#এক_টুকরো_আলো
#পর্ব_১৫
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
হুরাইন রান্নাঘরে কাজ করছে। সাজেদাও নিজের মত করে সাহায্য করেন তাকে। মাঝেমাঝেই বলেন,“তোমার কাজ আমার পছন্দ না। আমার মত করতে না জানলে করার দরকার নেই। আমি নিজেই করে নেব।”
হুরাইনের মন খারাপ হয় না৷ তারও অবশ্য কারণ আছে। কাজকর্মে অন্যরা তার প্রশংসা করলেও মা ওকে প্রায়ই বলতেন,“তোর কাজকর্ম আমার পছন্দ হয় না৷ আমার কাজ আমিই করবো।”
একটা নারী ২০-৩০ বছর একটা সংসারের দায়িত্ব নিলে, একাহাতে একভাবে সবটা গুছিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেলে হঠাৎ নিজের হাতের কাজ অন্যকেউ অন্যভাবে করলে স্বাভাবিক তার পছন্দ হবে না। তাই হুরাইন মন খারাপ না করে বলে,“আমাকেও আপনার মত শিখিয়ে দিন আম্মা।”
সাজেদা আড়চোখে তাকান। কিছু না বলে নিজের মত কাজ করে যান। হুরাইন মনোযোগ দিয়ে দেখে সাজেদার কাজের ধরণ ধরে রাখার চেষ্টা করে। সাজেদা বসে সবজি কাটছেন। একটু দূরে চুলার কাছে হুরাইন। হঠাৎ কী যেন এসে হুরাইনের গায়ে পড়লো। চমকে উঠে গা ঝেড়ে নিচে তাকাতেই পায়ের কাছে সাপ দেখে অস্পষ্ট স্বরে “আম্মা, আম্মা, আম্মা” বলে সাজেদার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। এমন ছুটে এসে পেছনে দাঁড়িয়ে হুরাইনকে বিড়বিড় করে ওনাকে ধরতে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,“কী হয়েছে?”
“আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক।”
বিড়বিড় করে দোয়া পড়ে যাচ্ছে সে। সাপ, বি*ষা*ক্ত পোকামাক, হিং*স্র প্রাণীর আক্র*মণ থেকে বাঁচার ক্দোয়া এটি। সাজেদার নজরে পড়লো সাপটি। তিনিও চমকে গেলেন। এটাকে মা*র*তে হবে। হুরাইনকে নিয়ে রান্নারঘর থেকে বের হতে গিয়ে তাসিনকে ডাকলেন। দু’জন বেরিয়ে দেখে তাসিন রান্নাঘরের বাইরে। ঠোঁট টিপে হাসছে। সাজেদা আতঙ্কিত স্বরে বললেন,“রান্নাঘরে সাপ। কোথা থেকে এলো জানিনা। ওটাকে তাড়ানোর ব্যবস্থা কর।”
তাসিন হাসতে হাসতে বলল,“সাপটি কি নড়াচড়া করছিল?”
“এতকিছু আমি খেয়াল করেছি? তাড়াতাড়ি ওটা তাড়া।”
তাসিন রান্নাঘরে ঢুকে সাপ হাতে নিয়ে বের হলো। সাজেদা কিছু বলতে যাবেন, তাসিন ওটা মায়ের হাতে দিয়ে দিল। তিনি সাপটি ছুঁড়ে মে*রে পিছিয়ে গেলেন দ্রুত। কপট রাগ দেখাতে গিয়েও ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলেন ওটা নড়াচড়া করছে না। হুরাইনও খেয়াল করলো। তাসিন বলল,“এটা আর্টিফিশিয়াল সাপ।”
স্বস্তির শ্বাস ফেললেও ছেলেকে থাপ্পড় দিয়ে বললেন,“জা*নো*য়া*র, এত ফাজলামি কেউ করে?”
তাসিন হেসেই চলল। সে জানে তার মা-বোন সাপে ভয় পায়। কোনো দিকে না তাকিয়ে ছুট লাগায়। তবে হুরাইনও যে ভয় পায়, তা আজ দেখে নিলো।
হুরাইন শাশুড়ির উদ্দেশ্যে মিনমিন করে বলল,“সন্তানকে এসব বলা উচিত নয় আম্মা। বাঙালি মায়েরা বিরক্ত হলেই সন্তানকে জা*নো*য়া*র, কু*ত্তা*র বাচ্চা, অ*জা*তে*র বাচ্চা ইত্যাদি গা*লি*গা*লা*জ করে থাকেন। এগুলো ঠিক না। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাদেরকে কোনো পশুর সাথে তুলনা করা, গা*লি দেওয়া হা*রা*ম। আল্লাহ না*রা*জ হন।”
সাজেদা বিরক্তি ফোটিয়ে বললেন,“আমি কি সত্যি বলছি নাকি? এটা তো কথার কথা বলে ফেলি। আর আমার ছেলে-মেয়ে জানে এসব আমি মন থেকে বলি না। এসেছো থেকে তুমি আমার হাজারটা খুঁত ধরছো। মনে হচ্ছে আমি না, তুমি আমার শাশুড়ি।”
হুরাইন আরও নিচু স্বরে বলল,“ক্ষমা করবেন আম্মা। আপনার খুঁত ধরার উদ্দেশ্য আমার নেই। কোনো মা-ই সন্তানের অমঙ্গল চান না, মন থেকে কিছু বলেন না। এসব বলে থাকেন বিরক্তি কিংবা রাগের মাথায়। শুধু সন্তান কেন? কাউকেই গা*লা*গা*ল দেওয়া উচিত নয়।”
তাসিন বলল,“আচ্ছা বাদ দাও।”
সাজেদা থমথমে অবস্থায় আবার রান্নাঘরে ঢুকলেন৷ পিছু পিছু হুরাইন গেল।
ঘুমাচ্ছে তাসিন। আজ অফিস থেকে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে। শরীর ক্লান্ত। মাগরিবের আজান পড়েছে। হুরাইন তাকে ডেকে দিল। শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। এখন ওঠার ইচ্ছেশক্তি বিন্দুমাত্র নেই। সে শুয়েই রইলো। দুই মিনিট পরই উঠে যাবো এমন একটা ভাব হলেও গভীর ঘুমের ভারে পাঁচ মিনিট অতিক্রম হয়ে গেল। হুরাইন আবার ডাকলো। তাসিনের মনে হলো সে এক সেকেন্ড আগে চোখ বুজেছে। বিশ্বাস করলো না হুরাইনের কথা। এবার হুরাইন গলায়, ঘাড়ে সুড়সুড়ি দিল। তারপর বুকে। মাথা তুলে দেখে তাসিন ঘুম ঘুম চোখে তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। হুরাইনের চোখে চোখ পড়তেই ধীর গলায় শুধালো,“কী করছো?”
হুরাইন নিষ্পাপ চেহারা বানিয়ে বলল,“আপনি তো উঠছিলেন না।”
তাসিন ক্ষণ সময় তাকিয়ে থেকে উঠে যেতে যেতে বলল,“নামাজ পড়ে আসি। তোমার শাস্তির ব্যবস্থা পরে করছি।”
ভেংচি কাটলো হুরাইন। তাসিন চোখ সরু করে বলল,“আমি আসলেই দেখা যাবে। দেখি তুমি কতটুকু সুড়সুড়ি সহ্য করতে পারো।”
হুরাইন বলল,“অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি অজু করে ছুটুন মসজিদে।”
সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন। তাসিন মাঝেমাঝে কাজের চাপ বেশি থাকলে বাসাতেও কিছু কাজ এগিয়ে রাখে। আজও ল্যাপটপে মুখ গুঁজে বসে আছে। হুরাইন এক কাপ চা নিয়ে এলো। মিষ্টি সুরে বলল,“আপনার চা।”
কথা বলল না তাসিন। তার চোখ এবং হাত ল্যাপটপে। কিছুক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকে গাল ফুলিয়ে হাতের নিচ দিয়ে তাসিনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো হুরাইন। এবারেও পাত্তা পাচ্ছে না। তাসিনের একহাত টে*নে নিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলে ছোটো ছোটো কামড় বসালো। এক হাতে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে বলে এবার মনোযোগ দিয়ে হুরাইনের কর্মকাণ্ড পরোখ করলো। ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো,“এমন বিড়ালের মত আচরণ করছো কেন? তুমি কি বিড়াল?”
হুরাইন ডবডবে চোখে তাকিয়ে বলল,“আপনি জেনেও ঢং করছেন?”
তাসিন দু-কাঁধ উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,“কী জানি আমি?”
এবার কেঁদে ফেলবে হুরাইন। মৃদু রাগ ঝেড়ে বলল,“আপনি আমাকে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন না কেন?”
তাসিন ভাবলেশহীন বলল,“কারণ আমি যেতে পারবো না। আমার ছুটি নেই। তোমাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে আমার। ভয়ঙ্কর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছ।”
“ওহ আচ্ছা, শুধু অভ্যাস?” গাল ফোলালো হুরাইন।
তাসিন কাছ ঘনিয়ে এসে মাথা ঝুঁকিয়ে নিলো। হুরাইনের অনাবৃত কপালে চুমু খেয়ে গভীর স্বরে বলল,“অভ্যাস থেকেই ভালোবাসা।”
হুরাইন অনুনয় করে বলল,“প্লিজ যেতে দিন না!”
তাসিন গম্ভীর হয়ে ঠেলে উঠিয়ে দিল হুরাইনকে। গমগমে স্বরে বলল,“তোমার যেতে ইচ্ছে হলে যাও। আমাকে জানানোর দরকার নেই।”
খুব কষ্ট পেল হুরাইন। স্বামীর কথা অমান্য করে এক পাও বের হতে পারবে না সে। এদিকে বাবা-মায়ের কথাও খুব মনে পড়ছে। মন খারাপ করে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চায়ের কাপ হাতে বেরিয়ে গেল। তাসিন সাথে সাথেই ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
হুরাইন রাতের খাবারেরও প্রয়োজন ছাড়া কথা বললো না। ঘরে এসেও হু, হা তে জবাব দিয়েছে।
ঘুমাতে গিয়ে তাসিন যখন বুকে টেনে নিলো, তখনও সে প্রতিক্রিয়াহীন। চুপচাপ লেপ্টে রইলো বুকে। মাথায় হাত বুলিয়ে তাসিন বলল,“কেউ চাইলে কিন্তু শুক্রবার যেতে পারে। সকালে নিয়ে যাবো, বিকেলে আবার আমার সাথে চলে আসবে।”
সাথে সাথে মাথা তুললো হুরাইন। এতক্ষণ মলিনতায় ঢেকে থাকা মুখে হাসি ফোটে। তীব্র উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল,“সত্যি? নিয়ে যাবেন আমাকে? আপনি কিন্তু বলে ফেলেছেন। এখন মত পরিবর্তন করতে পারবেন না।”
তাসিনের কপাল ভাঁজ পড়ল। বলল,“তুমি না আমার উপর রেগে ছিলে?”
হুরাইন অবাক হয়ে বলল,“আমি কখন রেগে ছিলাম? শুধু একটু কৌশল অবলম্বন করে দেখলাম কেমন কাজে লাগে। তাই কথা কমিয়ে দিয়েছি।”
তাসিন চোখ বড়ো করলো ঈষৎ।
“তুমি খুব চালাক মেয়ে।”
খিলখিল করে হেসে ফেললো হুরাইন। তাসিন অপলক তাকিয়ে থেকে বিবশ কন্ঠে বলল,“এভাবে আর কারো সামনে হেসো না।”
হুরাইন হাসি থামিয়ে বলল,“আমি তো কারো সামনে যাই না।”
তাসিন তাকে আরেকটু শক্ত করে ধরে বলল,“যেতে হবে না। তুমি কেবল তাসিনের ভালোবাসা।”
হুরাইন শুধালো, “আর আপনি?”
তাসিন চুপ করে হুরাইনের উৎকণ্ঠা দেখলো। অতঃপর বলল,“কেউ যদি আমায় ভালোবাসে স্বীকার করে নেয়, তবে আমি তার ভালোবাসা। কিন্তু আফসোস কেউ আমাকে এখনো ভালোবাসেনি।”
হুরাইন বলতে পারলো না কিছুই। সে লজ্জা পেয়ে মুখ লুকিয়ে ফেললো। তাসিন বলল,“যাকে লজ্জা পাচ্ছো, তার বুকে মুখ লুকিয়ে লজ্জা নিবারণ করার সাইন্স বুঝলাম না।”
হুরাইন মুখ গুঁজে রেখেই বলল,“এত সাইন্স বুঝার দরকার নেই।”
★★★
দুদিন বেশ আনন্দেই সময় কাটলো ফাবিহার। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে ভার্সিটি আসা-যাওয়া করেছে। আজ আবার নতুন ঝা*মে*লা সৃষ্টি হলো। কিছু ছেলেপুলে অ*শা*লী*ন ভাষায় কথাবার্তা বলছে। ফাবিহাকে দেখে ডেকে উঠে বলল,“ শাবাবের মা*ল না? তোমার নাগর তো নাকি কোন মেয়ের পেছনে পড়ে হা*জ*তে আছে। তোমায়ও ছেড়ে দিল নাকি? শা*লা*রে মনে হয় তুমিও সন্তুষ্ট করতে পারোনি। খেয়ে ছেড়ে দিল। আহারে! আমাদেরও খাওয়ার সুযোগ দাও।”
ফাবিহার চোখে জ্বলন্ত আগুন। চোয়াল শক্ত করে বলল,“আ*জে*বা*জে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। শাবাবের মা*ল মানে কী? আমার সাথে তার সম্পর্ক ছিল কখনো? খেতে চান, না?
কু*লা*ঙ্গা*র।”
হো হো করে হেসে উঠলো ছেলেগুলো। তাদের লিডার আবার বলল,“ওর সাথে তো মজা মাস্তি করেছো। এখন আমরা করতে চাইলেই দো*ষ?”
ফাবিহা এতগুলো ছেলেকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। তবুও তার রাগ তার বিবেককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। সে কথাগুলো এড়িয়ে যেতে পারছে না।
পাল্টা জবাবে বলল,“ বিশেষ মুহূর্তে দোয়া পড়তে ভুলে গিয়ে তোদের মতো কু*লা*ঙ্গা*র, শ*য়*তা*নে*র জন্ম। এভাবে বলতে চাইনি। তবুও বলছি, তোরা এসবের যোগ্য।”
রাগে হনহনিয়ে চলে গেল সে। ছেলেগুলো মাছি তাড়ানোর মতো করে বসে রইলো। শাবাবের সাথে বনাবনি নেই তাদের। শাবাবের সাথে সম্পর্ক থাকা যতগুলো মেয়েকে ওরা চিনে, সবাইকেই এমনভাবে হেনস্তা করেছে। এই পর্যন্ত একটা মেয়েও প্রতিবাদ করেনি। তবে এই মেয়েটা তেজী। একে নিয়ে মজা নেওয়া যাবে বেশ।
ফাবিহা বাড়ি ফিরে রাগ ঠান্ডা হতেই নিজের শেষ কথায় অনুতপ্ত হলো। বাবা-মায়ের তো দোষ নেই। নিজের কর্মের কারণেই এরা কথা শোনে। তার উচিত হয়নি এত বড়ো কথা বলা। সব শাবাবের দো*ষ। তার কারণে হয়েছে এতকিছু। ওর কারণেই তাকে অশা*লীন ভাষায় কথা বলতে পেরেছে ছেলেগুলো। ইচ্ছে করছে হাতুড়ি দিয়ে পি*টি*য়ে শাবাবের মাথা ফাটিয়ে ফেলতে। জে*লে গিয়েও তাকে শান্তি দিল না।
শাবাব জে*লে থেকেও বেহায়া ঠোঁটে হাসছে। রগঢ় করে বলল,“জানেমান চলো তোমাকে তোমার শশুর বাড়ি দেখিয়ে নিয়ে আসি।”
ফাবিহা গিয়েছিল আজকের ছেলেগুলোর ব্যাপারে কথা বলতে। সে রাগ ধরে রাখতে না পেরে ঠা*স*ঠা*স করে দুটো চড় বসিয়ে দিল শাবাবের গালে।
হঠাৎ কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল ফাবিহার। মামাতো বোন মালিহা তার সাথে ঘুমিয়েছে। সে ঘুম থেকে উঠে কাঁদছে। ফাবিহা কপাল কুঁচকে ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,“কাঁদছিস কেন?”
মালিহা গালে হাত রেখে তেতে উঠে বলল,“আমার গালে ঠা*স*ঠা*স করে দুটো চ*ড় বসিয়ে এখন জিজ্ঞেস করছো কাঁদছি কেন?”
ফাবিহার হুশ এলো। সে তো শাবাবকে চ*ড় মে*রে*ছে। এতরাতে শাবাব আসবেই বা কোথা থেকে? সেও বা কীজন্য শাবাবের সাথে দেখা করতে যাবে? তারমানে মালিহাকেই ঘুমের ঘোরে চড় মে*রে*ছে। দু-হাতে মাথার চুল ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,“আমি তোমায় খু*ন করবো শাবাব। ঘুমের ঘোরেও তুমি আমার সাথে ঝামেলা বাঁধাচ্ছো।”
মালিহা কান্না বন্ধ করে কৌতুহলী স্বরে বলল,“শাবাব কে আপু? তোমার বয়ফ্রেন্ড? জানো কী হয়েছে? আমি না দেখে ফোনে একজনের সাথে প্রেম করলাম। কন্ঠ কী মধুর। তার সাথে দেখা করতে গেলাম। গিয়ে আমি প্রাণপনে দৌড়ে ফেরত এসেছি। কারণ যার সাথে আমি প্রেম করেছি, তার আমার চেয়েও বড়ো মেয়ে আছে।”
ফাবিহা হাসবে না কি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। নবম শ্রেণিতে পড়েই এই মেয়ে প্রেম করে দেখাও করে এলো। সে তো একজনকে পছন্দ করে আটকে গিয়েছে। যখন মনে অনুভূতির জন্ম নিলো। সে যত্ন করে অনুভূতি লালন করছিল। তখনই সব শেষ। দীর্ঘশ্বাস ফেললো ফাবিহা। মালিহাকে ঘুমাতে বলে সেও ঘুমিয়ে গেল।
শাবাবকে ছাড়িয়ে আনলেন ফিরোজ আলম। ছেলে আগের তুলনায় গম্ভীর হয়ে গিয়েছে। আগে কথায় কথায় মজা ওড়ানো শাবাব এখন সারাদিনই গম্ভীর থাকে। ফিরোজ আলম কথা শোনাতে কম শোনাননি। বলে দিয়েছেন এবার আর কোনো ঘটনা ঘটালে তিনি নিজেই ওকে পু*লি*শে দিয়ে আসবেন।
বাসা থেকে বের হচ্ছে না শাবাব। সারাদিন কী যেন ভাবে। আজ সোজা বাবা-মায়ের ঘরের দরজায় এসে অনুমতি চাইলো,“আসবো?”
ফিরোজ আলম চমকালেন। ছেলে জীবনে কোনোদিন অনুমতি চেয়েছে কি না ওনার মনে নেই৷ তাহলে আজ ঘরে ঢুকতে কীসের অনুমতি চাইছে। এত ভদ্রত জ্ঞান আছে না কি এই ছেলের? না কি সুবুদ্ধি হয়েছে? তিনি গম্ভীর স্বরে বললেন,“আয়।”
শাবাব ঘরে ঢুকলেও বসলো না। শক্তমুখে বলল,“আমি কাল থেকে তোমার সাথে অফিস যাবো। তুমি আমায় কাজ শেখাবে।”
ফিরোজ আলম, সুরাইয়া দুজনই যেন আকাশ থেকে পড়লেন। তাঁরা অবাকতা কাটিয়ে ওঠার পূর্বেই লম্বা কদম ফেলে বেরিয়ে গেল শাবাব।
ফিরোজ আলম বিস্মিত হলেও মনে মনে খুশি হলেন। ছেলে তাহলে সুপথে আসতে চাইছে। এরচেয়ে খুশির সংবাদ আর কী হতে পারে?
শাবাব ভদ্র পোষাকে ভদ্রভাবে বাবার সাথে অফিসে পা রাখলো। ফিরোজ আলম সকলের সাথে ছেলেকে পরিচয় করিয়ে নিজের সাথে ভেতরে নিয়ে গেলেন। শাবাব আশেপাশে তাকিয়ে সব পরোখ করেছে। কিছু মেয়ে স্টাফ শাবাবকে দেখে ফিসফিস করছে।
“কী হ্যান্ডসাম, দেখেছিস? এর সাথে লাইন মারতে পারলে ছক্কা। জোশ হাজবেন্ড উইথ মানি।”
মেয়েদের দৃষ্টি চিনতে অসুবিধা হচ্ছে না শাবাবের। অন্য সময় হলে সেও সুযোগে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করতো। এখন এদের সবাইকে বি*ষা*ক্ত লাগে। সে সম্পূর্ণ ইগনোর করে গেল।
#চলবে……
#এক_টুকরো_আলো
#পর্ব_১৬
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
এক মাস সব ঠিকঠাক চললেও ইদানীং তাসিনের মাঝে পরিবর্তন লক্ষ করছে হুরাইন। পূর্বে যতটা আগ্রহের সাথে দ্বীন পালনে উৎসাহী ছিল, এখন ততটাই অনাগ্রহ দেখায়। এ বাড়ির একজন ছাড়া আর কারো মাঝে পরিবর্তন নেই। মানুষটি তার শশুর। নিশি তার কথা শুনতেই পারে না। তাসিন কেবল স্বামীর দায়িত্বই পালন করে। দ্বীন পালনে তার কোনো আগ্রহ নেই। আগে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করলেও এখন ফজর ছুটে যায়। দুপুরে জোহর ছুটে যায়। হুরাইন কিছু বললে তাকে নানান যুক্তি দেখায়।
এখন আর হুরাইন নিজেও দ্বীন পালন করে তৃপ্তি পায় না। নামাজে সেজদায় পড়ে থাকলেও অন্তর অতৃপ্ত থেকে যায়। নিজেকে সে হারিয়ে ফেলছে যেন। দুনিয়ার মানুষগুলোর মন রক্ষা করতে গিয়ে তার কোনো কোনো রাতে জিকির ছুটে যায়। ফজর এবং এশার সালাতের পর রোজ কোরআন তেলাওয়াত করা মেয়েটা কোনো কোনো দিন কোরআন পড়ার সময় পায় না।
অশান্ত মন নিয়ে মোনাজাতে কেঁদে ভাসায় হুরাইন। তার অন্তর শীতল হয় না। সে শান্তি পায় না। এক মাসে তার এত পরিবর্তন। তার ভয় হয় সে নিজের দ্বীন ধরে রাখতে পারবে তো? কেননা শয়তান সর্বদা মানুষকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে থাকে। ঘরদোর পরিষ্কার রাখতে পরিবারের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। একজন সারাজীবন পরিষ্কার করেই গেল, বাকি লোকজন বারবার অপরিষ্কার করতেই থাকলে এক সময় পরিষ্কার করা ব্যক্তিও অপরিষ্কার হয়ে পড়ে। তেমনি দ্বীন পালনে অনাগ্রহী পরিবারে নিজের ইমান, দ্বীন নিয়ে টিকে থাকার লড়াই বড্ডো কঠিন। তাঁদের মাঝে বসবাস করে এক সময় তাঁদের মতো জীবনযাপনে না অভ্যস্ত হয়ে যায়! আজ বাবার সিদ্ধান্তকে দোষারোপ করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কেন তিনি তাকে এই কঠিন যুদ্ধে ঠেলে দিলেন? একজন দ্বীনি ছেলের দারস্থ করলে আজ তার জীবনটাও সহজ হয়ে উঠতে পারতো।
একজন নারী না কি একজন পুরুষের জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে। হুরাইন সব রকম চেষ্টা করেও ব্যর্থ।
“নিশ্চয়ই তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে তুমি হিদায়াত দিতে পারবে না। বরং আল্লাহই যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন। আর হিদায়াতপ্রাপ্তদের ব্যাপারে তিনি ভালো জানেন।”
সূরা আল-কাসাস। আয়াত ৫৬।
কার জন্য সে এখানে এসেছে। কাকে সঠিক পথ দেখাতে? না কি পথ দেখাতে এসে নিজের পথ ভুলে যেতে এসেছে! অনেকক্ষণ সময় নিয়ে নামাজ আদায় করে হুরাইন। সাজেদা ডাকেন চা দেওয়ার জন্য। নামাজে থাকায় উঠতে দেরি হয়। চা নিয়ে যেতেই সাজেদা ঝাঁঝালো স্বরে বলেন,“এতক্ষণ কোথায় ছিলে?”
“নামাজ পড়ছিলাম আম্মা।”
“এতক্ষণ লাগে নামাজ পড়তে? না কি নমাজ পড়তে গিয়ে ঘুমাও।”
হুরাইন বলল,“আমি পাঁচ মিনিটে সাত রাকাত নামাজ শেষ করতে পারি না আম্মা। সূরা শুদ্ধ এবং ধীরে পাঠ করলে সময় লাগে।”
“তুমি বলতে চাও তুমিই শুদ্ধ করে পড়ো? আর কেউ শুদ্ধ করে পড়ে না? আমরা পড়ি না?”
হুরাইন নিচু স্বরে বলল,“আমি সেটা বলিনি আম্মা।”
“এই মিনমিন করে কথা বলবে না। যাঁরা হাঁকডাক ছেড়ে কথা বলে, তাঁদের অন্তর পরিষ্কার। এমন মিনমিন কথা বলা মহিলারা হয় মিচকে শয়তান।”
মনে আঘাত পেলো হুরাইন। কন্ঠ নারীর পর্দা। আর পর্দাকে উনি কীসের সাথে তুলনা করছেন? আহত চোখে তাকিয়ে বলল,“এভাবে বলবেন না আম্মা। কন্ঠেরও পর্দা আছে।”
“যাঁরা জানে বেশি, তাঁরাই গুনাহ করে বেশি। আমরা জানিও না, গুনাহও কম করি।”
ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে কত সহজে এমন একটা কথা স্পর্ধার সাথে বলে ফেললেন সাজেদা। হুরাইন বলল,“আমাদের গুনাহের শেষ নেই আম্মা। স্বাভাবিক একটা কথাতেও আমরা কীভাবে গুনাহ কুড়িয়ে নিচ্ছি বুঝতেই পারছি না।”
“পাশের বাসার তমালের বউ গিয়ে স্বামীর গলায় উঠেছে। শশুর-শাশুড়ির সাথে থাকতে তাদের গলায় কাঁটা বিঁধে। তুমিও এমন করিও। তাসিনকে বলিও দূরে একটা চাকরি নিতে। তারপর তুমিও ওর ঘাড়ে গিয়ে উঠিও।”
হুরাইন বলল,“আম্মা আপনার কেন এত অপছন্দ আমাকে? আর শরিয়া অনুযায়ী একজন পুরুষ বাবা-মায়ের জন্য নয়, নিজের জন্য বিয়ে করে। স্ত্রীর সকল চাহিদা পূরণ করা স্বামীর দায়িত্ব। তাই স্বামী দূরে থাকলে, স্ত্রী যদি স্বামীর সাথে থাকার ইচ্ছে পোষণ করে, তবে স্বামী তাকে নিয়ে যেতে বাধ্য।”
সাজেদা রেগে বললেন,“মনগড়া কথা বানিয়ে, নিজেদের পক্ষে রায় দেওয়ার চেষ্টা করছো? শশুর-শাশুড়ির সেবা না করতে পারলেই বেঁচে যাও তোমরা।”
“শশুর-শাশুড়ির সেবা করা সাওয়াবের কাজ। তাছাড়া এসব আমার কথা নয় আম্মা।”
বাঙালি নারীদের মধ্যে অধিকাংশ আছেন যাঁরা রেফারেন্স বুঝেন না। পূর্বে তাঁরা সঠিক-ভুল কী শিখে এসেছেন সেটা বিশ্বাস করেই বসে থাকেন। তাঁরা প্রায়শই ক্ষোভের বশে একটা কথা বলে থাকেন। আজ রাগে অন্ধ হয়ে সাজেদাও বলে ফেললেন।
“আগে কে জাহান্নামে যাবে? হুজুররা।”
হুরাইন সবকিছু অপাত্রে দান করছে। ওদিকে জোর আওয়াজে সাউন্ড বক্সে “ টাইম ট্র্যাভেলার” গান চালিয়ে দিয়েছে নিশি। হুরাইন ওর ঘরের দিকে তাকিয়ে বলল,“আপুকে নামাজ পড়তে বলবেন আম্মা।”
সাজেদা বললেন,“আমার কী? ওর জবাবদিহি ও করবে। আমি তো নামাজ পড়তে বলি। না পড়লে আল্লাহ আমাকে কেন ধরবে?”
আফসোস হচ্ছে হুরাইনের। কেমন বলা বলেন তিনি? ফজরে ডাকেন না। মেয়ে পড়ে রাত করে ঘুমিয়েছে, থাক ঘুমাক৷ মাঝেমাঝে আসরের নামাজের সময় বলে থাকেন,“নামাজ পড়তে যা।”
দুই-একবার বলার পরও মেয়ের হেলদোল না দেখে তিনিও আর কিছু বলেন না। মাঝেমাঝে বলে থাকেন থাক বিয়ের পর পড়বে। যখন আমাদের মতো হবে, তখন পড়বে। অথচ যৌবনকালের ইবাদাত আল্লাহর প্রিয়। যেখানে মৃত্যুর ভরসা নেই, সেখানে যৌবনের ইবাদাত বাদ দিয়ে মধ্য বয়সে গিয়ে ইবাদাত করার স্বপ্ন কীভাবে একজন মুসলিম দেখে? হুরাইন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,“আপনার মেয়ে অবিবাহিত। তার সমস্ত পাপের দায়ভার অনেকটাই আপনার, তার বাবার, তার ভাইদের। তাই তাকে ফেরানোর চেষ্টা করুন।”
হুরাইন চলে গেল। সাজদা তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলেন। হুরাইন গিয়ে নামাজের বিছানায় বসে পড়লো। মোনাজাতে কেঁদে কেঁদে সকলের হিদায়াত প্রার্থনা করলো সাথে নিজের ধৈর্য শক্তি।
★★★
ফাবিহা শান্তিতে দিন পার করতে পারছে না। আগে ছিল শাবাব। এখন তার প্রতিপক্ষ দলের ছেলেরা। এরা শাবাবের চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে। খুবই উগ্র আচরণ তাদের। রাস্তায় ওড়না ধরে টা*না*টা*নি করে। আজকাল মানুষ কাউকে হেনস্তা হতে দেখে মজা নেয়। কেউ কেউ ভয়ে এগিয়ে আসে না। বাড়ি থেকে বের হতেও ইচ্ছে করে না। পড়াশোনায় মন বসে না। তার পরীক্ষা চলছে। তিন সাবজেক্ট পরীক্ষা শেষ হলো। তিনটাই খা*রা*প হলো। একা গুমরে কাঁদে সে। পড়তে বসতে পারে না। মনে শুধু আতঙ্ক ভর করে। বাইরে যেটুকু সাহস দেখায় ওটা ঘরে এলেই হারিয়ে যায়। ভয়ে আছেন ফাবিহার বাবা-মাও। তাঁরাও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। বাবা গোপনে তার জন্য পাত্র দেখাও শুরু করেছেন। তা খুব করে টের পেল ফাবিহা।
পরীক্ষা থাকায় বের হতে হলো তাকে। চুলে চিরুনি চালায়নি। একটা ওড়না পেঁচিয়ে বেরিয়ে গেল। পরীক্ষার হলে সকলের কলম চলছে। ফাবিহা অধিকাংশ প্রশ্ন কমন পেয়েও লিখতে পারছে না। হাত চলছে না। ইচ্ছে করছে কোথায়ও চলে যেতে। যেখানে তাকে কেউ চিনবে না। সে বেঞ্চে মাথা এলিয়ে দিলো। ঠকঠক শব্দ পেয়ে ধড়ফড়িয়ে সোজা হয়ে বসলো। স্যার বললেন,“এটা পরীক্ষার হল। সোজা হয়ে পরীক্ষা দিন।”
ফাবিহার মনে পড়লো তিনটা সাবজেক্ট সে ভালো পরীক্ষা দেয়নি৷ এভাবে চললে তো হবে না। মনের বিরুদ্ধে কলম চালানো শুরু করলো। হাত না চলায় লেখা ভীষণ বাজে হলো।
ফরহাদ দেখতে পেল ফাবিহা কেমন নিস্তেজ ভঙ্গিতে হেঁটে আসছে। সে ফোন বের করলো।
শাবাব বাবার সাথে সভ্য ছেলের মতো অফিস যাচ্ছে। বিনয়ী আচরণও লক্ষ করা যাচ্ছে তার মাঝে। বুঝা যাচ্ছে তার মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ফিরোজ আলম শুকরিয়া আদায় করেন। সুরাইয়া ছেলে বলতে পাগল। এখন আরো আদরে মুড়িয়ে রাখছেন।
ফাবিহাকে দেখতে এলো পাত্রপক্ষ। মা-বাবা খুব করে বুঝালেন। তার বাবা অসুস্থ মানুষ। মাথার উপর বাবা ছাড়া আর কারো হাত নেই। বাবার কিছু হয়ে গেলে তাদের মা -মেয়ের কী হবে? তাছাড়া ব*খা*টে*দে*র কবল থেকেও রক্ষা পাবে সে। ফাবিহা বাবা-মায়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিলো। তার আর ভালোলাগছে না এসব। সেও সবকিছু থেকে মুক্তি চায়।
পাত্রের সাথে ছাদে দাঁড়িয়ে রইল সে।
ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো,“আপনার কেমন জীবনসঙ্গী পছন্দ?”
ফাবিহা মৃদু হেসে বলল,“যেমন চাই, তেমন কি বললেই পাওয়া যায়?”
“বলতে তো ক্ষতি নেই। আমারও জানা উচিত আপনার চাওয়া-পাওয়া। নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি আমরা।”
ফাবিহা বলল,“সিগারেট খাওয়া আমার পছন্দ নয়। পাস্ট অধিকাংশ মানুষেরই থাকে। তবে একজনের বেশি আমি আশা করি না। তাহলে মানতে খুব কষ্ট হয়ে যাবে।”
ছেলেটি মুচকি হেসে বলল,“স্বস্তি পেলাম। আমি সিগারেট ছুঁয়েও দেখি না। আর আমার জীবনে মা ছাড়া আপনিই প্রথম নারী।”
ফাবিহা মনে মনে আওড়ালো,“অথচ আমার জীবনে প্রথম পুরুষ আপনি নন।”
পাত্রপক্ষ পজিটিভ সাইন দিয়ে গেলেন। বুঝা গেল ফাবিহাকে খুব পছন্দ হয়েছে। হবেনাই বা কেন? ভারি মিষ্টি মেয়ে। ছেলে চেয়ে নম্বরও নিয়ে গেল ফাবিহার। কথাটা বাবা-মা দু’পক্ষের আত্মীয়স্বজনের মাঝেই জানাজানি হয়ে গেল।
বিপত্তি ঘটলো দুদিন পর। মায়ের চোখমুখ শুকনো। দুই ঘন্টা যাবত থমথমে দেখাচ্ছে তাঁকে। ফাবিহা কারণ জিজ্ঞেস করে বসলো।
“ছেলেপক্ষ না করে দিয়েছে।” অতঃপর রাগ ঝেড়ে বললেন,“আমার মেয়ে কম কীসে? বরং ছেলের তুলনায় আমার মেয়ে সবদিক থেকে উপরে আছে। তারপরও ছেলের মায়ের দাপট বেশি। আমি এরচেয়ে ভালো ঘরে মেয়ে বিয়ে দেব।”
ফাবিহা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,“কারণ জানিয়েছে?”
“না।”
কথা বাড়ালো না সে। বিকেলে তার নামে পার্সেল এলো। অথচ ফাবিহা কিছু অর্ডার করেনি। পার্সেল রিসিভ করার পর ভেবেচিন্তে খুলে ফেললো। ভেতরে একটা কাগজ ছাড়া আর কিছুই নেই। ফাবিহা কাগজ খুলে চোখ বুলিয়ে নিলো।
“একটা বিয়ে ভেঙেছি। যতবার প্রপোজাল আসবে, ততবার ভাঙবো। আমিও বিয়ে করবো না, কাউকে বিয়ে করতে দেব না।”
হুমকি আর হ্যান্ড রাইটিং দেখে ফাবিহা বুঝে গেল এটা কার কাজ। সে রাগ করবে কি- না বুঝে উঠতে পারলো না। আপাতত অনুভূতি শূন্য হয়ে বসে রইলো।
বিয়ের খবরটা যেভাবে সবার মাঝে ছড়িয়েছি, একইভাবে বিয়ে ভাঙার খবরটাও সবার মাঝে ছড়িয়ে গিয়েছে। পরপর দুবদর বিয়ে ভাঙা নিয়ে মানুষ নানান মন্তব্যে মেতে উঠেছে।
পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে রাস্তায় শাবাবের প্রতিপক্ষ সুমনের দল সামনে পড়লো। বিশ্রী হেসে তারা তাদের মতো নোং*রা মন্তব্য করতে লাগলো। অন্যদিন ওড়নার আঁচল ধরে টানলেও আজ একেবারে ওড়নার দুই-মাথা ধরে টানলো। গলায় ফাঁ*স লাগার মতো নিঃশ্বাস আটকে আসলো ফাবিহার। দু’হাতে সামনের দিকে ওড়না টেনে ধরে রেখেছে। বাবা বলেছেন এদেরও ব্যবস্থা নেবেন। আজ ধৈর্যের সীমা লঙ্ঘন হলো। প্রথমে ওড়না ছাড়ালো। তারপর ঠাটিয়ে ওড়না ধরা ছেলেটির গাল লাল করে দিল। শাবাব চুপ থাকলেও এরা হিংস্র বাঘের মতো গর্জন করে উঠলো। খামছে ধরলো জামার কাঁধ। ভয় ঝেঁকে ধরলো ফাবিহাকে। সম্মানহানীর ভয়, মৃত্যুর ভয়। মনে মনে আল্লাহকে ডাকলো। তাকে এই বিপদ থেকে যেন রক্ষা করেন তিনি।
#চলবে….