#এই প্রেম তোমাকে দিলাম
#পর্ব_০৫
#আফিয়া_আফরিন
আয়াশ তো তিথি কে নিয়ে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত টা নিয়েই নিয়েছে।
সে ভালবাসবে ওই মেয়েটা কে।
অনেক ভালবাসবে!!
এতটাই ভালবাসবে যে, তিথি না চাইলেও তার পরিত্যক্ত, বিশ্রী অতীত ভুলতে বাধ্য হবে।
.
.
.
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে সময়টা যেন কোনোভাবেই কাটতে চায় না তিথির। প্রতিদিন খাওয়া-দাওয়ার পর কিছু করার না থাকলে ভাতঘুম দেয় সে। কিন্তু, মরার ঘুম আজ আসছে না।
বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে শেষমেষ উঠেই পড়লো।
উঠে তার বাবা মনসুর সাহেবের ঘরে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, “আব্বু, আমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাও তো।”
মনসুর সাহেব খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে ছিলেন। মেয়ের ভাব ভঙ্গি দেখে হেসে ফেললেন। সোজা হয়ে উঠে বসে চশমা ঠিক করতে করতে বললেন, “বিয়ে দিয়ে দেই, স্বামীর সাথে ঘুরে আয়।”
“উফ বাবা! তুমি কিন্তু কিপটামি করছো।”
“কিপটামির কি দেখলি এখানে?”
“তোমাকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেই তুমি বলো স্বামীর সাথে ঘুরতে। কেনো? তোমার কি টাকা পয়সার অভাব পড়েছে নাকি?”
মনসুর সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, “চল চন্দ্রিমা উদ্যানে নিয়ে যাই।”
তিথি মেকি রাগ দেখিয়ে বলল, “হুহ। হাতের তালুর মতো মুখস্ত হয়ে গেছে ওই জায়গা আমার। সারাদিন কেমন ওখানেই যাওয়া!”
“তাহলে তুই কোথায় যেতে চাচ্ছিস বল?”
তিথি বাবার পাশে বসে হাত নেড়ে নেড়ে বলল, “এই ধরো সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, সাজেক, বান্দরবান, টেকনাফ, তেতুলিয়া এইসব জায়গায় নিয়ে যাবা।”
“স্বামীর সাথে ঘুরিস এইসব জায়গায়।”
“হায় আল্লাহ! স্বামীর সাথে কি আর যেনোতেনো জায়গায় ঘুরবো নাকি? আমি যাবো নেপাল, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া এইসব জায়গায়!”
মনসুর সাহেব মেয়ের এহেন কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “তুই বরং জামাই নিয়ে মঙ্গল গ্রহে যাস!”
তিথি হাত নেড়ে বললো, “হ্যাঁ তাই যাব। তুমি এখন তোমার চন্দ্রিমা উদ্যানে এ নিয়ে চলো।”
“দশ মিনিটে রেডি হচ্ছি।”
তিথি ‘আচ্ছা’ বলে নিজের রুমে চলে এলো রেডি হতে।
বাবা মেয়ে মিলে মাত্রই চন্দ্রিমা উদ্যানের ভিতরে ঢুকলো।
বিকেল বেলা, এখন প্রেমিক-প্রেমিকাদের সংখ্যাই বেশি এখানে।
বাবাকে নিয়ে এখানে এসে এখন তার আনইজি ফিল হচ্ছে, এর চেয়ে মনে হয় বাসায় বসে থাকাই ভালো ছিল।
এদিক সেদিক ঘুরতেই ঝুলন্ত ব্রিজে এসে দাঁড়ালো।
এমন সময় পেছন থেকে কেউ ডাক দিলো,
“তিথি!”
তিথি পিছন ফিরে দেখে আকাশ, সাথে আয়াশও আছে।
তারা সামনে এসে মনসুর সাহেব কে সালাম দেয়।
আকাশ তিথির দিকে তাকিয়ে বলল, “এখানে আসবি বলিস নি তো?”
তিথি কিছু বলার আগেই মনসুর সাহেব বললেন, “মেয়ের আমার সুইজারল্যান্ড লন্ডন ঘোরার শখ হয়েছে। এখানে এসেছি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্য!”
আকাশ আর আয়াশ দুজনে হেসে দিল।
আয়াশের মন আনন্দে নাচছে। সে মোহাম্মদপুর এসেছিল অফিসের একটা কাজে। হঠাৎ করে আকাশ এসে বলল চন্দ্রিমা উদ্যান যাবে। তাই আসা। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তিথিকে দেখা শুরু মাত্র আকাশের জন্যই সম্ভব হলো।
আকাশকে ধরে গালে থ্যাবড়া করে দুটো চুমু দিতে পারলে ভালো লাগতো!
মনসুর সাহেব তিথির দিকে তাকিয়ে বললেন, “আকাশ আছে। ওর সাথে থাক। আমি বাড়ি যাই, শরীরটা ভালো লাগছেনা।”
“তোমার শুধু বাহানা!”
বাহানা হলে তাই। এইবার তোকে বিয়ে দিয়ে দিব। সময় মতো বিয়ে শাদী হলে এতদিন বাচ্চা-কাচ্চার মা হয়ে যেতি। আর আমি নাতি-নাতনি কোলে করে নিয়ে ঘুরতে পারতাম। তা না করে এই বয়সে তোকে নিয়েই ঘুরাঘুরি করতে হচ্ছে আমার!”
বলেই মনসুর সাহেব বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে চলে গেলেন। তিথি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে, রাগে ফুঁসতে লাগলো।
আকাশ হাসতে হাসতে বলল, “দোস্ত একটা বিয়ে করেই ফেল। কতদিন বিয়ে শাদী খাওয়া হয়না?”
“তোর এত শখ থাকলে তুই কর!”
“আমার শখ নাই আপাতত। তবে আমি সিওর, আঙ্কেল এবার তোর বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।”
“তুই নিশ্চিন্তে থাক, তুই দাওয়াত পাবি না।”
আকাশ হেসে বলল, “আচ্ছা। এখন চল, ভিতরে যাই।”
“তুই যা আমি এখানেই ঠিক আছি।”
“এখানে একা একা কি করবি?”
“এমনি। কিছু না।”
আকাশ সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, “যা মন চায় কর।”
আয়াশ পাশেই দাঁড়িয়েছিলো। সে আচমকা তিথির হাত ধরে বলল, “চলো।”
তিথি চমকে উঠলো। কিন্তু কিছু বলার ভাষা পাচ্ছিলো না। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আয়াশ তিথির হাত ধরে এমন ভাবে হেঁটে নিয়ে যাচ্ছে যে, তিথি কোনো ব্যাটারি চালিত কোন যন্ত্র মানব!
কিছুদূর এগোতেই তিথি বলল, “হাত ছাড়ুন।”
“ছাড়ার জন্য তো ধরি নাই।” সহজ সরল স্বীকারোক্তি আয়াশের।
তিথি আবারও অবাক হলো। একেবারে বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেল।
আয়াশ নির্বিকারভাবে হেটে যাচ্ছে তিথির হাত ধরে। আকাশ খানিকটা সামনে থাকায় ওদের লক্ষ্য করে নাই।
আয়াশ তিথির হাতটা আরো শক্ত করে ধরল। তিথি বিন্দু পরিমাণ রা করলো না। তার কাছে খুব অদ্ভুত লাগছে। আদিত্যের কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে।
আদিত্য যখন হাত ধরত, তখন তো এরকম হতো না। তাহলে, আয়াশ নামক এই অচেনা-অজানা ছেলে টা হাত ধরায় এমন কেনো লাগছে?
.
.
.
বাগানের মধ্যে খোলা চত্বরে এসে আকাশের পা পরলো গোবরের মধ্যে।
“ইয়াক থু! এটা কি হলো?”
আয়াশ আকাশের এই অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বলল, “গরুর গোবর ও তোর জন্য অপেক্ষা করছিল। কি মধুর মিলন হলো তোদের!”
“হোয়াট দা ফাও কথা, ভাইয়া?”
আয়াশ হাসতে লাগলো। আকাশ ফের বলল, “তোমরা থাকো, আমি একটু আসছি।”
গোবরে মাথা পানি আকাশ খোড়াতে খোড়াতে চলে গেল।
আকাশ যেতেই আয়াশ ফের তিথির হাত ধরে বলল, “এখানে আসো।”
“আপনি বারবার আমার হাত ধরতেছেন কি জন্য?”
“তুমি এখন আমার ডিপার্টমেন্ট। সো চুপচাপ বসো এখানে।”
তিথি মুখ বাঁকিয়ে বসলো।
.
.
.
আকাশে আলো আঁধারির খেলা চলছে। ধরণীর বুকে সন্ধ্যা নামছে। সূর্য ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে।
আয়াশ আর তিথি পাশাপাশি বসে আছে।
আয়াশ মৌনকন্ঠে ডাকলো, “তিথি!”
.
.
.
চলবে……
#এই_প্রেম_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব_০৬
#আফিয়া_আফরিন
এতক্ষণ প্রকৃতির মুগ্ধতায় বিভোর হয়ে ছিল তিথি। আয়াশের ডাকে ধ্যান ভাঙলো।
আয়াশের দিকে তাকালো তিথি।
মৃদু বাতাসে তিথির চুলগুলো উড়ছে।
আয়াশ নিজের চোখে-মুখে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে। একসময় চোখ নামিয়ে নেয়। মেয়েটার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলেও তো চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
তিথি শুঁধালো, “ডাকলেন যে, কিছু বলবেন?”
আয়াশের অনেক কিছু বলার ছিল তিথিকে। কিন্তু সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
পরিশেষে বললো, “না বললে কি কিছু বোঝা যায় না।”
তিথি ঠোঁট উল্টে বলল, “কী বোঝার কথা বলছেন?”
“যেটা বোঝার কথা বলছি সেটা কি বলেই বোঝাতে হবে!”
“তা নয় তো কি? আমি কি আপনার মনের ভিতরে ঢুকে বসে আছি যে, আপনার মনের খবর জানবো?”
মনের মধ্যে তো ঢুকেই পড়েছো। তবে আমার মনের খবর জানার জন্য নাকি সেটা জানি না! তবে আমাকে এলোমেলো করার জন্য তো অবশ্যই!”
তিথি আয়াশের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। আয়াশ স্মিত হাসলো।
তিথির বুকের মধ্যে দ্রিম দ্রিম করে কে যেন বাদ্য বাজাচ্ছে। তিথি আয়াশের কথার অর্থ ধরার চেষ্টা করছে।
এটা কি তবে ইনডাইরেক্টলি প্রপোজ করা!
তিথি প্রচন্ড অস্বস্তি বোধ করতেছে। তিথিকে অস্বস্তির হাত থেকে বাঁচাতে বোধহয় আকাশের উদয় ঘটলো।
আকাশ চোখে মুখে বিরিক্ত নিয়ে বলল,”বাবারে বাবা! মেয়ে মানুষ মানেই মারাত্মক রকমের ঝামেলা!”
আয়াশ উঠে বলল, “কেন কি হয়েছে?”
“আরে এ গোবর মাখা পা নিয়া খাইছি একটা মাইয়ার লগে ধাক্কা! মানে কি ভাই, সেই মেয়ের কি তেজ?”
তিথি বললো, “ঠিকই আছে, তেজ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। গোবর মাখা পা নিয়ে ধাক্কা খাস কেন, তুই? দেখে চলতে পারিস না তুই?”
“বিরক্তিকর!”
“আচ্ছা,এখন চল। বাড়ি ফিরে যাই। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।”
আয়াশ উত্তর দিল, “চলো।”
তিনজন একসাথে হেঁটে চলেছে। ঠিক একসাথে বলা যায় না, আকাশ খানিকটা সামনে এগিয়ে খুব সাবধানে পা ফেলে ফেলে হাঁটছে।
রাতের আবছা আলো-আঁধারিতে আয়াশ শক্ত করে তিথির হাত ধরলো।
তিথি চমকে উঠে ফিসফিসিয়ে বলল, “হাত ছাড়ুন।”
“বললামই তো, ছাড়ার জন্য হাত ধরি নাই।”
তিথি ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলল। কোন কথা বলাই বৃথা।
আয়াশ ফের ফিসফিসিয়ে বলল, “আমার মনটাকে যে এলোমেলো করে দিলে, তার দায় কে নিবে?”
“আমি কিছু করি নাই।”
“কিছু কর নাই? সত্যি? তবে এখন করে ফেলবে?”
“কী?”
“বিয়ে।”
তিথি অবাক হয়ে তাকালো আয়াশের দিকে। বললো, “কাকে?”
“পাত্র পাশে থাকতে আবার জিজ্ঞাসা করা লাগে নাকি?”
“ওমা! আপনি পাত্র?”
লাইক সিরিয়াসলি। আমি কিন্তু নিজেকে পাত্র দাবি করি নাই। তুমি নিজেই আমাকে পাত্র দাবি করেছ। ওকে ডান, আমি রাজি। আর তোমার বাবা অর্থাৎ আমার হবু শ্বশুর মশাই তো তোমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য এক পায়ে রাজি।”
চোখ টিপি মেরে বললো আয়াশ।
তিথি উত্তরে কিছু বলল না।
কিছুক্ষণ বাদে উদ্যান থেকে বের হতেই আয়াশ বলল, “মৌনতা কিন্তু সম্মতির লক্ষণ!”
“তাই?”
“হ্যাঁ।”
“কিন্তু আমিতো সম্মতি দেই নাই। আর কখনো দিবোনা।”
আয়াশ মুখ কালো করে বলল, “কেন?”
“আরেকদিন বলবো। এখন বাসায় যেতে হবে।”
“তারমানে তুমি শিওর যে, তোমার সাথে আমার আবার দেখা হবে। বাব্বাহ!”
তিথি হেসে বলল, “আজকে যে অবস্থা দেখলাম, তাতে আমি জানি যে আমি দেখা করতে না চাইলেও আপনি দেখা করবেন আমার সাথে।”
“ওভার কনফিডেন্স!”
তা তো বটেই। আর শুনেন আপনি যে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমাদের বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, সেটা আর করবেন না কখনো। ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার জন্য মশার কামড় খাবেন, ব্যাপারটা কেমন দেখায়? আমার খুব বেশি দেখতে মন চাইলে আমার বাসায় চলে আসবেন।”
কথাটি বলেই তিথি খিলখিলিয়ে হেসে আকাশের থেকে বিদায় নিয়ে সামনে গিয়ে রিক্সা নিল।
আয়াশ বোকার মত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল।
.
.
.
রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে, বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে তিথি। বারবার আয়াশের বলা কথাগুলো মনে পড়ছে।
তিথির অশান্ত মন কেমন ছটফট করছে। কই, আগে তো কখনো এমন হয় নাই। আদিত্য কতবার বলেছে ভালোবাসার কথা, তাও সরাসরি ভাবে। তখন তো এমন ছটফটানি অবস্থায় পড়তে হয় নাই।
তবে আয়াশের দুই একটা কথায় এমন কেন হচ্ছে?
এতক্ষণ ফোনে গান শুনে ফোন চার্জে লাগিয়ে একটা উপন্যাসের বই নিয়ে বসলো তিথি। কয়েক পাতা পড়তেই ফোনে মেসেজ এর টুংটাং শব্দ ভেসে এলো কানে। বিরক্তিতে নাক মুখকে পড়ায় মনোযোগ দিল। মনে মনে বলল,
“সাড়ে বারোটা পার হয়েছে, এমন সময় নিশ্চয় কোন ভদ্রলোক মেসেজ দেবেনা।”
বেশ কিছুক্ষণ পর আবার মেসেজের শব্দ পেয়ে বই বন্ধ করে ফোন হাতে নিল।
ওমা! এটাকে ম্যাসেজ দিয়েছে তাকে?
কেনই বা দিলো??
.
.
.
.
.
চলবে।