কাছের মানুষ দূরে থুইয়া পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0
185

#কাছের_মানুষ_দূরে_থুইয়া
#পর্ব১১ অন্তিম পর্ব
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ কিরে তুই একা এসেছিস নাকি?তাসফি আসে নি?

মেয়েকে ব্যাগ সমেত একলা বাসার মধ্যে ঢুকতে দেখে কথাটা বলে উঠে লায়লা বেগম। তটিনী ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে ল্যাগেজ টা মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সোফায় বসে পড়ে।
-“ নাহ আসে নি। আমি একাই এসেছি।
-“ একা এলি! অবাক হয়ে বলল লায়লা বেগম।
-“ হুমম।
-“ সব ঠিকঠাক আছে তো? সন্দেহান গলায় জিজ্ঞেস করলো।
-“ হ্যাঁ সব ঠিকঠাক আছে।
-“ সত্যি?
-“ বিশ্বাস না হলে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করো উনা কে।
-“ না থাক। ও বাড়ি যাবি আবার?
-“ হ্যাঁ কাল যাব। আজ এ বাসায় থাকবো।
-“ ও বাড়ির সবাই জানে তোর আসার কথা?
-“ নাহ।
-“ তাহলে?
-“ কি তাহলে? আসার পর থেকেই শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন করে যাচ্ছ। বিয়ের পর যে মেয়েদের নিজ বাড়িতে আসলেও এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় আগে তো জানা ছিলো না।
-“ আশ্চর্য রেগে যাচ্ছিস কেনো? আমি এমনি জিজ্ঞেস করলাম। অনেক টা পথ জার্নি করে এসেছিস রোজা নিশ্চয়ই?
-“ হুমম।
-“ রুমে গিয়ে রেস্ট নে।
-“ হুমম। আব্বা কই?
-“ দোকানে গেছে।
তটিনী নিজ রুমে চলে আসলো। লায়লা বেগম রান্না ঘরে গিয়ে বুট সিদ্ধ বসালো। তটিনী রুমে এসে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গোসল সেরে নেয়। আসরের আজান কানে আসতেই নামাজ পড়ে নেয়। তারপর রান্না ঘরের দিকে যায় মাকে হেল্প করতে।

লায়লা বেগম মেয়ে কে বারন করে। কিন্তু তটিনী শুনে না। সে কাজ করতে করতে আলেয়ার কথা বলে। যার কাছে সে এই কয়েকদিনে বেশ অনেক কিছু রান্না শিখেছে। লায়লা বেগম চুপচাপ মেয়ের কথা শুনলো। গল্পগুজবের মধ্যেই ইফতারের জন্য সব রান্না শেষ হয়। লায়লা বেগম খাবার গুলো টেবিলে সাজাতে সাজাতে তটিনী কে বলে ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে শরবত বানাতে। তটিনী ফ্রিজ থেকে পানির বোতল করে টেবিলের কাছে আনতেই কলিংবেল বেজে উঠে। লায়লা বেগম বলেন- তোর বাবা এসেছে হয়তো। দরজা টা খুলে দিয়ে আয়।

তটিনী বোতল টা টেবিলের উপর রেখে হাস্যজ্বল মুখ নিয়ে দরজা খুলে দেয়। সাথে সাথে তার বাবার চেহারা স্পষ্ট হয়। কিন্তু পাশে আরো একজন পুরুষালি দেহ দেখে চোখ তুলে সেদিকে তাকাতেই হাসি গায়েব হয়ে যায়। তার বাবার পাশে তাসফি ও দাঁড়িয়ে আছে। তারেক মেয়ের জামাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। তটিনী এখনও তাকিয়ে আছে তাসফির দিকে। তাসফি যে আসবে তা ভেবেই দেখে নি তটিনী। তাসফি একবার তাকিয়েছিল তটিনীর দিকে এরপর আর তাকায় নি। তারেক তাসফিকে নিয়ে সোফায় বসে। লায়লা বেগম মেয়ের জামাইকে দেখে অবাক হয়। এদিকে ইফতারের ও টাইম হয়ে যাচ্ছে তাই মেয়ের জামাই আর তারেকের উদ্দেশ্যে বলে-
-“ হাত মুখ ধুয়ে আসো ইফতারের সময় হয়ে আসছে।
তারেক নিজের রুমে চলে গেলো। আর তটিনী কে লায়লা বেগম বলল তাসফি কে নিজের রুমে নিয়ে যেতে। তটিনী একবার তাসফির দিকে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরলো আর পেছন পেছন তাসফিও।
রুমের ভেতর আসতেই তটিনী তাসফির দিকে তাকিয়ে বলে- আপনি এসেছেন কেনো?
তাসফি শার্টের বোতাম দুটো খুলতে খুলতে বলে- শ্বশুর বাড়ি আসা মানা ছিলো নাকি?
-“ আমি খুব ভালো করে জানি কেনো এসেছেন।
-“ তাহলে শুধু শুধু প্রশ্ন করলে কেনো? যাইহোক ইফতারের সময় হচ্ছে হাত মুখ ধুয়ে আসছি।

তাসফি হাতমুখ ধুয়ে আসলে তটিনী ও হাত মুখ ধুয়ে আসে। তারপর ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে। তাসফি তটিনীর পাশের চেয়ারেই বসেছে। আজান কানে আসতেই সবাই দোয়া পড়ে পানি মুখে দেয়। ইফতর করা শেষে তারেক তাসফি কে নিয়ে মসজিদে চলে যায় নামাজ পড়তে। লায়লা বেগম আর তটিনী নিজ নিজ রুমে নামজ পড়ে।

-“ কয়েক দিন থাকবে তো এখানে?
তারেকের প্রশ্নে হকচকিয়ে যায় তাসফি। তটিনী সেই মুহূর্তে তাকায় তাসফির দিকে। ফলে চোখাচোখি হয়। তাসফি তো এসেছে তটিনীর জন্য। অফিসে গিয়েছিল কিন্তু মন বসে নি কাজে। সেজন্য সোজা এখানে চলে আসে তটিনী কে দেখতে। আসার পথেই রাস্তায় দেখা হয় তারেকের সাথে। তাসফি কে কিছু বলতে না দেখে তারেক ফের বলে উঠে –
-“ থাকবে তো?
-“ না আসলে বাবা কালই ফিরতে হবে। আপনার মেয়ে আসতে চাচ্ছিল বলে আসা।

তটিনী রাগী চোখে তাকায়। তাসফি পাত্তা দেয় না।
-“ তটিনী ও কি যাবে?
তাসফির ইচ্ছে করলো হ্যাঁ বলতে কিন্তু হ্যাঁ বলতে পারলো না।
-“ আমি কয়েক দিন থাকবো আব্বু।
ব্যাস কথাটা তড়িৎ গতিতে সে কানে বিঁধল তাসফির। মুহূর্তে মুখটা চুপসে গেলো। রাতে খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলো।

তাসফি বিছানায় বসে আছে অপেক্ষা তটিনীর। তটিনী ওয়াশরুম থেকে আসতেই তাসফি বলে-
-“ না থাকলে হয় না? আমার সাথে কাল ফিরে চলো।
-“ আমি বলেছি কি আপনাকে আসতে?
-“ একা থাকা সম্ভব নয় আমার। প্লিজ চলো অফিস বন্ধ দিলে তখন আবার নিয়ে আসবো।
-“ আমি ও বাসায় যাবো কাল।

বিছানায় বসতে বসতে বলে তটিনী।
-“ আচ্ছা ও বাসায় থেকে বিকেলের দিকে রওনা হই?
-“ পাগল নাকি? রোজার মধ্যে আমি বিকেলে বের হবো! আমি কাল ও রাজশাহী ব্যাক করছি না।
-“ তাহলে কবে? উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে তাসফি।
-“ জানি না কবে। কিন্তু আপনি অফিস বাদ দিয়ে কেনো চলে এসেছেন? বউ পাগল এটা দেখাচ্ছেন?
-“ আমি সত্যি বউ পাগল। এটা দেখানো লাগবে কেনো।
– “ আবার গর্ব করে বলছেন!
-“ সত্যি বললাম।
-“ আপনাকে দেখলেই তো আমার রাগ লাগছে।
-“ একটু মানিয়ে নাও না। একটা ভুল না হয় করছি। তারজন্য তো ক্ষমা চাইছি রোজ। একটু ক্ষমা করে দেখোই না আর কখনও কোনো ভুল অন্যায় করবো না।
-“ মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি বলেই এখনও আপনার সাথে কথা বলছি। তা না হলে কখনই আপনার সাথে কথা বলা তো দূর আপনার মুখ ও দর্শন করতাম না।
তাসফির মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে।
-“ ক্ষমা পাচ্ছি তাহলে?
-“ জানি না। তবে আপনাকে বিশ্বাস খুব সহজে করতেও পারবো না।
-“ সময় নাও সেক্ষেত্রে, আমি অপেক্ষা করবো তোমার বিশ্বাস অর্জনের। তবে প্লিজ দুরত্ব তৈরি করো না আমাদের মাঝে,দূরত্ব বড্ড পোড়ায়।
-“ রোজা রোমজানের মাস আপাতত দূরত্ব বজায় রাখুন তাতেই খুশি আমি।
তাসফি মাথা ঝাকালো। তটিনী পাশে শুয়ে পড়তেই তাসফি তটিনী কে টেনে তার মাথা টা নিজের বক্ষপটে নিয়ে বলে-
-“ সব দূরত্ব সইতে পারবো কিন্তু আমার থেকে তোমার দূরত্ব সইতে পারবো না। এই যে তোমার মাথাটা যেই না আমার বক্ষপটে রাখলাম কেমন শীতল হয়ে গেলো। অথচ কিয়ৎ ক্ষন আগেও এই বক্ষপটে কালবৈশাখী ঝড় বইছিলো। আমি যেই ভুল করেছি তোমার ভাষ্যমতে সেই ভুলের জন্য মৃত্যুর আগ অব্দি আমৃত্যু ক্ষমা চেয়ে যাব প্রয়োজন হলে ক্ষমা করো না কিন্তু আমাকে ছেড়েও দিয়ো না। বড্ড ভালোবাসি।
তটিনী চুপচাপ তাসফির কথা শুনলো। এমনি তে লোকটা মন্দ না। সবাই চায় তার ভালোবাসার মানুষ তাকে মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসুক। তটিনী ও এর উর্ধ্বে নয়। কিন্তু তাসফির সামনে তা স্বীকার করলো না বরং মুখ বাঁকিয়ে বলল। -“ হুহ ভালোবাসি!

তাসফি হাসলো। -“ অনেক ভালোবাসি।
-“ আমি বাসি না ভালো বুঝছেন?
-“ হুমম বুঝলাম। ম্যাডামের জন্য কি করলে আমার মতো অবলাজাতির জন্য তার মনে একটু ভালোবাসা উদয় হবে?
-“ তপস্যা।
-“ কত বছরের?
-“ মৃত্যুর আগ অব্দি।
-“ বেশ সেটাই করবো।

পরের দিন সকাল হলে তাসফি তটিনী কে নিয়ে নিজেদের বাসায় যায়। তানু ড্রয়িং রুমে বসে দাদির সাথে গল্প করছিল। তটিনী তর তাসফি কে দেখে অবাক + খুশি হয়। তটিনীর দিকে এগিয়ে এসে অবাক কন্ঠে বলে-
-“ তোরা!
-“ হু আমরা।
তটিনী গিয়ে সোফায় বসে। জাহানারা বেগম তটিনীর দিকে তাকিয়ে বলে- এই মাইয়া রোজা রাখছো?
তটিনী হ্যাঁ বলে। তাসফি বসে আছে পাশেই।
-“ তরা আইবি জানাই লি না ক্যা?
-“ জানালে সারপ্রাইজড হতে কি করে?
তটিনীর কথায় জাহানারা চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
-“ এই রোজার মধ্যে আইছো অতদূর থিকা রুমে গিয়া রেস্ট লও।
মেঘলা হোসেন হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
-“ আসসালামু আলাইকুম মা,কেমন আছেন?
-“ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
-“ আসতে অসুবিধা হয় নি তো?
তটিনী ডানে বামে মাথা নাড়ালো। তানু বিস্ময় নিয়ে বলল-
-“ আম্মা আপনি জানতেন ওরা আসবে?
-“ হুমম। ওরা তো রাজশাহী থেকে গতকাল এসেছে ও বাড়ি।
তাসফি নিজেও অবাক হলো। তারমানে তটিনী যে রাজশাহী থেকে ফিরেছে সেটা মেঘলা হোসেন জানতো।
তানু অভিমান নিয়ে বোনের দিকে তাকালো।
-“ এসেছিস বললি ও না।
তটিনী বোন কে জড়িয়ে ধরে বলে-
-“ আম্মাই তো আসতে বলল। সেজন্য এসেছি।
তাসফি ভ্রু কুঁচকালো।
-“ আম্মা আসতে বলছে মানে?
তটিনী ইশারায় চুপ থাকতে বলল। রুমে গিয় বলবে। মেঘলা হোসেন তাসফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ সিমির বিয়ের প্রস্তাব এসেছে তুহিনের সাথে। তোকে তো বলেছিলাম।
তাসফি মনে করলো। তিনদিন আগেই জেনেছে তুহিন প্রস্তাব পাঠিয়েছি বিয়ের। তাসফি তুহিনের হাবভাবে বুঝেছিল ও সিমি কে পছন্দ করে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের প্রস্তাব রাখবে ভাবতে পারে নি। রাজশাহী চলে যাওয়ার দরুন সময়ের অভাবে তেমন যোগাযোগ হয় না।
-“ তোমরা কি বললে?
-“ সিমির ও আপত্তি নেই। ওর বাবা মা ও রাজি। আজ পাকা কথা বলতে আসবে।
-“ এই রোজা রোমজানে!
-“ তাতে কি? এরজন্য তটিনী আর তোকে আসতে বলেছিলাম। তুই ব্যাস্ততা দেখালি সেজন্য তটিনী কে বললাম একাই চলে আসতে।

তাসফি এবার তটিনীর হঠাৎ বাসায় আসার কারন বুঝলো। তাসফি তো ভেবেছিল তটিনী তার উপর রেগে চলে এসেছে। এখন জানতে পারলো আসল কারন।

সন্ধ্যার ইফতারের পর তুহিন আসলো তার বাবা মা কে নিয়ে। সিমি দের বাসা পাশেই হওয়ায় তারাও ইফতারের পর চলে আসলো তাসফিদের বাসায়।

দুই পরিবার মিলে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করলো। ঈদের দু’দিন পর বিয়ে। রিমি খুব একটা খুশি না এই বিয়েতে কিন্তু সিমির খুশি দেখে মেনে নিলো। সে কেনো যেনো তুহিন কে দেখতে পারে না।

ছাঁদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে সিমি তুহিন। দু’জনেই নিশ্চুপ। পন করে এসেছে দুজনে হয়তো কথা বলবে না। কিন্তু কথা না বললেও তো হবে না। নীরবতা কে সাইডে রেখে তুহিন বলল-
-“ ফাইনালি তোমাকে পাচ্ছি।
সিমি হাসলো। অমায়িক সেই হাসির দিকে চেয়ে রইলো তুহিন। সিমি হাসি থামিয়ে বলল-
-“ খুব সহজে ধরা দিয়েছি অবহেলা করবেন না এই আমিটার। শুনেছি সহজে পেয়ে গেলে মানুষ কদর করে না তার আপনার ক্ষেত্রে সেটা হলে কিন্তু খবর আছে।
তুহিন চোখ বন্ধ করলো। পরপর দুটো শ্বাস নিয়ে বলল-
-“ আমার কাছে মোটেও তোমার মূল্য কখনও কমবে না সিমি এই ওয়াদা টা আমি করতে পারি। বিশ্বাস আছে নিজের উপর তোমার অমূল্য কখনই করবো না।
সিমি আবার হাসলো। এবার কিছুটা শব্দ হলো তার হাসিতে। সেই হাসির দিকে তুহিন চেয়ে বলল-
-“ তোমার হাসিটা ভীষণ সুন্দর।
সিমি হেসেই জবাব দিলো-
-“ শুধুই সুন্দর?
প্রতিত্তোরে তুহিন কিছু বললো না হাসলো কেবল।

পরের দিন দুপুর হতে তাসফি তটিনী চলে আসে রাজশাহী। আবার নিয়ম করে দুজনে বন্দী হয় তাদের রোজকার নিয়মে। তাসফি অফিসে চলে গেলে তটিনী হয় আলেয়ার সাথে গল্পগুজব করে আর তা না হলে রুমে বসে কিছুক্ষণ কুরআন শরীফ পড়ে, বেলকনিতে বসে ব্যাস্ত শহর দেখে।

বিকেল হলে ইফতারের সব রান্নাবান্না করে। আর সন্ধ্যার আগ দিয়ে তাসফি ফিরে। তারপর দু’জনে মিলে ইফতার করে। তারপর নামাজ পড়ে দুজনে বেলকনি বসে। আজও তাসফির এক হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। তাসফি এক হাতে তটিনী কে জড়িয়ে ধরে আছে। দৃষ্টি দু’জনেরই ঐ দূর আকাশে ভাসমান কালো মেঘ গুলোর দিকে। হাল্কা শীতল বাতাস পুরো শরীর টাকে শীতল করে দিচ্ছে। থেকে থেকে আকাশ থেকে ভেসে আসছে মেঘের গুমুরগুমুর আওয়াজ। দৃশ্য টা বেশ ভালো লাগছে তটিনীর।

-“ আজ বৃষ্টি হবে তাই না?
তটিনীর কথায় হু বলে তাসফি।
-“ আমি ভিজবো আজ।
তাসফি তটিনীর মাথায় আলতো করে হাত রাখে।
-“ জ্বর আসবে ভিজলে।
তটিনীর পছন্দ হলো না তাসফির কথাটা। তাসফির কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে বলল-
-“ মেডিসিন আছে কি করতে? জ্বর আসলে মেডিসিন খাবো। তবুও ভিজবো বৃষ্টি তে।
-“ জ্বর হলে তুমি নিজের মধ্যে থাকো না তটু। একদম নেতিয়ে যাও। তখন কে সামলাবে তোমায়? কয়েক দিন আগের কথা ভুলে গেছো? জ্বরে কি হয়েছিল তোমার? আমি অফিস সামলাবো নাকি তোমায় সামলাবো?
তটিনীর মনে পড়ে যায়,দু সপ্তাহ আগে বৃষ্টি তে ভেজার ফলে টানা তিনদিন বিছানায় পড়ে ছিল। শরীরে মাত্রাতিরিক্ত জ্বর ছিলো। তাসফি তো দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল। এক দিকে অফিস আরেক দিকে অসুস্থ বউ। না পারছিল বউ কে রেখে নিশ্চিন্তে কাজে যেতে আর না পারছিল ছুটি নিতে। মাঝখানে পরিস্থিতির চাপে পড়ে বেহাল দশা। আলেয়া কে রেখে যেত তটিনীর কাছে একটু পর পর ফোন দিয়ে খবর নিতো তটিনীর। আবার বাসায় এসে রান্না করে তটিনী কে খাওয়ানো।
তিনটা দিন পাগলের মতো কেটেছে তাসফির। চতুর্থ দিনে একটু সুস্থ হয় তটিনী।

কথাটা মনে পড়তেই তটিনীর ওষ্ঠদ্বয়ে হাসি ফুটে। সেই সাথে আকাশ চিঁড়ে আবির্ভাব হয় বৃষ্টির। সেই বৃষ্টির দিকে কিয়ৎ ক্ষন চেয়ে থেকে হুট করে তটিনী রুম থেকে দৌড়ে ছাঁদে চলে যায়।

তাসফি পেছন থেকে তটিনী কে ডেকে বৃষ্টি তে ভিজতে বারন করে। কিন্তু তটিনী শুনলো না ছাঁদের দরজা খুলে বৃষ্টি তে ভিজলো।

তাসফি দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ছাঁদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তটিনীর বৃষ্টি বিলাস দেখলো। আবার মেয়েটা জ্বরে ভুগবে। আবার তাকে সারা রাত জ্বালাবে। হুটহাট মাঝ রাতে এটা ওটা খেতে চাইবে বলে ঘুম থেকে তুলবে। আবার ও মেয়েটার চোখ মুখ শুকিয়ে যাবে জ্বরের কারনে।

বেশ অনেকক্ষণ পরও যখন তটিনী কে বৃষ্টির মধ্যে থেকে আসতে না দেখলো তখন তাসফি নিজেই বৃষ্টি তে ভিজে তটিনীর কাছে গেলো। তটিনী দু হাত মিলে চোখ বন্ধ করে আছে। তাসফি কাছে গিয়ে তটিনীর হাত ধরতেই চমকে উঠল। ইতিমধ্যে শরীর আগুনের মতো গরম হয়ে আছে। তটিনী বাহুতে টান পেতেই চোখ মেলে তাকায়। হাসি মুখে তাসফির দিকে তাকিয়ে বলে -“ বৃষ্টি টা বুঝি আমাকে খুশি করার জন্য ই এসেছে আজ! দেখুন না এই বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা আমার সর্বাঙ্গ দেহকে শীতল করে দিচ্ছে। আমি আজ বৃষ্টি বিলাসী।

কথাটা বলে নেতিয়ে পড়ে তাসফির উপর। তাসফি ধরে ফেলে তটিনী কে। তপ্ত শ্বাস ফেলে তটিনী কে পাঁজা কোলে নিয়ে রুমে ঢুকে। এখন মেয়েটা সারা রাত তাকে জ্বালিয়ে মারবে অথচ বিরক্তি নিয়ে একটা টু শব্দ ও করবে না তাসফি। তটিনীর ভেজা শরীর পাল্টে দিয়ে নিজেও কাপড় পাল্টে নিলো। তারপর চুলায় গরম স্যুপ বানিয়ে তটিনী কে ডেকে একটু একটু করে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো। তারপর ভারী কম্বল টা তটিনীর উপর দিতেই তটিনী সেটা ভালো করে শরীরে জড়িয়ে নিয়ে আধশোয়া হয়ে তাসফির বুকে মাথা রাখে। মুহূর্তে মনে হলো আগ্নেয়গিরি লাভা তার বক্ষপটে রাখা হয়েছে। পুড়ে উঠলো বক্ষটা। অথচ মেয়েটা গুটিশুটি হয়ে কি দারুন জাপ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। তাসফি চুমু খেলো এলোমেলো ভেজা চুলে। আজকের রাতে আর তার ঘুম হবে না।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে