়ে আমি বিশ্রাম নিতে চলে এসেছি।”
কথাটা বলে দু’জনই হেসে ফেলল। পকেট থেকে টিস্যু বের করে অর্ঘমার দিকে এগিয়ে এলো নীরদ। অর্ঘমা তা দেখে ভড়কে গেল। নীরদ হেসে বলল,
-“ভয় কেন পাচ্ছ? আমি তো জাস্ট তোমার কাজলটা ঠিক করে দিতে চাইছি। লেপ্টে গেছে একপাশে।”
-“ওহ আচ্ছা।”
-“এবার ঠিক করি?”
অর্ঘমা হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। যত্ন করে অর্ঘমার লেপ্টে যাওয়া কাজলটুকু মুছে দিল নীরদ। টিস্যুটা পকেটে ঢুকিয়ে হাতে থাকা কোকের বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“অনেকক্ষণ যাবৎ বসে আছ। এটা খেয়ে গলা ভিজিয়ে নাও। তোমার প্রিয় কোকাকোলা।”
নীরদের বলার ভঙ্গি দেখে অর্ঘমা না হেসে পারল না। কিছু একটা মনে পরতেই নীরদ আশেপাশে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“নিধি আসেনি?”
-“না।”
-“কেন?”
-“অনেকবার জোর করেছিলাম। ও আসবেই না। দু’দিন পর আবার পরীক্ষা। ওর প্রস্তুতি ঠিকঠাক মতো নেওয়া হয়নি। এজন্যই বইয়ের ভেতরে মুখ গুঁজে বসে আছে।”
নীরদ বিরক্ত হয়ে বলল,
-“তোমরা এত পড়ো কীভাবে? আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি ফাঁকিবাজ ছাত্রী হবে। পরে দেখি তুমি অতিরিক্ত পড়ুয়া। এত পড়লে মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে যাবে।”
অর্ঘমা খিলখিল করে হেসে বলল,
-“কে কাকে বলে? আপনি তো নিজেই গড মুন এডুকেশন সী।”
-“মানে?”
-“ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যা সাগর।”
এবার বেশ কয়েকজনের হাসির আওয়াজ পাওয়া গেল। চমকে পাশে তাকাল অর্ঘমা আর নীরদ। সেখানে থাকা ছেলেমেয়ে গুলো হাসছে। অর্ঘমা এদের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল নীরদকে দেখে।
-“ছবি তুলেছ একটাও?”
-“না।”
-“তুলবে না?”
-“আপনি তুলে দিলে তুলতে পারি।”
নীরদ হেসে বলল,
-“আসো তুলে দিচ্ছি।”
নীরদ বেশ কয়েকটা ছবি তুলে দিল অর্ঘমার। দু’জনে মিলে একসাথে কয়েকটা সেলফিও তুলল। ওদের ছবি তোলার মাঝেই অভ্র এসে দাঁড়াল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“আমাকে ছাড়াই ছবি তোলা হচ্ছে?”
-“একদমই না। তোমার কথাই বলছিলাম আমরা। তাই না অর্ঘমা?”
অর্ঘমা মাথা নাড়িয়ে ‘না’ করল অথচ মুখে ‘হ্যাঁ’ বলল। বলে নিজেই জিহ্ব কামড়ে অন্যদিকে তাকাল। হেসে ফেলল অভ্র আর নীরদ। নীরদ তার এক বন্ধুকে ডেকে এনে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-“আমাদের তিনজনের ছবি তুলে দে।”
অভ্র, অর্ঘমা আর নীরদ দাঁড়িয়ে পোজ দিয়ে বেশ কয়েকটা ছবি তুলল। নীরদের ডাক পরতেই সে অর্ঘমাকে বলে অভ্রকে নিয়ে চলে গেল। অর্ঘমা নিজের জায়গায় বসতেই কানের পিঠে কেউ একটা গোলাপ গুঁজে দিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল,
-“এই লাল গোলাপটি এই সুন্দর মেয়েরই প্রাপ্য।”
অর্ঘমা চমকে পেছন ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেল নীরদকে। ঠোঁটে চমৎকার হাসি নিয়ে পাঞ্জাবির পকেটে হাত গুঁজে চলে যাচ্ছে ছেলেটা। একটু আগের কথা মনে পড়তেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল গাল দু’টি। লাজুক হেসে চোখ নামিয়ে নিয়ে চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে গোলাপটা ছুঁয়ে দেখল। নীরদের বলা কথাটা বারবার তার কানে বেজে চলেছে। খুশিতে পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। নীরদের একটা প্রসংশা বাক্যই তার কাছে অনেক কিছু।
___
পরীক্ষার খাতা হাতে নিয়ে উদাসীন ভঙ্গিতে টেবিলে বসে আছে অর্ঘমা। মুখে তার কালো মেঘের ঘনঘটা। ভীষণ মন খারাপ তার। গত দুইদিন নীরদের কোনো খোঁজখবর নেই। মন খারাপের ব্যাপার এটা না। মন খারাপের কারণ হলো আজ স্কুল থেকে ফেরার সময় নীরদকে রাস্তায় একটা মেয়ের সাথে দেখেছে অর্ঘমা। সাথে অবশ্য নিধিও ছিল কিন্তু সে নীরদকে খেয়াল করেনি। গত দুইদিন তাদের স্কুলে পৌঁছে দিয়েছে অভ্র। আর বাসায় আসার সময় অভ্রর বন্ধু এসেছিল নিতে।

অর্ঘমা নিজ ভাবনায় এতটাই মগ্ন ছিল যে কলিংবেলের শব্দ তার কানে গেল না। নিধি অর্ঘমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলল না। আগে দরজা খোলা উচিত ভেবে তাড়াতাড়ি ছুটে গেল সে। দরজা খুলে নীরদকে দেখে সালাম দিয়ে ভেতরে আসতে দিল। নীরদ রুমে ঢুকে দেখল অর্ঘমা চুপচাপ পরীক্ষার খাতাগুলো উল্টিয়ে দেখছে। চেয়ার টেনে বসতেই চমকে উঠল অর্ঘমা। নীরদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সালাম দিয়ে পরীক্ষার খাতা এগিয়ে দিল। নিধিও এসে অর্ঘমার পাশে বসল। নিজের পরীক্ষার খাতা বের করে এগিয়ে দিল নীরদের দিকে। দু’জনই বেশ ভালো নাম্বার পেয়েছে। খুশি হলো নীরদ। খাতা পাশে রেখে পড়ানো শুরু করল।

নীরদ আজ খুব অবাক হয়েছে অর্ঘমাকে এত চুপচাপ দেখে। যে মেয়েটা প্রতিদিন পড়ার ফাঁকে ফাঁকে নানান রকম দুষ্টুমি কথাবার্তা বলে, এমন কি নিধি আসার পর থেকেও যার এই স্বভাব বদলায়নি, সেই মেয়ে কিনা আজ একেবারে চুপ। পড়ার বাইরে একটা বাড়তি কথাও আজ অর্ঘমার মুখ থেকে বের হয়নি। নীরদের ভালো লাগল না ব্যাপারটা। পড়ানো শেষ করে নিধিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“এক গ্লাস ঠান্ডা পানি পাওয়া যাবে?”
-“অবশ্যই পাওয়া যাবে ভাইয়া। আপনি বসুন, আমি আনছি।”
নিধি যেতেই নীরদ অর্ঘমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“কী হয়েছে? মন খারাপ কেন আজ?”
-“কিছু হয়নি। এমনি ভালো লাগছে না।”
-“কিছু তো একটা হয়েছে। বলতে না চাইলে জোর করব না।”
তবুও অর্ঘমা চুপ করে রইল। নীরদ বলল,
-“এবার কী চাই?”
প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাল অর্ঘমা। তা বুঝতে পেরে নীরদ বলল,
-“গতবার পরীক্ষার ভালো ফলাফলের জন্য ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলাম। এবার কী চাও? এবারও ঘুরতে যাবে?”
-“না, কিছু চাই না।”
কিছু বলল না নীরদ। অর্ঘমার কিছু একটা হয়েছে তা সে শতভাগ নিশ্চিত। কিন্তু সেটা কী? তার সাথে এমন কেন করছে মেয়েটা? সে কিছু করেছে বলে তো মনে পড়ছে না। তাহলে কী হতে পারে মেয়েটার মন খারাপের কারণ? বাসায় কিছু হয়েছে? হলে তো অভ্র তাকে বলত। যেহেতু বলেনি তার মানে বাসায় কিছু হয়নি। তাহলে কী স্কুলে কিছু হয়েছে? এটা হতে পারে। গত দুই দিন তো সে যায়নি ওদের নিয়ে আসতে। গিয়েছিল অভ্রর বন্ধু। নীরদ কিছুক্ষণ ভেবে ঠিক করল যাওয়ার সময় নিধিকে জিজ্ঞেস করবে এই ব্যাপারে।
দরজার বাহিরে বের হয়ে দাঁড়িয়ে রইল নীরদ। নীরদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিধি দরজা লাগাতে পারল না। প্রশ্ন করল,
-“কিছু বলবেন ভাইয়া?”
-“হ্যাঁ, একটু কথা ছিল।”
-“জি, বলুন।”
-“অর্ঘমার কী হয়েছে?”
নিধি অবাক হলো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“কী হবে?”
-“কিছু তো একটা হয়েছে। ও আজ একদমই চুপচাপ ছিল। দেখেই বুঝা গেছে ওর মন খারাপ। জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু কিছু বলল না। আমার সাথে এত ঠান্ডা ভাবে ও কখনোই কথা বলে না। কিন্তু আজ এমন কেন করল সেটাই বুঝতে পারলাম না।”
-“এই ব্যাপারে আমি তো কিছু জানি না ভাইয়া।”
-“স্কুলে কিছু হয়েছে? বা রাস্তায়?”
-“না।”
-“বাসায় কিছু হয়েছে? আন্টি কিছু বলেছেন?”
-“না আন্টি কিছু বলেন নি।”
-“বুঝতে পারছি না কিছু। আচ্ছা তুমি একটু জিজ্ঞেস করে দেখো তো। ও যদি তোমাকে বলে তাহলে আমাকে জানিয়ো। আগামীকাল আমি যাচ্ছি তোমাদের স্কুলে দিতে।”
-“আচ্ছা ভাইয়া, আমি জিজ্ঞেস করব। যদি আমাকে কিছু বলে তাহলে অবশ্যই জানাব।”
-“ঠিক আছে, আমি আসছি। দরজা লাগিয়ে দাও।”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে