উপহার

0
849

সুপ্তি চমকে উঠলো আয়ানের মুখে রুম ডেটের কথা শোনে।

সুপ্তি, আয়ানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো কি বললে তুমি বুঝতে পারলাম না।

আয়ান, না বুঝারতো কিছু নেই, আমি খুব স্পষ্ট করেই বলেছি কাল শুক্রবার তোমার জন্মদিন সে দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে রুমডেটে যাবো।

সুপ্তি, মাথা নিচু করে তুমি কি পাগল হয়ে গেলে আয়ান? কি সব কথা বলছো আয়ানের হাত ধরে এই কি হয়েছে তোমার?

আয়ান, আহ্ সুপ্তি ছেলে মানুষি করো নাতো। তোমার বুঝার মত যথেষ্ট্য পরিমাণ বয়স হয়েছে। আর আমাদের সম্পর্কটাতো দু এক দিনের না পুরো তিন তিনটা বছরের।

সুপ্তি, আয়ান প্লিজ তুমি এমন কথা বলো না আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি। তাছাড়া আর কিছুদিন পরতো আমরা বিয়েই করছি, তখন তো আমি তোমারি। এইসব বিয়ের আগে করা ঠিক না।

আয়ান, ঠিক কোনটা ভুল কোনটা তুমি আমাকে শিখাতে এসো না। আমি আমার ভালবাসার মানুষটিকে আদর করতেই পারি আমার অধিকার আছে। আর এটা এমন কোন কঠিন কাজ নয় সুপ্তি। এটা এখন সবাই করে থাকে।

সুপ্তি, আয়ান তোমার সাথে এর আগেও দুটো জন্মদিন পালন করেছি কিন্তু তুমি কখনোই এমন অবৈদ আবদার করোনি। তবে এবার কেন করছো?

আয়ান, সব সময় মানুষের একই রকম চাহিদা থাকে না এটা তোমাকে বুঝতে হবে। আর তাছাড়া তুমি এমন করছো কেন? তুমি কি চাওনা আমাদের সম্পর্কটা আরও দীর্ঘস্থায়ী হোক। তুমি কি চাওনা আমাকে আপন করে পেতে?

সুপ্তি, চাইবো না কেন আয়ান আমিতো সারা জীবন তোমার পাশে থাকতে চাই। তোমার বুকে মাথা রেখে সারাটি জীবন কাটাতে চাই।

আয়ান, বেশ যদি তাই হয় তবে কাল ঠিক সন্ধ্যায় আমার বাসায় উপস্থিত হবে আর যদি না হও তবে কালকের পর থেকে তোমার আর আমার মাঝে কোন রকম সম্পর্ক থাকবে না। কাল তোমার জন্মদিনে এটাই হবে আমার উপহার বলেই আয়ান হাঁটা শুরু করলো। সু্প্তিকে কোন রকম কথা বলতে না দিয়ে।

সুপ্তি অপলক আয়ানের চলে যাবার পথের দিকে চেয়ে আছে। সুপ্তির দু’চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা জল মাটিতে গড়িয়ে পড়লো। সুপ্তি চোখের পানি মুছতে মুছতে বাসায় চলে আসলো।

রাতে বিছানার একবার এপাশ একবার ওপাশ করছে, সুপ্তির ঘুম আসছে না নিজেকে নিজের কানকে যেন সুপ্তি বিশ্বাস করতে পারছে না। বিশ্বাস করতে পারছে না তিন বছরের ভালবাসার মানুষটির হঠাৎ বদলে যাওয়াকে।

সারা রাত সুপ্তি কত কি ভাবলো, কত শত স্বপ্নছিল আয়ানকে নিয়ে সুপ্তির একে একে সব কাচের টুকরোর মত ভেঙে চূরমার হয়ে গেল, সুপ্তি হেরে গেল নিজের কাছে, হেরে গেল নিজের ভালবাসার কাছে।

এক প্রকার ঘৃণা নিয়েই সুপ্তি প্রস্তুত হলো আয়ানের বাসায় যাবার জন্য। মন একবার বলছে যাসনে আর একবার বলছে যাকে ভালবাসি তার কাছে সব বিলিয়ে দিয়েই না হয় শেষ পরিণতি দেখি। ভাবতে ভাবতে বিকেল হয়ে গেল। সুপ্তি নীল একটা শাড়ি পরেছে নীল শাড়ি আয়ানের খুব পছন্দ। সাথে নীল কাচের চুড়ি আর কপালে ছোট কালো টিপ।

আয়নায় বার বার নিজেকে দেখে নিচ্ছে সুপ্তি সারা রাত ঘুম হয়নি চোখের নিচে কালো দাগ হয়ে গিয়েছে একরাত না ঘুমিয়ে কাটাতেই। নিজেকে দেখে নিজেই একটু হাসলো আর মনে মনে বললো হায়রে ভালবাসা।

এরপর বাসায় উকি মেরে কাউকে দেখতে না পেয়ে সুপ্তি বাসা থেকে বেরিয়ে পরলো। সন্ধ্যায় আয়ানের বাসায় যেয়ে কলিংবেল চাঁপতেই আয়ান এসে দরজা খুলে দিলো।

সুপ্তি ঘরে ঢুকতেই আয়ান বলে উঠলো শুভ জন্মদিন।

সুপ্তি মৃদু হেসে বললো হুম, সব কিছু কি রেডি করে রেখেছো? বাসা ফাঁকা ঘর অন্ধকার করে রেখেছো।

আয়ান, হেসে দিয়ে হুম বুঝতে হবে তিন বছর ধরে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছি।

সুপ্তি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রাখলো। আয়ান সুপ্তির পেছন দিয়ে দু’চোখ চেঁপে ধরলো। সু্প্তি চোখ চেঁপে ধরলে কেন?

আয়ান, কোন কথা বলবে না চুপচাপ হেঁটে চলো ভিতরে। সুপ্তি আর কথা না বলে আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকতে শুরু করলো। ভিতরের রুমে ঢুকতেই আয়ান সুপ্তির চোখ খুলে দেবার সাথে সাথেই চারিদিক থেকে আলো জ্বলে উঠলো।

ঘরের মাঝে টেবিলে জন্মদিনের কেক রাখা। চারিপাশে সুপ্তি আর আয়ানের পরিবারের সব লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। সু্প্তি অবাক হয়ে গেল।

সবাই এক সাথে বলে উঠলো শুভ জন্মদিন। আয়ান সুপ্তির কানে কানে বলতে শুরু করলো এটাই তোমার জন্মদিনের উপহার।

সুপ্তির দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে জল পরতে শুরু করলো না এটা কষ্টের জল নয় এটা আনন্দের আয়ান এমন সারপ্রাইজ দিবে তা বুঝতেই পারেনি সুপ্তি। অনেক কিছুই ভেবেছিল অনেক খারাপ ভেবেছিল আয়ানকে কিন্তু দিন শেষে তার তিন বছরের ভালবাসা ভুল ছিল না এটা বুঝতে পেরেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরছে।

আয়ান সুপ্তির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে শুরু করলো তোমার আয়ান কখনোই খারাপ ছিল না আর কখনোই খারাপ হবে না।

সুপ্তি সবার সামনেই আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।
সবাই একটু কেশে দিতেই সুপ্তি আয়ানকে ছেড়ে দিলো। তারপর সবাই মিলে সুপ্তির জন্মদিনের কেক কেটে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করলো। সুপ্তির জীবনের সব চেয়ে বড় উপহার হয়তো এটাই ছিল।

#শাহরিয়ার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে