#এই প্রেম তোমাকে দিলাম
#পর্ব_১৩
#আফিয়া_আফরিন
তিথির চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে। আদিত্য ধাম করে তাকে ছেড়ে দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেল।
তারা এতক্ষণ ছিল রাস্তার পশ্চিম সাইডে পার্কের মতন একটা জায়গা আছে, সেইখানে। এই জায়গাটা তিথির বরাবরই প্রিয়!
তিথি ওখানেই বসে দু’হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলল। তানিশা এলো কিছুক্ষণ পর। অনেকক্ষণ পার হয়ে গেছে বলে সে খোঁজ নিতে এসেছিল। এসেই দেখল তিথির বিধ্বস্ত অবস্থা!
ডান গাল বেশ ফোলা। ঠোঁটের কোনা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। এক সাইডে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। চুলগুলো এলোমেলো।
তানিশা অবাক হলো। শুধু অবাকই নয়, সে হতবাক হয়ে গেল। এইটুকু সময়ের মধ্যে কি এমন হয়ে গেল?
তানিশা তিথির দিকে এগিয়ে এসে খুব সাবধানে প্রশ্ন করলো, “কি হয়েছে আপু?”
তিথি উত্তর দিল না। মূলত সে উত্তর দেয়ার পরিস্থিতিতে নেই। চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। হাত পা ক্রমে অসাড় হয়ে আসছে। বাকশক্তি ও যেন হারিয়ে ফেলেছে।
তানিশা তিথির হাত ধরলো। সাথে সাথে মাথা ঘুরে পড়ে গেল তিথি। তানিশা ঘাবড়ে গেল।
এইখানে আশেপাশে মানুষজন কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ভোরের দিকে আর বিকেলের দিকে আসে ওয়ার্ক করার জন্য। দুপুর টাইমে কেউ নিশ্চয়ই পার্কে আসবেনা!
তানিশার পক্ষে একা তিথিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তার মধ্যে তার কাকা কাকিকে কি উত্তর দিবে সে?
উপায়ান্তর না পেয়ে ফোন করল আকাশকে।
“হ্যালো আকাশ কোথায় আছো তুমি?”
“ভাইয়ার সাথে তার অফিসে আছি।”
“তাড়াতাড়ি এসো প্লিজ। তিথি আপু রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে।”
আর এক মুহূর্ত কথা হলো না। আকাশ কল কেটে দিল। তানিশা এড্রেস মেসেজ করে দিল।
কিছুক্ষণের মাথায় আকাশ চলে এলো। আকাশ শুধু একা না, আয়াশ ও আছে সাথে।
আকাশ তিথিকে দেখা মাত্রই আকাশ প্রশ্ন করলো, “আর এরকম রক্তারক্তি অবস্থা কিভাবে হলো?”
তানিশা কিছু বলার আগে আয়াশ বললো, “এসব পরে শুনিস, আগে ওকে বাসায় নেয়া দরকার।”
তিথিকে এমন অবস্থায় বাড়ি নিয়ে গেলে নির্ঘাত ফারজানা বেগম জ্ঞান হারাবে, নয়তো কাঁদতে কাঁদতে পাগলই হয়ে যাবেন। তাই তারা ঐ দিকে না গিয়ে আকাশদের বাড়িতে নিয়ে এলো তিথি কে।
ইতিমধ্যে ডাক্তার চলে এসেছে।
বললো, “তেমন কোন সিরিয়াস ব্যাপার না। একটু চাপের ফলে এমন হয়েছে। রেস্ট নিতে দেন, ঠিক হয়ে যাবে।”
ডাক্তার চলে গেলে আয়েশা বেগম গরম দুধ নিয়ে আসে তিথির জন্য। যদিও তার জ্ঞান ফিরে নাই এখনও।
তিনি খুব সাবধানে তিথি ঠোঁটের কোণে থাকা জমাট বাধা রক্ত মুছিয়ে দিলেন।
আকাশ তানিশাকে জিজ্ঞাসা করলো, “সবই বুঝলাম যে ও চাপের মধ্যে ছিল। কিন্তু এই রক্ত এল কোথা থেকে?”
“আমি জানিনা। আদিত্য ভাইয়া আসছিল।”
আদিত্যের কথা শুনে আকাশের মেজাজ তুংগে চড়ে উঠলো।
আয়াশ ভালোমতো চেনেই না আদিত্যকে। তাই সে চুপ করে রইল। কিন্তু ইচ্ছামত কয়েকটা ধোলাই দিতে পারলে মনে হয় শান্তি লাগতো।
আকাশ হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে বললো, “ওই জানোয়ারের এত বড় সাহস হয় কিভাবে, তিথির সাথে আবার দেখা করার? ওকে ছাড়বো না আমি। কি করছো ওই তিথির সাথে?”
তানিশা ভয় পেয়ে গেল। আকাশের এই রূপের সাথে সে অভ্যস্ত নয়। তাই কোন প্রতি উত্তর করল না।
.
.
.
কিছুক্ষণের মধ্যেই তিথির জ্ঞান ফিরে এলো। সে প্রচন্ড ট্রমার মধ্যে আছে। জ্ঞান ফেরা মাত্র বাড়ি ফিরবার তারা দিতে লাগলো।
আয়শা বেগম বললেন, “একটু রেষ্ট করো মা। বাড়িতো যাবেই।”
“না আন্টি, আমাকে যেতে হবে।”
তিথি উঠে বসে এলোমেলো পায়ে হেঁটে বাইরে এসে দাঁড়ালো। কারো বারণ শুনল না। তানিশা ও পিছু পিছু চলে এলো।
আয়েশা বেগম আয়াশকে বললেন, “তুই ওদেরকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আয়। আকাশের মন মেজাজ খারাপ আছে তাই ওকে আর ঘাঁটালাম না।”
পথের মধ্যে সারা রাস্তা তিথি চুপচাপ ছিল। একটা কথা মুখ দিয়ে বের করে নাই।
ওদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আয়াশ ও ফিরে এলো। ঘরে এসে দেখলে ফোন ফেলেই চলে গেছে। আয়াশ পরে ফেরত দেবে ভেবে নিজের কাছে রেখে দিল।
তিথি বাড়ি ফেরা মাএই তার মা হাজার টা প্রশ্ন করে পাগল করে তুললো। ব্যাপারটা তানিশা সামলে নিলো। সে বললো, “আপুর বন্ধু আকাশ আছে না, তার বাড়ি গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দরজার চৌকাঠের সাথে বাড়ি খেয়ে ঠোঁট কেটে গেছে।”
এটা শুনে ফারজানা ক্ষ্যান্ত হলেন।
তিথি বাড়ি ফিরে তেমন একটা কথা বলে নাই। শুধুমাত্র নিজেকে স্বাভাবিক রাখার জন্য মায়ের সাথে দু’একটা কথা বলেছে। রাতেও না খেয়ে ঘুমাতে গেলো।
.
.
.
রাত তখন প্রায় বারোটা ছুঁই ছুঁই।
আয়াশ বসে ভাবছে তিথির কথা। মেয়ে টার মুখ টা আজ কেমন মলিন দেখাচ্ছিলো।
এমন সময় তিথির ফোনটা বেজে উঠলো। এতো রাতে কে আবার তিথি কে ফোন করে? আয়াশ প্রথমবার ভাবলো, ফোন ধরবে না। পরক্ষণেই মনে হলো যদি গুরুত্বপূর্ণ কিছু হয়।
তাই সাতপাঁচ ভেবেই ফোন হাতে নিলো।
আননোন নাম্বার, অর্থাৎ নাম্বার সেভ করা নাই।
ফোন ধরতেই ঐপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠ ভেসে এলো, “হ্যালো তিথি আমি তোমার উত্তর শুনতে চাচ্ছি।”
আয়াশ বুঝলো না কিছু। তাই জিজ্ঞেস করলো, “কে আপনি?”
ঐপাশের কণ্ঠটা এক সেকেন্ডের জন্য থেমে গেলো।
তারপর জিজ্ঞেস করলো, “এটা তো তিথির ফোন নাম্বার। আপনি কে? তিথি কই?”
“আছে। তার আগে আপনার পরিচয় দিন।”
“আপনি তিথিকে বলেন, আদিত্য ফোন করেছে।”
আদিত্য নাম শোনা মাত্র আয়াশের ভুরু দুইটা আপনা আপনি উঁচু হয়ে গেল।
“এত রাতে আপনি তিথি কে দিয়ে কি করবেন?”
“কি আজব কথা, সেটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনাকে তিথিকে দিতে বলেছি দিবেন। আর হ্যাঁ, কে আপনি? এত রাতে তিথির ফোন আপনার কাছে কেন? তিথি কোথায়?”
এতকিছুর কৈয়ফত আমি আপনাকে দিতে বাধ্য নই এই মিস্টার আদিত্য। শুধু এইটুকু শুনে রাখেন, নেক্সটটাইম তিথিকে ডিস্টার্ব করা থেকে বিরত থাকবেন। আজকে যা করেছেন সেটা যদি আর কখনো করার চেষ্টাও করেন, তার ফল ভালো হবে না।”
“আমাকে হুমকি পরে দিবেন, আগে নিজের পরিচয় দিন!”
“আমার পরিচয় জানা আপনার জন্য ফরজ নয়। কিন্তু আমার কথাগুলো মাথায় রাখা ফরজ। তাই কথাগুলো মাথায় রাখবেন, কেমন!”
আয়াশ ফোন কেটে দিল। আদিত্য আর ফোন করলো না।
আয়াশ আদিত্যর কথা থেকে ভালো করে বুঝলো যে আজকের ঘটনাটার জন্য আদিত্যই দায়ী।
.
.
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই তিথি এদিক সেদিক নিজের ফোন খোঁজা শুরু করল। কিন্তু পেল না। সে তানিশার ফোন থেকে ফোন করতেই আয়াশ ফোন ধরলো।
“ও আমার ফোন আপনাদের বাসায় রেখে এসেছিলাম?”
“হ্যাঁ। কেমন আছো এখন?”
“ভালো আছি।”
“আচ্ছা, ফোন দিয়ে আসবো নি আমি গিয়ে।”
“লাগবেনা। আমি আমি একটু পর বের হব, আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।”
“আচ্ছা।”
“আপনি বাসায় না থাকলে আন্টির কাছে ফোন রেখে দিয়েন।”
“আমি বাসায় ই আছি। সমস্যা নাই। কিন্তু তোমার কি এখন বাইরে বের হওয়াটা ঠিক হবে?”
“কি জন্য? আদিত্যের ভয়ে? ওকে ভয় পাবো কেন বলেন তো?”
“না ঠিক ভয় পাওয়ার কথা বলছি না। তোমার শরীরটা ঠিক নাই তো এজন্য বললাম।”
“আমি ঠিক আছি। আর আমি আদিত্যের মুখোমুখিও হব ফের! আমাকে করা অপমানের জবাব আমি করায় গন্ডায় ফিরিয়ে দিব ওকে।”
.
.
.
আর কিছুক্ষণ পর তিথি গিয়ে আয়াশের কাছ থেকে নিজের ফোনটা নিয়ে আসে।
রাতের বেলা আয়াশ তাকে ফোন করে।
দুজনে মিলে অনেকক্ষণ গল্প করে। আয়াশ আদিত্যের ফোন করার কথাটা ও তিথি কে বলে।
শুনে তিথি কিছু বলল না।
একাধারে তিনটা পর্যন্ত চলল ফোন আলাপ।
কথা বলা শেষে ফোন যখন রাখবে আয়াশ হুট করে বলে বসলো, “তোমার চোখে আকাশ আমার চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা, ভিতর থেকে বলছে হৃদয় তুমি আমার প্রিয়তমা!”
আয়াশের কথাটি শোনা মাত্রই তিথির ফর্সা গালে লালের আভা জমতে শুরু করলো। কি ভীষণ লজ্জা লাগছে, এই মানুষটার সামনে কিভাবে যাবে তিথি?
তিথি আয়াশের পশ্নের উত্তর দিতে পারল না। তার আগে ওই পাশ থেকে টুট টুট আওয়াজ ভেসে এলো। তিথি ফোন হাতে নিয়ে দেখল কল কেটে গেছে।
তিথি ভাবতে লাগলো আয়াশের কথাটা। এই কথাটা কি শুধুমাত্র গানের অংশই ছিল, নাকি তিথিকে ডেডিকেট করে বলা আয়াশের মনের ভেতরের কথাটা ছিল!
.
.
.
অঘটন টা ঘটলো তার পরের দিন সকাল বেলা।
তিথি আর তানিশা ড্রয়িং রুমের সোফার উপর হেলান দিয়ে শুয়ে মোবাইলে ফানি ভিডিও দেখছিল আর হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছিল।
ফারজানা বেগম রান্নাঘরে রান্না করছিলেন।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। ফারজানা বেগম রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বললো, “তিথি দেখ তো মা, কে এলো?”
তিথি কিঞ্চিত বিরক্ত হলো। বিরক্তি নিয়ে সে দরজা খুলতে গেল। দরজার ওইপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে তিথি হতবাক!
তার চোয়াল ক্রমেই শক্ত হয়ে এলো।
তানিশাও তাকে দেখে অবাক হয়ে গেছে।
.
.
.
চলবে…..
#এই_প্রেম_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব_১৪
#আফিয়া_আফরিন
আদিত্য দাঁড়িয়ে আছে দরজায়।
তিথি কিছু বলতে যাবে, তার আগে আদিত্য বলে উঠলো, “তোমার চরিত্র যে সমস্যা আছে, কই সেটা তো আগে জানতাম না!”
তিথি আদিত্যর এমন কথা শুনে বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল।
ধমকে বললো, “কি যা তা বলছ তুমি, সে খেয়াল আছে?”
“আমার খেয়ালে কি আসে যায়? রাত বিরাতে পর পুরুষের সাথে, ছিঃ ছিঃ!”
তানিশা হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফারজানা বেগম ও ইতিমধ্যে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে এই কথা শুনে হতবাক!
আদিত্যের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বললেন, “আদিত্য! মুখ সামলে কথা বল।”
“যথাসম্ভব নিজের মুখ, ভাষা কন্ট্রোলে রেখেছি আন্টি। এর চেয়ে ভালো ভাসা ইউজ করতে পারছি না। আর আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না যে আমি কি বললাম না বললাম?
আপনি বরং নিজের মেয়েকে নিয়ে ভাবুন।”
“কি করেছে তিথি?”
“সেদিন রাত বারোটা নাগাদ আপনার সুকন্যাকে ফোন দিয়েছিলাম। কোন ছেলে না কে, ফোন ধরলো। বুঝিনা, এত রাতে একটা ছেলের সাথে ওর কি?”
তিথি অবাক হয়ে গেলো। সেদিন রাতে তো ফোন আয়াশের কাছে ছিল। ফারজানা বেগম ও অবাক হলেন এ কথা শুনে। কিন্তু তিনি সত্যটা জানেন না!
ঘরের মধ্যে পিন পতন নীরবতা। শুধুমাত্র মানুষগুলোর নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
আদিত্য ফের বললো, “সত্যি তিথি তোমার সম্পর্কে এরকম ধারণা আমার ছিল না। নিজের চরিত্রের দাগ লাগাতে লজ্জা লাগে না? টোটালি আনএক্সপেক্টেড ছিলো!”
তিথির চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো। চোখে পানি টলমল করছে।
শক্ত মুখে জবাব দিলো, “কাকে কি বলছো তুমি হুঁশ আছে কোনো? আমাকে নিয়ে যে এত কথা বলছো নিজের চরিত্র ঠিক আছে তো?”
“আমি অন্তত তোমার সাথে রাত বিরাতে কারো সাথে___!”
আর কিছু বলার অবকাশ পেলো না আদিত্য। ফারজানা বেগম এগিয়ে এসে কষিয়ে থাপ্পর বসালো আদিত্যর গালে।
আদিত্য নির্বাক হয়ে গেল।
ফারজানা বেগম তো অন্তত তার মেয়েকে চেনেন। তিথি কখনো এ ধরনের কাজ করবে না। যদি তিথি নিজে এসেও বলে, তবুও সে বিশ্বাস করবে না। কিন্তু, আদিত্য নামক এই চরিত্রহীন ছেলেটা তার মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলছে দেখেই, তার অন্তরাত্মা পুড়ে যাচ্ছে।
কড়া গলায় আদিত্যকে বললেন, “অনেক হয়েছে। বেরিয়ে যাও তুমি বাসা থেকে। আর কখনো যেন তোমাকে আশেপাশে না দেখি।”
আদিত্য কিছু বললো না। চলে গেলো।
ফারজানা বেগম আদিত্যর উপর করা রাগটা ঝাড়লেন তিথির উপর।
আদিত্য যাওয়ার পরেই সে দরজা লাগিয়ে তিথির সামনে এসে কষিয়ে এক চড় মারলেন তিথির গালে।
ব্যথায় আঃ করে শব্দ করে উঠলো তিথি!
ফারজানার বেগম বললেন, “কি করেছিস তুই? যে বাইরের একটা ছেলে এসে তোর চরিত্র সম্পর্কে এতগুলো কথা বলার সাহস পায়?”
তিথি কিছু বলল না। এক ছুটে চলে গেল নিজের রুমে।
.
.
.
এতক্ষণ যাবৎ তানিশা নিরব দর্শক হয়ে সবকিছু দেখছিলো।
এইবার ফারজানা বেগমের কাছে এসে বললো, “আপুর কোন দোষ নেই কাকি। আপু আর আমি সেদিন আকাশ ভাইদের বাসায় গিয়েছিলাম, আপু সেখানে নিজের ফোন ফেলে রেখে এসেছিলো। রাতে সম্ভবত আদিত্য ভাইয়া ফোন করেছিলো। আকাশের ভাই আয়াশ ভাইয়া ফোন ধরেছিলো। আর তাতেই আদিত্য ভাইয়া কি না গিয়ে ভেবে বসে আছে?”
ফারজানা বেগম অবাক হয়ে বললেন, “সত্যি বলছিস তুই?”
“কসম কাকি, সত্যি কথা।”
“হায় আল্লাহ! মেয়েটা কে অজান্তেই থাপ্পর মারলাম, তাও এই ছেলেটার উপর রাগ করে।”
.
.
.
তিথি ঘরে ঢুকেই ধরাম করে দরজা বন্ধ করে দিল। সে দরজার সাথে হেলান দিয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগলো। সারা শরীর থর থর করে কাঁপছে।
দুনিয়াটা উলটপালট লাগছে। কেউ তার চরিত্র সম্পর্কে কোনোদিন কথা বলবে, এটা ধারণার বাইরে ছিলো।
তার মা ও তাকে অবিশ্বাস করলো। আদিত্যর কথাগুলো কে সত্যি মনে করলো।
কি করে সে তার নিজের এই পোড়া মুখ নিয়ে মা-বাবার সামনে দাঁড়াবে?
তিথি আর কিছু ভাবতে পারল না। জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর সিদ্ধান্তটা নিলো। সেই সিদ্ধান্ত টা কে আমরা যারপরনাই ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করি।
এমন ভুল করতে লাগেনা কোন কারন, শুধু লাগে একজনের অসীম অসহায়তা!
তিথি একটা চিঠি লিখতে বসলো।
“আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমরা। বিশ্বাস করো, আমি এমন কোন খারাপ কাজ করি নাই। তোমাদের নিয়ে এতটাও খারাপ নয়।”
অন্ধ রাগের বশে হটকারিতা করে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথই বেছে নিল তিথি।
.
.
.
.
চলবে……