এই ভালো এই খারাপ পর্ব-০২

0
519

#এই_ভালো_এই_খারাপ(২)
#Jannat_prema

নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেতেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সকাল। তখনকার সেই ছেলেকে দেখে কপাল কুঁচকে গেলো। পুরো গাড়িতে চোখ বুলালো। বোনের সাথে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও বাবা বললো, সবার সাথে মাইক্রোতে যেতে৷ সে যে একা যাচ্ছে তাও না৷ সাথে তার দুটো কাজিনও যাচ্ছে। পুরো গাড়িতে মাত্র পিছনের সিটগুলোই খালি ছিলো৷ অনেকে আগে ভাগে উঠে সামনে বসায় অগ্যতায় তাকে পিছনের সিটে বসতে হলো। ওই তো তার কাজিন দুটো, রাইসা আর মিম তার সামনের সিটে বসে কথা বলছে৷ সেও জানালার পাশে বসে ওদের সাথে এতোক্ষণ খোশগল্প করছিলো৷ হঠাৎ নিজের পাশে কারো বসার আওয়াজ শুনে তাকালো। আদিল এমন ভাবে সকালের পাশে বসেছে, যেনো সে সকালকে দেখেইনি। সকালের মেজাজ খারাপ হলো অনেকটা। কিছু বলতে নিবে এমন সময় গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার কারণে আদিলের কাঁধের সাথে মাথায় বাড়ি খেলো৷ ব্যাথায় মুখ বিকৃত করে খেকিয়ে উঠলো সকাল।

” ওই মিঁয়া! এখান দিয়ে বসছেন কেনো? জায়গার কি অভাব পড়েছে? সেই কখোন থেকে দেখছি আপনি আমার পিছনে পড়ে আছেন। কোথ থেকে যে এই সব আজয়ারা মানুষ আসে, আল্লাহ জানে! ”

সকালের কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদিল। সে ভাবছে, মেয়েটার কি ঝাঁজ। না জানি তার,ভাইয়ের বউটা কেমন হবে৷ হঠাৎ সকালের কথাগুলো মাথায় আসতেই সেও কিছুটা ঝাঁঝালো কণ্ঠে সুধালো,

” শুনো! আমি যেখানে জায়গা পেয়েছি সেখানে বসেছি। এখন তুমি যে এদিকে বসে একটা সিট দখল করে রেখেছো তা কি আমি জানি? আর কি বললে, আমি তোমার পিছনে পড়ে আছি? এ কথা কি ভাবে ভাবলে! আমি নুবায়ের আদিল তোমার মতো এইটুকুনি একটা পিচ্চির পিছে পড়ে থাকবো? তুমি জানো আমার জন্য কত কত মেয়ে দিওয়ানা হয়ে আছে। কত সুন্দরি মেয়েরা আমাকে দেখলে হোটচ খায়। আর সেখানে তো তুমি কিছুই না। ”

আদিলের পিচ্চি কথাটা খুব গায়ে লাগলো সকালের। সে মানছে সে একটু খাটো। তাই বলে সোজা এই লোক পিচ্চি পিচ্চি করে কানের পোকা খাবে! এতো বড় অপমান সে কিছুতেই মানবে না। এর একটা বিহিত সে করবেই। চেনা নাই জানা নাই, উড়ে এসে তাকে কথা শুনাবে সেটা হবে না। ছেলেটা ভাবে কি নিজেকে! বিশ্বের টপ হ্যান্ডসাম বয়। দেখতে লাগে সাদা বিদেশি বিড়ালের মতো আবার তাকে কথা শুনায়। সকাল দাঁতে দাঁত চেপে নাক ফুলিয়ে তর্জনি আঙ্গুল উঠিয়ে বলে উঠলো,

” ওহ মিস্টার আদিল না ফাদিল! যাই হোক না কেনো? একদম আমাকে পিচ্চি বলবেন না। আপনি নিজে যে পিলারের মতো লম্বা সেটা চোখে পড়ে না? আপনি নিজেকে এতো সুন্দর ভাবতে যাবেন না। শেষে কি যেনো বললেন না, আপনাকে দেখে মেয়েরা হোচট খেয়ে পড়ে। হাহা! আসলে কি বলুন তো ওই মেয়েগুলো তো আর কখোনো ধলা কাক দেখেনি। তাই আপনাকে দেখতে গিয়ে হোঁচট খায়। বুঝলেন! ”

” এই তুমি কি বললে? আমি, আমি ধলা কাক? ”

” ভুল বলেছি কি? ”

” তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো। ”

” তাহলে আপনি এতোক্ষণ ভাবছিলেন সম্মান করছি? ”

” তোমাকে__”

” ওরে বাপ তোমরা থামো! ”

আদিলকে বলতে না দিয়ে ধমকে উঠলো রাইসা। এতোক্ষণ এদের ঝগড়া সহ্য করে গেলেও এখন আর চুপ থাকতে পারলো না। গাড়িতে বসা সবাই কৌতুহল নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। সবাইকে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেই রাইসা ধমকে উঠলো। সকাল আর আদিল থতমত খেয়ে চুপ হলেও চোখ দিয়ে দুজনেই ঝগড়া করছে। রাইসা ওদের এমন নিরব ঝগড়া দেখে ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। সে আর সকাল সমবয়সী। রাইসা মনে মনে ভাবলো, সকাল তাদের প্ল্যান সব পানিতে মিশিয়ে দিলো। সকাল কি জানে সে কার সাথে ঝগড়া করছে? জানলে হয়তো মেয়েটা লজ্জায়, না না ওর তো লজ্জা কম। তাহলে কি করতো? রাইসা আর মাথা ঘামালো না৷ মিমের দিকে একবার তাকালো। সে ঘুমে বিভোর।

.

ভোর অতিমাত্রায় চটে আছে আবদ্ধর উপর। পারছে না শুধু কাঁচা যেনো এখনি চিবিয়ে খেতে। কি নির্লজ্জের মতো ড্রাইভারের সামনে কথাগুলো বললো। ভোর কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,

” তোর এই পঁচা মুখটা না জানি কোনদিন আমি সুই দিয়ে সেলাই করে দেই। তোকে না বললাম আমার থেকে এক হাত দূরে গিয়ে বসতে। কানে শুনিস না? ”

আবদ্ধ ভোরের কথা শুনে সামনে ড্রাইভারের দিকে তাকালো। ড্রাইভার মিটমিট করে হাসছে। আবদ্ধ সেদিকে পাত্তা দিলো না। আর না দিলো ভোরের বলা কথায়। ভোরকে একপেশে জড়িয়ে ধরে মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে৷ ড্রাইভার না শুনার মতো ভোরের কানের কাছে গিয়ে ব’লে উঠলো,

” আমার মুখ সেলাই করলে যে আমি তোকে চুমু খেতে পারবো না। তাহলে তো আমার আফসোস থেকে যাবে না! ”

ভোরের কান গরম হয়ে গেলো। আবদ্ধর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। সিটের সাথে লেগে বসে ব’লে উঠলো,

” তোর সে আশায় সে গুড়ে বালি। তোর সাথে এখনো আমার পুরোনো হিশেবে বাকি আছে। ”

.

পুড়ো বাড়ি জুড়ে মানুষ গিজগিজ করছে। নতুন বউকে দেখার কৌতুহল সবার। ভোরকে সোফায় বসিয়ে রেখেছে। তার পাশেই বসে আছে আবদ্ধর বড় বোন আলিফা। বউয়ের রুপের প্রশংসা সকলের মুখে মুখে। সবার এতো এতো প্রশংসা শুনে খুশিতে আটখানা নায়েলি বেগম। তিনি নিজেও মনে মনে ছেলের বউয়ের উপর সন্তুষ্ট হয়ে আছেন। তার ছেলে যেনো কোনো রাজকুমারীকে নিয়ে এসেছেন তার ঘরে। সকাল, রাইসা, মিম আবদ্ধদের পুরো বাড়ি ঘুরে দেখছে। বাড়িটা বেশ বড়। বাড়ির বাম পাশে বাগান করা আছে। আর ডান পাশের ওদিকে গাড়ির গ্যারেজ। ওদেরকে যে এখন ভোরের পাশে থাকা উচিত তা যেনো ওরা কেউই পাত্তা দিলো না। আসছে ধরে ওরা তিনজন এদিকে একবার গিয়ে ছবি তুলছে তো আবার ওদিকে।

এদিকে ভোর গরমের ঠ্যালায় পারছে না খালি চিল্লাতে। সেই কখোন থেকে বসেই আছে। তবে ভোর একটা জিনিস খেয়াল করেছে। সেটা হলো এদের বাড়ির যে ছেলের সাথে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো তার সাথে না হয়ে যে আবদ্ধর সাথে হয়েছে এতে কারো ভ্রূক্ষেপ নেই। সব কিছু যেনো এমনই হওয়ার কথা ছিলো। আপাতত ভোর এ বিষয়ে মাথা ঘামালো না। সবটা নাহয় আবদ্ধ বদমাশের থেকে জানা যাবে। আপাতত সে এখন এখান থেকে বাচতে পারলে শান্তি পেতো। আলিফা ভোরের সিচুয়েশনটা বুঝতে পেরে মাকে ডাকলো। তার সাত মাসের ভারী পেট নিয়ে উঠতে বসতে কষ্ট হয়৷ নায়েলি বেগম কাছে আসতে আলিফা বললো,

” মা ভোরকে এখন ওর রুমে দিয়ে আসলে ভালো হয়। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে মেয়েটা । আবার বৌভাতের সময় ওকে দেখতে পারবে সবাই। ”

ভোর কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালো আলিফার দিকে। মেয়েটা কেমন বুঝে গেলো তার সমস্যা।

বন্ধু, দুলাভাইদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে প্রায় রাতের পৌনে এগারোটা বেজে গেলো। শেষে আলিফার হাসবেন্ড তামিম বলে উঠলো,

” কি শ্যালক সাহেব! সারা রাত কি গল্প করেই কাটিয়ে দিবে না কি? যাও যাও বউয়ের কাছে যাও। ”

আবদ্ধ মাথা চুলকে মুচকি হাসলো। সে তো সে কখোন থেকে ফাদ পেতে আছে ভোরের কাছে যাওয়ার। আজকে যে ভোরের ভয়ংকর কিছুর মধ্যে পড়তে হবে সে জানে। চিন্তা ভাবনা করতে করতে রুমের সামনে আসতেই থেমে গেলো। আদিল, আলিফা, সকাল, রাইসা, মিম আরো দুজন কাজিন তার রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে৷ আবদ্ধ সবগুলোর দিকে সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে ব’লে উঠলো,

” কি চাই জনগণ বাসি? ”

আবদ্ধর প্রশ্নে সবাই নড়েচড়ে উঠলো। একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আলিফা ব’লে উঠলো,

” শুন ভাই! তুই আমার দেড় বছরের ছোট বলে তোকে ত্রিশ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দিলাম। ”

আবদ্ধ প্রশ্ন করলো,

” কিসের ডিসকাউন্ট? ”

ভাইয়ের প্রশ্নের জবাব দিতে আদিল এগিয়ে এসে বলে,

” কিসের আবার টাকার। এখন তুই আমাদের সুন্দর করে চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে নিজের কাজে যা। ”

আদিলের কথায় সবাই মাথা নাড়ালো। আবদ্ধ সবার দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে দাড়ালো। মুচকি হেসে বললো,

” তোদের টাকা চাই না? ”

সবাই আবারো মাথা নাড়ালে আচমকা আবদ্ধ চিল্লিয়ে উঠলো,

” আপি তোর পাশে তেলাপোকা দেখ। ”

সবাই চিল্লিয়ে উঠলো। সকাল, রাইসা, মিম চিল্লিয়প দুরে গিয়ে গা ঝাড়তে লাগলো। আলিফা চোখ বন্ধ করে আদিলের হাত চেপে ধরেছে৷ রুমের দরজার সামনে দিয়ে খালি হতে চট করে ঢুকে ঠাশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো আবদ্ধ। দরজার ওপাশে সবাই হতবুদ্ধির মতো তাকিয়ে আছে৷ আবদ্ধ যে এভাবে বোকা বানাবে সবার ধারনার বাইরে। আলিফা দরজায় ঠা’শ করে থাপ্পর লাগিয়ে বললো,

” আবদ্ধর বাচ্চা! কালকে দেখে নেবো তোকে। ”

আবদ্ধ বোনের কথায় পাত্তা দিলো না। এখন সে তার বউকে দেখতে পেলেই শান্তি। দরজা লাগিয়ে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে ব্রু বেঁকে গেলো তার। কারণ পুরো রুম অম্যাবস্যার মতো অন্ধকার হয়ে আছে। রুম তো এতো অন্ধকার হয়ে থাকার কথা না। আবদ্ধ এক পা এক পা করে এগোতে এগোতে ডেকে উঠলো,

” ভোর শুনছিস? এ রকম অন্ধকার করে রেখেছিস কেনো? ”

আবদ্ধর কথা শেষ না হতেই আচমকা কেউ ওর গলা চেপে ধরলো। এমন কান্ডে আবদ্ধ খানিকটা চমকে উঠলো। ব’লে উঠলো,

” ভভোর ছাড়! ”

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে