একতরফা ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
377

#একতরফা_ভালোবাসা
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

প্রান্তি আজ অনেক দিন পর থ্রিডি ড্রয়িং করতে বসেছে। মেজাজটা তার বেশ খারাপ ছিল৷ এই খারাপ মেজাজকে ভালো করতেই প্রয়াস চালানোর সিদ্ধান্ত নিল সে৷ যেই ভাবা সেই কাজ। প্রান্তি যখন ড্রয়িং করছিল তখন তুলি হঠাৎ তার রুমে আসে৷ প্রান্তি খেয়াল করে তুলিকে। তুলি প্রেয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড হলেও প্রান্তির সাথে তার খুব একটা সখ্যতা নেই৷ তাদের সম্পর্ক বেশ সাদামাটা। মাঝে মধ্যে একটু কথা হতো এই পর্যন্তই। তার থেকে বেশি কিছু না। প্রান্তি তুলির উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“তুমি কি কিছু বলবে?”

“হ্যাঁ, আম্মু তোমায় নিচে খেতে ডাকছে। চলে এসো।”

প্রান্তি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়।

★★★
প্রেয়া রান্নাবান্নায় মোটেই পটু নয়। বলতে গেলে এই বিষয়ে সে বড্ড আনাড়ি। তাই আজ রান্না করতে গিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হলো তাকে। ইউটিউব দেখে যতটা যা পারল চেষ্টা করে গেল। তবে খুব একটা ভালো করে পারল না। হয়তো রান্না বেশি ভালো হলো না সেটা বেশ বুঝতে পারল। তবুও এই রান্না নিয়ে গিয়েই পরিবেশন করল সবার সামনে। প্রেয়ার রান্না খেয়েই চোখমুখ কুচকে নিলো আহিল। তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে বলল,
“কি রান্না করেছ এটা? ছি! আমার মুখের রুচিই নষ্ট করে দিলে।”

প্রেয়া ভীষণ মর্মাহত হলো। এত খারাপ রান্না হয়েছে সেটা বুঝতে পারে নি সে। নতমস্তকে বলল,
“সরি, আমি চেষ্টা করেছিলাম ভালো কিছু করার কিন্তু…”

আহিল রেগে বলে,
“থাক। তোমাকে আর কোন অজুহাত দিতে হবে না। আমি বাইরে খেয়ে নেব।”

বলেই আহিল খাবারে পানি ঢেলে উঠে পড়ে। আহিলকে উঠে যেতে দেখে প্রেয়া আহত চোখে তাকায়। আহিল প্রেয়াকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে চলে যেতে থাকে। পিছন থেকে রাহেলা বেগম তাকে ডাক দিয়ে বলেন,
“এভাবে খাবার ছেড়ে যাস না আহিল।”

কিন্তু আহিল কারো কথায় কর্ণপাত করে না। আহিল এভাবে না খেয়ে চলে যাওয়ায় বেজায় চটে যান রাহেলা বেগম৷ তার সব রাগ গিয়ে পড়ে প্রেয়ার উপর। দাঁত কড়মড় করে তিনি বলেন,
“এই মেয়েটার জন্য আমার ছেলেটা এভাবে না খেয়ে চলে গেল। না জানি আহিল কেন এই মেয়েটাকে বিয়ে করল। দুই বোনের জন্য আজ আমাদের জীবনে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।”

আজহারুল আহমেদ রেগে বলেন,
“এসব ঝামেলা বন্ধ কর। আমার একদম ভালো লাগছে না। প্রেয়া তুমি যখন রান্না পারো না তখন তোমায় রান্না করতেও হবে না। আর রাহেলা তুমি প্রেয়াকে দোষ দিওনা। দোষটা আমাদেরই। প্রান্তির সাথে আহিলের বিয়েটা ঠিক করাই আমাদের ভুল ছিল। ওর জন্য কত ভালো মেয়ে দেখেছিলাম আমি৷ শুধুমাত্র তোমাদের মা ছেলের জেদের জন্য আজ এই দশা।”

“এখন তো তুমি আমার দোষই দেবে। ধূর, আর ভালো লাগে না। আমি ম*রি না কেন?”

★★★
প্রান্তি আজ তুষারের সাথে বেড়িয়েছে। দুজনে গাড়িতে পাশাপাশি বসে থাকলেও কেউ কোন কথা বলছে না। মূলত তাহেরা বেগম প্রান্তিকে তুষারের সাথে পাঠিয়েছেন। প্রান্তি এক কাপড়ে বাসা থেকে চলে আসায় তিনি তুষারকে বলেছেন প্রান্তিকে শপিং করিয়ে দিতে। তুষার নিজেও ভাবছিল প্রান্তিকে শপিং করার কথা বলবে, তাহেরা বেগম কথাটা তোলায় তাকে আর বলতে হলো না।

শপিং কমপ্লেক্সের সামনে নেমে অতঃপর শপিং করে নিলো প্রান্তি। জামা কাপড়ের দিক থেকে খুব একটা সৌখিন নয় সে৷ কয়েকটা সালোয়ার, হিজাব আর ওড়না কিনে নিলো। অতঃপর রওনা দিলো তুষারের সাথে।তুষার হাতঘড়িতে সময় দেখে বলল,
“আমাকে একটু পর চেম্বারে যেতে হবে। তুই তো শপিং এ আসার চক্করে সকালে কিছু না খেয়েই চলে এলি৷ পাশেই একটি রেস্টুরেন্ট আছে। চল হালকা কিছু খেয়ে নিবি।”

“আমি নাহয় বাসায় ফিরে..”

“আমি যা বলছি তাই কর। বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকা কিন্তু শরীরের পক্ষে একদম ভালো নয়।”

তুষারের কথায় আর অমত করার সাধ্যি হলো না প্রান্তির৷ অগত্যা মেনে নিলো তার আদেশ। তুষার ও প্রান্তি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। তুষার খাবার অর্ডার করতেই একজন ওয়েটার এসে খাবার দিয়ে গেল।

কাকতালীয় ভাবে আহিলও ঐ একই রেস্টুরেন্টে এসেছিল খাবার খেতে। তুষার বা প্রান্তি তার দিকে খেয়াল না করলেও সে ঠিকই তাদের দেখে ফেলে। প্রেয়ার জন্য এমনিতেই তার মেজাজ খারাপ ছিল। এভাবে প্রান্তি আর তুষারকে একসাথে দেখে তার মেজাজ আরো বিগড়ে গেল। খাবার আর গলা দিয়ে নামলো না।

প্রান্তি বেশ অগোছালো গোছের মেয়ে। কফি খেতে গিয়ে মুখে একাকার করে ফেলল। তুষার প্রান্তির এই অবস্থা দেখে হেসে দিলো। টিস্যু দিয়ে নিজের হাতে তার মুখ মুছে দিলো।

এই দৃশ্য যেন আহিলের অন্তরে অগ্নিবর্ষণ ঘটালো৷ আহিল রেগে উঠে বেড়িয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে। বাইরে এসে নিজের গাড়ির গ্লাসে ঘু’ষি দিয়ে গ্লাসটাই ভেঙে ফেলল। সাথে রক্তাক্ত হয়ে গেল তার হাত। আহিল স্বগোতক্তি করে বলতে লাগল,
“চাচা না বলল, তুষার বাধ্য হয়ে প্রান্তিকে বিয়ে করেছে এই তার নমুনা! প্রেয়াকে ভালোবাসার পরেও প্রান্তিকে বিয়ে করে কত সুখে আছে তুষার। যত দুঃখ শুধু আমার কপালেই!”

রেগে গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে লাগল সে। ক্রোধের কারণে সে খুব বেশি স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছিল। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ তার সামনে একটি ট্রাক চলে আছে। আহিল এক্সিডেন্টের হাত থেকে বাঁচার জন্য ইউটার্ন নেয়৷ কিন্তু শেষরক্ষা হয়না। তার গাড়ি গিয়ে ধা*ক্কা খায় পাশের একটি বিশাল গাছে গিয়ে। আহিলের মাথায় আঘাত লাগে। সে ভীষণ ভাবে আহত হয়।

★★★
প্রেয়া, রাহেলা বেগম, আজহারুল আহমেদ সবাই হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয়েছেন। আজহারুল আহমেদ ডাক্তারের সাথে কথা বলে যা বুঝলেন আহিলের অবস্থা বেশ গুরুতর। মাথায় আঘাতটা বেশ গুরুতর হওয়ার কারণে তার লাইফ রিস্কও আছে৷ বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে নিউরোলজি বিভাগে। প্রেয়া সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে চলেছে আহিলের সুস্থতার জন্য। অপরদিকে রাহেলা বেগম সমানে আহাজারি করে চলেছেন আর দোষ দিয়ে চলেছেন প্রেয়াকে। তিনি বলছেন,
“এই মেয়েটা অপয়া। এর জন্য আমার ছেলে আজ ম*রতে বসেছে।”

এমন সময় পিয়াল আহমেদও সেখানে চলে আসেন। তিনি আসতেই প্রেয়া গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন। তিনি নিজের মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে ভরসা দিয়ে বলেন,
“তুমি কিছু চিন্তা করো না৷ সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“আহিল ভাইয়ের কিছু হয়ে যাবে না তো আব্বু? আমার সাথেই কেন এমন হয়? আমি কি ভুল করেছি?”

“তুমি কোন ভুল করো নি মা। তোমার বড় বোনের ভুলের শাস্তি তোমাকে পেতে হচ্ছে।”

এমন সময় প্রান্তি ও তুষারও সেখানে চলে আসে। আহিলের দূর্ঘটনার খবর শুনেই মূলত তারা এসেছে।

প্রান্তিকে দেখেই প্রেয়া ছুটে তার সামনে এসে বলে,
“কেন এখানে এসেছ তুমি আপি? আমার সর্বনাশ দেখতে!”

“এসব তুই কি বলছিস প্রেয়া? মানছি তোর মানসিক অবস্থা ভালো নেই। কিন্তু তাই বলে তুই সব সময় আমাকে এভাবে ব্লেইম দিতে পারিস না।”

পিয়াল আহমেদ রেগেমেগে আসেন। এসে কোন কথা না বলেই সরাসরি প্রান্তির গালে চ*ড় বসিয়ে দেন। প্রান্তি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। এই প্রথম তার বাবা তার গায়ে হাত তুলল। তার চোখে নোনাজল এসে অভিযোগ জানাতে লাগল। পিয়াল আহমেদ প্রান্তির উপর চিৎকার করে বলেন,
“লজ্জা করে না তোমার? কোন মুখ নিয়ে এখানে এসেছ? তোমার জন্য তোমার ছোট বোনকে আজ এত সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। তোমার মতো বোন যেন আমার শত্রুরও না হয়।”

তুষার সব ঘটনারই সাক্ষী রইল। হাজার হোক প্রান্তি তার স্ত্রী। তাই তার উপর হওয়া এই অধ্যায়গুলো মানতে পারল না। তাই বলে উঠল,
“তুমি ভুল করছ মামা। প্রান্তি এখানে কোন ঘটনার জন্যই দায়ী নয়। আমি মানছি, সেদিন বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রান্তির ভুল ছিল। কিন্তু প্রেয়া যে আহিলকে বিয়ে করেছে এটাতে তো প্রান্তির কোন দায় নেই। আমি তো আম্মুর কাছে সবই শুনেছি৷ সব শুনে যা বুঝলাম তাতে প্রেয়া স্বেচ্ছায় এই বিয়েটা করেছে। তাহলে প্রান্তিকে দায়ী করার মানে কি?”

চলবে ইনশাআল্লাহ ❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে