#এই প্রেম তোমাকে দিলাম
#পর্ব_০৯ ( বোনাস পর্ব )
#আফিয়া_আফরিন
আচমকাই তিথি কে দেখে হাসি ফুটে উঠলো আয়াশের চোখে মুখে।
হাসি হাসি মুখ করে বললো, “তোমাকে দেখার পরে আর কোনো খারাপ খবর থাকতে পারে নাকি, মিস বাচাঁলিনী?”
“ফাজলামি করেন?”
“একদমই না। আচ্ছা শোনো, তোমার বন্ধু কই?”
“আকাশ?”
“হ্যাঁ, কই আছে?”
“আজ তো আসে নাই ভার্সিটিতে। কেন, আপনি জানেন না?”
“কী বলো? ভার্সিটিতে আসে নাই মানে?”
“হ্যাঁ, বললো তো কী যেন কাজে নাকি আটকে গেছে?”
“আমি তো ফোন দিলাম, বলল যে ক্লাসে আছে।”
“না তো। আসে নাই আজকে।”
“আচ্ছা ওয়েট, ফোন দেই।”
আয়াশ প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে আকাশের কাছে ফোন দিয়ে লাউড স্পিকারে দিলো।
আকাশ ফোন রিসিভ করতেই আয়াশ বললো,
“কিরে ক্লাস শেষ হয় নাই এখনও?”
“না ভাইয়া। দেরি হবে আজকে। এক্সট্রা ক্লাস আছে। তোমার সাথে সন্ধ্যার পর বের হবো নি।”
আয়াস ‘আচ্ছা’ বলে কল কেটে দিল।
তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো,
“দেখলে?”
তিথিও অবাক। আকাশ হঠাৎ মিথ্যা কথা কেন বলতেছে?
তিথি ব্যাগ থেকে নিজের ফোন বের করে বললো, “দাঁড়ান, আমি একটা ফোন দেই।”
তিথিও ফোন লাউড স্পিকারে দিল। আকাশ ফোন ধরতেই তিথি বলল,
“কোথায় আছিস তুই?”
“ভাইয়ের সাথে একটা কাজে আছি, বললামই তো।”
“ও আচ্ছা, ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ছিল আজকে।”
“সমস্যা নাই, তোর থেকে নিয়ে নিবো নি।”
তিথি ফোন রেখে আয়াশকে জিজ্ঞাসা করল, “কি হইছে আকাশের? মিথ্যা কেন বলল?”
“জানিনা আজ বাড়ি আসুক। মজা বুঝবে।”
“মজা কি বুঝাবে? আপনি?”
আয়াস চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বলল, “কেনো?”
“এমনিতেই জিজ্ঞাসা করলাম।”
“ওহ। অনেকদিন পর দেখা হল তোমার সাথে। ইদানিং এত ব্যস্ত থাকা হয়, এই দিকে তেমন আসতেও পারি না। আর তুমি তো তোমার বাসার সামনে আসতে মানা করে দিয়েছো।”
“তো মানা করবো না?”
“কেন করবে?”
“সেটা আপনি বুঝবেন না।”
“তাহলে তুমি বুঝিয়ে বলো।”
“বোঝালেও বুঝবেন না।”
“আমি কি বোকা নাকি তোমার মতো?”
“কিহ? আমি বোকা? একবার বাঁচালিনী উপাধি দেন তো আরেকবার বোকা?”
“হ্যাঁ তাইতো।”
“তাহলে আপনি কালসাপ!”
“সমস্যা নেই, তুমি যে উপাধি দিবে সেটাই মাথা পেতে নেব।”
“কেন নিবেন?”
“একটা কারণ আছে।”
“কি কারন?”
“সেটা বলা যাবে না।”
তিথি এতক্ষণ আয়াশের পাশাপাশি হাঁটছিল। এবার সে আয়াশের সামনে এসে পথ আটকে ধরে বলে,
“কেন বলবেন না?”
আয়াশ খানিকটা থতমতো খেয়ে যায়। বলে, “কিছু জিনিস আছে তিথি, যেগুলো বোঝা যায়। মুখে বলতে হয় না। সব কথা যদি মুখেই বলে দিতে হয়, তাহলে মনের কথার দাম থাকলো কি?”
“আপনার মনে এমন কি কথা আছে?”
“তুমি কিছু একটা ভেবে নাও।”
“আমার ভাবনা ভুল হয় যদি?”
“হবে না। তুমি যেটা ভাববে, সেটাই সত্যি হবে।”
তিথি চুপ করে গেল। তার ভাবনারাও এলোমেলো হয়ে আসছে ক্রমশ।
দুজনে হাঁটতে হাঁটতে পার্কের গেটে এসে পড়েছে।
ঠিক এমন সময় আয়াশের চোখে পড়লো আকাশকে, সাথে একটা মেয়ে। দুই জন পার্ক থেকে বেরিয়ে বাইকে উঠলো।
তিথিও দেখল তাদেরকে। মেয়েটিকে দেখে সে ভাষা হারিয়ে ফেললো। মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এল, “তানিশা!”
আয়াশ তিথির দিকে তাকিয়ে বলল, “তানিশা কে?”
“আমার চাচাতো বোন।”
“বলো কি? আকাশ আর ওই কি তলে তলে প্রেম করে নাকি?”
“আমি কি জানি? আপনি এখন যতটুকু জানলেন, আমিও ঠিক ততটুকুই জানি।”
“বুঝেছি, বন্ধু তোমার তলে তলে টেম্পু চালাচ্ছে।”
“তা যা ইচ্ছা হয় করুক, তানিশা বা আকাশ কেউ আমায় কিছু জানালো না। শালা, মীর জাফর কোথাকার!”
“হ্যাঁ, তোমার বোন হচ্ছে ঘসেটি বেগম!”
“এই প্রথম একটা ঠিক কথা বললেন।”
আয়াশ হাসলো। পরক্ষণে হঠাৎ তার নিজের বাইকের কথা মনে উঠল।
“আরে আল্লাহ, আমার বাইক রেখে আসছি তোমাদের ভার্সিটির সামনে।”
“আচ্ছা আপনি যান, গিয়ে নিয়ে আসেন।”
“সমস্যা নাই। লক করা আছে।”
“তা থাকুক। আমি বাড়ি যাব তো। আপনি এখানে করবেন কি?”
“চলো তোমাকে পৌঁছে দেই।”
“আরে নাহ, আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।”
“কষ্ট কিসের? দাঁড়াও রিক্সা নেই।”
তিথি আয়াশের হাত ধরে থামালো। বললো, “চলুন হেঁটে যাই।”
আয়াশ মুচকি হেসে বলল, “আচ্ছা।”
.
.
.
জীবনটা ভীষণ রকমের সুন্দর। যা এতদিন আয়াশ কোনভাবেই উপলব্ধি করতে পারে নাই। সেদিন মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে আয়াশ বুঝেছিল, এই কাজল রেখা চোখেই তার সর্বনাশ নিশ্চিত! কিন্তু এই ধারণা আজ ভুল প্রমাণিত হলো।
আজ তিথির হাত ধরাতে সে বুঝে গেল, শুধু ওই কাজল রেখা চোখেই নয়; তার সর্বনাশ তিথির সমস্ত জুড়েই রয়েছে!
মেয়েটার চলাফেরা কথাবার্তা সব কিছুতেই যেমন যেন একটা মোহনীয় ভাব!
তিথি এখনো আয়াশের হাত ধরেই হাবিজাবি নানান কথা বলতে বলতে ফুটপাত ধরে হাঁটছে। আয়াশের খুব ভালো লাগছে। হয়তো তিথি নিজের অজান্তেই হাত ধরে আছে বলেই এত ভালোলাগার আবির্ভাব!
আয়াশ সমস্ত খামখেয়ালিপনা ঝেড়ে বললো, “আদিত্যর কি খবর?”
তিথি হাঁটা থেমে আয়াশ কে এক পলক দেখে বলল, “আদিত্যর কথা কিভাবে জানেন আপনি?”
“আকাশের থেকে শুনেছিলাম।”
“ওহ। ব্রেকআপ তো। খবর জানিনা।”
“কেন করেছিলে ব্রেকআপ?”
“আমি করি নাই। আদিত্য করেছিল।”
“কেনো?”
“ওসব আমার কপালের দোষ। ওর কাছে এক্সপেক্টেশন বেশি করে ফেলেছিলাম, বোধ হয়!”
“তুমি কি তাকে এখানো ভালোবাসো?”
“নাহ, যখন রিলেশন ছিল তখন ই ভালোবেসে ছিলাম। সে যখন ব্রেকআপ করলো, তখন ই সব ভালোবাসা শেষ।”
“খুব বেশি ই ভালোবাসতে?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে এক্সপেক্টেশন টা অস্বাভাবিক ছিল না।”
“অস্বাভাবিক ছিল না হয়তো। তবে ভুল ছিল।”
“যাকে তুমি ভালবাসবে বা ভালোবাসো তার কাছে এক্সপেক্টেশন থাকাটা কিন্তু অস্বাভাবিক বা ভুল নয়।
এক্ষেত্রে অপর পাশের মানুষটাকে ভুল বলা যেতে পারে। কিন্তু তুমি নিজের অভিযোগ, অনুযোগ, ইচ্ছা, আশা, এগুলোকে ভুল বলতে পারো না।
আমরা কিন্তু না চাইতেও ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে কিছু আশা করেই ফেলি। এটাকে কখনো ভুল বলা চলে না।”
তিথি হেসে ফেললো।
বললো, “খুব সুন্দর কথা জানেন তো আপনি!”
উত্তরে আয়াশ মৃদু হাসলো।
এরই মধ্যে তারা তিথির বাসার সামনে চলে এসেছে।
তিথি বললো, “আসেন ভিতরে আসেন।”
“নাহ, আজ যাবো না।”
“আহা, কষ্ট করে এতদূর পর্যন্ত এলেন আর বাসার ভেতরে যেতে পারবেন না!”
“আরেকদিন যাব। আজকে আর হবে না। আচ্ছা এখন আমায় একটা কথা বলতো?”
“কি কথা, বলেন?”
“আচ্ছা, আমাকে তোমার কেমন লাগে?”
তিথি এক মুহূর্ত কিছু ভাবলো। পরমুহূর্তে উত্তর দিলো, “আপনার এত এত গুনাবলী যে বলতে গেলে আমার সারা জীবন পার করা লাগবে!”
আয়াশ ভুরু কুঁচকে বলল, “কেন?”
“আপনি বুঝবেন না।”
“বুঝবো না কেন?”
“সেটা আমি কেমনে বলি। আপনিও তো কথায় কথায় আমায় বলেন, ‘তুমি বুঝবে না তুমি বুঝবে না’।”
আয়াশ নিজের মনেই কিছুক্ষণ হাসলো।
স্থির দৃষ্টিতে তিথির দিকে তাকালো। দুজনেই দুজনার চোখে চোখ রাখলো।
আচমকাই আয়াশ নিজের এক হাত তিথির গালে রাখলো। তিথি চমকালো, কিন্তু মুখে কিছু বলল না।
আয়াশ বললো, “সব কথা মুখে বলে দিতে হয় না, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। ইশারাতে ছুঁড়ে দেওয়া কিছু ভাষা চোখ দিয়েই খুঁজে নিতে হয়!”
বলেই এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না আয়াশ। হনহন করে হেঁটে চলে গেল।
তিথি একচ্ছ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল মানুষ টার ফিরে চলে যাওয়ার দিকে। তারপর ঝাপসা চোখের সদর দরজা খুলে ভিতরের দিকে গেল।
চোখটা ক্রমেই কেন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে!!
.
.
.
.
চলবে…..
#এই_প্রেম_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব_১০
#আফিয়া_আফরিন
আমাদের ভালবাসার শক্তিটা খুবই প্রবল। আমরা যাকে ভালোবাসি, তাকে প্রচন্ডভাবে ভালবাসতে পারি। আর যাদের ঘৃণা করি তাদেরকেও প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করতে পারি।
প্রথম ভালোবাসাটা যখন ভুল হয়, ভালোবাসার মানুষটা যখন ভুল হয় তখন পুরো পৃথিবীটাকেই অশান্তি লাগে।
তিথিরও ঠিক এমনই হয়েছিল। আদিত্য নামক মানুষটার কাছে সে ভীষণভাবে ঠকে গিয়েছিল।
অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে যখন তিথির প্রথম ক্লাস ছিল, সেই দিন আদিত্য সাথে তার প্রথম পরিচয়, প্রথম আলাপ তাও একটা বিশ্রী ঘটনার মাধ্যমে।
তিথি গেটে দাঁড়িয়েছিল, আদিত্য হুরমুর করে দৌড়ে আসতে নিলেই তিথির সাথে ধাক্কা খায়।
ধাক্কা টা ছিল বাড়াবাড়ি পর্যায়ের।
তিথি মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। তার ড্রেসের হাতা ছিড়ে যায়। কপালে খানিকটা কেটে যায়।
তিথি তো তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে আদিত্যর গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারে। উপস্থিত ছিল শ’খানেক স্টুডেন্ট।
আদিত্য তাদের ভার্সিটির মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, হ্যান্ডসাম, কিউট ছেলে। সব মেয়েরাই তার জন্য পাগল। তিথির থেকেও হাজার হাজার গুনে সুন্দরী মেয়েরা ওর পেছনে লাইন লাগিয়ে থাকে প্রতিদিন।
সেই রকম একটা ছেলেকে যদি তিথির মত কোন সোজা সরল মেয়ে উপস্থিত শ’খানেক ছাত্রছাত্রীর মধ্যে থাপ্পড় মারে, তাহলে তো ইগোতে হার্ট করার অস্বাভাবিক কিছু নয়! আদিত্য সেদিন থাপ্পড় খেয়ে টু শব্দ পর্যন্ত করে নাই। চুপচাপ চলে এসেছিল। চুপচাপ থাকাটাই বোধহয় কাল হয়েছিল তিথির জন্য।
এর কয়েক মাস বাদে আদিত্য নামক সেই সুদর্শন ছেলেটি আসে তিথির বেরঙিন জীবনে।
শোনায় একটা ভালোবাসার গল্প। তারপর শুরু হয় তাদের প্রেম কাহিনী!
.
.
.
.
প্রথম কাউকে ভালোবেসে যখন দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসার কথা মনে হয়, তখন অতীতের ভয়াবহ যন্ত্রণা গুলা যে বারবার খুঁচিয়ে আসে। একবার যেই বিশ্বাস নষ্ট হয়েছে, দ্বিতীয়বার কি কখনো সেই বিশ্বাস জোড়া লাগানো যায়?
তিথির বিশ্বাসটা ভেঙে গিয়েছে নিজের ভাগ্যের উপর, ভালোবাসার উপর নয়।
সে ভালোবাসায় আজও বিশ্বাস করে, এই বিশ্বাসটা তার অটুট রয়েছে।
কিন্তু নিজের ভাগ্য যে বারংবার বেইমানি করে!
দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসাটা যখন অস্বাভাবিক মনে হয়, তখন আয়াশের মতই কেউ না কেউ আসে তিথিদের জীবনে ভালোবাসার ছোঁয়া দিতে।
কিন্তু তিথির কাছে বর্তমানে এই অবস্থাটা দুর্বিষহ মনে হচ্ছে। দম আটকে আসছে বারবার। নিজের প্রতি নিজের প্রচন্ড রাগ লাগতেছে।
তার ইচ্ছে করছে, আয়াশ কে ভালবাসতে। কিন্তু একটা অদৃশ্য বাধা বারবার আটকে দিচ্ছে। সে কেন নতুন করে কাউকে ভালবাসতে পারবে না?
কলেজে পড়াকালীন সময় তার কত বান্ধবীকে দেখেছে একটার পর একটা প্রেম করতে। কিন্তু তিথির পক্ষে যে এই কাজ কোনভাবে করা সম্ভব না এটা তিথি ভালো করেই জানে। তাই বোধহয় বারবার একটা অদৃশ্য বাঁধা সামনে এসে পড়েছে।
.
.
তিথি তানিশা বা আকাশ কাউকে সরাসরি কিছু জিজ্ঞাসা করে নাই তাদের ব্যাপারে। মূলত আয়াশ মানা করে দিয়েছে, সে ওদেরকে হাতেনাতে ধরতে চায়; এইরকম একটা প্ল্যান করে রাখছে।
.
.
.
.
.
তিথি বিকালের দিকে একটা গল্পের বই পড়ছিল। এমন সময় আদিত্য মেসেজ দিয়ে বললো, “আমি তোমার বাড়ির পেছনের দিকে আছি। একটু দেখা করো, প্লিজ!”
তিথি তড়িঘড়ি করে লাফিয়ে ওঠে দেখলো, আসলেই আদিত্য দাঁড়িয়ে আছে।
তিথি আপাতত কোন ঝামেলা চাচ্ছে না, তাই একপ্রকার বাধ্যবাধকতার সাথে মা বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে নিচে নেমে এলো।
আদিত্যকে দেখা মাত্রই প্রশ্ন ছুড়ে দিল,
“কি হইছে? সমস্যা কি তোমার?”
“ভালোবাসি তিথি!”
“ব্রেকআপ তোমার সাথে আমার। এ কথা কেন ভুলে যাচ্ছ আদিত্য? আর সেই ব্রেকআপটা তুমি নিজেই করেছো। আর এখন এত নাটক কিসের?”
“আমি এতদিন বুঝি নাই যে আমি তোমায় সত্যি ভালোবেসে ফেলবো। বিশ্বাস করো, খুব কষ্ট হচ্ছে আমার তোমাকে ছাড়া।”
“এখন এত কষ্ট পেয়ে লাভ নেই।”
“আমি তোমার মধ্যে আটকা পড়ে গেছি তিথি। প্লিজ, একটা সুযোগ দাও নিজেকে শুধরানোর।”
“তুমি আর সুযোগ পাবে না। বিশ্বাস করো আদিত্য, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা সবকিছু নিশ্বাস হয়ে গেছে। আমি এখন হাজার চাইলেও সেসব ফিরিয়ে আনতে পারব না।”
আদিত্য তিথির কাছাকাছি এসে ওর দুটো হাত ধরে করুন গলায় বললো, “একটা সুযোগ দিয়েই দেখো না তিথি। আমি নিজেই সমস্ত বিশ্বাস, ভরসা ফিরিয়ে আনবো।”
তিথি নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, “আমার হাত ধরার অধিকার তুমি সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেলেছ আদিত্য। সে অধিকার আর কোনোদিন ও ফিরে পাবে না।”
আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করলো না তিথি। হনহন করে হেটে ভেতরে চলে গেল।
আদিত্য হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেই এসেছিল তিথির কাছে। কিন্তু তিথির মনেও যে জেদ চেপে গেছে।
.
.
.
.
অকপটে তিথির মনে পড়ে গেল সেই দিনটার কথা, যেই দিন আদিত্য তিথির দুহাতে হাত রেখে বলেছিল, “এই হাত কখনো ছেড়ে দেবো না। তোমায় কখনো একলা পথ পাড়ি দিতে দিব না।”
সেই দিন থেকে প্রথম দুজনের একসাথে পথ চলার শুরু হয়েছিল। হাতে হাত রেখে পথ পাড়ি দেওয়া শুরু হয়েছিল।
তিথি একদিন শাড়ি পড়েছিল, আর আদিত্য পড়েছিল লাল পাঞ্জাবি। আদিত্য নিজ হাতে তিথির চুলের খোপায় বেলি ফুলের গাজরা গুঁজে দিয়েছিল।
অথচ একটা বছর পার হতে না হতেই সব শেষ!
মানুষ কি তবে এমনই হয়?
.
.
.
তিথির ইদানিং মন মেজাজ খুব খারাপ থাকে। কারো সাথে ভালো করে কথা পর্যন্ত বলে না। আয়াশের সাথে মাঝেমধ্যে কথা হয়, তবে খুব কম।
তিথি যে দিনকে দিন আয়াশের প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, সে সেটা নিজেও বুঝতে পারছে।
তাই নিজেকে যথাসম্ভব চেষ্টা করছে আড়াল করে রাখার।
কিন্তু আর কত?
অবশেষে সে একটা ভয়ঙ্কর কাজ করে ফেলল। আয়াশকে হুট করে বলে বসলো, “একদিন দেখা করতে পারবেন?”
তিথির এই কথা শুনে আয়াশের মনে হাজারখানে রংবেরঙের প্রজাপতির ছটফটানি শুরু হয়ে গেল। তিথি যে কখনো তাকে নিজ থেকে দেখা করতে বলবে এটা তার ধারণার বাহিরে ছিল।
সে বলল, “হ্যাঁ, কাল শুক্রবার। ফ্রি আছি।”
তিথি নিজের এমন পরিবর্তনে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছে। দিনকে দিন আয়াশের প্রতি তার ভাললাগাটা বেড়েই যাচ্ছে।
তবে কি এত বেশি ভালো লাগাকেই ভালোবাসা বলে?
.
.
.
চলবে….