এক শহর ভালোবাসা পর্ব-১০+১১

0
3599

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_১০
#সুরাইয়া_নাজিফা

সোফার উপরে ঘুটিশুটি মেরে মাথার পাশে একহাত রেখে বসে আছে স্মৃতি। ও বুঝতে পারছে না এভাবে পালিয়ে পালিয়েই বা কতদিন থাকবে। যদি বাসায় কেউ সত্যি সত্যি ওদের সম্পর্কটা না মেনে নেয় তাহলে ওরা কই যাবে।এভাবে অন্যজনের বাসায় বা কতদিন।নেহাত ফারিন অনেক ভালো মানুষ তাই এতোদিন ওদের সহ্যে করেছে। কিন্তু তাই বলে তো এমন নয় যে সবসময় সহ্য করবে। চিন্তায় চিন্তায় খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। তাও প্রিয় মানুষটা সাথে আছে বলে একটু শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারছে নাহলে হয়তো দম বন্ধ হয়েই মারা যেতো।

স্মৃতির ভাবনার সুতা কেঁটে চায়ের কাপের টুংটাং শব্দে তিন কাপ চা নিয়ে হাজির হলো ফারিন। চায়ের কাপ গুলো সেন্টার টেবিলে রেখে স্মৃতির পাশে বসে বললো,

“চা টা নিয়ে নে। ”
স্মৃতির দিকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিলো ফারিন। চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে স্মৃতি বললো,
“আরশ কই। ”
“ওই রুমে দেখেছিলাম। আমি আসতে বলে এসেছি। ”
স্মৃতি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। ফারিন বললো,

“সারাদিন কি এতো চিন্তা করিস তুই
স্মৃতি? আগে যেই স্মৃতিকে চিনতাম আর এই স্মৃতির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। এতো গম্ভীর হয়ে গেছিস কেন? ”

স্মৃতি চায়ের কাপটা নিচে রেখে বললো,
“এতো চিন্তার মাঝে হাসি-খুশি কি করে থাকবো বলতো। আমি পালিয়ে আসার পর আমার বাড়ির কেউ আমার একটু খোঁজও নেয়নি বুঝতে পারছিস। আমাকে হয়তো ভুলেই গেছে সবাই। ”
বলেই স্মৃতি কান্না করতে শুরু করলো।

ফারিন স্মৃতিকে শান্তনা দিয়ে বললো,
“আরে আঙ্কেল আন্টি তো এখন একটু রেগে আছে তোর উপর তাই এমন করছে। তুই দেখিস তুই যখন ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াবি ওরা কখনোই তোর উপর মুখ ফিরিয়ে থাকতেই পারবে না। ”

“তুই বাবাকে চিনিস না ফারিন। আমার পরিবারের একটা মানুষও আমার থেকে এটা আশা করেনি। সেদিন শুধুমাত্র আমার জন্য আমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ অপমানিত হয়েছে।আমার জন্য সোহাও একটা অপ্রত্যাশিত সম্পর্কে জড়িয়ে গেল।আর আমি শুধু আমার সুখটাই বড় করে দেখে চলে এলাম স্বার্থপরের মতো। সবার কাছে দোষি হয়ে গেছি আমি। ”

“উফ স্মৃতি তুই এতো ভেঙে পড়ছিস কেন?সোহা বলেছে তো ও সব ঠিক করে দিবে। ”

“সোহা বাচ্চা একটা মেয়ে ও কি করে কি করবে বলতো। ওকে সবসময় আমাকে সামলাতে হয়। আমার মনে হয় না এতো বড় ঝামেলা ও কখনো সামাল দিতে পারবে। ”

“আমি বলছি সোহা পারবে। সোহাকে আমি যতটুকু বুঝেছি হয়তো ওর মধ্যে বাচ্চাসূলভ স্বভাব একটু বেশী। কিন্তু ও একটা সমস্যা যেভাবে অনুধাবন করতে পারে। যেভাবে সবদিক সামলাতে পারে। একদম হুট করেই বড় হয়ে যায় তখন। তাই আমার মনে হয় ও পারবে। কেন তোর মনে নেই আমার আর সাদিফের সম্পর্কটা কিন্তু সোহার কারণেই আজ পূর্ণতা পেয়েছে।”

তখনই আরশ পাশের রুম থেকে ড্রয়িংরুমে এসে বললো,
“রাইট। এটাই আমি ওকে সবসময় বুঝাই যে সোহা হয়তো একটু মজা মাস্তি করে লাইফটা কাটাতে চায়। কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না। তবে ওর মাথা আমাদের সবার থেকে বেশী চলে আর ও ঠিক আমাদের সাহায্য করবে। কিন্তু এই ম্যাডাম তো নিজের বোনের উপরই বিশ্বাস রাখতেই পারছে না। ”

স্মৃতি একটু বিরক্তির সাথে বললো,
“কথাটা এখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের না আরশ। আমি অনুতপ্ত এই জন্য যে আমার কারণে আমার ছোট্ট বোনটার জীবনে এতো চাপ পড়ছে।এতো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ”

“তুমি শুধু শুধুই চিন্তা করছো স্মৃতি। সোহা খুবই ভালো আছে ভাইয়ার সাথে।দেখো তুমি শান ভাইয়া থাকতে সোহার জীবনে কোনো চাপ পড়তেই দিবেনা। ”

“অদ্ভুত আরশ তুমি এমন ভাবে বলছো যেন তোমার ভাই আমার বোনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। ওদের বিয়েটা কিন্তু আমাদের করা একটা ভুলের কারণেই হয়েছে সেটা ভুলে যেও না। জানি না শান ভাইয়া আমার বোনকে মেনে নিয়েছে কিনা। ”
আরশ মুচকি হেসে বললো,
“সেটাই তো সিক্রেট। সময় হলে সব জানতে পারবে। আর এছাড়াও সোহা তো ঐদিন বললো তোমাকে যে ও খুব তাড়াতাড়ি আমাদের সাথে দেখা করে যা করার করবে একদম চিন্তা করো না। ”

ফারিন বললো,
“হুম ভাইয়া বুঝান ওকে একটু।আচ্ছা আপনারা কথা বলেন আমি কিছু কাজ সেড়ে আসছি। ”
কথাটা বলেই ফারিন চলে গেল।

ফারিন যেতেই আরশ স্মৃতির হাতের উপর নিজের হাত রেখে বললো,
“আমি আছি তো তোমার পাশে স্মৃতি তারপরেও এতো চিন্তা করছো কেন?”

“তুমি আছো বলেই তো এখনও বেঁচে আছি। আচ্ছা আরশ তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে চলে যাবে নাতো?”

স্মৃতির কথা শুনে আরশ রেগে বললো,
“এসব কি কথা বলছো স্মৃতি। ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য কি পরিবারের সবার অমতে তোমার হাত ধরে বেড়িয়ে এসেছি। কেন এসব বেহুদা কথা বলছো। ”

“তুমি এতো রাগ করছো কেন? আমি তো এমনি বললাম। ”

“কেন বলবে আমার ভালোবাসার উপরে কি তোমার বিশ্বাস নেই? ”

“আছে তো বিশ্বাস। নিজের থেকেও বেশী। ”
বলেই আরশের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরলাম,
“আচ্ছা আরশ যদি আমাদের কেউ না মেনে নেয় তাহলে কি হবে? ”

আরশ হেসে বললো,
“কি আর হবে এভাবেই একটা পাখির মতো খড়কুটো দিয়ে ছোট্ট একটা ঘর বানিয়ে সেখানেই সারাজীবন দুজনে একসাথে থাকব। ”

“আমি কিন্তু সিরিয়াসলি বলছি। ”

“তোমার কি মনে হয় আমি তোমার সাথে মজা করেছি আমিও সিরিয়াসলি বলছি।কেউ না মানলে আমরা এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী একটা না একটা চাকরী তো অনায়াসেই পেয়ে যাবো।তারপর আমাদের মতো করে বাঁচব।আমাদের একসাথে যেই ছোট্টঘর বানানোর স্বপ্ন। একটা সংসার সাজানোর স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা অবশ্যই পূরণ করব। ”

আরশ স্মৃতিকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। স্মৃতিও নিজের মাথাটা আরশের বুকে রেখে একটা শান্তির নিঃশ্বাস নিলো। এই জায়গাটাই তো ওর চিন্তা মুক্তির একমাত্র জায়গা। যেখানে থাকলে ওর মনে হয় ওর জীবনে শুধু খুশি আর খুশিই আছে। সেখানে কোনো দুঃখের ছায়া নেই।


“অনেক সময় হয়ে গেছে আমাদের এইবার যেতে হবে চলো। ”

আমি হাঁটতে হাঁটতে শানের কথা শুনে থমকে দাঁড়ালাম,
“আপনি এতো রুড কেন বলেন তো? এই সুন্দর প্রকৃতিতে এসেও আপনার মুড চেন্জ করতে পারলেন না। একটু স্থির হয়ে সমুদ্রের সৌন্দর্যটা অনুভব করুন না। ”

শান সোহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার যাকে অনুভব করার তাকে অনুভব করে নিয়েছি।বর্তমানের আর কিছু অনুভুতিতে আনতে চাইছি না। ”

এতক্ষন আমি আর শান পাশাপাশি হাটছিলাম। হঠাৎ উনার কথা শুনে আমি উনার দিকে ঘুরে উনার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ওনার দিকে চেয়ে পিছনে হাটতে থাকলাম।পিছনের দিকে না দেখে। আর শান নিজের দুই পকেটে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাটছে।আমি আগ্রহের সাথে প্রশ্ন করলাম,

“যাকে মানে? কাকে অনুভব করছেন কোনো মানুষ না অন্যকিছু?”

শান মুচকি হেসে বললো,
“অবশ্যই মানুষ।আর শুধু মানুষই নয় একটা মেয়ে মানুষ। যার মনটা এই সাগরের মতো বিশাল আর সুন্দর,চেহারায় সূর্যের রশ্মির মতো সৌন্দর্য আর হাসিটা যেকোনো মিষ্টিকেও হার মানাবে সে মেয়েটাই এমন। ”

উনার কথা শুনে আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম,
“বাবা আপনি আবার ধমক ছাড়া এতো সুন্দর উপমা দিয়েও কথা বলতে পারেন জানা ছিল না তো। ”

“কি করে জানবে?কখনো চেষ্টা করেছো আমাকে বুঝার বা জানার? ”

আমি কিছু একটা ভেবে বললাম,
“হুম সেটাও ঠিক কথা। ”

কিন্তু পরমুহূর্তেই অনেকটা আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলাম,
“বাট মেয়েটা কে?আপনি যেভাবে বললেন মনে হয় অনেক সুন্দর।”

“হুম সুন্দর তো। অন্য সবার কাছে কেমন আমি জানি না। তবে আমার কাছে পৃথিবীর সব সুন্দর মেয়েদের থেকে সে বেশী সুন্দরী। ”
ওনার কথা শুনে কেন জানি আমার খুব মন খারাপ হলো। কি এমন সুন্দর মেয়েটা? আচ্ছা সে কি আমার থেকেও বেশী সুন্দর?হবে হয়তো নাহলে কি এতো প্রশংসা করতো। আমার জন্য তো নিজের মুখ থেকে কোনো দিনও দুটো ভালো কথাও বের হয় না। আর অন্য একটা মেয়েকে দেখো কতো সুন্দর করে প্রশংসা করছে। আমি হতাশ হয়ে বললাম,

“মেয়েটি নিশ্চয়ই আপনার গার্লফ্রেন্ড?তাহলে আমার সাথেও মিট করিয়ে দিন। ”

কথাটা বলতেই হুট করে শান আমার কোমড় ধরে নিজের দিকে টেনে নিলো। আচমকা এমন করাতে আমি পুরা হতভম্ভ হয়ে গেলাম। কি এমন বললাম যে উনি এমন ব্যবহার করছে? আশেপাশে এতো মানুষ কি ভাবছে সবাই । আমি কিছুটা তুতলিয়ে বললাম,

“ক কি ক করছেন আপনি?”
“প্রেম করছি।”
আমি খানিকটা আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললাম,
“মানে? ”
শান ধমক দিয়ে বললো,
“আরে মাথামোটা তোমার কি মনে হয় আমি তোমার সাথে প্রেম করছি? এভাবে উল্টা হাটছো কেন?এখনি একটা লোকের সাথে ধাক্কা খেতে। সোজা হাটো।”

বলেই উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন।আমি মনে মনে বললাম,
“হুম হনুমান একটা একটু ভালো করে কথা বললে কি হয়। দেখিয়ে দিলো আবার নিজের আসল রূপ।আল্লাহ জানে এই খারুচের সাথে কে প্রেম করে। আমার জীবনটাই তেজপাতা বানিয়ে দিছে তাহলে তার জীবনটা তো পোড়া কয়লা বানিয়ে দিবে।”

ভাবতেই ঐ বেচারীর জন্য আমার মায়া লাগতে লাগল। তখনই শান আমাকে চিৎকার করে বললো,
“কি ব্যাপার আজকে সারারাত কি ওখানে দাঁড়িয়েই পাড় করবে নাকি বাসায়ও যাবে। অদ্ভুত যেখানে যাবে সেখানেই আটকে যাবে। আর নড়তেও চায় না। অলসের ঢেঁকি একটা। ”

“উফ এই লোকটা, তোর কি মনে হয় সবাই তুই নামক সুনামির মতো স্পীডে চলবে নাকি। একটা জায়গাও শান্তিতে থাকতে পারলাম না। ”

কথা গুলো মনে মনে আওড়াতে আওড়াতেই শানের কাছে দৌড়ে চলে গেলাম। উনি আমার আগে হাটছেন আর আমি উনার পিছন পিছন। কিছুটা আসতেই একজন ক্যামেরাম্যান বললো,

“ম্যাম, স্যার আপনাদের জুটিটা বেশ ভালো লেগেছে একটা ছবি তুলে দেই? ”

আমি কিছু বলবো তার আগেই শান বললো,
“নো থ্যাংক্স লাগবে না। ”
আমি চিৎকার করে বললাম,
“লাগবে না মানে। ঘুরতে এসেছি আর ছবি তুলব না। আপনি না তুললে না তুলেন আমি তুলব। ”
শান চোখ দেখিয়ে বললো,
“বললাম তো লাগবে না। ভাইয়া আপনি যান।”
“না ভাইয়া আপনি দাঁড়ান আমি তুলব। ”
তারপর শানের দিকে ফিরে বললাম,
“এমন করছেন কেন বলুন তো আমার সাথে ছবি তুললে কি আপনার জাত যাবে নাকি? ওহ স্যরি গার্লফ্রেন্ড দেখে ফেলবে সেই ভয়ে তুলছেন না তাই তো। ”

“একদম ফালতু কথা বলবে না। আমার ছবি তুলতে ভালো লাগে না তাই তুলব না। ”
“প্লিজ প্লিজ প্লিজ তুলুন না অন্তত আমার জন্য। আমার ভালো লাগে ছবি তুলতে। ”

লোকটা আমাদের দিকেই তাকিয়ে ছিল।উনি হয়তো এখানে আসা কাপলদের সাথে আমাদের দুজনকে মিলাতে পারছে না তাই একটু অবাক হয়েই দেখছেন আমাদের দুজনকে। লোকটা হঠাৎ করেই বলে উঠলো,
“আচ্ছা স্যার আপনারা কি কাপল না ভাই-বোন?”

লোকটার কথা শুনেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। শান রাগান্বিত হয়ে বললো,
” সব পাগল আমার সাথে কেন জুটে। আমাদের দেখে কি আপনার ভাই-বোনের মতো লাগে?”

“স্যরি স্যার আসলে ম্যাম এতোবার বলছে বাট আপনি এতো ইতস্তত করছেন সেটা দেখে মনে হলো।”

লোকটার কথা শুনেই আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম। শান আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকাতেই আমি নিজের হাত মুখে চেঁপে ধরে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছিলাম আর মনে মনে বললাম,

” ছবি তুলবি না তাই না এইবার বুঝ ঠ্যালা। ”

সাথে সাথে শান আমার কোমড়ে হাত দিয়ে আমাকে উনার দিকে টেনে নিলো আমি গিয়ে পড়লাম উনার বুকের উপর তারপর ক্যামেরাম্যানকে বললো,

“শুধু একটা ছবি তোলা না তোলা নিয়ে যদি কাপল কিনা সেটা বিবেচনা করা হয় তাহলে এইবার দেখুন আমরা ১০০% কাপল। আর আমরা কোনো প্রেমিক-প্রেমিকা না পিউর হাজবেন্ড ওয়াইফ গট ইট। নাউ তুলুন ছবি। ”

আমি উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি,
“অদ্ভুত সামান্য একটা কথায় এতো রিয়েক্ট করার কি আছে। ”

শান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার দিকে তাকিয়ে কি দেখছ ক্যামেরার দিকে তাকাও। ”
“এভাবে ধরেছেন কেন আমার দম আটকে আসছে ছাড়ুন। ”
শান আরো শক্ত করে নিজের সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কেন আমরা কাপল না আর কাপলরা তো এভাবেই ছবি তোলে। পরে দূরে দূরে দাঁড়ালে আবার কি বলবে তার থেকে এভাবেই থাকো। ”

অজান্তেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল। আমি ক্যামেরার দিকে তাকালাম আর বেশ কতগুলো ছবি আমরা দুজনেই তুললাম। তবে সব ছবিতেই আমার দৃষ্টি শুধু ওনার দিকেই ছিলো। ছবি তোলা শেষে সাথে সাথে আমরা ছবি গুলো নিয়ে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যাক করলাম।



বাড়িতে ঢুকতেই দেখতে পেলাম শানের মা আর বাবা ড্রয়িংরুমে বসে আছে। আমরা ভিতরে আসতেই মা বললো,
“কি ব্যাপার তোদের এই অবস্থা কেন? পায়ে এতো বালি। সোহার শাড়ী ভেজা কি ব্যাপার?”
শান নিজের টাই খুলতে খুলতে বললো,
“সোহার মন খারাপ ছিল তাই ওকে নিয়ে একটু সী-বিচ থেকে ঘুরে আসলাম। ”
বাবা চিন্তিত হয়ে বললো,
“কেন মন খারাপ কেন? ”
“কেনো আবার ও বাড়ি থেকে তো আসতেই চাইছিল না। জোর করে নিয়ে এলাম তাই মন খারাপ। ”
আমি মাথা নিচু করে অভিযোগের স্বরে বললাম,
“না বাবা তেমন কথা নয় আমি শুধু দুটো দিন থাকতে চাইছিলাম বাট উনি সেটাও দেয় নি। ”
বাবা বললেন,
“আচ্ছা ব্যাপার না পরে কখনো গিয়ে থেকে আসবি। এখন এখানেই আমাদের সাথেই থাক। ”
মা বললেন,
“আচ্ছা যা আগে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আয়। যে অবস্থা দুজনের পরে ঠান্ডা লেগে যাবে। ”

মায়ের কথা শুনে আমি আর শান দুজনেই ভালো মানুষের মতো উপরে চলে গেলাম।তারপর ফ্রেস হয়ে নিচে এসে সবার সাথে বসে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে রুমে চলে গেলাম। অনেক টায়ার্ড ছিলাম তাই শোয়া মাত্রই ঘুম পড়ে গেলাম।



পরেরদিন সকালে উঠে দেখলাম শান আমার আগেই উঠে গেছে। রুমের চারদিকে একবার চোখ বুলালাম কিন্তু কোথাও পেলাম না। আমি আর না খুজে আমার মতো উঠে ফ্রেস হয়ে নিলাম।আজকে থেকে ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করব। এতদিন বিয়ের চক্কোরে কিছুই পড়া হয়নি। আমি ড্রেসিংটেবিলের সামনে রেডি হচ্ছিলাম তখনই শান আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

“বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠান হয় জানতাম না তো?”

আমি ওনার দিকে ফিরে বললাম,
“মানে?বিয়ের অনুষ্ঠান হবে কেন?”

“না তুমি যেভাবে সেজেছো তাতে মানুষ সেটাই মনে করবে। ”
শান কফি খেতে খেতে সোফায় বসল,

আমি মুখ ঝামটা মেরে বললাম,
“আমি এভাবেই যাই। ”

“হুম যাও তবে তোমাকে দেখতে যে একদম পেত্নী লাগছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ”

কথাটা বলতেই আমি রেগে উনার দিকে তাকালাম,
“পেত্নী লাগছে মানে?আমি তো দেখতে পাচ্ছি আমাকে সুন্দর লাগছে। ”

শান খিলখিল করে হেসে বললো,
“নিজেকে নিজের কাছে সব মানুষের সুন্দর লাগে। অন্যজনের কাছে তোমাকে কেমন লাগছে সেটাই আসল কথা। আর আমার কাছে তোমাকে মোটেও ভালো লাগছে না। ”
আমি কান্না কান্না মুখ করে বললাম,
“তাহলে এখন? ”

শান উঠে আমার কাছে এসে বললো,
“যাও গিয়ে মুখ পরিষ্কার করে এসো তাহলেই হবে। ”

আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে ওয়াশরুম থেকে ভালো করে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে আসলাম।
“এখন ঠিক লাগছে। ”

শান একবার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিলো আর গালে হাত দিয়ে মনে মনে বললো,
“উফ এখন তো মেকাপ ছাড়া আরো বেশী সুন্দর লাগছে । ”

শানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমি বললাম,
“কি হলো কিছু বলছেন না কেন? ভালো লাগছে না দেখতে? ”

শান নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে বললো,
“হুম বাট কেমন জানি ফ্যাকাসে লাগছে চেহারাটা। ”

আমি মিনমিনিয়ে বললাম,
“ফ্যকাসে লাগবে কেন?আপনি ঠিক করে আমাকে দেখে বলুন এখন নিশ্চয় ভালো লাগছে। ”

শান একটু মাথা চুলকে বললো,
“দেখেই বলেছি। আচ্ছা তুমি দুই মিনিট দাঁড়াও আমি আসছি। ”

বলেই শান কোথায় চলে গেল। এদিকে আমার লেইটও হচ্ছে।আমি বিরক্তির সাথেই মনে মনে বললাম,
” অদ্ভুত তো এখন গেলো কোথায়। ”

কিছুক্ষন পরই সে হাতে একটা ক্রিম নিয়ে আসল,
“নেও এটা লাগাও তাহলে ভালো লাগবে। ”

“এটা কি ক্রিম। আমি এসব ইউজ করিনা। ”

“আরে করেই দেখো না ভালো লাগবে দেখতে।নাহলে আর কি পেত্নীর চেয়েও খারাপ লাগছে আমার বলার বললাম বাকিটা তোমার ইচ্ছা। ”

শান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের ঘড়ি পড়তে লাগল। আমি আর উপায় না পেয়ে ওটাই ইউজ করলাম। ঘড়ির দিকে খেয়াল করতেই দেখি অনেক লেইট হয়ে গেছে তাই তাড়াতাড়ি বের হবো তখনই শান বললো,

“চলো আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসছি। ”
“আপনি আবার উল্টা যাবেন কেন। লাগবে না আমি পারবো।”

“আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি আর না অনুরোধ করেছি। আমি তেমাকে যেতে বলেছি মানে যাবে। দ্যাট’স ফাইনাল। তাড়াতাড়ি এসো। ”

কথাটা বলেই উনি আগে বেরিয়ে গেল। আমি উনাকে মুখ ভেঙালাম
“আমি তো উনার কষ্ট হবে ভেবেই বললাম। তারপরও আমাকেই রাগ দেখায়। ”

তারপর বাবা মাকে বলে বেরিয়ে গেলাম। উনি আমাকে স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলেন।এরপর ওখান থেকে ট্রেনে করে আমি একাই গেলাম।কারণ আমার ফ্রেন্ডেরা সব ক্যাম্পাসেই থাকে। তাই ক্যাম্পাসে গেলেই সবার সাথে দেখা হবে। ক্যাম্পাসে পৌছেই ক্লাসে চলে গেলাম। মাত্র কয়েকদিন আসেনি তাতেই মনে হয় কয় বছর আসিনি।প্রাণ ভরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে নিলাম প্রাণের ক্যাম্পাসের বাতাসে।

কম্পাসে পৌঁছাতে ওদেরকে কয়েকবার ফোন দিলাম বাট কেউ রিসিভড করলো না। ভাবলাম সবাই হয়তো ক্লাসে আছে তাই আমিও ক্লাসে চলে গেলাম। কিন্তু ক্লাসে গিয়েই আশ্চর্য হলাম এখানেও কেউ নেই। ক্লাস পুরা ফাঁকা তাহলে সবাই কোথায়। তখনই হুট করে এসে কেউ আমাকে পিছন থেকে চোখ চেপে ধরল। আমি তাড়াতাড়ি চোখ থেকে হাত সরানোর জন্য তার হাতের উপর হাত রাখতেই বুঝতে পারলাম এটা কোনো ছেলের হাত।আমি একটু ভয় পেলাম। আমি ভিত কন্ঠে বললাম,

“আরে কে আপনি?”

কিন্তু কারো কোনো শব্দ এলো না। ভয় আরো দ্বিগুন হলো। ভয়ে আমার শির দাঁড়া বেয়ে ভয়ের একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল।
.
.
চলবে

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_১১
#সুরাইয়া_নাজিফা

“সৃজন তুই? ধ্যাত ছাড় তো। এসব কি ধরনের ব্যবহার করছিস । ”

আমি বুকে হাত দিয়ে বড় বড় দুটো নিঃশ্বাস নিলাম আর বেঞ্চে বসে পানির বোতল বের করে দুই ঢোক পানি খেয়ে নিলাম । সৃজন আমার পাশে বসে বললো,

“হেই তুই সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেছিস। আরে আমি তো ফাজলামি করছিলাম। ”

“রাখ তো ফাজলামি। একে ক্লাসে কেউ ছিল না সেই অবস্থায় হুট করে কেউ এসে যদি এভাবে চোখ ধরে আমি বুঝবো কি করে। এখনি যদি আমাকে না ছাড়তি তাহলে ভয়েই আমি হার্ট এট্যাক করতাম ছাগল। ”

সৃজন কানে হাত দিয়ে আমার সামনে হাটু গেড়ে বললো,
“আচ্ছা এইবারের মতো মাফ করে দে জানু আর এমনটা করবো না স্যরি। ”

“হয়েছে আর এতো স্যরি বলতে হবে না। বাট তুই না বললি তুই আজকে আসবি না তাহলে আসলি কেমনে?”

“আজকে এতদিন পর তুই ভার্সিটিতে আসবি আর আমার সাথে দেখা হবে না সেটা তো হতে পারেনা তাই চলে এলাম আমার জানেমানের সাথে দেখা করতে। ”

কথাটা বলেই সৃজন আমার পাশে বসে পড়ল। তখনই পিছন থেকে আরেকজন এসে আমাকে ঝাপটে ধরল। তবে এবার আর আমি ভয় পেলাম না কারণ এটাকে আমি খুব ভালো করেই জানি। তানিশা আমাকে ছেড়ে আমার সামনে এসে বললো,

“কনগ্রাচুলেশন বেইবি।অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল তোর নতুন জীবনের জন্য।”

আমি মুচকি হেসে বললাম,
“ধন্যবাদ।”

“শুধু ধন্যবাদে কাজ হবে না ট্রিট কবে দিচ্ছিস বল?”

আমি অবাক হয়ে বললাম,
“বিয়ের দিন না গান্ডি-পিণ্ডি গিলে আসলি তারপরেও আবার ট্রিট কিসের। ”

“তাতে কি হয়েছে।একবার খেয়েছি আরো একশবার খাবো। ফ্রেন্ড মানে আমাদের সবসময়ই ট্রিট চাই। ফ্রেন্ডদের কাছে ট্রিট নেওয়ার জন্য কোনো কারণ লাগে না। ”

“ওহ তাই নাকি সোনা তাহলে আজকে তুই ট্রিট দিবি। অনেকদিন পর আমি এসেছি তাই আমার ওয়েলকাম ট্রিট দে।”

“যা ফইন্নি আমার উপর চাপাই দিচ্ছিস তুই এতদিন পর আসছোস তোর ট্রিট মিস করছি এখন তুই দিবি। ”

“আমি বলেছি যখন তুই দিবি তাহলে তুই দিবি আর কোনো কথা না। ”

আমি আর তানিশা এই কথা নিয়ে চেঁচামেচি করছিলাম তখনই সৃজন বললো,

“চুপ কর তোরা দুজনেই। আমি আছি আমার জ্বালায় আর উনারা আছে খাওয়া নিয়ে। ”

আমরা দুজনেই সৃজনের দিকে তাকিয়ে একসাথে বললাম,
“তোর আবার কি সমস্যা।”

সৃজন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আমার সমস্যাটাই তো বড় সমস্যা। আমার ভালোবাসার কথাটা বলার আগেই আমার ভালোবাসার মানুষটার বিয়ে হয়ে গেল এর থেকে কষ্টের আর কিছু আছে?”

আমি অবাক হয়ে বললাম,
“তোর আবার ভালোবাসার মানুষ কে কখনো বলিসনি তো?”

সৃজন গালে হাত দিয়ে চিন্তার ভঙ্গিতে বললো,
“বলার সুযোগ দিলে তো বলবো। ভাবলাম গ্রাজুয়েশনটা কমপ্লিট করার পর তোকেই বিয়ে করব বাট তুই কি করলি প্রথম বর্ষেই বিয়ে করে নিলি। এতো কিসের তাড়া ছিল তোর এখন আমার কি হবে? ”

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
“যা তো সর এখান থেকে। এসব চাঁপা অন্য কোথাও গিয়ে মারিস তাহলে হয়তো সেই মেয়েকে পটাতে পারবি আমার সামনে না। তোর স্বভাব আমি খুব ভালো করেই জানি। ”

সৃজন নিজের কপাল চাপড়ে বললো,
“এটাই হলো কপাল যখন ফ্লার্ট করি তখন সবাই সিরিয়াসলি নেয় আর যখন সিরিয়াসলি বলি তখন সবাই ফ্লার্ট ভাবে। ”

তখনই তানিশা সৃজনের মাথায় ব্যাগ দিয়ে একটা বারি মেরে বললো,
“উঠ এখান থেকে এইটা আমার জায়গা। তোর কপালে সোহা তো বহুত দূর কি বাত হে রাণু মন্ডলও জুটবে না।তুই যতো মেয়ের মন ভেঙেছিস তার অভিশাপ লাগবে না ভেবেছিস।”

সৃজনও উঠে দাঁড়িয়ে তানিশার মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো,
“যাই জুটুক সেটা তোর থেকে ভালো হবে রাক্ষসী। ”

তানিশা খিলখিল করে হেসে বললো,
“হ্যাঁ এজন্যই তো এখন দেবদাসের খেতাব পেয়েছিস।কয়দিন পর পারুলের জন্য মরেও যাবি হারামী। ”

এদের কথা শুনে প্রচন্ড রেগে বললাম,
“কি ফালতু একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছিস। চুপচাপ বস এখনি ক্লাস শুরু হবে। ”

তারপর ওরা দুজনেই চুপচাপ বসে পড়ল।আস্তে আস্তে সব স্টুডেন্টারাও ক্লাসে চলে আসলো। কিছুক্ষন পর ক্লাস শুরু হলো। টানা দুইটা ক্লাস হওয়ার পরে জানতে পারলাম আর ক্লাস হবে না তাই আমরা তিনজনই বেরিয়ে করিডোরে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রচন্ড সূর্যের তাপ পড়ছে তবে শীতের জন্য সূর্যের তাপটা আশীর্বাদ মনে হচ্ছে। আর আমরা ইচ্ছা করেই সূর্যের তাপটা যেখানে বেশী পড়ছিল ওখানে গিয়েই দাঁড়ালাম।কারণ ক্যাম্পাসে শীতের চাঁপটা অনেক বেশী। আমাদের তিনজনের সাথে সীমা আর নদীও আসল আড্ডা দিতে। আমরা পাঁচজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম হঠাৎ সীমা বলে উঠল,

“সোহা তোর মুখের দুইপাশ এমন কালো হয়ে গেছে কেন? ”
আমি সীমার কথা শুনে চমকে উঠলাম,
“কালো হবে কেন?”
তখন সৃজনও বলে উঠল,
“হ্যাঁ জানেমান তোর মুখ অনেকটা কালো লাগছে।”
সৃজনের কথার টোন ধরে নদীও বললো,
“হ্যাঁ সৃজন ঠিক বলছে। ”

আমি ওদের কথা বুঝতে পারছিলাম না বলে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিলাম। তখনই তানিশা আমার অভিব্যক্তি বুঝতে পেরে আমাকে টেনে নিয়ে আসল ওয়াসরুমে।আমাদের সাথে সীমা আর নদীও আসল। তারপর আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বললো,

“দেখ নিজের চোখেই। ”

আমি আয়নার সামনে দাঁড়াতেই চোখ চড়কগাছ। আমার মুখের দু’পাশে কালো বর্ণের দাগ পড়ে গেছে কিন্তু এটা কিভাবে হলো।

সীমা হেসে বললো,
“আমি সকালেও দেখেছিলাম বাট তখন এতটা বুঝা যাচ্ছিল না বলে আমলে নেইনি।আমি একটা জিনিস বুঝি না তোকে দেখলে সব ছেলেরা এমনিতেই টেরা হয়ে থাকে তারপরেও তুই কেন এসব ছাইপাস বিউটি প্রডাক্ট ইউজ করিস । আরো সুন্দর হয়ে ছেলেদের আকর্ষন করার জন্য নাকি?”

তানিশা বিরক্তির সাথে বললো,
“এসব কি ধরনের কথা বলিস সীমা। ওটা তোর স্বভাব ছেলেদের আকর্ষিত করার জন্য সাজা। সোহা তোর মতো মেকাপ সুন্দরী না যে ওকে সুন্দর হওয়ার জন্য কোনো বিউটি প্রডাক্ট ইউজ করতে হবে। ”

সীমাও একটু খিটখিট করে বললো,
“সত্যি কথা বললে সবারই গায়ে লাগে। ”

সীমার কথা শুনে আমি রাগান্বিত হয়ে কর্কশ কন্ঠে বললাম,
“ফালতু কথা বলিস না তো। আমি মুখে তেমন কিছুই ইউজ করিনা শুধু একটা রেগুলার ক্রিম ছাড়া। সেটাও আমি আজকে ব্যবহার করিনি। আমি বুঝতে পারছিনা হঠাৎ মুখটা কালো হওয়ার কারণ কি? ”

নদী বললো,
“কিছু না দিলে এমনি এমনি তো আর এমন হবে না। কিছু দিয়েছিস হয়তো মনে নেই। আচ্ছা মুখটা ধুয়ে নে।পেত্নী লাগছে। ”

ওদের সাথে আর কথা না বলে আমি আমার মুখটা পরিষ্কার করতে লাগলাম। অনেকক্ষন চেষ্টার পর কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে তবে এখন পুরা মুখটাই কালো লাগছে। তখনই আয়নার দিকে তাকাতে আমার মনে পড়ল যে সকালে আমি আমার ক্রিমটার পরিবর্তে শান যেই ক্রিমটা দিয়েছিল সেটা ইউজ করেছিলাম তাহলে ওই ক্রিমটারই সাইড এফেক্ট নয়তো। কিন্তু যদি ক্রিমটায় মুখ এমনই হবে তাহলে শান আমাকে দিলো কেন। আমার মধ্যে অগ্নিয়গিরির লাভা ফুটছে। রাগে পুরা শরীর কাঁপছে। আমি তাড়াতাড়ি করে মুখটা আমার ওড়ানা দিয়ে বেঁধে তানিশার থেকে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। তানিশা আমার পিছন পিছন আসতে আসতে বললো,

“কিরে কোথায় যাচ্ছিস? ”
“ট্রেন চলে আসবে এখনি বাসায় যাচ্ছি তোদের সাথে পরে কথা হবে। ”

কথাটা বলেই আমি আর এক মূহূর্ত দাঁড়ালাম না। তানিশা অনেকবার ডাকলেও শুনলাম না। একটা রিকশা নিয়ে জিরো পয়েন্টে চলে গেলাম। তারপর ট্রেনে করে ষোলশহর স্টেশনে পৌঁছাতেই দেখতে পেলাম ড্রাইবার আঙ্কেল গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। আমি গাড়িতে উঠে বসলাম। আর বাসায় আসার আগ পর্যন্ত আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিল।আর মনে মনে শানকে অকথ্য ভাষা গালি দিতে লাগলাম। ফালতু লোক একটা। ওনাকে আমি বিশ্বাস করে ক্রিমটা ইউজ করেছিলাম আর উনি কি করল। বাসায় এসে কারো সাথে কোনো কথা না বলে রুমে চলে গেলাম। কারণ এখন যদি মায়ের সাথে কথা বলি তাহলে আমাকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে । আর এখন আমার কাছে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে ইচ্ছা করছে না। রুমে ঢুকে ধুম করে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগলাম।


“মে আই কাম ইন মিস্টার আরিয়ান আরেফিন শান। ”

শান অ্যাকাউন্টের পুরাতন হিসাব গুলো দেখছিলো হঠাৎ করে মেয়েলি কন্ঠ শুনে চোখ তুলে তাকালো। তাকাতেই দেখতে পেলো ঐশী দাঁড়িয়ে।শান ঠিক করে বসে বললো,

“এসো না ঐশী। এতো ফর্মালিটি করছো কেন? ”

ঐশী ভিতরে ঢুকে চেয়ার টেনে চেয়ারে বসে বলো,
“যেখানে সম্পর্কটাই একটা বিজন্যাস ডিলের উপরে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে ফর্মালিটি তো থাকতেই হবে। ”

“এভাবে বলছো কেন ঐশী। শুধু বিজন্যাস ডিল কেন হবে? আমরা দুজন কিন্তু খুব ভালো বন্ধুও তুমি সেটা ভুলে যাচ্ছো। ”

“না কিছু ভুলিনি।বন্ধুত্বটা বাহিরে অফিসে আমরা শুধুই বিজন্যাস পার্টনার। যাইহোক ঐদিন আমরা যেই ডিলটা পেয়েছি সেটা নিয়েই ডিসকাস করতে এসেছি তোমার সাথে । তোমার কি সময় আছে? ”

“ঐশী স্বাভাবিক ভাবে কথা বলো। দেখো আমি সত্যি দুঃখিত আমি তোমার মনে কষ্ট দিতে চাইনি। আমি কখনো তোমাকে সেই নজরে দেখিনি কারণ আমি অন্য কাউকে ভালোবাসতাম। ”

“আমি সেটা আগেই ভুলে গেছি আরিয়ান।তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। আর আমি এতো দূর্বল মেয়ে নই যে একটা সামান্য বিষয় নিয়ে ধরে বসে থাকবো। তবে হ্যাঁ একটা আক্ষেপ থেকে যাবে যে এতোটা ভালোবাসার পরেও তোমার মতো এতো ভালো একটা মানুষের ভালোবাসা পেলাম না। তুমি আমার জীবনে প্রথম পুরুষ যে আমাকে রিজেক্ট করেছো। আর সেটা আমি সবসময় মনে রাখবো। আচ্ছা অনেক কথা হয়ে গেছে এইবার কাজে ফোকাস করি।”

বলেই নিচের দিকে তাকিয়ে ঐশী ফাইল বের করতে লাগল। আসলে ফাইল বের করাটা তো কেবল মাত্র অজুহাত। ও চাইছে যেন ওর চোখের পানিটা শানের চোখে না পড়ে।

শান ভাবলেশহীন ভাবে বললো,
“তুমি তাহলে আমার কোম্পানির সাথেই কাজ করছো? ”

ঐশী শানের দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাসল। তারপর বললো,
“তুমি কি ভেবেছিলে আরিয়ান আমি ডিলটা ক্যান্সেল করে দেবো?কেন?তুমি আমাকে রিজেক্ট করেছো বলে? নো আরিয়ান নো। পার্সোনাল লাইফ একদিকে আর বিজন্যাস একদিকে। আমি কখনো দুটোকে একসাথে গোলাবো না। এই ডিলটা ক্যান্সেল করলে শুধু যে তোমার লোকশান হবে তা কিন্তু নয় আমারও হবে তাহলে আমি কেন করব? আমি এতোটাও বোকা নই। আর আমার যথেষ্ট মনের জোর আছে তোমার সাথে কাজ করার।”

শান খুশি হয়ে বললো,
“আই আ’ম প্রাউড অব ইউ ঐশী। আমি তোমার থেকে এটাই আশা করছিলাম।”

ঐশী শানের বিপরীতে আর কোনো কথা বললো না। ফাইল বের করে শানকে ডিলের ডিটেলস বুঝিয়ে দিতে লাগল ।শান যখন ঐশীকে রিজেক্ট করে তখন ঐশীর ও রাগের মাথায় ঠিক একই কথা ভেবেছিল যে ও শানের সাথে সব বিজন্যাস পার্টনারশিপ ক্যান্সেল করবে। চলে যাবে এখান থেকে অনেক দূর। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবল এখান থেকে চলে গেলে তো সবকিছু চুকেই যাবে। ও আর শানকে কখনো দেখতে পাবে না।বিজন্যাসের জন্যেও যদি কিছুটা সময় একসাথে থাকা যায় ক্ষতি কি। অন্তত কাজের ফাঁকে ফাঁকে প্রিয় মানুষটাকে চোখের সামনে দেখতে পাবে ব্যাস এটাই শান্তি। ভালোবাসা মানে তো শুধু এই না যে যাকে আমরা ভালোবাসব তাকে সবসময় নিজেদের সাথেই বেঁধে রাখব। বরং ভালোবাসার প্রকৃত অর্থই হলো ত্যাগ।তাকে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেওয়া যাতে সে নিজের সুখটা খুঁজে নিতে পারে। আর তার সুখের জন্য এতটুকু ত্যাগ বড় কিছু নয়।

ডিলের ডিটেলস বলতে বলতে হঠাৎ করেই ঐশী বিষম খেয়ে কাশতে শুরু করলো। শান তাড়াতাড়ি করে পাশে থাকা পানির গ্লাসটা ঐশীর দিকে এগিয়ে দিলো। ঐশী তাড়াতাড়ি করে পানিটা খেলো। শান বললো,

“কি হয়েছে? ঠিক আছো এখন? কি ভাবছিলে এতো?”

ঐশী গ্লাসটা পাশে রেখে কিছুক্ষন চুপ করে রইল। কি উত্তর দিবে ও শানের প্রশ্নের এটা বলবে যে আমি তোমার কথাই ভাবছিলাম। না না এতোটাও ছোট হওয়ার মানে হয় না কারো কাছে। ঐশীকে চুপ থাকতে দেখে শান টেবিলে হালকা একটা বারি মেরে বললো,

“ঐশী? কি ভাবছো?”
শানের কথায় ঐশীর ঘোর কাটল। শানের দিকে মুখ করে বললো,
“হুম কিছুই না। ”

তারপর দুজনেই চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষন পর ঐশী বলে উঠল,
“তোমার মতো একজন সুন্দর মন এবং ভালো মানুষের ভালোবাসা যে মেয়েটা পেয়েছে সে সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী। আমার তো এখন তাকে হিংসা হচ্ছে। যেই ভালোবাসার জন্য আমি এতো তপস্যা করলাম সেই ভালোবাসা সে এতো অনায়াসেই পেয়ে গেল আরিয়ান। ”

ঐশী একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। ঐশীর ব্যবহারে শান বড্ড অস্বস্তি অনুভব করছে। আর প্রচুর বিরক্তও লাগছে কথা গুলো শুনতে কিন্তু কি বা করার আছে না চাইতেও যেই ঝামেলা ও সবসময় এড়িয়ে চলত সেই ঝামেলাতেই পড়ে গেছে। ভাবতেই নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে মন চাইছে শানের।

ঐশী আবার বললো,
“বাই দ্যা ওয়ে আরিয়ান বিয়েটা তো আমাকে না জানিয়েই করলে এখন কি বউটাও আমাকে দেখাবে না নাকি?”

“হুম কেন দেখাবো না। ”

শান নিজের ফোনটা ওপেন করল। তারপর গ্যালারিতে ঢুকে প্রাইভেট ফাইল থেকে সোহার ছবি বের করে ঐশীকে ফোনটা হাতে দিলো। ঐশী ফোনটা নিয়ে ছবিটা দেখেই না চাইতেও মুখ থেকে আপনাতেই বলে উঠল,

“মাশাআল্লাহ! আরিয়ান তোমার বউ কিন্তু একদম হুরপরী। আমারই চোখ আটকে যাচ্ছে আর তোমার কথা তো নাই বলি। এজন্যই বউয়ের জন্য এতো পাগল তুমি তাই না আরিয়ান। তোমার চয়েস আছে বলতে হবে। তোমাদের একসাথে খুব ভালো মানিয়েছে । ”
ঐশীর গলা ধরে আসছিলো বারবার কথা গুলো বলতে।

শান ঐশীর কথা মিষ্টি করে হেসে বললো,
“ধন্যবাদ ঐশী। ”

ঐশী হাসার চেষ্টা করে তাড়াতাড়ি ফোনটা শানকে দিয়ে বললো,
“এতো সুন্দর লাগছে তোমাদের যে আমারই না নজর লেগে যায়।আচ্ছা শান আমার শরীরটা আজকে ভালো লাগছে না। কালকে ডিলটা নিয়ে ভালো করে কথা বলবো ওকে। ”

শানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঐশী দ্রুত শানের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।একদম হাওয়ার বেগে বেরিয়ে গেল। শান শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। ঐশী এতো দ্রুত হাটছিলো। যেন মনে হচ্ছে ও হাটছে না দৌড়াচ্ছে।নিচের ফ্লোরে এসে যখনই গেইট থেকে বের হবে তখনই মাথায় সজোরে ধাক্কা খেলো কারো সাথে। ঐশী ওখানেই মাথা ধরে বসে পড়ল। আর ছেলেটা মাথার সাথে সাথে গেইটের সাথেও বারি খেলো।ছেলেটা চিৎকার করে বলে উঠল,

“আশ্চর্য এটা কি খোলা মাঠ পেয়েছেন যে এভাবে ছাড়া গরুর মতো দৌড়াচ্ছিলেন। উফ আমার মাথাটা ফাঁটিয়ে দিয়েছে। ”

ঐশী দ্রুত বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললো,
“স্যরি আমি দেখতে পাইনি আসলে আমার একটা কাজ ছিলো তাই তাড়ায় ছিলাম। ”

কথাটা শেষ হতে না হতেই সামনে যাকে দেখলো তাকে দেখে চিৎকার করে বললো,
“আআআপপপপনিনি।”

এতক্ষনে ছেলেটিও ঐশীকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ও মনে করার চেষ্টা করলো আরে এটা তো ঐ মেয়েটা যে ওকে ধন্যবাদ না দিয়েই চলে গেছিল। ঐশীর চিৎকার শুনে ছেলেটি সম্ভিত ফিরে পেল।ছেলেটি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

“আরে আপনি ঐ মেয়েটা না যিনি ঐদিন সুইসাইড করতে গিয়েছিলেন। ”

ঐশী ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনার মাথার স্ক্রু কি ডিলা? কি ফাউল কথা বার্তা বলছেন পাবলিক প্লেসে। ”

“আপনি সুইসাইড করতে যেতে পারবেন আর আমি বললেই দোষ।”

“আর একটা বাজে কথা বললে না। ”
ঐশী পাশে একটা ভাঙা রড পড়ে ছিল ওটা হাতে তুলে বললো,
“এই রডটা দিয়ে মাথা ফাঁটিয়ে দিবো। এরপর বুঝতে পারবেন সুইসাইড কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? প্রত্যেক প্রকারের উদাহরণসহ। ”

ছেলেটা ভয় পেয়ে বললো,
“কি ডাকাত মেয়েরে বাবা একে তো ঐদিন সুইসাইড করা থেকে বাঁচালাম অথচ ধন্যবাদ না দিয়েই চলে গেল। আর আজকে দেখা হতে না হতেই মাথাটা অর্ধেক ফাঁটিয়ে দিয়েছে নিজের গরুর মতো শিং দিয়ে। এখন আবার পুরাপুরি হাসপাতালে পাঠানোর ধান্দা। বলি আমি আপনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছিলাম জানতে পারি?”

ঐশী রেগে নিজের হাত থেকে রডটা ফেলে দিয়ে বললো,
“দূর আমিই পাগল। নাহলে এই আধ পাগলে সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বকবক করি। ”
কথাটা মনে মনে আওড়িয়ে ঐশী বেরিয়ে যাচ্ছিল। তখনই ছেলেটা পেছন থেকে ডেকে বললো,
“ওহ ম্যাডাম একটা গুতো দিয়ে চলে যাচ্ছেন যে আমার মাথায় শিং উঠলে সেই দায় ভার কে নেবে। দয়া করে আরেকটা গুতো দিয়ে যান। ”

ঐশী নিজের পায়ের জুতাটা খুলেই ছেলেটার দিকে ছুড়ে মেরে বললো,
“আপনাকে দ্বিতীয় গুতো দিবে আমার জুতো। পাগল লোক একটা। ”

কথাটা বলেই ঐশী বেরিয়ে গেল। আর ছেলেটি ওখানেই স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ভাগ্যিস ঠিক সময় মতো সড়ে গেছিল নাহলে সোজা ওর গায়েই পড়ত।

“ওহ মাই গড। এটা মেয়ে না অন্যকিছু। আল্লাহ জানে এই মেয়ে কোনো ছেলের কপালে নাঁচছে। তার জীবনটা পুরো নরক বানিয়ে ছাড়বে শিউর। ”


বিকালে শান বাসায় আসতেই দেখতে পেল শানের মা একা একা বসে আছে আর সিরিয়াল দেখছিল। কিন্তু সোহাকে দেখলো না। শান ওর মায়ের কাছে এগিয়ে গেল। শানকে দেখেই শানের মা টিভি ছেড়ে শানের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এসে গেছিস?”
“হুম এখনই এলাম। ”
“সোহার কি হয়েছে বলতো? তুই কি কিছু বলেছিস? ”
মায়ের কথা শুনে শান বিচলিত কন্ঠে বললো,
“না। ওর সাথে তো সকালের পর আমার দেখাই হয়নি কি বলবো?”
শানের মা চিন্তিত হয়ে বললো,
“জানি না। ভার্সিটি থেকে আসার পর একটা কথাও বলেনি কারো সাথে। ”
শান একটু চিন্তিত হলো যে হঠাৎ কি হলো মেয়েটার। সকালবেলা তো ভালোই ছিলো।

“আচ্ছা মা আমি দেখতেছি। ”

কথাটা বলেই শান উপরে চলে গেল। উপরে গিয়েই দেখল দরজা লক করা। শান দুই তিনবার নক করতেই দরজা খুলে দিলাম।শান ভিতরে ঢুকেই বললো,
“কি ব্যাপার দরজা লক করে বসে আছো কেন?”

আমি কোনো কথা না বলে চুপচাপ গিয়ে বেডের একপাশে বসলাম।সোহার এমন ব্যবহারে শানের অবাকের মাত্রা দ্বিগুন হলো। তাহলে শান যেটা ভাবছে সেটা সত্যি নাতো। সবটা বুঝতে পেরে যায়নি তো। শান এগিয়ে গেল সোহার দিকে। শান আমার পাশে বসে আমার হাতের উপর নিজের হাত রাখতেই আমি ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে উঠে দাড়ালাম। হাত সরাতেই শান আবার আমার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলো।আমি রেগে বললাম,

“ছাড়ুন আমার হাত। ”
“কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন?”
আমি শানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“আপনি জেনে কি করবেন হাত ছাড়ুন আমার।”
শান আরো দ্বিগুন জোরে আমার হাত ধরে আমাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বললো,
“যতক্ষন না তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিবে আমি তোমাকে ছাড়ছি না। ”
আমি শানের চোখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“সকালে আপনি যে ক্রিমটা আমাকে দিয়েছিলেন সেই ক্রিমে সাইড এফেক্ট আছে বলেননি কেন?”
শান অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললো,
“ক্রিমে সাইড এফেক্ট থাকবে কেন? ”
এবার আমি কান্না করেই বললাম,
“না থাকলে ওই ক্রিমটা ইউজ করার কিছুক্ষনের মধ্যে আমার ফেসটা পুরো কালো হয়ে গেলো কেন? শুধু আপনার জন্য আজকে ফ্রেন্ডেদের হাসির পাত্র হয়ে গেছি আমি। সবাই বলছে আমি ছেলেদের আকর্ষন করার জন্য, সুন্দর দেখার জন্য হয়তো উদ্ভট কোনো বিউটি ক্রিম ইউজ করেছি এজন্যই এমন হয়েছে। ”

আমি আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম। শান আমার মাথাটা আলতো করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,

“কে বলেছে আমার মিষ্টি বউকে এমন কথা। আমার বউটা তো এমনিতেই ন্যাচারাল সুন্দরী। তার সুন্দর হতে কেন কোনো ক্রিম ইউজ করতে হবে। যে এই কথা বলেছে নেক্সট তুমি আমাকে দেখিয়ে দিও আমরা দুজনে মিলে ওকে কালো পেন্ট করিয়ে কালো বানিয়ে দিবো কেমন। একদম বাচ্চাদের মতো কেঁদো না। আমি তো তোমার ভালোর জন্যই ক্রিমটা দিয়েছিলাম। ওই ক্রিমটার জন্য কিছু হয়নি। আমি কেন জেনে শুনে এমন কিছু করব।হয়তো তোমার স্কিন প্রবলেম হচ্ছে। আর কিছু ইউজ করার দরকার নেই। ”

শান আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছিলো আর কিসব উদ্ভট কথা বলছিলো।একদম বাচ্চাদের মতো আমাকে শান্তনা দিচ্ছিলো। এতে আমার কান্না ভুলে হাসি চলে আসছিলো। আমি নিজের কান্নায় এতো ব্যস্ত ছিলাম যে আমি খেয়ালই করিনি আমি উনার বুকেই মাথা দিয়ে আছি।

সোহার কান্নার বেগ কিছুটা কমতেই শান জোরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। যেনো আসন্ন কোনো বড় বিপদ থেকে হাফ ছেঁড়ে বাঁচল।
.
.
চলবে

বিঃদ্রঃ গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে